Class 8th History chapter -5 questions and answers || অষ্টম শ্রেণী ইতিহাস প্রশ্ন উত্তর পঞ্চম অধ্যায় সহায়িকা - Psycho Principal

Fresh Topics

Tuesday, 31 December 2024

Class 8th History chapter -5 questions and answers || অষ্টম শ্রেণী ইতিহাস প্রশ্ন উত্তর পঞ্চম অধ্যায় সহায়িকা

  

পঞ্চম অধ্যায়
প্রশ্ন উত্তর




ষষ্ঠ অধ্যায় প্রশ্ন উত্তর পড়তে নিচের লিঙ্ক এ  ক্লিক করো 
👉 ( ষষ্ঠ অধ্যায় )


❐ অতি - সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর : 

১. কত খ্রিস্টাব্দে কে সাগরে কন্যাশিশু ভাসিয়ে দেওয়ার প্রথা রোধ করেছিলেন ? 

উঃ । ১৮০৩ খ্রিস্টাব্দে লর্ড ওয়েলেসলি সাগরে কন্যাশিশু ভাসিয়ে দেওয়ার প্রথা রোধ করেছিলেন । 


২. কত খ্রিস্টাব্দে সতীদাহ প্রথা নিষিদ্ধ করা হয় ? 

উঃ । ১৮২৯ খ্রিস্টাব্দে সতীদাহ প্রথা নিষিদ্ধ করা হয় ।


 ৩. কার সাহায্যে রামমোহন এই কু - প্রথা রোধ করেন ? 

উঃ । লর্ড বেন্টিঙ্কের সাহায্যে রামমোহন এই কু - প্রথা রোধ করেন । 


৪. - কে , কবে প্রথম কোন্ সাপ্তাহিক পত্রিকা প্রকাশ করেন ? 

উঃ । ইংরেজ ব্যবসায়ী জেমস অগাস্টাস হিকি ১৮৭০ খ্রিস্টাব্দে‘বেঙ্গল গেজেট ' নামে প্রথম সাপ্তাহিক পত্রিকা প্রকাশ করেন । 


৫. বাংলা ভাষার প্রথম মাসিক পত্রিকার নাম কী ? 

উঃ । “ দিগদর্শন ' হলো বাংলা ভাষার প্রথম মাসিক পত্রিকা ।


 ৬. কত খ্রিস্টাব্দে হিন্দু বিধবা বিবাহ আইন চালু হয় ?

 উঃ । ১৮৫৬ খ্রিস্টাব্দে হিন্দু বিধবা বিবাহ আইন চালু হয় । 


৭. ডিরোজিওর পুরো নাম কী ছিল ? 

উঃ । হেনরি লুই ভিভিয়ান ডিরোজিও ।


 ৮. ডিরোজিওর ছাত্রদের কী বলা হতো ? 

উঃ । ডিরোজিওর ছাত্রদের নব্যবঙ্গ বা ইয়ং বেঙ্গল গোষ্ঠী বলা হতো । 


৯. আত্মীয় সভা কে প্রতিষ্ঠা করেন ? 

উঃ । রাজা রামমোহন রায় ১৮২৮ খ্রিস্টাব্দে আত্মীয় সভা প্রতিষ্ঠা করেন ।  


১০. কে , কৰে শিকাগো ধর্ম সম্মেলনে যোগদান করেন ? 

উঃ । ১৮৯৩ খ্রিস্টাব্দে রামকৃষ্ণের শিষ্য স্বামী বিবেকানন্দ শিকাগো ধর্ম সম্মেলনে যোগদান করেন ।


 ১১. আর্য সমাজ কে প্রতিষ্ঠা করেন ? 

উঃ । দয়ানন্দ সরস্বতী আর্য সমাজ প্রতিষ্ঠা করেন । 


১২. অ্যাংলো ওরিয়েন্টাল কলেজ কে প্রতিষ্ঠা করেন ?

 উঃ । স্যার সৈয়দ আহমদ অ্যাংলো ওরিয়েন্টাল কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন । 


১৩. ' দিকু ' কাদের বলা হতো ? 

উঃ । বহিরাগত মহাজন ও জমিদারদের ‘ দিকু ' বলা হতো ।


 ১৪. সাঁওতাল বিদ্রোহের দুজন নেতার নাম লেখো । 

উঃ । সিধু ও কানহু । 


১৫. হিন্দু প্যাট্রিয়ট সংবাদপত্রের সম্পাদক কে ছিলেন ? 

উঃ । হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় ।


 ১৬. তিতুমিরের প্রকৃত নাম কী ? তিনি কোথায় বাঁশের কেল্লা গড়ে তোলেন ? 

উঃ । মির নিসার আলি । তিনি বারাসত নারকেলবেড়িয়া অঞ্চলে বাঁশের কেল্লা গড়ে তোলেন ।


 ১৭ , নীলদর্পণ গ্রন্থটি কে লিখেছিলেন ? 

উঃ । নীলদর্পণ গ্রন্থটি লিখেছিলেন দীনবন্ধু মিত্র । 


১৮. মহাবিদ্রোহ কত সালে হয়েছিল ? 

উঃ । ১৮৫৭ সালে মহাবিদ্রোহ হয়েছিল । 


১৯. কাদের উদ্যোগে বোম্বাইতে প্রার্থনা সমাজ সামাজিক সংস্কারের উদ্যোগ নেয় ? 

উঃ । আত্মারাম পাণ্ডুরং ও মহাদেব গোবিন্দ রানাডের নেতৃত্বে । 


২০. মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সিতে কার নেতৃত্বে বিধবা বিবাহ আন্দোলন শুরু হয় ? 

উঃ । বীরেশলিঙ্গম পাণ্ডুলুর নেতৃত্বে মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সিতে বিধবা বিবাহ আন্দোলন শুরু হয় । 


২১. ' সত্যশোধক সমাজ ' কে প্রতিষ্ঠা করেন ?

 উঃ । জ্যোতিরাও ফুলে মহারাষ্ট্রে সত্যশোধক সমাজ প্রতিষ্ঠা করেন ।


 ২২. ভারতের প্রথম ভাইসরয় কে ছিলেন ? 

উঃ । গভর্নর জেনারেল লর্ড ক্যানিং ভারতের প্রথম ভাইসরয় ছিলেন । 


২৩. উপজাতি বিদ্রোহগুলিকে কী বলে খাটো করা হতো ? 

উঃ । উপজাতি বিদ্রোহগুলিকে ‘ অসভ্য আদিম মানুষদের বিদ্রোহ ' বলে খাটো করা হতো । 


২৪. মোপালা বিদ্ৰোহ কোথায় হয়েছিল ?

 উঃ । দক্ষিণ ভারতের মালাবার অঞ্চলে মোপালা বিদ্রোহ হয়েছিল । 


২৫. কে কোথায় প্রথম ফরাজি আন্দোলন গড়ে তোলেন ? 

উঃ । পূর্ব বাংলার ফরিদপুর অঞ্চলে হাজি শরিয়ত উল্লা গরিব চাষিদের নিয়ে প্রথম ফরাজি আন্দোলন গড়ে তোলেন ।


 ২৬. কার নেতৃত্বে কোথায় প্রথম ওয়াহাবি আন্দোলনের সূচনা হয় ?

 উঃ । আব্দুল ওয়াহাবের নেতৃত্বে প্রথম আরবে ওয়াহাবি আন্দোলনের সূচনা হয় । 


২৭. কোন বন্দুকের টোটাতে গোরু ও শূকরের চর্বি মেশানো রয়েছে বলে গুজব ছড়ায় ?

 উঃ । এনফিল্ড রাইফেল নামক বন্দুকের টোটাতে গোরু ও শূকরের চর্বি মেশানো রয়েছে বলে গুজব ছড়ায় । 


২৮. ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের কয়েকজন নেতার নাম লেখো । 

উঃ । বাহাদুর শাহ জাফর , রানি লক্ষ্মীবাঈ , নানাসাহেব , তাঁতিয়া টোপি প্রমুখ । 


২৯. ‘ হিন্দু মেলার ' প্রতিষ্ঠাতা কে ? 

উঃ । নবগোপাল মিত্র ।


৩০. শ্রীরামকৃষ্ণের বিখ্যাত উক্তি কী ? 

উঃ । যত মত তত পথ । 


৩১. কবে মহামেডান লিটেরারি সোসাইটি প্রতিষ্ঠিত হয় ?

 উঃ । ১৯৮৬ খ্রিস্টাব্দে ।


 ৩২. জাতীয় গৌরব সম্পাদনী সভা কে প্রতিষ্ঠা করেন ? 

উঃ । রাজনারায়ণ বসু । 


 ❐ সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর :

১. সংবাদপত্র ও জনমত গঠন সম্পর্কে কী জানা যায় ? 

উঃ । ভারতীয় জনমত গঠনে সংবাদপত্রের ভূমিকা সবসময় গুরুত্বপূর্ণ ছিল । ১৭৮০ সালে ইংরেজ ব্যবসায়ী জেমস্ অগাস্টাস হিকি ' বেঙ্গল গেজেট ' নামে প্রথম একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা প্রকাশ করেন । শ্রীরামপুরের মিশনারি মার্শম্যানের সম্পাদনায় ১৮১৮ খ্রিস্টাব্দে বাংলা ভাষায় প্রথম মাসিক পত্রিকা ‘ দিগ্‌দর্শন ' ও সাপ্তাহিক পত্রিকা ‘ সমাচার দর্পণ ' প্রকাশিত হয় । এরা প্রত্যেকেই নির্ভীক ও নিরপেক্ষভাবে সংবাদ পরিবেশ করতে থাকেন । ফলে অনেকেই কোম্পানি প্রশাসনের বিরাগভাজন হন । ভারতীয় সমাজ সংস্কারকদের অনেকেই বিভিন্ন সংবাদপত্র প্রকাশ ও সম্পাদনার কাজে নিযুক্ত ছিলেন । 


২.বিধবা বিবাহ প্রবর্তন বিষয়ে বিদ্যাসাগরের যুক্তি কী ছিল ? 

উঃ । ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর তাঁর ' বিধবা বিবাহ ' রচনাতে বলেন — বিধবা বিবাহ প্রচলিত না থাকাতে অনেক অসুবিধা হচ্ছে — এটা সবাই বুঝতে পারছেন । অনেকে তাদের নিজের মেয়ে , বোন এদের বিবাহ দিতে রাজি । আছেন কিন্তু এগোতে সাহস করছেন না । কলিযুগে বিধবা বিবাহ যে সর্বপ্রকারেই কর্তব্য কর্ম , সে বিষয়ে আর কোন সংশয় অথবা আপত্তি হইতে পারে না । তিনি আরও বলেন যে , এই ব্যবহার প্রচলিত হওয়া একান্ত আবশ্যক । 


৩  নারী শিক্ষা ও পণ্ডিতা রমাবাঈ সম্পর্কে যা জানো লেখো । 

উঃ । ঊনিশ শতকে মেয়েদের শিক্ষাকে ছড়িয়ে দিতে বেশ কিছু মহিলাও অগ্রসর হয়েছিলেন । এদের মধ্যে পশ্চিম ভারতে পণ্ডিতা রমাবাঈ ছিলেন অগ্রগণ্য । ব্রাহ্ম পরিবারের মেয়ে হয়েও তিনি একজন শুদ্রকে বিয়ে করেছিলেন । পরে বিধবা অবস্থায় নিজের মেয়েকে নিয়ে ইংল্যান্ডে গিয়ে ডাক্তারি পড়েন । বিধবা মেয়েদের জন্য আশ্রম তৈরি করেন । তবে রক্ষণশীলদের অনেকেই রমাবাঈয়ের উদ্যে সমালোচনা করেছিলেন । এছাড়া মাদ্রাজে ভগিনী শুভলক্ষী ও বাংলায় বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন বিশেষ উল্লেখযোগ্য । উনিশ শতকের দ্বিতীয়ভাগে মেয়েদের শিক্ষার আওতায় আনার জন্য ব্রিটিশ প্রশাসন বিভিন্ন অনুদান দেওয়ার উদ্যোগ নেন ।


৪. জ্যোডিরাও ফুলে সম্পর্কে যা জানো লেখো । 

উঃ । মহারাষ্ট্রের সমাজ সংস্কারের ক্ষেত্রে জ্যোতিরাও ফুলে ও তাঁর স্ত্রী সাবিত্রী বাঈ - এর অবদানও বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ । ব্রাক্ষ্মণদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে নিম্নবর্গীয় মানুষদের সামাজিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠার জন্য তাঁরা লড়াই করেন । ১৮৫১ খ্রিস্টাব্দে পুনায় তাঁরা নারীশিক্ষার প্রসারে একটি বিদ্যালয় স্থাপন করেন । বিধবা বিবাহ প্রচলনে তাঁর ভূমিকা ছিল উল্লেখযোগ্য । ১৮৭৩ খ্রিস্টাব্দে তাঁর প্রতিষ্ঠিত ' সত্যশোধক সমাজ ' নীচুতলার মানুষদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় লড়াই করত । তবে জ্যোতিরাও ফুলের উদ্যোগ সত্ত্বেও মহারাষ্ট্রে বিধবা বিবাহ আন্দোলন বিশেষ সফল হয়নি । 


৫. স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতী ও আর্য সমাজ - এর ভূমিকার কথা লেখো । 

উঃ । ১৮৭৫ খ্রিস্টাব্দে স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতী আর্য সমাজ প্রতিষ্ঠা করেন । সমস্ত ধর্মগ্রন্থের মধ্যে বেদকেই চূড়ান্ত বলে তিনি মনে করতেন । তাঁর মতে বেদের মধ্যে সমস্ত জ্ঞান ও বিজ্ঞানের কথা নিহিত রয়েছে । হিন্দুধর্মের আচার মূর্তিপুজো , পুরোহিতদের প্রাধান্য ও বাল্যবিবাহ প্রভৃতি বিষয়গুলির তিনি সমালোচনা করেন । তিনি বিধবা বিবাহ ও নারী শিক্ষারও সমর্থক ছিলেন । পাঞ্জাব ও উত্তর - পশ্চিম ভারতে আর্য সমাজ জনপ্রিয় ছিল । কিন্তু দয়ানন্দের মৃত্যুর পর আর্য সমাজ আন্দোলন উগ্র হিন্দুরূপ ধারণ করতে থাকে । 


৬. সাঁওতাল বিদ্রোহ ও হিন্দু প্যাট্রিয়ট পত্রিকার ভূমিকার কথা আলোচনা করো । 

উঃ । শিক্ষিত হিন্দু বাঙালিদের অনেকেই সাঁওতাল বিদ্রোহের বিরোধিতা করেন । এর ব্যতিক্রম ছিলেন হিন্দু প্যাট্রিয়ট সংবাদপত্র এর সম্পাদক হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় । তিনি বুঝতে পেরেছিলেন শান্ত ও সৎ সাঁওতালদের ওপর যে অর্থনৈতিক শোষণ চলেছে তা তাদের বিদ্রোহের পথে যেতে বাধ্য করেছে । সাঁওতালরা শুধু চায় নিজেদের জঙ্গলে ও উপত্যকার মধ্যে স্বাধীনভাবে জীবনযাপনের অধিকার । হরিশচন্দ্র আরও বলেন যারা তাদের উপর অত্যাচার করেছে তাদের শাস্তি হওয়া উচিত । সাঁওতালদের শাস্তি প্রাপ্য নয় । 


৭. মালাবারের মোপালা বিদ্রোহের বিবরণ দাও ।

 উঃ । দক্ষিণ ভারতের মালাবার অঞ্চলে কৃষকরা ঔপনিবেশিক প্রশাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন সেগুলির মধ্যে অন্যতম হলো মোপালা বিদ্রোহ । মোপালাদের মধ্যে অনেকেই ছিলেন কৃষি শ্রমিক , ছোটো ব্যবসায়ী ও জেলে । ব্রিটিশরা মালাবার দখল করার পর তাদের উপর রাজস্বের বোঝা ও বেআইনি কর চাপান হয় , পাশাপাশি জমিতে কৃষকদের অধিকার অস্বীকার করা হয় ফলে মালাবার অঞ্চলে একের পর এক বিদ্রোহ শুরু হয় । এই বিদ্রোহগুলি দমন করার জন্য ব্রিটিশ প্রশাসন সশস্ত্র বাহিনী ব্যবহার করেছিল । 


৮. ফরাজি আন্দোলন সম্পর্কে কী জানা যায় ? 

উঃ । পূর্ব বাংলার ফরিদপুর অঞ্চলে হাজি শরিয়তউল্লা গরিব চাষিদের নিয়ে ফরাজি আন্দোলন গড়ে তোলেন । বারাসত্ত বিদ্রোহে মতোই ফরাজিরা জমিদার , নীলকর ও ঔপনিবেশিক প্রশাসনের বিরোধিতা করেন । ফরাজি মতামতের প্রসারের ফলে স্থানীয় জমিদারেরা ভয় পেয়েছিল । এই আন্দোলন ঊনবিংশ শতকের শেষ দিক পর্যন্ত চলেছিল । 


৯. মুক্তা উলগুলান কী ?

 উঃ । বিরসা মুন্ডার নেতৃত্বে মুন্ডা উলগুলান বা মুন্ডা বিদ্রোহ ছিল অন্যতম উপজাতীয় কৃষক বিদ্রোহ । এটি শুরু হয় , ( ১৮৯৯–১৯০০ খ্রিঃ ) । মুন্ডাদের জমি ধীরে ধীরে বহিরাগত বা দিথুদের হাতে চলে যায় । এছাড়া জমিদার , মহাজন , খ্রিস্টান মিশনারি ও ঔপনিবেশিক সরকারের প্রতি মুন্ডা কৃষকরা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে । মুন্ডারা বিশ্বাস করত বিরসা নানা রকম অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারী । তাই মুন্ডা উলগুলানের অন্যতম লক্ষ্য ছিল ব্রিটিশ শাসনের অবসান ঘটিয়ে বিরসার শাসন প্রতিষ্ঠা করা । ঔপনিবেশিক প্রশাসনের দমন পীড়নের ফলে মুন্ডা উলগুলান পরাস্ত হয় ।


১০. নীলবিদ্রোহ ও হিন্দু প্যাট্রিয়ট সম্পর্কে যা জানো লেখো । উঃ । বাংলার নীল বিদ্রোহের প্রতি হিন্দু প্যাট্রিয়ট পত্রিকা ও তার সম্পাদক হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় নীলকরদের বিরুদ্ধে চাষিদের পক্ষ নিয়ে লেখা শুরু করেন । শিশিরকুমার ঘোষ ও মনমোহন ঘোষকে হরিশচন্দ্র নিয়োগ করেন খবরাখবর সংগ্রহের জন্য । ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দে হরিশচন্দ্র লেখেন যে , বাংলায় নীলচায় একটি সংগঠিত জুয়াচুরি ও নিপীড়ন ব্যবস্থা মাত্র । তিনি লেখেন যে চাষি একবার নীলচায় করেছে তার থেকে বাঁচার তার আর কোনো উপায় নেই । নীলকর কোনো নীলচাষিকেই ন্যায্য দাম দেয় না । বস্তুত , হরিশচন্দ্রের উদ্যোগেই নীল বিদ্রোহের খবরাখবর বাংলায় শিক্ষিত জনগনের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছিল । 


১১. ' গোরে আয়ে ' — এই ঘটনাটি কী ছিল ?

 উঃ । ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে মে মাসের ১০ তারিখে বিকেলের শেষে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সিপাহিরা উত্তর প্রদেশের মিরাটের সেনা ছাউনির কাছে বাজারে বসে ৮৫ জন সিপাহিকে আটক করা নিয়ে আলোচনা করছিল । তারা এনফিল্ড রাইফেল ব্যবহার করতে চায়নি । ওই সময়ে কোম্পানির শ্বেতাঙ্গ সেনারা প্যারেড করে সন্ধ্যা প্রার্থনার জন্য চার্চে যাচ্ছিল । একটি ছোটো ছেলে বাজারের দিকে ' গোরে আয়ে গোরে আয়ে ' - বলে দৌড়ে এসে ভুল খবর দেয় যে শ্বেতাঙ্গরা সিপাহিদের বন্দি করতে আসছে । সঙ্গে সঙ্গে বিদ্রোহ শুরু হয় । সিপাহিরা গোরা সেনাদের বন্দি করে হত্যা করে । মিরাটে সিপাহি বিদ্রোহ শুরু হয়ে যায় । 


১২. ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহ ও এক বাঙালি সরকারি চাকুরের চোখে । 

উঃ । একদল সৈন্য চিৎকার করে বলল গোরে আয়ে , গোরে আয়ে , সৈন্যরা চারিদিকে ভয় পেয়ে দৌড়ে প্যারেড ভূমির দিকে চলে গেল । গোরা সৈন্য এসেছে শুনে আনন্দ হচ্ছিল । কিন্তু হঠাৎ খবর পাওয়া গেল গোরা সৈন্য আসেনি , গোরা আক্রমণ সিপাহিদের কাল্পনিক ভয়মাত্র , এই উদ্ধৃত অংশটি দুর্গাদাস বন্দ্যোপাধ্যায় - এর ‘ বিদ্রোহে বাঙালী ' গ্রন্থটি থেকে নেওয়া হয়েছে । 


১৩. সিপাহি বিদ্রোহ না জাতীয় বিদ্রোহ তথ্য দিয়ে আলোচনা করো ? 

উঃ । ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহের চরিত্র নিয়ে শুরু থেকেই বিতর্ক রয়েছে । এই বিদ্রোহ কি নিছকই সিপাহি বিদ্রোহ না জাতীয় বিদ্রোহ । বিদ্রোহের সময়ই একটি সংবাদপত্রের সাংবাদিক হিসেবে কার্ল মার্কস লিখেছিলেন যাকে সেনা বিদ্রোহ মনে করা হচ্ছে তা আদতে ‘ জাতীয় বিদ্রোহ । ধীরে ধীরে ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহকে জাতীয়তাবাদীরা “ ভারতের স্বাধীনতা যুদ্ধ ” বলে ব্যাখ্যা করতে থাকেন । যদিও তার মধ্যে কিছুটা অবজ্ঞা ছিল । তবে সিপাহিরা পুরানো মুঘল শাসনব্যবস্থাকে ফিরিয়ে আনতে চেয়েছিলেন । ১৮৫৭ - র বিদ্রোহীদের মধ্যে জাতীয়তাবাদের কোনো ধারণা ছিল না । বিদ্রোহী নেতারা অনেকেই একে অন্যের বিরুদ্ধাচরণও করেন । তবে কেবল সিপাহি বিদ্রোহ । বললে ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহের সামগ্রিক রূপ ধরা পড়ে না । 


১৪.বাহাদুর শাহ জাফর - এর বিচার কীভাবে করা হয়েছিল ? 

উঃ । ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের ২৭ জানুয়ারি দেওয়ানি - ই খাসে শেষ মুঘল সম্রাট বাহাদুর শাহের বিচার শুরু হয় । বিচারের আগে ৮২ বছরের বৃদ্ধ সম্রাটকে দেড় ঘণ্টা বাইরে দাঁড় করিয়ে রাখা হয় । তারপর একটা সাধারণ আসনে তাঁকে বসতে দেওয়া হয় । দীর্ঘক্ষণ বিচার চলার সময় তার সাক্ষীদেরও জেরার সুযোগ মুঘল সম্রাটকে দেওয়া হয় নি । ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দের ২৯ মার্চ বৃদ্ধ সম্রাটকে দোষী ঘোষণা করে বার্মার রেঙ্গুনে নির্বাসন দেওয়া হয় । 


১৫. ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহ : কলিকাতার অভিজ্ঞতা : 

উঃ । “ ১৮৫৭ সালের জুলাই মাসে রব উঠল সিপাহিরা আসছে তারা সব ইংরেজদের হত্যা করবে । ভীত হয়ে শ্বেতাঙ্গ সিপাহিরা লর্ড ক্যানিংকে পরামর্শ দিলেন — কালাদের অস্ত্র হরণ করো , কঠিন সামরিক আইন জারি করো । কিন্তু ক্যানিং এইসব কথায় কান দিলেন না । রাতে আটটার পর গড়ের মাঠ দিয়ে আসতে হলে পদে পদে অস্ত্রধারী প্রহরী জিজ্ঞাসা করিত “ হুকুমদার ” অর্থাৎ তাহা হইলেই বলিতে হইত ‘ রাইয়ত হ্যায় ' অর্থাৎ আমি প্রজা । সব পরীক্ষা হলে তবে ছাড় পাওয়া যেত । এইরূপে সকল শ্রেণির মধ্যে একটা ভয় ও আতঙ্ক জন্মিয়েছিল ।


 ১৬. তিতুমির কীভাবে তাঁর আন্দোলন সংগঠিত করেছিলেন ? 

উঃ । তিতুমির ওয়াহাবি মতাদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে বারাসাত নারকেলবেড়িয়া অঞ্চলে ওয়াহাবি আন্দোলন শুরু করেন । তিনি স্থানীয় জমিদার , নীলকর ও ব্রিটিশ প্রশাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগঠিত করেন । বারাসাত অঞ্চলে একটি বাঁশের কেল্লা বানিয়ে তিতুমির নিজে বাদশাহ উপাধি নেন এবং ঘোষণা করেন কোম্পানি সরকারের শাসন শেষ হয়ে আসছে । ১৮৩১ খ্রিস্টাব্দে বারাসাত বিদ্রোহ দমন করার জন্য ব্রিটিশ কাহিনী কামান দেগে বাঁশের কেল্লা ধ্বংস করে দেয় ।


 ১৭. ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক প্রশাসনের সামাজিক সংস্কারে ভারতীয় সমাজ উদ্যোগী হয়েছিলেন কেন ? 

উঃ । ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক প্রশাসন ভারতের সমাজ ও শিক্ষা সংস্কারে যে সমস্ত উদ্যোগ নেয় তাতে অনেক ভারতীয়ই উদ্যোগী হয়েছিলেন । এইসব ভারতীয়দের অধিকাংশই ব্রিটিশ কোম্পানির চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত ও ইংরেজি শিক্ষার সুফল পেয়েছিলেন । এদের অনেকেই কোম্পানির অর্থনৈতিক কার্যকলাপের সহযোগী ছিলেন । ফলে ঊনবিংশ শতকের ভারতের সমাজ ও শিক্ষা সংস্কারকরা ব্রিটিশ শাসনের প্রতি আস্থাবান ছিলেন এবং তাঁরা মনে করতেন যে ব্রিটিশ শাসনেই দেশীয় সমাজ ও সংস্কৃতির উন্নয়ন সম্ভব ।


 ১৮. বাংলার শিক্ষা সংস্কারে ডিরোজিও এবং নব্যবঙ্গ গোষ্ঠী কী ভূমিকা নিয়েছিলেন ?

 উঃ । হেনরি লুই ভিভিয়ান ডিরোজিও হিন্দু কলেজের একজন শিক্ষক ছিলেন । তিনি তাঁর ছাত্রদের মধ্যে স্বাধীন চিন্তাভাবনার বিকাশ ঘটিয়েছিলেন । তাঁর ছাত্ররা নব্যবঙ্গ বা ইয়ং বেঙ্গল নামে পরিচিত । ছিল । ব্রিটিশ শাসন ও ইংরেজি শিক্ষার প্রতি নব্যবঙ্গ গোষ্ঠীর পূর্ণ সমর্থন ছিল । তাঁরা বিভিন্ন সামাজিক প্রথা , জাতপাত , বাল্যবিবাহ , বহুবিবাহ প্রভৃতি প্রথার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছিলেন ।


 ১৯. রাজা রামমোহনের পরে কারা ব্রাহ্মধর্মকে সংগঠিত করেছিলেন ? 

উঃ । রাজা রামমোহনের পরবর্তীকালে মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ব্রাহ্ম আন্দোলনকে সংগঠিত করেন । ১৮৬০ এর দশকে কেশবচন্দ্র সেন ও বিজয়কৃয় গোস্বামীর উদ্যোগে কলকাত শিক্ষিত সমাজের গন্ডি পার হয়ে ব্রাহ্ম আন্দোলন বিভিন্ন জেলায় ছড়িয়ে পড়ে । বৈষ্ণবধর্মের জনপ্রিয় ঐতিহ্য ও ব্রাহ্ম ধারণার মধ্যে বিজয়কৃর এক সংযোগ তৈরি করেছিলেন । কিন্তু আদতে সমাজে উচ্চবর্ণের মধ্যেই ব্রাহ্ম আন্দোলন সীমিত ছিল ।


 ২০. সমাজ সংস্কারকরূপে বীরেশলিঙ্গম পাণ্ডুলুর ভূমিকা আলোচনা করো । 

উঃ । ১৮৪৮ খ্রিস্টাব্দে অস্ত্রপ্রদেশের এক রক্ষণশীল পরিবারে বীরেশলিঙ্গম পাণ্ডুলু জন্মগ্রহণ করেন । তিনি প্রথাগত শিক্ষা ছাড়াও ইংরেজি ভাষায় জ্ঞানার্জন করেন । পাণ্ডুলু বাংলার ব্রাহ্ম আন্দোলন দ্বারা প্রভাবিত হন । মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সিতে পাণ্ডুলুর নেতৃত্বে বিধবা বিবাহ আন্দোলন । শুরু হয় । বীরেশলিঙ্গম মূর্তিপুজো ; অস্পৃশ্যতা , জাতিভেদ ও বাল্যবিবাহ প্রভৃতির বিরোধিতাকরেন । তিনি ‘ বিবেকবোধিনী ’ ও ‘ সাহিত্যবোধিনী ' নামে পত্রিকা প্রকাশ করেন । পাশাপাশি নারীশিক্ষা ও বিধবা বিবাহের পক্ষে তিনি সওয়াল করেন । তিনি দক্ষিণ ভারতে প্রার্থনা সমাজের সংস্কার আন্দোলনকে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন । 


২১. সংস্কার আন্দোলনের ক্ষেত্রে হিন্দু পুনরুজ্জীবনবাদের ভূমিকা কী ছিল ? 

উঃ । উনিশ শতকে বাংলা তথা ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত এবং হিন্দুধর্মের প্রতি আস্থাশীল একদল মানুষ ও ভারতের অতীত ঐতিহ্যকে জাগরিত করতে হিন্দুধর্মের হৃত মর্যাদা ফিরিয়ে দিয়ে যে আন্দোলন সংঘটিত করেন তাকে হিন্দু পুনরুজ্জীবনবাদ বলা হয় । বাংলায় ব্রাহ্মনেতা রাজনারায়ণ বসু ও নবগোপাল মিত্রের সংস্কার আন্দোলন হিন্দু পুনরুজ্জীবনবাদে এক বিশেষ ভূমিকা নেয় । রাজনারায়ণ বসুর ' জাতীয় গৌরব সম্পাদনী সভা ' এবং নবগোপাল মিত্রের ' জাতীয় মেলা ’ এক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা নেয় । জাতীয় মেলা পরে ‘ হিন্দুমেলা ' নামে পরিচিত হয় । হিন্দুমেলার উদ্দেশ্য ছিল স্বাধীনতা ও দেশপ্রেমের আদর্শে মানুষকে উজ্জীবিত করা । 


২২. হিন্দু পুনরুজ্জীবনবাদী আন্দোলনে রামকৃষ্ণ ও স্বামী বিবেকানন্দের ভূমিকা আলোচনা করো । 

উঃ । রামকৃষ্ণ পরমহংস ও স্বামী বিবেকানন্দের নাম হিন্দু পুনরুজ্জীবনবাদী আন্দোলনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত । উনিশ শতকের চাকুরিজীবি , শহুরে শিক্ষিত মানুষের কাছে রামকৃষ্ণের এক বিশেষ আবেদন তৈরি হয়েছিল । ১৮৯৩ খ্রিস্টাব্দে রামকৃষ্ণের শিষ্য স্বামী বিবেকানন্দ শিকাগো ধর্ম সম্মেলনে যোগদান করেন এবং সেখানে সহজভাষায় ভারতীয় দর্শন ও হিন্দু ধর্মের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের চেষ্টা করেন । বিবেকানন্দ নারীর স্বাধীনতায় বিশ্বাসী ছিলেন । 


২৩. ব্রিটিশ কোম্পানি কীভাবে ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহকে দমন করেছিল ? 

উঃ । চূড়ান্ত দমন পীড়নের মধ্যে দিয়ে ব্রিটিশ কোম্পানি ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহ দমন করতে থাকে । কোম্পানির সেনাবাহিনী ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের শেষে পুনরায় দিল্লি অধিকার করে নেয় । মুঘল সম্রাট বাহাদুর শাহ জাফরকে বন্দি করে রেঙ্গুনে নির্বাসন দেওয়া হয় । বিদ্রোহীরা অসম যুদ্ধ চালাতে থাকেন , তাদের না ছিল যথেষ্ট সম্পদ না ছিল লোকবল । এছাড়া তাঁদের অস্ত্রশস্ত্র বা যোগাযোগ ব্যবস্থাও উন্নত ছিল না । কার্যত দিল্লি পুর্নদখল করে ব্রিটিশ কোম্পানি বিদ্রোহ অনেকটাই দমন করে ফেলেছিল । 


❐ রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর :

 ১. ফরাজি ও ওয়াহাবি আন্দোলনের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও । 

উঃ । ‘ ফরাজি ’ শব্দের অর্থ হলো ইসলাম ধর্মের আদর্শে বিশ্বাস । ১৮২০ খ্রিস্টাব্দে হাজি শরিয়ত উল্লা ফরাজি নামে এক ধর্মীয় সম্প্রদায় প্রতিষ্ঠা করেন । তিনি বলেন যে ব্রিটিশ শাসনে থাকা ভারতবর্ষ ধর্মপরায়ণ মুসলিমদের যোগ্য নয় । তিনি জমিদার ও নীলকর সাহেবেদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান । তিনি পূর্ববাংলার ফরিদপুর অঞ্চলে গরিব চাষিদের নিয়ে ফরাজি আন্দোলন গড়ে তোলেন । ধীরে ধীরে এই আন্দোলন ঢাকা , খুলনা ও ময়মনসিংহ অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে । শরিয়ত উল্লার মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র দুদু মিঞা এবং পরে তাঁর পুত্র নোয়া মিঞা ফরাজি আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন । ফরাজি মতামতের প্রসারের ফলে স্থানীয় জমিদারেরা ভয় পেয়েছিল । এই আন্দোলন প্রথমে ধর্মীয় আন্দোলন হিসেবে শুরু হলেও পরে তা রাজনৈতিক রূপ নেয় । ঊনবিংশ শতকের শেষদিক পর্যন্ত ফরাজি আন্দোলন চলেছিল । ‘ ওয়াহাবি ’ শব্দের অর্থ হলো নবজাগরণ । অষ্টদশ শতকে আব্দুল ওয়াহাব - এর নেতৃত্বে আরবে ওয়াহাবি আন্দোলনের সূচনা হয় । তাঁর পথ অনুকরণে ভারতে মুসলিম সপ্ত শাহ ওয়ালিউল্লাহ - র নেতৃত্বে ওয়াহাবি আন্দোলন গড়ে ওঠে । ভারতে প্রকৃতভাবে ওয়াহাবি আন্দোলন পরিচালনা করেন রায়বেরিলি অঞ্চলের সৈয়দ আহম্মদ নামের এক ব্যক্তি । তিনি ওয়াহাবিদের ব্রিটিশ - বিরোধী আন্দোলনে সংবদ্ধ করেন । বাংলার মির নিসার আলি বা তিতুমিরের নেতৃত্বে ওয়াহাবি আন্দোলন শুরু হয় । তিনি বারাসাতের নারকেলবেড়িয়া অঞ্চলে একটি বাঁশের কেল্লা বানিয়ে এই বিদ্রোহের নেতৃত্ব দেন । স্থানীয় জমিদার , নীলকর ও ব্রিটিশ প্রশাসনের বিরুদ্ধে এই বিদ্রোহ সংঘটিত হয় । এটি বারাসাত বিদ্রোহ নামে পরিচিত । ১৮৩১ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ বাহিনী কামান দেগে বাঁশের কেল্লা ধ্বংস করে দেয় । 


২. ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহ কীভাবে গণবিদ্রোহের রূপ নিয়েছিল ? 

উঃ । ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের গোড়ার দিকে কলকাতার দমদম সেনা ছাউনিতে বন্দুকের টোটা নিয়ে এক গুজব ছড়ায় । বলা হয় যে নতুন এনফিল্ড রাইফেলের টোটায় গোরু ও শুকরের চর্বি মেশানো এবং তা দাঁত দিয়ে সিপাহিদের কেটে নিতে হতো । ফলে সিপাহিরা বিশ্বাস করতে থাকে যে তাদের জাত ও ধর্ম নষ্ট করার চেষ্টা করছে ব্রিটিশ কোম্পানি । সারা দেশের সেনা ছাউনিতে এই গুজব ছড়িয়ে পড়তেই সতর্ক হয়ে কোম্পানি ওই টোটা বানানো বন্ধ করে দেয় । কিন্তু কোম্পানির প্রতি অসন্তোষ বাড়তে থাকে । ব্যারাকপুরের সেনা ছাউনিতে মঙ্গল পান্ডে নামে এক সিপাহি এক ইউরোপীয় সেনা আধিকারিককে গুলি করেন । এরপর থেকেই আম্বালা , লখনৌ , মিরাট সহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে কোম্পানির বিরুদ্ধে সিপাহিবাহিনীর বিদ্রোহ শুরু হয় । মিরাটের সিপাহিরা দিল্লি পৌঁছে মুঘল সম্রাট বাহাদুর শাহ জাফরকে হিন্দুস্থানের সম্রাট ঘোষণা করে । ধীরে ধীরে উত্তর পশ্চিম প্রদেশ ও অযোধ্যার বিভিন্ন সেনা ছাউনিতে বিদ্রোহ ছড়িয়ে পড়ে এবং এদের সঙ্গে যোগ দেয় স্থানীয় কিছু অভিজাত ও সাধারণ জনগণ । ফলে দ্রুত সিপাহিদের বিদ্রোহ গণবিদ্রোহের রূপ নেয় । 


৩. সাঁওতাল বিদ্রোহ কেন সংগঠিত হয়েছিল ? কারা এই বিদ্রোহে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিল ? এই বিদ্রোহের অপর নাম কী ছিল ? 

উঃ । ১৮৫৫ - থেকে ১৮৫৬ সালে যে উপজাতি বিদ্রোহ সংগঠিত হয়েছিল তার নাম ছিল সাঁওতাল বিদ্রোহ । এই বিদ্রোহের পিছনে বিভিন্ন কারণ ছিল । প্রথমতঃ সাঁওতালদের এলাকায় বহিরাগত মহাজন , জমিদাররা ‘ দিকু ’ নামে পরিচিত ছিল । এরা এসে বসবাস করতে শুরু করে । এদের প্রভাবে দরিদ্র নিরীহ সাঁওতালরা অত্যাচারের মুখে পড়ে । তারা কম ওজন ও চড়া সুদে টাকা দিত । দলিলে ইচ্ছামতো বক্তব্য লিখে টিপ ছাপ নিয়ে নিত । দ্বিতীয়ত : ইউরোপীয় কর্মীরা সাঁওতালদের কাছ থেকে জোর করে হাঁস মুরগি ও অন্যান্য জিনিস কেড়ে নিত । তৃতীয়তঃ তাদের জোর করে রেলের কাজে নিয়োগ করা হতো । উপযুক্ত মজুরি দিত না । চতুর্থত : সবচেয়ে বড়ো কথা ছিল সাঁওতালদের নিজস্ব সংস্কৃতি বিপন্ন হচ্ছিল । সিধু , কানহ , চাঁদ ও ভৈরব প্রমুখ এই বিদ্রোহে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিল । এই বিদ্রোহ ‘ হুল বিদ্রোহ ' নামে পরিচিত ছিল ।


 ৪. সংস্কার আন্দোলনগুলির চরিত্র ও সীমাবদ্ধতা আলোচনা করো । 

উঃ । ঊনিশ শতকের সংস্কার আন্দোলনগুলি একটা সংকীর্ণ সীমানায় আটকে পড়েছিল । আর্থিক ও শিক্ষাগত সুযোগ সুবিধাগুলি মূলত উচ্চবর্গের ভদ্রলোক ব্যক্তিরাই পেয়েছিলেন । কলিকাতার বাইরে ব্রাহ্ম আন্দোলন ছড়িয়ে পড়লেও সাধারণ মানুষদের সঙ্গে এই আন্দোলন তেমনভাবে ঘনিষ্ঠ হতে পারেনি । সংস্কারকরা সমাজের সব শ্রেণির মানুষকে নিয়ে বিশেষ ভাবিত ছিলেন না । দক্ষিণ ও পশ্চিম ভারতে প্রার্থনা সমাজ - এর আন্দোলনও শিক্ষিত ভদ্রলোক শ্রেণির মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল । পাশাপাশি এই আন্দোলনগুলি জাতিভেদ প্রথা নিয়ে তেমন সরব হয়নি যদিও এর নেতারা বেশিরভাগই উচ্চ জাতির প্রতিনিধি ছিলেন । উনিশ শতকের সংস্কার আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত নেতারা মনে করতেন ধর্মশাস্ত্রে যে কথা বলা আছে তা পালনীয় । কিন্তু ধর্মীয় নেতারা নিজেদের স্বার্থে ধর্মের নির্দেশগুলিকে অপব্যবহার করতেন । দেশের বেশিরভাগ মানুষ সব শাস্ত্র না পড়ায় তারা শাস্ত্রের নামে বিভিন্ন কুপ্রথার শিকার হতেন । সতীদাহ প্রথা , বিধবা বিবাহ — এই প্রথা কিন্তু বরাবরই ছিল , শাস্ত্র নির্ভর বিভিন্ন প্রধার নিষ্ঠুরতা ও অমানবিকতার বদলে ওই প্রথাগুলি শাস্ত্রসম্মত কিনা তা নিয়ে আলোচনায় জোর দেওয়া হয়েছিল ।


3 ৫. ধর্ম ও সমাজ সংস্কারকরূপে রাজা রামমোহনের অবদান কী ছিল ? 

উঃ । উনবিংশ শতকে বাংলার সমাজ সংস্কারকদের মধ্যে প্রধান ছিলেন রাজা রামমোহন । রায় । তিনি যুক্তিসম্মত বিচারের দ্বারা হিন্দুধর্মের সংস্কারের কথা বলেন । তিনি মূর্তিপূজা , পুরোহিততন্ত্র ও বহু ঈশ্বরবাদের নিন্দা করেন । সে সময় কলকাতা ও তার আশেপাশে সতীদাহ প্রথা বজায় ছিল । রামমোহন সতীদাহ প্রথা বন্ধের পক্ষে জোরালো আন্দোলন করেন । তাঁর চেষ্টায় শেষ পর্যন্ত ১৮২৯ খ্রিস্টাব্দে লর্ড বেন্টিক আইন করে এই নৃশংস ও অমানবিক সতীদাহ প্রথা বন্ধ করেন । সম্পত্তিতে নারীর আইনগত স্বীকৃতির ক্ষেত্রেও রামমোহন সওয়াল করেন । ১৮১৫ খ্রিস্টাব্দে রাজা রামমোহন রায় কলকাতায় আত্মীয় সভা প্রতিষ্ঠা করেন । ওই প্রতিষ্ঠানের মূল লক্ষ্য ছিল সামাজিক সংস্কার করা । ১৮২৮ খ্রিস্টাব্দে আত্মীয় সভা থেকে ব্রাহ্ম সমাজ গড়ে ওঠে । 


৬. শিক্ষা ও সমাজ সংস্কারে পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ভূমিকা আলোচনা করো ।

 উঃ । উনিশ শতকের বাংলায় প্রায় একক উদ্যোগে শিক্ষা ও সমাজ সংস্কারে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর । শিক্ষা সংস্কারের ক্ষেত্রে তাঁর উদ্যোগেই ব্রাহ্মণ ও বৈদ্য পরিবারের পাশাপাশি কায়স্থ ছেলেরাও সংস্কৃত কলেজে পড়ার সুযোগ পায় । বিদ্যাসাগর অনুভব করেছিলেন যে সংস্কৃতের পাশাপাশি ইংরেজি শিক্ষারও প্রয়োজন । তিনি বুঝেছিলেন মাতৃভাষা ও ইংরেজির মধ্যে সংযোগসাধন জরুরি । পাশাপাশি পাঠ্যসূচিতে গণিত চর্চাও তিনি অন্তর্ভুক্ত করেন । ১৮৫০ - এর দশকে ছাত্রদের জন্য বিদ্যাসাগর অনেকগুলি বই লেখেন । সহকারি স্কুল পরিদর্শক হিসেবে বাংলার বিভিন্ন জেলায় বিদ্যাসাগর কয়েকটি মডেল স্কুল তৈরি করেন । তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে প্রশাসনের তরফে যে সামান্য অর্থ শিক্ষাখাতে বরাদ্দ করা হয় তা দিয়ে সমস্ত মানুষকে শিক্ষার আওতায় আনা সম্ভব নয় । তাই শিক্ষা বিষয়ে ব্রিটিশ সরকারের নির্দিষ্ট পরিকল্পনা থাকা উচিত বলে বিদ্যাসাগর মনে করতেন । নারীদের শিক্ষাবিস্তারের জন্য তিনি ব্যক্তিগত উদ্যোগে নিজের খরচে অনেকগুলি মেয়েদের স্কুল তৈরি করেন । বেথুন স্কুলে যাতে মেয়েরা পড়তে যায় তার জন্যও তিনি চেষ্টা করেন । 


৭. ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহে সিপাহিদের মধ্যে কারা অংশগ্রহণ করেছিল এবং কেন ?

 উঃ । ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহে ব্রিটিশ কোম্পানির সমস্ত সিপাহিবাহিনী যোগ দেয় ।  মাদ্রাজ ও বোম্বাই বাহিনীর সিপাহিরা বিদ্রোহ থেকে দূরে সরে ছিল । প্রধানত বেঙ্গল আর্মির সিপাহিরা এই বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিল । বেঙ্গল আর্মির মধ্যে বেশিরভাগ সিপাহি ছিল ভারতীয় । এই সেনাবিভাগে বেশিরভাগে সিপাহি আদতে ছিল অযোধ্যার বাসিন্দা । সেখানকার প্রায় প্রতিটি কৃষক পরিবার থেকে কেউ না কেউ সিপাহি হিসেবে যোগ দিয়েছিল । ১৮২০ দশকে কোম্পানির তরফে যে সেনা সংস্কার করা হয় তাতে মারাঠা , গোর্খা সহ বিভিন্ন জনগোষ্ঠী সেনাবাহিনীতে নিযুক্ত হলে তারা ক্ষুব্ধ হয় । তাদের বেতন কমে যাওয়া এবং অন্যান্য সুযোগ সুবিধা না পাওয়া নিয়ে বৈষম্যের অভিযোগ ওঠে । এছাড়া ১৮৫৬ খ্রিস্টাব্দে কোম্পানি ঘোষণা করে যে সিপাহিদের নিজেদের অঞ্চলের বাইরে গিয়েও কাজ করতে হবে । কিন্তু সেজন্য আলাদা কোনো ভাতা সিপাহিরা পাবে না । এমনকি যেসব সিপাহিরা যেতে অরাজি হতো তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হতো । চাকরি সংক্রান্ত এসব সংঘাতের সঙ্গে এনফিল্ড রাইফেলের টোটা বিষয়ক গুজবটি ছড়িয়ে পড়ে । এইসব কারণ থেকে বেঙ্গল আর্মির সিপাহিরা ক্ষুদ্ধ হয়ে বিদ্রোহের সূচনা করে । বেঙ্গল আর্মির সিপাহিদের এই বিদ্রোহ দমনে ব্রিটিশ সরকার পাঞ্জাবি ও গুর্খা সিপাহিদের ব্যবহার করে । অন্যদিকে মাদ্রাজ ও বোম্বাই বাহিনীর সিপাহিরা কার্যত বিদ্রোহ থেকে সরে থাকে ।


 



No comments:

Post a Comment