▨ কবি পরিচিতি ঃ
কবি রজনীকান্ত সেন ১৮৬৫ সালে পাবনার ভাঙাবাড়ি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ‘কান্তকবি নামে সমধিক প্রসিদ্ধ এই কবি কর্মজীবনে একজন আইনজীবী ছিলেন। তাঁর রচিত প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘বাণী’, তিনি মূলত রচয়িতা, ভক্তিমূলক, দেশপ্রেম, হাসির গান রচনায় তাঁর বিশেষ পারদর্শিতা ছিল। তাঁর রচিত উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হল কল্যাণী, অমৃত, আনন্দময়ী, বিশ্রাম, অভয়া প্রভৃতি। ১৯১০ সালে কবির জীবনাবসান হয়।
▨ মর্মার্থ ঃ
এই গানের মাধ্যমে কবি সেই অনন্ত বিশ্বপিতার কাছে প্রার্থনা জানিয়েছেন, ঈশ্বরের মঙ্গল হাতের পরশে সব মলিনতা ও মর্মবেদনা মুছে তিনি নির্মল হতে চেয়েছেন, তাঁর পুণ্য কিরণের স্পর্শে যেন কবির সকল মোহ, কালিমা দূর হয়ে যায়। তার লক্ষ বাসনা দিকহীন গভীর আঁধারের পথে ছুটে চলেছে, কোনো এক অকূল সাগরে ডুবে যাওয়ার জন্য। কবির প্রার্থনা এই যে, হে বিশ্ব বিপদহরণ প্রভু! তিনি যেন সেই অন্যায় পথ রোধ করে তাঁর শ্রীচরণ তলে কবির মত্ত বাসনাকে ভুলিয়ে শান্তির সন্ধান দেন। কবি জানেন সেই পরমকল্যাণময় রয়েছেন বাতাসে, আকাশে, পৃথিবীর জলধারায়, আছেন বৃক্ষের শাখাপ্রশাখায়, চন্দ্র, তারকা ও সূর্যের মাঝে। অবুঝ কবি তা না দেখে চোখে কাপড় বেঁধে অন্ধের ন্যায় কেঁদে চলেছেন। দিশাহীন ও অবুঝ এই কবিকে বিশ্বপিতা যেন পরম কল্যাণের পথ দেখিয়ে ও বুঝিয়ে দেন, এই কবির মনোবাসনা।
⬛অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর : প্রতিটা প্রশ্নের মান -1উ
১. কবির মোহ কালিমা কীভাবে ঘুচবে?
উঃ। কবি মনে করেন ঈশ্বরের পুণ্য কিরণ কবির মোহ কালিমা ঘুচিয়ে দেবে।
২. গভীর আঁধারে কী ছুটে চলেছে?
উঃ। কবির দিকহারা লক্ষ বাসনা গভীর আঁধারের পথে ছুটে চলেছে।
৩. কবি কীভাবে কেঁদে চলেছেন?
উঃ। কবি নয়নে বসন বেঁধে আঁধারে কেঁদে চলেছেন।
৪. ‘বিশ্ব-বিপদ-হন্তা' বলতে কাকে বোঝানো হয়েছে?
উঃ। যিনি বিশ্বের বিপদহরণকারী অর্থাৎ ঈশ্বরকে বোঝানো হয়েছে।
৫. কবি কোথায় তাঁর মত্তবাসনা গুছিয়ে আনতে চান?
উঃ। কবি প্রভু অর্থাৎ ঈশ্বরের শ্রীচরণে তাঁর সব মত্ত বাসনা গুছিয়ে আনতে চান।
৬. কবি রজনীকান্ত সেন কোন্ নামে সমধিক প্রসিদ্ধ ছিলেন?
উঃ। কবি রজনীকান্ত সেন 'কান্তকবি' নামে সমধিক প্রসিদ্ধ ছিলেন।
⬛ সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর : প্রতিটা প্রশ্নের মান -2/3
১. কবি কীভাবে তার মর্ম মুছিয়ে ও কালিমা ঘুচানোর প্রার্থনা করেছেন?
উঃ। কবি পরমপিতার মঙ্গল হাতের পরশে মর্ম অর্থাৎ অন্তরের সকল মলিনতা মুছিয়ে দেওয়ার প্রার্থনা করেছেন, ঈশ্বরের পবিত্র ও পুণ্য কিরণের স্পর্শে কবির সব মোহ অন্ধকার যেন ঘুচে যায়, এই প্রার্থনা তিনি করেছেন।
২. কবি 'অকুল গরল পাথারে' কী ডুবে যাবে বলে মনে করেছেন? এজন্য কোন্ পথকে কবি শ্রেয় বলে মনে করেন ?
উঃ। কবির দিকহারা লক্ষ বাসনা এক গভীর অন্ধকারের পথে ছুটে চলেছে। তিনি নিজেও জানেন না এই উন্মত্ত কামনা বাসনা কোন অকূল গরল সাগরে কখন ডুবে যাবে এবং তা কবিকে কোন পথে নিয়ে যাবে। এজন্য কবি সেই বিশ্ব বিপদহরণ ঈশ্বরের কাছে সেই অন্ধকারের পথ রোধ করে দেওয়ার প্রার্থনা জানিয়েছেন এবং কবি তার সব মত্তবাসনাকে ঈশ্বরের শ্রীচরণের তলায় ফিরিয়ে আনতে চেয়েছেন কারণ তিনি জানেন এই অন্ধকারের পথ থেকে আলোর দিকে ফিরতে হলে ঈশ্বরের স্মরণ নেওয়াই শ্রেষ্ঠ পথ।
৩. কবি কোন্ কোন্ স্থানে বিশ্বপিতা বিরাজমান বলে অনুভব করেছেন ?
উঃ। কবি অনুভব করেছেন এই মহাবিশ্বের সব কিছুর মাঝেই ঈশ্বর বিরাজমান। তিনি আছেন আগুনে, বাতাসে, নীল আকাশে, পৃথিবীর জলধারায়, গাছের শাখাপ্রশাখায়। মেঘ, সূর্য-চন্দ্র ও তারার মাঝে সেই বিপদহরণ প্রভু অবস্থান করেছেন। কবি তা অনুভব করেও সঠিক পথ খুঁজে পাচ্ছেন না। তাই তিনি আকুল প্রার্থনা জানাচ্ছেন প্রভুর চরণে।
৪. 'মরি গো কাঁদিয়া' – কবি কেন কেঁদে মরছেন?
উঃ। এই মহাবিশ্বের সব স্থানেই থাকা প্রভুকে কবি দেখতে পান না, তাঁর মহিমা বুঝতেও পারেন না। কিন্তু তিনি ঈশ্বরের করুণা অনুভব করেন। মূর্খের মত চোখে কাপড় বেঁধে কবি তাকে পাওয়ার জন্য আঁধারে কেঁদে মরছেন। তাই কবির প্রার্থনা, এই অবুঝ কবিকে তিনি যেন কৃপা করে সব দেখিয়ে বুঝিয়ে দেন অর্থাৎ সঠিক পথের সন্ধান দেন।
No comments:
Post a Comment