তৃতীয় অধ্যায়
প্রশ্ন উত্তর
চতুর্থ অধ্যায় প্রশ্ন উত্তর
👉 ( চতুর্থ অধ্যায় )
❐ অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর :
১.পাঁচশালা ব্যবস্থা কাকে বলে ?
উঃ । ৫ বছরের জন্য দেওয়া জমি বন্দোবস্তকে পাঁচশালা ব্যবস্থা বলা হয় ।
২. দর্শশালা ব্যবস্থা কী ?
উঃ । দশ বছরের জন্য দেওয়া জমি বন্দোবস্তুকে দশশালা বলা হয় । ১৭৯০ সালে এই ব্যবস্থা চালু হয় ।
৩. মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সির কটি প্রশাসনিক কেন্দ্র ছিল ?
উঃ । দুটি প্রশাসনিক কেন্দ্র ছিল । গ্রীষ্মকালে ওটকামুন্দ ও শীতকালে মাদ্রাজ ।
8. কে নদীপথ জরিপ করেন ? তিনি কতগুলি মানচিত্র তৈরি করেন ?
উঃ । জেমস্ রেনেল নদীপথ জরিপ করেন । তিনি ১৬ টি মানচিত্র তৈরি করেন ।
৫. বাংলা প্রেসিডেন্সিকে এক সময়ে কী বলা হতো ?
উঃ । বাংলা প্রেসিডেন্সিকে এক সময় ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গ প্রেসিডেন্সিও বলা হতো ।
৬. কবে কলকাতায় সুপ্রিম কোর্ট তৈরি হয় ?
উঃ । ১৭৭৪ খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় সুপ্রিম কোর্ট তৈরি হয় ।
৭. সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি কে ছিলেন ?
উঃ । সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ছিলেন স্যার এলিজা ইম্পে ।
৮. কাউন্সিল অভ এডুকেশন কবে তৈরি হয় ?
উঃ । ১৮৪৩ খ্রিস্টাব্দে কাউন্সিল অভ এডুকেশন তৈরি হয় ।
৯. চার্লস উড কে ছিলেন ?
উঃ । চার্লস উড ছিলেন বোর্ড অভ কন্ট্রোলের সভাপতি ।
১০. কোম্পানি কবে বাংলার শাসনভার গ্রহণ করেন ?
উঃ । ১৭৭২ খ্রিস্টাব্দে কোম্পানি দ্বৈত শাসনব্যবস্থা তুলে দিয়ে সরাসরি বাংলার শাসনভার গ্রহণ করেন ।
১১. কে , কবে ইজারাদারি ব্যবস্থা চালু করেন ?
উঃ । ওয়ারেন হেস্টিংস ১৭৭২ খ্রিস্টাব্দে ইজারাদারি ব্যবস্থা চালু করেন ।
১২. কে , কবে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত চালু করেন ?
উঃ । লর্ড কর্নওয়ালিস ১৭৯৩ খ্রিস্টাব্দে রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত চালু করেন ।
১৩. কৰে ফোর্ট উইলিয়াম তৈরি হয় ?
উঃ । ফোর্ট উইলিয়াম ১৮০০ খ্রিস্টাব্দে তৈরি হয় ।
১৪. কে , কবে এশিয়াটিক সোসাইটি প্রতিষ্ঠা করেন ?
উঃ । উইলিয়াম জোনস , ১৭৮৪ সালে কলকাতায় এশিয়াটিক সোসাইটি প্রতিষ্ঠা করেন ।
১৫. কে , কার নেতৃত্বে ঠগি দমনের জন্য বিশেষ বিভাগ তৈরি করেন ?
উঃ । লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্ক কর্নেল স্লিম্যানের নেতৃত্বে ঠগি দমনের জন্য এক বিশেষ বিভাগ তৈরি করেন ।
১৬. কত সালে দারোগা ব্যবস্থার বিলোপ করা হয় ?
উঃ । ১৮১২ খ্রিস্টাব্দে পাকাপাকিভাবে দারোগা ব্যবস্থার বিলোপ করা হয় ।
১৭. কে কবে বেনারসে হিন্দু কলেজের প্রতিষ্ঠা করেন ?
উঃ । ১৭৯১ খ্রিস্টাব্দে জোনাথন ডানকান বেনারসে হিন্দু কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন ।
১৮. কার নেতৃত্বে এবং কবে কলকাতায় সংস্কৃত কলেজের পঠন পাঠন শুরু হয় ?
উঃ । পণ্ডিত হেম্যান হোরাস উইলসন - এর নেতৃত্বে ১৮২৪ খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় সংস্কৃত কলেজে পঠন পাঠন শুরু হয় ।
১৯. কবে কলকাতায় হিন্দু কলেজ তৈরি হয় ?
উঃ । ১৮১৭ খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় হিন্দু কলেজ তৈরি হয় ।
২০. নারীশিক্ষার বিস্তারে কে কোন স্কুল তৈরি করেন ?
উঃ । নারীশিক্ষার বিস্তারের জন্য বীটন সাহেব ( বেথুন ) বেথুন স্কুল তৈরি করেন ।
২১. কে , কৰে কলকাতায় এসে মিশনারি স্কুল তৈরির উদ্যোগ নিয়েছিলেন ?
উঃ । ১৮২৯ খ্রিস্টাব্দে স্কটিশ মিশনারি সোসাইটির সদস্য আলেকজান্ডার ডাফ কলকাতায় এসে মিশনারি স্কুল তৈরির উদ্যোগ নিয়েছিলেন ।
২২. বোম্বাই প্রেসিডেন্সির মূল গোড়াপত্তন কোথায় হয়েছিল ?
উঃ । সুরাটে ।
২৩. রাজ রামমোহন কোন কলেজের কাজকর্মের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন ?
উঃ । রাজা রামমোহন রায় হিন্দু কলেজের কাজকর্মের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন ।
২৪. ভারতে ইংরেজি শিক্ষা প্রসারে কার ভূমিকা প্রধান ছিল ?
উঃ । লর্ড ব্যাবিংটন মেকলের ভূমিকা প্রধান ছিল ।
২৫. কলকাতা মাদ্রাসা কবে প্রতিষ্ঠিত হয় ?
উঃ । ১৭৮১ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠিত হয় ।
❐ সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর :
১. মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সির গোড়াপত্তন সম্পর্কে লেখো ।
উঃ । মসুলিপট্রনম ও সুরাটকে ঘাঁটি করে ব্রিটিশ কোম্পানির বাণিজ্যিক কার্যকলাপ চলে ১৬১৯ ও ১৬২২ খ্রিস্টাব্দে । ১৬৩৯ খ্রিস্টাব্দে কোম্পানি মাদ্রাজ একটি ঘাঁটি বানায় এবং মাদ্রাজপট্টনম গ্রামে সেন্ট জর্জ দুর্গ বানায় । ক্রমে সেন্ট জর্জ ও মাদ্রাজ কেন্দ্র করেই মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সি বা সেন্ট জর্জ দুর্গ প্রেসিডেন্সি গড়ে ওঠে । দক্ষিণ ভারতের এক বিরাট অংশ এই প্রেসিডেন্সি অন্তর্গত ছিল । আজকের তামিলনাড়ু , কেরালা ও অন্ধ্রপ্রদেশের বেশ কিছু অঞ্চলের পাশাপাশি কর্ণটিক ও দক্ষিণ উড়িষ্যার বেশ কিছু অঞ্চল মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সির অন্তর্ভূক্ত ছিল । এই প্রেসিডেন্সির গ্রীষ্মকালীন প্রশাসনিক কেন্দ্র ছিল ওটকামুন্দ ও শীতকালীন কেন্দ্র ছিল মাদ্রাজ ।
২. বাংলা প্রেসিডেন্সি কীভাবে গড়ে উঠেছিল ?
উঃ । ১৭৬৫ খ্রিস্টাব্দে কোম্পানি যখন বাংলা , বিহার ও উড়িষ্যার দেওয়ানি পায় , তখন থেকেই বাংলার ওপর কোম্পানির কর্তৃত্ব গড়ে উঠতে থাকে । ১৭৭২ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ কোম্পানি নিজামতের অধিকার পায় । এইভাবে দেওয়ানি ও নিজামত এই দুই অধিকার পেয়ে বাংলায় ব্রিটিশ কোম্পানির অধিকার চূড়ান্ত হয় এবং বাংলাতেও প্রেসিডেন্সি ব্যবস্থা গড়ে ওঠে । বাংলা , বিহার , উড়িষ্যা , আসাম ও ত্রিপুরা অঞ্চল মিলে ছিল বাংলা প্রেসিডেন্সি । পাঞ্জাব , উত্তর ও মধ্য ভারতের অঞ্চলগুলি এবং গঙ্গা - ব্রহ্মপুত্র অববাহিকার অঞ্চলও বাংলা প্রেসিডেন্সির অন্তর্গত ছিল ।
৩. বোম্বাই প্রেসিডেন্সির গোড়াপত্তন কীভাবে হয়েছিল ?
উঃ । বোম্বাই প্রেসিডেন্সির মূল গোড়াপত্তন হয়েছিল সুরাটে ব্রিটিশ কোম্পানির ঘাঁটি বানানোকে কেন্দ্র করে । ধীরে ধীরে পশ্চিম ও মধ্যভারত এবং আরব সাগরের তীরবর্তী অঞ্চলগুলিকে নিয়ে বোম্বাই প্রেসিডেন্সি তৈরি হয় । সিন্ধু প্রদেশও এর অন্তর্গত ছিল । প্রথম দিকে এই প্রেসিডেন্সিটি পশ্চিম প্রেসিডেন্সি নামে পরিচিত ছিল । ক্রমে বাণিজ্যকেন্দ্র হিসেবে সুরাটের অবনতি হতে থাকে পাশাপাশি বোম্বাই উন্নত হতে থাকে এবং ১৬৮৭ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ বোম্বাইকে ঘিরেই ভারতে ব্রিটিশ কোম্পানির কার্যকলাপ বিস্তৃত হতে থাকে ।
৪. ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষার বিস্তারের বিবরণ দাও ।
উঃ । ১৮৩৪ খ্রিস্টাব্দের পর থেকে ভারতে ইংরেজি ভাষা নির্ভর পাশ্চাত্য শিক্ষার দ্রুত বিস্তার ঘটতে থাকে । ১৮৩৯ খ্রিস্টাব্দে একটি প্রতিবেদনে বলা হয় প্রশাসন ইংরেজি শিক্ষার বিস্তারে জোর দেবে । তবে পাশাপাশি অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি বছরে সরকারি অনুদান পাবে । ১৮৪৪ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ সরকারি চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে ইংরেজি ভাষাজ্ঞানকে আবশ্যক বলে ঘোষণা করা হয় । এই নীতির পিছনে লর্ড মেকলের শিক্ষা সংক্রান্ত প্রতিবেদনটি ছিল গুরুত্বপূর্ণ । ঊনবিংশ শতকের চারের ও পাঁচের দশকে ক্রমেই সরকারি উদ্যোগে শিক্ষাবিস্তার হতে থাকে । ১৮৪৩ খ্রিস্টাব্দে বাংলায় কাউন্সিল অভ এডুকেশন । তৈরি হয় । ক্রমেই কাউন্সিল - নিয়ন্ত্রিত বিদ্যালয় ও তার ছাত্রসংখ্যা বাড়তে থাকে ।
৫. উডের ডেচপ্যাচ সম্বন্ধে কী জানো লেখো ।
উঃ । ১৮৫৪ খ্রিস্টাব্দের জুলাই মাসে বোর্ড অভ কন্ট্রোলের সভাপতি চার্লস উডের নেতৃত্বে শিক্ষা সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন পেশ করা হয় । তাকে উডের প্রতিবেদন বলা হয় । উডের নেতৃত্বে শিক্ষার ব্যাপারে এক সুগঠিত শিক্ষা কাঠামো গড়ে তোলার কথা বলা হয় । এই কাঠামো হবে প্রাথমিক থেকে বিদ্যালয় স্তর পর্যন্ত । ইংরেজি ও ভারতীয় দুই ভাষার চর্চার কথা বলা হয়েছে । ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে তিনটি প্রেসিডেন্সিতে তিনটি বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি করা হয় । উচ্চ বিদ্যালয়ের সংখ্যাও বাড়ানো হয় ।
৬. উইলিয়াম কেরি কে ছিলেন ? শিক্ষাচর্চায় তাঁর অবদান লেখো ।
উঃ । ১৮০০ খ্রিস্টাব্দে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের পাশাপাশি শ্রীরামপুরে ব্যাপটিস্ট মিশন স্থাপন করা হয় । উইলিয়াম কেরি ছিলেন শ্রীরামপুর মিশনারিদের মধ্যে সব থেকে উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব । তিনি ভারতীয় মহাকাব্যগুলি ইংরেজি ভাষায় অনুবাদ করেন । এছাড়া তিনি বাইবেলের একটি অংশকে বিভিন্ন ভারতীয় ভাষায় অনুবাদ করেন । ১৭৭৮ খ্রিস্টাব্দে হালেদের লেখা ব্যাকরণ বিষয়ক বইটিকেও সম্পাদনা করে প্রকাশ । করেছিলেন উইলিয়াম কেরি ।
৭. মেকলের প্রতিবেদন বলতে কী বোঝ ?
উঃ । ১৮৩৫ খ্রিস্টাব্দের ২ ফেব্রুয়ারি , জেনারেল কমিটি অভ পাবলিক ইনস্ট্রাকশনের সভাপতি টমাস ব্যাবিংটন মেকলে ভারতবর্ষে শিক্ষার প্রসঙ্গে একটি প্রতিবেদন বা মিনিটস পেশ করেন । তাতে বলা হয় ভারতবর্ষে ইংরেজি শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণি তৈরি করা ঔপনিবেশিকদের প্রধান উদ্দেশ্য হওয়া উচিত । তাই যে সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ভারতীয় ভাষায় শিক্ষার চর্চা করবে তারা কোনো সরকারি অনুদান পাবে না । বাস্তবে মেকলের ধারণা ছিল ব্রিটিশরাই জাতিগতভাবে উন্নত এবং তাদের হাত ধরেই ভারতে আধুনিকতা আসবে । তাই তিনি দেশীয় ভাষাচর্চাকে হেয় করেছিলেন ।
৮. ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষার বিস্তারে খ্রিস্টান মিশনারিদের ভূমিকা আলোচনা করো । উঃ । ১৮০০ খ্রিস্টাব্দে উইলিয়াম কেরি শ্রীরামপুরে ব্যাপটিস্ট মিশন তৈরি করেন । শ্রীরামপুরের মিশনারিয়া ব্রিটিশ কোম্পানির তরফে শিক্ষাবিস্তারের বিভিন্ন উদ্যোগে সামিল হন । নিজেদের মুদ্রনযন্ত্র বসিয়ে তাঁরা ছাপাখানা চালানোর কাজে ব্রতী হন এবং বাংলা ভাষায় বিভিন্ন লেখা ছাপাতে শুরু করেন । উইলিয়ম কেরি বাইবেলের একটি অংশকে বিভিন্ন ভারতীয় ভাষায় অনুবাদ করেন । 1 ১৮২৯ খ্রিস্টাব্দে স্কটিশ মিশনারি সোসাইটির সদস্য আলেকজান্ডার ডাফ কলকাতায় এসে অনেকগুলি মিশনারি স্কুল তৈরির উদ্যোগ নেন এবং ইংরেজি শিক্ষার প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন । ১৮৩০ খ্রিস্টাব্দে তাঁর প্রতিষ্ঠিত জেনারেল অ্যাসেম্বলি ইনস্টিটিউশন ছিল বিখ্যাত ।
৯. হিন্দু কলেজ প্রতিষ্ঠা সম্পর্কে কী জানা যায় ?
উঃ । সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি স্যার এডওয়ার্ড হাইড ইস্ট , ডেভিড হেয়ার , রাধাকান্ত দেব প্রমুখের উদ্যোগে ১৮১৭ খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় হিন্দু কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয় । এছাড়াও কলকাতা শহরের শিক্ষিত ও ধনী বেশ কিছু ব্যক্তিবর্গ হিন্দু কলেজ পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন । রাজা রামমোহন রায়ও হিন্দু কলেজের প্রতিষ্ঠার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন । এই বিদ্যালয় খুব দ্রুতই খ্যাতির শীর্ষে পৌঁছায় ।
১০. লর্ড কর্নওয়ালিশ আমলাতন্ত্রকে সংগঠিত করতে কী কী ব্যবস্থা নিয়েছিলেন ?
উঃ । অসামরিক শাসনব্যবস্থার ক্ষেত্রে ঔপনিবেশিক শাসনের অন্যতম প্রধান হাতিয়ার ছিল আমলাতন্ত্র । আমলাতন্ত্রকে সংগঠিত করার উদ্দেশ্যে লর্ড কর্নওয়ালিশ সিভিল সার্ভিস বা অসামরিক প্রশাসন ব্যবস্থা চালু করেন । ভারতের ব্রিটিশ প্রশাসনকে দুর্নীতিমুক্ত করাই ছিল কর্নওয়ালিসের উদ্দেশ্য । তাঁর ধারণা ছিল উপযুক্ত বেতন না পাওয়ার ফলেই কোম্পানির কর্মচারীরা সততার সঙ্গে কাজ করে না । ফলে কর্নওয়ালিস আইন করে কোম্পানি প্রশাসনের আধিকারিকদের ব্যাক্তিগত ব্যবসা ও কোনোরকম উপহার নেওয়া বন্ধ করে দেন । পাশাপাশি চাকরির মেয়াদের ভিত্তিতে সিভিল সার্ভেন্টদের পদোন্নতির ব্যবস্থা চালু করেন এবং অবশ্যই কর্মচারীদের বেতনও বাড়িয়ে দেন ।
১১. পিট প্রণীত ভারত শাসন আইনে কী বলা হয়েছে ? -
উঃ । ১৭৮৪ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটেনের নতুন প্রধানমন্ত্রী উইলিয়াম পিট একটি নতুন আইন তৈরি করেন , একে বলা হয় পিটের ভারত শাসন আইন । এই আইন অনুসারে একটি বোর্ড অভ কন্ট্রোল তৈরি করা হয় । সেই বোর্ডকে কোম্পানির সামরিক ও অসামরিক শাসন ও রাজস্ব ব্যবস্থা পরিচালনার পুরো দায়িত্ব দেওয়া হয় । পাশাপাশি এই আইনে স্পষ্ট বলা হয়েছিল যে ভারতে কোম্পানির সমস্ত প্রশাসনিক কর্তাই গভর্নর জেনারেলের কর্তৃত্ব মেনে চলতে বাধ্য । এর ফলে ভারতে ব্রিটিশ কোম্পানির কার্যকলাপের উপর ব্রিটেনের পার্লামেন্ট নিশ্চিতভাবে নজরদারি করতে পারে ।
১২. রেগুলেটিং অ্যাক্টে কী কী বলা হয়েছে ?
উঃ । এই অ্যাক্ট অনুসারে মাদ্রাজ , বোম্বাই বাংলা প্রেসিডেন্সিতে তিনটির স্বতন্ত্র কার্যকলাপের উপর হস্তক্ষেপ করা হয় । ঠিক হয় বাংলার গভর্নরই হবেন গভর্নর জেনারেল । তাঁর অধীনে মাদ্রাজ ও বোম্বাইয়ের বাণিজ্যিক ঘাঁটিগুলির গভর্নরেরা থাকবেন । তাঁদের কার্যকালে মেয়াদ হবে ৫ বছর । চারজন সদস্য নিয়ে তৈরি হবে একটি গভর্নর জেনারেলের কাউন্সিল । এই আইনের ফলে কলকাতা ভারতের ব্রিটিশ শাসনের রাজধানীতে পরিণত হয় ।
❐ রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর :
১. ওয়ারেন হেস্টিংস ভারতবর্ষে কীভাবে প্রাচ্য শিক্ষাচর্চার উদ্যোগ নিয়েছিলেন ? উঃ । ভারতের প্রাচীন ঐতিহ্য ও সংস্কৃত চর্চাকে বলে প্রাচ্যবাদ । ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির স্বার্থরক্ষার জন্য ওয়ারেন হেস্টিংস ভারতবর্ষে এক বিশেষ ধরনের শিক্ষাব্যবস্থার উদ্যোগ নেন । তিনি বিশ্বাস করতেন ভারতবর্ষকে ভালোভাবে শাসন করতে হলে ভারত ও তার সংস্কৃতি সম্বন্ধে জ্ঞান থাকা জরুরি । সেই অনুযায়ী ফারসি ও ভারতীয় ভাষা জানা লোকেদের তিনি রাজস্ব দফতরের কাজে নিয়োগ করেছিলেন । কোম্পানীর কর্মচারীদের সুবিধার জন্য হেস্টিংস হিন্দু ও মুসলিম আইনগুলিকে ইংরেজি ভাষায় অনুবাদ করানোর উদ্যোগ নিয়েছিলেন । নাথানিয়েল ব্র্যাসি হালেদ হেস্টিংসের পৃষ্ঠপোষকতায় একটি হিন্দু আইন সংকলন অনুবাদ করেন । এর নাম A Code of Gentoo Law , অপরদিকে কোম্পানির বিভিন্ন নিয়মনীতিগুলিকে বিভিন্ন ভারতীয় ভাষায় অনুবাদ করানো হয় । এলিজা ইম্পের তৈরি আইনগুলিরও ফারসি ও বাংলা অনুবাদ করা হয় ১৭৮৩ খ্রিস্টাব্দে । এই অনুবাদ করেন জোনাথন ডানকান । হেস্টিংস বুঝেছিলেন ঔপনিবেশিক সমাজের জ্ঞানচর্চা ও চিন্তাভাবনার সঙ্গে সম্যক পরিচয় প্রশাসনের কাজে প্রয়োজন । এই সময় যে সমস্ত প্রাচ্যশিক্ষা ও ভাষাচর্চা কেন্দ্র । গড়ে ওঠে তার মূল উদ্দেশ্য ছিল এই সমস্ত প্রতিষ্ঠানে শিক্ষিত ব্যক্তিরা ঔপনিবেশিক শাসন ও বিচার ব্যবস্থাকে সুগঠিত করার কাজে সহায়ক হবেন । এই উদ্দেশ্যে ১৭৮১ খ্রিস্টাব্দে ওয়ারেন হেস্টিংস কলকাতা মাদ্রাসা তৈরি করে আরবি ও ফারসি ভাষাচর্চার উদ্যোগ নেন । ওয়ারেন হেস্টিংস বিভিন্ন অঞ্চলের সংস্কৃত পণ্ডিতদের কলকাতায় বিদ্যাচর্চার সুযোগ করে । দিয়েছিলেন । জোনাথন ডানকান ১৭৯৯ খ্রিস্টাব্দে বেনারসে হিন্দু কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন । ১৭৮৪ খ্রিস্টাব্দে উইলিয়াম তো কলকাতায় এশিয়াটিক সোসাইটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন । জোনাথনের লক্ষ্য ছিল সংস্কৃত ভাষায় লেখা ভারতীয় সাহিত্যগুলির ইংরেজি অনুবাদ করা । তিনি মনে করতেন এর ফলে ভারতের শিক্ষিত মানুষদের সঙ্গে ব্রিটিশদের বোঝাপড়ার পথ আরও সুগম হবে । এর পর ১৮০০ খ্রিস্টাব্দে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ এবং ১৮২৯ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা সংস্কৃত কলেজ স্থাপিত হয় । প্রতিষ্ঠা করেন হেম্যান হোরাস উইলসন । তাছাড়া শ্রীরামপুর মিশনারি ও অন্যান্য ইউরোপীয় ব্যক্তিবর্গের উদ্যোগে প্রাঙা শিক্ষা কেন্দ্র গড়ে ওঠে ও পাশাপাশি বই ছাপা শুরু হলে প্রাচ্য বিদ্যাচর্চা গতি লাভ
২. কর্নওয়ালিসের পুলিশ ব্যবস্থার বিবরণ দাও ।
উঃ । ১৭৯৩ খ্রিস্টাব্দে জেলাগুলির দেখভাল করার জন্য লর্ড কর্নওয়ালিস পুলিশ থানা ব্যবস্থা চালু করেন । প্রতিটি থানার দায়িত্বে ছিলেন একজন দারোগা । দারোগাদের নিয়ন্ত্রণ করতেন ম্যাজিস্ট্রেটরা । স্থানীয় অঞ্চলে সাধারণ মানুষের কাছে দারোগাই ছিলেন কোম্পানি । শাসনের ক্ষমতা ও কর্তৃত্বের প্রতীক । কিন্তু স্থানীয় জমিদারদের সঙ্গে দারোগারা সমঝোতা করে চলায় সাধারণ মানুষের উপর জমিদার ও দারোগার যৌথ পীড়ন চলত । ১৮১২ খ্রিস্টাব্দে পাকাপাকিভাবে দারোগ্য ব্যবস্থার বিলোপ করা হয় , তার বদলে গ্রামের দেখভালের দায়িত্ব দেওয়া হয় একজন কালেক্টরকে । ব্রিটিশ কোম্পানির মূল লক্ষ্য ছিল পুলিশি ব্যবস্থার মাধ্যমে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা । সেই উদ্দেশ্যেই পুলিশ ব্যবস্থার নানারকম সংস্কার করা হতে থাকে । শেষ পর্যন্ত ১৮৪৩ খ্রিস্টাব্দে সিন্ধুপ্রদেশ অঞ্চলে নতুন ধাঁচের পুলিশি ব্যবস্থা প্রয়োগ করা হয় । ক্রমে আলাদা পুলিশ আইন বানানো হয় এবং ধীরে ধীরে ঔপনিবেশিক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা ও তার প্রদর্শনের অন্যতম হাতিয়ার হয়ে উঠেছিল পুলিশি ব্যবস্থা ।
৩. ভারতে ঔপনিবেশিক শাসনে জমি - জরিপ করে রাজস্ব নির্ণয় করার প্রক্রিয়াটি আলোচনা করো ।
উঃ । ১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দে পলাশির যুদ্ধের পর বাংলার নবাব মিরজাফরের থেকে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি কলকাতা থেকে কুলপি পর্যন্ত ২৪ টি পরগনার জমিদারি পায় । সে সময় রবার্ট ক্লাইভ নতুন জমিদারি মাপজোক করার জন্য একদল জরিণবিদের খোঁজ করতে থাকেন । ১৭৬০ খ্রিস্টাব্দে ফ্র্যাঙ্কল্যান্ড নতুন ২৪ পরগনার জমি জরিপের কাজ শুরু করেন । কিন্তু কাজ শেষ হবার আগেই ফ্র্যাঙ্কল্যান্ড মারা যান এবং তাঁর অসমাপ্ত কাজ শেষ করে হগ্ ক্যামেরন । ১৭৬৪ খ্রিস্টাব্দের বক্সারের যুদ্ধের পর বাংলায় জমি জরিপ করে রাজস্ব নির্ণয় বিষয়ে কোম্পানি আরও তৎপর হয়ে ওঠে । ১৭৬৭ খ্রিস্টাব্দে জেমস রেনেলকে ব্রিটিশ কোম্পানি ভারতের সার্ভেয়ার জেনারেল বা জরিপ বিভাগের প্রধান হিসেবে নিয়োগ করে । তিনি বাংলার নদীপথগুলি জরিপ করে মোট ১৬ টি মানচিত্র তৈরি করেন । ১৭৮৬ খ্রিস্টাব্দ থেকে বোর্ড অভ রেভেনিউ রাজস্ব সংক্রান্ত বিষয় দেখাশোনা করতে থাকে ।
8. ঔপনিবেশিক শাসনে সেনাবাহিনীর প্রয়োজন হয়েছিল কেন ? সেনাবাহিনীতে জাতিভিত্তিক মনোভাব ও অসন্তোষ কীভাবে বৃদ্ধি পেয়েছিল ?
উঃ । ঔপনিবেশিক শাসনে যে কোনো বিরোধিতার মোকাবিলা করার ক্ষেত্রে পরিস্থিতি ঘোরতর হয়ে উঠলে প্রয়োজন গড়ত সেনাবাহিনীর । ফলে ভারতে ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্য ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সমানুপাতিকভাবে বেড়ে উঠেছিল কোম্পানির সেনাবাহিনী । গোড়া থেকেই স্থায়ী সেনাবাহিনী তৈরির ক্ষেত্রে ব্রিটিশরা মুঘল সেনা নিয়োগের পরম্পরা অনুসরণ করেছিল । সেনাবাহিনীতে সিপাহি নিয়োগের মাধ্যমে কোম্পানির রাজনৈতিক কর্তৃত্ব ছড়িয়ে পড়েছিল । কোম্পানির হয়ে এলাকা দখল করার পাশাপাশি সেনাবাহিনীর সিপাহিদের প্রধান কাজ ছিল বিভিন্ন বিদ্রোহের মোকাবিলা করা । ঔপনিবেশিক শাসনের গোড়ার দিকে সেনাবাহিনীতে প্রচলিত জাতভিত্তিক ধারণাগুলির বিরোধিতা ব্রিটিশ কোম্পানি করেননি । ফলে সিপাহি বাহিনীতে উচ্চবর্ণের ব্রাহ্মণ ও রাজপুত কৃষকরা সহজেই জায়গা করে নিয়েছিল । এইসব লোকেরা সিপাহিবাহিনীতে যোগ দিয়ে অনেক বেশি সুযোগ সুবিধা ও বেতন পেত ফলে সিপাহিবাহিনীতে জাতভিত্তিক মনোভাব দেখা দিতে শুরু করে । ১৮২০ খ্রিস্টাব্দ থেকে সিপাহিবাহিনীর কাঠামোর বেশকিছু বদল দেখা দিতে থাকে । মারাঠা , নেপালি , গুর্খা ও মহীশুর অঞ্চলের পাহাড়ি উপজাতিদের বাহিনীতে নিয়োগ করা শুরু হয় । ফলে উচ্চবর্ণের ব্রাহ্মণ ও রাজপুত কৃষকদের সুযোগ সুবিধা কমতে থাকে তার জন্য সিপাহিবাহিনীতে একটা অসন্তোষ তৈরি হতে থাকে ।
No comments:
Post a Comment