দ্বিতীয় অধ্যায় প্রশ্ন উত্তর পড়তে নিচের লিঙ্ক এ ক্লিক করো
👉 ( দ্বিতীয় অধ্যায় )
ভূমিকা : পৃথিবীর প্রতিটি দেশের ইতিহাসের স্রষ্টা মানুষ। সুতরাং মানুষের জীবনের বিবর্তনই হল ইতিহাসের মূল বিষয়। ইতিহাসকে বোঝার জন্য ইতিহাসের ধারণা সম্পর্কে জ্ঞান থাকা আবশ্যক। রাজা মহারাজাদের জীবনী, তাদের যুদ্ধবিগ্রহের বিষয়, সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা, অগ্রগতির ধারা—এইসব নিয়েই ইতিহাস।
এই ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে সঠিক তথ্যপ্রমাণের উপর জোর দিতে হয়। পুরোনো ঘরবাড়ি, মন্দির-মসজিদ, মূর্তি, মুদ্রা, আঁকা ছবি, বইপত্র—যা থেকে কোনো বিশেষ সময়ের ইতিহাস জানা যায়, তাই-ই হল ইতিহাস। প্রাচীন ভারতের ইতিহাসের উপাদানকে প্রত্নতাত্ত্বিক ও সাহিত্যিক এই দুভাগে ভাগ করা যায়। আবার প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদানের ভাগগুলি হল লিপি, মুদ্রা ও স্থাপত্য ভাস্কর্য, অপরদিকে সাহিত্যিক উপাদানের মধ্যে আছে দেশীয় ও বিদেশি সাহিত্য। এইসকল উপাদনের সার্থকতার উপর ইতিহাসের সভ্যতা নির্ভরশীল হওয়ায় উপাদানগুলির যথার্থ বাস্তবতার উপর গুরুত্ব দেন ঐতিহাসিকরা।
ইতিহাসকে প্রাচীন, মধ্য ও আধুনিক যুগে ভাগ করা হলেও এই যুগবিভাজন যুক্তিগ্রাহ্য নয়, কারণ কোনো একটি যুগ হঠাৎ শেষ হয়ে অন্য কোনো যুগের হঠাৎ সূচনা হতে পারে না। সুতরাং ইতিহাস সম্পর্কে সম্যক ধারণা লাভ ছাড়া ইতিহাসের মূল চরিত্র বোঝা সম্ভবপর নয়। এক্ষেত্রে ঐতিহাসিকের কর্তব্যকেই প্রাধান্য দেওয়া উচিত।
■ সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর :
১। ইতিহাস বলতে কী বোঝো?
উত্তর। ইতিহাস কথার আক্ষরিক অর্থ হল ইতি-অ-হাস অর্থাৎ যা ইতিপূর্বে ঘটে গেছে। বিস্তারিত ভাবে বলতে গেলে অতীতে ঘটে যাওয়া সমাজবদ্ধ মানুষের জীবনচর্চার ক্রমবিকাশের ধারা আলোচনা করাই হল ইতিহাস। তবে সব অতীতই ইতিহাসে স্থান পায় না। যে সকল অতীত ঘটনা ঐতিহাসিক গুরুত্ব সম্পন্ন তাই ইতিহাসের পাতায় স্থান পায়।
২। ইতিহাস পড়া বা জানার আবশ্যিকতা কী ?
উত্তর। অতীতে এমন অনেক ঘটনা ঘটে গেছে, যার ছাপ আজও আমাদের চারপাশে বর্তমান। এইসব কাজ বা ঘটনাগুলির বিষয়ে সঠিক ধারণা লাভের জন্যই ইতিহাস পড়া বা জানা প্রয়োজন।
৩। ইতিহাসের উপাদান কাকে বলে ?
উত্তর। পুরানো দিনের যেসব জিনিস বা বস্তু থেকে আমরা অতীতের কথা জানতে পারি তাই ইতিহাসের উপাদান নামে পরিচিত। যেমন—লেখ, মুদ্রা, স্থাপত্য-ভাস্কর্য ও লিখিত উপাদান।
৪। ইতিহাসের উপাদান কয় প্রকার ও কী কী ?
উত্তর। ইতিহাস রচনার উপাদান প্রধানত তিন প্রকার। যেমন—(i) সাহিত্যিক উপাদান, (ii) প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদান। প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদানকে আবার (ক) লিপি, (খ) মুদ্রা ও (গ) স্থাপত্য ও ভাস্কর্য-তে বিভক্ত করা যায়। (iii) বৈদেশিক বিবরণ।
■ এক কথায় লেখো :
১। ‘বিদেশি শব্দের দ্বারা মুঘল বা সুলতানি আমলে কাদের বোঝাত ?
উত্তর। সুলতানি বা মুঘল আমলে 'বিদেশি' বলতে গ্রাম বা শহরের বাইরে থেকে আসা যে কোনো লোককেই বোঝাতো।
২। ‘পরদেশি' বা 'অজনবি' বলতে কী বোঝো?
উত্তর। সুলতানি যুগে শহর থেকে গ্রামে আসা সমস্ত লোক ঐ গ্রামবাসিদের কাছে ‘পরদেশি' বা 'অজনবি' নামে পরিচিত হত।
৩। 'লেখ' বলতে কী বোঝো?
উত্তর। পাথর বা ধাতুর পাতের উপর লেখা যা থেকে পুরানো দিনের কথা জানা যায় তাই ‘লেখ’। পাথরের উপর লেখা হলে তা শিলালেখ। আবার তামার উপর লেখা হলে তা তাম্রলেখ।
৪। সাহিত্যগত উপাদানকে কয় ভাগে ভাগ করা হয় ও কী কী ?
উত্তর। সাহিত্যগত উপাদানকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়। যথা—দেশীয় সাহিত্য (রামায়ণ, মহাভারত, বেদ প্রভৃতি), বৈদেশিক সাহিত্য (গ্রিক, রোমান, চৈনিক রচনা)।
৫। ইন্ডিয়া' শব্দটি কে প্রথম ব্যবহার করেন ?
উত্তর। গ্রিক ঐতিহাসিক হেরোডোটাস খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ পঞ্চম শতকে প্রথম 'ইন্ডিয়া' নামটি ব্যবহার করেন।
৬। ঐতিহাসিকরা ইতিহাসকে কয়টি যুগ বা পর্বে ভাগ করেছেন?
উত্তর। ঐতিহাসিকরা মোটামুটি ভাবে ইতিহাসকে তিনটি যুগে ভাগ করেছেন। এই তিনটি যুগ হল—প্রাচীন যুগ, মধ্যযুগ
ও আধুনিক যুগ।
◾বিশদে উত্তর লেখো : (পূর্ণমান-৫)
১। ইতিহাস লেখার সময় ঐতিহাসিককে কোন্ কোন্ বিষয়ে সাবধান থাকতে হয় ?
উত্তর। একজন ঐতিহাসিক বিভিন্ন উপাদানগুলিকে সংগ্রহ করে ইতিহাস রচনা করেন। তবে ইতিহাস রচনার সময় ঐতিহাসিককে অবশ্যই সঠিক তথ্যটি নির্বাচন করতে হবে। আবার স্থান ও কালকে গুরুত্ব দিতে হবে। কারণ, সময় আর জায়গা আলাদা হয়ে গেলে অনেক ক্ষেত্রে বদলে যায় কথার মানে।
২। ইতিহাসের উপাদানগুলি সম্পর্কে লেখো।
উত্তর। ইতিহাসের উপাদান চারপ্রকার। যথা—লেখ, মুদ্রা, স্থাপত্য-ভাস্কর্য ও লিখিত উপাদান। পাথর বা ধাতুর পাতের গায়ে প্রাপ্ত লেখা, যা থেকে পুরানো দিনের কথা জানা যায়, সেগুলোকে বলে লেখ। পাথরের উপর লেখা হলে তাকে শিলালেখ বলা হয়। তামার পাতের উপর লেখা হলে তা তাম্রলেখ নামে পরিচিত। রাজ-রাজাদের নাম, মুর্তি ও সন তারিখ খোদাই করা নির্দিষ্ট আকৃতি ও ওজনের ধাতব খণ্ডকে মুদ্রা বলে। তামার উপর খোদিত মুদ্রা তাম্র মুদ্রা, রুপোর উপর খোদিত মুদ্রা রৌপ্য-মুদ্রা ও স্বর্ণ ধাতুর উপর খোদিত করা মুদ্রা স্বর্ণ-মুদ্রা নামে পরিচিত। বিভিন্ন রাজা ও সম্রাটের সময়কালে নির্মিত ইমারত, প্রাসাদ, শিক্ষাকেন্দ্র স্থাপত্য রূপে পরিচিত। যেমন—নালন্দা, তাজমহল। আবার পর্বত গাত্রে, গুহা গাত্রে চিত্রিত চিত্রকলা ভাস্কর্য নামে পরিচিত। যেমন—অজন্তা ইলোরার গুহা চিত্র। আর কাগজে লিখিত গুলিকে বলা হয় লিখিত উপাদান।
৩। তুমি ঐতিহাসিক বলতে কাকে বোঝো?
উত্তর। ঐতিহাসিক বলতে আমরা সাধারণ ভাবে বুঝি যিনি অতীত সম্বন্ধে একটা সুস্পষ্ট ধারণা আমাদের সামনে তুলে ধরেন। ঐতিহাসিকগণের কাজ হল নির্ভুল তথ্যের আলোকে একটি সুষ্ঠ ইতিহাস রচনা করা। তবে এই কাজ সর্বদা সম্ভব হয় না। কেননা অতীতে ইতিহাস রচনায় সকল উপাদানের সত্যতা যথার্থ নয়। তাই ঐতিহাসিককে সদা সতর্ক থাকতে হয় সঠিক তথ্য সংগ্রহের জন্য। তা না হলে ভুল তথ্যের দ্বারা ইতিহাসের যথার্থতা নষ্ট হয়ে যাবে। তাই বলা চলে ঐতিহাসিক আসলে একজন গোয়েন্দা। গল্পের গোয়েন্দা যেমন টুকরো টুকরো সূত্র খুঁজে যুক্তি দিয়ে সুত্রগুলির ঠিক-ভুল বিচার করেন এবং সবশেষে সঠিক সত্য-মিথ্যাটা আমাদের সামনে তুলে ধরেন। তেমনি ঐতিহাসিক বিভিন্ন জায়গা থেকে সূত্র খুঁজে বের করেন। তারপর যুক্তি দিয়ে সেগুলির যথার্থতা বিচার করেন। যিনি সূত্রগুলিকে পরপর সাজিয়ে অতীতের ঘটে যাওয়া ঘটনা বা সময়কে আমাদের সামনে তুলে ধরেন তিনিই ঐতিহাসিক। তবে ঐতিহাসিকরা যে ঘটনার কোনো সূত্র খুঁজে পাননা, তা ইতিহাসে অজানাই রয়ে যায়।
৪। 'যুগ' বলতে ইতিহাসে কী বোঝায়?
উত্তর। সময়ের সাথেসাথে মানব সমাজ পরিবর্তিত হয়। এই পরিবর্তন এতই স্লথ বা ধীর গতিতে যা আপেক্ষিকভাবে বোঝা অসম্ভব। তাই বহুদিন ধরে ধীর পরিবর্তনের মধ্য দিয়েই পরবর্তী অধ্যায়ে পরিলক্ষিত হয় আমূল পরিবর্তন। এই পরিবর্তনের ফলে সমাজ, সংস্কৃতি, রাজনীতি, অর্থনীতি সবই পালটে যায়। এইভাবেই যুগের পরিবর্তন হয়, আসে নতুন . যুগ। মানবসভ্যতার দীর্ঘসময় ধরে রূপান্তরিত এই পরিবর্তনকেই ঐতিহাসিকরা এক-একটি যুগ বলে অভিহিত করেছেন। এই যুগ পরিবর্তনের মধ্যে দিয়েই প্রাগৈতিহাসিক পর্বে প্রাচীন প্রস্তর যুগের পর যেমন মধ্য প্রস্তর যুগ এবং তারপর নব্য প্রস্তর যুগ এসেছে, তেমনি একইভাবে, প্রাচীন যুগের পর এসেছে মধ্যযুগ ও তারপর আধুনিক যুগ। তবে এক্ষেত্রে মনে রাখা দরকার এই যুগপরিবর্তন পৃথিবীব্যাপী একই সময় সম্পন্ন হয়নি।
৫। ইতিহাসকে সাধারণভাবে কয়টি যুগে ভাগ করা যায়? এই ভাগ গুলি কী কী ?
উত্তর। ইতিহাসকে সাধারণভাবে তিনটি যুগে ভাগ করা হয়।
ইতিহাসের তিনটি যুগ হল—
(i) প্রাচীন যুগ, (ii) মধ্যযুগ, (iii) আধুনিক যুগ।
No comments:
Post a Comment