👉(স্বাদেশিকতা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রশ্ন উত্তর)
লেখক পরিচিতিঃ
অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্ম ১৮৭১ খ্রিস্টাব্দে ৭ আগস্ট জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারে । তিনি ছিলেন দ্বারকানাথ ঠাকুরের মধ্যমপুত্র , গিরীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাতি । রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন সম্পর্কে তাঁর কাকা । তিনি সংস্কৃত কলেজে পড়াশোনার জন্য ভর্তি হন । পরে ক্যালকাটা স্কুল অফ আর্ট - এ যোগ দেন । সেখানে পেন্টিং , প্যাস্টেলে ছবির কাজ , ইউরোপীয় কায়দায় ছবি আঁকা শেখেন । ' সাধনা ' ও ' চিত্রাঙ্গদা ' পত্রিকায় তাঁর আঁকা ছবি বের হয় । মুঘল ঘরানার প্রতি তিনি আকর্ষিত হন এবং প্রাচীন ভারতের মহিমা ও ভারতীয় জীবনচিত্র ছিল তাঁর ছবির অন্যতম বিষয় । ভারতীয় দর্শন , থিওজফি তাঁকে আকর্ষণ করত । চিত্রাবলী ছাড়াও তিনি সাহিত্যিকরূপে বাংলা সাহিত্যে উল্লেখযোগ্য স্থান পেয়েছেন । ছোটোদের জন্য লেখা তাঁর বইগুলি বাঙালির অক্ষয় সম্পদ । বাংলাদেশের আচার অনুষ্ঠান , ব্রতকথা , রূপকথা তার লেখায় নতুন করে প্রাণ পেয়েছে । তাঁর ' ক্ষীরের পুতুল ' , ' নালক ’ , ‘ রাজকাহিনী ' , ভূতপরীর দেশ , শকুন্তলা , খাজারি খাতা , আলোর ফুলকি , বুড়ো আংলা , ঘরোয়া , জোড়াসাঁকোর ধারে , ভারত শিল্প , বাংলার ব্রত , বাগেশ্বরী শিল্প প্রবন্ধাবলী , ভারত শিল্পের ষড়া তাঁর রচিত বিখ্যাত গ্রন্থ । পাঠ্যাংশটি তাঁর ' ঘরোয়া ' গ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে । ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দে ৫ ডিসেম্বর তাঁর জীবনাবসান হয় ।
সারসংক্ষেপঃ
স্বদেশি যুগে লেখক কীভাবে বাংলাভাষার প্রচলন করেছিলেন সেই কথায় লেখক একটি গল্প শুনিয়েছেন । অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং তাঁর তরুণ বন্ধুরা স্বদেশি আমলে প্রভিনসিয়াল কনফারেন্স উপলক্ষে একবার নাটোর যান । নাটোর বাংলাদেশের একটি স্থান । ট্রেনে করে সারাঘাট পৌঁছে সেখান থেকে স্টিমারে যেতে হয় । অবনীন্দ্রনাথ ও তাঁর তরুণ বন্ধুরা ছাড়াও কংগ্রেসের অনেক নামকরা নেতা ছিলেন এবং ছিলেন স্বয়ং তরুণ রবীন্দ্রনাথ । লেখক সহ অন্য সকলের জন্য নাটোরের হারাজা অত্যন্ত ভালো বন্দোবস্ত করেছিলেন । তাঁর সবকিছুই অত্যন্ত সুচারু , অতি চমৎকার । লেখক সহ কাউকেই কিছু ভাবতে হচ্ছেনা । খাবার - দাবারের জন্য পরিপাটি ব্যবস্থা । তরুণ অবনীন্দ্রনাথ ও তাঁর বন্ধুরা প্রত্যেকেই ভোজনরসিক । আবার প্রভিনসিয়াল কংগ্রেসের যে সভায় তাঁরা সবাই যোগ দিতে গেছিলেন সেখানে তাদের সঙ্গী বহু নামজাদা বয়োজ্যোষ্ঠ কংগ্রেসি নেতাদের অনেকেই ছিলেন ভোজনরসিক । স্টিমারে যাবার পথে সেইসব নামজাদা নেতারাই বহু খাবার আগেভাগে বেশি বেশি খেয়ে নেওয়ায় লেখক ও তাঁর বন্ধুদের ভাগ্যে কিছুই জুটছিল না । একটা সময় দুটো করে ডিশ এনে দুইদলের জন্য আলাদাভাবে পরিবেশন করা হতে লাগল । এদিকে কংগ্রেসের মিটিংয়ে তরুণদল স্থির করেন যে তাঁরা সমস্ত বক্তৃতা বাংলায় দেবেন কিন্তু বয়স্ক নেতারা তাঁদের একথা মানতে রাজি হন না এবং ইংরেজিতেই বক্তৃতা দেওয়া শুরু করলে তরুণদল তাঁদের ‘ বাংলায় ’ ‘ বাংলায় ' বলে থামিয়ে দেন । শেষে নামজাদা নেতারা বাংলাতেই বক্তৃতা দিতে বাধ্য হন । অর্থাৎ স্বদেশি যুগে এটাও একটা বিশেষ স্মরণীয় বিষয় যে তাঁরা সবকিছু এমনকি বক্তৃতাও স্বদেশি ভাষার প্রচার করলেন এবং জিতলেন ।
নামকরণঃ
লেখক নামকরণ করেন লেখাটির অলঙ্কার বৃদ্ধি করতে । এই পাঠ্যাংশটি লেখক তথা শিল্পী অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা ' ঘরোয়া ' গ্রন্থ থেকে গৃহীত । এই গ্রন্থে লেখক স্বদেশি আমলের ঘটনার কথা ব্যক্ত করেছেন । এই ঘটনার পুরোটাই ঘটেছে নাটোরে । কংগ্রেসের মধ্যে দুই দল একদল বয়স্ক অন্যদল কমবয়সীদের নিয়েই এই ঘটনা , সমস্ত ঘটনাটি নাটোরে প্রভিনসিয়াল কংগ্রেসে যোগ দেওয়া থেকে শুরু করে মিটিং অবধি ঘটেছে । নাটোর বাংলাদেশের একটি স্থান । নাটোরের রাজা জগদিন্দ্রনাথ স্বদেশি আন্দোলনের সমর্থক ছিলেন । ফলে স্বদেশি করা মানুষজন তাঁর কাছে যথেষ্ট আতিথেয়তা লাভ করেছিলেন । অবনীন্দ্রনাথ ও তরুণের দল নাটোরের রাজাকে কেবল ‘ নাটোর ' নামে সম্বোধন করতেন । এই আখ্যাৎশটিতে একদিকে যেমন নাটোরের মহারাজার আতিথেয়তার কথা বলা হয়েছে অন্যদিকে তেমনি নাটোর রাজ্যের কথাও আছে । তাই একদিক দিয়ে দেখতে গেলে এই আখ্যাংশটিতে যেমন স্বয়ং মহারাজার কথা বলে তেমনি নাটোর রাজ্যের কথাও বলে । সেদিক থেকে আখ্যাংশটির ‘ নাটোরের কথা ’ দ্ব্যর্থক । তাই এই পাঠ্যাংশটির নামকরণ সুপ্রযুক্ত হয়েছে ।
১.১ অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা দুটি বইয়ের নাম লেখো ।
উঃ । অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা দুটি বই হলো ‘ নালক ’ ও ‘ রাজকাহিনী ' ।
১.২ তিনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে কোন্ সম্পর্কে সম্পর্কিত ?
উঃ । রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাকা । রবীন্দ্রনাথের ভ্রাতা গুণেন্দ্রনাথ ঠাকুরের পুত্র ছিলেন অবনীন্দ্রনাথ ।
২. নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর নিজের ভাষায় লেখো :
২.১ আজ সকালে মনে পড়ল একটি গল্প – লেখকের অনুসরণে সেই ‘ গল্প’টি নিজের ভাষায় বিবৃত করো ।
উঃ । লেখক অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর স্বদেশিযুগে কীভাবে বিভিন্ন মিটিং - এ বাংলাভাষার প্রচলন করলেন সেই গল্পটিই বলেছেন । অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও তাঁর কাকা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং আরও কয়েকজন তরুণ বন্ধুদের সঙ্গে প্রভিনসিয়াল কনফারেন্সে যোগ দিতে পূর্ববঙ্গের নাটোরে যান । নাটোরে তাঁদের সঙ্গে কংগ্রেসের বড়ো বড়ো নেতারাও গিয়েছিলেন । নাটোরের মহারাজ তাঁদের থাকা খাওয়ার যথেষ্ট বন্দোবস্ত করেন । সেখানে তাঁদের প্রত্যেকের জন্য বিশেষ বিশেষ বন্দোবস্ত ছিল । নাটোরের রাজা প্রত্যেকের সুখসুবিধার দিকে এতোটাই নজর রাখতেন যে কেউ অদ্ভুত আবদার করলেও তা পূরণ করতেন ।
যেমন লেখক একবার গরম সন্দেশের বায়না করলে সঙ্গে সঙ্গে তিনি খাওয়ার ঘরের সামনে হালুইকর বসিয়ে গরম সন্দেশ তৈরি করে তা খাওয়ানোর বন্দোবস্ত করলেন । যেদিন প্রভিনসিয়াল কনফারেন্সের সভা বসল সবাই গোল হয়ে টেবিল ঘিরে বসলেন আগে থেকেই ঠিক ছিল বাংলাভাষায় সভা করা হবে । রবীন্দ্রনাথ এই প্রস্তাব করলে ছোকরার দল তাঁকে সমর্থন করল । কংগ্রেসের নেতারা তাঁদের কথা মানলেন না । শেষপর্যন্ত দুটো দল হয়ে গেল । একদল বাংলায় বলবে অন্যদল ইংরেজিতে বলবে । এরপর রবীন্দ্রনাথের ‘ সোনার বাংলা ' গানটি গাওয়া হলো । কিন্তু যখন নেডেন্ট ইংরেজিতে স্পিচ দিতে আরম্ভ করলেন কমবয়সীদের দল ' বাংলা ' ' বাংলা ' বলে চেঁচাতে লাগল । শেষপর্যন্ত কেতাদুরস্ত ইংরেজি জানা লালমোহন ঘোষ বাংলায় বক্তৃতা দিলেন । কনফারেন্সে বাংলা ভাষার প্রচলন হলো । পাবলিকলি এইভাবে লেখক ও তাঁর সঙ্গীরা বাংলাভাষার জন্য লড়াই করলেন ।
২.২ লেখকের বর্ণনা অনুযায়ী , তখনকার নাটোরের মহারাজার নাম কী ছিল ?
উঃ । নাটোরের মহারাজার নাম ছিল জগদিন্দ্রনাথ । লেখক তাঁকে শুধু ‘ নাটোর ’ বলে সম্ভাষণ করতেন ।
২.৩ তিনি কোন্ ' রিসেপশন কমিটি'র প্রেসিডেন্ট ছিলেন ?
উঃ । নাটোরের মহারাজা ছিলেন প্রভিনসিয়াল কনফারেন্সের রিসেপশন কমিটির প্রেসিডেন্ট ।
২.৪ নাটোর নেমন্তন্ন করলেন –সেই নেমন্তন্ত্রের তালিকায় কাদের নাম ছিল বলে লেখক স্মরণ করতে পেরেছেন ?
উঃ । প্রভিনসিয়াল কনফারেন্সে নিমন্ত্রিত ছিলেন লেখক অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর কাকা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং ঠাকুরবাড়ির অন্যান্য ছেলের দল । তাছাড়া ন্যাশনাল কংগ্রেসের চাঁই অবনীন্দ্রনাথের ন - পিসেমশাই জানকীনাথ ঘোষাল , ডব্ল সি ব্যানার্জি , সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় , অবনীন্দ্রনাথের মেজোজ্যাঠামশাই , লালমোহন ঘোষ প্রমুখরা ছিলেন নিমন্ত্রিত অতিথি ।
২.৫ রওনা হলুম সবাই মিলে হৈ হৈ করতে করতে ।'— কোথায় রওনা হলেন ? কীভাবেই বা রওনা হলেন ?
উঃ । অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং তাঁর তরুণ সঙ্গীর দল এবং কংগ্রেসের তাবড় তাবড় নেতারা প্রভিনসিয়াল কনফারেন্সে যোগ দিতে নাটোরের উদ্দেশ্যে রওনা দিলেন । নাটোরের মহারাজা তাদের জন্য বিশেষ ট্রেনের বন্দোবস্ত করেছিলেন । চৌগাচাপকান এবং ধুতি পাঞ্জাবি বাক্সে গুছিয়ে নিয়ে খুশিমনে মহারাজার ব্যবস্থা করা বিশেষ ট্রেনে চেপে তাঁরা রওনা হলেন ।
২.৬ সরাঘাট থেকে লেখক ও তাঁর সঙ্গীরা কোন্ নদীতে স্টিমার চড়েছিলেন ?
উঃ । সরাঘাট থেকে লেখক ও তাঁর সঙ্গীরা পদ্মানদীতে স্টিমারে চড়েছিলেন ।
২.৭ স্টিমারে খাওয়া - দাওয়ার প্রসঙ্গ আলোচনায় লেখকের সরস মনের পরিচয় কীভাবে দেদীপ্যমান হয়ে উঠেছে তা বুঝিয়ে দাও ।
উঃ । লেখক অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর স্টিমারে খাওয়া - দাওয়ার বিষয়ে চমৎকার বর্ণনা দিয়েছেন । নাটোরের রাজার তত্ত্বাবধানে তাঁদের খাওয়া - দাওয়ার এলাহি বন্দোবস্ত ছিল । তাঁর বর্ণনা অনুযায়ী খাবার টেবিলের একদিকে বড়ো ও বিখ্যাতরা , লেখক ma তাঁদের চাঁই বলেছেন আর অন্যদিকে ছোটোরা । তিনি ও তাঁর অপর সঙ্গী দীপুদা দুজনেই খাদ্যরসিক ছিলেন । ফলে তাঁরা লোভনীয় খাবারের আশায় উদ্গ্রীব হয়ে আছেন । কিন্তু একজন হোমরাচোমরা নেতা এমন ছিলেন যে তাঁর কাছে ‘ বয়’রা খাবার নিয়ে গেলেই তিনি বেশি বেশি খাবার পাতে তুলে নিচ্ছেন ।
এভাবে কাটলেট আনায় একসঙ্গে অনেকগুলো তুলে নিলেন । ফলে লেখক ও তাঁর সঙ্গীরা কম পেলেন । এরপর পুডিং আসাতে তাঁরা বেশ খানিকটা খাবার আশা করলেন কিন্তু সেই হোমরাচোমরা নেতা অর্ধেকের বেশি নিজের পাতে তুলে নিলেন । লেখক মজা করে এই খাওয়াটিকে বলেছেন ‘ জাইগ্যানটিক ’ খাওয়া । শেষপর্যন্ত লেখক ও তাঁর বন্ধুদের জন্য আলাদা জায়গায় ও সেই হোমরাচোমরা ব্যক্তির জন্য আলাদা জায়গায় খাবার এল । এইভাবে লেখক অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে খাবার সম্বন্ধে বর্ণনাটি যে সরসতার সঙ্গে করেছেন তা পাঠকের মন ছুঁয়ে যায় ।
২.৮ ‘ যেন ইন্দ্রপুরী ।'— কীসের সঙ্গে ' ইন্দ্রপুরী'র তুলনা করা হয়েছে ? কেনই বা লেখক এমন তুলনা করেছেন ?
উঃ । নাটোরের মহারাজা জগদিন্দ্রনাথের বাড়ি অর্থাৎ নাটোরের রাজপ্রাসাদটিকে ইন্দ্রপুরীর সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে । লেখক নাটোর প্রাসাদে যখন পৌঁছোলেন তখন দেখলেন সেখানে রাজপ্রাসাদের বিশালতা তার বৈঠকখানা , ঝাড়লণ্ঠন , তাকিয়া , সুন্দর ও দামি ফুলদানি , কার্পেট ইত্যাদি বহুমূল্য ও সুন্দর জিনিসে বাড়ি ও বৈঠকখানাটি সাজানো । সে সবের তুলনা কেবল ইন্দ্রপুরী অর্থাৎ দেবতাদের রাজা ইন্দ্রের প্রাসাদের সঙ্গেই তুলনীয় । তাই লেখক নাটোরের রাজবাড়িটিকে ইন্দ্রপুরীর সঙ্গে তুলনা করেছেন ।
২.৯ ‘ একেই বলে রাজ সমাদর ।'— উদ্ধৃতিটির আলোকে নাটোরের মহারাজার অতিথি - বাৎসল্যের পরিচয় দাও ।
উঃ । লেখক আলোচ্য উক্তির মাধ্যমে নাটোরের মহারাজার অসাধারণ অতিথি বাৎসল্যের উল্লেখ করেছেন । লেখক ও তাঁর সঙ্গীরা এবং কংগ্রেসের হোমরাচোমরা নেতারা নাটোরে প্রভিনসিয়াল কনফারেন্সে যোগ দিতে যান । নাটোরের মহারাজা তাঁদের জন্য আলাদা ট্রেনের বন্দোবস্ত করে দেন এবং তাঁদের দেখাশোনা ও জিনিসপত্র বহন করার জন্য লোকের ব্যবস্থাও করেন । তাঁদের খাওয়া - দাওয়ার এক অভাবনীয় ব্যবস্থা করা হয়েছিল । এরপর স্টিমারে করে পদ্মা পার হবার সময় স্টিমারেও নানা সুখাদ্য পরিবেশনের ব্যবস্থা ছিল । এরপর তাঁরা যখন নাটোরের প্রাসাদে এলেন তখন সেখানে তাঁদের থাকা ও খাওয়া - দাওয়ার এলাহি ব্যবস্থা ছিল । স্বয়ং মহারানি অতিথিদের জন্য পিঠে পায়েস করে দিয়েছিলেন । হালুইকর দিয়ে তাদের পছন্দমতো খাবার , মিষ্টি ও নানা সুখাদ্যের সমারোহ ছিল । চাকর এসে ভোরবেলাতে বিছানার মধ্যেই হাতে গড়গড়ার নল গুঁজে দিত । এমনকি কার কী অভ্যাস তা জেনে সেইমতো বন্দোবস্ত করা হয় । রাজা ও রানির আন্তরিক ব্যবহার আদর - যত্ন , প্রাচুর্য সব মিলিয়ে অতিথিবাৎসল্যের কোনো সীমা ছিল না । তাই লেখক একে রাজসমাদর বলেছেন ।
২.১০ নাটোরের খুব আগ্রহ ' – কোন্ প্রসঙ্গে তাঁর আগ্রহের কথা এখানে বলা হয়েছে ?
উঃ । অবনীন্দ্রনাথ ছিলেন শিল্পী । তিনি নাটোরে গিয়ে রাজবাড়ি , গ্রামের বাড়িঘর , মন্দির দেখে তার বিভিন্ন স্কেচ করছিলেন । স্বয়ং নাটোরের মহারাজ এই ছবি আঁকার বিষয়ে আগ্রহী ছিলেন । তাঁর স্কেচগুলি পছন্দ হয় এবং তিনি লেখককে আরও স্কেচ করে দেবার জন্য অন্দরমহলে রানি ভবানির ঘরে নিয়ে যান এই প্রসঙ্গেই লেখক মহারাজার স্কেচ বিষয়ে আগ্রহের কথা বলেছেন ।
২.১১ ' আগে থেকেই ঠিক ছিল আগে থেকে কী ঠিক থাকার কথা বলা হয়েছে ? সেই উপলক্ষ্যে কোন্ পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার কথা পাঠ্যাংশে রয়েছে , তা আলোচনা করো ।
উঃ । লেখক ও তাঁর সহযোগীরা আগে থেকেই ঠিক করেছিলেন যে তাঁরা বাংলাভাষায় বক্তৃতা করবেন । কিন্তু লেখকের কাকা রবীন্দ্রনাথ এই প্রস্তাব তুলতেই প্রস্তাবটি প্রথমে খারিজ হয় ও পরে স্থির হয় কংগ্রেসের অন্যান্য কনফারেন্সের মতোই ইংরেজিতে বক্তৃতা হবে । এই নিয়ে দুপক্ষ বাদানুবাদ করতে থাকেন । শেষে দুদলে তারা ভাগ হয়ে যায় । বড়োরা চাইলেন কনফারেন্স ইংরাজিতে হোক আর ছোটোদের ইচ্ছা ছিল বাংলা ভাষায় হোক । বড়োরা ইংরাজিতে বক্তৃতা শুরু করতেই ছোটোরা ' বাংলা ' ' বাংলা ' বলে চিৎকার করতে থাকে । শেষে সকলেই এই প্রস্তাব মেনে নেয় এবং কনফারেন্সে ' বাংলা ' ভাষার প্রচলন হয় ।
২.১২ নাটোরে প্রভিনসিয়াল কনফারেন্সে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কোন্ গানটি পরিবেশন করেছিলেন ?
উঃ । প্রভিনসিয়াল কনফারেন্সে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ' আমার সোনার বাংলা ' গানটি পরিবেশন করেছিলেন ।
২.১৩ ' আমাদের তো জয়জয়কার ।'— কী কারণে লেখক ও তাঁর সঙ্গীদের জয়জয়কার ' হলো ?
উঃ । লেখক ও তাঁর সঙ্গীরা প্রভিনসিয়াল কনফারেন্সে স্থির করেন বাংলায় বক্তৃতা করবেন । কিন্তু বড়োরা স্থির করেন যে , ইংরেজিতেই বক্তৃতা করবেন উভয় দলের মধ্যে দারুণ তর্কবিতর্ক হলো । দু - দলে তাঁরা ভাগ হয়ে গেলেন । যখন প্রেসিডেন্ট বক্তৃতা করতে উঠলেন তখন ছোকরারা ‘ বাংলা ’ ‘ বাংলা ' বলে চিৎকার করে থামিয়ে দিলেন । শেষ পর্যন্ত ইংরেজিতে অসাধারণ বক্তৃতা দিতে পারতেন যিনি সেই লালমোহন ঘোষ বাংলায় বক্তৃতা দিলেন । তরুণদের জয়জয়কার হলো এবং কনফারেন্সে বাংলা ভাষা প্রচলিত হলো ।
২.১৪ ‘ সেই প্রথম আমরা পাবলিকলি বাংলা ডাবার জন্য লড়লুম ।'— লেখকের অনুসরণে সেই ‘ লড়াই ’ - এর বিশদ বিবরণ দাও ।
উঃ । লেখক ও তাঁর তরুণ সঙ্গীরা রবীন্দ্রনাথের নেতৃত্বে নাটোরে গিয়েছিলেন প্রভিনসিয়াল কনফারেন্সে যোগ দিতে । সেখানে রবীন্দ্রনাথের নেতৃত্বে তরুণের দল বাংলাভাষায় বক্তৃতার প্রস্তাব করেন । কিন্তু প্রবীণের দল যথারীতি ইংরেজিতে বক্তৃতার কথা বললেন । এরফলে দুই পক্ষে তুমুল তর্কাতর্কি হয় । একটা সময় বাংলার পক্ষে ও বিপক্ষে দুই দলে তাঁরা ভাগ হয়ে যান । শেষাবধি তরুণ দলের জয় হলো এবং বাংলা ভাষাতেই বক্তৃতা হলো ।
রবীন্দ্রনাথের ‘ সোনার বাংলা ' গানটি গাওয়া হলো । অবশেষে সবাই হার মেনে বাংলা ভাষায় সম্মেলন হওয়ার প্রস্তাবটি মেনে নিলেন এবং সভার কাজও বাংলাতেই সম্পন্ন হলো । এইভাবে লেখক ও তাঁর সঙ্গীরা বাংলা ভাষার জন্য প্রথম পাবলিকলি লড়াই করেছিলেন ।
৩. নির্দেশ অনুযায়ী বাক্য পরিবর্তন করো ঃ
৩.১ আজ সকালে মনে পড়ল একটি গল্প — সেই প্রথম স্বদেশি যুগের সময়কার , কী করে আমরা বাংলা ভাষার প্রচলন করলুম । ( জটিল বাক্যে )
উঃ । আজ যখন সকাল হলো তখন মনে পড়ল একটি গল্প — যা স্বদেশিযুগের সময়কার , কী করে আমরা বাংলাভাষার প্রচলন করলুম ।
৩.২ ভূমিকম্পের বছর সেটা । প্রভিনসিয়াল কনফারেন্স হবে নাটোরে । ( বাক্যদুটিকে জুড়ে লেখো
উঃ । ভূমিকম্পের বছরে প্রভিনসিয়াল কনফারেন্স হবে নাটোরে ।
৩.৩ নাটোর নেমন্তন্ন করলেন আমাদের বাড়ির সবাইকে । ( যৌগিক বাক্যে )
উঃ । নাটোর নেমন্তন্ন করলেন এবং আমরা সবাই নিমন্ত্রিত হলুম ।
৩.৪ আরো অনেকে ছিলেন — সবার নাম কি মনে আসছে এখন । ( না - সূচক বাক্যে )
উঃ । আরো অনেকে থাকলেও সবার নাম এখন মনে আসছে না ।
৩.৫ নাটোর জানালেন , সব ঠিক থাকার কথা , ভাবনা নিষ্প্রয়োজন । ( পরোক্ষ উক্তিতে )
উঃ । নাটোর বললেন যে , কিছু ভাবার দরকার নেই সব ঠিক আছে ।
৩.৬ অমন ' জাইগ্যানটিক ' খাওয়া আমরা কেউ কখনো দেখিনি । ( নিম্নরেখ শব্দটির পরিবর্তে বাংলা শব্দ ব্যবহার করে বাক্যটি আবার লেখোঁ )
উঃ । অমন রাক্ষুসে খাওয়া আমরা কেউ কখনো দেখিনি ।
৩.৭ ছোকরার দলের কথায় আমলই দেন না । ( হ্যাঁ - সূচকবাক্যে )
উঃ । ছোকরার দলের কথায় কি আমল দেওয়া যায় ? ।
৩.৮ ন - পিসেমশাই জানকীনাথ ঘোষাল রিপোর্ট লিখছেন আর কলম ঝাড়ছেন । ( বাক্যটিকে দুটি বাক্যে ভেঙে লেখো )
উঃ । ন - পিসেমশাই জানকীনাথ ঘোষাল রিপোর্ট লিখছেন । রিপোর্ট লেখার সময় তিনি কলম ঝাড়ছেন ।
৩.৯ গরম গরম সন্দেশ আজ চায়ের সঙ্গে খাবার কথা আছে যে অবনদা । ( নিম্নর েখ শব্দের প্রকার নির্দেশ করো এবং অর্থ এক রেখে অন্য শব্দ ব্যবহার করে বাক্যটি আবার লেখো )
উঃ । নিম্নরেখ শব্দটি বিশেষণ । উয় সন্দেশ আজ চায়ের সঙ্গে খাবার কথা আছে যে অবনদা । ৩.১০ হাতের কাছে খাবার এলেই তলিয়ে দিতেম ( জটিল বাক্যে ) উঃ । হাতের কাছে যখনই খাবার আসতো তখনই তলিয়ে দিতেম ।
৪. নীচের বাক্যগুলি থেকে সন্ধিবদ্ধ শব্দগুলি খুঁজে নিয়ে সন্ধি বিচ্ছেদ করোঃ
৪.১ স্টিমারে নির্ভাবনায় উঠে গেলুম ।
উঃ । নির্ভাবনায় = নিঃ + ভাবনায় ।
৪.২ তিনি অর্ধেকের বেশি নিজের প্লেটে তুলে নিলেন ।
উঃ । অর্ধেকের = অর্ধ + একের ।
No comments:
Post a Comment