Class 8th History Chapter -8 Questions And Answers || অষ্টম শ্রেণী ইতিহাস প্রশ্ন উত্তর অধ্যায় -৮ - Psycho Principal

Fresh Topics

Tuesday, 31 December 2024

Class 8th History Chapter -8 Questions And Answers || অষ্টম শ্রেণী ইতিহাস প্রশ্ন উত্তর অধ্যায় -৮

  


অষ্টম অধ্যায়
প্রশ্ন উত্তর 



নবম অধ্যায় প্রশ্ন উত্তর পড়তে ক্লিক করো
👉 (নবম অধ্যায়)


❐ অতি - সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর ঃ 

১. কত খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহে হিন্দুস্তানের হিন্দু ও মুসলমানরা ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল ? 

উঃ । ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহে । 


২. বাংলা ও পাঞ্জাবের জনসংখ্যায় কতজন মুসলমান ছিলেন ?

 উঃ । বাংলা ও পাঞ্জাবের মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেকই ছিলেন মুসলমান । 


৩. কোন সময় থেকে জাতীয় আন্দোলনকে দূর্বল করবার তাগিদে ব্রিটিশ নীতির পরিবর্তন ঘটল ? 

উঃ । ১৮৭০ খ্রিস্টাব্দের পর থেকে ব্রিটিশনীতির পরিবর্তন ঘটল । 


৪. উনিশ শতকের শেষ দিক থেকে মুসলমানদের মধ্যে কী ধারণা তৈরি হয় ? 

উঃ । উনিশ শতকের শেষ দিক থেকেই মুসলমানদের মধ্যে ধারণা তৈরি হয় যে হিন্দুদের তুলনায় তারা বঞ্চিত । 


৫. ব্রিটিশ প্রশাসনের তরফে কোন ধারণা চালু করার চেষ্টা করা হয় ? 

উঃ । ধারণাটি ছিল মুসলমানরা সবাই একই রকম এবং একটি ধর্মীয় রাজনৈতিক সম্প্রদায় । 


৬. কত খ্রিস্টাব্দে সরকারি ভাষা হিসাবে ফারসির বদলে ইংরেজিকে স্বীকৃতি দেওয়া হয় ? 

উঃ । ১৮৩৭ খ্রিস্টাব্দে সরকারি ভাষা হিসেবে ফারসির বদলে ইংরেজিকে স্বীকৃতি দেওয়া হয় ।


 ৭. কাদের মধ্যে কোন শিক্ষার হার কম ছিল ? 

উঃ । মুসলমানদের মধ্যে ইংরেজি শিক্ষার হার কম ছিল । 


৮. সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে কারা এগিয়ে যায় ? 

উঃ । সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে হিন্দুরা এগিয়ে যায় ।


 ৯. মুসলমানদের স্বার্থ বলে যা প্রচার করা হতো তা আসলে কী ? 

উঃ । তা আসলে ছিল শিক্ষিত মুসলমানদের স্বার্থ । 


১০. কোন আন্দোলনের মধ্য দিয়ে মুসলিম সমাজের আধুনিকীকরণের অভিযান শুরু হয় ? 

উঃ । স্যার সৈয়দ আহমদ - এর আলিগড় আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ।


 ১১. স্যার সৈয়দ আহমদ খান কী চেয়েছিলেন ? 

উঃ । ইসলামীয় ধর্মতত্ত্বের সঙ্গে পাশ্চাত্য জ্ঞান - বিজ্ঞানের সম্মিলন ঘটিয়ে মুসলমান সমাজে আধুনিক উদার মনোভাবের বিকাশ তিনি ঘটাতে চেয়েছিলেন । 


১২. স্যার সৈয়দ আহমদ খানের উদ্দেশ্য কী ছিল ? 

উঃ স্যার সৈয়দ আহমদ খানের উদ্দেশ্য ছিল মুসলমান ছাত্রদের মধ্যে একটি গোষ্ঠী ও মানসিকতা গড়ে তোলা । 


১৩. দ্বি - জাতি তত্ত্বের জনক কে ? 

উঃ । স্যার সৈয়দ আহমেদ খান । 


১৪. ভারতে প্রথম আদমসুমারি করে হয় ? 

উঃ । ১৮৭২ খ্রিস্টাব্দে ।


১৫. কংগ্রেসে যোগদানকারী একজন মুসিলম নেতার নাম লেখো । 

উঃ । বদরুদ্দিন তৈয়াবজি । 


১৬. উলেমারা সৈয়দ আহমদের কোন নীতিকে পছন্দ করেননি ? 

উঃ । সৈয়দ আহমদের পাশ্চাত্যকরণের নীতিটিকে উলেমারা কখনো পছশ করেননি ।


 ১৭. কত খ্রিস্টাব্দে স্যার সৈয়দ আহমদ খানের মৃত্যু হয় । 

উঃ । ১৮৯৮ খ্রিস্টাব্দে স্যার সৈয়দ আহমদ খানের মৃত্যু হয় । 


১৮. বিংশ শতকের শুরুতে কারা উলেমাদের দ্বারা গভীর ভাবে প্রভাবিত হন ? 

উঃ । মহম্মদ আলি ও সৌকত আলি উলেমাদের দ্বারা গভীরভাবে প্রভাবিত হন । 


১৯. মাউন্টব্যাটেন পরিকল্পনার রচয়িতা কে ? 

উঃ । ভি.পি মেনন । 


২০. কত খ্রিস্টাব্দে কোথায় মহামেডান এডুকেশন কনফারেন্স এর অধিবেশন হয় ? 

উঃ । ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দে ঢাকায় মহামেডান এডুকেশন কনফারেন্স - এর অধিবেশন হয় ।


 ২১. কত খ্রিস্টাব্দে ভারত বিভাগের পরিকল্পনা কংগ্রেস ও লিগ মেনে নেয় ?

 উঃ । ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে লর্ড মাউন্টব্যাটেন - এর ভারত বিভাগের পরিকল্পনা কংগ্রেস ও লিগ মেনে নেয় ।


 ২২. কত খ্রিস্টাব্দে মুসলিম লিগের লাহোর অধিবেশন বসে ? 

উঃ । ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দে মুসলিম লিগের লাহোর অধিবেশন বসে ।


 ২৩. কত খ্রিস্টাব্দে কাদের প্রস্তাব লিগ ও কংগ্রেস উভয়েই মানতে অস্বীকার করে ? 

 উঃ । ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে থ্রিপস মিশনের প্রস্তাব । 


২৪. ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দে কোন কংগ্রেসি নেতা কার কাছে একটি সমঝোতা প্রস্তাব পেশ করেন ?

 উঃ । ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দে কংগ্রেসি নেতা সি রাজাগোপালচারী জিন্নাহর কাছে একটি সমঝোতা প্রস্তাব পেশ করেন । 


২৫. কত খ্রিস্টাব্দে সিমলা অধিবেশন বসে ? 

উঃ । ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দে সিমলা অধিবেশন বসে । 


২৬. মুসলিম লিগের লাহোর প্রস্তাবের খসড়া কে রচনা করেন ? 

উঃ । সিকান্দর হায়াৎ খান ।


 ২৭. কত খ্রিস্টাব্দের কোন তারিখে পাকিস্তান ও ভারত নামে দুই স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্ম হয় ? 

উঃ । ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ১৪ আগস্ট পাকিস্তান ও ১৫ আগস্ট ভারত নামে দুটি স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্ম হয় ।


 ২৮. কাকে ‘ খলিফা বা মুসলিম জগতের ধর্মগুরু ' মনে করা হয় ? কবে এই পদের অবসান ঘটে ?

 উঃ । তুরস্কের সুলতানকে । ১৯২৪ খ্রিস্টাব্দে তুরস্কের খলিফা পদের অবসান ঘটে ।


 ২৯. কত খ্রিস্টাব্দ থেকে গান্ধিজি কোন্ আন্দোলনের সমর্থনে সোচ্চার হয়ে ওঠেন ? 

উঃ । ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দ থেকে গান্ধিজি খিলাফৎ আন্দোলনের সমর্থনে সোচ্চার হয়ে ওঠেন । 


৩০. কত খ্রিস্টাব্দে অসহযোগ আন্দোলন তুলে নেওয়া হয় ? 

উঃ । ১৯২২ খ্রিস্টাব্দে অসহযোগ আন্দোলন তুলে নেওয়া হয় । 


৩১. কে স্বরাজ্য পন্থীদের সঙ্গে বোঝাপড়ায় উৎসাহী ছিলেন ? 

উঃ । মহম্মদ আলি জিন্নাহ ।


 ৩২. কত খ্রিস্টাব্দে বাংলা ও পঞ্জাবে কংগ্রেসের মধ্যে কোন মুসলমান প্রার্থী ছিল না ?

 উঃ । ১৯২৬ খ্রিস্টাব্দে ।


 ৩৩. ‘ সাম্প্রদায়িকতা ' কী ? 

উঃ । জাতীয় আন্দোলনের থেকে মুসলমানদের সরে থাকার প্রবণতাকেই ‘ সাম্প্রদায়িকতা ’ বলে ।


 ৩৪. ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দে কার ঘোষণায় সাম্প্রদায়িক বাঁটোয়ারার কথা বলা হয় ?

 উঃ । ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী রামেস ম্যাকডোনাল্ড - এর ঘোষণায় । 


❐ সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর :

 ১. কার উদ্যোগে এবং কেন সিমলা বৈঠক আহুত হয় ? 

উঃ । মুসলিম লিগ ভারত বিভাজনের দাবিতে অনড় থাকায় তৎকালীন ভাইসরয় লর্ড ওয়াভেল ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দে ওয়াভেল প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা এবং কংগ্রেস ও মুসলিম লিগ - এর মধ্যে একটি সমঝোতা স্থাপনের জন্য সিমলা বৈঠক আহ্বান করেন । কিন্তু জিন্নাহর অনড় মনোভাবের জন্য এই বৈঠক ব্যর্থ হয় । 


২. লাহোর অধিবেশনের গুরুত্ব কী ছিল ? 

উঃ । ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দে মুসলিম লিগের লাহোর অধিবেশনে দ্বি - জাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে ভারতের মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রদেশগুলিকে নিয়ে মুসলমানদের জন্যে একটি পৃথক সার্বভৌম মুসলিম রাষ্ট্র গঠনের দাবি উত্থাপিত হয় । এটি লাহোর প্রস্তাব নামে পরিচিত । তবে এই প্রস্তাবে ‘ পাকিস্তান ' কথাটির উল্লেখ না থাকলেও এটি পরবর্তীকালে ‘ পাকিস্তান প্রস্তাব ’ নামে পরিচিত হয় । 


সাম্প্রদায়িক বাঁটোয়ারা কী ?

উঃ । ভারতে ব্রিটিশ শাসনকে সুদৃঢ় করতে এবং প্রদেশের ধর্ম ও বর্ণগত বিভেদকে প্ররোচনা দেওয়ার উদ্দেশ্যে ব্রিটিশ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের জন্য বিধানমণ্ডলীতে কিছু আসন বরাদ্দ করেন । যা সাম্প্রদায়িক বাঁটোয়ারা নামে পরিচিত । এই নীতি নির্বাচনের অধিকার দেওয়া হয় , ব্রিটিশ সরকারের এই নীতির ফলে তৎকালীন ভারতে সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ বৃদ্ধি পায় । 


 8. প্রত্যক্ষ সংগ্ৰাম বলতে কী বোঝায় ?

 উঃ । লর্ড ওয়াভেল সাংবিধানিক বিধি মেনে ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে কংগ্রেসকে অন্তবর্তীকালীন সরকার গঠনে আহ্বান জানান । ক্যাবিনেট মিশনের প্রস্তাব অনুযায়ী কংগ্রেস সরকারে যোগ দিলেও মুসলিম লিগ তাতে অসম্মত হয় । কংগ্রেসের নির্বাচনে চমকপ্রদ সাফল্য ও লিগের ভরাডুবিতে হতাশাগ্রস্ত জিন্নাহ নিজের রাজনৈতিক গ্রহণযোগ্যতা বজায় রাখতে প্রত্যক্ষ দিনে কলকাতায় ভয়াবহ দাঙ্গা শুরু হয় কিছুদিনের মধ্যেও পূর্ববঙ্গ , বিহার , যুক্তপ্রদেশ , পাঞ্জাব প্রকৃতি জায়গায় মারাত্মক সংগ্রামের আহ্বান জানান । ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দের ১৬ আগস্ট দিনটি থেকে পাকিস্তানের জন্য গণ আন্দোলন শুরু হয় । ওই সংঘর্ষ শুরু হয় । যা জিন্নাহর রাজনৈতিক লক্ষ্যপূরণে সাহায্য করেছিল ।


 ৫. দি ইন্ডিয়ান ইনডিপেন্ডেন্ট অ্যাক্ট কবে পাশ হয় ? 

উঃ । ১৯৪৭ সালের ৪ জুলাই ব্রিটিশ পার্লামেন্টে দি ইন্ডিয়ান ইন্ডিপেনডেন্টস অ্যাক্ট পাস হয় এবং ১৮ জুলাই তা সম্মতি লাভ করে আইনে পরিণত হয় । এই আইনে বলা হয় যে , ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট ভারত ও পাকিস্তান নামে দুটি স্বাধীন রাষ্ট্র গঠিত হবে এবং দেশীয় রাজ্যগুলি তাদের ইচ্ছামতো যে কোনো ডোমিনিয়নে যোগ দিতে পারবে । 


৬. মুসলমানদের একটা অংশ কীভাবে হিন্দুদের থেকে আলাদা একটি সংগঠিত সম্প্রদায় হিসেবে ভাবতে শুরু করে ? 

উঃ । উনিশ শতকের শেষ দিকেও ভারতীয় উপমহাদেশে মুসলমান সম্প্রদায় বলে নির্দিষ্ট কোনো বিষয় বোঝাত না । অঞ্চলভেদে মুসলমানদের মধ্যে অর্থনৈতিক ও জীবনযাপনের তারতম্য ছিল এবং বিভিন্ন অঞ্চলে মুসলমানদের মধ্যে জনসংখ্যার হারও সমান ছিল না । বাংলা ও পাঞ্জাবে যেমন মোট জনসংখ্যার অর্ধেকই ছিল মুসলমান । কিন্তু ঔপনিবেশিক সরকার মুসলমানদের মধ্যে যাবতীয় বৈচিত্র্য ও তারতম্যকে মুছে দিয়ে ভারতের সমস্ত মুসলমানকে একটি ধর্মসম্প্রদায় বলে চিহ্নিত করতে থাকে । এর ফলে সামাজিক , অর্থনৈতিক ও সংস্কৃতিক পরিচয়ের বদলে ধর্মীয় পরিচয়ই মুসলমানদের ক্ষেত্রে প্রধান পরিচয় হয়ে ওঠে । তার ফলে মুসলমানদের একটা অংশ ব্রিটিশ শাসকের মতো করেই নিজেদের হিন্দুদের থেকে আলাদা একটা সংগঠিত সম্প্রদায় হিসেবে ভাবতে শুরু করে । 


৭. সৈয়দ আহমদ কেন জাতীয় কংগ্রেসের বিরোধিতা করেন ? সব মুসলমান সম্প্রদায় কি সৈয়দ আহমদের নেতৃত্ব মেনে নিয়েছিলেন ? 

উঃ । স্যার সৈয়দ আহমদ জাতীয়তা বিরোধী মানুষ ছিলেন না । কিন্তু জাতি বিষয়ে তাঁর ভাবনার সঙ্গে কংগ্রেসের অমিল ছিল । তিনি মনে করতেন যে কংগ্রেস আসলে সংখ্যাধিক্য হিন্দুদের প্রতিনিধি সভা । তাই তিনি জাতীয় কংগ্রেসের সরাসরি বিরোধী ছিলেন । তিনি মুসলিমদের জাতীয় কংগ্রেসে যোগ না দিতে উপদেশ দেন । ইতিহাস উত্তর ভারতীয় মুসলমান সম্প্রদায়রা সৈয়দ আহমদের নেতৃত্ব মেনে নেননি । মুসলিম নেতা বদরুদ্দিন তৈয়াবজি জাতীয় কংগ্রেসে যোগ দিয়েছিলেন । সৈয়দ আহমদের পাশ্চাত্যকরণের বিষয়টি উলেমারা কখনোই পছন্দ করেননি ।


 ৮. গান্ধিজি কীভাবে খিলাফৎ আন্দোলনের সমর্থনে এগিয়ে আসেন ? 

উঃ । গান্ধিজি হিন্দু মুসলিম ঐক্যে বিশ্বাসী ছিলেন , তাই তিনি মুসলিম নেতাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তোলেন । ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে গান্ধি খিলাফৎ আন্দোলনের সমর্থনে সোচ্চার হয়ে ওঠেন । ওই বছরেই মন্টেগু - চেমসফোর্ড সংস্কার বিধিতে হিন্দু - মুসলমান সমানুপাতিক প্রতিনিধিত্বের বিষয়টি অগ্রাহ্য করা হলে বিভিন্ন মুসলিম সংগঠন সাংবিধানিক রাজনীতিতে বিশ্বাস হারান । এর ফলে মুসলিম লিগের নেতৃত্বেও পরিবর্তন ঘটে । এই অবস্থায় গান্ধিজি মুসলমান জনগোষ্ঠীর মধ্যে কংগ্রেসের ভিত্তি প্রসারিত করতে খিলাফত সমস্যাকে অহিংস অসহযোগ আন্দোলনের অন্যতম দাবিরূপে অন্তর্ভুক্ত করে ১১৪ নেন । ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে কেন্দ্রীয় খিলাফৎ কমিটি গান্ধির প্রস্তাবকে সমর্থন করায় গান্ধিজি ও খিলাফতিরা একযোগে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে অসহযোগিতার কর্মসূচি প্রচার করা শুরু করেন । 


৯. কোন্ ঘটনাকে ' সাম্প্রদায়িকতা ' বলে ব্যাখ্যা করা হয় ? এই তত্ত্ব কি ইতিহাসগত ভাবে সঠিক ? 

উঃ । উগ্র হিন্দু মতামত কংগ্রেসের মধ্যে প্রাধান্য পেলে স্বরাজ্যপন্থী নেতারাও হিন্দু - মুসলমান ঐক্যের উদ্যোগ নিতে ব্যর্থ হন । ১৯২৬ খ্রিস্টাব্দে বাংলা ও পাঞ্জাবে কংগ্রেসের মধ্যে কোনো মুসলমান প্রার্থী ছিল না । এর প্রভাব লক্ষ্য করা যায় আইন অমান্য আন্দোলনে মুসলমানদের কম অংশগ্রহণের মধ্যে দিয়ে । জাতীয় আন্দোলন থেকে মুসলমানদের দূরে থাকার এই প্রবণতাকেই ‘ সাম্প্রদায়িকতা ’ বলে ব্যাখ্যা করা হয় । এই ঘটনা একটু খুঁটিয়ে দেখলে বোঝা যায় যে ১৯৩০ - এর দশকেও রাজনৈতিক দিক থেকে মুসলমানদের মধ্যে আলাদা আলাদা অবস্থান ছিল । তাই মুসলিম সাম্প্রদায়িকতা বলে নির্দিষ্ট অবস্থানকে চিহ্নিত করা ইতিহাসগতভাবে সঠিক নয় । 


১০.আদমসুমারি ও সম্প্রদায় ধারণা বিষয়টি আলোচনা করো । 

উঃ । ভারতীয় সমাজের পৃথকীরনের ধারণা তৈরির জন্য ১৮৭২ খ্রিস্টাব্দের আদমসুমারি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিল । ওই জনগণনায় ভারতবর্ষের জনসংখ্যার বিন্যাসের ধারণাটি পরিষ্কার হয় । তার মধ্যে বাংলা ও পাঞ্জাবে জনসংখ্যার অর্ধেকই মুসলমান সেটা স্পষ্ট বোঝা যায় । এরপর থেকে ব্যক্তির ধর্ম ও জাতিই তাদের একমাত্র পরিচয় হয়ে দাঁড়ায় । এর জন্য ভারতীয় উপমহাদেশে ধর্ম সম্প্রদায়গুলির মধ্যে সুযোগ - সুবিধা পাওয়ার জন্য প্রতিযোগিতা ও সংঘর্ষ শুরু হয় । সেই সংঘর্ষের পরিণতি ঘটে ভারতীয় সমাজ ও রাজনীতিতে সাম্প্রদায়িক সমস্যার উত্থানের মধ্য দিয়ে । 


১১. মুসলিম লিগ সম্পর্কে যা জানো লেখো । 

উঃ । ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে বঙ্গভঙ্গের ঘোষণার সময় হিন্দু ও মুসলমান সম্পর্কটি নতুন করে জাতীয়তাবাদী নেতাদের চোখে পড়ে । অন্যদিকে ব্রিটিশ সরকার পিছিয়ে পড়া মুসলমানদের জন্য আলাদাভাবে শিক্ষার ব্যবস্থা করে । বাংলার মুসলমানরা একজোট হয়েছিল চাকরি ও শিক্ষার জন্য । ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দে ঢাকায় মহামেডান এডুকেশন কনফারেন্সের অধিবেশন বসে । এই সময় মুসলমানদের জন্য ' অল ইন্ডিয়া মুসলিম লিগ ' সংগঠন তৈরি হয় । এই সংগঠনের লক্ষ্য ছিল মুসলমানদের স্বার্থ ও রাজনৈতিক অধিকারের প্রতি নজর দেওয়া । পাশাপাশি লিগের উদ্দেশ্য ছিল ব্রিটিশ সরকারের প্রতি অনুগত থাকা । ১৯১০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত মহামেডান এডুকেশন কনফারেন্সের সঙ্গে লিগের কাজকর্ম চলতে থাকে । পরে অবশ্য সংগঠন দুটি আলাদা হয়ে গিয়েছিল । মুসলমানদের মধ্যে যাঁরা কংগ্রেসের সমর্থক ছিলেন তাঁরা লিগ তৈরির বিরোধিতা করলেও ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে মুসলিম লিগের প্রসার ঘটেছিল । 


১২. মহম্মদ ইকবাল কে ছিলেন ? 

উঃ । আধুনিক ভারতের এক বিখ্যাত কবি হলেন মহম্মদ ইকবাল । তরুণ প্রজন্মের মুসলিম ছেলে - মেয়েদের মধ্যে ধর্মীয় ও দার্শনিক দিকগুলি ফুটিয়ে তোলার জন্য তিনি বহু কবিতা লেখেন । তিনি মনে করতেন ভালো কাজ মানুষের মনে শাস্তি ও অমরত্ব প্রদান করে । আচার অনুষ্ঠানের আধিক্য ও অন্যায়কে মেনে নেওয়া তিনি পাপ কাজের সমতুল্য বলে মনে করতেন । ' সারে জাঁহাসে আচ্ছা , হিন্দুস্তী হামারা ' ইত্যাদি বিভিন্ন দেশাত্মবোধক কবিতা তিনি রচনা করেন । ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে তিনি মুসলিম লিগের সভাপতি রূপে পৃথক মুসলমান রাষ্ট্রের পক্ষে সওয়াল করেন । 


১৩.পাকিস্তান প্রস্তাব সম্বন্ধে যা জানো লেখো । 

উঃ । মহম্মদ আলি জিন্নাহের সভাপতিত্বে ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দে লাহোরে মুসলিম লিগের অধিবেশন বসে । এই অধিবেশনের দাবি ছিল পৃথক জাতি হিসেবে আলাদা একটি স্বশাসিত মুসলিম রাষ্ট্রের । কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র চৌধুরি রহমৎ আলি ১৯৩৩-৩৪ খ্রিস্টাব্দে ' পাকিস্তান ' নামে একটি রাষ্ট্রের উল্লেখ করেন । তবে এই অধিবেশনে পৃথক রাষ্ট্রের কথা বলা হলেও ' পাকিস্তান ' নামের উল্লেখ ছিল না । এই প্রস্তাবটির খসড়া তৈরি করেছিলেন সিকদার হায়াৎ খান । ফজলুল হক সেই প্রস্তাব উত্থাপন করেন । লাহোর অধিবেশনে মুসলিম লিগ কর্তৃক গৃহীত মুসলমানদের জন্য পৃথক স্বশাসিত রাষ্ট্রের প্রস্তাবই ' পাকিস্তান প্রস্তাব ' নামে পরিচিত । 


১৪. র‍্যাডক্লিফ লাইন কী ছিল ?

 উঃ । ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের জুন মাসে মাউন্টব্যাটেনের ভারত বিভাগের পরিকল্পনা কংগ্রেস ও লিগ মেনে নেয় । এই পরিকল্পনা অনুসারে বাংলা ও পাঞ্জাবকে ভাগ করার জন্য দুটি আলাদা সীমান্ত কমিশন গঠন করা হয় । দুই কমিশনের সভাপতি ছিলেন ব্রিটিশ আইনজীবী স্যার সিরিল র‍্যাডক্লিফ । অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে র‍্যাডক্লিফ ভারত - বিভাজনের মানচিত্র বা র‍্যাডক্লিফ লাইন তৈরি করেন । র‍্যাডক্লিফ লাইন অত্যন্ত দায়িত্বজ্ঞানহীন ভাবে তৈরি করা হয় । ভারতবর্ষ সম্পর্কে কোনো প্রত্যক্ষ জ্ঞান র‍্যাডক্লিফের ছিলনা । যার ফলে বহু মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল । বাংলা , পাঞ্জাব তথা অন্যান্য জায়গা পরিদর্শন না করেই এই মানচিত্র তিনি তৈরি করেছিলেন । আদৌ সাধারণ মানুষ এই দেশভাগ চেয়েছিল কিনা সেই মতামতের কোনো মূল্য কারোর কাছে ছিল না । ব্রিটিশ সরকারের কাছে জরুরি ছিল কংগ্রেস ও মুসলিম লিগ দেশভাগে সম্মত হয়েছে । যার ফলশ্রুতি হয়েছিল দেশব্যাপী দাঙ্গা ও উদ্বাস্তু জীবন যা স্বাধীনতাকে কালিমালিপ্ত করেছিল ।


 ❐ রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর :

 ১. ঔপনিবেশিক শাসনে মুসলমান সমাজ কীভাবে পিছিয়ে পড়েছিল ? উঃ । ব্রিটিশ প্রশাসন ভারতে একটি ধর্মনিরপেক্ষ শাসনব্যবস্থা আপাতভাবে চালু করেছিল । সরকারি চাকরি , শিক্ষা প্রভৃতি ক্ষেত্রে ধর্মীয় পরিচয়কে গুরুত্ব না দেওয়ার কথা বলা হতো । কিন্তু সরকার কার্যত সুযোগসুবিধার ক্ষেত্রে ধর্মীয় পরিচয়কেই বড়ো করে দেখত । ফলে হিন্দু ও মুসলমান এই দুই সম্প্রদায়ের সুযোগ সুবিধার ক্ষেত্রে প্রশাসনের বিভাজন নীতি প্রকট হতো । বিভাজনের এই প্রক্রিয়া ইংরেজি শিক্ষাকে কেন্দ্র করে প্রকট হয়েছিল । ১৮৩৭ খ্রিস্টাব্দে ফারসির বদলে সরকার ইংরেজি ভাষাকে স্বীকৃতি দেয় । কিন্তু মুসলমানদের মধ্যে ইংরেজি শিক্ষার হার ছিল কম । এর ফলে সরকারি চাকরি ও অন্যান্য সুযোগসুবিধার ক্ষেত্রে মুসলমানরা ক্রমেই পিছিয়ে পড়তে থাকে । এই কারণে উনিশ শতকের শেষদিক থেকে মুসলমানদের মধ্যে একটা ধারণা গড়ে উঠতে থাকে যে তারা হিন্দুদের থেকে বঞ্চিত । এই সময় মুসলমানদের স্বার্থ বলে যা প্রচার করা হতো তা আসলে ছিল শিক্ষিত মুসলমানদের স্বার্থ । বিশেষ করে দেশ তথা বাংলার মতো অঞ্চলে বিরাট · সংখ্যক গরিব ও নিরক্ষর মুসলমান কৃষকদের ভালোমন্দ ওই স্বার্থচিন্তার মধ্যে থাকত না ।


 ২. পাকিস্তান প্রস্তাব কী ? এই প্রস্তাব কীভাবে বিস্তার লাভ করে ? 

উঃ । ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দে মহম্মদ আলি জিন্নাহের সভাপতিত্বে মুসলিম লিগের লাহোর অধিবেশনে মুসলমানদের জন্য একটি পৃথক স্বশাসিত রাষ্ট্রের প্রস্তাব করা হয় । এই প্রস্তাবই ‘ পাকিস্তান প্রস্তাব ’ নামে পরিচিত । ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের ভারত ছাড়ো আন্দোলনের বিরোধিতা করে মুসলিম লিগ । সেই সময় প্রায় সব কংগ্রেস নেতাই জেলে বন্দি ছিলেন । এই সময়ই পাকিস্তানের ধারণাটিকে ব্যাপকভাবে প্রচার করা হয় । প্রকাশ্যেই বলা হতে থাকে মুসলিম লিগকে সমর্থন করার অর্থ ইসলামকে সমর্থন করা । বহু মুসলমান নিয়ন্ত্রিত সংবাদপত্র পাকিস্তান গঠনের দাবীকে সমর্থন জানাতে থাকে । ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দে কংগ্রেস নেতা সি . রাজাগোপালচারী জিন্নাহর কাছে একটি সমঝোতা পত্র পেশ করেন কিন্তু তাতে পাকিস্তানের স্বীকৃতি না থাকায় জিন্নাহ্ ওই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন । ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দে সিমলা অধিবেশনে লিগ নিজেদের সমস্ত ভারতীয় মুসলমানদের প্রতিনিধি বলে দাবি করে । লর্ড ওয়াভেলের সভাপতিত্বে লিগ ও কংগ্রেসের মধ্যে সিমলা বৈঠকে সমতার দাবিতে জিন্নাহ্ অনড় থাকায় সেই বৈঠক ভেস্তে যায় । মুসলিম জনগণের বিভিন্ন অংশের মানুষদের কাছ থেকে আলাদা হবার প্রচারে সাড়া পাওয়া যেতে থাকে । পেশাদার ও ব্যবসায়ী গোষ্ঠীদের কাছে পাকিস্তানের । অর্থ ছিল হিন্দুদের তরফ থেকে প্রতিযোগিতার অবসান । এর পাশাপাশি পির ও উলেমাও পাকিস্তান প্রস্তাবকে সমর্থন ও ধর্মীয় বৈধতা দেয় ।

No comments:

Post a Comment