▨ লেখক পরিচিতি ঃ
বাংলা সংগীত জগতের প্রবাদপুরুষ রামকুমার চট্টোপাধ্যায় ১৯২১ সালে জন্মগ্রহণ করেন। সংগীতই এই শিল্পীর ধ্যান-জ্ঞান। দেশ-বিদেশে বিপুল খ্যাতিসম্পন্ন এই শিল্পীর সংগীত সাধকের পীঠস্থান ছিল এই কলকাতা শহর। হারিয়ে যাওয়া পুরাতনী বাংলা গানকে তিনি নতুন প্রাণ দিয়েছেন। ২০০৯ সালে তাঁর জীবনাবসান হয়। পাঠ্যাংশটি তাঁর ‘পুরাতনী” নামক আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে।
▨ সারসংক্ষেপ :
লেখক খুব ছোটোবেলায় স্কুলে যাচ্ছিলেন। হঠাৎ দেখলেন হেদো পার্কের কাছে খুব ভিড়। সেখানে তিনি শুনলেন বিডন স্ট্রিটের কাছে সরকার বাগানে নেতাজি আসবেন বক্তৃতা দিতে। আর কাজী নজরুল আসবেন গান গাইতে। দুই প্রিয় মানুষকে কাছ থেকে দেখবেন বলে লেখকও স্কুলে যাওয়া ছেড়ে সেখানে দাঁড়িয়ে পড়লেন। নেতাজির বক্তৃতার আগে নজরুলের গান হতেই হবে। এই ছিল তখনকার স্বদেশি মিটিং-এর রীতি। নজরুল এলেন গান গাইলেন। সবাই নিশ্চুপ হয়ে শুনল। এই গান শুনলে বোঝা যায় কাজীর গান কী। তাঁর গান শুনতে শুনতে মনে হচ্ছিল লেখকের রক্তও যেন ফুটছে। উনি দৌড়ে বাড়ি ফিরে আসেন। উত্তেজনা লুকোতে তবলার বোলে ডুবে যান।
▩ অতি-সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর :প্রতিটা প্রশ্নের মান -1
১. লেখক সেইদিন কোথায় যাচ্ছিলেন?
উঃ । লেখক সেইদিন ইস্কুলে যাচ্ছিলেন।
২. সভায় বক্তৃতা দিতে কে আসছিলেন?
উঃ। নেতাজি সুভাষচন্দ্রবসু সভায় বক্তৃতা দিতে আসছিলেন।
৩. সভায় গান গাইতে কে আসছিলেন?
উঃ । কাজী নজরুল ইসলাম সভায় গান গাইতে আসছিলেন।
৪. লেখকের প্রিয়সঙ্গী কী ছিল?
উঃ । লেখকের প্রিয়সঙ্গী ছিল তবলা।
৫. গান শুনতে শুনতে লেখকের কী মনে হয়েছিল?
উঃ। লেখকের মনে হয়েছিল তাঁর রক্ত যেন টগবগ করে ফুটছে।
৬. লেখক ইস্কুলে যাওয়ার সময় কোথায় ভিড় দেখেছিলেন?
উঃ । লেখক হেদো পার্কের কাছে ভিড় দেখেছিলেন।
৭. নেতাজি কোথায় বক্তৃতা দিতে আসছিলেন?
উঃ। নেতাজি বিডন স্ট্রিটের কাছে সরকার বাগান নামক একটি জায়গায় বক্তৃতা দিতে আসছিলেন।
৮. কাজী নজরুলকে দেখে নেতাজি কী করলেন?
উঃ। নেতাজি স্বয়ং তাঁকে দু-হাত তুলে প্রণাম করলেন।
৯. লেখক কীভাবে নেতাজিকে মঞ্চে দেখেছিলেন?
উঃ। লেখক নেতাজিকে মঞ্চে দেখেছিলেন যেন এক দেবদূত মঞ্জু আলো করে দাঁড়িয়ে আছেন।
১০. আজও চোখ বুজলে লেখক কী শুনতে পান?
উঃ । আজও চোখ বুজলে লেখক কাজীদার সেই গান শুনতে পান।
▩ সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর : প্রতিটা প্রশ্নের মান -2/3
১. কাজী নজরুল ইসলাম ব্যতীত কোন্ মনীষীর নাম পাঠ্যাংশে খুঁজে পেলে?
উঃ। নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর নাম।
২. এই ছিল তখনকার কোনো স্বদেশি মিটিং-এর রীতি—কোন্ রীতির কথা এখানে বলা হয়েছে?
উঃ। নেতাজির বক্তৃতার আগে নজরুল-এর গান হতেই হবে। এই ছিল তখনকার স্বদেশি মিটিং-এর রীতি, এই রীতির কথাই এখানে বলা হয়েছে।
৩. পাঠ্যাংশে কার কেমন দেহ সৌষ্ঠবের পরিচয় ধরা পড়েছে?
উঃ। পাঠ্যাংশে নেতাজির দেহ সৌষ্ঠবের পরিচয় ধরা পড়েছে। নেতাজি ছিলেন গৌরবর্ণ, অতীব | সুপুরুষ আর তাঁর ললাট ছিল উন্নত।
৪. টীকা লেখো ঃ কাজী নজরুল ইসলাম, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু, স্বদেশি যুগ।
উঃ কাজী নজরুল ইসলাম : বাংলা কাব্য ও সাহিত্য জগতে ইনি 'বিদ্রোহী কবি' নামে পরিচিত। বহু দেশাত্মবোধক গান ও কবিতা তিনি রচনা করেন। তাঁর রচিত গান ‘নজরুলগীতি” নামে পরিচিত। শেষ জীবনে তিনি পঙ্গু হয়ে পড়েন ও স্মৃতিশক্তি হারিয়ে ফেলেন। তাঁর বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ অগ্নিবীণা, বিষের বাঁশি, দোলনচাঁপা প্রভৃতি।
নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু : ভারতের সর্বশ্রেষ্ঠ বিপ্লবী সুভাষচন্দ্রের জন্ম ওড়িশার কটক শহরে। I.C.S. পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েও তিনি দেশের সেবায় নিজেকে নিয়োগ করেন। তিনি দুবার জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতি হন, পরে ফরওয়ার্ড ব্লক' নামে একটি দল গঠন করেন। তিনি দেশের জন্য বহু নির্যাতন সহ্য করেন ও বহুবার জেলে যান। ইংরেজদের হাত থেকে দেশকে মুক্ত করতে তিনি গোপনে জার্মানি হয়ে জাপানে যান এবং সেখানে 'আজাদ হিন্দ ফৌজ'-এর নেতৃত্ব গ্রহণ করেন ও ইংরেজদের সঙ্গে যুদ্ধ চালান। এক বিমান দুর্ঘটনায় এই মহাবিপ্লবীর মৃত্যুর খবর প্রচারিত হলেও তার সঠিক প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তাই তিনি চির অমর।
স্বদেশি যুগ : ১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গকে কেন্দ্র করে বাংলায় বিলিতি দ্রব্য বর্জন ও স্বদেশি জিনিস গ্রহণ করা শুরু হয় এবং জোরদার আন্দোলন চলে। এই সময় বহু গান ও কবিতা রচনা করা হয়। ছাত্রছাত্রী থেকে শুরু করে বহু সাধারণ মানুষ পথে আন্দোলনে নামেন। এই সময়কে বলা হয় স্বদেশি যুগ।
৫. কাজী নজরুল ইসলামের গান শুনে লেখকের মনে কোন অনুভূতির সৃষ্টি হলো? তখন তিনি কী করলেন?
উঃ। কাজী নজরুল ইসলামের গান শুনে উত্তেজনায় লেখকের রক্ত টগবগ করে ফুটতে আরম্ভ করেছিল। লেখকের মনের মধ্যে কী হল তা তিনি নিজেই বুঝতে পারলেন না। তিনি রাস্তা দিয়ে ছুটতে ছুটতে বাড়িতে চলে এলেন। নিজের উত্তেজনাকে কমাতে লেখক তাঁর প্রিয় সঙ্গী তবলাকে কাছে টেনে নিয়ে তবলার বোলে ডুবে গেলেন।
৬.'এই দুই প্রিয় মানুষকে এত কাছ থেকে দেখব কোনোদিন ভাবিনি।'—কে এই দুই প্রিয় মানুষ? লেখক তাদের কীভাবে দেখেছিলেন?
উঃ। এই দুই প্রিয় মানুষ হলেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু ও কাজী নজরুল ইসলাম। লেখক উত্তেজনায় টগবগ করতে করতে মঞ্চের কাছে দাঁড়িয়ে রইলেন। বেশ অনেকক্ষণ পরে দেখলেন এক দেবদূত মঞ্চ আলো করে দাঁড়িয়ে আছেন। তিনি গৌরবর্ণ উন্নত ললাট ও অতীব সুপুরুষ। তিনি নেতাজি। সেই সময় মঞ্চে আবির্ভাব হল নজরুল ইসলামের যাকে স্বয়ং নেতাজি দুহাত তুলে প্রণাম করলেন।
৭. ...চোখ বুজলেই যেন শুনতে পাই – লেখক কী প্রসঙ্গে এই কথা বলেছেন?
উঃ। লেখক ছেলেবেলায় স্কুলে যাওয়ার পথে বিডন স্ট্রিটের সরকার বাগানের কাছে স্বদেশি মিটিং-এ কাজী নজরুলের গান শুনেছিলেন। সেই গান শুনে লেখক দেখলেন সভা একেবারে স্তব্ধ হয়ে গেল। তিনি বুঝলেন কাজী । নজরুলের গান কী জিনিস। পরবর্তীকালে তিনি অনেকবার মুখে পান, গলায় হারমোনিয়াম বাঁধা অবস্থায় নজরুল গান গাইছেন এই দৃশ্য দেখেছেন। কিন্তু লেখকের মতে জীবনের প্রথম দেখা যে-কোনো ভালো জিনিসই মনের মধ্যে গেঁথে যায়। তাই নজরুলের সেই গান লেখক আজও চোখ বুজলেই যেন শুনতে পান।
No comments:
Post a Comment