প্রশ্ন: বহির্জাত শক্তি (Exogenetic Force) কাকে বলে?
উত্তর: ভূ-বহিস্থ যে যে শক্তিসমূহ (সূর্যালোক, বায়ুপ্রবাহ, বৃষ্টিপাত, নদী, হিমবাহ, তুষারপাত, ভৌমজল, সমুদ্রতরঙ্গ প্রভৃতি) দ্বারা ভূমিরূপ গঠন ও তার ক্ষয়সাধন হয়, তাকে বহির্জাত শক্তি বলে।
প্রশ্ন:পাহাড় (Hills) কাকে বলে?
উত্তর: 300 থেকে 900 মিটারের মধ্যে অবস্থিত ও অল্প দূর পর্যন্ত বিস্তৃত শিলাস্তূপকে পাহাড় বলে। পাহাড়ের ভূমির বন্ধুরতা মাঝারি রকমের এবং এর শৃঙ্গগুলি বরফে ঢাকা থাকে না। যেমন- পশ্চিমবঙ্গের বাঁকুড়া জেলার শুশুনিয়া পাহাড়, পুরুলিয়া জেলার অযোধ্যা পাহাড় প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।
প্রশ্ন: পাহাড়ের বৈশিষ্ট্যগুলি লেখো।
উত্তর: পাহাড়ের বৈশিষ্ট্যগুলি হল 300-900 মি-এর মধ্যে থাকে। • পাহাড়ের উচ্চতা পাহাড়ের শৃঙ্গ পর্বতের মত অত উঁচু হয় না। এগুলি তীক্ষ্ণ, চ্যাপটা বা গোলাকার হয়ে থাকে। • পাহাড়ের উপত্যকা দেখা যায়। পাহাড়ের ভূমির বন্ধুরতা মাঝারি প্রকৃতির। এককথায় পাহাড়কে পর্বতের ক্ষুদ্র প্রতিরূপ ধরা হয়।
প্রশ্ন: পর্বতশ্রেণি বা পর্বতমালা কাকে বলে?
উত্তর: অনেকগুলি পর্বতশৃঙ্গ ও উপত্যকা যখন পৃথিবীর বিরাট অঞ্চল জুড়ে পরস্পর অবস্থান করে তখন তাকে পর্বতশ্রেণি বা পর্বতমালা বলে। যেমন- হিমালয়, রকি, আন্দিজ প্রভৃতি হল - পর্বতশ্রেণি বা পর্বতমালা।
প্রশ্ন: উপত্যকা কাকে বলে?
উত্তর: দুপাশের সুউচ্চ ভূমিভাগের মাঝে অবস্থিত নীচু খাতের মত অংশকে উপত্যকা বলে। যেমন- দুটি পর্বতচূড়ার মাঝে অবস্থিত পার্বত্য উপত্যকা, দুটি স্তূপ পর্বতের মাঝে অবস্থিত গ্রস্ত উপত্যকা, নদী উপত্যকা অর্থাৎ নদীর প্রবাহপথ প্রভৃতি।
প্রশ্ন: কেবলমাত্র ভঙ্গিল পর্বতেই ভাঁজ দেখা যায় কেন?
উত্তর: দুটি পাত পরস্পরের দিকে এগিয়ে আসলে, পাত দুটির মাঝে অবস্থিত মহিখাতে সঞ্চিত পলিতে প্রবল পার্শ্বচাপের সৃষ্টি হয়। পার্শ্বচাপের কারণেই পলিরাশি ভাঁজ খেয়ে ওপরের দিকে উঠে আসে এবং ভঙ্গিল পর্বত সৃষ্টি হয়। তাই ভঙ্গিল পর্বতে ভাঁজ দেখা যায়। অন্যান্য পর্বত সৃষ্টিতে এরূপ পার্শ্বচাপের প্রভাব দেখা যায় না তাই কোনো ভাঁজ সৃষ্টি হয় না। তবে যে-সকল ভঙ্গিল পর্বত ক্ষয় পেয়ে ক্ষয়জাত পর্বতে পরিণত হয় সেই সকল ক্ষয়জাত পর্বতে ভাঁজ অবশিষ্ট থাকে।
প্রশ্ন: চ্যুতি বা Fault কাকে বলে?
উত্তর: প্রবল ভূ-আলোড়নের ফলে ভূপৃষ্ঠের কোনো অঞ্চলে প্রচন্ড টান বা সংকোচনের সৃষ্টি হয়। ফলে ওই অঞ্চলের শিলাস্তরে উল্লম্ব বা আড়াআড়ি ফাটল দেখা দেয় এবং ওই ফাটল বরাবর ভূপৃষ্ঠের একদিকের অংশ অন্যদিকের অংশ থেকে বিচ্যুত হয়ে ওপরে উঠে গেলে বা নীচে বসে গেলে তাকে চ্যুতি বা Fault বলে। চ্যুতির ফলে স্তূপ পর্বত ও গ্রস্ত উপত্যকা সৃষ্টি হয়।
প্রশ্ন: গ্রস্ত উপত্যকা (Rift Valley) কাকে বলে? অথবা, গ্রস্ত উপত্যকা কেন সৃষ্টি হয়?
উত্তর: ভূ-আলোড়নের ফলে ভূপৃষ্ঠে চ্যুতি বা ফাটলের সৃষ্টি হয়। দুটি সমান্তরাল চ্যুতির মাঝখানের অংশ চ্যুতি বরাবর নীচে বসে গেলে যে উপত্যকার সৃষ্টি হয়, তাকে গ্রস্ত উপত্যকা বলে। অর্থাৎ, স্তূপ পর্বত সৃষ্টির সময়ে ভূ-আলোড়নের ফলে চ্যুতিরেখা বরাবর ভূমিভাগ উত্থিত হলে তার দুপাশে অবনত উপত্যকার বা গ্রস্ত উপত্যকার সৃষ্টি হয়।
যেমন- ভারতের নর্মদা ও তাপ্তী নদীর উপত্যকা দুটি সাতপুরা পর্বতের (স্তূপ পর্বত) দুপাশে অবস্থিত দুটি গ্রস্ত উপত্যকার উদাহরণ।
প্রশ্ন: পাত কাকে বলে?
উত্তর: শিলামণ্ডলের উপরিভাগ বা ভূত্বক অনেকগুলি ছোটো বড়ো খণ্ডে বিভক্ত। এক-একটি খণ্ডকে পাত বা প্লেট (Plate) বলা হয়। একটা চায়ের প্লেট ভাঙলে যে রকম টুকরো হয়ে যায়, পাতগুলিকে ঠিক সেইরকম টুকরোর সঙ্গে তুলনা করা যায়। পাতগুলি একটি থকথকে ও সান্দ্র অ্যাসথেনোস্ফিয়ার স্তরের ওপর ভেসে রয়েছে। পাতগুলি চলনশীল। ভূত্বক মোট 7টি প্রধান, 20টি অপ্রধান এবং অসংখ্য ছোটো ছোটো পাতের সমন্বয়ে গঠিত।
প্রশ্ন: পামির মালভূমিকে 'পৃথিবীর ছাদ' বলা হয় কেন?
উত্তর: উপরিভাগ কিছুটা সমতল ও চারপাশ খাড়া ঢালযুক্ত বাড়ির ছাদের ন্যায় দেখতে মালভূমিগুলির গড় উচ্চতা 300 মিটারের সামান্য বেশি হলেও পামির মালভূমির উচ্চতা পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি, প্রায় 4873 মিটার। এত উঁচুতে অবস্থিত হওয়ার জন্য পামিরকে 'পৃথিবীর ছাদ' আখ্যা দেওয়া হয়েছে।
প্রশ্ন: লোয়েস সমভূমি কাকে বলে?
উত্তর: মরুভূমির সূক্ষ্ম হলুদ বর্ণের চুনময় বালুকণা কখনো কখনো বায়ুর মাধ্যমে বহু দূরে উড়ে গিয়ে সঞ্চিত হয়ে যে সমভূমির সৃষ্টি করে, তাকে লোয়েস সমভূমি বলে। মঙ্গোলিয়ার গোবি মরুভূমি থেকে লোয়েস বায়ু বাহিত হয়ে চিনের হোয়াংহো নদীর অববাহিকায় লোয়েস সমভূমি গঠন করেছে।
প্রশ্ন: মালভূমি অঞ্চলে খনিজ সম্পদের প্রাচুর্য দেখা যায় কেন?
উত্তর: মালভূমি প্রধানত প্রাচীন শিলা দ্বারা গঠিত হয়। আগ্নেয় এবং রূপান্তরিত শিলার দ্বারাই মালভূমি সৃষ্টি হয়। ফলে মালভূমিতে প্রচুর খনিজ পদার্থ সঞ্চিত থাকে। এ ছাড়া শিলার রূপান্তরের সময় অত্যধিক চাপ ও তাপে সমগোত্রীয় খনিজগুলির পুনর্বিন্যাস হয়, ফলে একই জায়গায় একই খনিজের সমাহার ঘটে। ফলে বাণিজ্যিকভাবে খনিজ উত্তোলনও সহজসাধ্য হয়। এই কারণে মালভূমিতে খনিজ সম্পদের প্রাচুর্য দেখা যায়। উদাহরণ- ভারতের ছোটোনাগপুর মালভূমি।
প্রশ্ন: আগ্নেয় পর্বতকে সঞ্চয়জাত পর্বত বলা হয় কেন?
উত্তর: অন্তর্জাত শক্তির প্রভাবে ভূগর্ভের অর্ধতরল সান্দ্র ম্যাগমা ভূত্বকের কোনো দুর্বল স্থানে সৃষ্ট ফাটল বরাবর বেরিয়ে ভূপৃষ্ঠে সঞ্চিত হয়ে কালক্রমে যে পর্বতের সৃষ্টি হয়, তাকে আগ্নেয় পর্বত (Volcano) বলে। বিভিন্ন আগ্নেয় পদার্থ সঞ্চিত হয়ে এই পর্বত সৃষ্টি হয় বলে একে সঞ্চয়জাত পর্বতও বলা হয়। অনেক সময় আগ্নেয় পদার্থসমূহ ভূগর্ভে সঞ্চিত হয়েও সঞ্চয়জাত পর্বত গঠিত হয়।
উদাহরণ: জাপানের ফুজিয়ামা, ভারতের ব্যারেন ও নারকোণ্ডাম প্রভৃতি।
No comments:
Post a Comment