👉(চিরদিনের প্রশ্ন উত্তর সপ্তম শ্রেণী )
▨ কবি পরিচিতি :
১৮৬৪ সালে বাংলা সাহিত্যের খ্যাতনামা মহিলা কবি কামিনী রায় বরিশাল জেলার বাসান্ডা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা ছিলেন চণ্ডীচরণ সেন। অতি শৈশব থেকেই তিনি কবিতা তাঁর রচনা করেন। মাত্র ১৫ বছর বয়সে তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ 'আলো ও ছায়া' প্রকাশিত হয়। বেথুন কলেজ থেকে সংস্কৃতে বি.এ. পাস করে তিনি সেখানেই শিক্ষাব্রতীর কাজে আত্মনিয়োগ করেন। তাঁর লেখা উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থগুলি হল—'পৌরাণিকী’, ‘দীপ', 'জীবনপথে', 'মাল্য ও নির্মাল্য', 'অশোক সঙ্গীত' প্রভৃতি। তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি 'জগত্তারিণী স্বর্ণপদক' লাভ করেন। ১৯৩৩ সালে কামিনী রায় পরলোকগমন করেন।
▨ কবিতা পরিচয় :
‘স্মৃতিচিহ্ন' অর্থাৎ কোনো কিছুর দ্বারা কোনো ব্যক্তি বা সময়কে মনে রাখা। কবিতাটিতে কবি কী করলে মানুষ মনে রাখে এবং জোর করে মনে রাখবার জন্য যে মিথ্যা আকাঙ্ক্ষা যে মানুষ করে ব্যক্ত করেছেন। তাই কবিতাটির নাম স্মৃতিচিহ্ন সার্থক।
▨ সারমর্ম:
ইট-কাঠ-পাথর দিয়ে তৈরি জিনিসে মানুষ নিজের নাম অক্ষুণ্ণ রাখতে চেয়েছে এমন নজির বহু আছে। কিন্তু সেই সৌধ চিরস্থায়ী নয়। কালের প্রভাবে তা একদিন বিনষ্ট হবেই। মানুষের হৃদয়ে যারা নিজেদের নাম রেখে যেতে পারেন তারা গরিব সহায়-সম্বলহীন হওয়া সত্ত্বেও তাদের নামই লোকে চিরকাল মনে রাখে।
▩ অতি-সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর :প্রতিটা প্রশ্নের মান -1
1. মহৎ মানুষদের জীবন-কথা আমরা পাঠ করে থাকি কেন?
উঃ। তাদের জীবন থেকে শিক্ষা নিয়ে তাঁদের মতো হয়ে ওঠার জন্য আমরা মহৎ মানুষদের জীবন-কথা পাঠ করি ।
2.অত্যাচারী কোন্ কোন্ সাম্রাজ্যলোভী জাতির কথা তুমি ইতিহাস পড়ে জেনেছ?
উঃ । শক, হুন, মুঘল, পাঠান ও ইংরেজ প্রভৃতি জাতির কথা আমি ইতিহাস পড়ে জেনেছি।
3.অতীত ইতিহাসের ধূসর হয়ে আসা কোন্ স্মারক / সৌধ /মিনার তুমি দেখেছ?
উঃ। কুতুব মিনার দেখেছি।
4. তোমার দৃষ্টিতে কাদের কথা সমাজের সকলের চিরকাল মনে রাখা উচিত?
উঃ। যাঁরা সাধারণ মানুষের মধ্যে থেকে তাদের জন্য কাজ করেছেন তাদের কথা সমাজের সকলের চিরকাল মনে রাখা উচিত।
5. মানুষ নিজেকে স্মরণীয় করে রাখতে চায় কেন?
উঃ। মহান হতে পারার আত্মতৃপ্তির জন্য মানুষ নিজেকে স্মরণীয় করে রাখতে চায়।
▨ নীচের প্রশ্নগুলির সংক্ষিপ্ত ও যথাযথ উত্তর দাও ঃ প্রতিটা প্রশ্নের মান -1
১. ‘স্মৃতিচিহ্ন' কবিতাটি কার রচনা?
উঃ। ‘স্মৃতিচিহ্ন' কবিতাটি কবি কামিনী রায়ের রচনা।
২. কবিতাটি তাঁর কোন্ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত?
উঃ। কবিতাটি তাঁর ‘নির্মাল্য' কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত।
৩. কবিতাটি কী জাতীয় রচনা?
উঃ। কবিতাটি একটি সনেট।
৪. কবিতাটিতে কবি কাদের ‘মূঢ়' ও ‘ব্যর্থ মনস্কাম' বলেছেন ?
উঃ। যারা অর্থ ও প্রতিপত্তির দ্বারা নিজেদেরকে চিরস্মরণীয় করতে চায় তাদের কবি ‘মূঢ়' ও 'ব্যর্থ মনস্কাম' বলেছেন।
৫. তাদের স্মৃতি কীভাবে লুপ্ত হয়ে যায়?
উঃ। তাদের তৈরি সৌধের ভগ্নস্তূপের সাথে সাথে তাদের স্মৃতিও লুপ্ত হয়ে যায়।
৬. কারা মানুষের মনে চিরস্থায়ী আসন লাভ করে ?
উঃ। যারা মানুষের জন্য কাজ করে তারা মানুষের মনে চিরস্থায়ী আসন লাভ করে।
৭. ‘কাল’কে কবিতায় কীসের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে?
উঃ। ‘কাল’কে কবিতায় সময়ের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে।
৮. কবিতায় ‘শুল্ক তৃণ' বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন ?
উঃ। কবিতায় 'শুষ্ক তৃণ' বলতে কবি সেই সকল নামগুলির কথা বলেছেন যাঁরা নিজেদের নাম ইট-পাথরের স্মৃতিসৌধে চিরদিন ধরে রাখতে চেয়েছিলেন। সময়ের জলস্রোতে তারা শুষ্ক তৃণ বা শুকনো ঘাসের মতো ভেসে গেছে।
▧ তিন-চারটি বাক্যে নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর দাও : প্রতিটা প্রশ্নের মান -2/3
১. ‘ওরা ভেবেছিল মনে'—কাদের কথা বলা হয়েছে? তারা কী ভেবেছিল?
উঃ। এখানে যশলোভী বলতে বড়ো বড়ো সাম্রাজ্যবাদীদের কথা বলা হয়েছে। তারা ভেবেছিল, তাদের তৈরি করে-যাওয়া সব মনোহর প্রাসাদ ও ইট পাথরের সৌধের দ্বারা তারা নিজেদের নাম বিশাল অক্ষরে ধরে রাখবে এবং মানুষ তাদের চিরকাল মনে রাখবে।
২. 'মূঢ় ওরা’–কবিতায় তাদের মূঢ় বলার কারণ কী?
উঃ। এখানে যশলোভী মানুষদের কথা কবি বলেছেন। তারা ভেবেছিল তাদের দ্বারা নির্মিত সৌধ তাদের চিরস্মরণীয় করে রাখে। কিন্তু তা আসলে ভুল। তাদের ভাবনা ব্যর্থ হয়েছে। মানুষকে মনে রাখা হয় তার কাজের জন্য। যারা সাধারণের জন্য কাজ করেন মানুষ তাদের চিরকাল মনে রাখে। তাই কবি সেইসব মানুষদের মূঢ় বলেছেন।
৩. ‘কে বা রক্ষা করে'—কী রক্ষা করার কথা বলা হয়েছে? তা রক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে না কেন ?
উঃ প্রাচীনকালে নির্মিত স্মৃতিসৌধের নির্মাতাদের নাম ও পরিচয়ের কথা এখানে বলা হয়েছে। কালের প্রকোপে সবকিছুরই বিনাশ হবে। যতই চেষ্টা করা হোক তা বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব নয়। তাই যশলোভী নির্বোধ মানুষদের তৈরি এই সকল সৌধ রক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে না। কালের বদলে তাদের স্মৃতিমলিন হয়ে যেতে বসেছে।
৪. 'দরিদ্র আছিল তারা'—কাদের কথা বলা হয়েছে? তাদের রাজত্ব কীভাবে অক্ষুণ্ণ রয়েছে বলে কবি মনে করেন ?
উঃ। যারা মানুষের মনের মাঝে নিজেদের সিংহাসন প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছেন, তাঁদের কথা বলা হয়েছে। তাঁদের কর্মের ফলে তাঁদের নাম মানুষের মনে গাঁথা হয়ে আছে যা কালের স্রোতে না ভেসে শাশ্বত ও উজ্জ্বল হয়ে রয়েছে।
৫. কালস্রোতে কাদের নাম ধুয়ে যায়? সেই স্রোত কাদের স্মৃতি গ্রাস করতে পারে না?
উঃ। সেই সব মানুষের দল যারা ইট-কাঠের সৌধ তৈরি করে নিজেদের নাম বিশাল অক্ষরে চিরদিন ধরে রাখতে চায় তাদের নাম কালস্রোতে ধুয়ে যায়। যারা মানুষের হৃদয় অধিকার করে রয়েছে মানুষের মনের মাঝে যাদের আসন পাতা সেই কালস্রোত সেই সমস্ত মানুষদের স্মৃতি গ্রাস করতে পারে না। মনেক মণিকোঠায় চিরদিন তাঁরা থেকে যান।
৬. ‘মানবহৃদয়-ভূমি করি অধিকার'—কারা কীভাবে মানবহৃদয়-ভূমি অধিকার করে ?
উঃ। যারা মানুষের জন্য কাজ করে, যারা মানুষের মধ্যে মিশে থাকে, তারা মানবহৃদয় ভূমি অধিকার করে।
৭. কবিতায় কবি কোন স্মৃতিকে কেন 'অবিনশ্বর' ও 'নিত্যসমুজ্জ্বল' বলেছেন?
উঃ। যাঁরা দরিদ্র, সহায়-সম্বলহীন ছিল, যারা মানুষের মনের মধ্যে দৃঢ় সিংহাসন স্থাপন করেছিল, কবি তাঁদের কথা বলেছেন। কারণ তাঁদের নাম কোনো প্রস্তর নির্মিত সৌধ নয় যে কালের প্রভাবে জীর্ণ হবে। তাই তাঁদের নাম 'অবিনশ্বর' ও ‘নিত্যসমুজ্জ্বল' হয়ে থাকবে।
৮. তোমার দৃষ্টিতে মানুষের স্মরণীয় হয়ে থাকার শ্রেষ্ঠ পন্থাটি কী?
উঃ। আমার দৃষ্টিতে মানুষের স্মরণীয় হয়ে থাকার শ্রেষ্ঠ পন্থাটি হল মানুষের জন্য কাজ করা। মানুষের মধ্যে মিশে যদি তাদের দুঃখ দূর করা যায় ও তাদের মুখে হাসি ফোটানো যায় তবেই মানুষ তাঁকে স্মরণীয় করে রাখে। নিজের কর্ম, ত্যাগ ও ভালোবাসার দ্বারাই মানুষের মনে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকা যায়।
▩ সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর : প্রতিটা প্রশ্নের মান -2/3
১. 'ভেসে যায় নামগুলি'—কীভাবে নামগুলি ভেসে যায় ?
উঃ। যশলোভী মানুষের তৈরি ইট-পাথরের সৌধগুলি মাটিতে পাথরের উপর ভেঙে পড়েছে। চারিদিকে ভাঙা স্তূপের তলায় তাদের স্মৃতি বিলুপ্ত হয়ে যায় শুকনো ঘাসের মতো। কালের নদীস্রোতে সেই নামগুলি ভেসে যেতে থাকে।
২. 'ছিল না সম্বল'-সম্বল না থেকেও কীভাবে তাদের রাজত্ব অক্ষুণ্ণ রয়ে গেল ?
উঃ। যাঁরা মানুষের হৃদয়ে অধিকার করে আছেন সেখানে যারা নিজেদের সিংহাসন প্রতিষ্ঠা করেছেন, সেইসব দরিদ্র মানুষদের এত পাথরের তৈরি সৌধের বোঝা জড়ো করার মতো সম্বল ছিল না। কোনো স্মৃতিসৌধ বা বিশাল প্রাসাদ নির্মাণ না করে সেইসব মানুষজনের রাজত্ব মানুষের মনে অক্ষুণ্ণ হয়ে রয়েছে। কালের স্রোতে ধৌত হয়েও সমুজ্জল হয়ে রয়েছে।
৩. 'ওরা ভেবেছিল মনে'- ওরা কারা? তারা কী ভেবেছিল? তারা যা ভেবেছিল তা কী সফল হয়েছে?
উঃ। ওরা হলো যশোলোভী সাম্রাজ্যবাদী ধনী মানুষের দল। তারা ভেবেছিল নিজেদের নাম অক্ষুন্ন রাখতে ইট-পাথরের তৈরি মনোহর স্মৃতিসৌধে। চিরদিনের জন্য বিশাল অক্ষরে নিজেদের মহিমা ও গুণকীর্তন ধরে রেখে যাবে। না তারা যা ভেবেছিল তা সফল হয়নি। তারা নির্বোধ তাই তাদের মনস্কামনা ব্যর্থ হয়েছে। ভগ্ন স্তূপের মধ্যে তাদের স্মৃতি লুপ্ত হয়ে গেছে।
No comments:
Post a Comment