👉(ক্লাস সেভেন বাংলা চিন্তাশীল - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রশ্ন উত্তর)
▨ লেখক পরিচিতি :
বিশ্ববন্দিত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায় ১৯২১ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি বাংলা সাহিত্যের অন্যতম জনপ্রিয় লেখক। তাঁর পিতা বিখ্যাত সাহিত্যিক সুকুমার রায়। তিনি একাধারে চিত্রপরিচালক, সংগীত স্রষ্টা প্রচ্ছদশিল্পী এবং সাহিত্য রচয়িতাও। তাঁর উল্লেখযোগ্য লেখা 'সোনার কেল্লা', 'বাদশাহী আংটি' ইত্যাদি। দীর্ঘদিন তিনি 'সন্দেশ' পত্রিকাটি সম্পাদনা করেছেন। ১৯৬৭ সালে তাঁর 'প্রফেসর শঙ্কু' রচনাটি 'আকাদেমি পুরস্কার' পায়। ১৯৯২ সালে তিনি ‘ভারতরত্ন' সম্মানে ভূষিত হন। বাংলা কিশোর সাহিত্যে তিনি 'ফেলুদা' চরিত্রের স্রষ্ঠা। ১৯৯২ সালে তাঁর জীবনাবসান হয়।
▨ রচনা পরিচয় :
পটলবাবু একজন সাধারণ মানুষ, যিনি জীবনযুদ্ধে জেরবার। তিনি হঠাৎ অভিনয়ের ডাক পান। জীবনের সায়াহ্নে এসে তিনি নিজের সবটুকু দিয়ে একটি ছোটো চরিত্রে অভিনয় করেন। তাই গল্পটির নাম 'পটলবাবু ফিল্মস্টার' সঠিক। এই গল্পটি সত্যজিৎ রায়ের 'এক ডজন গপ্পো' থেকে নেওয়া হয়েছে।
▨ সারসংক্ষেপ :
পটলবাবু সাধারণ ব্যক্তি। নিজের বেঁচে থাকার লড়াইতেই তাঁর সারাজীবন কেটে গেছে। একসময় অভিনেতা হবার স্বপ্ন ছিল কালক্রমে সেও নেই। হঠাৎ ৫২ বছর বয়সে তিনি অভিনয়ের ডাক পান। নিজের ভেতরকার অভিনেতা আবার সামনে আসে। সামান্যতম একটা চরিত্রেও নিজের সর্বস্ব উজাড় করে দিয়ে তিনি অভিনয় করেন এবং সকলে বাহবা দেয়। এরপর একজন জাত অভিনেতার মতোই টাকা না-নিয়ে বুকভরা আত্মতৃপ্তি নিয়ে পটলবাবু বাড়ি ফিরে আসেন।
⬛ বন্ধনীতে দেওয়া একাধিক উত্তরের মধ্যে ঠিক উত্তরটি বেছে নিয়ে নীচের বাক্যগুলি আবার লেখো : প্রতিটা প্রশ্নের মান -1
১. পটলবাবু অভিনয়ের সময়ে সংলাপ হিসেবে বলেছিলেন (ওঃ/উঃ/আঃ)শব্দটি।
উঃ। পটলবাবু অভিনয়ের সময়ে সংলাপ হিসেবে বলেছিলেন আঃ শব্দটি।
২. অভিনয়ের সময় পটলবাবুর হাতে ছিল (আনন্দবাজার পত্রিকা/যুগান্তর/ স্টেটসম্যান)।
উঃ। অভিনয়ের সময় পটলবাবুর হাতে ছিল যুগান্তর।
৩. অভিনয়ের সময় পটলবাবুর নাকের নীচে সেঁটে দেওয়া হয়েছিল (ঝুপো/চাড়া-দেওয়া/বাটারফ্লাই) গোঁফ।
উঃ। অভিনয়ের সময় পটলবাবুর নাকের নীচে সেঁটে দেওয়া হয়েছিল বাটারফ্লাই গোঁফ।
৪. (বরেন দত্ত/বরেন মল্লিক/বরেন চৌধুরী)-র পরিচালিত চলচ্চিত্রে অভিনয় করতে গিয়েছিলেন পটলবাবু।
উঃ। বরেন মল্লিক পরিচালিত চলচ্চিত্রে অভিনয় করতে গিয়েছিলেন পটলবাবু।
⬛অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর : প্রতিটা প্রশ্নের মান -1
১. নিশিকান্তবাবু কেমন লোক? তিনি কোথায় থাকেন?
উঃ। নিশিকান্তবাবু আমুদে লোক, তিনি নেপাল ভট্টাচার্য লেনে পটলবাবুর তিনখানি বাড়ির পরে থাকেন।
২. বাজার করতে গিয়ে পটলবাবুর কী কী ভুল হল?
উঃ। বাজার করতে গিয়ে পটলবাবু স্ত্রীর ফরমাশ গুলিয়ে ফেলে কালোজিরের বদলে ধানিলঙ্কা কিনে ফেললেন এবং সৈন্ধব নুন কিনতে ভুলেই গেলেন।
৩. পটলবাবুর ভালো নাম কী? তিনি কীসের চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পেরেছিলেন?
উঃ। পটলবাবুর ভালো নাম শ্রী শীতলাকান্ত রায়। তিনি একজন অন্যমনস্ক, বদমেজাজি পেডেস্ট্রিয়ানের অর্থাৎ পথচারীর চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পেয়েছিলেন।
৪. কোন্ জায়গায় এবং কোন সময়ে তার শুটিং হয়।
উঃ। সকাল সাড়ে আটটার সময় মিশন রো আর বেন্টিঙ্ক স্টিটের মোড়ের ফ্যারাডে হাউসের সামনে তার শুটিং হয়।
৫. পটলবাবু অভিনীত ছবির নায়ক ও পরিচালক কে ছিলেন?
উঃ। পটলবাবু অভিনীত ছবিটির নায়ক ছিলেন চঞ্চলকুমার ও পরিচালক ছিলেন বরেন মল্লিক।
⬛ সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর : প্রতিটা প্রশ্নের মান -2/3
১. আরও একটা কথা বলতেন পাকড়াশি মশাই— আরও কী কথা বলতেন পাকড়াশি মশাই?
উঃ। পাকড়াশি মশাই আরও বলতেন যে নাটকের এক-একটা কথা হলো এক একটা গাছের ফল। সবাই তার নাগাল পায় না, যারা পায় তারাও খোসা ছাড়াতে জানে না। কিন্তু আসল কাজটি হলো অভিনেতার, তাকেই জানতে হবে সে কীভাবে ফলটিকে পেড়ে খোসা ছাড়িয়ে তার থেকে রস নিংড়ে বের করে লোকের কাছে পরিবেশন করবে।
২. 'আপনি তো ভাগ্যবান লোক মশাই'–কে কাকে ভাগ্যবান বলেছিল? তিনি কেন ভাগ্যবান লোক?
উঃ। সিনেমার শুটিং-এর একজন ছেলে শশাঙ্ক পটলবাবুকে ভাগ্যবান লোক বলেছিল। পটলবাবু ভাগ্যবান, কারণ তিনি পরিচালক বরেন মল্লিকের ছবিতে ‘আঃ শব্দটি বলার সুযোগ পেয়েছেন। কারণ এই ছবিতে আরো দেড়শো জন লোক পার্ট করে গেছে। কেউ কোনো কথা বলেনি শুধু ক্যামেরার সামনে হেঁটে গেছে। অনেকে স্রেফ দাঁড়িয়েও থেকেছে। কারো কারো মুখও দেখা যায়নি। তাছাড়া আজকের দিনে নায়ক চঞলকুমারেরও কোনো ডায়ালগ নেই, অথচ পটলবাবুর আছে। সেদিক দিয়ে পটলবাবুকে তো ভাগ্যবান বলতেই হয়।
৩. গগন পাকড়াশি কে? তিনি কেমন অভিনেতা ছিলেন?
উঃ। গমন পাকড়াশি ছিলেন পটলবাবুর নাট্যগুরু। তিনি আশ্চর্য এক অভিনেতা ছিলেন অথচ তার মনে দম্ভের লেশমাত্র ছিল না। এই ঋষিতুল্য মানুষটি ছিলেন শিল্পীর সেরা শিল্পী।
৪. ‘চাকরি যাবার পর বাকি জীবন পটলবাবু কীভাবে রোজগার করেছেন ?'
উঃ। প্রথমে পটলবাবু একটা মণিহারি দোকান করেন, পাঁচ বছর 00000 পর তা উঠে যায়। এরপর একটা বাঙালি অফিসে কেরানিগিরি করেন কিন্তু বড়োকর্তার উদ্ধত্যের ফলে সে চাকরি তিনি ছেড়ে দেন। তারপর দশটা বছর ইনসিওরেন্সের দালালি করার পর সম্প্রতি একটি লোহালক্কড়ের দোকানে পটলবাবু ঘোরাঘুরি করছেন।
৫. 'বিরাট তোড়জোড় চলছে'— কী তোড়জোড় পটলবাবু দেখতে পেলেন ?
উঃ। পটলবাবু দেখলেন আপিসের গেটের সামনে তিন-চারখানা গাড়ি ও একটা বড়ো বাস এবং তার মাথায় সব জিনিসপত্র বোঝাই। রাস্তার ঠিক ধারটায় ফুটপাথের উপর একটা তেপায়া কালো যন্ত্রের মতো জিনিস রয়েছে যার পাশে কয়েকজন লোক ব্যস্তভাবে ঘোরাফেরা করছে। গেটের ঠিক মুখটাতে একটা তেপায়া লোহার ডান্ডার মাথায় আরেকটা লোহার ডান্ডা আড়াআড়িভাবে শোয়ানো রয়েছে আর তার ডগা থেকে ঝুলছে একটা মৌমাছির চাকের মতো দেখতে জিনিস।
⬛ একটি বাক্যে উত্তর দাও : প্রতিটা প্রশ্নের মান -1
১. পটলবাবুর কাছে যে-দিন ফিল্মে অভিনয়ের প্রস্তাব আসে, সেদিন ছুটির দিন ছিল কেন ?
উঃ। সে-দিন ছিল ট্যাগোরস্ বার্থডে। অর্থাৎ সে দিন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মদিন ছিল।
২. বাজারে গিয়ে কেন গৃহিণীর ফরমাশ গুলিয়ে গেল পটলবাবুর?
উঃ। পটলবাবুর কাছে অভিনয়ের প্রস্তাব আসার ফলে বাজারে গিয়ে গৃহিণীর ফরমাস গুলিয়ে গেল।
৩. থিয়েটারে পটলবাবুর প্রথম পার্ট কী ছিল?
উঃ। মৃত সৈনিকের পার্ট।
৪. উনিশশো চৌত্রিশ সালে পটলবাবু কলকাতায় বসবাস করতে এলেন কেন?
উঃ। হাডসন অ্যান্ড কিম্বার্লি কোম্পানিতে আর-একটু বেশি মাইনের চাকরি আর একটা নেপাল ভটচাজ্যি লেনে একটা বাড়ি পেয়ে পটলবাবু কলকাতায় বসবাস করতে এলেন।
৫. পাড়ায় থিয়েটারের দল গড়া আর হলো না কেন পটলবাবুর?
উঃ। যুদ্ধের ফলে আপিসে ছাঁটাই হলো। আর তাতেই পটলবাবু ন-বছরের চাকরি চলে যাওয়ায় পটলবাবুর পাড়ায় থিয়েটারের দল গড়া হল না।
৬. পটলবাবু তাঁর সময়নিষ্ঠতার প্রমাণ দেওয়ার জন্য কোন্ উদাহরণ দিতে ভালোবাসতেন ?
উঃ। তিনি যে ন-বছর হাডসন অ্যান্ড কিম্বার্লিতে চাকরি করতেন সেই উদাহরণ পটলবাবু দিতে ভালোবাসতেন।
৭. 'পটলবাবুর লজ্জায় মাথা হেঁট হয়ে গেল' – পটলবাবু এমন লজ্জা পেলেন কেন ?
উঃ। পটলবাবুকে অভিনয় করার কথা বলা হয়েছে তাই তিনি লজ্জা পেলেন।
৮. ‘গগন পাকড়াশি আজ তাঁকে দেখলে সত্যিই খুশি হতেন' —তিনি খুশি হতেন কেন?
উঃ। এতদিন অকেজো থেকেও তাঁর শিল্পীমন ভোতা হয়ে যায়নি, এ দেখেই পটলবাবুর নাট্যগুরু গগন পাকড়াশি খুশি হতেন।
⬛চার-পাঁচটি বাক্যে উত্তর দাও : প্রতিটা প্রশ্নের মান -2/3
১. 'আমার টক করে তোমার কথা মনে পড়ে গেল' কার মনে পড়ে গেল পটলবাবুর কথা? পটলবাবুর কথাই বিশেষ করে তাঁর মনে পড়ল কেন?
উঃ। নিশিকান্ত ঘোষ মশাইয়ের মনে পড়ে গেল পটলবাবুর কথা। কারণ পটলবাবু এককালে অভিনয় করতেন। তার রীতিমতো অভিনয়ের শখ ছিল। যাত্রায়, শখের থিয়েটারে, পুজো-পার্বণে, পাড়ার ক্লাবের অনুষ্ঠানে তাঁর বাঁধা কাজ ছিল অভিনয় করা।
২. ‘গাছে কাঁঠাল গোঁফে তেল ! সাধে কি তোমার কোনোদিন কিচ্ছু হয় না ?' — পটলবাবুর গৃহিণীর এই মন্তব্যের কারণ কী?
উঃ। অভিনয় করার সুযোগ পেয়ে পটলবাবু বাহান্ন বছর বয়সে তিড়িং করে একটা লাফ দিয়ে উঠলেন। নাট্যকার শিশির ভাদুড়ির সাথে তুলনা করে তিনি গিন্নিকে বলতে লাগলেন শিশির ভাদুড়ি সত্তর বছর বয়সে চাণক্যের পার্টে এইভাবে লাফখানা দিতেন। আজ তিনি পুনর্যৌবন লাভ করেছেন। তাঁর মান, যশ, প্রতিপত্তি সব হবে। এইসব শুনে পটলবাবুর গৃহিণী এই মন্তব্যটি করেছিলেন।
৩. কার উপদেশের স্মৃতি পটলবাবুর অভিনেতা সত্তাকে জাগিয়ে তুলল ? কোন্ অমূল্য উপদেশ তিনি দিয়েছিলেন পটলবাবুকে?
উঃ। গগন পাকড়াশির উপদেশের স্মৃতি। পটলবাবুর অভিনেতা সত্তাকে জাগিয়ে তুলুন। তিনি পটলবাবুর নাট্যগুরু ছিলেন।
তিনি বলেছিলেন 'একটা কথা মনে রেখো পটল। যতো ছোটো পার্টই তোমাকে দেওয়া হোক, তুমি জেনে রেখো তাতে কোনো অপমান নেই। শিল্পী হিসেবে তোমার কৃতিত্ব হবে সেই ছোটো পার্টটি থেকেও শেষ রসটুকু নিংড়ে বার করে তাকে সার্থক করে তোলা। থিয়েটারের কাজ হলো পাঁচজন মিলেমিশে কাজ। সকলের সাফল্য জড়িয়েই নাটকের সাফল্য'। এই অমূল্য উপদেশই পাকড়াশি মশাই পটলবাবুকে দিয়েছিলেন।
৪. ‘ধন্যি মশাই আপনার টাইমিং। বাপের নাম ভুলিয়ে দিয়েছিলেন প্রায়—ওঃ!' — বক্তা কে? কোন ঘটনার ফলে তাঁর এমন মন্তব্য?
উঃ। বক্তা অভিনেতা ও নায়ক চলকুমার। অভিনয় করার জন্য পটলবাবুকে যখন অ্যাকশন বলা হল, পটলবাবু হঠাৎ চোখে অন্ধকার দেখলেন। নায়ক চঞলকুমারের সঙ্গে তাঁর কপালের ঠোকাঠুকি লেগে গেল। কিন্তু পরমুহূর্তেই এক প্রচণ্ড শক্তি প্রয়োগ করে আশ্চর্যভাবে নিজেকে সামলে নিয়ে বিরক্তি, বিস্ময় ও যন্ত্রণা মিশিয়ে 'আঃ” শব্দটা তিনি উচ্চারণ করলেন। তার অভিনয় ঠিক ঠিক হল এবং তিনি যথার্থ সময়ে ‘আঃ' শব্দটি বলায় বক্তা চলকুমার এমন মন্তব্য করেছিলেন।
৫. ‘এতদিন অকেজো থেকেও তাঁর শিল্পীমন ভোঁতা হয়ে যায়নি – এই অনুভব কীভাবে জাগল পটলবাবুর মনে?
উঃ। পটলবাবুর অভিনয়ের রীতিমতো শখ ছিল। শখ কেন অভিনয় তার নেশাই ছিল। বরেন মল্লিকের সিনেমায় তিনি যখন ছোট্ট একটু অভিনয় করার সুযোগ পেলেন তখন তাঁর যেন জীবনটাই ধন্য হয়ে গেল। অভিনয়ের জন্য একটা ‘আঃ” শব্দ যেটা উচ্চারণ করতে গিয়ে তিনি নানারকম ভাবনাচিন্তা করতে লাগলেন। নানান কথা তাঁর মনে পড়তে লাগল। অনেক উত্তেজনা, রোমাঞ্চ ও বিস্ময় নিয়ে যখন তিনি 'আঃ” শব্দটা উচ্চারণ করলেন এবং পরিচালক মশাই ঠিক বললেন, তখন পটলবাবুর মন এক গভীর আনন্দ ও আত্মতৃপ্তিতে ভরে গেল। তিনি অনুভব করলেন তাঁর শিল্পী মন শেষ হয়ে যায়নি, ভোঁতা হয়ে যায়নি।
৬. পটলবাবুর ফিল্মে অভিনয়ের সঙ্গে জড়িয়ে আছে প্রোডাকশন ম্যানেজার নরেশ দত্তের অনেকগুলি ব্যস্ত মুহূর্ত। টুকরো মুহূর্তগুলি জোড়া দিয়ে নরেশ দত্ত নামে মানুষটির সম্পূর্ণ ছবি নিজের ভাষায় তৈরি করো।
উঃ। নরেশ দত্ত পটলবাবুর প্রতিবেশী নিশিকান্ত ঘোষের ছোটো শালা। তিনি সিনেমার প্রোডাকশন ম্যানেজার, বছর ত্রিশেক বয়স, দোহারা চেহারা। তিনি পটলবাবুকে একজন অন্যমনস্ক বদমেজাজি পথচারীর চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ দিলেন। তিনি পটলবাবুকে একটা গলাবন্ধ কোট আনতে বললেন। পটলবাবু এবং পটলবাবুর ছায়ার ধারে অপেক্ষা করতে বললেন নরেশবাবুর কথা মতো নির্দিষ্ট সময়ে গিয়ে উপস্থিত হলেন। তা দেখে নরেশবাবু খুব খুশি হলেন। নরেশবাবু সারাদিন ব্যস্ত মানুষ তিনি সবাইকে চুপ করে থাকতে বললেন। জায়গা ছেড়ে নড়তে বারণ করলেন। ক্যামেরার দিকে এগিয়ে আসতে বারণ করলেন। নরেশবাবু বাস্ত থাকলেও তার সবদিক লক্ষ থাকে। তিনি একভাঁড় চা পটলবাবুকে দিলেন। নরেশবাবু তাঁকে একটা ডায়ালগ লিখে দিলেন। নরেশবাবু পটলবাবুকে তাঁর পারিশ্রমিক দিতে গিয়ে দেখলেন তিনি নেই। তিনি আশ্চর্য হলেন। এরপর তিনি নিজের কাজে আবার ব্যস্ত হয়ে পড়লেন।
⬛নিজের ভাষায় উত্তর লেখো : প্রতিটা প্রশ্নের মান -3/5
১. ‘আঃ’–এই একটিমাত্র শব্দের উচ্চারণ কৌশলে আর অভিনয়দক্ষতায় 'একটা আস্ত অভিধান' লিখে ফেলা যায়। শব্দটি নিয়ে ভাবতে এমনটাই মনে হয়েছিল অভিনেতা পটলবাবুর। পটলবাবুর ভাবনাধারা কি ঠিক বলে মনে হয় তোমার? আঃশব্দের উচ্চারণে কত ধরনের ভাবপ্রকাশ সম্ভব বলে তোমার মনে হয় ?
উঃ। পটলবাবুর ভাবনাধারা একদম ঠিক। আঃ এই একটি মাত্র শব্দের উচ্চারণে সমস্ত কিছু প্রকাশ হয়ে যায়। আঃ কথাটাই নানান ভাবে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বললে মানুষের মনের নানান অবস্থা প্রকাশ করা যায়। ভালো অভিনেতা হলে এই একটা কথাতেই সমস্ত কিছু বোঝানো যায়। চিমটি খেলে মানুষ যেভাবে আঃ বলে, গরমে ঠান্ডা শরবত খেয়ে মোটেই সেভাবে আঃ বলে না। এই দুটো একেবারেই আলাদা। এছাড়া আচমকা কানে সুড়সুড়ি লাগলেও আর একরকমের 'আঃ' বেরোয়। এ ছাড়া দীর্ঘশ্বাসের আঃ, তাচ্ছিল্যের আঃ, অভিমানের আঃ, ছোটো করে বলা আঃ, লম্বা করে বলা আঃ, চেঁচিয়ে বলা আঃ, মৃদুস্বরে আঃ,চড়া গলায় আঃ, খাদে গলায় আঃ, আবার আঃটাকে খাদে শুরু করে বিসর্গটায় সুর চড়িয়ে আঃ বলা যায়।
২. 'সে কী, টাকা না-নিয়েই চলে গেল নাকি লোকটা! আচ্ছা ভোলা মনতো! তোমার কী মনে হয় সফলভাবে কাজ করার পরেও কেন টাকা না-নিয়েই চলে গিয়েছিলেন পটলবাবু? পটলবাবুর চলে যাওয়ার সিদ্ধান্তটি যথার্থ বলে মনে হয় তোমার? নিজের যুক্তি দিয়ে লেখো।
উঃ। পটলবাবু চলে গিয়ে ঠিক কাজ করেছেন। মান, যশ, প্রতিপত্তি, খ্যাতি এর চাইতেও বড়ো হল একজন শিল্পীর কাছে তাঁর শিল্পের সার্থকতা। পটলবাবু একজন ভালো অভিনেতা। অভিনয় তাঁর শুধু শখ নয়, নেশাও বটে। তিনি অভিনয় করতে খুব ভালোবাসেন। কিন্তু তেমন করে কোনোদিন সুযোগ পাননি। থিয়েটারে অভিনয় করেছেন, কিন্তু সিনেমায় এই প্রথম। সেইজনা যথার্থভাবে নিজের অভিনয়টুকু তিনি নিংড়ে বার করে দিতে চেয়েছিলেন। এই নিয়ে তাঁর মনে ছিল চাপা উত্তেজনা ও রোমা”। পঁচিশ বছর আগে স্টেজে অভিনয় করার সময় একটা বড়ো দৃশ্যে নামবার আগে মনের মধ্যে যে ভাবটা তিনি অনুভব করতেন সেই ভাব। তারপর যখন সত্যি সত্যিই অভিনয় যথার্থ হল তখন এক গভীর আনন্দ ও আত্মতৃপ্তি পটলবাবুর মনকে ধীরে ধীরে আচ্ছন্ন করে ফেলল। তাঁর মনে হল এতদিন অকেজো থেকেও তাঁর শিল্পীমন ভোঁতা হয়ে যায়নি। এই সামান্য কাজটিকে নিখুঁতভাবে করার জন্য তাঁর যে আগ্রহ আর পরিশ্রম তার কদর কেউ করতে পারবে না। সার্থক অভিনয় করতে পেরে শিল্পীর যে আনন্দ হয় তার কাছে টাকার কোনো মূল্য নেই। তাই পটলবাবুর চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত একদম সঠিক।
৩. কেমন করে শুটিং চলে, তার জীবন্ত কিছু টুকরো টুকরো ছবি উঠে এসেছে এই গল্পের আনাচে কানাচে। সেইসব টুকরো জুড়ে জুড়ে নিজের ভাষায় শুটিং-এর মুহূর্তগুলির একটি সম্পূর্ণ ছবি তৈরি করো।
উঃ। শুটিং স্পটে ক্যামেরাম্যান, মেকআপম্যান, ডিরেক্টার বা পরিচালক ছাড়াও আরও নানা ধরনের লোকজন থাকে। ক্যামেরা, লাইট, সাউন্ড থাকে। অভিনেতা, অভিনেত্রী ও অন্যান্য শিল্পীরা থাকেন। পরিচালকের নির্দেশমতো এইসব অভিনেতা-অভিনেত্রীরা কাজ করে থাকেন। বিভিন্ন জায়গায় লোকেরা দৌড়ঝাপ করে কাজ করে। শুটিং চলার সময় ডিরেক্টারের নির্দেশমতো সবাই চুপ করে যায়। তারপর শুরু হয় শুটিং। শুটিং চলাকালীন কথাবলা, হাঁটাচলা সমস্ত নিষিদ্ধ। এইভাবে বিভিন্নস্থানে শুটিং চলে।
৪. অভিনয়ের নানা ধরনের প্রসঙ্গ এই গল্পে ছড়িয়ে আছে। থিয়েটার আর সিনেমায় অভিনয়ের ধরনে সাদৃশ্য আর বৈসাদৃশ্যের কিছু কথা মনে এসেছিল পটলবাবুর। পটলবাবুর মতামত নিজের ভাষায় লিখে, এ বিষয়ে তোমার কোনো মতামত থাকলে তাও জানাও।
উঃ। সিনেমা এবং থিয়েটার দু-জায়গাতেই লোকে অভিনয় করেন। প্রতিটি স্থানেই নির্দিষ্ট সেট থাকে। সেই সেটেই সবকিছু অভিনীত হয়। নায়ক-নায়িকা থাকেন তাদের ডায়ালগ থাকেন। দু-জায়গাতেই পরিচালক থাকেন। পরিচালকরা সমস্ত বিষয়টা পরিচালনা করেন। মেকআপম্যানও থাকেন ।
কিন্তু থিয়েটারে অভিনয়ের স্থান অনেক বেশি। সেখানে গুরু-শিষ্যের সম্পর্কের একটা ব্যাপার থাকে। অভিনয়ের তালিম নিতে হয়। কিন্তু ক্যামেরা থাকে না, থাকে না আউটডোর শুটিং-এর জায়গাও। সেখানে অভিনেতাকে এক- একটি কথা থেকে রস নিংড়ে দর্শকদের কাছে পরিবেশন করতে হয়। এছাড়া আমার মতে সিনেমার অভিনয়ের ক্ষেত্রে ক্যামেরার সামনে কোনো অভিনেতার ভুল হলে বা অন্য কোনো দৃশ্যগত ত্রুটি হলে তা তখুনি শুধরে নেওয়া যায়। কিন্তু থিয়েটারে অভিনয়ের ক্ষেত্রে সরাসরি দর্শকের সামনে অভিনেতাকে নিজস্ব ক্ষমতা দেখাতে হয়। তাতে ভুল শুধরে নেওয়ার সুযোগ থাকে না।
৫. বছর পাশের বেঁটেখাটো টাকমাথা নাট্যপ্রিয় পটলবাবুকে তোমার কেমন লাগল নিজের ভাষায় লেখো।
উঃ। পটলবাবু, জীবনে বহুবার বহুক্ষেত্রে আঘাত পেয়েছেন। কিন্তু কখনও থেমে যাননি। কখনও হতাশ হননি। জীবনে তাঁর স্বপ্ন ছিল অভিনেতা হবার। জীবনযুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে তাঁর সেই স্বপ্ন ভেঙে যায়। অনেক দিন পর বাহান্ন বছর বয়সে যখন অভিনয়ের ডাক পেলেন, তখন সেই স্বপ্ন আবার জেগে উঠল। নিজের সমস্ত ক্ষমতা দিয়ে তিনি ফুটিয়ে তুললেন মনের ভাব। সবার কাছে বাহবা পাওয়াটাই তাঁর পারিশ্রমিক ধরে নিয়ে পটলবাবু বাড়ি ফিরে আসেন। এর থেকেই বোঝা যায় তিনি একজন সত্যিকারের শিল্পী। এই সমস্ত গুণের জন্য পটলবাবুর চরিত্রটি আমার অসাধারণ লেগেছে।
No comments:
Post a Comment