সপ্তম শ্রেণী ইতিহাস দ্বিতীয় অধ্যায় প্রশ্ন উত্তর || Class 7th History Chapter -2 Question And Answers - Psycho Principal

Fresh Topics

Thursday, 19 December 2024

সপ্তম শ্রেণী ইতিহাস দ্বিতীয় অধ্যায় প্রশ্ন উত্তর || Class 7th History Chapter -2 Question And Answers

  

ইতিহাস 
প্রশ্ন উত্তর 




তৃতীয় অধ্যায় প্রশ্ন উত্তর পড়তে নিচের লিঙ্ক এ ক্লিক করো


ভূমিকা : ভারতীয় রাজনৈতিক ইতিহাসের মাধ্যমে আমরা বিভিন্ন রাজাদের নাম ও তাদের শাসনব্যবস্থার প্রকৃতি সম্পর্কে

 জানতে পারি। খ্রিস্টীয় সপ্তম শতক থেকে দ্বাদশ শতকে আদি মধ্যযুগের ইতিহাসে বাংলার রাজনৈতিক ক্ষেত্রের পটবদল, সমকালীন বঙ্গের ভৌগোলিক সীমানা, রাজনৈতিক শক্তির শাসনক্ষমতা প্রভৃতি আলোচ্য অধ্যায়ের মূল বিষয়। প্রাচীন বাংলার সীমানা ভাগীরথী, পদ্মা ও মেঘনা এই তিনিটি নদী দ্বারা তৈরি হয়েছিল। প্রাচীন বংলার প্রধান অঞ্চলগুলি ছিল পুণ্ড্রবর্ধন, বরেন্দ্র, বঙ্গ বা বঙ্গাল-রাঢ়, সুম্ম, গৌড়, সমতট ও হরিকেল। সাধারণত কোনো অঞ্চলের আদিবাসীদের নাম অনুযায়ী সেই জায়গার নামকরণ করা হতো। 'আরণ্যক', কৌটিল্যের 'অর্থশাস্ত্র' এবং কালিদাসের ‘রঘুবংশম' বইতে 'বঙ্গ' নামক অঞ্চলের নাম পাওয়া যায়।

 এইসময় গৌড়ের রাজা শশাঙ্ক, থানেশ্বরের পুষ্যভূতি রাজবংশ, পাল ও সেন রাজবংশ প্রমুখ শক্তি বাংলার রাজনৈতিক ইতিহাসের উপর নিজ ক্ষমতা কায়েম করেছিল। মালবের অধিপতি সম্রাটের মহাসামন্ত শশাঙ্ক ৬০৬-০৭ খ্রিস্টাব্দে গৌড়ে নিজ শাসনব্যবস্থা গড়ে তোলেন। তার সময় গৌড়ের ক্ষমতা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পায়। তার রাজধানী ছিল কর্ণসুবর্ণ এইসময় পুষ্যভূতি রাজবংশের রাজা ছিলেন হর্ষবর্ধন। উত্তর ভারতের রাজ্যগুলির সাথে লড়াই করে শশাঙ্ক গৌড়ের মর্যাদা বৃদ্ধি করেন তাই তিনি ইতিহাসে স্মরণীয় ব্যক্তিত্ব।

 শশাঙ্কের মৃত্যুর পর রাজনৈতিক ক্ষমতা দখলের লড়াইতে রাজ্যের বিশৃঙ্খলা ও অরাজকতাপূর্ণ পরিস্থিতি মাৎস্যন্যায় নামে পরিচিত। এরপর গোপালের নেতৃত্বে পাল বংশের সূচনায় অরাজকতার অবসান ঘটে। পালরাজাদের মধ্যে দ্বিতীয় মহীপাল ও তার ভাই রামপাল, ধর্মপাল প্রমুখ উল্লেখযোগ্য। পালরাজাদের পাশাপাশি সেন রাজবংশের রাজারা যেমন সামন্ত সেন, হেমন্ত সেন, বিজয় সেন, বল্লভ সেন এবং লক্ষ্মণ সেন ছিলেন বিখ্যাত। এ ছাড়াও এই সময় বাংলার বাইরে রাষ্ট্রকূট, চালুক্য ও গুর্জর, প্রতিহার রাজবংশের কথাও জানা যায়।


বাংলা বিষয়ের প্রশ্ন উত্তর পড়তে নিচের লিংকে ক্লিক করো

👉( পাগলা গণেশ প্রশ্ন উত্তর )


◾ দু-এককথায় লেখো :

 ১। কোন্ কোন্ উপাদানে বঙ্গ নামটির উল্লেখ পাওয়া যায়?

 উত্তর। ‘মহাভারত’, কৌটিল্যের ‘অর্থশাস্ত্র’ ও কালিদাসের 'রঘুবংশম্' কাব্যে বঙ্গ নামটির উল্লেখ আছে।

২। মিনহাজ-উস-সিরাজ কোন্ সময়কালের ঐতিহাসিক ?

 উত্তর। ত্রয়োদশ শতকের।


 ৪। আবুল ফজলের আইন-ই-আকবরি' গ্রন্থে বঙ্গকে কী নামে উল্লেখ করা হয়েছে? উত্তর। ‘সুবা বাংলা' নামে।


 ৩। আবুল ফজলের গ্রন্থের নাম কী?

উত্তর। ‘আইন-ই-আকবরি'।


 ৫। ‘সুবা' কথাটির অর্থ কী ?

উত্তর। ‘সুবা' কথাটির অর্থ হল – প্রদেশ বা রাজ্য।


 ৬। শশাঙ্ক কাদের অধীনে মহাসামন্ত ছিল?

 উত্তর। গুপ্তরাজাদের অধীনে।


 ৭। শশাঙ্কের রাজধানী কোথায় ছিল?

উত্তর। কর্ণসুবর্ণ।


 ৮। শশাঙ্কের সমকালীন উত্তর ভারতের কয়েকটি আঞ্চলিক শক্তির নাম লেখো।

 উত্তর। মালব, কনৌজ, থানেশ্বর, কামরূপ, গৌড়, প্রভৃতি।


 ৯। শশাঙ্কের সমকালীন একজন চিনা পর্যটকের নাম লেখো

উত্তর। হিউয়েন সাঙ ।


 ১০। কোন্ সময়কালকে বাংলায় মাৎস্যন্যায়ের যুগ বলে ?

 উত্তর। শশাঙ্কের মৃত্যুর পরে সপ্তম শতকের মধ্যভাগ থেকে অষ্টম শতকের মধ্যভাগ পর্যন্ত এই একশো বছর বাংলায় মাৎস্যন্যায়ের যুগ।


 ১১। বাক্‌পতিরাজ কার সভাকবি ছিল? 

উত্তর। কনৌজের শাসক যশোবর্মা বা যশোবর্মনের সভাকবি ছিল।


 ১২। কোন্ সময়কালে কার আমলে কৈবর্ত বিদ্রোহ সংগঠিত হয় ও এই বিদ্রোহের প্রথম কে নেতৃত্ব দেন?

 উত্তর। একাদশ শতকের দ্বিতীয়ভাগে দ্বিতীয় মহীপালের আমলে সংগঠিত কৈবর্ত বিদ্রোহে প্রথম নেতৃত্ব দৈন কৈবর্ত নেতা দিব্য বা দিব্বোক।


 ১৩। রাষ্ট্রকূট বংশের প্রতিষ্ঠাতা কে?

উত্তর। দন্তিদুর্গ।


 ১৪। গুর্জর-প্রতিহার কোথায় শাসন করতেন?

উত্তর। রাজস্থান ও গুজরাট অঞ্চলে।


 ১৫। চোল রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা কে?

 উত্তর। বিজয়ালয়।


 ১৬। কোন্ চোল রাজা ‘গঙ্গাইকোণ্ডচোল' উপাধি নিয়েছিলেন?

উত্তর। প্রথম রাজেন্দ্ৰ চোল।


 ১৭। চোল বংশের শ্রেষ্ঠ রাজা কে ছিলেন?

উত্তর। রাজেন্দ্র চোল।


 ১৮। অর্থশাস্ত্রের রচিয়তা কে ছিলেন?

উত্তর। কৌটিল্য।


 ১৯। 'হর্ষচরিত' কে রচনা করেন ?

উত্তর। বানভট্ট ‘হর্ষচরিত' রচনা করেন।


 ২০। শ্রেষ্ঠী কাদের বলা হত ?

 উত্তর। ধনী বণিকদের শ্রেষ্ঠী বলা হত।


◾ সংক্ষেপে (৩০-৫০টি শব্দের মধ্যে) উত্তর লেখো : (পূর্ণমান—৩)

(ক) এখনকার পশ্চিমবঙ্গের একটা মানচিত্র দেখো। তাতে আদি মধ্যযুগের বাংলায় কোন-কোন্ নদী দেখতে পাবে? 

উত্তর। এখনকার পশ্চিমবঙ্গের মানচিত্র অনুযায়ী পশ্চিমবঙ্গের আদি-মধ্যযুগের নদ-নদী হল গঙ্গা নদী, এর শাখানদী ভাগীরথী তথা হুগলী নদী। পশ্চিমবঙ্গের উত্তরাঞ্চলের নদীগুলি হল – মহানন্দা, পুনর্ভবা, তিস্তা, করতোয়া, আত্রাই। এ ছাড়া পশ্চিমবঙ্গের উত্তর রাঢ় অঞ্চলের নদীগুলি হল—ময়ূরাক্ষী, অজয়, দামোদর, রূপনারায়ণ, কাঁসাই এবং সুবর্ণরেখা।


(খ) শশাঙ্কের আমলে বাংলার আর্থিক অবস্থা কেমন ছিল তা ভেবে লেখো।

উত্তর। ৬০৬-০৭ খ্রিঃ-এর কিছুকাল আগে শশাঙ্ক মগধের গুপ্ত রাজা মহাসেন গুপ্তের কাছ থেকে গৌড়দেশকে মুক্ত। করে এক স্বাধীন রাজ্যের প্রতিষ্ঠা করেন। শশাঙ্ককেই বাংলার রাজাদের মধ্যে সর্বপ্রথম সার্বভৌম নরপতি হিসাবে চিহ্নিত করা হয়। শশাঙ্কের রাজত্বকালে অর্থনীতির ক্ষেত্রে সমূহ উন্নতি ঘটেছিল যা হিউয়েন সাঙ্ এর বিবরণী থেকে জানা যায়। শশাঙ্কের রাজধানী কর্ণসুবর্ণ ছিল গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য কেন্দ্র। কর্ণসুবর্ণর সাথে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বাণিজ্যিক সম্পর্ক বজায় ছিল। শশাঙ্কের আমলে অর্থনীতির অন্যতম নিদর্শন হল সোনার মুদ্রার প্রচলন। তবে এর মান অনেক পড়ে গিয়েছিল। তার রাজত্বের শেষের দিকে ব্যবসা বাণিজ্য কিছুটা স্তিমিত হয়ে পড়লেও অভাবনীয় উন্নতি পরিলক্ষিত হয় কৃষিকার্যে। ফলে সমাজে জমির চাহিদা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পায়। অর্থনীতি হয়ে পড়ে কৃষি নির্ভর। কৃষির গুরুত্ব বেড়ে যাওয়ায় সমাজ ক্রমশ গ্রামকেন্দ্রিক হয়ে পড়ছিল। তবে শশাঙ্কের শাসনকালকে অর্থনীতির সামাগ্রিক উন্নতির পর্ব বলা চলে।


(গ) মাৎস্যন্যায় কী ?

উত্তর। ধর্মপালের খালিমপুরের তাম্র শাসন থেকে জানা যায় ৬৩৭ সালে শশাঙ্কের মৃত্যু হয়। সেই সময় থেকে আনুমানিক খ্রিস্টীয় ৭৫০ অব্দ নাগাদ ‘পাল’ বংশের উত্থানের মধ্যবর্তী পর্বকে মাৎস্যন্যায়ের যুগ রূপে চিহ্নিত করা হয়। মাৎস্যন্যায় বলতে দেশে অরাজকতা বা স্থায়ী রাজার অভাবকে বোঝানো হয়। পুকুর, সমুদ্রে বড়ো মাছ যেমন ছোটো মাছকে খেয়ে ফেলে, তেমনি যে সামাজিক পরিস্থিতিতে ধনী ও ক্ষমতাবান লোক ইচ্ছেমতো দুর্বল ও দরিদ্রদের শোষণ ও লুণ্ঠনের মাধ্যমে এক বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি করে, তাকেই ঐতিহাসিকরা মাৎস্যন্যায় বলে অভিহিত করেছেন। ঐ যুগে প্রত্যেক ক্ষত্রিয়, সম্ভ্রান্ত লোক, ব্রাক্ষ্মণ, ও বণিক ইচ্ছেমতো নিজের নিজের এলাকা শাসন করত। বাংলার কোনো কেন্দ্রীয় শাসক ছিল না।


(ঘ) খ্রিস্টীয় সপ্তম ও অষ্টম শতকের আঞ্চলিক রাজ্যগুলি কেমন ভাবে গড়ে উঠেছিল?

উত্তর। খ্রিস্টীয় সপ্তম ও অষ্টম শতকে বাংলার বাইরে উত্তর ও দক্ষিণ ভারতে বেশ কিছু নতুন আঞ্চলিক রাজ্যের উদ্ভব ঘটে। যাদের মধ্যে অন্যতম ছিল উত্তর ভারতের পাল, গুর্জর-প্রতিহার এবং দক্ষিণ ভারতের রাষ্ট্রকূট বংশ। এই সকল আঞ্চলিক রাজ্যগুলি নিজেদের শাসন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে স্থানীয় শক্তিশালী ব্যক্তিদের অস্তিত্ব মেনে নিয়েছিল। এমন কি বহু ক্ষেত্রে বড়ো বড়ো জমির মালিক ও যোধানেতাদের সামন্ত, মহাসমস্ত বা মহামণ্ডলেশ্বর উপাধিতে ভূষিত করে গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ও প্রসাশনিক দায়িত্ব অর্পণ করেছিলেন। পরিবর্তে এরা উক্ত সামন্ত মহাসামন্ত, থেকে খাজনা ও উপঢৌকন পেত। এমনকি যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে সামন্ত, মহাসামন্তরা ঐসকল আঞ্চলিক রাজাদের সৈন্য দিয়ে সাহায্য করত। এই ভাবেই খ্রিস্টীয় সপ্তম ও অষ্টম শতকে গড়ে ওঠা আঞ্চলিক রাজ্যগুলি নিজেদের শাসনতান্ত্রিক অস্তিত্ব অক্ষুণ্ণ রাখতে সম্ভবপর হয়েছিল।


 (গ) সেন রাজাদের আদি নিবাস কোথায় ছিল? কী ভাবে তারা বাংলায় শাসন কায়েম করেছিলেন?

উত্তর। সেন রাজাদের আদি বাসস্থান ছিল দক্ষিণ ভারতের কর্ণাট অঞ্চল, অর্থাৎ মহীশূর ও তার আশেপাশের এলাকায়। একাদশ শতকের কোনো এক সময় সামন্তসেন কণটি থেকে রাঢ় অঞ্চলে চলে এসে সেন বংশের প্রতিষ্ঠা করেন। সামন্ত সেনের পুত্র হেমন্ত সেন পালরাজাদের দুর্বলতার সুযোগে রাঢ় অঞ্চলে একটি স্বাধীন রাজ্য প্রতিষ্ঠিত করেন এবং 'মহারাজাধিরাজ' উপাধি ধারণ করেন। কবি উমাপতি ধর রচিত দেওপাড়া লিপি থেকে জানা যায়, হেমন্তসেনের পুত্র বিজয় সেন (আনুমানিক ১০৯৬-১১৫৯ খ্রি:) রাঢ়, গৌড়, পূর্ববঙ্গ ও মিথিলা জয় করে সেন রাজ্যের বিস্তার ঘটান। তিনি স্বাধীন সেনবংশের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা রূপে পরিচিত। পরবর্তী শাসক বল্লালসেন পাল রাজা গোবিন্দ পালকে পরাস্ত করে পালরাজ্যের কিছু অংশ কায়েম করেছিলেন। সেন বংশের শেষ শক্তিশালী শাসক লক্ষ্মণ সেন (১১৭৯-১২০৪/৫ খ্রিঃ) প্রয়াগ, বারাণসী, ও পুরীতে তাঁর ক্ষমতা প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। তিনি পূর্ববঙ্গের বিক্রমপুরে রাজধানী স্থাপন করেন।


(চ) সুলতান মাহমুদ ভারত থেকে লুঠ করা ধনসম্পদ কীভাবে ব্যবহার করেছিলেন?

উত্তর। গজনির সুলতান মাহমুদ ১০০০ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১০২৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ভারত আক্রমণ করেছিলেন। তার ভারত আক্রমণের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল ভারতের মন্দিরগুলি থেকে ধনসম্পদ লুঠ করা। তিনি ভারত থেকে যে সম্পদ লুঠ করেছিলেন। তা নিজের দেশের ভালো কাজে ব্যয় করেছিলেন। যেমন— (১) তিনি রাজধানী গজনি ও অন্যান্য শহরকে সুন্দর করে। সাজিয়েছিলেন। (২) তিনি অনেক প্রাসাদ, মসজিদ, গ্রন্থাগার, বাগিচা, খাল, জলাধার এবং আমু দরিয়ার ওপর বাঁধ নির্মাণ করেছিলেন। (৩) একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে শিক্ষকদের বেতন ও ছাত্রদের বৃত্তি দেওয়ার ব্যবস্থা করেছিলেন।


◾ বিশদে (১০০-১২০ শব্দের মধ্যে) উত্তর লেখো : (পূর্ণমান—৫)


(ক) প্রাচীন বাংলার রাঢ়, সুক্ষ্ম এবং গৌঢ় অঞ্চলের ভৌগোলিক পরিচয় দাও । 

উত্তর। প্রাচীন বাংলার জনপদগুলির মধ্যে অন্যতম জনপদ হল রাঢ়, সুক্ষ্ম ও গোঁড়। এই জন পদগুলির প্রকৃত অবস্থান অনুধাবনে প্রাকৃতিক ও ঐতিহাসিক ভূসংস্থানগত পরিবেশের ওপর আলোকপাত করা প্রয়োজন।

রাঢ়-সুক্ষ্ম : লেখগত ও সাহিত্যগত প্রমাণাদি থেকে প্রাচীন রাঢ় বা লাঢ় অঞ্চলের দুটো বিভাগের কথা জানা যায়— উত্তর রাঢ় ও দক্ষিণ রাঢ়। জৈন সাহিত্য আচারঙ্গ সূত্র অনুযায়ী উত্তর রাঢ় ছিল বজ্রভূমি (বজ্রভূমি) ও দক্ষিণ রাঢ় ছিল সুবৃত্তভূমি (সুষ্মভূমি) এলাকা।

উত্তর ও দক্ষিণ রাঢ়ের মধ্যে সীমা রেখা তৈরি করেছে অজয় নদ। বিভিন্ন ঐতিহাসিক প্রমাণাদির ভিত্তিতে বলা যায় যে, বর্তমান মুর্শিদাবাদ জেলার পশ্চিমভাগ, সমগ্র বীরভূম জেলা, সাঁওতাল পরগনার কিছু অংশ, এবং বর্ধমান জেলার কাটোয়া মহাকুমার উত্তরভাগ নিয়ে উত্তর রাঢ় জনপদটি গঠিত হয়েছিল। দক্ষিণ রাঢ় বলতে আজকের হাওড়া, হুগলি ও বর্ধমান জেলার বাকি অংশকে বোঝায়।

“মহাভারত” মহাকাব্য কালিদাসের কাব্য থেকে জানা যায় যে, এই অঞ্চলটি ভাগীরথী ও কাঁসাই (কংসাবতী) নদীর মাঝে সমুদ্র পর্যন্ত বিরাট এলাকা এর অন্তর্গত ছিল। গৌড় : প্রাচীন ও মধ্যযুগীয় বাংলার একটি গুরুত্বপূর্ণ ভৌগোলিক একক ছিল গৌড়। বরাহমিহিরের 'বৃহৎসংহিতা' (খ্রিঃ ষষ্ঠ শতকে) রচনার বর্ণনানুসারে গৌড় বলতে মুর্শিদাবাদ, বীরভূম ও বর্ধমান জেলার পশ্চিম ভাগ নিয়ে গঠিত এলাকাকে বোঝানো হয়েছে।

তবে খ্রিস্টীয় সপ্তম শতকে রাজা শশাঙ্কের আমলে গৌড়ের সীমা বেড়ে গিয়েছিল। সমকালীন হিউয়েন সাঙের বিবরণ অনুযায়ী শশাঙ্কের আমলে গৌড়ের রাজধানী ছিল কর্ণসুবর্ণ। ভাগীরথীর পশ্চিম তটস্থ আজকের মুর্শিদাবাদই ছিল সেকালের গৌড়ের প্রধান এলাকা। শশাঙ্কের আমলে গৌড়ের ভৌগোলিক বিস্তার পুণ্ড্রবর্ধন (উত্তরবঙ্গ) থেকে ওড়িশার উপকূল পর্যন্ত হয়েছিল। খ্রিস্টীয় অষ্টম-নবম শতকে কখনো কখনো গৌড় বলতে সমগ্র পাল সাম্রাজ্যকেও বোঝানো হত।


(খ) শশাঙ্কের সঙ্গে বৌদ্ধদের সম্পর্ক কেমন ছিল, সে বিষয়ে তোমার মতামত দাও।

উত্তর। বাংলাদেশের প্রথম সর্বভারতীয় পর্যায়ের উল্লেখযোগ্য নরপতি শশাঙ্ক ছিলেন মনে প্রাণে শৈব ধর্ম বা শিবের। উপাসক। 'আর্যমঞ্জুশ্রীমূলকল' নামক বৌদ্ধ গ্রন্থে ও হিউয়েন সাঙ তার 'ফো-কিউ-কিং' নামক ভ্রমণবিবরণীতে শশাঙ্ককে ‘বৌদ্ধবিদ্বেষী' বলে বর্ণনা করেছেন। শশাঙ্কের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয় যে তিনি বৌদ্ধ ভিক্ষুকদের হত্যা করেছিলেন। এমনকি বৌদ্ধদের পবিত্র ধর্মীয় স্মারক ধ্বংস করেছিলেন। হর্ষবর্ধনের সভাকবি বাণভট্টের হর্ষচরিত'-এ শশাঙ্ককে এই কারণে নিন্দা করা হয়েছে।

অন্যদিকে শশাঙ্কের শাসনকালের কয়েক বছর পরে হিউয়েন সাঙ শশাঙ্কের রাজধানী কর্ণসুবর্ণতে এসে এখানে বৌদ্ধদের যথেষ্ট প্রতিপত্তি ও কর্নসুবর্ণ নগরের উপকণ্ঠে রক্তমৃত্তিকা বৌদ্ধবিহারের সমৃদ্ধি লক্ষ করেছিলেন। আবার চৈনিক পর্যটক ই-ৎসি ও শশাঙ্কের মৃত্যুর পঞ্চাশ বছর পর বাংলায় বৌদ্ধ ধর্মের যথেষ্ট উন্নতি লক্ষ করেছিলেন। তাই এই সকল তথ্য প্রমাণাদির পরিপ্রেক্ষিতে আমরা সহজেই বলতে পারি শশাঙ্ককে কোনো রূপেই বৌদ্ধধর্ম বিদ্বেষী বলা যায় না। কেননা শশাঙ্ক নির্বিচারে বৌদ্ধ বিদ্বেষী হলে তার শাসনকালে বৌদ্ধধর্মের এরূপ প্রতিপত্তি বজায় থাকত না।

তাই স্বাভাবিকভাবে বলা যায় যে, শশাঙ্কের মতো একজন মহান শাসকের চরিত্রে কলঙ্ক লেপনের উদ্দেশ্যেই বিভিন্ন রচনায় তার বিরুদ্ধে এই সব বক্তব্য জারি করা হয়েছে।


(গ) ত্রিশক্তি সংগ্রাম কাদের মধ্যে হয়েছিল? এই সংগ্রামের মূল কারণ কী ছিল?

উত্তর। হর্ষবর্ধনের পরবর্তীযুগে আর্যাবর্তের রাজনৈতিক কেন্দ্রবিন্দু কনৌজের ওপর আধিপত্য স্থাপনের উদ্দেশ্যে মালবের গুর্জর-প্রতিহার, দক্ষিণ ভারতের রাষ্ট্রকূট ও বাংলার পালবংশের মধ্যে এক প্রবল ত্রি-শক্তি সংগ্রাম হয়েছিল। এই সংগ্রাম প্রায় ২০০ বছর ধরে চলেছিল।

কারণ : সম্রাট হর্ষবর্ধনের সময় থেকে কনৌজ ভারতের রাজনৈতিক আধিপত্যের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছিল। মূলত এই কনৌজের ওপর কর্তৃত্ব দখলের আকাঙ্ক্ষাই পরম শক্তিশালী তিন শক্তি গুর্জর-প্রতিহার, রাষ্ট্রকূট ও পালদের মধ্যে ত্রিশক্তি সংগ্রামের সূচনা করে। এই শক্তিগুলির কাছে কনৌজের ওপর অধিকার স্থাপন ছিল মর্যাদার প্রতীক। একইভাবে কনৌজের অর্থনৈতিক গুরুত্বও ভারতীয় রাজাদের কনৌজ দখলে প্ররোচিত করেছিল। যে কনৌজ নিয়ন্ত্রণ করবে সেই গাঙ্গেয় উপত্যকা দখলে রাখতে পারবে । এই অঞ্চলের নদী ভিত্তিক বাণিজ্য ও খনিজ দ্রব্য ছিল আর্থিক দিক থেকে লোভনীয়। এই রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে কনৌজ শেষ পর্যন্ত কে দখলে রাখতে পারবে, এই নিয়ে অষ্টম শতাব্দী থেকে পাল, গুর্জর-প্রতিহার ও দাক্ষিণাত্যের রাষ্ট্রকূট বংশের মধ্যে টানা লড়াই চলেছিল, যা ইতিহাসে ত্রি-শক্তি সংগ্রাম নামে পরিচিত। দীর্ঘ দুশো বছর ধরে চলা এই দ্বন্দ্বে তিনটি বংশেরই শক্তি শেষ হয়ে যায়।


◾কল্পনা করে লেখো : (১০০-১৫০ শব্দের মধ্যে)


(ক) মনে করো তুমি রাজা শশাঙ্কের আমলে একজন পর্যটক। তুমি তাম্রলিপ্ত থেকে কর্ণসুবর্ণ যাচ্ছ। পথে তুমি কোন কোন অঞ্চল ও নদী দেখতে পাবে? 'কর্ণসুবর্ণে' গিয়েই বা তুমি কী দেখবে ?

উত্তর ৷ গৌড় অধিপতি শশাঙ্কের আমলে একজন পর্যটক হিসেবে আমি তাম্রলিপ্ত থেকে কর্ণসুবর্ণ যাত্রাকালে যে সমস্ত অঞ্চলগুলি দেখতে পাব সেগুলি হল— দক্ষিণ রাঢ়, উত্তর রাঢ়, বঙ্গ, গৌড়, মুর্শিদাবাদ প্রভৃতি। এ ছাড়া যে সমস্ত নদী ও নদ দেখা যাবে তা হল—ভাগীরথী, রূপনারায়ণ, দামোদর, অজয়, ময়ূরাক্ষী প্রভৃতি।

শশাঙ্কের শাসনকালের একজন পর্যটক হয়ে আমি তার রাজধানী কর্ণসুবর্ণতে গিয়ে যা দেখতে পার তার একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ আমার দৃষ্টিভঙ্গিতে তুলে ধরলাম। কর্ণসুবর্ণ অবস্থানগতভাবে পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলায় অবস্থিত। এটি ছিল বাংলার সমৃদ্ধশালী নগর। এইখানে রাজবাড়িডাঙায় 'রক্তমৃত্তিকা বৌদ্ধবিহার' অবস্থিত ছিল, যেটি রাজধানী নগরটিকে বিদেশিদের কাছে আকর্ষণীয় করে তুলেছে।

শশাঙ্কের রাজধানী কর্ণসুবর্ণ ছিল জনবহুল একটি অঞ্চল। এখানে বৌদ্ধ ও শৈব উভয় ধর্মসম্প্রদায়ের মানুষের বসবাসই লক্ষ করতে পারি। কর্ণসুবর্ণের মানুষজন ছিল অত্যন্ত সমৃদ্ধশালী। এখানকার জমি নীচু ও আর্দ্র এবং জলবায়ু নাতিশীতোয় হওয়ায় তা কৃষির উপযোগী ছিল। কৃষি ছিল মানুষের একটি অন্যতম পেশা। এই অঞ্চলের মানুষজন ছিল শিক্ষাদীক্ষায়। উন্নত ও চরিত্রের দিক থেকে উদার।

এই সময়ে প্রশাসনিক ও বাণিজ্যিক কেন্দ্র হিসেবে কর্ণসুবর্ণ একটি গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান লাভ করে। পার্শ্ববর্তী গ্রামাঞ্চল থেকে এখানকার নাগরিকদের জন্য নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র আসত। এই অঞ্চলের সাথে দঃ পূর্ব এশিয়ার বাণিজ্যিক যোগাযোগ ছিল। রক্তমৃত্তিকা থেকে অনেক বণিককে জাহাজ নিয়ে দঃ পূর্ব এশিয়ার মালয় অঞ্চলের উদ্দেশ্যে যেতে দেখেছি। যা কর্ণসুবর্ণের বাণিজ্যিক সমৃদ্ধির পরিচায়ক।


(খ) মনে করো দেশে মাৎস্যন্যায় চলছে। তুমি ও তোমার শ্রেণির বন্ধুরা দেশের রাজা নির্বাচন করতে চাও। তোমাদের বন্ধুদের মধ্যে একটি কাল্পনিক সংলাপ রচনা করো।

উত্তর। জলাশয়ের বড়ো মাছ যেমন ছোটো মাছকে গিলে ফেলে, তেমনটি বাহুবলের দ্বারা অভিজাত শ্রেণি দুর্বলের ওপর অত্যাচার, নৈরাজ্য চালিয়ে এক বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি করে সেটাই 'মাৎস্যন্যায়' নামে পরিচিত। ইতিহাস বইতে পাল শাসনের পূর্বে এই রকম 'মাৎস্যন্যায়ের' কথা আমরা পড়েছি। এই মাৎস্যন্যায়-এর অবসান ঘটিয়ে দেশের রাজা নির্বাচনের মাধ্যমে আমি ও আমার বন্ধুরা শান্তি শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে চাই। আমরা যা করব তারই একটি সংক্ষিপ্ত বর্ণনা নীচে মেলে ধরলাম।

আমি : কিরে শুভম আমাদের বাংলাদেশে যে অরাজক বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি চলছে তার থেকে পরিত্রাণে কী করা যায়

বলে তোর মনে হয়?

শুভম : আমার তো মনে হয় একজন যোগ্য শাসক বা রাজার প্রয়োজন।

আমি : হ্যাঁ। তুই ঠিকই বলেছিস কিন্তু আমরা যে রাজাকে ক্ষমতায় বসাবো তাঁকে অবশ্যই ক্ষমতাশালী হতে হবে, যাতে তিনি সিংহাসনে বসেই সমস্ত কিছু কঠোর হাতে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন।

শুভম : আমার তো মনে হয় এর পাশাপাশি তাঁকে অসীম প্রতিভার অধিকারী হতে হবে, যিনি রাজ্যকে একটি দৃঢ় শাসনের ওপর দাঁড় করাতে পারবেন।

আমি : আমাদের এমন একজনকে রাজা রূপে নির্বাচন করতে হবে যিনি নিজের স্বার্থ ত্যাগ করে, সমস্ত সমস্যার মোকাবিলা করে রাজ্যে শান্তি শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে পারবেন। এমনকি রাজ্যের প্রজাকল্যাণে নিজেকে সম্পূর্ণরূপে নিয়োজিত করবেন। এবং বাংলায় একটি দীর্ঘকালীন শাসন ব্যবস্থার ভিত গড়ে দেবেন।

শুভম : আমাদের এমন রাজা নির্বাচন করতে হবে যিনি ক্ষমতা লোভী নন। অর্থাৎ রাজ্যপরিচালনার ক্ষেত্রে তাঁকে বিশেষ প্রশাসক গোষ্ঠী গড়ে তুলতে হবে। যাদের মতামত তিনি শাসন পরিচালনার ক্ষেত্রে গ্রহণ করবেন। 


(গ) মনে করো তুমি কৈবর্ত নেতা দিব্য। পাল রাজাদের বিরুদ্ধে তোমার অভিযোগগুলি কী কী থাকবে? কীভাবেই বা তুমি তোমার বিদ্রোহী সৈন্যদল গঠন ও পরিচালনা করবে তা লেখো।

উত্তর। দ্বিতীয় মহীপালের (১০৭০-১০৭৫ খ্রিঃ) রাজত্বকালে বরেন্দ্র অঞ্চলে সংগঠিত কৈবর্ত বিদ্রোহের নেতা দিব্য হিসেবে বিদ্রোহের কারণ স্বরূপ পাল রাজাদের বিরুদ্ধে আমার অভিযোগগুলি হল – পাল শাসনকালে কৈবর্তদের নীচু জাতি হিসেবে গণ্য করা হত যা মেনে নেওয়া যায় না। পাল রাজা দ্বিতীয় মহীপাল ছিল একজন দুর্বল ও অত্যাচারী শাসক। এ ছাড়া পাল রাজারা বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী হওয়ায় মৎস্য ভক্ষণকারী মানুষদের বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণ নিষিদ্ধ করে দেন, ফলে জেলে, কৈবর্তদের জীবিকার সংকট সৃষ্টি হয়। এ ছাড়া পাল রাজারা বৌদ্ধ ভিক্ষুকদের পৃষ্ঠপোষক হিসেবে কৈবর্তদের ভূমিসত্ত্ব কেড়ে নেন। পাল রাজাদের এই সমস্ত সিদ্ধান্ত কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না, ফলে কৈবর্তরা বিদ্রোহী হয়ে ওঠে।

একটি বিদ্রোহী সৈন্যদল গঠন ও পরিচালনা করার ক্ষেত্রে প্রথমেই নেতাকে যার ওপর গুরুত্ব আরোপ করতে হবে, তা হল একটি দৃঢ় সংগঠন গড়ে তোলা হবে। যা সৈন্যবাহিনীর মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়াকে গুরুত্ব দেবে। যুদ্ধ পরিচালনার সুবিধার্থে পুরো সৈন্যবাহিনীকে কয়েকটি ছোটো ছোটো দলে বিভক্ত করতে হবে এবং প্রতিটি দলের দায়িত্বে থাকবেন একজন দক্ষ সেনানায়ক, যে দলটিকে যুদ্ধ ক্ষেত্রে সুষ্ঠভাবে নিয়ন্ত্রণ ও চালিত করতে পারবে। কোনো শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে জয়লাভ করার জন্য অবশ্য সৈন্যবাহিনীর চাতুরতার ওপর জোর দিতে হবে এবং সেনাদলগুলিকে আধুনিক অস্ত্রশস্ত্র ও সাজসরঞ্জামে সুসজ্জিত করতে হবে। এ ছাড়া শাসকের দক্ষতা, নিপুণতা ও সমরকুশলতা বিদ্রোহী সৈন্যদলকে উৎসাহ যোগাবে।


(ঘ) মনে করো তুমি বাংলায় তুর্কি আক্রমণের দিন দুপুরবেলায় নদিয়া শহরের রাজপথ দিয়ে যাচ্ছিলে। সেই সময় কী দেখলে ?

উত্তর। আনুমানিক ১২০৪ খ্রিস্টাব্দের শেষে বা ১২০৫ খ্রিস্টাব্দের শুরুর দিকে তুর্কি নেতা ইখতিয়ার উদ্দিন মহম্মদ বখতিয়ার খলজির নেতৃত্বে বাংলায় তুর্কি আক্রমণের দিন যদি আমি নদিয়ার রাজপথ দিয়ে যাই এবং এই তুর্কি বাহিনীকে দেখি। বখতিয়ারের সাথে কেবলমাত্র ১৭ জন সৈন্য থাকায় তাদের ভ্রমণকারী বা পর্যটক বলেই মনে হচ্ছিল। আবার এদের ঘোড়া-ব্যবসায়ীও মনে হতে পারে। কিন্তু কিছুক্ষণ পরই দেখা গেল বখতিয়ারের তুর্কি বাহিনী রুদ্রমূর্তি ধারণ করে লক্ষণ সেনের রাজ্যের নদিয়া শহরের ওপর আক্রমণ চালাতে শুরু করে। আর তখন লক্ষণ সেন কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে যান এবং তাদের কাছে পরাজিত হন। এর ফলে বখতিয়ারের রাজাহীন সাম্রাজ্য নদিয়া দখলে সমর্থ হয়।

No comments:

Post a Comment