চতুর্থ অধ্যায়
প্রশ্ন উত্তর
পঞ্চম অধ্যায় প্রশ্ন উত্তর পড়তে নিচের লিঙ্ক এ ক্লিক করো
❐ অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর
১. বাংলায় কৰে ভয়ঙ্কর দুর্ভ ও ন্তর দেখা যায় ?
উঃ ১৭৬৯-৭০ খ্রিস্টাব্দে বাংলায় ভয়ঙ্কর দুর্ভিক ও মন্তর দেখা যায় ।
২. কৰে , কে ইজারাদারি ব্যবস্থা চালু করেন ?
উঃ । ১৭৭২ খ্রিস্টাব্দে ওয়ারেন হেস্টিংস রাজস্ব আদায়ের জন্য ইজারদারি ব্যবস্থা চালু করেন ।
৩. কবে , কেন চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত চালু হয় ?
উঃ । ১৭৯৩ খ্রিস্টাব্দে বাংলায় রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত চালু হয় ।
8. চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রবর্তনের অন্যতম দুই উৎসাহী ব্যক্তির নাম লেখো ।
উঃ । জন শোর ও ফিলিপ ফ্রান্সিস ছিলেন চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রবর্তনে দুই উৎসাহী ব্যক্তি ।
৫. ' জীবের শত্রু জীব ' একথা কে বলেছিলেন ?
উঃ বঙ্কিমচন্দ্র তাঁর সমালোচনায় একথা বলেছিলেন ।
৬. ' মহল ' কথাটির অর্থ কী ?
উঃ । ' মহল ' কথাটির অর্থ হলো কয়েকটি গ্রামের সমষ্টি ।
৭. মহলওয়ারি ব্যবস্থায় কাদের হাতে জমি কেন্দ্রীভূত হয়েছিল ?
উঃ । মহাজন ও ব্যবসায়ীদের হাতে ।
৮. রায়তওয়ারি ব্যবস্থায় খাজনার হার কত ছিল ?
উঃ । ৪৫ থেকে ৫৫ শতাংশ খাজনার হার ছিল ।
৯. রায়তওয়ারি ব্যবস্থায় কাদের সঙ্গে কোম্পানির বন্দোবস্ত হয় ?
উঃ । রায়তওয়ারি ব্যবস্থায় কোম্পানির সাথে রায়তদের বন্দোবস্ত হয় ।
১০. মহলওয়ারি ব্যবস্থায় কাদের সাথে কোম্পানির জমি বন্দোবস্ত হয়েছিল ?
উঃ । মহলওয়ারি বন্দোবস্ত করা হয় গ্রাম সম্প্রদায়ের সাথে কোম্পানির ।
১১. অর্থনীতির আধুনিকীকরণ বলতে কী বোঝ ?
উঃ । রেলপথ বানানো , রফতানির হার বাড়ানো ও কৃষিতে বানিজ্যিকীকরণের প্রক্রিয়াকে একসঙ্গে অর্থনীতির আধুনিকীকরণ বলে ব্যাখ্যা করা হয়ে থাকে ।
১২. কাদের চাহিদার কথা মাথায় রেখে নীল চাষ করা হতো ?
উঃ । ইংল্যান্ডের কাপড়কলে নীলের চাহিদার কথা মাথায় রেখে নীল চাষ করা হতো ।
১৩. কী কারণে ও কৰে নীল বিদ্রোহ হয়েছিল ?
উঃ । নীল চাষ শুরু হলে নীলচাষ করার জন্য চাষিদের দাদন নিতে বাধ্য করা হতো । তাদের উপর ইচ্ছামতো দমন পীড়ন চালানো হতো । তাই ১৮৫৯-৬০ খ্রিস্টাব্দে চাবিরা বিদ্রোহ ঘোষণা করে ।
১৪. কোথায় কোথায় বাগিচা শিল্পের বিকাশ ঘটেছিল ?
উঃ । আসাম , বাংলা , দক্ষিণ ভারত ও হিমাচল প্রদেশের পাহাড়ি অঞ্চলে চা বাগিচা শিল্পের বিকাশ ঘটেছিল ।
১৫. কৃষির বানিজ্যিকীকরণের নেতিবাচক প্রভাব কী ছিল ?
উঃ । দেশের বিভিন্ন প্রাপ্তের কৃষকরা বিদ্রোহী হয়ে উঠেছিল ।
১৬. ' কুলি কাহিনী ' নিবন্ধটি কার লেখা ?
উঃ । রামকুমার বিদ্যারত্নের লেখা ।
১৭. প্রজাস্বত্ব আইন বা Tenancy Act কবে পাস হয় ?
উঃ ১৮৮৫ খ্রিস্টাব্দে প্রজাস্বত্ব আইন বা Tenancy Act পাস হয় ।
১৮. কবে ব্রিটেনে সুতি কাপড় রপ্তানি বন্ধ হয় ?
উঃ । ১৭২০ সালে আইন করে ব্রিটেনে সুতিবস্ত্র বিক্রি বন্ধ করা হয় ।
১৯. কবে ও কেন কার্পাস তুলোর চাহিদা বেড়ে গিয়েছিল ?
উঃ । ঊনবিংশ শতকের দ্বিতীয় ভাগে আমেরিকার গৃহযুদ্ধের প্রভাবে কার্পাস তুলোর চাহিদা বেড়ে গিয়েছিল ।
২০. কোন কোন শহর কেন জৌলুস হারিয়েছিল ?
উঃ । মুর্শিদাবাদ , ঢাকা , সুরাট প্রভৃতি শহর জৌলুস হারিয়ে ফেলে । কারণ এখানকার কুটির শিল্পগুলি ধ্বংস হয়ে যায় ।
২১. ভারতে ঔপনিবেশিক প্রশাসনের শিল্পনীতি কীভাবে নির্ধারিত হতে থাকে ?
উঃ । ১৮১৩ খ্রিস্টাব্দের পর থেকেই ব্রিটেনের শিল্প চাহিদার কথা মাথায় রেখেই ভারতের ঔপনিবেশিক প্রশাসনের শিল্পনীতি নির্ধারিত হতে থাকে ।
২২. কোথায় প্রথম সুতির কাপড় তৈরির কারখানা চালু হয় ?
উঃ । বোম্বাইতে প্রথম সুতির কাপড় তৈরির কারখানা চালু হয় ।
২৩. প্রথম পাটকল কোথায় চালু হয় ?
উঃ । ১৮৫৫ খ্রিস্টাব্দে হুগলির রিষড়ায় প্রথম পাটের কারখানা চালু হয় ।
২৪. বিংশ শতকের গোড়ায় কোন কোন শিল্প গড়ে উঠতে থাকে ?
উঃ । বিংশ শতকের গোড়ায় চামড়া , চিনি , লৌহ - ইস্পাত ও বিভিন্ন খনিজ শিল্প গড়ে উঠতে থাকে ।
২৫. কবে ভারতে রেল প্রকল্পের সূচনা হয়েছিল ?
উঃ । ১৮৫৩ খ্রিস্টাব্দে ভারতে রেল প্রকল্পের সূচনা হয়েছিল ।
২৬. অরণ্যবাসী বিভিন্ন জনগোষ্ঠী রেলপথ নির্মাণকে মেনে নিতে পারেনি কেন ?
উঃ । কারণ রেলপথ বসাতে গিয়ে তাদের জমি , জীবিকা ও সামাজিক মর্যাদাকে আঘাত করা হয়েছিল ।
২৭. ভারতে কবে টেলিগ্রাফ যোগাযোগ শুরু হয় ?
উঃ । ১৮৫১ খ্রিস্টাব্দে ভারতে মাত্র কয়েক মাইল জুড়ে টেলিগ্রাফ যোগাযোগ চালু হয় ।
২৮. ভারত থেকে বছরে কী পরিমাণ সম্পদ ব্রিটেনে যেত ?
উঃ । ১৮৪০ খ্রিস্টাব্দে এক ব্রিটিশ আধিকারিকের বক্তব্য থেকে জানা যায় যে বছরে ২-৩ কোটি স্টার্লিং মূল্যের সম্পদ ব্রিটেনে যেত ।
২৯. কবে ভারত ও ব্রিটেনের মধ্যে টেলিগ্রাফ যোগাযোগের বিকাশ হয় ?
উঃ । ১৮৭০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে ভারত ও ব্রিটেনের মধ্যে টেলিগ্রাফ যোগাযোগের বিকাশ হয় ।
৩০. ভারতে সম্পদ নির্গমনের জন্য ব্রিটিশ শাসন কীসের মতো কাজ করত ?
উঃ । ভারতে সম্পদ নির্গমনের জন্য ব্রিটিশ শাসন স্পঞ্জের মতো কাজ করত ।
❐ সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর :
১. সম্পদ বহির্গমন ও অবশিল্পায়নের ফলাফল আলোচনা করো ।
উঃ । সম্পদের বহির্গমন ও অবশিল্পায়নের যৌথ ফলাফল হিসাবে ঔপনিবেশিক ভারতে সাধারণ মানুষের দারিদ্র্য বেড়েছিল । দুর্ভিক্ষের কারণে বহু লোক মারা গিয়েছিল । ঊনবিংশ শতকের দ্বিতীয়ভাগে উপমহাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পর্যায়ক্রমিক দুর্ভিক্ষের ফলে বহু লক্ষ মানুষ মারা যান । দুর্ভিক্ষগুলিতে সরকারি সাহায্যের পরিমাণও ছিল যৎসামান্য । ১৮৫৪ থেকে ১৯০১ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে প্রায় ২ কোটি ৮৯ লক্ষ মানুষ দুর্ভিক্ষে মারা গিয়েছিলেন । একটি সরকারী প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল ৪ কোটি ভারতবাসী আধপেটা খেয়ে দিন কাটায় । দারিদ্র্য দীর্ঘস্থায়ী হবার জন্য ঔপনিবেশিক নীতিকেই মূলত = দায়ী করা হয়েছিল ।
২. কেন কৃষক সমাজে চূড়ান্ত সংকট দেখা যায় ? কে প্রশাসনকে নতুন করে গড়ে তোলার প্রয়াস নেন ?
উঃ । ১৭৬৯ খ্রিস্টাব্দে দুর্ভিক্ষ এবং ১৭৭০ খ্রিস্টাব্দে ভয়ঙ্কর মন্বন্তর দেখা দেয় । ফলে কোম্পানি নিজের রাজস্ব আদায় সংক্রান্ত প্রশাসনিক কাঠামো নিয়ে নতুন করে ভাবতে শুরু করে । বাংলায় কোম্পানির নতুন শাসনকর্তা ওয়ারেন হেস্টিংস ১৭৭২ খ্রিস্টাব্দে রাজস্ব আদায় করতে গিয়ে কৃষকদের ঘাড়ে নতুন করে করের বোঝা চাপিয়ে দেন । তার ওপর ১৭৭২ খ্রিস্টাব্দে ইজারাদারি ব্যবস্থা চালু করেন । তাতে সমস্যা আরো বেড়ে যায় এবং কৃষক সমাজ নতুন করে সংকট দেখা দেয় । ১৭৮৪ সালে লর্ড কর্নওয়ালিস রাজস্ব সংক্রান্ত প্রশাসন নতুন করে গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নেন ।
৩. দাদন প্রথা বলতে কী বোঝায় ?
উঃ । ' দাদন ' কথাটির অর্থ অগ্রিম অর্থ প্রদান । পলাশির যুদ্ধের পর থেকেই ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি তাদের কর্মচারী ও গোমস্তাদের মাধ্যমে দেশীয় তাঁতিদের দাদন বা অগ্রিম অর্থ দিত । কোম্পানির দাদন নেওয়ার ফলে তাঁতিরা তাদের উৎপন্ন দ্রব্য কোম্পানি ছাড়া আর কোথাও বিক্রি করতে পারত না । ক্ষতি স্বীকার করেও কম দামে তারা উৎপন্ন বস্ত্র কোম্পানিকে বিক্রি করতে বাধ্য হতো ।
8. আমিনি কমিশন কী ?
উঃ । ১৭৭৬ খ্রিস্টাব্দে ওয়ারেন হেস্টিংস ভূমি - রাজস্ব বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য জানার জন্য ও সরকারকে সুপারিশ করার জন্য একটি কমিশন গঠন করেন । এই কমিশন আমিনি কমিশন নামে পরিচিত । এই কমিশন জমির উর্বরতা অনুযায়ী রাজস্বের হার নির্ধারণ , রাজস্ব আদায় করা , কৃষকদের উন্নতির জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ প্রভৃতি কাজ করত ।
৫. মহলওয়ারি ব্যবস্থা কী ? এই ব্যবস্থার ফলাফল আলোচনা করো ।
উঃ । উত্তর ও উত্তর পশ্চিম ভারতের বিস্তৃত এলাকার ভূমি রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে ব্রিটিশ প্রশাসন মহলওয়ারি বন্দোবস্ত চালু করেছিল । এর জন্য সরকার মহলের জমিদার বা প্রধানের সঙ্গে চুক্তি করে । এই চুক্তির মধ্যে গোটা গ্রাম সমাজকে ধরা হয়েছিল । এই ব্যবস্থায় কৃষক সমাজের ক্ষেত্রেও বিশেষ সুরাহা হয়নি । নির্দিষ্ট সময় অন্তর রাজস্ব হার সংশোধন করা হতো । উঁচুহারে রাজস্ব আদায় করা হতো এবং বাড়তি রাজস্বের বোঝা মেটাতে গিয়ে ধার করা এবং সেই যার শোধ দিতে না পারায় অত্যাচার - এসবের মুখোমুখি হতে হতো কৃষকদের । বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কৃষকদের জমিগুলি মহাজন ও ব্যবসায়ীদের হাতে কেন্দ্রীভূত হয়েছিল ।
৬. অবশিল্পায়নের প্রভাব জনজীবনে কতটা পড়েছিল ?
উঃ । ১৮১৩ সালে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির হাত থেকে ভারতের বাজারে একচেটিয়া অধিকার চলে যায় । ফলে ভারতে ব্রিটিশ পণ্য দ্রব্য ছেয়ে যায় । ভারতীয়দের নানারকম বৈষম্য ও প্রতিযোগিতার মুখোমুখি হতে হয়েছিল । ফলে দেশীয় শিল্পগুলি ধ্বংসের মুখে পড়ে । এই ঘটনাই ‘ অবশিল্পায়ন ' বলে পরিচিত হয় । ব্রিটেনের তৈরি কাপড়ের সঙ্গে পাল্লা দিতে না পেরে ভারতীয় সুতি বস্ত্র পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যায় । লক্ষ লক্ষ মানুষ জীবিকাহীন হয়ে পড়ে । কর্মচ্যুত মানুষেরা কৃষির উপর নির্ভর করলে কৃষি অর্থনীতির উপর চাপ বাড়তে থাকে । দেশীয় শিল্পের অবনমন শুরু হয় । অবশিল্পায়ন নিয়ে ঔপনিবেশিক সরকার কোনো ইতিবাচক ভূমিকা নেননি । অবশিল্পায়নের নেতিবাচক প্রভাব নিয়ে দেশীয় বুদ্ধিজীবিরা অনেকেই ঔপনিবেশিক শাসনের সমালোচনা করেছিলেন । এর ফলে কৃষি ও শিল্পের মধ্যে অর্থনীতির সামঞ্জস্য নষ্ট হয়ে পড়ে ।
৭. নীলবিদ্রোহ কেন ঘটেছিল ?
উঃ । পূর্ব ভারতে নীলচাষের জন্য ব্রিটিশ সরকার প্রত্যক্ষ উদ্যোগ নিয়েছিল । ১৭৮৮ খ্রিস্টাব্দে কোম্পানি দশজন নীলকরকে অগ্রিম টাকা দিয়ে বাংলায় নীলচাষ শুরু করেন । ১৮২৯ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত জমি কেনার বিষয়ে নীলকরদের অধিকার ছিল না । ফলে নীলকররা প্রথমে স্থানীয় কৃষকদের নীলচাষের জন্য রাজি করাতে চেষ্টা করে । তাতে কাজ না হলে জোর করে অগ্রিম টাকা বা দাদন দিয়ে চাষিদের নীলচাষ করতে বাধ্য করে । এর ফলে বাংলার বহু অঞ্চলে নীলকর ও কোম্পানির সঙ্গে কৃষকদের সংঘর্ষের পথ প্রস্তুত হতে থাকে । তাছাড়া ক্রমেই চাষিদের উপর নীলচাষ করার জন্য দমন পীড়ন চলতে থাকে । এরই ফলে ১৮৫৯-৬০ খ্রিস্টাব্দে বাংলায় নীলবিদ্রোহ ঘটে ।
৮. অবাধ বাণিজ্য বলতে কী বোঝো ? অবাধ বাণিজ্য কীভাবে ভারতে শোষণ পরিস্থিতি তৈরি করায় সাহায্য করেছিল ?
উঃ । যে বাণিজ্য নীতিতে সরকার বাণিজ্য কার্যে নূন্যতম অংশগ্রহণ করে তাকে অবাধ বাণিজ্য বলা হয় । ১৮১৩ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ইংল্যান্ডের কোম্পানিগুলির মধ্যে ভারতে বাণিজ্য করতে পারত এক ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি । কিন্তু শিল্প বিপ্লবের পরবর্তী সময়ে ইংল্যান্ডের নানা কোম্পানির চাপে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির পরবর্তী সময়ে ইংল্যান্ডের নানা কোম্পানির চাপে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির একচেটিয়া বাণিজ্যিক অধিকার লুপ্ত হয় । তার বদলে ভারতে ইংল্যান্ডের বহু কোম্পানি তাদের পণ্য নিয়ে প্রবেশ করে । এর ফলে ভারতীয় সম্পদ ইংল্যান্ডের অন্যান্য কোম্পানি দ্বারাও শোষিত হওয়া শুরু হয় । ফলে ভারত দ্রুত এক রিক্ত ও শোষিত রাষ্ট্রে পরিণত হয় ।
৯. সূর্যাস্ত আইন কী ?
উঃ । জমিদারদের কাছে চিরস্থায়ী ব্যবস্থা প্রথম দিকে কিছুটা সমস্যার সৃষ্টি করে । প্রাথমিকভাবে জমির মালিকানা জমিদারদের হাতে থাকলেও জমির প্রকৃত মালিকানা ছিল কোম্পানির হাতে । নির্দিষ্ট একটা তারিখের মধ্যে সূর্য ডোবার আগেই প্রাপ্য খাজনা কোম্পানিকে জমা দিতে হতো । না পারলে জমিদারি অন্যত্র বিক্রি করার অধিকার কোম্পানির ছিল । এই ব্যবস্থা সূর্যাস্ত আইন নামে পরিচিত ছিল ।
১০. চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের প্রভাব নিয়ে বঙ্কিমচন্দ্র কী সমালোচনা করেছিলেন ?
উঃ । বঙ্কিমচন্দ্র তাঁর নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে চিরস্থায়ী ব্যবস্থার সমালোচনা করেছিলেন । তাঁর ভাষায় “ জীবের শত্রু জীব , মানুষের শত্রু মানুষ , বাঙালী কৃষকের শত্রু বাঙ্গালী ভূস্বামী । জমীদার নামক বড় মানুষ কৃষক নামক ছোটমানুষকে ভক্ষণ করে , কৃষকদের পুরো উদ্গ্রস্থ করেন না বটে কিন্তু যাহা করেন তাহা অপেক্ষা হৃদয়শোণিত পান করা দয়ার কাজ । ” এই “ চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত " বঙ্গদেশের অধঃপাতের চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত মাত্র – কস্মিনকালে ফিরিবে না । ইংরাজদিগের এ কলঙ্ক চিরস্থায়ী ।
১১.বাংলার প্রজাদের দুরবস্থা সম্পর্কে অক্ষয়কুমার দত্তের সমালোচনা কী ছিল ?
উঃ । “ যে রক্ষক সেই ভক্ষক ” —এই প্রবাদ বাংলার ভূস্বামীদের ব্যবহারে দেখা যায় । ভূস্বামী নিজের সিংহাসনে বসলে প্রজারা এক দিনের জন্যও নিশ্চিন্তে থাকতে পারে না । কখন কী উৎপাত ঘটে এই ভেবে তারা দিনরাত শঙ্কিত থাকত ।
১২. ভূস্বামীর কি কেবল নিজের রাজস্ব নিয়ে পরিতৃপ্ত হবেন ? না ছলে বলে কৌশলে তাদের যথাসর্বস্ব গ্রহণ করবেন ?
তাদের হতদরিদ্র অবস্থা , জীর্ণ শরীর , মলিন বসন কিছুতেই জমিদারের হৃদয়কে বিগলিত করতে পারে না । তাদের চোখে এক ফোঁটা জলও আনতে পারে না । তিনি নায্য - রাজস্ব ভিন্ন বাটা , আদায়ি রাজস্বের নিয়মাতিরিক্ত বৃদ্ধি , বাটার বৃদ্ধি , বৃদ্ধির বৃদ্ধি , আগমনি , পার্বণি , হিসাবানা প্রভৃতি অশেষ প্রকার উপলক্ষ্য করে ক্রমাগত প্রজা নিপীড়ন করতে থাকেন । এই ছিল বাংলার কৃষকদের সম্পর্কে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে অক্ষয়কুমার দত্তের সমালোচনা ।
১৩. মহাজনি ব্যবস্থা বলতে কী বোঝ ?
উঃ । ঔপনিবেশিক আমলে মহাজনদের সমাজে বিশেষ ভূমিকা দেখা দেয় । চড়া হারে ও নগদ অর্থে রাজস্ব মেটাতে প্রজাদের ঋণগ্রহণ করতে হতো । প্রজারা ছিল নিরক্ষর , এই সুযোগে মহাজনরা কারচুপি ও জালিয়াতি করে সুদ আদায় করে যেত । কোম্পানির আইন ছিল জমিদারদের জন্য ফলে আইনের সাহায্য নিয়ে মিথ্যা মামলা করে প্রজাদের সম্পদ তারা কেড়ে নিত । বিভিন্ন অঞ্চলে যে প্রজা বিদ্রোহ দেখা দিত তার আক্রমণের মূল লক্ষ্য ছিল মহাজন ও মহাজনি ব্যবস্থা ।
১৪. বাগিচা শিল্প কী ?
উঃ । নীল চাষ ছাড়াও বিভিন্ন বাগিচা শিল্পে ইউরোপীয়দের আগ্রহ ছিল । মূলত তাদের উদ্যোগেই বাগিচা শিল্প গড়ে ওঠে । ঊনবিংশ শতকের দ্বিতীয় ভাগে আসাম , বাংলা , দক্ষিণ ভারত ও হিমাচল প্রদেশের পাহাড়ি অঞ্চলে চা বাগিচা শিল্পের বিকাশ ঘটেছিল । বিদেশি কোম্পানিগুলিকে করের ছাড় ও নানা সুযোগ সুবিধা দেওয়া হয়েছিল । চা ও কফি রফতানি ক্ষেত্রে প্রধান হয়ে দাঁড়ায় । মালিক বিদেশি হওয়ায় মুনাফার অর্থ বিদেশে চলে যেত । আর বেতনের বেশির ভাগটাই পেত বিদেশি কর্মচারীরা । উৎপন্ন দ্রব্যগুলিও বিদেশের বাজারে বিক্রি করে তার অর্থ ব্রিটেনে নিয়ে যাওয়া হতো ।
১৫. আসামের চা বাগান ও শ্রমিক অধিকার সম্পর্কে কী জানা যায় ?
উঃ । বাগিচা শিল্পের শ্রমিক হিসাবে স্থানীয় লোকেদের নিয়োগ করা হতো । সামান্য মজুরি ও চূড়ান্ত দুর্দশার মধ্যে শ্রমিকদের কাজ করতে হতো । ব্রাহ্মনেতা দ্বারকানাথ গঙ্গোপাধ্যায় সর্বপ্রথম শ্রমিকদের অধিকারের পক্ষে সওয়াল করেন । আসামের চা বাগানগুলি ঘুরে ইউরোপীয় মালিকদের অত্যাচার ও শ্রমিকদের দুর্দশার কথা তিনি “ সঞ্জীবনী পত্রিকা ” তে প্রকাশ করেন । রামকুমার বিদ্যারত্নও ধারাবাহিকভাবে সঞ্জীবনী পত্রিকায় “ কুলি - কাহিনী ” নিবন্ধ লিখতে থাকেন । দ্বারকানাথ ও রামকুমারের উদ্যোগে দেশের মানুষও ঔপনিবেশিক শাসকের মনোযোগ আকর্ষণ করতে সক্ষম হয় । ঔপনিবেশিক ভারতে শ্রমিকদের হয়ে লড়াই করার এটি একটি পুরোনো নজির ।
১৬. ঔপনিবেশিক প্রশাসনের তরফে কৃষকদের জন্য কী আইন করা হয় ?
উঃ । দাক্ষিণাত্যে ক্রমাগত কৃষক বিদ্রোহ ঘটতে থাকলে ১৮৯৭ খ্রিস্টাব্দে ঔপনিবেশিক সরকার বাধ্য হয়ে Agricul turists Relief Act জারি করেন । এর উদ্দেশ্য ছিল চাষিদের ঋণের বোঝা কিছুটা কমানো । ধার শোধ না হলে চাষিদের গ্রেফতার বা আটক করা নিষিদ্ধ হয় । তার বদলে গ্রামে বিচার সভা বসিয়ে সাহুকার ও কৃষকদের মধ্যে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে ঋণশোধের ব্যবস্থা করা হয় । একইভাবে বাংলায় জমিদারদের অত্যাচার থেকে কৃষকদের রক্ষা করার জন্য ১৮৮৫ খ্রিস্টাব্দে Tenancy Act ছিল । আইন মোতাবেক অস্থায়ী রায়তদের দখলিস্বত্ব দেওয়া হয় । সেখানে স্পষ্ট বলা হয় , আদালতের পরোয়ানা ছাড়া কোনো রায়তকে জমি থেকে উচ্ছেদ করা যাবে না । খাজনা বাড়ানোর জন্য জমিদারকে নির্দিষ্ট কারণ দর্শাতে হবে ।
১৭. অবশিল্পায়ন কী ?
উঃ । ১৮১৩ খ্রিস্টাব্দের পর থেকেই কোম্পানির হাত থেকে ভারতের বাজারের একচেটিয়া অধিকার চলে যায় । ধীরে ধীরে বিভিন্ন ব্রিটিশ পণ্য ভারতে আমদানি করা হতে থাকে । ভারতীয় শিল্প ক্রমশ কঠিন থেকে কঠিনতর প্রতিযোগিতা ও বাধার সম্মুখীন হয় । দেশীয় শিল্পগুলি ক্রমশ ধ্বংস হতে থাকে , একে বলে অবশিল্পায়ন । বিপুল সংখ্যক মানুষ কর্মচ্যুত হন কারিগর ও শিল্পীরা জীবিকার জন্য চাষের কাজে যোগ দেয় । ফলে কৃষি অর্থনীতির উপর তীব্র চাপ পড়ে । যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির ফলে বিদেশি দ্রব্যে ভারতের বাজারগুলি ছেয়ে যায় । বিভিন্ন দেশীয় শিল্পের অবনমন ঘটে । অবশিল্পায়নে সরকার কোনো ইতিবাচক পদক্ষেপ নেয়নি ।
১৮. ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের রত্ন কাকে বলা হতো এবং কেন ?
উঃ । আঠারো শতকের শেষ দিকে থেকে পরবর্তী দেড় শতকে ঔপনিবেশিক ব্রিটিশ প্রশাসন ভারতের অর্থনীতিকে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের স্বার্থে পরিচালিত করতে উদ্যোগী হয়েছিল । ১৮৫৭ সালে বিদ্রোহের পরে বলা হয় ব্রিটিশ শাসনের যাবতীয় ব্যয়ভার ভারত থেকে বহন করতে হবে । ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের প্রয়োজনে যথেচ্ছভাবে ভারতীয় সম্পদ ব্যবহার করা যাবে । ভারতের বাজার ব্রিটিশ পণ্যের জন্য খুলে দেওয়া হয় । ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটেনের ল্যাঙ্কাশায়ারে তৈরি সুতির কাপড়ের ৮৫ শতাংশ ভারতে বিক্রি হতো । ভারতীয় রেলের ব্যবহৃত লোহা ও ইস্পাতের ১৭ শতাংশ আসত ব্রিটেন থেকে । ভারতের শিল্প ও বাণিজ্যের অভিমুখ ব্রিটেনের স্বার্থেই পরিচালিত হতো । তাই ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের মধ্যে ভারতকেই সবচেয়ে দামি রত্ন হিসাবে বর্ণনা করা হতো ।
❐ রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর
১. রায়তওয়ারি বন্দোবস্ত সম্পর্কে যা জানো লেখো ।
উঃ । দক্ষিণ ও দক্ষিণ পশ্চিম ভারতে কোম্পানির শাসন চালু হওয়ার পর ভূমি - রাজস্ব আদায়ের বিষয় নিয়ে কোম্পানি নতুন করে পরীক্ষা নিরীক্ষা শুরু করে । সে সময় মাদ্রাজ অঞ্চলে কোনো বড়ো মাপের জমিদার না থাকায় ব্রিটিশ কোম্পানি ভূমি - রাজস্ব বন্দোবস্তু সরাসরি কৃষকের সঙ্গেই করতে চেয়েছিল । মনে করা হয়েছিল যে কৃষক বা রায়তকে জমির মালিক , হিসেবে স্বীকার করে নেওয়া হলে তাদের উপর জমিদারের অত্যাচারকে এড়ানো যাবে । এই কারণে মাম্রাজ ও বোম্বাইতে চালু হয় রারতওয়ারি বন্দোবস্ত । এই বন্দোবস্ত চিরস্থায়ী করা হয়নি , তবে এই বন্দোবস্তের শর্ত ছিল রায়তকে ঠিক সময়ে ভূমি - রাজস্ব জমা দিতে হবে । ঔপনিবেশিক প্রশাসন জানিয়ে দিয়েছিলেন যে রায়তকে খাজনা দিতে হবে । অনেক অংশেই এই খাজনার হার ছিল উঁচু । এমনকি প্রাকৃতিক দুর্যোগে ফসল নষ্ট হলেও খাজনার হারে রদবদল হতো না । বাস্তবে জমিতে কৃষকের কোনো মালিকানা প্রতিষ্ঠা পায়নি । রায়তওয়ারি বন্দোবস্তের ফলে কৃষক সমাজ স্থানীয় জমিদারদের বদলে ঔপনিবেশিক রাষ্ট্রের অধীনে চলে যেতে থাকে ।
২. রেলপথ নির্মাণ কীভাবে ভারতীয়দের ঔপনিবেশিক শাসনের প্রতি অসন্তোষের কারণ হয়ে উঠেছিল ?
উঃ । রেলপথ নির্মাণের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল ব্রিটিশ সরকারের স্বার্থরক্ষা । এই প্রকল্পের ফলে ব্রিটেনের অর্থনীতি চাঙ্গা হয়েছিল । রেলপথ বানানোর জন্য সমস্ত সরঞ্জাম , লোহা এমনকি কয়লাও কিছুদিন ব্রিটেন থেকে আনা হতো । রেলপথ নির্মাণ সংক্রান্ত সাধারণ প্রযুক্তিগুলি ভারতীয়দের শেখানো হতো । অপরদিকে এর উন্নত প্রযুক্তির শিক্ষা থেকে ইচ্ছাকৃতভাবে ভারতীয়দের সরিয়ে রাখা হয়েছিল । এজন্য বিদেশ থেকে দক্ষ ব্যক্তিদের নিয়ে আসা হতো । এছাড়া রেলপথ বসাতে গিয়ে স্বাভাবিক জলনিকাশি ব্যবস্থার ক্ষতি হয় ফলে নানারকম ‘ সংক্রামক ব্যাধি রেলপথের সঙ্গে ছড়িয়ে পড়ে । রেলপথ নির্মাণ করতে গিয়ে অনেক গাছ ও জঙ্গল কাটা পড়ায় পরিবেশ . দূষিত হয় । তাছাড়া অরণ্যবাসী বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর জমি , জীবিকা ও সামাজিক মর্যাদায় আঘাত করে এই রেলপথ নির্মাণ । ফলে রেলপথ নির্মাণ ঔপনিবেশিক শাসনের প্রতি একটি অসন্তোষের কারণ হয়ে ওঠে ।
৩. টেলিগ্রাফ ব্যবস্থা কীভাবে ব্রিটিশ শাসনব্যবস্থার বিস্তারের সহায়ক হয় ?
উঃ । ঔপনিবেশিক শাসনের রাজনৈতিক ও সামরিক প্রয়োজন টেলিগ্রাফ প্রযুক্তির ব্যবহারকে জরুরি করে তোলে । টেলিগ্রাফ ব্যবস্থা বিকাশের পিছনে ঔপনিবেশিক রাষ্ট্রের রাজনৈতিক স্বার্থ ছিল । উপমহাদেশের বিভিন্ন প্রান্তের সমস্ত জরুরি তথ্য ও সংবাদ অতি দ্রুত শাসনকেন্দ্রে পৌঁছাতে টেলিগ্রাফ ব্যবস্থা ছিল বেশি নির্ভরযোগ্য । ১৮৫১ খ্রিস্টাব্দে ভারতে মাত্র কয়েক মাইল জুড়ে টেলিগ্রাফ যোগাযোগ চালু হয় । ১৮৫৬ তে ভারতীয় উপমহাদেশে ৪৬ টি টেলিগ্রাফ কেন্দ্র তৈরি হয়ে গিয়েছিল । যা ১৮৬৫ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে ১৭ হাজার ৫০০ মাইল এবং ঊনবিংশ শতকের শেষ দিকে ৫২ হাজার ৯০০ মাইল জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছিল । ১৮৫২ খ্রিস্টাব্দে দ্বিতীয় ইঙ্গ - বার্মা যুদ্ধে রেঙ্গুনের পরাজয়ের খবর টেলিগ্রাফের মাধ্যমে গর্ড ডালহৌসি কলকাতায় বসেই পেয়েছিলেন । বলা হতো টেলিগ্রাফই ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহ থেকে ব্রিটিশ শাসনকে রক্ষা করেছিল । দুরদুরান্ত থেকে বিদ্রোহের সামান্যতম সম্ভাবনার কথাও টেলিগ্রাফের মাধ্যমে প্রশাসনের কেন্দ্রগুলিকে পৌঁছে যেত । ১৮৭০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে ভারত ও ব্রিটেনের মধ্যে টেলিগ্রাফ যোগাযোগের বিকাশ ঘটে । এর ফলে প্রশাসনিক , অর্থনৈতিক ও সামরিকভাবে ভারতবর্ষের উপর ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের ভিত আরও সুদৃঢ় হয় ।
৪. ‘ সম্পদের বহিগমন ' কাকে বলে ? এর বিবরণ দাও ।
উঃ । উপনিবেশ হিসেবে পলাশির যুগের পরবর্তী পর্যায়ে ব্রিটিশ কোম্পানি ভারতের সম্পদকে নানাভাবে ব্রিটেনে স্থানান্তরিত করা হতো । এইভাবে দেশের সম্পদ বিদেশে চালনা হয়ে যাওয়ার ঘটনাকে ‘ সম্পদের বর্হিগমন ' বলা হয় । ভারতে ব্রিটিশ শাসনের একটি লক্ষণীয় বৈশিষ্ট্য ছিল সম্পদের বহির্গমন । দেশের জনগণের থেকে রাজস্ব আদায় করে ।দেশের শাসনবয়ে চালানোর প্রথা সুলতানি ও মুঘল আমলেও ছিল । কিন্তু এর জন্য দেশীয় কৃষি বা বাণিজ্য নষ্ট হয়নি । এর কারণ হিসেবে বলা যেতে পারে সুলতানি ও মুঘল শাসকরা ভারতীয় উপমহাদেশে স্থায়ীভাবে থেকে এই দেশেরই জন্য আনুগত্য প্রকাশ করতেন । অপরদিকে ব্রিটিশ ইস্ট - ইন্ডিয়া কোম্পানি বরাবরই ব্রিটেনের স্বার্থের কথা মাথায় রেখে কাজ করত । তাদের যাবতীয় উদ্দেশ্য ছিল ভারতের অর্থনীতিকে ব্রিটেনের প্রয়োজনে ব্যবহার করা । এর জন্য ভারতের অর্থ ও সম্পদ ব্রিটেনে স্থানান্তরিত করা হতো । বাস্তবে ভারতের সম্পদ বর্হিগমনের ক্ষেত্রে ব্রিটিশ শাসন ‘ স্পঞ্জের মতো ভারত থেকে সম্পদ শুষে ব্রিটেনে পাঠিয়ে দিত । দেখা গেছে ঊনবিংশ শতক শেষ হওয়ার সময়ে ভারতীয় জাতীয় আয়ের ৬ শতাংশ এবং জাতীয় সঞ্চয়ের এক তৃতীয়াংশ সম্পদ নির্গত হয়ে যেত । পরিসংখ্যান অনুযায়ী ঐ কালপর্বে ব্রিটেনের জাতীয় আয়ের ২ শতাংশই ছিল ভারত থেকে নির্গত সম্পদ ।
৫. চিরস্থায়ী বন্দোবস্তু সম্পর্কে যা জানো লেখো ।
উঃ । ইজারাদারি ব্যবস্থা ব্যর্থ হলে দশশালা ব্যবস্থা চালু করা হয় । কর্নওয়ালিস তাকেই চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত রূপ দেন । এর ফলে জমিদারি থেকে কোম্পানির কত আয় হবে তা নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল । কর্নওয়ালিস আশা করেছিলেন জমিদারি সম্পর্কে নিশ্চিত হলে জমিদাররা নিজেদের লাভের হার বাড়িয়ে নেওয়ার জন্য হয়ত চাষের উন্নতির দিকে নজর দেবে । কৃষকদের কল্যানের দিকেও নজর দেবে । কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি । পাশাপাশি জমিতে অধিকার স্থায়ী করার মাধ্যমে জমিদারদের কোম্পানির অনুগত গোষ্ঠী হিসেবে গড়ে তোলার কথা ভাবা হয় । সেই কারণে ১৭৯৩ খ্রিস্টাব্দে কোম্পানি জমিদারদের সঙ্গে খাজনা আদায় বিষয়ক চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত করে । এর ফলে কৃষকরা তাদের দখলি স্বত্ব হারিয়েছিল । অনেক জমিদারগণও নির্দিষ্ট দিনে সূর্যাস্তের আগে খাজনা দিতে না পেরে জমিদারি হারিয়েছিলেন । ফলে নতুন নতুন জমিদার এসেছিলেন । তাঁরা বেশিরভাগই শহরে বাস করতেন । গোমস্তা , নায়েব প্রভৃতি জমিদারের কর্মচারীরা অত্যাচার করত ফলে কৃষকদের দুঃখ কষ্টের পরিসীমা ছিল না । চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলে জমিদারদের সমৃদ্ধি বাড়লেও কৃষকের অবস্থার কোনো উন্নতিই হয়নি ।
৬. ঔপনিবেশিক আমলে কৃষি ব্যবস্থার কি কোনো উন্নতি হয়েছিল ? আলোচনা করো ।
উঃ । এই প্রসঙ্গে বলা যায় কৃষিজ উৎপাদন ব্যবস্থায় উন্নতি ঘটার জন্য ঔপনিবেশিক শাসকদের তেমন কোনো উদ্যোগ ছিল না । ভারতের কয়েকটি অঞ্চলে সেচ ব্যবস্থার উন্নতি ঘটানোর জন্য কয়েকটি খাল খনন করা হয়েছিল । ওইসব অঞ্চলগুলিতে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত না থাকায় ঔপনিবেশিক প্রশাসন খাল খননের ফলে জমির খাজনার হার বাড়িয়ে নিতে থাকে । তবে তার সুফল পেত ধনী চাষিরা । কারণ খালের জল ব্যবহারের জন্য উঁচু হারে কর দেওয়ার সামর্থ তাদেরই ছিল । বাস্তবে গরিব কৃষিজীবীরা ভাগচাবি হিসেবেই কাজ করত । তাছাড়া জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে তাল মিলিয়ে খাদ্যশস্য উৎপাদন বাড়েনি । ফলস্বরূপ ভারতে দুর্ভিক্ষ দেখা যায় । কৃষির উন্নতি যা হতো তা থেকে যেটুকু লাভ হতো তা যেত বিনিয়োগকারিদের হাতে । ফলে ভারতের বিভিন্ন স্থানে নীল বিদ্রোহ প্রভৃতি দেখা যায় ।
No comments:
Post a Comment