ছন্দে শুধু কান রাখো কবিতা, প্রশ্ন উত্তর, / Class 7th chhande shudhu Kan rakho questions and answers in Bangla - Psycho Principal

Fresh Topics

Monday, 16 December 2024

ছন্দে শুধু কান রাখো কবিতা, প্রশ্ন উত্তর, / Class 7th chhande shudhu Kan rakho questions and answers in Bangla

  

ছন্দে শুধু কান রাখো
অজিত দত্ত




পাগলা গণেশ প্রশ্ন উত্তর পড়তে নিচের লিংকে ক্লিক করো

👉 ( পাগলা গণেশ প্রশ্ন উত্তর )


কবিতা: 

মন্দ কথায় মন দিয়ো না
            ছন্দে শুধু কান রাখো ,
দ্বন্দ্ব ভুলে মন না দিলে
           ছন্দ শোনা যায় নাকো ।
ছন্দ আছে ঝড় - বাদলে
           ছন্দ আছে জোছনাতে ,
দিন দুপুরে পাখির ডাকে
          ঝিঝির ডাকে ঘোর রাতে ।
নদীর স্রোতের ছন্দ যদি
          মনের মাঝে শুনতে পাও
দেখবে তখন তেমন ছড়া
         কেউ লেখেনি আর কোথাও
ছন্দ বাজে মোটর চাকায়
           ছন্দে চলে রেলগাড়ি
জলের ছন্দে তাল মিলিয়ে
         নৌকো জাহাজ দেয় পাড়ি
ছন্দে চলে ঘড়ির কাঁটা
         ছন্দে বাঁধা রাত্রি - দিন ,
কান পেতে যা শুনতে পাবে
              কিচ্ছুটি নয় ছন্দহীন ।
সকল ছন্দ শুনবে যারা
           কান পেতে আর মন পেতে
চিনবে তারা ভুবনটাকে
         ছন্দ সুরের সংকেতে ।
মনের মাঝে জমবে মজা
                 জীবন হবে পদ্যময় ,
কান না দিলে ছন্দে জেনো
         পদ্য লেখা সহজ নয় ।



◼ কবি পরিচিতি:
অবিভক্ত বাংলার পূর্ববঙ্গে , ঢাকার বিক্রমপুরে ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দের ২৩ সেপ্টেম্বর কবি অজিত দত্তের জন্ম হয় । অত্যন্ত মেধাবী এই মানুষটি ত্রিশ - চল্লিশের দশকে আধুনিক বাংলা কবিতার এক বিশিষ্টতম কবি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন । ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ও সংস্কৃত ভাষায় প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করে তিনি এমএ পাশ করেন । তাঁর কর্মজীবনের সূচনা হয় কলকাতার রিপন কলেজিয়েট স্কুলে শিক্ষকতার মধ্য দিয়ে । পরবর্তী ক্ষেত্রে চন্দননগর , বারসাত , প্রেসিডেন্সি কলেজে খ্যাতির সঙ্গে অধ্যাপনা করেছেন তিনি । অবশেষে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করেন । অর্থাৎ কবির জীবনের একটা বড়ো অংশই জ্ঞানচর্চায় অতিবাহিত হয় । ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দে দীর্ঘ শিক্ষকজীবন থেকে অবসর নেন তিনি । ছাত্রজীবন থেকেই তাঁর লেখালেখির শুরু । ক্রমে এক বলিষ্ঠ কবি হিসেবে অজিত দত্ত জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন । মাত্র ২০ বছর বয়সে বন্ধু বুদ্ধদেব বসুর সঙ্গে ‘ প্রগতি ’ ( ১৯২৭ ) পত্রিকার সম্পাদনা তাঁর সাহিত্যিক উত্তরাধিকারে গভীর দৃঢ়তা দেয় । পরে বুদ্ধদেব বসু যখন ‘ কবিতা ’ পত্রিকার প্রকাশ শুরু করেন , তখন সূচনালগ্ন থেকেই তিনি ঘনিষ্ঠভাবে সংযুক্ত থেকেছেন । পরবর্তীক্ষেত্রে গোকুলচন্দ্র নাগ ও দীনেশরঞ্জন দাশের যুগ্ম - সম্পাদনায় মাসিক পত্রিকা ‘ কল্লোল ’ প্রকাশিত হলে , তিনি নিয়মিত সেখানে লেখালেখি করে পত্রিকার এক যোগ্য সাহিত্যকার হয়ে ওঠেন । ‘ দিগন্ত ’ সাহিত্য - বার্ষিকীর সম্পাদক ছিলেন কবি । তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘ কুসুমের মাস ’ ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত হয় । কবির উল্লেখযোগ্য কয়েকটি কাব্যগ্রন্থ হল — ‘ কুসুমের মাস ’ , ‘ পাতাল কন্যা ’ , ‘ নষ্টচঁাদ ’ , ‘ পুনর্নবা ’ , ‘ ছড়ার বই ’ , ‘ ছায়ার আলপনা ’ , ‘ জানালা ’ , ‘ সাদা মেঘে কালো পাহাড় ’ প্রভৃতি।কয়েকটি প্রবন্ধগ্রন্থেরও জনক ছিলেন তিনি । ‘ জনান্তিকে ’ , ‘ মন পবনের নাও ’ ও ‘ বাংলা সাহিত্যে হাস্যরস ’ তাঁর বুদ্ধিদীপ্ত ও গবেষণাধর্মী গদ্যগ্রন্থ । ১৯৭৯ খ্রিস্টাব্দের ৩০ ডিসেম্বর এই মহান কবি লোকান্তরিত হয় ।



◼ উৎস:
"ছন্দে শুধু কান রাখো" একটি কিশোরমনষ্ক  কবিতা, যেটি কবি অজিত দত্তের ২০০৭ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত "শ্রেষ্ঠ কবিতা" কবিতা সংকলন থেকে নেও।


◼ পাঠপ্রঙ্গ:

প্রকৃতির পরতে পরতে রয়েছে ছন্দময়তার আদর্শ উদাহরণ । প্রকৃতির সঙ্গে সঙ্গে ছন্দের আশ্চর্য প্রকাশ । এই ছন্দেই জীব - জীবনও চালিত হয় । যুগ্মভাবে কান পাতলে আর মন দিলেই T শোনা যাবে ছন্দের টুং - টাং শব্দ ৷ তবে কোলাহলমুখর এই বর্তমান পৃথিবীতে এই ছন্দময়তাকে অনুভব করা খুব সহজ নয় । কবি তাঁর কবিতায় এই বিশ্বাসকে নিবিড়ভাবে গেঁথে দিয়েছেন । আমাদের চারপাশের অনেক কিছুর মধ্যেই ছন্দের যে চলাচল , তাকে যথার্থ অনুভব করতে পারলেই জীবন হয়ে উঠবে সহজ ও সুন্দর । এতে মানবমনের সৃষ্টিশীলতাও বিকশিত হবে নিশ্চিত । জীবনকে পদ্যময় করার উপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন কবি এবং সেক্ষেত্রে সহযোগ পেতে ছন্দের আশ্রয়কেই তিনি শ্রেষ্ঠ পথ হিসেবে বিবেচনা করেছেন ৷ নিজমনকে ছন্দের অবগাহনে সিক্ত করে , এই ভুবনটিকে ছন্দ - সুরের সংকেতে অনুভব করে নিতে পারলেই মনে জমবে মজা ৷ সেই ছন্দকেই কবি অনুভব করতে বলেছেন ‘ ছন্দে শুধু কান রাখো ’ কবিতায় ৷


◼ বিষয় সংক্ষেপ:
আলোচ্য ‘ ছন্দে শুধু কান রাখো ' কবিতায় কবি বোঝাতে চেয়েছেন ছন্দ হল একপ্রকার পদ্যবন্ধ । ছন্দের উপর ভর দিয়ে কবিতা যেমন এগিয়ে চলে , তেমনি এই মহাবিশ্বের সব কিছুই এক ছন্দময়তার বন্ধনে বাঁধা ৷ অতএব বিশ্বময় ছড়ানো এক ছন্দস্পন্দন সঠিকভাবে অনুভব করতে গেলে , মন্দ কথায় কান দেওয়া চলবে না এবং ছন্দে কান রেখে চলতে হবে । দ্বন্দ্ব - বিবাদ ভুলে গিয়ে মনকে সজাগ করে না তুললে , ছন্দকে যথার্থ শোনা যায় না । অথচ বিশ্বপ্রকৃতির অজস্র উপাদানে ছড়িয়ে রয়েছে ছন্দ । ঝড়বাদল , জোছনা , দিনের পাখির কলতান কিংবা ঘোর রাতের ঝিঁঝির ডাকে ছন্দ থাকে টইটুম্বুর হয়ে । নদীর স্রোতের অসাধারণ কলরোলের ছন্দবদ্ধতা মনের মাঝে শুনতে পেলে দেখা যায় , এ যেন ছড়ার ছন্দ , যা কেউ কোথাও লেখেনি ।মোটরের চাকাতেও ছন্দ বেজে উঠতে দেখা যায় । রেলগাড়ির চলাচলেও রয়েছে ছন্দের অনন্য উপস্থিতি । জলের উপরেও ছন্দ - তাল বজায় রেখে নৌকো - জাহাজকে পারাপার করতে দেখা যায় ৷ ছন্দে চলার বড়ো উদাহরণ বুঝি ঘড়ির কাঁটা , যাতে বাঁধা পড়ে আছে রাত ও দিন । অতএব কান পেতে যা শুনতে পাওয়া যাবে , তার কিছুই ছন্দহীন নয় । এইসব ছন্দ যারা কান পেতে ও মন দিয়ে শুনবে , তারাই যথার্থভাবে ভুবনটাকে ছন্দ - সুরের সংকেতে চিনতে পারবে । আর বিশ্বপ্রকৃতির এই ছড়ানো ছন্দকে হৃদয় দিয়ে অনুভব করতে পারলেই উপলব্ধি করা যাবে জীবনের আনন্দ ৷ তখন জীবন হয়ে উঠবে ‘ পদ্যময় ’ । কান পেতে ও মন দিয়ে ছন্দের অনুভূতি গ্রহণ না করলে ছন্দবদ্ধ পদ্য লেখা সহজ হবে না ৷


◼ নামকরণ:
নামকরণই সাহিত্যের এমন একটি বিষয় , যা যে - কোনো সাহিত্যসৃষ্টির ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ । কেন - না পাঠককুল ওই সাহিত্যের শৈলীতে প্রবেশের পূর্বে নামকরণ বা শিরোনাম দেখেই পাঠে প্রথম উৎসাহিত হন । অতএব দেখা যায় সাহিত্যকারেরা নামকরণটিকে বিষয়ানুগ ও যুক্তিগ্রাহ্য করে তোলার চেষ্টা করেন । তাই নামকরণ হয়ে ওঠে সাহিত্যের এক মৌলিক উপাদান । কবি অজিত দত্তের ‘ ছন্দে শুধু কান রাখো ’ এই কিশোরমনস্ক কবিতাটিতেও দেখা যায় নামকরণের প্রতি কবির ভাবনা যথেষ্ট নিজস্বতা পেয়েছে । কবিতার সূচনায় কবি মন্দ কথায় কান না দিয়ে কেবল ছন্দে কান রাখতে বলেন , কারণ তাঁর গভীর বিশ্বাস দ্বন্দ্ব - বিবাদ ভুলে মনকে একাত্ম করতে না পারলে জগত্ময় ছড়িয়ে ৷ থাকা ছন্দকে যথার্থ অনুভব করা যায় না । বিশ্বময় ছন্দের সুন্দরপ্রকাশকে যথার্থ অনুভব করার প্রেরণা দিতেই কবি কান পেতে ও মন দিয়ে ছন্দ শোনার পরামর্শ দেন । দেখিয়ে দেন ঝড়বাদলে , দিনের পাখির ডাকে , ঘোর রাতের ঝিঁঝির ডাকে — সর্বত্রই প্রকৃতির নানা প্রসঙ্গে ছন্দ যেন নিজস্ব মাত্রা নিয়ে উপস্থিত । নদীর স্রোতে মাটির উপর মোটর চাকার , রেলের উপর রেলগাড়ির চলার , জলের উপর নৌকো - জাহাজের পাড়ি জমানোর ছন্দকে কবি কান পেতে শুনতে বলেন । ছন্দে চলা ঘড়ির কাঁটা যেমন দিনরাত্রিকে বেঁধে রেখেছে , তেমনি এ জগতের ‘ কিচ্ছুটি নয় ছন্দহীন । ' অতএব সব কিছুর মধ্যে ছন্দের আশ্চর্য প্রকাশ । যারা ‘ কান পেতে আর মনে পেতে ’ শুনবে , তারাই ‘ ছন্দ সুরের সংকেত ’ ভুবনটাকে যথার্থ চিনবে , এ বিষয়ে সন্দেহ নেই । কবিতাশেষে কবি এ কথা জানাতে ভোলেননি , ছন্দকে সঠিক অনুভব করতে পারলে মনে আসবে মজা , যা জীবনকে করে তুলবে পদ্যময় । আবার ছন্দ না থাকলে কবিতা লেখাও যে কঠিন হয়ে পড়বে , এ কথাও কবি উল্লেখ করেছেন । অতএব দেখা যাচ্ছে , কবি তাঁর কবিতায় প্রকৃতির ছন্দে কান রাখার বিশেষ প্রয়োজনীয়তাকে সর্বাধিক মূল্য দিয়েছেন । এই কান রাখার আসল উদ্দেশ্য জীবনের আনন্দকে সত্যিকারের অনুভব করা । সুতরাং কবিতার শিরোনামে উঠে আসা ছন্দে শুধু কান রাখো ’ চমকপ্রদ , অর্থময় , ব্যঞ্জনাধর্মী হওয়ায় তা সার্থক হয়েছে ৷



প্রতিটি প্রশ্নের মান -২
১.১ “ মন্দ কথায় কান দিয়ো না ” —মন্দ কথার প্রতি কবির কীরূপ মনোভাব কবিতায় ব্যক্ত হয়েছে ?
উত্তরঃ মন্দ কথা ( খারাপ বা অপ্রিয় কথা ) যদি মনে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করে এক বিরূপ মনোভাবের বিকাশ ঘটায় , তাহলে ছন্দ শোনা যায় না । কবি মনে করেন প্রকৃত ছন্দের সুর শুনতে না পেলে আনন্দ অনুভব করা সম্ভব হয় না । তাই কবি মন্দ কথায় কান দিতে নিষেধ করেছেন ।

১.২ “ কেউ লেখেনি আর কোথাও ” —কোন্ লেখার কথা এখানে বলা হয়েছে ?
উত্তরঃ নদীর স্রোতের চলাচলে যে ছন্দপূর্ণ ‘ ছড়া ’ লুকিয়ে আছে , সেই ছন্দ অন্য কারোর নেই । এই নদীর স্রোতের ছন্দ মন দিয়ে লঅনুভব করলে বোঝা যাবে , এমন ছন্দময় ‘ ছড়া ’ ইতিপূর্বে কেউ কখনো কোথাও লেখেনি । অর্থন

১.৩ “ চিনবে তারা ভুবনটাকে ” —কারা কীভাবে ভুবনটাকে চিনবে ?
উত্তরঃ  এই ভুবন বিশাল ও বিপুল । এর চারদিকে যে ছন্দ ছড়িয়ে আছে , সেই ছন্দকে মন ও কান পেতে শুনলে — ভুবনটাকে যথার্থ চেনা সম্ভব হয় । কেন - না ছন্দের সাহায্যেই জগৎ ও জীবনের সফল ইঙ্গিত অনুভব করা যায় এবং ভুবনটাকে সহজে চিনতে পারা যায় ।

১.৪ “ পদ্য লেখা সহজ নয় ” —পদ্য লেখা কখন সহজ হবে বলে কবি মনে করেন ?
উত্তরঃ জীবন ছন্দময় , জীবনের সেই ছন্দে কান দিতে হবে , মন দিতে হবে । জীবনের ছন্দ সঠিকভাবে অনুভব করতে পারলে জীবন পদ্যময় হয়ে উঠবে ৷ আর তখনই পদ্য লেখা সহজ হবে বলে কবি মনে করেন ।

১.৫  “ ছন্দ শোনা যায় নাকো ” —কখন কবির ভাবনায় আর ছন্দ শোনা যায় না ?
উত্তরঃ সকল প্রকার দ্বন্দ্ব ভুলে গিয়ে মন না দিলে ছন্দ শোনা যায় না বলে কবি মনে করেন । অর্থাৎ ছন্দ শুনতে হলে দ্বন্দ্ব ভুলে একাগ্রচিত্ত হতে হবে ।

১.৬ ছন্দ আছে — এমন চারটি প্রাকৃতিক বিষয় বা ঘটনার নাম লেখো ।
উত্তরঃ প্রকৃতির সকল ক্রিয়াকলাপেই ছন্দ আছে । এমন চারটি দৃষ্টান্ত হল — ঝড় - বাদল , চাঁদের জোছনা , নদীর স্রোত ও রাত্রি - দিন ৷

১.৭ যানবাহনের উপর ছন্দ কেমন প্রভাব ফেলে ?
উত্তরঃ  যানবাহনকে ছন্দ মেনেই চলতে হয় । মোটরের চাকায় ছন্দ ধ্বনিত হয় , রেলগাড়িও চলে ছন্দের জাদুতে । জলের ছন্দে তাল মিলিয়ে নদী বা সাগরে নৌকো বা জাহাজ পাড়ি দেয় । এভাবেই যানবাহনের উপর ছন্দ প্রভাব ফেলে ।

১.৮ ‘ চিনবে তারা কী ? ভুবনটাকে ’ – ভুবনটাকে চেনার তৎপর্য
উত্তরঃ প্রশ্নে উদ্ধৃত অংশটি কবি অজিত দত্তের ‘ ছন্দে শুধু কান রাখো ’ নামক কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে । বিশাল ভুবনকে চেনার কবি নির্দেশিত অর্থ হল ; তার ভাব , চলাচল , ছন্দময়তা ও সৌন্দর্যকে নানাভাবে উপলব্ধি করা । কবি বলতে চেয়েছেন মন ও কান পেতে প্রকৃতির ছন্দ অনুভব করতে পারলেই ভুবনকে চেনা সহজ হবে ।

প্রতিটি প্রশ্নের মান -৩
১. ছন্দ আছে জোছনাতে , ' – উদ্ধৃতাংশটি কার লেখা কোন্ কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে ? জোছনাতে কীভাবে ছন্দ আছে ?
উত্তরঃ  কবি অজিত দত্তের লেখা ' ছন্দে শুধু কান রাখো ’ কবিতা থেকে উদ্ধৃত অংশটি নেওয়া হয়েছে । হট চঁাদের যে মিষ্টি আলো রাতের পৃথিবীকে সৌন্দর্যময়ী করে তোলে তাকেই আমরা জোছনা বলে থাকি । এই সুমধুর জোছনা আমাদের মনে আনন্দের প্রকাশ ঘটায় ; আমরা আবেগে মত্ত হয়ে পড়ি জোছনার মাধুর্যে । জোছনার প্রভাবে যেহেতু আমরা প্রভাবিত হই , তাই বলা যায় জোছনারও নিজস্ব ছন্দ আছে , নাহলে তা এমনভাবে মানুষকে মত্ত করতে পারত না ।

২.নদীর স্রোতের ছন্দ যদি / মনের মাঝে শুনতে পাও ...'— নদীর স্রোতের ছন্দ কীভাবে মনের মাঝে শুনতে পাওয়া যায় ?
উত্তরঃ  কবি অজিত দত্তের ‘ ছন্দে শুধু কান রাখো ’ কবিতা থেকে উদ্ধৃত অংশটি নেওয়া হয়েছে । নদী আপন বেগে বয়ে চলে সাগরের উদ্দেশে । নদীর ঢেউয়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নৌকো চলে , মাঝি গান গায় । নদীর স্রোতের কলতান আমাদের মনে আনন্দের সঞ্চার করে । অনুভবের মাধ্যমে স্রোতের ছন্দ বা স্রোতের গান শুনতে পেলে বোঝা যাবে যে , তার মতো মধুর সুর আর কিছুতেই থাকতে পারে না । স্রোতের মাঝে যে ছন্দ আছে , তাই যেন সুন্দর কবিতা ।

৩. জলের ছন্দে তাল মিলিয়ে / নৌকো জাহাজ দেয় পাড়ি ।'— ‘ জলের ছন্দে তাল মিলিয়ে নৌকো - জাহাজ ’ কীভাবে পাড়ি দেয় ?
উত্তরঃ কবি অজিত দত্তের ‘ ছন্দে শুধু কান রাখো ’ কবিতা থেকে উদ্ধৃত অংশটি নেওয়া হয়েছে । প্রকৃতি ছন্দময় , অর্থাৎ প্রকৃতির সকল কাজের মধ্যেই রয়েছে ছন্দ । ছন্দ ছাড়া জীবন অতিবাহিত হতে পারে না । নদী বা সাগরের তীরে বসলে দেখা যায় ঢেউ এসে পাড়ে ছলাৎ ছলাৎ শব্দে আছড়ে পড়ছে । সেই ধ্বনি ছন্দময় , তা রসিক মানুষের মনে সুরের জাগরণ ঘটায় । নৌকো বা জাহাজ ঢেউয়ের তালে তাল মিলিয়ে দূরে যাত্রা করে , সেক্ষেত্রেও ছন্দের চেতনা মনের মধ্যে প্রভাব ফেলে । মন দিয়ে অনুভব করতে না পারলে ছন্দকে ব্যবহার করা সম্ভব হয় না ।

৪. কিচ্ছুটি নয় ছন্দহীন ।'— উদ্ধৃতাংশের ব্যাখ্যা লেখো ।
উত্তরঃ কবি অজিত দত্তের ‘ ছন্দে শুধু কান রাখো ’ কবিতা থেকে উদ্ধৃত অংশটি নেওয়া হয়েছে । প্রকৃতি ছন্দময় , প্রকৃতির সব কাজেই রয়েছে ছন্দ । ঝড় - বাদল , জোছনা , পাখির কাকলি , ঝিঁঝির ডাক , নদীর কলতান , মোটর বা রেলগাড়ির চাকা , জলের স্রোত - সবেতেই ছন্দ বিরাজ করে । জীবনে ছন্দ থাকলে জীবন পদ্যের মতো সুন্দর ও আনন্দময় হয়ে উঠতে পারে । ভুবনটাই চলছে ছন্দ - সুরের সংকেতে । অর্থাৎ বিশ্বপ্রকৃতিতে কোনো কিছুই ছন্দহীন নয় ।

৫ . ‘ জীবন হবে পদ্যময় , ' — জীবন কখন পদ্যময় হবে ?
উত্তরঃ কবি অজিত দত্তের ছন্দে শুধু কান রাখো ’ কবিতা থেকে উদ্ধৃত অংশটি নেওয়া হয়েছে । জীবন ও জগৎ ছন্দময় । সর্বত্রই ছন্দ বিরাজমান । বস্তুজগতের ছন্দ যদি জীবনের প্রতিটি কাজে অনুভব করা যায় তবে জীবন হয়ে ওঠে সহজ ও সুন্দর । কবিতা বা পদ্য হল মধুর । জীবনে আনন্দ আসলে মধুর কবিতা লেখা সহজ হয়ে ওঠে । তাই মন দিয়ে কান পেতে প্রকৃতির সকল উপাদান থেকে ছন্দের স্বাদ অনুভব করতে হবে । এইভাবে জীবনে ছন্দের অনুভূতি সৃষ্টি করতে পারলে জীবনে মজা অর্থাৎ আনন্দ আসবে ৷ আর আনন্দের আগমনেই জীবন পদ্যময় হয়ে উঠবে ।

প্রতিটি প্রশ্নের মান -৫
১.  ছন্দ মানবজীবনে কেমন প্রভাব ফেলতে পারে বুঝিয়ে লেখো ।
উত্তরঃ কবি অজিত দত্ত ‘ ছন্দে শুধু কান রাখো ’ নামক কবিতায় বলতে চেয়েছেন যে , প্রকৃতির সকল প্রকারের কর্মকাণ্ডেই ছন্দ রয়েছে । এই ছন্দ যেমন জড়জগতে প্রভাব ফেলে তেমনই মানবজীবনেও ছন্দের প্রভাব বর্তমান । প্রকৃতি ছন্দময় , আর প্রকৃতির বুকেই মানুষ পরিপুষ্টি লাভ করে , ফলে মানুষের জীবনেও ছন্দের প্রভাব পড়তে বাধ্য । মানুষ যদি দ্বিধা - দ্বন্দ্ব দূরে সরিয়ে রেখে প্রকৃতির ছন্দকে অনুধাবন করতে পারে , তবে মানুষের জীবন হয়ে উঠতে পারে আনন্দময় ও পদ্যের মতোই লালিত্যময় ৷ অর্থাৎ ছন্দ মনের মধ্যে অনুপ্রেরণা জাগিয়ে তোলে , মনকে করে তোলে প্রাণময় ও গতিপ্রবণ । প্রকৃতির ছন্দ মানবমনে ধরা পড়লে জীবন হয়ে ওঠে সরস ও পদ্যময় । মানুষের মনকে সৃষ্টিশীল করে তোলে ছন্দ এবং মনের চেতনাশক্তির জাগরণ ঘটাতেও সাহায্য করে প্রকৃতির ছন্দ । এভাবে মানুষের জীবনে ছন্দ প্রভাব ফেলে ।

২. ‘ কান পেতে যা শুনতে পাবে / কিচ্ছুটি নয় ছন্দহীন ।'— কান পেতে শোনার ব্যাপারটি কী ? উদ্ধৃতিটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো ।
উত্তরঃ প্রশ্নোক্ত অংশটি কবি অজিত দত্তের ‘ ছন্দে শুধু কান রাখো ’ নামক কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে । এই কবিতায় কান পাততে বলা হয়েছে বিশ্বচরাচরে । কান হল শ্রবণেন্দ্রিয় , যা দিয়ে আমরা শুনে থাকি । কবি এই শোনার ক্ষেত্রে একমুখী হওয়ার কথা বলেছেন ৷ আর শোনার ব্যাপারটি হল জগত্ময় ছড়িয়ে থাকা নানা বিষয়ের ছন্দ । পৃথিবীর সর্বত্রই ছন্দ রয়েছে ; ছন্দ রয়েছে ঝড় - বাদলে , ছন্দ রয়েছে চাঁদের জোছনায় ; এমনকি দিনের বেলায় যে পাখির কাকলি বা গভীর রাতে যে ঝিঁঝি পোকার ডাক শোনা যায় , তার মধ্যেও ছন্দের অবস্থান রয়েছে । নদীর স্রোতের ছন্দ অনুভব করতে পারলে বোঝা যাবে যে , তার মতো কবিতা আর হতেই পারে না । ছন্দের প্রভাবে মোটর বা রেলগাড়ি চলমান হয় , আবার নৌকো বা জাহাজ সাগর পাড়ি দেয় জলের ছন্দেই ; পৃথিবীতে দিনরাত্রি হয় ঘড়ির কাঁটার সঙ্গে তাল মিলিয়ে — এখানেও সময় বাঁধা পড়েছে ঘড়ির কাঁটার ছন্দে । এই ছন্দ অনুভব করার ক্ষমতা না থাকলে কোনো কিছু থেকেই আনন্দ খুঁজে পাওয়া যাবে না । অর্থাৎ কান পেতে শুনলে আমরা বুঝতে পারব যে পৃথিবী ছন্দময় , সব কিছুতেই রয়েছে ছন্দের অবস্থান , ছন্দহীন জীবন সুন্দর হতে পারে না । এই কারণেই কবি প্রশ্নোক্ত উক্তিটি করেছেন

৩.  ‘ কান না দিলে ছন্দে জেনো / পদ্য লেখা সহজ নয় ।'— ছন্দ বলতে কী বোঝো ? কবির প্রশ্নোক্ত মন্তব্যের কারণ কী ?
উত্তরঃ প্রশ্নোক্ত অংশটি কবি অজিত দত্তের ‘ ছন্দে শুধু কান রাখো ’ নামক কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে । ‘ ছন্দ ’ বলতে সুমিত শব্দের কাব্যময় প্রকাশকে বোঝানো হয় , যা কানের মাধ্যমে প্রবেশ করে মস্তিষ্কে বিশেষ অনুভূতি সৃষ্টি করে । পৃথিবী ছন্দময় , অর্থাৎ প্রকৃতির সকল কর্মকাণ্ডেই রয়েছে ছন্দের ছোঁয়া ৷ ছন্দ না থাকলে জীবনটা আনন্দহীন অর্থাৎ গদ্যময় হয়ে উঠবে ৷ কবিতা বা পদ্য সাহিত্যের এক কোমল অংশ ৷ বলা যায় মনের কোমল ও সুন্দর অনুভূতির প্রকাশ ঘটে কবিতায় । মনে যদি আনন্দ না থাকে অর্থাৎ প্রকৃতি থেকে যদি ছন্দের অনুভূতি আমাদের দেহে - মনে সঞ্চারিত না হয় , তবে জীবন সুন্দর হয় না , মন হয়ে ওঠে কঠিন বা গদ্যের মতোই লালিত্যহীন । যারা কান পেতে আর মন দিয়ে সকল ছন্দকে শুনতে পারবে , তারাই ছন্দের সুর - সংকেত অনুভব করতে পারবে , নাহলে ছন্দ অধরাই থেকে যাবে । গভীর মনোযোগের মাধ্যমে ছন্দকে গ্রহণ করতে পারলে তা থেকে আনন্দ পাওয়া যাবে , তবেই জীবন হবে পদ্যময় । আর কান না দিলে অর্থাৎ ছন্দকে যদি অনুভূতির জগতে না আনা যায় , তবে পদ্যের মতো লালিত্যময় , কোমল , সুন্দর জিনিস রচনা করা যাবে না বলে কবি মনে করেছেন । তাই তিনি প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি করেছেন ।

৪.  চিনবে তারা ভুবনটাকে ' — ' ভুবন’বলতে কী বোঝানো হয়েছে ? ‘ তারা ’ বলতে কাদের কথা বলা হয়েছে ? তারা কীভাবে ভুবনটাকে চিনবে ?
উত্তরঃ  ’ ‘ ভুবন ’ বলতে বিশ্বপ্রকৃতি অর্থাৎ মহাবিশ্বকে বোঝানো হয়েছে ।  ‘ তারা ’ বলতে বোঝানো হয়েছে তাদের , যারা কান পেতে ও মন দিয়ে পৃথিবীর সকল ঘটনার মধ্য থেকেই ছন্দ শুনতে পায় । এই বিশ্বপ্রকৃতি হল ছন্দময় , প্রকৃতির সব কিছুই চলে ছন্দের মাধ্যমে । পাখির কাকলি , ঝিঁঝির ডাক , নদীর স্রোত , গাড়ি বা জলযানের এগিয়ে চলা সবেতেই বিরাজ করছে ছন্দ । তবে এই ছন্দ ধরতে হবে , অর্থাৎ অনুভূতির মাধ্যমে তাকে গ্রহণ করতে হবে । এর জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় হল আত্মোপলব্ধি ; এই বোধ না থাকলে = প্রকৃতির ছন্দকে মানুষ বুঝতে পারে না । এই ছন্দ অনুভব করার জন্য দরকার মন্দ কথায় কান না দেওয়া , আর মনের মাঝে কোনো দ্বন্দ্ব না রাখা । যারা এমন কাজ করতে পারবে , তারাই প্রকৃতির ছন্দ অনুভব করতে পারবে ছন্দকে মনের মধ্যে গ্রহণ করার মাধ্যমে তারা ছন্দের সংকেত বুঝতে পারবে এবং এভাবেই তারা ভুবন বা জগৎকে চিনবে ।



No comments:

Post a Comment