একাদশ অধ্যায়
প্রশ্ন উত্তর
👉(অষ্টম শ্রেণীর স্বাস্থ্য ও শারীরশিক্ষা প্রথম অধ্যায় প্রশ্ন উত্তর)
❐ অভি সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর :
প্রঃ । গাছ কোন্ গ্যাস ছাড়ে আর কোন গ্যাস গ্রহণ করে ?
উঃ । গাছ অক্সিজেন ছাড়ে , কার্বন ডাই - অক্সাইড গ্রহণ করে ।
প্রঃ । বাঁশ কী ধরনের উদ্ভিদ ?
উঃ । বাঁশ এক ধরনের বহুবর্ষজীবী , নিরেটপর্ব ও ফাঁপা পর্বমধ্যযুক্ত চিরসবুজ উদ্ভিদ ।
প্রঃ । এদের কাণ্ড কীরকম দেখতে ?
উঃ । এদের কাণ্ড লম্বা নলের মতো এবং শাখাপ্রশাখার পরিমাণ কম ।
প্রঃ । বাঁশগাছ কীভাবে বাড়ে ?
উঃ । প্রতি 24 ঘন্টায় কোনো কোনো বাঁশের প্রায় 100 সেমি বৃদ্ধি হয় ।
প্রঃ। বঙ্গোপসাগরের উপকূল বরাবর জন্মানো বাঁশের একটি প্রজাতির নাম লেখো । এর বৈশিষ্ট্য কী ?
উঃ । Melocanna bambusoides ( মেলোকান্না ব্যাম্বুসোডাস ) । প্রতি 30-35 বৎসর অন্তর এতে ফুল ফোটে ও ফল আসে ।
প্রঃ। বাঁশের কোন অংশ সুস্বাদু খাদ্যরূপে ব্যবহৃত হয় ?
উঃ । বাঁশের গোড়া থেকে বেরোনো কচি কাজ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে সুস্বাদু খাদ্য রূপে ব্যবহৃত হয় । এছাড়া এ থেকে নানা পানীয় প্রস্তুত করা হয় ।
প্রঃ। ভারতবর্ষে বাঁশ কী কী কাজে ব্যবহার হয় ?
উঃ । ভারতবর্ষে বাঁশ কাগজ তৈরি , ঝুড়ি বা চুবড়ি , ছাতার বাঁট , ফুলদানি , ট্রে , নানা ধরনের বেলনা এমনকি ঘরসাজানোর কাজে ব্যবহার হয় ।
প্রঃ। ভবাশির ( Tabashir ) কী ?
উঃ । বাঁশ থেকে তৈরি সিলিকন ডাই অক্সাইড ও সিলিসিক অ্যাসিড সমৃদ্ধ এক গুরুত্বপূর্ণ ওষুধ তবাশির যা হাঁপানি , সর্দিকাশি ও নানা সংক্রামক ব্যাধির চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয় । |
প্রঃ bamboo fabric ইদানিং কী কাজে ব্যবহার হয় ?
উঃ বাঁশের ভত্তুর ব্যাস 3 মি.মি. - র কম তাই জামাকাপড় তৈরির কাজেও একে ব্যবহার করা হচ্ছে ।
প্রঃ। কচুরিপানা কী ধরনের উদ্ভিদ ?
উঃ । কচুরিপানা একটি জলে ভাসমান বহুবর্ষজীবী উদ্ভিদ ।
প্রঃ । কচুরিপানা কত বছর বেঁচে থাকে ?
উঃ । প্রায় 24 বছর বেঁচে থাকে ।
প্রঃ। পুকুরে কচুরিপানা বেড়ে গেলে কী ক্ষতি হয় ?
উঃ । জ্বলে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যায় । এতে জলে থাকা মাছ ও কচ্ছপদের মৃত্যু হয় ।
প্রঃ । কচুরিপানা থেকে কোন গ্যাস উৎপন্ন করা হয় এবং কেন ?
উঃ । কচুরিপানায় নাইট্রোজেনের পরিমাণ বেশি থাকায় এটিকে বায়োগ্যাসের উৎসরূপে ব্যবহার করা হয় ।
প্রঃ। শাল কী ধরনের উদ্ভিদ ?
উঃ । শাল একটি বহুবর্ষজীবী কাষ্ঠল , দ্বিবীজপত্রী ও বৃক্ষজাতীয় উদ্ভিদ ।
প্রঃ । এই গাছ পরিণত হতে কত সময় লাগে ?
উঃ । 25 থেকে 30 বছর সময় নেয় ।
প্রঃ। শালগাছের জঙ্গলে কোন কোন প্রাণী বাস করে ?
উঃ । শালগাছের জঙ্গলে বাঘ , হাতি , চিতাবাঘ , ভালুক , বুনো খরগোশ , বুনো শুয়োর ইত্যাদি প্রাণী বসবাস করে ।
প্রঃ। রজন কী কাজে লাগে ?
উঃ । শালগাছের গুঁড়ি থেকে রজন পাওয়া যায় । এটি স্পিরিট ও বার্নিশ তৈরির কাজে লাগে ।
প্রঃ । ট্যানিন কী কাজে লাগে ?
উঃ । শালগাছের ছাল থেকে প্রাপ্ত ট্যানিন চমশিল্পে ব্যবহৃত হয় ।
প্রঃ। শালবীজের তেল কী কাজে ব্যবহৃত হয় ?
উঃ । শালগাছের বীজ থেকে নিষ্কাশিত তেল প্রদীপ জ্বালাতে , রান্নার কাজে ও চকোলেট প্রস্তুত করার কাজে লাগে ।
প্রঃ । কোন্ গাছকে লবণাম্বু বা ম্যানগ্রোভ গাছ বলে ? এই গাছ কোথায় দেখা যায় ?
উঃ । সুন্দরবনের লবণাক্ত অঞ্চলে মিষ্টি জলে সুন্দরী গাছ জন্মায় । সুন্দরী গাছকে লবণাম্বু বা ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদ বলে ।
প্রঃ । সুন্দরী গাছের ফল কীসের মতো দেখতে ?
উঃ । সুন্দরী গাছের ফল ডিমের মতো , তবে একটু লম্বাটে ধরনের ।
প্রঃ । প্রাচীন যুগে ভারতীয় মশলা কোথায় কোথায় যেত ?
উঃ । গ্রিস ও রোমের জন্মের আগে ভারতীয় মশলা জাহাজে করে মেসোপটেমিয়া , অ্যারাবিয়া ও মিশরে বাণিজ্যের জন্য যেত ।
প্রঃ। ভাস্কো - দা - গামা কত সালে , কোথা থেকে মশলার খোঁজে আসেন ?
উঃ । 1497 সালে সুদুর পোর্তুগালের লিসবন থেকে ভাস্কো - দা - গামা 4 টি জাহাজ নিয়ে মশলার খোঁজে আসেন ।
প্রঃ । নবাতে কী রাসায়নিক পদার্থ থাকে ? এটি কী করে ?
উঃ । লবঙ্গতে ইউজিনল নামে এক রাসায়নিক পদার্থ থাকে । এটির ব্যাকটেরিয়া নাশক ক্ষমতা রয়েছে ।
প্রঃ । পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে কত ধরনের মশলার চাষ হয় ?
উঃ । প্রায় ৪০ ধরনের মশলার চাষ হয় ।
প্রী । ভারতে কত ধরনের মশলার চাষ হয় ?
উঃ । শুধু ভারতেই প্রায় 50 ধরনের মশলার চাষ হয় ।
প্রঃ । কোন্ গাছের ছাল মশলা হিসাবে ব্যবহার হয় ?
উঃ । দারচিনি গাছের ছাল মশলা হিসাবে ব্যবহার হয় ।
প্রঃ । কোন্ গাছের ফল মশলা হিসাবে ব্যবহার হয় ?
উঃ । গোলমরিচ গাছের ফল ।
প্রঃ । কোন্ মুকুলকে আমরা মশলা হিসাবে ব্যবহার করি ?
উঃ । লবঙ্গকে আমরা মশলারূপে ব্যবহার করি ।
প্রঃ । কোন কোন গাছের কন্দ আমরা মশলা হিসাবে ব্যবহার করি ?
উঃ । পিঁয়াজ , আদা , রসুন ।
প্রঃ । লংকা কী ? লংকার গুণ কী ?
উঃ । লংকা একটি ফল , এটি ঝাল স্বাদযুক্ত ।
প্রঃ । কোন্ কোন্ গাছের পাতা আমরা মশলা হিসাবে ব্যবহার করি ?
উঃ । তেজপাতা , ধনেপাতা , পুদিনা পাতা মশলা হিসাবে ব্যবহার করি ।
প্রঃ। কোন্ কোন্ গাছের গ্রন্থিকাণ্ড মশলা হিসাবে ব্যবহার করি ?
উঃ । আদা , হলুদ ।
প্রঃ। হি কী ধরনের পদার্থ ?
উঃ । হিং হল গাছের ক্ষরিত পদার্থ ।
প্রঃ । কোন্ কোন্ গাছের বীজ আমরা মশলা হিসাবে ব্যবহার করি ?
উঃ । ধনে , সরষে , মেথি , জিরে , পোস্ত , জোয়ান , মৌরি প্রভৃতি ।
প্রঃ । জায়ফল কী ?
উঃ । জায়ফল একটি অন্তবীজ ।
প্রঃ । জাফরান কী ?
উঃ । জাফরান হল ফুলের অংশ ।
প্রঃ । গোলমরিচ কী ধরনের উদ্ভিদ ?
উঃ । গোলমরিচ একটি বহুবর্ষজীবী লতাজাতীয় উদ্ভিদ । অন্য গাছে ভর করে এটি বেড়ে ওঠে ।
প্রঃ । গোলমরিচ কাঁচা , পাকা , শুকিয়ে গেলে কেমন রঙের হয় ?
উঃ । গোলমরিচ কাঁচা অবস্থায় সবুজ , পেকে গেলে লাল এবং শুকনো হলে কালো রঙের হয় ।
প্রঃ । গোলমরিচের স্বাদ ঝাল কেন ?
উঃ । গোলমরিচে পিপেরাইন থাকার জন্য এর স্বাদ তীক্ষ্ণ বা ঝাল হয় ।
প্রঃ । দারচিনি কী ধরনের উদ্ভিদ ? এই উদ্ভিদের কোন্ অংশ ব্যবহার হয় ?
উঃ । দারচিনি চিরহরিৎ উদ্ভিদ । এই গাছের কান্ডের ছালের ভিতরের স্তর শুকিয়ে দারচিনি তৈরি হয় ।
প্রঃ । প্রাচীনকালে কোন্ ' মশলাকে এক অমূল্য মশলা হিসাবে ব্যবহার করা হত ?
উঃ । প্রাচীনকালে দারচিনিকে এক অমূল্য মশলা হিসাবে ব্যবহার করা হত ।
প্রঃ । ' হলুদ কী ধরনের উদ্ভিদ ?
উঃ । হলুদ একটি বহুবর্ষজীবী বীরুৎ জাতীয় উদ্ভিদ । মাটির নীচে এই গাছের যে হলুদ রঙের কন্দ পাওয়া যায় তা থেকেই মশলার হলুদ তৈরি হয় ।
প্রঃ । এলাচ কী ধরনের উদ্ভিদ ?
উঃ । এলাচ হল একরকমের বহুবর্ষজীবী বীরুৎজাতীয় উদ্ভিদ । এর কান্ড থাকে মাটির নীচে ।
প্রঃ । এলাচ কয় রকমের ও কী কী ?
উঃ। দুই রকমের হয় যথা বড়ো এলাচ আর ছোটো এলাচ ।
প্রঃ । আদা কীরূপ উদ্ভিদ ? এর কোন অংশ ব্যবহার করা হয় ?
উঃ । আদা একটি বহুবর্ষজীবী বীরুৎ জাতীয় উদ্ভিদ । আদা গাছের গ্রন্থিকান্ডটিকে শুকিয়ে নিয়েই ব্যবহার করা হয় ।
প্রঃ । রসুন কী জাতীয় উদ্ভিদ ?
উঃ । রসুন বর্ষজীবী উদ্ভিদ । পিঁয়াজের মতো এরও কাণ্ড কদ জাতীয়
প্রঃ । রসুনে কী ধরনের যৌগ থাকে ?
উঃ । রসুনে অ্যালিসিন নামে এক যৌগ থাকে । এই যৌগের জীবানুনাশক ক্ষমতা আছে ।
প্রঃ । শুরুতের লেখা শুশ্রুত সংহিতায় কত প্রকার ওষুধের উল্লেখ আছে ?
উঃ । 700 প্রকার ওষুধের উল্লেখ আছে ।
প্রঃ । বিশ্বে ঔষধি গাছের সংখ্যা কত ?
উঃ । বিশ্বে ওষধি গাছের সংখ্যা প্রায় 20,0001
প্রঃ । ভারতবর্ষে কত রকমের ওষধি প্রজাতির গাছ আছে ?
উঃ । এশিয়াতে প্রায় 8500 প্রজাতির ওষধি গাছ আছে এবং ভারতবর্ষে প্রায় 3500 প্রজাতির ওষধি গাছ আছে ।
প্রঃ । নিম কী ধরনের উদ্ভিদ ?
উঃ । নিম একটি মাঝারি ধরনের বৃক্ষজাতীয় উদ্ভিদ । এই চিরহরিৎ উদ্ভিদ খুব তাড়াতাড়ি বাড়ে ।
প্রঃ । বেল কী ধরনের উদ্ভিদ ?
উঃ । এটি একটি মাঝারি আকারের পর্ণমোচী উদ্ভিদ ।
প্রঃ । বেল কীসের অব্যর্থ ওষুধ ?
উঃ । বেলে থাকে মিউসিলেজ আর পেকটিন যা কোষ্ঠকাঠিন্যের অব্যর্থ ওষুধ ।
প্রঃ । আমলকী কী ধরনের উদ্ভিদ ?
উঃ । আমলকী একটি মাঝারি ধরনের পর্ণমোচী বৃক্ষজাতীয় উদ্ভিদ ।
প্রঃ । আমলকীর মধ্যে কোন্ ভিটামিন প্রচুর পরিমাণ থাকে ?
উঃ । আমলকী ফলে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন C থাকে ।
প্রঃ । আমলকীর বীজ কী কাজে লাগে ?
উঃ । আমলকী ফলের বীজ হাঁপানি , পিত্তরোগ আর ফুসফুসের প্রদাহে উপকারী ।
প্রঃ । নয়নতারা কী ধরনের উদ্ভিদ ।
উঃ । নয়নতারা একবর্ষজীবী বীরুৎজাতীয় উদ্ভিদ ।
প্রঃ । নয়নতারা থেকে কী কী উপক্ষার পাওয়া যায় ?
উঃ । ভিনক্রিস্টিন আর ভিনরাস্টিন নামের উপক্ষার পাওয়া যায় ।
প্রঃ। নয়নতারা গাছের মূলে কী থাকে ?
উঃ । নয়নতারা গাছের মূলে রৌবেসিন নামে একটি উপক্ষার থাকে যা মস্তিষ্কে রক্ত সঞ্চালনে বাধার সৃষ্টি হলে তা দূর করতে সাহায্য করে ।
প্রঃ । পুদিনা কী ধরনের উদ্ভিদ ?
উঃ । পুদিনা একটা বহুবর্ষজীবী বীরুৎজাতীয় উদ্ভিদ ।
প্রঃ । পুদিনার একটি ওষধি গুণের উল্লেখ করো ।
উঃ । পুদিনার শরবত পেটের গোলমালে খুব উপকারী । এছাড়াও মুত্রের পরিমাণ বাড়াতে , বমিভাব দূর করতে পুদিনা সাহায্য করে ।
প্রঃ । ঘৃতকুমারী কী ধরনের উদ্ভিদ ?
উঃ । ঘৃতকুমারী হল বহুবর্ষজীবী বীরুৎজাতীয় উদ্ভিদ ।
❐ সংক্ষিপ্ত প্রগ্ন ও উত্তর :
প্রঃ । গাছ থেকে আমরা কী কী পেয়ে থাকি ?
উঃ । উদ্ভিদের কাছ থেকে আমরা খাদ্য , ওষুধ , জামাকাপড় , ঘরবাড়ি তৈরির উপকরণ – অক্সিজেন , ইত্যাদি । এছাড়াও উদ্ভিদ পরিবেশ থেকে দূষক পদার্থ শুষে নিয়ে দূষণের মাত্রা কমায় । জমির সার তৈরি করে । পরিবেশের তাপমাত্রা , বৃষ্টিপাত ও বায়ুপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণেও গাছের নানা ভূমিকা আছে ।
প্রঃ । কী কী প্রয়োজনে বাঁশ ব্যবহার করা হয় ?
উঃ । i ) এর কাল্ড , গোড়া , পাতা বিশ্বের বিপন্নতম প্রাণীদের খাদ্য । ii ) বাঁশের গোড়া থেকে বেরোনো নতুন কচি কাণ্ড এশিয়ার বিভিন্ন দেশে অত্যন্ত সুস্বাদু খাদ্যরূপে ও নানা পানীয় তৈরিতে ব্যবহৃত হয় । iii ) দক্ষিণ - পূর্ব এশিয়ার নানা জায়গায় সুপকে গরম করা ও ভাত রান্নার পাত্র রূপে বাঁশের ফাঁপা কাণ্ডকে ব্যবহার করা হয় । এছাড়া রান্নার কাজে বাঁশের তৈরি নানা উপকরণ ব্যবহার করা হয় । iv ) ভারতবর্ষে বাঁশ কাগজ তৈরি , ঝুড়ি / চুপড়ি , ছাতার বাট , ফুলদানি , ট্রে , বাঁশি নানা ধরনের খেলনা এবং এমনকি ঘরসাজানোর কাজে ব্যবহার করা হয় । v ) বাঁশ থেকে এক গুরুত্বপূর্ণ ওষুধ প্রস্তুত হয় যা হাঁপানি , সর্দিকাশি ও নানা সংক্রামক ব্যাধির চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয় ।
প্রঃ । কী কী প্রয়োজনে কচুরিপানার ব্যবহার করা হয় ?
উঃ । i ) কচুরিপানায় নাইট্রোজেনের পরিমাণ বেশি থাকায় এটিকে বায়োগ্যাসের উৎসরূপে ব্যবহার হয় । ii ) ফিলিপিনস থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামে কচুরিপানার কাল্ডকে এমব্রয়ডারির কাজে ব্যবহার করা হয় । কচুরিপানার তত্তুকে কাগজ , ঝুড়ি , ফার্নিচার তৈরির কাজে ব্যবহার হয় । iii ) সোনার খনি অঞ্চলে জলে নির্গত সায়ানাইড শোষণ করে এটি জলকে বিষমুক্ত করে । আর্সেনিক সমৃদ্ধ পানীয় জল থেকে কচুরিপানা আর্সেনিককে সম্প্রসারিত করে । iv ) নাইট্রিফিকেশন পদ্ধতিতে নাইট্রোজেন আবদ্ধকরণ কচুরিপানার মূলে বসবাসকারী ব্যাকটেরিয়া গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে । v ) কচুরিপানায় নাইট্রোজেন তথা প্রোটিনের পরিমাণ বেশি থাকায় পশুখাদ্য রূপে এর কদর ক্রমশ বাড়ছে ।
প্রঃ। কী কী প্রয়োজনে শাল গাছ ব্যবহার করা হয় ?
উঃ ! i ) খুঁটি , আসবাবপত্র , জানালা দরজার কাঠের ফ্রেম , পাটাতন , নৌকা , সেতু , জাহাজের জেটি প্রভৃতি শাল কাঠ থেকে তৈরি হয় । ii ) শালগাছের আঠা থেকে সুগন্ধযুক্ত লাল ধুনো পাওয়া যায় , যা ধূপ ও অন্যান্য কাজে ব্যবহার হয় । iii ) শালগাছের শুকনো পাতা থালা - বাটি , ঠোঙা , জ্বালানি প্রভৃতি কাজে ব্যবহৃত হয় । শালপাতা , গবাদি পশুর খাদ্য । iv ) রজন , স্পিরিট ও বার্নিশ তৈরির কাজে লাগে । v ) ছাল থেকে প্রাপ্ত ট্যানিন চর্মশিল্পে ব্যবহৃত হয় । vi ) শালবীজের তেল প্রদীপ জ্বালাতে রান্নার কাজে লাগে ।
প্রঃ। কী কী প্রয়োজনে সুন্দরী গাছ ব্যবহার করা হয় ?
উঃ । 1 ) সুন্দরী গাছের কাঠ আসবাব , বাড়ি ও খুঁটি তৈরিতে কাজে লাগে । ii ) সুন্দরী গাছের কাঠ জ্বালানি হিসেবেও কাজে লাগে । iii ) এই গাছের ছাল থেকে প্রাপ্ত ট্যানিন , চামড়া ও রং শিল্পে ব্যবহার করা হয় ।
প্রঃ । সুন্দরী গাছ বর্তমানে বিলুপ্তপ্রায় উদ্ভিদে পরিণত হচ্ছে কেন ?
উঃ । সুন্দরবন অঞ্চলে প্রচুর পরিমাণে সুন্দরী গাছের আধিক্য থাকার জন্য এই অঞ্চলের এইরূপ নামকরণ হয়েছিল । কিন্তু বর্তমানে জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং বাসস্থানের জন্য এই অঞ্চলে প্রচুর পরিমাণে সুন্দরী গাছ কাটা হয়েছে । এছাড়াও জোয়ারের সময় প্রচুর লবণাক্ত জল এই বনের মধ্যে খাঁড়িগুলিতে প্রবেশ করে । এই লবণাক্ত জল গাছ সহ্য করতে না পেরে মারা যাচ্ছে , ফলে সুন্দরবনের সুন্দরীগাছ আজ দ্রুতহারে কমে যাচ্ছে , যা নষ্ট করে দিচ্ছে সুন্দরবনের প্রকৃতিকে ।
প্রঃ । মশলা কী কাজে লাগে ?
উঃ । a ) মশলা জোলো খাবারে স্বাদ আনতে সাহায্য করে । b ) লালারসের ক্ষরণ বাড়িয়ে হজমে সাহায্য করে । c ) মুখগহ্বরকে ক্ষতিকারক জীবাণুমুক্ত রাখতে সাহায্য করে । d ) সংরক্ষকরূপে কাজ করে ।
প্রঃ । গোলমরিচের ব্যবহার লেখো ।
উঃ । i ) গোলমরিচের তীক্ষ্ণ স্বাদের জন্য রান্নায় একে লংকার বিকল্প মশলারূপে ব্যবহার করা হয় । ii ) কাশি , দাঁতের ব্যথা , মাড়ির ব্যথায় , মাড়ি থেকে রক্ত পড়া , বদহজম ও গ্যাসের সমস্যায় গোলমরিচ কাজে লাগে । iii ) মাসে ও অন্যান্য খাবার সংরক্ষণেও গোলমরিচ ব্যবহার করা হয় ।
প্রঃ । দারচিনি কী কী কাজে ব্যবহার হয় ?
উঃ । i ) দারচিনির সুগন্ধী স্বাদের জন্য রান্নার কাজে ব্যবহার করা হয় । ii ) বমি , বমিভাব , ডায়রিয়া , সর্দিতে দারচিনি থেকে উপকার পাওয়া যায় । iii ) দারচিনি থেকে তৈরি উদ্বায়ী তেল বাতের ব্যথায় মালিশ করলে আরাম পাওয়া যায় ।
প্রঃ । হলুদ কী কী কাজে লাগে ?
উঃ । i ) হলুদ রান্নায় একটি গুরুত্বপূর্ণ মশলা হিসাবে ব্যবহার হয় । ii ) বিভিন্ন সবজি , মাছ বা মাংস রান্নায় হলুদ ব্যবহার করা হয় । এটি রান্নার স্বাদ ও রং আনতে ব্যবহার করা হয় । iii ) হলুদে কারকিউমিন নামের যৌগ থাকার জন্য — এটি জীবানুনাশক হিসাবে , হলুদ ব্যাকটেরিয়া ভাইরাস , ছত্রাক মেরে ফেলার ক্ষমতা রাখে । ক্যানসার , ডায়াবেটিস , আর্থাইটিস , অ্যালার্জি , আলজাইমার প্রভৃতি রোগেও এটি কার্যকরী । iv ) হলুদে লোহার পরিমাণ বেশি থাকায় এটি রক্তাল্পতায় ভালো কাজ করে । v ) রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে এটি সক্ষম । vi ) শরীরের কোনো অংশে আঘাত লাগলে বা মচকে গেলে ব্যথা স্থানে চুন - হলুদ লাগালে উপকার পাওয়া যায় ।
প্রঃ । এলাচ আমরা কী কী কাজে ব্যবহার করি ?
উঃ ।1 ) রান্না তরকারিতে স্বাদ ও গন্ধ আনতে এলাচ ব্যবহার করা হয় । পায়েস , মিষ্টি খাবারেও এলাচ ব্যবহার করা হয় । ii ) গ্যাস ও পাকস্থলী সংক্রান্ত কোনো সমস্যায় এলাচের ব্যবহার আছে । iii ) বড়ো এলাচ দাঁতের মাড়ি সবল করে । অনেক সময় বমিভাব কমাতেও কাজে লাগে । iv ) পানের সঙ্গে মুখশুদ্ধি হিসাবে এলাচ খাওয়ায় প্রচলন আছে ।
প্রঃ আদার ব্যবহার উল্লেখ করো ।
উঃ 1 ) বিভিন্ন রান্নায় আমিশ ও নিরামিশ মশলা হিসাবে আদার ব্যবহার করা হয় । কোনো কোনো পাঁউরুটি তৈরিতে বেকারি শিল্পে এবং সস তৈরিতে আদা ব্যবহার করা হয় । ii ) পেটের অসুখ , অম্বল বা গ্যাসের সমস্যায় কাশি ও হাঁপানিতে কার্যকরী । iii ) আদা লালারস বের করে খাবার হজম করতে সাহায্য করে ।
প্রঃ । রান্নার কাজে রসুনের ব্যবহার লেখো ।
উঃ । 1 ) রসুন গাছের কন্দটিই রসুন হিসেবে ব্যবহৃত হয় । মাছ , মাংস সহ বিভিন্ন রান্নায় স্বাদ আনতে রসুন ব্যবহার করা হয় । কোনো কোনো পাঁউরুটি তৈরিতে এর ব্যবহার আছে । il ) রসুনে থাকে অ্যালিসিন নামে এক যৌগ । এই যৌগের জীবাণুনাশক ক্ষমতা আছে । iii ) রসুন গ্যাস দূর করে । পাকস্থলীকে উদ্দীপিত করে খাবার হজম করতে সাহায্য করে । হূৎপিণ্ড ও রক্তনালীর নানা সমস্যায় রসুন কার্যকরী । iv ) রসুনের অ্যান্টিসেপটিক বা পচননিবারক ভূমিকা আছে ।
প্রঃ । নিম গাছের ওষুধি গুণ উল্লেখ করো ।
উঃ । i ) কানের ব্যথায় , দাঁত আর দাঁতের মাড়ির ব্যথায় নিমতেল ব্যবহার করা হয় । ii ) বহুমূত্র রোগে নিমপাতার রস খুবই উপকারী । বর্তমানে বহু প্রসাধনী জিনিস যেমন — সাবান , শ্যাম্পু , দাঁতের মাজন , পাউডার প্রভৃতি তৈরিতে নিমজাত পদার্থ ব্যবহার করা হয় । ভাইরাসজনিত মহামারি আর বাতে নিম বীজ কাজে লাগে । iii ) কীটনাশক ওষুধ হিসাবেও নিমতেলের ব্যবহার আছে । নিমের তেল চুলের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে , যকৃতের কাজ করার ক্ষমতা বাড়াতে , রক্তকে পরিষ্কার রাখতে ব্যবহার করা হয় । iv ) ওষুধ তৈরি , চর্মরোগ সারাতেও এটি ব্যবহার করা হয় ।
প্রঃ । বেলের ওষধি গুণ কী কী ?
উঃ । i ) বেলের শরবত আমাশয় রোগীদের অস্ত্রের যত্ন নেয় । ii ) কাঁচা বা আধ - কাঁচা ফল খিদে ও হজম ক্ষমতা বাড়ায় । iii ) বেলে থাকে মিউসিলেজ আর পেকটিন যা কোষ্ঠকাঠিন্যে অব্যর্থ । iv ) দীর্ঘস্থায়ী পেটের অসুখে বেল কার্যকরী । বর্তমানে বিভিন্ন পরীক্ষায় বেলের পাতা , ফল আর মূলের অ্যান্টিবায়োটিক বা জীবাণু প্রতিরোধী ক্ষমতার প্রমাণ পাওয়া গেছে ।
প্রঃ । আমলকীর ঔষধি গুণাগুণ উল্লেখ করো ।
উঃ । i ) শুকনো আমলকী ফল পেটের গোলমাল , রক্তক্ষরণ আর আমাশয় বন্ধ করতে সক্ষম । ii ) আমলকী ফলে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন C আছে । দাঁতের মাড়ি ফোলায় আমলকী ফল খুব কাজে আসে । iii ) আমলকী ফলের বীজ হাঁপানি , পিত্তরোগ আর ফুসফুসের প্রদাহে উপকারী । iv ) বমিভাব আর কোষ্ঠকাঠিন্যেও ভালো কাজ করে আমলকী । অ্যানিমিয়া , বার্ধক্য ও ক্যানসার দ্রুত রোধে আমলকী ফল কার্যকরী ।
প্রঃ । নয়নতারার ঔষধি গুণ উল্লেখ করো ।
উঃ । i ) মূত্র বৃদ্ধি কারক , আমাশয় প্রতিরোধক , রক্তক্ষরণ প্রতিরোধক গুণ আছে । ii ) নয়নতারা গাছের মূলে থাকে । রৌবেসিন নামে একটি উপক্ষার । মস্তিষ্কের রক্ত সঞ্চালনে কোনোরকম বাধার সৃষ্টি হলে এই উপক্ষার সচল করতে সাহায্য করে । iii ) নয়নতারা পাতা বহুমূত্র রোগের একটা ভালো ওষুধ । iv ) বোলতার কামড়ে নয়নতারা পাতা ব্যবহার করলে উপকার পাওয়া যায় । v ) নয়নতারায় ভিনক্রিস্টিন ও ভিনরাস্টিন নামে দুটি উপক্ষার পাওয়া যায় । এই উপক্ষার দুটি ব্লাড ক্যানসার ও টিউমার প্রশমনে বর্তমানে চিকিৎসা জগতে ব্যবহৃত হচ্ছে ।
প্রঃ । পুদিনার ওষধি গুণ উল্লেখ করো ।
উঃ । i ) পেট ফাঁপা , বদহজম , বাচ্চাদের পাতলা পায়খানা আর মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে পুদিনা কার্যকরী । ii ) পুদিনার শরবত পেটের গোলমালে খুব উপকারী । iii ) কাশি , অরুচি ও পাকস্থলীর প্রদাহে পুদিনা উপকারী । iv ) পুদিনা জীবাণুনাশক হিসাবেও কাজ করে । পুদিনার প্রলেপ ব্যাথার জায়গায় লাগালে বাতের যন্ত্রনা ও মাথাধরা কমাতে সাহায্য করে ।
প্রঃ । ঘৃতকুমারীর কোন্ কোন্ ওষধি গুণ রয়েছে ।
উঃ । i ) গ্যাস্ট্রিক ক্ষত , কোষ্ঠকাঠিন্য , তেজস্ক্রিয় বিকিরণজনিত চামড়ার ক্ষতে ঘৃতকুমারী পাতার নির্যাস ব্যবহার করা হয় । ii ) ভিটামিন , খনিজ মৌল , ফ্যাটি অ্যাসিড , অ্যামাইনো অ্যাসিড , ঘৃতকুমারী পাতার নির্যাসে পাওয়া যায় । iii ) ঘৃতকুমারী নির্যাসে অ্যান্টিপাইরেটিক উপাদান থাকায় জ্বর হলে তাপমাত্রা কমাতে এটি ব্যবহৃত হয় । iv ) ঘৃতকুমারীর নির্যাসে প্রায় 99 % জল থাকে তাই এর নির্যাস ব্যবহার করলে চামড়ায় রক্ত ও অক্সিজেন সরবরাহ বৃদ্ধি পায় । v ) মানসিক চাপ ও উদবেগ কমাতে ঘৃতকুমারী পাতার নির্যাস ব্যবহার করা হয় । ব্যবহার করা হয় -
❐ রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর :
প্রঃ । সুন্দরী গাছের বর্ণনা দাও ।
উঃ । সুন্দরবনের লবণাক্ত অঞ্চলে নরম মাটিতে সুন্দরী গাছ জন্মায় । এই গাছের চারপাশে মাটি ভেদ করে অসংখ্য ছোটো ছোটো মূল ছড়িয়ে থাকে । প্রথমদিকে নরম থাকলেও পরে এগুলি শক্ত সূচালো কাঠের মতো হয়ে বেরিয়ে থাকে । এগুলি সুন্দরী গাছের শ্বাসমূল । এই মূলগুলি বাতাস থেকে অক্সিজেন নিয়ে সুন্দরী গাছকে বাঁচিয়ে রাখে ।
এই গাছগুলি বিশেষ বড়ো হয় না । এরা চিরসবুজ ও সমুদ্রের কাছাকাছি থাকে । এই গাছগুলিকে লবণাম্বু বা ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদ বলে । এর কান্ড বেশ শক্ত তবে নরম মাটিতে আটকে থাকার জন্য কান্ডের নীচের দিক থেকে বাঁকাভাবে কিছু অস্থানিক মূল বেরিয়ে মাটিতে প্রবেশ করে যা নরম মাটিতে গাছকে অবলম্বন দেয় । এই মূলগুলিকে ঠেসমূল বলে । সুন্দরী গাছের পাতার ওপর দিক সবুজ ও চকচকে , নীচের দিকের রং হয় হালকা সবুজ । এই গাছে ডিমের মতো লম্বা ধরনের খয়েরি রঙের ফল হয় । ফলের মধ্যে থাকা বীজ থেকে নতুন চারা তৈরি হয় ।
প্রঃ । বাঁশগাছে ফুল ফোটার সঙ্গে দুর্ভিক্ষ বা মহামারি কীভাবে দেখা দেয় ? বিষয়টি আলোচনা করো ।
উঃ । বাঁশগাছে ফুল ফোটা নিয়ে বিজ্ঞানীদের মধ্যে নানা মত চালু আছে । অনেক বাঁশগাছে 65 বা 120 বছর অন্তর ফুল ফোটে । অনেকে বলেন পরিবেশগত প্রভাবে বাঁশগাছের যখন বিপদ ঘন্টা বাজতে থাকে তখন বাঁশগাছ তাঁর অঙ্গজ বৃদ্ধি বন্ধ করে জননগত বৃদ্ধিতে মনোনিবেশ করে এবং তার দেহের সমস্ত শক্তিকে ফুল ফোটানোর কাজে ব্যবহার করে । ফুল ফোটার পরই বাঁশগাছের মৃত্যু ঘটে । বাঁশগাছে যখন Mass Howring ও ফল হওয়ার ঘটনা ঘটে তখন সেই অঞ্চলে ইঁদুর জাতীয় প্রাণীদের অত্যাধিক হারে সংখ্যাবৃদ্ধি ঘটে । তারা সেই অঞ্চলের শস্যক্ষেত্র ও গুদামের শস্য খেয়ে ও শস্যহানি ঘটিয়ে দুর্ভিক্ষের সম্ভাবনা সৃষ্টি করে । এর ফলে সেখানে টাইফাস , প্লেগ ও অন্যান্য ইঁদুরবাহিত রোগের সম্ভাবনা বেড়ে যায় এবং এর থেকে মহামারিও হয়ে থাকে । অন্যদিকে প্রচুর সংখ্যক বাঁশের একসঙ্গে মৃত্যু ঘটায় নতুন বাঁশ তৈরি না হওয়া পর্যন্ত স্থানীয় মানুষ আর এক সমস্যার মুখে পড়ে । ঘরবাড়ি তৈরির উপকরণ না পাওয়ায় বহু মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়ে । তাই বাঁশগাছের ফুল ফোটা এক ক্ষতিকারক প্রভাব নিয়ে আসে ।
No comments:
Post a Comment