অষ্টম শ্রেণীর ইতিহাস প্রশ্ন উত্তর || দ্বিতীয় অধ্যায় আঞ্চলিক শক্তির উত্থান প্রশ্ন উত্তর || Class 8th History Questions And Answers Chapter -2 - Psycho Principal

Fresh Topics

Tuesday, 31 December 2024

অষ্টম শ্রেণীর ইতিহাস প্রশ্ন উত্তর || দ্বিতীয় অধ্যায় আঞ্চলিক শক্তির উত্থান প্রশ্ন উত্তর || Class 8th History Questions And Answers Chapter -2

   

দ্বিতীয় অধ্যায় 
আঞ্চলিক শক্তির উত্থান





অষ্টম শ্রেণীর ইতিহাস প্রশ্ন উত্তরঃ

তৃতীয় অধ্যায় প্রশ্ন উত্তর
👉 ( তৃতীয় অধ্যায় )


❐ অককতি - সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তরঃ 

১. কত খ্রিস্টাব্দে ঔরঙ্গজেবের মৃত্যু হয় ? 

উঃ । ১৭০৭ খ্রিস্টাব্দে ঔরঙ্গজেবের মৃত্যু হয় । 


২. পলাশির যুদ্ধ কৰে ঘটেছিল ? 

উঃ । ১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দে পলাশির যুদ্ধ হয় । 


৩. কত সালে কার নেতৃত্বে পারসিক আক্রমণ হয় ? 

উঃ । নাদির শাহের নেতৃত্বে ১৭৩৮-৩৯ খ্রিস্টাব্দে পারসিক আক্রমণ হয় । 


৪. কবে মুর্শিদকুলি খাঁ বাংলার নাজিম পদ লাভ করেন ? 

উঃ । ১৭১৭ খ্রিস্টাব্দের মুর্শিদকুলি খা বাংলার নাজিম পদ লাভ করেন । 


৫. কত সালে কার নেতৃত্বে দিল্লিতে আফগান আক্রমণ ঘটে ? 

উঃ । ১৭৫৬-৫৭ খ্রিস্টাব্দে আহমদ শাহ আবদালির নেতৃত্বে দিল্লিতে আফগান আক্রমণ ঘটে ।


৬. কবে আলিবর্দি খাঁ মারা যান ? 

উঃ ১৭৫৬ খ্রিস্টাব্দে আলিবর্দি মারা যান । 


৭. হায়দরাবাদ রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা কে ? 

উঃ মির ঝামার উদ - দিন খান ছিলেন হায়দরাবাদ রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা।


৮. হায়দরাবাদ করে থেকে নিজামের শাসনে আসে ? 

উঃ । ১৭৪০ খ্রিস্টাব্দ থেকে হায়দরাবাদ নিজামের শাসনে আসে । 


৯.অযোধ্যা কার নেতৃত্বে আঞ্চলিক শক্তি হিসেবে স্থান পায় ?

 উঃ । সাদাব খানের নেতৃত্বে অযোধ্যা আশ্তলিক শক্তি হিসেবে স্থান পায় । 


১০ , কবে অযোধ্যা রাজ্যের প্রতিষ্ঠা হয় ? 

উঃ । ১৭২২ খ্রিস্টাব্দে অযোধ্যা রাজ্যের প্রতিষ্ঠা হয় । 


১১. সাদাৎ খানের উপাধি কী ছিল ? সাদাৎ খানের জামাতা কে ছিলেন ? 

উঃ । সাদাৎ খানের উপাধি ছিল বুরহান - উল - মূলক । সদর জং ছিলেন তাঁর জামাতা ।


 ১২. কত খ্রিস্টাব্দে সফদর জং মারা যান । তারপর কে অযোধ্যার শাসক হন ? 

উঃ ১৭৫৪ খ্রিস্টাব্দে সফদর জং মারা যান । তার পর তাঁর পুত্র সুজা - উদ - দৌলা অযোধ্যার শাসক হন । 


১৩. সিরাজ - উদ - দৌলা কত খ্রিস্টাব্দে কলকাতা আক্রমণ করেন ? তিনি কলকাতার কী নাম রাখেন ?

উঃ । ১৭৬৬ খ্রিস্টাকে সিরাজ - উদ - দৌলা কলকাতা আক্রমণ করেন । তিনি কলকাতার নাম রাখে আলিনগর । 


১৪. আলিনগরের সন্ধি করে স্বাক্ষর হয়েছিল ?

 উঃ । ১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দের ফেব্রুয়ারিতে আলিনগরের সন্ধি আমার আখেছিল । 


১৫. মিরকাশিম কবে নবাব পদ লাভ করেন ? 

উঃ । মিরকাশিম ১৭৬০ খ্রিস্টাব্দে ওই পদ লাভ করেন । 


১৬. ছিয়াত্তরের মন্বন্তর করে হয়েছিল ? 

উঃ । ইংরাজির ১৭৭০ খ্রিস্টাব্দে এবং বাংলার ১১৭৬ বঙ্গাব্দে । 


১৭. অধীনতামূলক মিত্রতা নীতির প্রবর্তক কে ? 

উঃ । লর্ড ওয়েলেসলি অধীনতামূলক মিত্রতা নীতির প্রবর্তক । 


১৮. স্বত্ববিলোপ নীতির প্রবর্তক কে ? 

উঃ । লর্ড ডালহৌসি স্বত্ববিলোপ নীতির প্রবর্তক । 


১৯. বন্দিবাসের যুদ্ধ করে হয়েছিল ? 

উঃ । ১৭৬০ খ্রিস্টাব্দে বন্দিবাসের যুদ্ধ হয়েছিল । 


২০. ভারতে ফরাসিদের উপনিবেশ কোথায় ছিল ? 

উঃ । ভারতে চন্দননগর ও পণ্ডিচেরি ছিল ফরাসি উপনিবেশ । 


২১. পণ্ডিচেরির ফরাসি গভর্নর কে ছিলেন ? 

উঃ । পণ্ডিচেরির ফরাসি গভর্নর ছিলেন জোসেফ দুপ্নে । 


২২. লাহোরের চুক্তি করে স্বাক্ষর হয়েছিল ? 

উঃ । ১৮৪৬ খ্রিস্টাব্দে লাহোরের চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছিল । 


২৩. সলবাইয়ের সন্ধি করে স্বাক্ষর হয়েছিল ?

 উঃ । ১৭৮২ খ্রিস্টাব্দে সলবাইয়ের সন্ধি স্বাক্ষর হয়েছিল । 


২৪. বেসিনের সন্ধি করে স্বাক্ষর হয়েছিল ?

 উঃ । ১৮০২ খ্রিস্টাব্দে বেসিনের স্বাক্ষর হয়েছিল । 


২৫. ' অন্ধকূপ হত্যা ’ ঘটনাটি কে অতিরঞ্জন বলে প্রমাণ করেছিলেন ?

 উঃ । ঐতিহাসিক অক্ষয়কুমার মৈত্রেয় । 


২৬. কত খ্রিস্টাব্দে রাজস্থান থেকে হিরাপদ শাহ পাটনায় চলে যান ? 

উঃ । ১৬৫২ খ্রিস্টাব্দে । 


২৭. হিরাপদ শাহের বড়ো ছেলের নাম কী ? 

উঃ । মানিকচাঁদ ।


 ২৮. মানিকটাঁদ কোথায় মহাজনি কারবার শুরু করেন ? মানিকচাদের পর কে তাঁর ব্যবসার হাল ধরেন ? 

উঃ । মানিকচাঁদ ঢাকায় মহাজনি কারবার শুরু করেন । পরে তাঁর ভাগ্নে ফতেহচাঁদ তাঁর ব্যবসার হাল ধরেন । 


২৯. ফতেহচাদ কী উপাধি পান ? 

উঃ । তিনি জগৎ শেঠ উপাধি পান । 


৩০. কত খ্রিস্টাব্দে মুর্শিদকুলি মারা যান ? 

উঃ । ১৭২৭ খ্রিস্টাব্দে মুর্শিদকুলি মারা যান । 


৩১. কার শাসনকালে মুঘলদের হাত থেকে সুবা বাংলার অধিকার বেরিয়ে যায় ? 

উঃ । আলিবর্দি খানের শাসনকালে মুঘলদের হাত থেকে সুবা বাংলার অধিকার বেরিয়ে যায় ।


৩২. তৃতীয় ইঙ্গ মারাঠা যুদ্ধে কে বিভিন্ন মারাঠা গোষ্ঠীকে একজোট করেছিলেন ? 

উঃ । পেশোয়া দ্বিতীয় বাজিরাও । 


৩৩. কে কোথায় কাটরা মসজিদে প্রতিষ্ঠা করেন ? 

উঃ । মুর্শিদকুলি খান মুর্শিদাবাদে কাটরা মসজিদ প্রতিষ্ঠা করেন । 


৩৪. কোন্ সময় কারা বাংলা ও উড়িষ্যার বিভিন্ন অঞ্চলে লুঠতরাজ ও আক্রমণ চালিয়ে ছিল ? 

উঃ । ১৭৪২ থেকে ১৭৫১ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে মারাঠারা এই লুঠতরাজ ও আক্রমণ চালিয়ে ছিল । 


৩৫. কত খ্রিস্টাব্দে বাংলার নবাব ও মারাঠাদের মধ্যে সন্ধি হয় ? 

উঃ । ১৭৫১ খ্রিস্টাব্দে । 


৩৬. কত খ্রিস্টাব্দে বক্সারের যুদ্ধ ঘটে ? 

উঃ । ১৭৬৪ খ্রিস্টাব্দে । 


৩৭. কার শাসনকালে রেসিডেন্টরা সাবধানতার বদলে আগ্রাসী নীতি নিয়েছিলেন ? 

উঃ । লর্ড ওয়েলেসলির শাসনকালে । 


৩৮. কে ভারতে আসার পর সাময়িকভাবে রেসিডেন্সি ব্যবস্থার আগ্রাসন থমকে যায় ।

 উঃ । লর্ড কর্ণওয়ালিশ ।


 ৩৯. টিপু সুলতান কোথাকার শাসক ছিলেন । তাঁর রাজধানীর নাম কী ছিল ? 

উঃ । টিপু সুলতান মহীশূরের শাসক ছিলেন । তাঁর রাজধানীর নাম ছিল শ্রীরঙ্গপত্তনম ।


 ৪০. কোম্পানির দেওয়ানি লাভের সময় মুঘল সম্রাট কে ছিলেন ?

 উঃ । মুঘল সম্রাট ছিলেন দ্বিতীয় শাহ আলম ।


 ৪১. কোন্ শতকে হায়দার আলি ও টিপু সুলতানের নেতৃত্বে মহীশূর রাজ্য দক্ষিণ ভারতের অন্যতম প্রধান শক্তি হয়ে উঠেছিল ?

 উঃ । অষ্টাদশ শতকে হায়দার আলি ও টিপু সুলতানের নেতৃত্বে মহীশূর রাজ্য দক্ষিণ ভারতের অন্যতম প্রধান শক্তি হয়ে উঠেছিল ।


 ৪২. কত খ্রিস্টাব্দে চতুর্থ ইঙ্গ মহীশূর যুদ্ধ হয় ? 

উঃ । ১৭৯৯ খ্রিস্টাব্দে চতুর্থ ইঙ্গ মহীশূর যুদ্ধ হয় । 


৪৩. পেশোয়া নারায়ণ রাওকে কে হত্যা করেন ? 

উঃ । রঘুনাথ রাও । 


৪৪. মিরজাফরের মৃত্যুর পর কে বাংলার নবাব হয়েছিলেন ? 

উঃ । মিরজাফরের মৃত্যুর পর বাংলার নবাব হন তাঁর পুত্র নজম - উদ - দৌলা ।



 ❐ সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তরঃ


১. জগৎ শেঠ সম্পর্কে কী জানা যায় ? 

উঃ । মুর্শিদাবাদের অর্থনীতিতে জগৎশেঠের ভূমিকা ছিল অনস্বীকার্য । মুর্শিদাবাদে সিরাজ বিরোধী শক্তি হিসেবে জগৎ শেঠ ছিলেন অন্যতম । ১৬৫২ খ্রিস্টাব্দে রাজস্থান থেকে হিরাপদ শাহ পাটনায় যান । তাঁর জ্যেষ্ঠ পুত্র মানিকচাঁদ ঢাকায় মহাজনি কারবার শুরু করেন । মানিকচাঁদের সঙ্গে মুর্শিদকুলি খাঁর সম্পর্ক ভালো হবার দরুন মানিকচাঁদ ঢাকা থেকে মুর্শিদাবাদে এসে ব্যবসা শুরু করেন । মানিকচাঁদের ভাগ্নে ফতেহচাঁদ ব্যবসার হাল ধরেন । এই ফতেহচাদই হলেন জগৎ শেঠ । জগৎ শেঠ আসলে একটি বণিক পরিবারের উপাধি যা বংশানুক্রমিকভাবে চলতে থাকে এবং জগৎ শেঠদের বিপুল অর্থনৈতিক ক্ষমতা ছিল । তাঁদের হাত ধরে এক ধরনের ব্যাঙ্ক ব্যবস্থা বাংলায় গড়ে উঠেছিল । বাংলার নবাব দরবারেও তাঁদের প্রভাব যথেষ্ট ছিল । জগৎ শেঠদের পছন্দের ব্যক্তিদের মধ্যে ছিলেন মিরাজফর । সিরাজ - উদ্ - দৌলার পর ব্রিটিশ সরকার জগৎ শেঠদের সম্মতিতেই মিরজাফরকেই নবাবরূপে নির্বাচিত করেন । 


২ বাংলায় বর্গিহানা সম্বন্ধে কী জানা যায় ? 

উঃ । বাংলায় মারাঠা বা বর্গি আক্রমণ ছিল নবাব আলিবর্দির সময়ের এক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা । ১৭৪২ থেকে ১৭৫১ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে মারাঠারা বাংলা ও উড়িষ্যার নানা অঞ্চলে লুঠতরাজ ও আক্রমণ চালায় । এই আক্রমণ ‘ বর্গিহানা ’ নামে পরিচিত । বর্গিরা বাংলার নানা অঞ্চলে লুঠতরাজ ও আক্রমণ চালায় । নবাবের রাজধানী মুরশিদাবাদেও তারা আক্রমণ চালায় । ১৭৫১ খ্রিস্টাব্দে বাংলার নবাব ও বর্গিরা একটি সন্ধি করে । ওই সন্ধি অনুযায়ী বাংলার সীমানা ধরা হয় উড়িষ্যার জলেশ্বরের কাছে সুবর্ণরেখা নদীকে এবং সন্ধি অনুযায়ী ঠিক হয় যে ওই নদী মারাঠারা ভবিষ্যতে অতিক্রম করবে না । বর্গি হানার ফলে বাংলার পশ্চিমপ্রান্ত ছেড়ে অসংখ্য মানুষ পূর্ব , উত্তর ভারত ও কলকাতায় চলে যায় । বর্গিহানা আটকাতে কলকাতায় একটি খাল খোঁড়া হয়েছিল , তার নাম ছিল মারাঠা খাল বা মারাঠা ডিচ । 

৩. ফাররুখশিয়রের ফরমান কী ছিল ?    

উঃ । দিল্লির মুঘল সম্রাট ফাররুখশিয়র ১৭১৭ খ্রিস্টাব্দে একটি ফরমান জারি করেন । ওই ফরমান মতো ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে তিনি বাণিজ্যিক অধিকার দিয়েছিলেন । ব্রিটিশ কোম্পানি মাত্র ৩ হাজার টাকার বিনিময়ে বাংলায় বাণিজ্য করতে পারবে । কিন্তু এর জন্য কোম্পানিকে কোনো শুল্ক দিতে হবে না । কলকাতার কাছাকাছি প্রায় ৩৮ টি গ্রামের জমিদারি কেনার অধিকার ব্রিটিশ কোম্পানিকে দেওয়া হয় । কেউ কোম্পানির পথ্য চুরি করলে তাকে বাংলার নবাব শাস্তি দেবেন ও কোম্পানিকে ক্ষতিপুরণ | দেবেন । একইসলো কোম্পানির জাহাজের সঙ্গে অনুমতিপত্র থাকলে তারা অনায়াসে বাণি করতে পারবে । এমনকি নবাবের টাকশালও প্রয়োজন মতো ব্যবহারের অধিকার কোম্পানিকে দেওয়া হয় । 


৪. অস্বৰূপ হত্যার বিবরণ দাও । 

উঃ । ব্রিটিশ কোম্পানির কর্তাব্যক্তি হওলয়ে প্রচার করেছিলেন যে সিরাজ - উদ - দৌলা কলকাতা দখল করে ১৮ ফিট দীর্ঘ এবং ১৮ ফিট প্রসস্থ এইরূপ একটি ছোটো ঘরে ১৪৬ জন ব্রিটিশ নরনারীকে বন্দি করে রাখেন । এর ফলে অনেক বন্দি মারা যান । এই ঘটনাকে অন্ধকূপ হত্যা বলা হয় । যদিও এই ঘটনা আদৌ ঘটেছিল কিনা তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে । ঐতিহাসিক অক্ষয়কুমার মৈত্রেয় অন্ধকূপ হত্যাকে অতিরঞ্জিত বলে প্রমাণ করেছিলেন । ।


৫. দুর্বার মিরজাফর ও পলাশির লুণ্ঠন সম্পর্কে যা জানো লেখো । 

 উঃ । রবার্ট ক্লাইভ পলাশির যুদ্ধের পর মিরজাফরকে বাংলার নবাবরূপে নির্বাচিত করেন । মিরজাফরের সঙ্গে ওইসময় নবাবের একটা চুক্তি হয় । চুক্তি মোতাবেক , বাংলায় ব্রিটিশ কোম্পানির অবাধ বাণিজ্য চালু হয় , পাশাপাশি টাকা তৈরির অধিকারও তাদের দেওয়া হয় । পলাশির যুদ্ধের পর সিরাজের কলকাতা আক্রমণের অজুহাতে কোম্পানি ১ কোটি ৭৭ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ নেয় । পরে পলাশির যুদ্ধের পর ব্রিটিশ কোম্পানি সব মিলিয়ে নিরজাফরের থেকে ৩ কোটি টাকা আদায় করে । কোম্পানির তরফে এই অর্থ আত্মসাৎকে ' পলাশির লুন্ঠন ' বলা হয় । এর ফলে নবাবের কোশাগার নিঃস্ব হয়ে যায় । 


৬. বক্সারের যুদ্ধ ও দেওয়ানি লাভ সম্বন্ধে যা জানো লেখো । 

উঃ । ১৭৬৩ খ্রিস্টাব্দে কোম্পানির সঙ্গে মিরকাশিমের সংঘর্ষ শুরু হয় । কিন্তু কাটোয়া , গিরিয়া , মুর্শিদাবাদ , উদয়নালা ও মুঙ্গেরের যুদ্ধে ব্রিটিশ কোম্পানির কাছে মিরকাশিম হেরে যান এবং অযোধ্যায় পালিয়ে যান । সেখানে তাঁর সঙ্গে আযোধ্যার নবাব সুজা - উদ - দৌলা ও দিল্লির মুঘল সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলমের কোম্পানি বিরোধী শক্তি জোট গঠিত হয় । ১৭৬৪ খ্রিস্টাব্দে ওই যৌথ বাহিনীর সঙ্গে কোম্পানির যে যুদ্ধ হয় তা বক্সারের যুদ্ধ নামে পরিচিত । যুদ্ধে যৌথ বাহিনী হেরে যায় এবং মিরকাশিম ও সুজা - উদ - দৌলা পালিয়ে যান । ফলে কোম্পানির ক্ষমতা উত্তর ভারত পর্যন্ত বিস্তৃত হয় । দ্বিতীয় শাহ আলম কোম্পানির সঙ্গে রক্ষা করে ১৭৬৫ খ্রিস্টাব্দে বাংলা - বিহার - উড়িষ্যার দেওয়ানির অধিকার দিতে বাধ্য হন । 


৭. দ্বৈত শাসনব্যবস্থা কী ? 

উঃ । দেওয়ানির অধিকার ভারতবর্ষে কোম্পানির আর্থিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতাকে বিস্তৃত করেছিল । কোম্পানির দেওয়ানি লাভ বাংলায় নতুন রাজতন্ত্র কায়েম করেছিল । বাস্তবে বাংলায় দুজন শাসক তৈরি হয় । শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে একদিকে ছিলেন নবাব অন্যদিকে অর্থনৈতিক কর্তৃত্ব ও ক্ষমতা ছিল কোম্পানির । ফলে নবাবের ছিল অর্থনৈতিক ক্ষমতাহীন রাজনৈতিক দায়িত্ব এবং কোম্পানি পেয়েছিল দায়িত্বহীন অর্থনৈতিক ক্ষমতা । বাংলার এই শাসন ব্যবস্থাকেই দ্বৈত শাসন ব্যবস্থা বলা হয় । 


৮. ছিয়াত্তরের মন্বন্তর কী ? 

উঃ । ১৭৬৫ থেকে ১৭৭২ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত বাংলায় দ্বৈতশাসন চলেছিল । এই সময় ব্রিটিশ কোম্পানির একমাত্র লক্ষ্য ছিল যত বেশি সম্ভব রাজস্ব আদায় করা । ফলে ১৭৭০ খ্রিস্টাব্দে বাংলায় এক ভয়ানক দুর্ভিক্ষ দেখা দেয় । বঙ্গাব্দের হিসেবে ওই বছরটি ছিল ১১৭৬ বঙ্গাব্দ । তাই একে '৭৬ -এর মন্বন্তর বলে । 


৯. ফরাসি দ্বন্দ্ব সম্পর্কে কী জানা যায় ? 

উঃ । ভারতে উপনিবেশ গড়ে তোলা আর বাণিজ্যের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা নিয়ে ২০ বছর ধরে ব্রিটিশদের সঙ্গে ফরাসিদের স্বার্থের সংঘাত চলেছিল । ১৭৪৪ থেকে ১৭৬৩ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে দক্ষিণ ভারতে কর্ণাটক অঞ্চলে তিনটি ইঙ্গ ফরাসি যুদ্ধ ঘটে । ভারতে ফরাসিদের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র ছিল চন্দননগর ও পন্ডিচেরি । এই সময় পণ্ডিচেরির ফরাসি গভর্নর ছিলেন জেনারেল সুপ্নে । ১৭৩০ খ্রিস্টাব্দে বন্দিবাসের যুদ্ধে ফরাসিদের চূড়ান্ত পরাজয় ঘটে । এই পরাজয়ের ফলে ভারতে ব্রিটিশদের ক্ষমতা বিস্তারের পথে আর কোনো ইউরোপীয় প্রতিদ্বন্দীর বাধা রইল না ।



১০. মুর্শিদকুলি খানের নেতৃত্বে কীভাবে আঞ্চলিক শক্তি হিসেবে বাংলার উত্থান ঘটে ? 

উঃ । সুবা বাংলার রাজস্ব ঠিকভাবে আদায় করার জন্য ঔরঙ্গজেব মুর্শিদকুলি খানকে বাংলার দেওয়ান নিযুক্ত করেন । ১৭১৭ খ্রিস্টাব্দে সম্রাট ফাররুখশিয়ার মুর্শিদকুলিকে বাংলার নাজিম পদ দেন । এর ফলে । দেওয়ান ও নাজিম হিসেবে যৌথ দায়িত্ব পাওয়ায় সুবা বাংলায় মুর্শিদকুলির ক্ষমতা চূড়ান্ত হয়ে ওঠে । তাঁর নেতৃত্বে আঞ্চলিক শক্তি হিসেবে বাংলার উত্থান ঘটে । 


১১. মুর্শিদকুলির আমলে বাংলার ব্যবসাবাণিজ্যের পরিবেশ কীরূপ ছিল ? 

উঃ । মুর্শিদকুলির আমলে বাংলার রাজনৈতিক পরিবেশ ব্যবসাবাণিজ্যের পক্ষে অনুকূল ছিল । স্থলপথ ও সমুদ্রপথে নানান দ্রব্য সুবা বাংলা থেকে রফতানি করা হতো । হিন্দু , মুসলমান ও আর্মেনীয় বণিকরা এই ব্যবসায় প্রভাবশালী ছিলেন । এদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন হিন্দু ব্যবসায়ী উমিচাঁদ ও আর্মেনীয় ব্যবসায়ী খোজা ওয়াজিদ । এইসব ধনী ব্যবসায়ী ও মহাজনদের হাতে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতা ছিল । মুর্শিদাবাদের বিখ্যাত ব্যবসায়ী ছিলেন জগৎ শেঠ । সুবা বাংলার কোশাগার ও টাকশাল তাঁর পরোক্ষ নিয়ন্ত্রণেই চলত । শাসকেরা এদের সহায়তার ওপরই নির্ভর করতেন । মুর্শিদকুলির খান।


 ১২. আলিবর্দি খান বাংলায় কীভাবে শাসনকার্য পরিচালনা করতেন ? 

উঃ । ১৭২৭ খ্রিস্টাব্দে মুর্শিদকুলির মৃত্যুর পর তাঁর উত্তরাধিকার নিয়ে গোলযোগ বাঁধলে , সেই পরিস্থিতিতে জগৎ শেঠ ও কয়েকজন ক্ষমতাবান জমিদারের সহায়তায় সেনাপতি আলিবর্দি খান বাংলার শাসন ক্ষমতা দখল করেন । আলিবর্দির শাসনকালেই মুঘলদের হাত থেকে সুবা বাংলার অধিকার চলে যায় । তাঁর আমলে শাসনতান্ত্রিক কোনো খবরাখবর ও রাজস্ব দিল্লির মুঘল সম্রাটকে দেওয়া হতো না । মুঘল কর্তৃত্বকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করলেও আলিবর্দি বাংলা , বিহার ও উড়িষ্যায় একটি স্বশাসিত শাসনব্যবস্থা পরিচালনা করতেন । 


১৩. সাদাৎ খানের নেতৃত্বে কীভাবে অযোধ্যা একটি আঞ্চলিক শক্তিতে পরিণত হয় ? 

উঃ । ১৭২২ খ্রিস্টাব্দে সাদাৎ খানের নেতৃত্বে অযোধ্যা একটি স্বশাসিত আঞ্চলিক শক্তিরূপে গড়ে ওঠে । মুঘল প্রশাসক হিসেবে সাদাৎ খান অযোধ্যার স্থানীয় রাজা ও গোষ্ঠীর নেতাদের বিদ্রোহের মোকাবিলা করেন । সাদাৎ খান মুঘল সম্রাটকে দিয়ে নিজের জামাই সফদর জংকে অযোধ্যার প্রশাসক নিযুক্ত করান । পাশাপাশি অযোধ্যার দেওয়ানের দফতরকে তিনি দিল্লির নিয়ন্ত্রণ থেকে সরিয়ে ফেলেন । অযোধ্যার রাজস্ব বিষয়ক কোনো খবরই মুঘল কোশাগারে আর পাঠানো হতো না । জায়গির ব্যবস্থাতেও সাদাৎ খান আঞ্চলিক অনভিজ্ঞ লোকেদের ও অর্ন্তভুক্ত করেন । ফলে সাদাৎ খানের সমর্থক এক নতুন শাসকগোষ্ঠী তৈরি হয় অযোধ্যায় । এভাবেই তাঁর নেতৃত্বে অযোধ্যা একটি আঞ্চলিক শক্তিতে পরিণত হয় । 


১৪. ব্রিটিশ কোম্পানি কীভাবে দেওয়ানির অধিকার লাভ করে ? 

উঃ । বক্সারের যুদ্ধে ব্রিটিশ কোম্পানি জিতে যাওয়ার সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ ফলাফল ছিল কোম্পানির দেওয়ানি লাভ । ১৭৬৫ খ্রিস্টাব্দে ক্লাইভ বাংলায় পুনরায় ফিরে আসেন এবং বক্সারের জয়ের সুবিধাকে ধীরে ধীরে বিস্তৃত করতে উদ্যোগী হন । ফলে বাংলা থেকে দিল্লি পর্যন্ত ক্ষমতা দখল না করে মুঘল সম্রাটের প্রতি কোম্পানি মৌখিক আনুগত্য জানায় । সেই অনুযায়ী ১৭৬৫ খ্রিস্টাব্দে এলাহাবাদে ব্রিটিশ কোম্পানি মুঘল সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলম ও সুজা - উদ - দৌলার সঙ্গে এক চুক্তি করে । ঐ চুক্তি অনুসারে কোম্পানিকে ৫০ লক্ষ টাকা দিয়ে সুজা - উদ - দৌলা অযোধ্যার শাসনভার ফেরত পান । বাদশাহ শাহ আলম দিল্লির অধিকার ফিরে পাওয়ার বদলে একটি ফরমান জারি করেন । সেই ফরমান অনুযায়ী বাংলা , বিহার ও উড়িষ্যার দেওয়ানির অধিকার ব্রিটিশ কোম্পানিকে দেওয়া হয় এবং এর বদলে কোম্পানি শাহ আলমকে বার্ষিক ২৬ লক্ষ টাকা দেওয়ার অঙ্গীকার করে । 


১৫. স্বত্ববিলোপ নীতি প্রয়োগের মাধ্যমে কোম্পানি কীভাবে শাসন ক্ষমতা বিস্তার করে ?

 উ: স্বত্ববিলোপ নীতির প্রয়োগকর্তা ছিলেন লর্ড ডালহৌসি । এই নীতি অনুযায়ী যেসব ভারতীয় শাসকদের কোনো পুরুষ উত্তরাধিকারী থাকত না তাদের শাসন এলাকা কোম্পানির হস্তগত হয়ে যেত । এই নীতির প্রয়োগ দ্বারা ইংরেজ কোম্পানির আগ্রাসী রূপ প্রকট হয়েছিল । এই নীতির দ্বারা লর্ড ডালহৌসি সাতারা , সম্বলপুর , ঝাঁসি প্রভৃতি অঞ্চল দখল করে নেন । কোম্পানির সেনাবাহিনির খরচ মেটানোর জন্য ডালহৌসি হায়দরাবাদের বেরার প্রদেশ দখল করেন । অপশাসনের অভিযোগে অযোধ্যার বাকি অংশ তিনি কোম্পানির দখলে আনেন । এইভাবে ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে লর্ড ডালহৌসির নেতৃত্বে ভারতীয় উপমহাদেশের প্রায় ষাট ভাগেরও বেশি অঞ্চল ব্রিটিশ কোম্পানির অধিকারভুক্ত হয় । 


১৬. অধীনতামূলক মিত্ৰতা নীতি কী ? ব্রিটিশ সরকার কীভাবে এর প্রয়োগ ঘটাতেন ?

 উঃ । লর্ড ওয়েলেসলি অধীনতামূলক মিত্রতা নীতির প্রবর্তক ছিলেন । এই নীতি ছিল ব্রিটিশ কোম্পানীর আগ্রাসী নীতির অন্যতম রূপ । অধীনতামূলক মিত্ৰতা নীতি প্রয়োগ করে লর্ড ওয়েলেসলি দেশীয় বিভিন্ন রাজ্যের আভ্যন্তরীণ বিষয়ে কোম্পানির নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেন । বিভিন্ন আঞ্চলিক শক্তি স্বেচ্ছায় বা কখনও যুদ্ধে হেরে যাওয়ার ঐ নীতির আগ্রাসনের শিকার হন । ভারতের ওই আঞ্চলিক শক্তিগুলির বিবাদকের লর্ড ওয়েলেসলি ব্রিটিশ শাসনের পক্ষে বিপদ হিসেবে তুলে ধরতেন । তারপর সরাসরি অথবা যুদ্ধের মাধ্যমে দেশীয় শক্তিগুলিকে অধীনতামূলক মিত্রতা নীতি মেনে নিতে বাধ্য করতেন ।

একদিকে হায়দরাবাদের নিজাম স্বেচ্ছায় অধীনতামূলক মিত্রতা নীতি মেনে নিয়েছিলেন , অপরদিকে মহীশূরের শাসক টিপু সুলতান এর বিরোধিতা করে কোম্পানির সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েন । এছাড়া মারাঠা , শিখ প্রভৃতি অন্যান্য রাজশক্তি নানাভাবে ঐ আগ্রাসী নীতির মুখে পড়েছিল । 


 ❐ রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তরঃ

১. বাংলায় ইউরোপীয় বণিকদের সঙ্গে আলিবর্দি খানের সম্পর্ক কীরূপ ছিল ?

উঃ । আলিবর্দি খান বাংলায় ইউরোপীয় বণিকদের বাণিজ্য বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছিলেন । তিনি মনে করতেন এর ফলে বাংলার অর্থনীতি সমৃদ্ধ হবে । তবে আলিবর্দি খেয়াল রাখতেন যে ঐ বণিকরা যাতে বাংলায় কেবল ব্যবসায়ী হিসেবেই থাকে , তাই তাদের রাজনৈতিক ও সামরিক ক্ষমতা কোনোভাবেই যাতে না বাড়ে সেদিকে তাঁর দৃষ্টি ছিল । তিনি সজাগ থাকতেন যাতে কোনো বণিক কোম্পানি নবাবের সার্বভৌম ক্ষমতার বিরোধী না হয়ে ওঠে । পাশাপাশি বাংলার অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির স্বার্থে ব্রিটিশ বণিকদের যাতে কোনো জুলুমের শিকার না হতে হয় তার খেয়ালও নবাব রাখতেন । তিনি চাইতেন না বিদেশি বণিকেরা বাংলা থেকে চলে যাক ।

 আলিবর্দি খান অপরদিকে বণিক কোম্পানিগুলি যাতে নিজেদের মধ্যে বিবাদ না করে সেদিকে আলিবর্দির কড়া নজর ছিল । তাই ব্রিটিশ ও ফরাসি দুই বণিক কোম্পানিকেই বাংলায় দুর্গ তৈরি করতে তিনি । বাধা দিয়েছিলেন । ১৭৪৪ খ্রিস্টাব্দে মারাঠা আক্রমণের সময় আলিবর্দি ব্রিটিশ কোম্পানির থেকে ৩০ লক্ষ টাকা চান এবং তা দিতে কোম্পানি অস্বীকার করায় নবাবের সঙ্গে কোম্পানির সম্পর্ক খারাপ হয় । পরে ১৭৪৮ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ কোম্পানি আর্মেনিয় বণিকদের জাহাজ আটকে রাখায় কোম্পানির সঙ্গে আলিবর্দির সংঘাত বাধে ।


 ২. সিরাজ - উদ - দৌলা ও ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বিরোধ বাঁধে কেন ? 

উঃ । ১৭৫৬ খ্রিস্টাব্দে আলিবর্দির মৃত্যুর পর তাঁর দৌহিত্র সিরাজ - উদ - দৌলা বাংলার নবাব হন । কিন্তু দ্রুতই দরবারের বিভিন্ন গোষ্ঠী ও ব্রিটিশ কোম্পানির সঙ্গে সিরাজের সংঘাত বাধে । সিরাজের ক্ষমতালাভ অনেককেই অসন্তুষ্ট করেছিল । সিরাজের আত্মীয়দের অনেকেই এবং আলিবর্দির সেনাপতি মিরজাফরও সিরাজের বিপক্ষে ছিলেন । পাশাপাশি ব্রিটিশ ইস্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানির সঙ্গে সিরাজের সম্পর্ক গোড়া থেকে ভালো ছিলনা । 

( ১ ) সিরাজ সিংহাসনে বসার পর ইংরেজ কোম্পানি নবাবকে নজরানা বা উপঢৌকন দেওয়ার প্রথা ভঙ্গ করায় নবাব ক্ষুদ্ধ হন । 

( ২ ) সপ্তবর্ষের যুদ্ধের সূত্র ধরে বাংলায় ইংরেজ ও ফরাসি কোম্পানি কলকাতা ও চন্দননগরে দুর্গনির্মাণে সচেষ্ট হলে সিরাজ তা করতে নিষেধ করেন । ফরাসিরা তা শুনলেও ইংরেজরা কলকাতায় তাদের দুর্গনির্মাণ চালিয়ে যায় । এতে নবাব ও কোম্পানির মধ্যে তিক্ততার সম্পর্ক তৈরি হয় ।

 ( ৩ ) ফরমান প্রাপ্ত ইংরেজ কোম্পানি নিঃশুল্ক বাণিজ্যের পাশপাশি দস্তকের অপব্যবহার করায় নবাব ক্ষুদ্ধ হন এবং তাদের সম্পর্কের অবনতি ঘটে । 

( ৪ ) দুর্নীতিগ্রস্ত ঢাকার দেওয়ান রাজবল্লভকে নবাব মুর্শিদাবাদে হিসেব প্রদানের জন্য ডেকে পাঠালে , ভীত রাজবল্লভ প্রচুর অর্থ সহ পুত্র কৃষ্ণদাসকে কলকাতায় কোম্পানির আশ্রয়ে পাঠিয়ে দেন ।

 ক্ষুদ্ধ নবাব কৃষ্ণদাসকে ফেরত চাইলে ইংরেজ আধিকারিক রজার ড্রেক তা অস্বীকার করেন । শেষ পর্যন্ত নবাব ১৭৫৬ খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় ইংরেজদের কাশিমবাজার কুঠি আক্রমণ করেন এবং কলকাতা দখল করে তার নাম রাখেন আলিনগর । রজার ড্রেক ও তার সহযোগীরা ফলতায় পালিয়ে যান । কিন্তু দ্রুতই রবার্ট ক্লাইভের নেতৃত্বে ব্রিটিশ বাহিনী ১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা দখল করেন । ফলে নবাব ও ব্রিটিশ আম্পানি আলিনগরের সন্ধি করেন । কোম্পানি তার বাণিজ্যিক অধিকার ফেরত পায় নবাব ব্রিটিশ কোম্পানিকে ক্ষতিপূরণ নেন । ব্রিটিশ দূর্গ নির্মাণ শুরু করে এমনকি নিজেদের সিক্কা তৈরির ক্ষমতা পায় । বাস্তবে এই সন্ধি ব্রিটিশ কোম্পানির পক্ষে সুবিধাজনক হয়ে ওঠে । ক্রমেই ব্রিটিশ কোম্পানির সিরাজ বিরোধী অবস্থান স্পষ্ট হয়ে ওঠে । অবশেষে ১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দে পলাশির যুদ্ধে ব্রিটিশ বাহিনী নবাব বাহিনীকে পরাজিত করে ।


৩. মিরকাশিম ও ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির মধ্যে বিবাদ শুরু হয় কেন ? 

উঃ । ব্রিটিশ কোম্পানির সহায়তায় নবাবি পদ পেয়ে প্রায় ২৯ লক্ষ টাকার সম্পদ ও বর্ধমান , মেদিনীপুর এবং চট্টগ্রামের জমিদারির অধিকারও মিরকাশিম ব্রিটিশ কোম্পানিকে দিয়েছিলেন । ফলে প্রথম দিকে ব্রিটিশ কোম্পানি মিরকাশিমকে নিজেদের লোক বলেই ভেবেছিলেন । কিন্তু তাদের সেই ধারণা ভুল প্রমাণিত হয় । নিজেকে স্বাধীনচেতা নবাব রূপে প্রমাণিত করতে মিরকাশিম মুর্শিদাবাদের বদলে মুঙ্গেরকে বাংলার রাজধানী হিসেবে বেছে নেন । পাশাপাশি নবাবের পুরোনো সৈন্যবাহিনীর বদলে তিনি আধুনিক সেনাবাহিনীর গড়ে তোলার উদ্যোগ নেন । ক্ষমতাবান জগৎ শেঠদের সঙ্গেও মিরকাশিম দূরত্ব বজায় রাখেন । গোড়ায় মিরকাশিমের এই উদ্যোগগুলি নিয়ে ব্রিটিশ কোম্পানি বিশেষ ভাবিত ছিল না । ক্রমে ব্রিটিশ কোম্পানির কর্মচারীদের ব্যক্তিগত বাণিজ্যকে কেন্দ্র করে কোম্পানির সঙ্গে মিরকাশিমের বিবাদ শুরু হয় । 

১৭৬৩ খ্রিস্টাব্দে মিরকাশিমের সঙ্গে ব্রিটিশ কোম্পানির সরাসরি সংঘাত শুরু হয় । কাটোয়া , মুর্শিদাবাদ , গিরিয়া , উদয়নালা ও মুঙ্গেরের যুদ্ধে মিরকাশিম পরাজিত হন । পরে অযোধ্যার শাসক সুজা - উদ - দৌলা ও মুঘল সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলমের সঙ্গে জোট রেধে ১৭৬৪ খ্রিস্টাব্দে মিরকাশিম ব্রিটিশের সঙ্গে যুদ্ধ করেন । এই যুদ্ধ বক্সারের যুদ্ধ নামে পরিচিত । কোম্পানির বাহিনী এই যুদ্ধে জিতে যায় । মিরকাশিম পালিয়ে যান । 


৪. দক্ষিণ ভারতে ব্রিটিশ শক্তি কীভাবে ক্ষমতা বিস্তার করে ? 

উঃ । অষ্টাদশ শতকে হায়দর আলি ও টিপু সুলতানের নেতৃত্বে মহীশূর রাজ্য দক্ষিণ ভারতের অন্যতম প্রধান শক্তি হয়ে উঠেছিল । মহীশূরের আঞ্চলিক বিস্তার ও অর্থনৈতিক স্বার্থপূরণ করতে গিয়ে বিভিন্ন শক্তির সঙ্গে হায়দর ও টিপুর সংঘাত বাধে । সুচতুর ব্রিটিশ কোম্পানি নিজেদের বাণিজ্যিক স্বার্থরক্ষা ও ক্ষমতা বিস্তার করতে মহীশুরের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক লড়াইয়ে উদ্যোগী হয় । ব্রিটিশ কোম্পানি ও মহীশুরের মধ্যে ১৭৬৭ থেকে ১৭৯৯ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে চারটি ইঙ্গ মহীশূর যুদ্ধ হয় ।

 ১৭৯৯ খ্রিস্টাব্দে চতুর্থ ইঙ্গ মহীশূর যুদ্ধের মাধ্যমে লর্ড ওয়েলেসলি মহীশূর রাজ্যের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত আঘাত হানেন । নিজের রাজধানী শ্রীরঙ্গপত্তনম রক্ষা করতে গিয়ে বীরের মতো যুদ্ধ করে টিপু সুলতান প্রাণ দেন । এর পরই অধীনতামূলক মিত্ৰতা নীতি প্রয়োগ করে ব্রিটিশ কোম্পানি মহীশূরের সমস্ত রাজনৈতিক অধিকার কেড়ে নেন । কোম্পানীর সেনাবাহিনী মহীশূরে মোতায়েন করা হয় । মহীশূর রাজ্যের বেশ কিছু অঞ্চলে সরাসরি কোম্পানির শাসন প্রতিষ্ঠিত হয় । 


৫. অযোধ্যা ও পাঞ্জাব কীভাবে ব্রিটিশ কোম্পানির অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয় ? 

উঃ । উত্তর ভারতে অযোধ্যা কোম্পানির আগ্রাসনের মুখোমুখি হয় । ১৭৭৩ খ্রিস্টাব্দে অযোধ্যায় কোম্পানির প্রতিনিধি নিয়োগ করা হয় এবং স্থায়ী সেনাবাহিনী অযোধ্যায় মোতায়েন করা হয় । এর পাশাপাশি অযোধ্যার উত্তরাধিকারী নিয়ে গোলযোগ তৈরি হওয়ায় সেই পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে অযোধ্যার প্রশাসনে হস্তক্ষেপ করে ব্রিটিশ কোম্পানি বিভিন্ন অঞ্চল দখল করে নেয় । পাঞ্জাবে শিখদের মধ্যেও উত্তরাধিকার নিয়ে গোলযোগ বাধে । এর ফলে উত্তর ভারতের বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হয় । ফলে অশান্ত পরিস্থিতিকে শান্ত করার দোহাই দিয়ে ব্রিটিশ কোম্পানি পাঞ্জাবে হস্তক্ষেপ করতে থাকে । ১৮৪৫ খ্রিস্টাব্দে প্রথম ইঙ্গ শিখ যুদ্ধে শিখ বাহিনী হেরে যায় । ফলস্বরূপ ১৮৪৬ খ্রিস্টাব্দে লাহোরের চুক্তি হয় এবং সেই অনুযায়ী জলন্ধর দোয়াবে ব্রিটিশ কতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয় এবং শিখ দরবারে ব্রিটিশ রেসিডেন্ট নিযুক্ত করা হয় ।

No comments:

Post a Comment