👉(স্মৃতিচিহ্ন প্রশ্ন উত্তর সপ্তম শ্রেণীর বাংলা)
▩ সারসংক্ষেপ :
‘জনগণমন-অধিনায়ক জয় হে'- গানটির পাণ্ডুলিপি পাওয়া যায়নি এবং কবে, কোথায় এবং কী উপলক্ষ্যে গানটি রচিত হয়েছিল তাও জানা যায় না। তবে গানটি প্রথম ১৯১১ সালের ২৭ ডিসেম্বর কংগ্রেসের ২৬তম বার্ষিক অধিবেশন উপলক্ষ্যে কলকাতাতে প্রথম জনসমক্ষে গাওয়া হয়। ১৩১৮ সালের মাঘ মাসে 'তত্ত্ববোধিনী' পত্রিকাতে গানটিকে ব্রহ্মসংগীত বলে পরিচয় দেওয়া হয়। ১৯৯৯ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর থিওসফিক্যাল কলেজে গানটি গেয়েছিলেন এবং এর নামকরণ করেছিলেন The Morning song of India। এরপর ১৯৩০ সালে রবীন্দ্রনাথ রাশিয়ায় 'পায়োনিয়ার্স কমিউন'-এ অনাথ বালক-বালিকাদের সামনে এই গানটি গান। 'ও আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি' এই গানটি প্রথম গাওয়া হয় ২৫ আগস্ট ১৯০৫ সালে। গানটির রচনাপ্রসঙ্গে সরলাদেবী তাঁর জীবনের ঝরাপাতা' গ্রন্থে বলেছেন যে রবীন্দ্রনাথ চুঁচুড়ায় থাকাকালীন মাঝিদের গানের সুরে শব্দ বসিয়ে গানটি তৈরি করেছেন। প্রশান্তকুমার পাল অনুমান করেছেন যে বঙ্গভঙ্গের নির্দিষ্ট তারিখ জানতে পারার তাৎক্ষণিক আবেগে রবীন্দ্রনাথ গানটি রচনা করেন ও তাঁর ভক্তদের সূত্রে গানটি সমগ্র কলকাতায় ছড়িয়ে পড়ে। ১৯৭১ সালে স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্র স্থাপিত হলে গানটির প্রথম দশ পক্তি সেখানকার জাতীয় সংগীত হিসেবে গৃহীত হয়।
⬛ ঠিক শব্দটি বেছে নিয়ে বাক্যটি আবার লেখো : প্রতিটা প্রশ্নের মান -1
1.রবীন্দ্রনাথ রাশিয়া যান (ভারত/ইংল্যান্ড/জেনিভা) থেকে।
উঃ জেনিভা থেকে।
2. 'জনগণমন' গানটিকে ‘ব্রহ্মসংগীত’বলা হয় (তত্ত্ববোধিনী/ দ্য বেঙ্গল/যুগান্তর) পত্রিকায়।
উঃতত্ত্ববোধিনী পত্রিকায়।
3. রবীন্দ্রনাথ ভারত পরিক্রমায় যান (১৯১১/১৯১৯/১৯৩০) সালে।
উঃ১৯১৯ সালে।
4.স্বাধীন বাংলাদেশে রাষ্ট্র স্থাপিত হয় (১৯৭১/১৯৭২/১৯৭৬) সালে।
উঃ ১৯৭১ সালে।
5. রবীন্দ্রনাথ তখন সপরিবারে (গিরিডি/জসিজি/কলকাতা)তে।
উঃ গিরিডি।
▩ অতি-সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর :প্রতিটা প্রশ্নের মান -1\2
১. ১৯১১ সালে জাতীয় কংগ্রেস-এর অধিবেশন কোথায় অনুষ্ঠিত হয় ?
উঃ। কলকাতায় জাতীয় কংগ্রেস-এর ২৬তম অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়।
২. রবীন্দ্রনাথের বিরোধীরা কী প্রচার করেছিলেন?
উঃ। রবীন্দ্রাথের বিরোধীরা প্রচার করেছিলেন যে 'জনগণমন' গানটি সম্রাট পঞ্চম জর্জের ভারতে আগমন উপলক্ষে রচিত।
৩. কত সালে রবীন্দ্রনাথ কোথা থেকে রাশিয়ায় গিয়েছিলেন?
উঃ। ১৯৩০ সালে রবীন্দ্রনাথ জেনিভা থেকে রাশিয়ায় গিয়েছিলেন।
৪. কত সালে স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্র হয় ?
উঃ। ১৯৭১ সালে স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্র স্থাপিত হয়।
৫. 'আমার সোনার বাংলা' গানটি প্রথম কবে গাওয়া হয় ?
উঃ ১৯০৫ সালের ২৫ আগস্ট।
৬. 'জনগনমন' গানের রিহার্সাল কার বাড়িতে হয়েছিল? এবং এর নেতৃত্ব কে দিয়েছিলেন?
উঃ। ডা. নীলরতন সরকারের হ্যারিসন রোডের বাড়িতে এর রিহার্সাল হয় এবং দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর এর নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।
৭. কোন্ পত্রিকা জনগনমন গানটির ইংরেজি অনুবাদ প্রকাশ করে ?
উঃ। 'দ্য বেঙ্গলি' পত্রিকা গানটির ইংরেজি অনুবাদ সহ সংবাদ প্রকাশ করে।
৮. সরলা দেবী রবীন্দ্রনাথকে কী বলে সম্বোধন করতেন ?
উঃ । রবিমামা বলে সম্বোধন করতেন।
৯. রবীন্দ্রনাথের কোন্ গানগুলি স্বদেশী গান বলে পরিচিত?
উঃ। রবীন্দ্রনাথ সপরিবারে গিরিডিতে থাকাকালীন ২২/২৩টি গান রচনা করেন। সেই গানগুলি স্বদেশী গান বলে পরিচিত।
১০. আমার সোনার বাংলা গানটির রচনা সম্পর্কে কী জানা যায় ?
উঃ। সরলা দেবীর রচনা ‘জীবনের ঝরাপাতা' গ্রন্থে জানা যায় যে চুচুড়াতে থাকাকালীন সরলা দেবী মাঝিদের কাছ থেকে অনেক সুর সংগ্রহ করেন এবং এই গানটির কবি মাঝিদের নেওয়া সেই সুরেই রচনা করেন। প্রশান্তকুমার পাল অনুমান করেন বঙ্গভঙ্গের নির্দিষ্ট তারিখ জানার পর কবি তাৎক্ষণিক আবেগে গানটি রচনা করেন। ভক্তদের সূত্রে গানটি সমগ্র কলকাতায় ছড়িয়ে পড়ে।
১১. জেমস এইচ কাজিস কে ছিলেন?
উঃ। জেমস এইচ কাজিস ছিলেন দক্ষিণ ভারতের মদনপল্লীর থিয়সফিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ এবং রবীন্দ্রনাথের বিশেষ বন্ধু।
১২. কে 'জনগণমন' গানটি রচনার উপলক্ষ্য জানতে কাকে চিঠি লেখেন?
উঃ। বিশ্বভারতীর প্রাক্তন ছাত্র পুলিনবিহারী সেন 'জনগণমন' গানটি রচনার উপলক্ষ্য জানতে ১৯৩৭ এর ২০ নভেম্বর রবীন্দ্রনাথকে চিঠি লেখেন।
১৩. সরলা দেবী তাঁর লেখায় কাকে কর্তা দাদামশাই বলে সম্বোধন করেছেন।
উঃ। সরলা দেবী রবীন্দ্রনাথের পিতা মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরকে কর্তাদাদামশাই বলে সম্বোধন করেছেন।
১৪. মাঝিদের কাছ থেকে সরলাদেবীর শোনা সুরে রবীন্দ্রনাথ কোন্ কোন্ গান রচনা করেছিলেন?
উঃ। কোন আলোকে প্রাণের প্রদীপ, যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে, আমার সোনার বাংলা প্রভৃতি গানগুলি তিনি সরলাদেবীর মাঝিদের কাছ থেকে শোনা সুরে রচনা করেন।
▩ সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর : প্রতিটা প্রশ্নের মান -2/3
১. ভারতবর্ষের জাতীয় সংগীতটি কোন্ উপলক্ষে প্রথম গাওয়া হয়েছিল ?
উঃ। ১৯১১ সালের ২১-২৮ ডিসেম্বর তারিখে কলকাতায় অনুষ্ঠিত ভারতের জাতীয় কংগ্রেস-এর ২৬ তম বার্ষিক অধিবেশনে ২৭শে ডিসেম্বর এই গানটি প্রথম জনসমক্ষে সমবেত কণ্ঠে গাওয়া হয়।
২. ‘তত্ত্ববোধিনী' পত্রিকায় ভারতবর্ষের জাতীয় সংগীতটির কোন্ পরিচয় দেওয়া হয়েছিল ?
উঃ। তত্ত্ববোধিনী পত্রিকায় ভারতবর্ষের জাতীয় সংগীতটিকে ব্রত্মসংগীত বলে পরিচয় দেওয়া হয়েছিল।
৩. রবীন্দ্রনাথ 'জনগণমন'র যে ইংরাজি নামকরণ করেন সেটি লেখো।
উঃ। রবীন্দ্রনাথের জনগণমন'-র নামকরণ করেন The Morning Song of India.
৪. টীকা লেখো ঃ জাতীয় সংগীত, মাঘোৎসব, বিশ্বভারতী, পুলিনবিহারী সেন, ডাঃ নীলরতন সরকার।
উঃ। জাতীয় সংগীত—বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত 'জনগণমন অধিনায়ক জয় হে' গানটি ১৯৫০ সালের ২৬শে জানুয়ারি ভারতবর্ষের জাতীয় সংগীতের মর্যাদা লাভ করে। যখনই হোক বা যেখানেই হোক জাতীয় সংগীত যথোচিত শ্রদ্ধা ও মর্যাদার সাথে নির্দিষ্ট সুরে গাইতে হবে।
মাঘোৎসব—ব্রাহ্মদের একটি উৎসব। প্রতি বছর বাংলা মাঘ মাসের ১১ তারিখে ব্রহ্মসংগীত ও প্রার্থনার মাধ্যমে এই উৎসব পালিত হয়। মাঘোৎসব ঠাকুর পরিবারে বিশেষভাবে পালন করা হয়।
বিশ্বভারতী—বোলপুরের শান্তিনিকেতনে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একটি আশ্রমিক বিদ্যালয় স্থাপন করেন। এই বিদ্যালয় বিশ্বভারতী নামে পরিচিত। পুলিনবিহারী সেন—ইনি বিশ্বভারতী বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র ছিলেন। 'জনগণমন' গানটির রচনার উপলক্ষ জানতে চেয়ে ইনি রবীন্দ্রনাথকে একটি চিঠি লিখেছিলেন।
ডাঃ নীলরতন সরকার—ডাঃ নীলরতন সরকার ছিলেন একজন বিশিষ্ট চিকিৎসক। কলকাতায় তাঁর হ্যারিসন রোডের বাড়িতে জনগণমন গানটির রিহাসাল হয়।
⬛ নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর নিজের ভাষায় লেখো : প্রতিটা প্রশ্নের মান -2/3
১. ‘জনগণমন' গানটিকে জাতীয় সংগীতরূপে গ্রহণ করতে বিরোধিতা হয়েছিল কেন? রবীন্দ্রনাথের ব্যাখ্যায় সেই বিরোধিতার অবসান কীভাবে হয়েছিল?
উঃ। ‘জনগণমন' গানটিকে ভারতের জাতীয় সংগীতরূপে গ্রহণের প্রস্তাব নেওয়া হলে রবীন্দ্রনাথের বিরোধীগণ প্রচার করেন যে এই গানটি রবীন্দ্রনাথ সম্রাট পঞ্চম জর্জের ভারত আগমন উপলক্ষে রচনা করেছেন। একজন ব্রিটিশ শাসকের উদ্দেশ্যে লেখা গান জাতীয় সংগীতরূপে গ্রহণ করা উচিত কিনা, এই নিয়ে বিরোধিতা হয়।বিশ্বভারতীর প্রাক্তন ছাত্র পুলিনবিহারী সেনের এক চিঠির জবাবে ১৯৩৭ সালে রবীন্দ্রনাথ ‘জনগণমন' গানটি রচনার উপলক্ষ ব্যাখ্যা করেন।
তিনি বলেন, ভারতসম্রাট পঞ্চম জর্জের আগমন উপলক্ষে তাঁর এক বন্ধু সম্রাটের জয়গান রচনার জন্য তাঁকে অনুরোধ জানান। তা শুনে বিস্মিত কবির মনে এক ক্ষোভের সঞ্চার হয়। এরই প্রতিক্রিয়ায় কবি তাঁর ‘জনগণমন' গানটি রচনা করেন এবং সেই গানে ভারতভাগ্যবিধাতার জয়গান করেন। উত্থান ও পতনের দিকে যুগ যুগ ধরে ধাবিত যাত্রীদের যিনি চিরসারথী, জনগণের যিনি অন্তর্যামী পথপ্রদর্শক, যুগযুগান্তরে মানবের ভাগ্য রথচালক যুগ যুগ ধরে কবির মতে তিনি কোনোক্রমেই পঞ্চম বা ষষ্ঠ কোনো জর্জই হতে পারেন না। কবির এই ব্যাখ্যায় ‘জনগণমন' গানটি নিয়ে বিরোধিতার অবসান ঘটে।
২. ‘রবীন্দ্রনাথ গানটিকে পরেও নানা উপলক্ষে ব্যবহার করেছেন। — ১৯১১ খ্রিস্টাব্দের পরবর্তী সময়ে রবীন্দ্রনাথ কীভাবে এই গানটি ব্যবহার করেন?
উঃ। ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে রবীন্দ্রনাথ দক্ষিণ ভারত পরিক্রমার সময় মদনপল্লীতে সেখানকার থিয়োসফিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ ও কবির বন্ধু জেমস এইচ. কাজিস কবির সম্মানে এক সভার আয়োজন করেন। সেই সভায় রবীন্দ্রনাথ এই গানটি গেয়েছিলেন এবং এর নামকরণ করেছিলেন The Morning song of India। এর ১১ বছর পরে ১৯৩০ সালে রবীন্দ্রনাথ জেনিভা থেকে সোভিয়েট রাশিয়া যান এবং মস্কোর ‘পায়োনিয়ার্স কমিউন'-এ অনাথ বালক-বালিকাদের গানের অনুরোধে কবি এই গানটি গেয়ে তাদের শুনিয়েছিলেন।
No comments:
Post a Comment