অষ্টম শ্রেণী বাংলা অদ্ভুত আতিথেয়তা ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর প্রশ্ন ও উত্তর সহায়িকা | Class 8th Bangla Question and Answer - Psycho Principal

Fresh Topics

Monday, 23 December 2024

অষ্টম শ্রেণী বাংলা অদ্ভুত আতিথেয়তা ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর প্রশ্ন ও উত্তর সহায়িকা | Class 8th Bangla Question and Answer

  

অদ্ভুত আতিথেয়তা 
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর




👉(প্রাণ ভরিয়ে তৃষা হরিয়ে  রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রশ্ন উত্তর)


লেখক পরিচিতি : 

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ছিলেন বাংলা তথা ভারতের নবজাগরণের অন্যতম প্রাণপুরুষ । বাঙালি জাতির প্রাতঃস্মরণীয় এই মহাপুরুষ ১৮২০ খ্রিস্টাব্দে বর্তমান পূর্ব মেদিনীপুরের বীরসিংহ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন । পিতা ঠাকুরদাস বন্দ্যোপাধ্যায় , মাতা ভগবতী দেবীর জ্যেষ্ঠ সন্তান ঈশ্বরচন্দ্রের ছোটোবেলা কেটেছে কষ্ট ও দারিদ্র্যের মধ্যে । তিনি সংস্কৃত কলেজ থেকে উচ্চশিক্ষা লাভ করেন । তারপর ফোর্ট উইলিয়াম কলেজে বাংলার অধ্যাপক পদ লাভ করেন । পরে তিনি সংস্কৃত কলেজের অধ্যক্ষ হন । স্মৃতিশাস্ত্রে তাঁর অসাধারণ পাণ্ডিত্যের জন্য ' আইনসমিতি ' তাঁকে ‘ বিদ্যাসাগর ’ উপাধিতে ভূষিত করেন । সমাজ সংস্কারকরূপে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের সবচেয়ে বড়ো অবদান ‘ বিধবা বিবাহ আইন ' প্রচলন এবং স্ত্রী শিক্ষার বিস্তার । ১৮৫৬ খ্রিস্টাব্দে তাঁর প্রচেষ্টায় ভারতে ‘ বিধবা বিবাহ আইন ' প্রচলিত হয় । ১৮৪৯ খ্রিস্টাব্দে ড্রিঙ্কওয়াটার বেথুনের সঙ্গে একযোগে যে বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠা করেন তার নাম ' হিন্দু ফিমেল স্কুল ’ , পরবর্তীকালে বেথুন স্কুল । বিদ্যাসাগর সরকারি বিদ্যালয় পরিদর্শক থাকাকালীন বাংলায় ৩৫ টি বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন যেখানে ১৩০০০ ছাত্রীরা পড়াশোনা করত । তিনি বয়স্ক শিক্ষার জন্য নিজ গ্রামে একটি নৈশবিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন । তাছাড়া ইংরেজি শিক্ষা বিস্তারের জন্য নিজব্যয়ে কলকাতায় মেট্রোপলিটন ইনস্টিটিউশন স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন । এটি পরবর্তীকালে বিদ্যাসাগর কলেজ ' নামে পরিচিত । তাঁর রচিত মৌলিক ও অনূদিত বহু গ্রন্থের মধ্যে বর্ণপরিচয় ( ১ ম ) ও ( ২ য় ) , বোধদয় , ঋজুপাঠ এবং অনুবাদগ্রস্থ আখ্যানমঞ্জরি , শকুন্তলা , বেতাল পঞ্চবিংশতি , ভ্রান্তিবিলাস , সীতার বনবাস , ভাষা ও সংস্কৃত সাহিত্য বিষয়ক প্রস্তাব , প্রভাবতী সম্ভাষণ উল্লেখযোগ্য । ১৮৯১ খ্রিস্টাব্দের ২৯ জুলাই এই মহামানবের জীবনাবসান হয় । পাঠ্য গ্রন্থটি বিদ্যাসাগর রচিত আখ্যানমঞ্জরী গ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে । 


সারসংক্ষেপ : 

মুর ও আরবগণ একে অপরের শত্রু ছিল । তাদের মধ্যে প্রবল লড়াই চলছিল । এমতাবস্থায় কোনো এক মুর সেনাপতি অশ্বারোহণে নিজ শিবিরে ফিরবার পথে ভুলবশত শত্রু শিবিরে চলে যান । মুর সেনাপতি এতই ক্লান্ত ছিলেন যে তাঁর পক্ষে অন্য কোথাও যাওয়া সম্ভবপর ছিল না । আরবজাতির অতিথিপরায়ণতার কোনো তুলনা নেই । কোনো ব্যক্তি যদি তাদের আশ্রয়প্রার্থী হয় তবে তাদের প্রতি তারা কখনো বিদ্বেষ প্রকাশ করে না । আরব সেনাপতি মুর সেনাপতিকে সঙ্গে সঙ্গে আশ্রয় দিলেন তার জন্য উপযুক্ত খাদ্য ও শষ্যার ব্যবস্থা করলেন । তারপর দুজনে একে অপরের পূর্বপুরুষদের সাহস ও পরাক্রমের বিষয় আলোচনা করতে লাগলেন । কিন্তু কিছু সময় পরে আরব সেনাপতি সহসা শরীর খারাপের অজুহাতে চলে গেলেন । মুর সেনাপতির জন্য রাত্রিবাসের উপযোগী খাবার , শয্যার ব্যবস্থা করালেন । শুধু তাই নয় মুর সেনাপতির পরের দিনের প্রস্থানের জন্য অশ্বের আয়োজনও করে দিলেন । কিন্তু নিজে উপস্থিত হলেন না । মুর সেনাপতি বিস্মিত হলেও পথশ্রমে ক্লান্ত হয়ে নিদ্রা গেলেন । পরদিন সূর্যোদয়ের আগেই মুর সেনাপতির লোকজন তাঁর ঘুম ভাঙালেন । তাঁর জন্য আহারাদির ব্যবস্থা করলেন । মুর সেনাপতি প্রাতঃকর্ম ইত্যাদি করে খাবার খেয়ে শিবিরের দ্বারে এসে আরব সেনাপতিকে দেখতে পেলেন । তিনি সঙ্গে সঙ্গে মুর সেনাপতিকে সম্ভাষণ করে তাঁকে একটি অশ্বের পিঠে আরোহণ করালেন । তারপর তাঁকে জানালেন যে , মুর সেনাপতি যে তাঁর ( আরব সেনাপতির ) পিতার হত্যাকারী তা বুঝেই তিনি সরে গেছিলেন । কারণ আরবদের ধর্ম হলো অতিথিকে প্রাণ দিয়ে রক্ষা করা । কিন্তু তিনি ( আরব সেনাপতি ) নিজের পিতৃহত্তাকে পুরোপুরি ছেড়ে দিতে পারেন না । তাই তিনি অতিথির যথাসম্ভব দেখভাল করেছেন কিন্তু প্রভাতে মুরসেনাপতি আরব শিবির থেকে বের হলেই তাঁরা আবার পরস্পরের শত্রু হবেন এবং আরব সেনাপতি নিজের পিতৃহত্যার প্রতিশোধ নিতে পারবেন । এই বলে মুর সেনাপতিকে রওনা করিয়ে দিয়ে আরব সেনাপতি সূর্যোদয় মাত্রই অশ্বের পিঠে তাঁকে ধাওয়া করবেন কিন্তু মুর সেনাপতি দ্রুত নিজ শিবিরে পৌঁছে যাওয়ায় আরব সেনাপতি নিজের শিবিরে ফিরে এলেন ।


নামকরণ : 

প্রত্যেক গদ্যের নামকরণ হয় তার বিষয়বস্তু বা প্রধান চরিত্র অবলম্বনে । এখানে গদ্যটি রচিত হয়েছে একটি বিশেষ বিষয়কে অবলম্বন করে । এই গল্পের বিষয়বস্তু হলো , ‘ অতিথিসৎকার ’ । আরব ও মুরগণ পারস্পরিক শত্রু ছিল । এরা একে অন্যকে নির্দ্বিধায় হত্যা করতে দ্বিধাবোধ করতেন না । কিন্তু তাঁদের ধর্মপরায়ণতার কোনো তুলনা নেই । শুধু তাই নয় অতিথিপরায়ণ হিসেবেও তারা যথেষ্ট সুপরিচিত ছিলেন । প্রয়োজনে যেমন শত্রু হত্যা করতে দ্বিধা করতেন না , তেমনি শত্রু অতিথি হলে প্রাণ দিয়ে তাঁকে রক্ষা করতেন । আরব জাতির অতিথিপরায়ণতাই এই গল্পের মূল বিষয়বস্তু । আরব জাতির এই দৃঢ়তা এবং সেইসঙ্গে শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার পাশাপাশি তাঁদের ধর্মপরায়ণতা ও অতিথিপরায়ণতার দৃষ্টান্ত এই গদ্যে তুলে ধরা হয়েছে । মানুষের সঙ্গে মানুষের সৌহার্দ্যের সম্পর্ক অথচ মানুষ পরস্পরের শত্রু হয়ে সেই স্বাভাবিক সম্পর্ক বিনষ্ট করে ফেলে । অতিথির প্রতি আমাদের মনোভাব কেমন হবে সেটাই এই গদ্যের বিষয় । অর্থাৎ অতিথি যখন গৃহে আসেন তখন তাঁকে রক্ষা করা মানুষের ধর্ম । অতিথি যখন বাইরে যান তখন তিনি শত্রু হলে তাঁকে হত্যার মধ্যে কোনো পাপ নেই । লেখক ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর সেই বিষয়টিই খুব চমৎকারভাবে গল্পের মধ্যে দিয়ে ফুটিয়ে তুলেছেন । তাই এই গদ্যের নাম ' অদ্ভুত আতিথেয়তা ’ যথার্থ হয়েছে বলেই মনে হয় ।


১.১ ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর কোন কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন ? 

উঃ ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর সংস্কৃত কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন। 


১.২। তাঁর রচিত দুটি গ্রন্থের নাম লেখাে। 

উঃ তাঁর রচিত দুটি (অনুবাদ) গ্রন্থ হল—“শকুন্তলা ও ‘বেতাল পঞ্চবিংশতি'। 



২ নীচের প্রশ্নগুলির একটি বাক্যে উত্তর দাও : 


২.১ অদ্ভুত আতিথেয়তা’ গল্পে কোন্ কোন সেনাপতির প্রসঙ্গ রয়েছে ? 

উঃ ‘অদ্ভুত আতিথেয়তা’ গল্পে আরবসেনাপতি ও মুরসেনাপতির প্রসঙ্গ রয়েছে। 


২.২ ‘তিনি, এক আরবসেনাপতির পটমণ্ডপদ্বারে উপস্থিত হইয়া, আশ্রয় প্রার্থনা করিলেন।উদ্ধৃতাংশে তিনি বলতে কার কথা বােঝানাে হয়েছে ? 

উঃ উদ্ধৃতাংশে তিনি বলতে মুরসেনাপতির কথা বােঝানাে হয়েছে। 


২.৩ উভয় সেনাপতির কথােপকথন হইতে লাগিল।—উভয় সেনাপতি' বলতে এখানে কাদের কথা বলা হয়েছে ? 

উঃ ‘উভয় সেনাপতি’ বলতে এখানে মুরসেনাপতি ও আরবসেনাপতির কথা বলা হয়েছে। 


২.৪। তাহা হইলে আমাদের উভয়ের প্রাণরক্ষার সম্ভাবনা।—প্রাণরক্ষার কোন উপায় বা এক্ষেত্রে বলেছেন? 

উঃ প্রাণরক্ষার উপায় হিসেবে আরবসেনাপতি জানান, মুরসেনাপতি দ্রুতবেগে তার আয়ত্তের বাইরে যেতে পারলেই তাদের উভয়ের প্রাণরক্ষা সম্ভব। | 


২.৫ ‘আপনি সত্বর প্রস্থান করুন।-বক্তা কেন উদ্দিষ্ট ব্যক্তিকে ‘সত্বর প্রস্থান করার নির্দেশ দিলেন ? 


উঃ আশ্রিত অতিথি মুরসেনাপতি, আরবসেনাপতির পিতার হত্যাকারী —এ কথা জানার পর তিনি তীব্র মানসিক দ্বন্দ্বে পীড়িত হয়ে পড়েন। ইতিকর্তব্যে বিভ্রান্ত হয়ে আরবসেনাপতি মুরসেনাপতিকে প্রাণ নিয়ে ফেরার সুযােগ করে দিতে সত্বর প্রস্থান করার নির্দেশ দেনা।


৩ নীচের প্রশ্নগুলির কয়েকটি বাক্যে উত্তর লেখাে : 


৩.১। “তাঁহার দিভ্রম জন্মিয়াছিল।”—এখানে কার কথাবলা হয়েছে ? দিকভ্রম হওয়ার পরিণতি কী হল ? 

উঃ এখানে মুরসেনাপতির কথা বলা হয়েছে।

 » দিকভ্রষ্ট মুরসেনাপতি ক্ষুধা-তৃয়ায় ক্লান্ত হয়ে, পথ পরিশ্রান্ত হয়ে পৌছান বিপক্ষীয় আরব শিবিরে। মুর সেনাপতির শারীরিক অবস্থা দেখে আরব সেনাপতি তাকে আশ্রয় দেন, ব্যবস্থা করেন আহারাদির। দিকভ্রম হওয়ায় মুরসেনাপতি সে রাতে বিপক্ষীয় আরব সেনাদের শিবিরেই থেকে যান। 


৩.২ ‘আতিথেয়তা বিষয়ে পৃথিবীতে কোনও জাতিইআ রবদিগের তুল্য নহে। এই বক্তব্যের সমর্থন গল্পে কীভাবে খুঁজে পেলে ? 

উঃ আতিথেয়তা এমন একটি বিষয়, যা সব জাতির মধ্যে থাকে না। আলােচ্য পাঠ্যাংশে বর্ণিত ঘটনা থেকে আরব জাতির এক অতুলনীয় আন্তরিক আতিথেয়তার দৃষ্টান্ত বর্ণিত হয়। বিপক্ষীয় দলের এক মুরসেনাপতি পথ হারিয়ে আশ্রয় নেয় আরব শিবিরে এসে আর আরবসেনাপতি নির্দ্বিধায় তাঁকে আশ্রয় দেন এবং সাধ্যমতাে তাঁর ক্ষুধা-তৃয়া-ক্লান্তি দূর করতে সেবা-পরিচর্যাও করেন। বিশ্রামকালে গল্প করতে করতে আরবসেনাপতি জানতে পারেন, এই ব্যক্তিই তাঁর পিতার হত্যাকারী। তখন তিনি ইচ্ছা করলেই পিতৃহত্যার প্রতিশােধ নিতে পারতেন। কিন্তু তিনি তা না-করে তাঁকে সমস্ত বিষয় জানিয়ে তাঁর পালানাের সুযােগ করে দেন; এমনকি, তিনি যাতে দ্রুত পালাতে পারেন, তার জন্য সুস্থ-সবল দ্রুতগামী ঘােড়া দিয়েও সাহায্য করেন। এর থেকেই বােঝা যায়, আতিথেয়তা বিষয়ে পৃথিবীতে কোনাে জাতিই আরবদিগের তুল্য নহে। 


৩.৩। সহসা আরবসেনাপতির মুখ বিবর্ণ হইয়া গেল। -আরবসেনাপতির মুখ হঠাৎ বিবর্ণ হয়ে ওঠার কারণ কী ? 

উঃ আরবসেনাপতির আতিথ্যে মুরসেনাপতি খাদ্য-পানীয় পেয়ে সুস্থ হয়ে ওঠার পর তারা দুজনে বসে বন্ধুভাবে কথাবার্তা শুরু করেন। তারা পরস্পরের আলােচনায় নিজের ও নিজের পূর্বপুরুষদের সাহস, পরাক্রম ও যুদ্ধ-কৌশলের পরিচয় দিতে লাগলেন। মুরসেনাপতির কথা থেকে আরবসেনাপতি বুঝতে পারেন এই ব্যক্তিই তাঁর পিতার হত্যাকারী। তখনই তার মন খারাপ হয়ে যায়। পিতার হত্যাকারীকে তিনি আশ্রয় দিয়েছেন, অথচ আতিথ্যবােধের কারণে তিনি এই মুহূর্তে প্রতিশােধ নিতে অপারগ। পিতার হত্যাকারী, তাঁর সবচেয়ে বড় শত্রু তাঁর সামনে, অথচ তাঁর কিছুই করার নেই। এই তীব্র মানসিক যন্ত্রণাবােধেই হঠাৎ করে আরবসেনাপতির মুখ বিবর্ণ হয়ে গিয়েছিল 


৩.৪ ‘সন্দিহানচিত্তে শয়ন করিলেন।'—এখানে কার মনের সন্দেহের কথা বলা হয়েছে ? তাঁর মনের এই সন্দেহের কারণ কী ? 

উঃ আলােচ্য উদ্ধৃতিটিতে আরবসেনাপতির শিবিরে আশ্রয় নেওয়া মুরসেনাপতির মনের সন্দেহের কথা বলা হয়েছে। 

» যখন আরবসেনাপতি ও মুরসেনাপতি কথােপকথনে নিমগ্ন ঠিক তখনই বিবর্ণ মুখে আকস্মিকভাবে আরব সেনাপতি চলে যাওয়ার পর তাকে আর দেখা যায়নি। এমনকি নিজের অনুপস্থিতির জন্য দুঃখবােধও প্রকাশ করেন। আবার সংবাদ পাঠান, খুব সকালে তার জন্য দ্রুতগামী ঘােড়া সজ্জিত থাকবে যাতে তিনি দ্রুত চলে যেতে পারেন এবং সেই সময়ই তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ হবে। একদিকে নিজের অসুস্থতার কথা বলা, অন্যদিকে ভােরবেলা উপস্থিত থেকে তাকে বিদায় সম্ভাষণ জানাবে বলা— এই দুই বৈপরীত্য আচরণ বিপক্ষ শিবিরে অবস্থান করে মুর সেনাপতিকে সন্দেহপ্রবণ করে তুলেছিল। আরবসেনাপতির কথা ও কাজের মর্মগ্রহণ করতে না-পেরেই উদ্দিষ্টের মনে সন্দেহ হয়েছিল।


৩.৫। ' ..তাঁহার অনুসরণ করিতেছিল ; ...'- কে, কাকে অনুসরণ করছিলেন ? তাঁর এই অনুসরণের কারণ কী? 

উঃ প্রশ্নোধৃত উক্তি অনুযায়ী আরবসেনাপতি মুরসেনা পতিকে অনুসরণ করছিলেন। 

» আরবসেনাপতি মুরসেনাপতিকে অনুসরণ করছিলেন, কারণ তিনি তাঁর পিতার হত্যাকারীকে হত্যা করতে চান। অথচ, সেই হত্যাকারী তার সামনে উপস্থিত থাকা সত্ত্বেও আতিথেয়তার গুণে সেই প্রতিশােধ তিনি নিতে পারেননি। সূর্যোদয়ের পর তিনি কাজটি করবেন প্রতিজ্ঞা করে মুরসেনাপতিকে সূর্য ওঠার বেশ কিছুক্ষণ আগেই তাঁর শিবির থেকে বিদায় দেন। মুরসেনাপতি, আরবসেনাপতির কথা শুনে নিজের প্রাণ বাঁচানাের তাগিদে দ্রুত গতিতে ঘােড়া ছােটাতে লাগলেন আর আরবসেনাপতি তাঁকে হত্যা করে পিতৃহত্যার প্রতিশােধ নেওয়ার জন্য তাঁকে অনুসরণ করতে লাগলেন।


৪ প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তাৎপর্য বিশ্লেষণ করাে : 


৪.১ যাহাতে আপনি সত্বর প্রস্থান করিতে পারেন, তদবিষয়ে যথােপযুক্ত আনুকূল্য করিব। 

উৎস : আলােচ্য উদ্ধৃতিটি ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের লেখা ‘অদ্ভুত আতিথেয়তা’ গল্প থেকে নেওয়া হয়েছে। 

প্রসঙ্গ : আতিথেয়তা রক্ষা ও পিতৃহন্তার প্রতিশােধ গ্রহণ—এই দুটি বিপরীতমুখী টানাপােড়েনে দ্বিধান্বিত আরব সেনাপতি অতিথির প্রাণ রক্ষার প্রসঙ্গে কথাটি বলেছেন। 


তাৎপর্য : আরব জাতির আতিথেয়তাবােধ পৃথিবীর অন্য সব জাতির থেকে শ্রেষ্ঠ। পরম বন্ধু ভেবে নিজেদের ও পূর্বপুরুষদের কীর্তিগাথা বর্ণনার সময় আরবসেনাপতি অতিথি মুরসেনাপতির কথা থেকে বুঝতে পারেন যে, এই ব্যক্তিই তাঁর পিতার হত্যাকারী। কিন্তু সৌজন্যের কারণে সেই মুহূর্তে তিনি প্রতিশােধ নিতে পারেন না। তাঁকে অতিথির প্রাণ বাঁচাতে হবে আবার পিতার মৃত্যুর প্রতিশােধও নিতে হবে। এই দু-এর টানাপােড়েনে তিনি দুটি দিকই বজায় রাখতে গিয়ে কথাটি বলেছেন। 



৪.২ 'এই বিপক্ষশিবির-মধ্যে, আমা অপেক্ষা আপনকার ঘােরতর বিপক্ষ আর নাই।'

উৎস: আলােচ্য উক্তিটি ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ‘অদ্ভুত আতিথেয়তা গল্প থেকে নেওয়া হয়েছে। । 

প্রসঙ্গ : বক্তা আরবসেনাপতির পিতৃহন্তা মুরসেনাপতি যাতে তাঁর সংহারী রূপ থেকে রক্ষা পেতে পারে, তাকে তা জানানাের প্রসঙ্গেই আরবসেনাপতি কথাটি বলেছেন। 


তাৎপর্য : আরবসেনাপতি মুরসেনাপতির কথাসূত্রে জানতে পারেন যে, ইনি তাঁর পিতার হত্যাকারী । অথচ তিনি অতিথি। এই মুহূর্তে তাঁকে হত্যা করা অসম্ভব। আবার পিতার হত্যাকারীকে সমুচিত শাস্তি না-দিলে তিনি নিজের কাছে ভীরু প্রতিপন্ন হবেন। এই দুই টানাপােড়েনে আরবসেনাপতি মুরসেনাপতির কাছে ঈপ্সিত সত্যি প্রকাশ করে নিজের স্বরূপ উদঘাটন করে আলােচ্য কথাটি বলেছেন। এর দ্বারা তাঁর দুটি দিকই রক্ষা পেল বলে মনে হয়। 



৪.৩ 'আমাদের জাতীয় ধর্ম এই, প্রাণান্ত ও সর্বস্বান্ত হইলেও, অতিথির অনিষ্টচিন্তা করি না।'

উৎস : আলােচ্য উক্তিটি ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ‘অদ্ভুত আতিথেয়তা’ গল্প থেকে নেওয়া হয়েছে। 

তাৎপর্য : মুরসেনাপতির সঙ্গে কথােপকথনকালে আরবসেনাপতি যখন জানতে পারেন, ইনিই তাঁর পিতার হত্যাকারী, তখন তিনি শুধুমাত্র আতিথেয়তার কারণে তাঁকে হত্যা না করে তাঁকে অতিথি রূপে সেবা করেন। 


প্রসঙ্গ : আরব জাতির অতিথিপরায়ণ মনােভাবের সম্যক পরিচয় দেওয়ার প্রসঙ্গেই কথাটি বলা হয়েছে। আরব জাতির অতিথিসেবার প্রসঙ্গ বলতে গিয়ে লেখক প্রথমেই জানিয়েছেন, আতিথেয়তা বিষয়ে পৃথিবীর কোনাে জাতিই আরব জাতির মতাে নয়। কাহিনিতেও তার সত্যতা প্রমাণিত হয়েছে। আরবসেনাপতি, মুরসেনাপতির স্বরূপ জেনেও, তিনি তাঁর অতিথি হওয়ার কারণে তাঁকে সঙ্গে সঙ্গে হত্যা করতে পারেননি। উপরন্তু তাঁকে পালানাের পূর্ণ সুযােগ দিয়ে তবে তার পিছু নিয়েছেন। অর্থাৎ, এই ব্যবহারের মধ্যে দিয়ে আরবসেনাপতির আতিথ্যবােধ ও জাতীয় মর্যাদার কথাই প্রকাশিত হয়েছে। 



৫ নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর নিজের ভাষায় লেখাে : 


৫.১ গল্পে কার আতিথেয়তার কথা রয়েছে ? তিনি কীভাবে অতিথির আতিথেয়তা করেন ? তার সেই আতিথেয়তাকে ‘অদ্ভুত’ আখ্যা দেওয়া হয়েছে কেন ? 

উঃ ‘অদ্ভুত আতিথেয়তা’ গল্পে আরবসেনাপতির আতিথেয়তার কথা বলা হয়েছে।

 » আতিথেয়তা বিষয়ে আরবসেনাপতি এক অদ্ভুত দৃষ্টান্ত রেখেছেন। স্বভাবগুণে তিনি প্রথমে শরণাগতকে আশ্রয় দেন, তাঁর সার্বিক পরিচর্যা করেন, তার জন্য যথােপযুক্ত খাদ্য-পানীয়ের ব্যবস্থা করেন। তারপর কথােপকথনকালে যখন জানতে পারেন, এই ব্যক্তিই তাঁর পিতাকে হত্যা করেছেন, তখন সেই মুহূর্তে তাঁর প্রতি কোনাে বিরূপতা দেখাননি। এমনকি তাঁর ঘােড়ার অক্ষমতা দেখে তাঁর জন্য একটি সবল, সতেজ ঘােড়ার ব্যবস্থাও করেন। তাঁর সঙ্গে পরম বন্ধুত্বের আচরণ করেন। শেষ পর্যন্ত সম্যক বিষয় জানিয়ে তাঁকে চলে যাওয়ার সুযােগ করে দেন। এইভাবে পিতার হত্যাকারীর প্রতি পূর্ণ সৌজন্য দেখিয়ে আরবসেনাপতি আতিথেয়তা প্রদর্শন করেন। 


» এই আতিথেয়তা সত্যিই ‘অদ্ভুত। কারণ, আরবসেনাপতি তাঁর পিতার হত্যাকারীকে হত্যা করতে চান। আবার সেই মানুষটিই তাঁর শরণাগত, অতিথি। একদিকে প্রতিশােধস্পৃহা, অন্যদিকে অতিথিসেবা—এই দুই-এর টানাপােড়েনে সুযােগ পেয়েও আরবসেনাপতি অতিথির প্রতি সামান্যতম বিরূপতা দেখাননি। আবার বিদায়কালে তাঁর শপথ ও প্রতিজ্ঞার কথা বলে তাঁকে যথেষ্ট সতর্ক করেছেন। এভাবে মনের ইচ্ছাকে প্রকাশ করেও তিনি আতিথ্য দেখিয়েছেন বলে এই আতিথেয়তাকে ‘অদ্ভুত’ বলা হয়েছে। 


৫.২ আরব-মুর সংঘর্ষের ইতিহাসাশ্রিত কাহিনি অবলম্বনে রচিত এই আখ্যানে লেখকের রচনাশৈলীর অনন্যতার পরিচয় দাও। 

উঃ সাহিত্য সমাজ-জীবনের দর্পণ। সমাজে মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা, সুখ-দুঃখ, পাওয়া-না-পাওয়া, ন্যায়-নীতি সাহিত্যে ফুটে ওঠে। মানুষও অন্যের কাহিনির মাধ্যমে নিজের আদর্শবােধ জাগিয়ে তােলে। আলােচ্য আরব-মুর সংঘর্ষের প্রেক্ষিতে লেখক অদ্ভুত গল্পশৈলীর মাধ্যমে এই আখ্যান বুনেছেন। প্রাথমিকভাবে আরবসেনাপতির আতিথেয়তা সবাইকে মুগ্ধ করে। তারপর তাঁর আচরণ আমাদেরকে আরও বেশি বিমােহিত করে তােলে। একজন যােদ্ধা পিতৃহন্তার যন্ত্রণা সহ্য করেও হত্যাকারীকে নিজের শিবিরে আশ্রয় দিয়েছেন। অথচ, তাঁকে হত্যা করাই তাঁর উদ্দেশ্য। কিন্তু কর্তব্যবােধ, নীতি-আদর্শ বিসর্জন দিয়ে তিনি কেবলমাত্র প্রতিশােধ নিতে হত্যা করা পছন্দ করেন না। তাতে তাঁর জাতির ও মানুষের মানবিকতার অপমান হবে। নীতি ও মূল্যবােধ আহত হবে। আর প্রকৃত মানুষ হিসেবে তিনি তা করতে পারেন না। তাই শত্রুকে প্রাণ বাঁচানোের পূর্ণ সুযােগ দিয়ে, সতর্ক করেই তিনি তাঁকে চলে যেতে বলেন। এ ছাড়া বিদ্যাসাগরীয় ভাষা বৈশিষ্ট্যে কাহিনি যথেষ্ট উজ্জ্বল। তাই রচনাশৈলীর বিষয়ে অদ্ভুত আতিথেয়তা’ গল্পটি উজ্জ্বল ও অনন্যসাধারণ দৃষ্টান্ত। 


৫.৩ ‘আতিথেয়তা বিষয়ে পৃথিবীর কোনাে জাতিই আরবদিগের তুল্য নহে' গল্পের ঘটনা বিশ্লেষণ করে মন্তব্যটির যথার্থতা প্রতিপন্ন করাে। 

উঃ শরণাগতরা কোনাে অবস্থাতেই আরব জাতির সহানুভূতি, সেবা-সাহচর্য, সৌজন্য থেকে বঞ্চিত হয় না। আরবরা অতিথির সেবাকে পরম ধর্ম বলে মনে করে। কোনােভাবেই আশ্রিতের অনিষ্ট চিন্তা করে না। ‘অদ্ভুত আতিথেয়তা’ গল্পে আমরা আরবসেনাপতির সেই মানসিকতাকেই প্রত্যক্ষ করি। আমরা দেখি, আরবসেনাপতি যখন মুরসেনাপতিকে তাঁর পিতার হত্যাকারী বলে বুঝতে পারলেন, তখনও তিনি সেবাকার্য থেকে সরে আসেননি। সাময়িক উত্তেজনা এলেও তা তিনি প্রশমন করেছেন। তিনি মুরসেনাপতিকে পুরো বিষয় জানিয়ে বলেন—“আমাদের জাতীয় ধর্ম এই, প্রাণান্ত ও সর্বস্বান্ত হইলেও, অতিথির অনিষ্টচিন্তা করি না।” পাঠ্যাংশে আরবসেনাপতি তা যথার্থভাবে পালন করেছেন। শত্রুকে সম্পূর্ণ আয়ত্তে পেয়েও তাঁকে আঘাত করেননি বরং নিরাপদে পালানাের সুযােগ ও ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। এ থেকেই বােঝা যায়, আতিথেয়তা বিষয়ে আরব জাতির তুল্য পৃথিবীতে সত্যিই কেউ নেই। 


৫.৪। “বন্ধুভাবে উভয় সেনাপতির কথােপকথন হইতে লাগিল।”—কোন দুই সেনাপতির কথা এখানে বলা হয়েছে ? তাঁদের কীভাবে সাক্ষাৎ ঘটেছিল ? উভয়ের কথােপকথনের সারমর্ম নিজের ভাষায় আলােচনা করাে। 

উঃ ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের লেখা ‘অদ্ভুত আতিথেয়তা গল্প থেকে গৃহীত আলােচ্য উদ্ধৃতাংশটিতে বন্ধুভাবে কথােপকথনরত আরবসেনাপতি ও মুরসেনাপতির কথা এখানে বলা হয়েছে। 


» আরব ও মুরদের বিরােধের সময় একদিন এক আরব সেনা এক মুরসেনাপতির পিছু ধাওয়া করে। দিকভ্রম মুরসেনাপতি দিকভ্রম হয়ে বিপক্ষ শিবিরে চলে যান তিনি এতই ক্লান্ত ও অবসন্ন ছিলেন যে ঘােড়ায় চড়ার ক্ষমতাও তার ছিল না। অতঃপর বাধ্য হয়ে তিনি আরবসেনাপতির কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করেন। আতিথেয়তাবােধে সর্বোজ্জ্বল আরবসেনাপতি তাকে বিনা দ্বিধায় আশ্রয় দেন। সাধ্যানুসারে পরিচর্যার দ্বারা তাঁকে সুস্থ করে তােলেন। এভাবেই বিপক্ষ দুই সেনাপতির সাক্ষাৎ হয়েছিল। 


» উভয়ের কথােপকথনের সারমর্ম হল—আরবসেনাপতি ও মুরসেনাপতির পারস্পরিক কথােপকথনের মধ্যে দিয়ে উভয় সেনাপতির পূর্বপুরুষদের সাহস, পরাক্রম, যুদ্ধকৌশলের নানা পরিচয় উঠে আসে কথােপকথনেই আরব সেনাপতি জানতে পারেন, মুরসেনাপতিই আর পিতৃহন্তা, কিন্তু তুবও তিনি বুকের যন্ত্রণা বুকে চেপেই স্বজাতির ধর্ম অনুযায়ী তাঁর আতিথেয়তার ব্যবস্থা করেন। যার দ্বারা প্রমাণিত হয় আরব সেনাপতি আতিথেয়তাবােধে পৃথিবীর অন্যসব জাতির অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। তাঁরা মনের ক্রুদ্ধভাব কখনও অতিথির কাছে প্রকাশ করেন না। তাঁদের শত্রুতার মধ্যেও একটি পরম মিত্রতার ভাব ফুটে ওঠে। আর লেখকও আমাদেরকে সেই ভাবনায় উদ্দীপ্ত হতে সচেষ্ট করেছেন। 


৫.৫ 'তিনি নির্বিঘ্নে স্বপক্ষীয় শিবিরসন্নিবেশ স্থানে উপস্থিত হইলেন।'—কার কথা বলা হয়েছে ? কীভাবে তিনি স্বপক্ষের শিবিরে নির্বিঘ্নে পৌছােলেন ? তাঁর জীবনের এই ঘটনার পূর্বাত্রের অভিজ্ঞতার কথা নিজের ভাষায় আলােচনা করাে। 

উঃ উদ্ধৃত বাক্যে প্রাণভয়ে ভীত, আরবসেনাপতির হাত থেকে মুক্তি পেতে আগ্রহী মুরসেনাপতির কথা বলা হয়েছে। 


» সূর্যোদয়ের আগে আরবসেনাপতি মুরসেনাপতির কাছে এলেন। তাঁকে তেজস্বী, বলবান একটি সজ্জিত অশ্ব দিয়ে বললেন, তিনি যেন তাড়াতাড়ি চলে যান। সূর্য উঠলেই তিনি পিতৃহন্তার প্রাণ বধ করার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়বেন, তার আগে নয়। তাই তিনি যদি এখনই বেরিয়ে পড়েন, তবেই মঙ্গল। নতুবা তাঁর হাতে পিতৃহন্তার মৃত্যু অনিবার্য। আরবসেনাপতির মুখ থেকে এ কথা শুনে মুরসেনাপতি সবল, দ্রুতগামী ও তেজস্বী ঘােড়ার পিঠে চড়ে নিজের শিবিরের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়লেন এবং দ্রুতবেগে নিজের দলের শিবিরে নির্বিঘ্নে উপস্থিত হলেন। 


» এই ঘটনার পূর্বরাত্রে আরবসেনাপতির শিবিরে আশ্রয় নিয়ে তাঁরই সার্বিক পরিচর্যায় মুরসেনাপতি সুস্থ হয়ে ওঠেন। তাঁরা বন্ধুর মতাে নিজেদের মধ্যে নানান গল্প করেন এবং নিজেদের জাতির গৌরবগাথা একে অন্যকে বলতে থাকেন। সহসা আরবসেনাপতি মুখ বিবর্ণ করে উঠে গেলে মুরসেনাপতি কিছুটা অবাক হন। তারপর দেখেন, আরবসেনাপতি তাঁর সামনে না-এসে আড়ালে সব কাজ করে যাচ্ছেন। আর এতেই মুরসেনাপতি খানিকটা সন্দিগ্ধ হয়ে এক সময় ঘুমিয়ে পড়েন।


 ৫.৬ “তাঁহার অনুসরণ করিতেছিলেন...”—কার কথা বলা হয়েছে ? তিনি কাকে অনুসরণ করছিলেন ? তাঁর এই অনুসরণের কারণ কী ? শত্রুকে কাছে পেয়েও তিনি ‘বৈরসাধন সংকল্প সাধন করেননি কেন ? 

উঃ এখানে আরবসেনাপতির কথা বলা হয়েছে। 


» তিনি তাঁর পিতার হত্যাকারী মুরসেনাপতির, অর্থাৎ যিনি রাত্রে তাঁর শিবিরে অতিথি হিসেবে আশ্রয় নিয়েছিলেন এবং সূর্যোদয়ের আগেই শিবির ত্যাগ করে চলে গিয়েছিলেন, তাঁকে অনুসরণ করছিলেন।


 » মুরসেনাপতি ছিলেন আরবসেনাপতির পিতার হত্যাকারী। আরবসেনাপতি তাঁর পিতার হত্যার প্রতিশােধ নিতে চান। পিতার হত্যাকারীকে হত্যা করার বাসনাই তাঁর অনুসরণের কারণ।


» আরব জাতির আতিথেয়তাবােধ পৃথিবীর অন্য সব জাতির চেয়ে শ্রেষ্ঠ। নিজের প্রাণ দিয়ে তারা অতিথির সেবা করেন। তাঁর কথায়—প্রাণান্ত তাঁরা অতিথির অনিষ্টচিন্তা করেন না। এমনকি অতি বড়াে শত্রুও যদি তাঁদের আশ্রয়ে থাকে, তবুও তারা ‘অণুমাত্র অনাদর, বিদ্বেষ প্রদর্শন বা বিপক্ষতাচরণ করেন না। এই কারণে জাতীয় আতিথ্য পালনের জন্য তিনি শত্রুকে কাছে পেয়েও ‘বৈরসাধন সংকল্প’ সাধন করেননি। 


৬ নীচের শব্দগুলির দলবিশ্লেষণ করে মুক্তদল ও রুদ্ধদল চিহ্নিত করাে : 

সংগ্রাম, অশ্বপৃষ্ঠ, দণ্ডায়মান, করমর্দন, তৎক্ষণাৎ 


» সংগ্রাম = সং – গ্রাম, [মুক্ত দল—শূন্য (0), রুদ্ধদল-সং’ ও ‘গ্রাম’ (২ টি)]। 


» অশ্বপৃষ্ঠ = অশ–শ(ব)-পৃষ -ঠ [মুকদল—“শ(ব), ‘ঠ’ (২ টি), রুদ্ধদল—‘অশ’, ‘পৃষ’ (২ টি)] ) 


» দণ্ডায়মান = দন্-ডা-য়-মান্ [মুক্তদল-ডা', ‘য়’ (২ টি), রুদ্ধদল- দন্-, ‘মান্’ (২ টি)]। 


» করমর্দন = কর-মর -দন্ [মুক্তদল ‘ক’, ‘র’ (২ টি), রুদ্ধদল—‘মর’, ‘দ (২ টি)]। 


» তৎক্ষণাৎ = তৎ-ক্ষ-ণাৎ [মুক্তদল—“ক্ষ” (১টি), রুদ্ধদল—তৎ’, ‘ণাৎ’ (২ টি)]। 


৭ নির্দেশ অনুযায়ী বাক্য পরিবর্তন করাে : 


৭.১ আরবেরা তাঁহার অনুসরণে বিরত হইলে, তিনি স্বপক্ষীয় শিবিরের উদ্দেশ্যে গমন করিতে লাগিলেন। (জটিল বাক্যে) 

উঃ যখন আরবেরা তাঁহার অনুসরণে বিরত হইল, তখন তিনি স্বপক্ষীয় শিবিরের উদ্দেশ্যে গমন করিতে লাগিলেন। 


৭.২ আতিথেয়তা বিষয়ে পৃথিবীতে কোনও জাতিই আরবদিগের তুল্য নহে। (ইতিবাচক বাক্যে)

উঃ আতিথেয়তা বিষয়ে পৃথিবীতে সকল জাতির কাছেই আরবেরা অতুলনীয়। 


৭.৩ দ্বারদেশে উপস্থিত হইয়া দেখিলেন, তিনি সজ্জিত অশ্বের মুখরশ্মি ধারণ করিয়া দণ্ডায়মান আছেন। (যৌগিক বাক্যে) 

উঃ তিনি দ্বারদেশে উপস্থিত হইলেন এবং তাকে সজ্জিত অশ্বের মুখরশ্মি ধারণ করিয়া দণ্ডায়মান অবস্থায়। দেখিলেন। 


৭.৪ এই বিপক্ষশিবির-মধ্যে আমা অপেক্ষা আপনকার ঘােরতর বিপক্ষ আর নাই। (প্রশ্নবােধক বাক্যে) 

উঃ এই বিপক্ষ শিবির মধ্যে আমা অপেক্ষা আপনার ঘােরতর বিপক্ষ আর কেউ আছে কি? 


৭.৫ তিনি নির্বিঘ্নে স্বপক্ষীয় শিবিরসন্নিবেশ স্থানে উপস্থিত হইলেন। (না-সূচক বাক্যে) 

উঃ স্বপক্ষীয় শিবিরসন্নিবেশস্থানে উপস্থিত হইতে তিনি কোনাে বিঘ্ন পাইলেন না।

No comments:

Post a Comment