মানুষের খাদ্য ও খাদ্য উৎপাদন
প্রশ্ন উত্তর
❐ অভি সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর :
১. কৃষিবিজ্ঞান কাকে বলে ?
উঃ । বিজ্ঞানের একটা শাখায় খাদ্য উৎপাদনের পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করা হয় । বিজ্ঞানের এই শাখাটিকে কৃষিবিজ্ঞান বলা হয় ।
২. উদ্যানবিজ্ঞান ( Horticulture ) বলতে কী বোঝ ?
উঃ । কৃষিবিজ্ঞানের যে শাখায় সবজি এবং ফল চাষের পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করা হয় তাকে উদ্যানবিজ্ঞান বলা হয় ।
৩. ছোলা , মটর , বিন এগুলি কী জাতীয় ফসল ?
উঃ । ছোলা , মটর , বিন হল ডাল জাতীয় ফসল ।
৪. দুটি বাগিচা ফসলের উদাহরণ দাও ।
উঃ । চা , কফি হল বাগিচা ফসল ।
৫. তিনটি সবজির নাম লেখো ।
উঃ । টম্যাটো , বাঁধাকপি , বেগুন হল সবজি জাতীয় ফসল ।
৬. দুটি তন্তু জাতীয় ফসলের উদাহরণ দাও ।
উঃ । পাট ও কার্পাস হল তত্ত্ব জাতীয় ফসল ।
৭. ভিল এবং সরবে কী জাতীয় ফসল ?
উঃ । তৈলবীজ জাতীয় ফসল ।
৮. মশলা পাওয়া যায় এমন দুটি উদ্ভিদের নাম লেখো ।
উঃ । আদা , লংকা হল মশলা জাতীয় ফসল ।
৯. নিম , তুলসী কী ধরনের গাছ ?
উঃ । নিম , তুলসী হল ওষধি গাছ ।
১০. দুটি কন্দ জাতীয় ফসলের উদাহরণ দাও ।
উঃ । আলু , আদা হল কন্দ জাতীয় করল ।
১১.চিনি পাওয়া যায় এমন দুটি ফসলের নাম লেখো ।
উঃ আখ , বিট থেকে চিনি পাওয়া যায় ।
১২. দুটি আলংকারিক উদ্ভিদের নাম লেখো ।
উঃ । ক্যাকটাস , বোগেনভেলিয়া হল আলংকারিক উদ্ভিদ ।
১৩.খারিফ ফসল , কখন চাষ হয় ?
উঃ । সাধারণত বর্ষার শুরুতে ( জুন / জুলাই ) খারিফ ফসল চাষ শুরু হয় ।
১৪. খারিফ ফসলের চাষ কোন্ জলবায়ুর উপর নির্ভরশীল ?
উঃ । দক্ষিণ - পশ্চিম মৌসুমি জলবায়ুর উপর নির্ভরশীল ।
১৫. রবি ফসল কখন তোলা হয় ?
উঃ । রবি ফসল মার্চ / এপ্রিল মাসে তোলা হয় ।
১৬. ছুটি খারিফ ফসলের উদাহরণ দাও ।
উঃ । ধান , ভুট্টা , তুলো , চিনেবাদাম হল খারিফ ফসল ।
১৭. রবি ফসল সাধারণত কোন্ ঋতুতে রোপণ করা হয় ?
উঃ । রবি ফসল সাধারণত , শীত ঋতুতে রোপণ করা হয় ।
১৮. কোনো ফসলের চাষ শুরু করার আগে কী করা জরুরি ?
উঃ । কোনো ফসলের চাষ শুরু করার আগে মাটিকে চাষের উপযোগী করে তোলা জরুরি ।
১৯. কেঁচো ও অন্যান্য জীবাণুরা মাটির কী উপকার করে ?
উঃ । এরা মাটির জৈব অংশ বা হিউমাস বাড়াতে সাহায্য করে ।
২০. ভূমিকৰ্ষণ কী ?
উঃ । যে পদ্ধতিতে চাষের জমির মাটিকে ওপর নীচে আলগা করা হয় তাকে জমিচৰা বা ভূমিকৰ্ষণ বলে ।
২১. ভূমিকরণের জন্য প্রাচীন কাল থেকে কী ব্যবহার করা হয় ?
উঃ । লাঙল ব্যবহার করা হয় ।
২২.কৃষিকাজ কী ?
উঃ । ফসল উৎপাদনের জন্য কৃষকেরা যে সমস্ত কাজ করেন তাই হল কৃষিকাজ ।
২৩ . উদ্ভিদেরা জল আর নানান খনিজ মৌল কোথা থেকে পাই ?
উঃ । মাটি থেকে উদ্ভিদ জল আর খনিজ পাই ।
২৪.মাটিতে কী কী থাকে ?
উঃ । মাটিতে থাকে বিভিন্ন খনিজ পদার্থ , জল , বায়ু , পচা - গলা জৈব বস্তু আর বিভিন্ন জীব ।
২৫. নিড়ানি ( Hoe ) ?
উঃ নিড়ানি হল চাষের কাজে ব্যবহৃত এক ধরনের যন্ত্র যার সাহায্যে জমি থেকে আগাছা তুলে ফেলা আর মাটি আলগা করা হয় ।
২৬. বর্তমানে বড়ো বড়ো চাষের জমি কর্ষণ করতে কীসের সাহায্য নেওয়া হয় ?
উঃ । ট্রাক্টরের সাহায্য নেওয়া হয় ।
২৭. বীজ বোনার আগে চাষিরা বীজগুলোকে কোথায় ও কেন ডুবিয়ে নেন ?
উঃ । বীজ বোনার আগে চাষিরা বীজগুলোকে কোনো না কোনো রাসায়নিক বীজশোধকে ডুবিয়ে নেন । ওই রাসায়নিক পদার্থগুলি বীজগুলোকে জীবাণু সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে ।
২৮. কে উদ্ভিদের এই পুষ্টি উপাদানগুলো সরবরাহ করে ?
উঃ । মাটি উদ্ভিদের এই পুষ্টি উপাদানগুলো সরবরাহ করে ।
২৯. সার কী ?
উঃ । মাটিতে থাকা উদ্ভিদের পুষ্টি উপাদানের ঘাটতি পুষিয়ে দিয়ে উদ্ভিদের বৃদ্ধির সহায়ক হয় যেসব পদার্থ তাকে সার বলে ।
৩০. সার কাম রকমের ও কী কী ?
উঃ । সার দুই রকমের হয় যথা- ( i ) জৈব সার ( ii ) অজৈব সার ।
৩১. জৈব সার কীভাবে তৈরি হয় ?
উঃ । মৃত উদ্ভিদ আর প্রাণীদের বর্জ্য পচিয়ে তৈরি হয় জৈব সার ।
৩২.শসা আবর্তন কী ?
উঃ । একই ফসল বারবার চাষ না করে মাঝে একবার অন্য ধরনের ফসল চাষ করা — এটাকে শস্য আবর্তন বলে ।
৩৩. প্রত্যেক উদ্ভিদের বেঁচে থাকার জন্য অত্যাবশ্যক জিনিস কী ?
উঃ । উদ্ভিদের বেঁচে থাকার জন্য অত্যাবশ্যক জিনিস হল জল ।
৩৪. উদ্ভিদের দেহে কত ভাগ জল থাকে ?
উঃ । উদ্ভিদের দেহে প্রায় 90 % জল থাকে ।
৩৫. কয়েকটি আগাছানাশক রাসায়নিকের নাম লেখো ।
উঃ । 2,4 - D , ড্যালাপোন , পিক্লোরাম ইত্যাদি ।
৩৬. কয়েকটি আগাছার নাম লেখো ।
উঃ । পার্থেনিয়াম , চেনোপোডিয়াম , অ্যামারাস্থাস , ঘাস প্রভৃতি ।
৩৭. ফসলের ক্ষতিকারক কয়েকটি কীটপতঙ্গের নাম লেখো ।
উঃ । বিভিন্ন পোকা যেমন — পঙ্গপাল , উই , গুবরে জাতীয় পোকা ।
৩৮. অজৈব সার কী ধরনের পদার্থ ?
উঃ । অজৈব সার হল রাসায়নিক পদার্থ ।
৩৯.। অজৈব সার প্রধানত কোন্ কোন্ মৌলের ঘাটতি পূরণ করে ?
উঃ । অজৈব সার প্রধানত তিন ধরনের মৌলের ঘাটতি পূরণ করে । যথা — নাইট্রোজেন ( N ) , ফসফরাস ( P ) আর পটাশিয়াম ( K ) ।
৪০. মাটিতে অত্যধিক অ্যামোনিয়াম সালফেট ব্যবহার করলে কী ক্ষতি হয় ?
উঃ । মাটির আল্লিক ভার বেড়ে যায় ।
৪১. সোডিয়াম নাইট্রেট ব্যবহারে মাটির কী ক্ষতি হয় ?
উঃ । মাটির ক্ষারকীয়তা বেড়ে যেতে পারে ।
৪২. কোন ধরনের উদ্ভিদ চাষ করলে মাটির নাইট্রোজেন বেড়ে যায় ?
উঃ । শিম্বগোত্রীয় উদ্ভিদের চাষ করলে নাইট্রোজেন বেড়ে যায় ।
৪৩. কোন্ ছত্রাকের ফলে গমের মরিচা রোগ হয় ?
উঃ । পাক্সিনিয়া গ্রামিনিস ।
৪৪. ফসল ধ্বংসকারী প্রাণীদের কয়টি পদ্ধতিতে দমন করা যায় ও কী কী ?
উঃ । দুইটি পদ্ধতিতে যথা- ( i ) রাসায়নিক ( ii ) জৈবিক ।
৪৫. বর্তমানে কোন মেশিনের সাহায্যে ফসল তোলা আর ঝাড়াই করা যায় ?
উঃ । কম্বাইন হারভেস্টার বা কম্বাইন ( Combine ) নামের মেশিনের সাহায্যে ।
৪৬. ইঁদুর জাতীয় প্রাণীদের দমনে সাহায্যকারী দুটি রাসায়নিকের নাম লেখো ।
উঃ । জিঙ্ক ফসফাইড আর ওয়ারফেরিন ।
৪৭. মাড়াই কী ?
উঃ দানা জাতীয় ফসলের ভোজ্য অংশ থেকে ফসল উদ্ভিদকে আলাদা করার পদ্ধতিকে মাড়াই বলে ।
৪৮.জাৰ ( sodder ) ?
উঃ । ফসল তুলে নেওয়ার পর কাণ্ডের যে অংশগুলো চাষের জমিতে রয়ে যায় , সেগুলো আর ভূষি গবাদিপশুদের খাবার হিসাবে দেওয়া হয় । গবাদি পশুদের এই খাবারকে জাব বলে ।
৪৯. ধানকে কয় ভাগে ভাগ করা যায় ও কী কী ?
উঃ তিনভাগে ভাগ করা যায় যথা — আউশ , আমন , বোরো ।
৫০. উৎপাদন ক্ষমতা অনুসারে ধানকে কয়ভাগে ভাগ করা যায় ?
উঃ । দুই ভাগে যথা —– ( i ) অপেক্ষাকৃত কম ফলনশীল দেশি প্রকারের ( ii ) উচ্চফলনশীল প্রকারের ।
৫১.আমন ধান কখন চাষ হয় ?
উঃ আমন ধান বর্ষাকালে চাষ হয় ।
৫২. কোন্ ধরনের মাটি ধান চাষের উপযোগী ?
উঃ । কাদা মাটি বা এঁটেল মাটিই আমন ধানের পক্ষে উপযোগী ।
৫৩. দেশি আমন ধানের মধ্যে উৎকৃষ্ট জাভগুলো কী ?
উঃ । ভাসামানিক , ঝিঙ্গাশাল , রঘুশাল , পাটনাই- 23 , বাসমতী প্রভৃতি ।
৫৪. রত্না ধান কত দিনের মধ্যে পেকে যায় ?
উঃ । 95-115 দিনের মধ্যে থেকে যায় ।
৫৫. জয়া , জয়ন্তী ধান পাকতে কত দিন সময় লাগে ?
উঃ । 116-135 দিন সময় লাগে ।
৫৬.বোরো ধান কখন কাটা হয় ?
উঃ মার্চ - এপ্রিল মাস নাগাদ ধান কাটা হয় ।
৫৭. দুইটি দীর্ঘমেয়াদি জাতের ধান বীজের নাম বলো ।
উঃ । স্বর্ণ , মাসুরি , পঙ্কজ প্রভৃতি ।
৫৮. ভারতের অন্যতম প্রধান খাদ্যশস্য কী ?
উঃ । ধান ভারতের অন্যতম প্রধান খাদ্যশস্য ।
৫৯.ভারতের কোন্ কোন্ রাজ্যে ধানের উৎপাদন বেশি হয় ?
উঃ । পশ্চিমবঙ্গ , অন্ধ্রপ্রদেশ , পাঞ্জাব , উত্তরপ্রদেশ , ওড়িশা , তামিলনাড়ুতে ধানের উৎপাদন বেশি ।
৬০. চাল কোথা থেকে পাওয়া যায় ?
উঃ । ধান থেকে চাল পাওয়া যায় ।
৬১. চালের পুষ্টিগত গুরুত্ব কী ?
উঃ । চালে 79.1 % কার্বোহাইড্রেট , 6 % প্রোটিন এবং 0.4 % বিভিন্ন মৌল থাকে ।
৬২. ধানের ভূষি থেকে কী পাওয়া যায় ?
উঃ । ধানের ভূষি থেকে তেল পাওয়া যায় ।
৬৩. গোল্ডেন রাইস কী ?
উঃ । ভিটামিন A- এর চাহিদা মেটাতে কৃষিবিজ্ঞানীরা এক বিশেষ ধরনের ধান তৈরি করেছেন যা গোল্ডেন রাইস নামে খ্যাত ।
৬৪. আউশ ধান বোনার সময় জমি কেমন হতে হবে ?
উঃ । আউশ ধান বোনার সময় জমি নরম হতে হবে ।
৬৫.ফলের রাজা কাকে বলা হয় ? এর জন্মস্থান কোথায় ?
উঃ । আমকে ফলের রাজা বলা হয় । আমের জন্মস্থান ভারতবর্ষে ।
৬৬. পশ্চিমবঙ্গের কোথায় কোথায় আমের চাষ ভালো হয় ?
উঃ । পশ্চিমবঙ্গের মালদা , মুর্শিদাবাদ আর নদিয়াতে আমের চাষ সবচেয়ে ভালো হয় ।
৬৭. আম চারার বৃদ্ধিতে কোন্ সারের চাহিদা বেশি ?
উঃ । নাইট্রোজেনের চাহিদা বেশি ।
৬৮.আমে কী কী খাদ্য উপাদান থাকে ?
উঃ । আমে প্রোটিন - ফ্যাট ও খনিজ পদার্থ Ca , P , Fe ইত্যাদি থাকে । এছাড়াও প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন A , B- কমপ্লেক্স ও C থাকে ।
৬৯. আমগাছের কয়েকটি কলম পদ্ধতির উল্লেখ করো ।
উঃ । আমগাছের কলম পদ্ধতিগুলি হল জোড় কলম , ভিনিয়ার কলম , চিপ কলম , আঁটির কলম ।
৭০. আমগাছের কলমের সবচেয়ে প্রচলিত পদ্ধতি কী ?
উঃ । জোড় কলম সবচেয়ে প্রচলিত পদ্ধতি ।
৭১. আমাদের দেশে সাধারণত কোন সময় আম চারা লাগানো হয় ?
উঃ । আমাদের দেশে সাধারণত বর্ষাকালে আম চারা বেশি লাগানো হয় ।
৭২. পশ্চিমবঙ্গে সাধারণত কোন মাসে আম মুকুল আসে ?
উঃ । পশ্চিমবঙ্গে সাধারণত পৌষ - মাঘ মাসে আম মুকুল আসে ।
৭৩. আম চাষের জন্য কীরকম মাটি উপযোগী ?
উঃ । নদী অববাহিকার পলিমাটি আর উর্বর দোআঁশ মাটি আম চাষের পক্ষে বিশেষভাবে উপযুক্ত ।
৭৪.কয়েকটি ভালো জাতের আমের নাম লেখো । কোন্ আম শেষে পাকে ?
উঃ । হিমসাগর , বোম্বাই , ল্যাংড়া , গোলাপখাস , পেয়ারাফুলি , রানিপসন্দ , নীলাম , চৌসা , আরপালি প্রভৃতি । ঝুমকোষজলি আম সব থেকে শেষে পাকে ।
৭৫.সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে কত মিটার উচ্চতা অবধি আম গাছ ভালো জন্মায় ?
উঃ সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে 1500 মিটার উচ্চতা অবধি আম গাছ ভালো জন্মায় ।
৭৬. পশ্চিমবঙ্গের কোন্ আম সবচেয়ে আগে পাকে ?
উ: গোলাপথাস সবচেয়ে আগে পাকে ।
৭৭. অাজ বিস্তার কী ?
উঃ । উদ্ভিদের কোনো একটা অঙ্গ থেকে নতুন উদ্ভিদ তৈরি করার পদ্ধতিকে অাজ বিস্তার বলে । এটি কৃত্রিম পদ্ধতিতে করানো হয় ।
৭৮.চারের আদি নিবাস কোথায় ?
উঃ দক্ষিণ - পূর্ব এশিয়ায় ইরাবতী নদীর অববাহিকা চায়ের আদি নিবাস ।
৭৯. পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি চা উৎপাদনকারী দেশ কী কী ?
উঃ । চিন , ভারত , কেনিয়া , শ্রীলঙ্কা আর টার্কি পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি চা উৎপাদন করে ।
৮০. ভারতের প্রধান প্রধান চা উৎপাদনকারী রাজ্যগুলো কী কী ?
উঃ । ভারতের প্রধান প্রধান চা উৎপাদনকারী রাজ্য হল আসাম , পশ্চিমবঙ্গ , তামিলনাড়ু আর কেরালা ।
৮১. চায়ের চাষ কোথায় ভালো হয় ?
উঃ । 1000 থেকে 2500 মিটার উঁচু এলাকায় পাহাড়ের গায়ে অম্লমাটিতে চায়ের চাষ হয় ।
৮২. ভারতের কোন্ কোন্ জায়গার চা বিখ্যাত ?
উঃ । ভারতে নানা ধরনের চা পাওয়া যায় । তার মধ্যে দার্জিলিং , আসাম আর নীলগিরির চা বিখ্যাত ।
৮৩. কয়েকটি চায়ের জাতের উল্লেখ করো ।
উঃ । চিনা জাত , আসামি জাত , আর ক্যাম্বোড সংকর জাত ।
৮৪. কীভাবে চা গাছের বংশবিস্তার করানো হয় ?
উঃ । বীজ থেকে বা উদ্ভিদ থেকে , এই দু ভাবেই চা গাছের বংশবিস্তার করানো হয় ।
৮৫. চা কী ধরনের ফসল ?
উঃ । চা একধরনের পানীয় ফসল ।
৮৬.চা পাতা তৈরির ধরন অনুযায়ী বাণিজ্যিক চা - কে কয় ভাগে ভাগ করা যায় ও কী কী ?
উঃ । এই তিন ধরনের চা হলো কালো চা ( Black tea ) সবুজ চা ( Green tea ) আর উলং চা ( Oolong tea ) ।
৮৭. সারা পৃথিবীতে কোন্ চা বেশি উৎপাদন হয় ?
উঃ । সারা পৃথিবীতে 75 শতাংশই কালো চা উৎপাদন হয় ।
৮৮. কয়েকটি মৌমাছির প্রজাতির নাম লেখো ।
উঃ । পাহাড়ি মৌমাছি , ভারতীয় মৌমাছি , ছোটো মৌমাছি , ইউরোপীয় মৌমাছি ।
৮৯. মৌ চাষ কী ?
উঃ । বিজ্ঞানসম্মত ও কৃত্রিম উপায়ে মৌমাছি প্রতিপালন করা হয় । এটাই মৌমাছি পালন বা মৌ চাষ ।
৯০. মধুমঙ্গীশালা বা এপিয়ারি কী ?
উঃ । মৌমাছি পালন করার জন্য যে প্রাকৃতিক বা কৃত্রিম মৌমাছিদের থাকার জায়গা ব্যবহার করা হয় , সেটাই হল মধুমক্ষীশালা বা এপিয়ারি ।
৯১. ভারতে মৌমাছি পালনের জন্য কারকম পদ্ধতি ব্যবহার হয় ?
উঃ । ভারতে মৌমাছি পালনের জন্য দু - ধরনের পদ্ধতি ব্যবহার করা হয় যথা— ( i ) দেশীয় পদ্ধতি ( ii ) আধুনিক বা বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি ।
৯২. মৌমাছিদের কাছ থেকে আমরা কী কী পাই ?
উঃ । মৌমাছিদের কাছ থেকে আমরা মধু আর মোম পাই ।
৯৩. মৌচাকে সাধারণত কয় ধরনের মৌমাছি থাকে ?
উঃ । সাধারণত তিন ধরনের মৌমাছি দেখা যায় যথা — রানি মৌমাছি , পুরুষ মৌমাছি আর শ্রমিক মৌমাছি ।
৯৪.মৌমাছিরা কী ধরনের জীব ?
উঃ । মৌমাছিরা সমাজবদ্ধ জীব latatis fac ।
৯৫.রানি মৌমাছির কাজ কী ?
উ: রানি মৌমাছির কাজ ডিম পাড়া ।
৯৬. পুরুষ মৌমাছির কাজ কী ?
উ: পুরুষ মৌমাছির কাজ রানি মৌমাছির সঙ্গে প্রজননে অংশ নেওয়া ।
৯৭.পোলট্রি পাখি কাদের বলে ?
উঃ । অর্থনৈতিক গুরুত্ব রয়েছে এমন পাখিরাই হলো পোলট্রি পাখি । যেমন — হাঁস , মুরগি ।
৯৮. একটি অর্থকরী পাখির নাম লেখো ।
উঃ । পোলট্রি মুরগি একটি অর্থকরী পাখি ।
৯৯. লেগহর্ন বছরে কটা ডিম পাড়তে পারে ?
উঃ । 150-200 - টি ডিম পাড়ে ।
১০০. দুটি সঠিক মাংস উপাদানকারী পোলটি পাখির নাম লেখো ।
উঃ । আসিল , চিটাগং ।
১০১. নন সিটার মুরগি বলতে কী বোঝ ?
উঃ । যেসব মুরগি ডিমে তা দেয় না তাদের ননসিটার বলে । যেমন - লেগহন ।
❐ সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর :
প্রঃ । কৃষিবিজ্ঞানের আলোচ্য বিষয়গুলি কী কী ?
উঃ । কৃষিবিজ্ঞানের আলোচ্য বিষয়গুলি হল ( i ) মাটির ব্যবস্থাপনা অর্থাৎ মাটিকে ফসল ফলানোর উপযোগী করে তোলা । ( ii ) ফল , ফুল , সবজি আর সাজানোর কাজে লাগে এমন বিভিন্ন উদ্ভিদের চাষ । ( iii ) অধিক ফসল উৎপাদন । ( iv ) বিভিন্ন জাতের পশুপালন ।
প্রঃ । ফসল কী ? উদাহরণ দাও ।
উঃ । অনেকটা জায়গা জুড়ে একই ধরনের উদ্ভিদের চাষ যখন করা হয় , তখন ওই উদ্ভিদদের একসঙ্গে শস্য বা ফসল বলা হয় । যেমন — তন্তু জাতীয় ফসল , ডালজাতীয় ফসল , তণ্ডুল জাতীয় ফসল ।
প্রঃ । উদ্যান বিজ্ঞান কী ? উদাহরণসহ লেখো ।
উঃ । কৃষিবিজ্ঞানের যে শাখায় ফল আর সবজি চাষের পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করা হয় তাকে উদ্যানবিজ্ঞান বলা হয় । যেমন — টম্যাটো , বাঁধাকপি , কলা , আঙুর , গোলাপ , জুঁই ।
প্রঃ । কৃষিকাজ কী ? একজন কৃষককে কী কী কাজ করতে হয় ?
উঃ । ফসল উৎপাদনের জন্য একজন কৃষক বা চাষিকে বেশ কিছু সময় জুড়ে নানারকম কাজ করে যেতে হয় । এই কাজগুলোই হল কৃষিকাজ । ( i ) চাষের জমির মৃত্তিকা প্রস্তুতিকরণ । ( ii ) বীজ শোধন , বীজ বপন করা বা বীজ বোনা । ( iii ) কৃষিজমিকে উর্বর রাখতে এবং ফসল বাড়াতে সার প্রয়োগ । ( iv ) নিয়মিত জলসেচ করা । ( v ) ফসলের মধ্যে আগাছা জন্মালে তা পরিষ্কার করা । ( vi ) ক্ষতিকারক কীটপতঙ্গ থেকে ফসলকে বাঁচানো । ( vii ) ফসল পাকলে ফসল তোলা । ( viii ) ফসল সঞ্চয় করে রাখা ।
প্র: সার কাকে বলে ? সার কয় রকমের ও কী কী ?
উঃ । একই জমিতে বারবার ফসল ফলানো হলে মাটিতে থাকা উদ্ভিদের পুষ্টি উপাদানগুলো ফুরিয়ে আসে , তাই চাষের জমিতে সার মেশাতে হয় , এই সার হল মাটিতে থাকা উদ্ভিদের পুষ্টি উপাদানের ঘাটতি পুষিয়ে দিয়ে উদ্ভিদের বৃদ্ধির সহায়ক হয় সেসব পদার্থকে সার বলে । এই সার আবার দু - রকমের হয় । জৈব সার আর অজৈব সার ।
প্র: জৈব সার কীভাবে তৈরি হয় ?
উঃ । মৃত উদ্ভিদ আর প্রাণীদের বর্জ্য পচিয়ে জৈব সার তৈরি হয় । চাষিরা খোলা জায়গায় একটি গর্ত খুঁড়ে সেখানে বর্জ্য পচে যাওয়ার জন্য ফেলে রাখেন । ব্যাকটেরিয়া আর ছত্রাকের বিয়োজন ও রূপান্তর ক্রিয়ায় ওই সার বর্জ্য পদার্থগুলো পচে গিয়ে জৈব সার তৈরি হয় ।
প্র: NPK কথার অর্থ কী ?
উঃ । একধরনের রাসায়নিক পদার্থ হল অজৈব সার । সার কারখানায় তৈরি হয় এবং তিন ধরনের মৌলের ঘাটতি পূরণ করে । যথা— N মানে নাইট্রোজেন , P হল ফসফরাস , K পটাশিয়াম । এই তিনটিই হল অজৈব সার যা রাসায়নিক পদার্থ দিয়ে তৈরি । এগুলি উদ্ভিদের বৃদ্ধির সহায়ক ।
প্র: অজৈব সার কী ? অজৈব সার বেশি ব্যবহারের সমস্যাগুলো কী কী ?
উঃ । অজৈব সার হল একধরনের রাসায়নিক পদার্থ । সার কারখানায় অজৈব সার তৈরি হয় । এতে থাকে নানা অজৈব লবণ , যা উদ্ভিদের বৃদ্ধি ঘটায় । ( i ) অত্যধিক অজৈব সার ব্যবহার করলে মাটিতে থাকা উপকারী ব্যাকটেরিয়া কাজে বাধা সৃষ্টি করে মাটির উর্বরাশক্তি বা উৎপাদন ক্ষমতা কমিয়ে দেয় । ( ii ) মাটির বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী অজৈব সার ব্যবহার না করলে মাটির রসায়ন পালটে গিয়ে ভালোর চেয়ে ক্ষতিই বেশি হয় । ( iii ) অম্ল ও ক্ষারের ভারসাম্য নষ্ট হয় । ( iv ) মাটি থেকে এই সারের ধোয়া জল নদী বা পুকুরে পড়ে জলদূষণ ঘটায় । প্র । জৈব সার কেন অজৈব সারের চেয়ে ভালো ? উঃ । ( i ) জৈব সার মাটির জলধারণ ক্ষমতা বাড়ায় । ( ii ) জৈব সার ব্যবহার করলে মাটি রন্ধযুক্ত হয় ফলে মাটির মধ্যে দিয়ে বিভিন্ন গ্যাসের আদান - প্রদান ভালো হয় । ( iii ) জৈব সার মাটির গঠন উন্নত করতে সাহায্য করে । ( iv ) জৈবসার মাটিতে থাকা উপকারী জীবাণুদের সংখ্যা বাড়াতে সাহায্য করে ।
প্রঃ । অণুজীব সার কী ?
উঃ । মাটির পুষ্টি উপাদানগুলো বজায় রাখার জন্য অনেক সময় মাটিতে নানারকম মিথোজীবী অনুজীব মেশানো হয় । এটাই অণুজীব সার । এই সার মাটির জলধারণ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে । মাটিকে রন্দ্রযুক্ত করে বায়ু চলাচল বাড়ায় । যা ফসলের পক্ষে খুবই উপকারী ।
প্রঃ । ভূমিকৰ্ষণ কী ?
উঃ । যে পদ্ধতিতে চাষের জমির মাটিকে ওপর - নীচ আর আলগা করা হয় তাকে ভূমিকৰ্ষণ বলা হয় । এই ভূমিকর্ষণের জন্য প্রাচীনকাল থেকে লাঙল ব্যবহার হলেও বর্তমানে বড়ো বড়ো চাষের জমি কর্ষণ করতে ট্রাক্টরের সাহায্য নেওয়া হচ্ছে ।
প্র: বীজ বপন যন্ত্র দ্বারা কী উপকার হয় ?
উঃ । বর্তমানে জমিতে বীজ বোনার জন্য উন্নত বীজ বপন যন্ত্র ব্যবহার করা হয় । এর সাহায্যে সঠিক দূরত্ব এবং গভীরতায় বীজ বোনা সম্ভব । এই যন্ত্রের সাহায্যে বীজ বোনা হলে বীজগুলো সবসময় মাটি দিয়ে ঢাকা থাকে । ফলে পাখিরাও ওই বীজের নাগাল পায় না । এই যন্ত্র দিয়ে বীজ বপন করলে সময় ও শ্রমের সাশ্রয় হয় ।
প্র: উদ্ভিদের পুষ্টি উপাদান বলতে কী বোঝ ? এটি কয় রকমের ও কী কী ? উঃ । উদ্ভিদের ঠিকভাবে বেড়ে ওঠার জন্য কিছু মৌলের প্রয়োজন , এগুলি হল উদ্ভিদের পুষ্টি উপাদান । এই পুষ্টি উপাদানকে আবার দুধরনের হয় যথা— ( i ) মুখ্য খাদ্য উপাদান – N , O , H , C , S , Mg . ( ii ) গৌণ খাদ্য উপাদান—– B , CU , Fe , Mn , Zn , Cl , Mo
প্রঃ । জলসেচ কী ?
উঃ । প্রত্যেক জীবেরই বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজন জল । এছাড়া জলের সঙ্গে মিশে পুষ্টি উপাদানগুলো উদ্ভিদের বিভিন্ন অঙ্গে পৌঁছায় , ভালো ফসল পেতে গেলে মাটির আর্দ্রতা বজায় রাখা খুবই জরুরি । মাঠের ফসলে তাই নির্দিষ্ট দিন অন্তর জল সরবরাহ করা দরকার । এটাকেই জলসেচ বলে । সাধারণত নদী , হ্রদ , পুকুর , খাল , বিল , জলাধার , কুয়ো , টিউবওয়েল ইত্যাদি জলসেচের কাজে ব্যবহার করা হয় ।
প্র: আগাছা কী ? কীভাবে এরা ফসলের ক্ষতি করে ?
উঃ । অনেকসময় চাষের জমিতে যে ফসলের চাষ করা হচ্ছে সেটা ছাড়াও অন্যান্য আরও কিছু উদ্ভিদ জন্মায় । এই অপ্রয়োজনীয় উদ্ভিদগুলিকেই আগাছা বলে । এরা ফসলের জল , সার এবং আলোতে ভাগ বসায় । তাই ফসলের বৃদ্ধি ব্যাহত হয় । ফসলের উৎপাদন ব্যাহত হয় ।
প্রঃ । কীভাবে আগাছা দমন করা যায় ?
উঃ । চাষিরা আগাছা দমনের জন্য নানা পদ্ধতি ব্যবহার করেন । ( i ) চাষিরা অনেকসময় হাতে করে মাটি থেকে আগাছা তুলে ফেলেন । ( ii ) আবার মাটির খুব কাছ থেকে চাষিরা এই আগাছাগুলিকে কেটে দেন । ( iii ) কিছু রাসায়নিক স্প্রে করে আগাছা দমন করা যায় যেমন – 2,4- D , পিক্লোরাম , ভ্যালাপোন প্রভৃতি ।
প্রঃ । ক্ষতিকারক কীটপতঙ্গের হাত থেকে ফসল বাঁচাতে রাসায়নিক দমন পদ্ধতির ক্ষতিকারক দিকগুলি কী কী ?
উঃ । ( i ) রাসায়নিক পদার্থগুলো ফল বা সবজির মাধ্যমে মানুষের দেহে প্রবেশ করলে নানা রোগ দেখা দেয় । ( ii ) অনেকসময় ক্ষতিকারক প্রাণীগুলি নির্দিষ্ট একটা রাসায়নিকের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলে । ( iii ) রাসায়নিক পদার্থগুলো অনেক সময় মৌমাছি , প্রজাপতির মতো উপকারী পতঙ্গদের মেরে ফেলে । ( iv ) আবার অনেক সময় এই রাসায়নিক পদার্থগুলো নদী বা হ্রদের জলে মিশে দূষণ ছড়ায় ।
প্র: জলসেচের পারসি চাকা বা রাহাত পদ্ধতি বলতে কী বোঝ ?
উঃ । পারসি চাকা বা রাহাত পদ্ধতিতে একটা বড়ো কুয়ো আর চাকা ব্যবহার করা হয় । চাকার গায়ে অনেকগুলো বালতি লাগানো থাকে । পশুশক্তিকে কাজে লাগিয়ে ওই ঢাকাটা ঘুরিয়ে কুয়ো থেকে বালতিতে জল তোলা হয় । তারপর সেই জল চাষের জমিতে ছড়িয়ে দেওয়া হয় । এই পদ্ধতিকেই পারসি ঢাকা বা রাহাত পদ্ধতি বলে ।
প্রঃ । জলসেচের একটি আধুনিক পদ্ধতির উল্লেখ করো ।
উঃ । জলসেচের একটি আধুনিক পদ্ধতি হল ফোয়ারা পদ্ধতি , এই পদ্ধতিতে জলের অপচয় কমানো সম্ভব হয় চাষের জমিতে ফসলের ওপর ফোয়ারার মতো জল দেওয়া হয় ।
প্রঃ । কীভাবে চাষিরা ফসল সঞ্চয় বা মজুত করেন ?
উঃ । সদ্য সংগ্রহ করা ফসলে আর্দ্রতা বেশি থাকে , তাই অণুজীবের আক্রমণ ঘটতে পারে । তাই সূর্যের আলোয় ভালো করে ফসল শুকিয়ে নিতে হয় । তারপর চাষিরা সেই ফসল চটের ব্যাগ বা ধাতব পাত্রে রাখেন । এছাড়াও ব্যাপক মাত্রায় সঞ্চয়ের জন্য শস্য গার বা বায়ুহীন ঘর ব্যবহার করা হয় । উন্নতমানের এইসব শস্যাগার বায়ুহীন , আর্দ্রতাশূন্য হয় । এমনকি সারাক্ষণ একটা নির্দিষ্ট তাপমাত্রা বজায় রাখার ব্যবস্থাও এখানে থাকে । আবার অনেক সময় গুদামে কীটনাশক আর ছত্রাকনাশক স্প্রে করা হয়
প্র: প্রধানের বীজ কীভাবে শোধন করা হয় ?
উঃ । ( i ) শুভ শোষন পদ্ধতিঃ জমিতে সরাসরি বীজ বোনার জন্য বা শুকনো বীজতলায় বীজ বোনার জন্য এই পদ্ধতি কাজে লাগে । বীজবাহিত রোগজীবাণু ধ্বংস করার জন্য বীজের সঙ্গে রাসায়নিক পদার্থের গুঁড়ো মেশানো হয় । ( ii ) সিক্ত শোধন পদ্ধতিঃ এই পদ্ধতিতে বীজবাহিত রোগজীবাণু ধ্বংসের জন্য বীজগুলো রাসায়নিক পদার্থের জলীয় মিশ্রণে ভিজিয়ে রাখা হয় । অনেক সময় উর্দু জলেও বীজ শোধন করা হয় ।
প্র: কীভাবে ধান বীজ বোনা আর চারগাছ রোপণ করা হয় ?
উঃ । বীজ বোনা : মাটি বেশ নরম করে আউশ ধানের বীজ সরাসরি জমিতে বোনা হয় , হাতে করে ছিটিয়ে বা বীজবপন যন্ত্রের সাহায্যে এই বীজ বোনা হয় । চারাগাছ রোপণ ঃ বীজতলা থেকে বীজগুলো সাবধানে শেকড় শুদ্ধ তুলে আনা হয় । নির্দিষ্ট দূরত্ব অন্তর চারাগাছগুলো রোপণ করা হয় ।
প্র: আমগাছে মুকুল আসার সময় কীরকম আবহাওয়া থাকা দরকার ? এবং কেন ?
উঃ । আমগাছে মুকুল আসার সময় আকাশ বেশ পরিষ্কার থাকা দরকার । তুষারপাত মুকুলের পক্ষে ভীষণ ক্ষতিকারক , এতে মুকুল নষ্ট হয়ে যায় , ঝরে পড়ে তাতে ফলন কম হয় ।
প্র: কীভাবে আমের জোড়কলম করা হয় ?
উঃ । আঁটি থেকে তৈরি করা একটা চারাগাছের ( স্টক ) সঙ্গে উন্নত জাতের আমগাছের ( মিরন ) শাখা একসঙ্গে জোড় বেঁধে কলম করা হয় । সেইজন্য এই পদ্ধতির নাম জোড়কলম । ( 1 ) কলম করার জন্য চারাগাছ আর উন্নত জাতের আমগাছের শাখা দুটোরই কিছুটা করে অংশ কেটে নিয়ে দুটোকে জোড়া লাগিয়ে সুতলি দড়ি দিয়ে বেঁধে দেওয়া হয় । জোড় না লাগা পর্যন্ত চারাগাছটাতে জল দেওয়া হয় । ( ii ) জোড়া লাগা সম্পূর্ণ হলে নির্বাচিত সিয়ন গাছটার জোড়ের নীচের দিকের অংশ ও চারাগাছের জোড়ের ওপরের অংশ একেবারে ? না কেটে 2 থেকে 3 বার কেটে ফেলা হয় । ( iii ) জোড়কলমের মাধ্যমে তৈরি হওয়া গাছটাকে কয়েকদিনের জন্য ছায়ায় রাখা হয় । তারপর নার্সারিতে লাগানো হয় ।
প্রঃ । চায়ের গুণাগুণ উল্লেখ করো ।
উঃ । ( i ) চা পান করলে শরীরে উদ্দীপনা আসে , এর মূলে আছে চায়ে ক্যাফিনের উপস্থিতি । ( ii ) চায়ে বেশি পরিমাণে থাকা ফ্লুরাইড দাঁতের ক্ষয় রোধ করে । ( iii ) সবুজ চায়ে থাকে ভিটামিন K যা শরীরের ভেতরে হওয়া রক্তক্ষরণ , রিডম্যাটিক প্রদাহ , হার্ট অ্যাটাক হতে বাধা দেয় । ( iv ) চায়ের প্যান্টোথেনিক অ্যাসিড , ক্যাফিন ও থিয়োফাইলিন স্নায়ুকে উদ্দীপিত করে আর হূৎপিণ্ডকে ভালো রাখে । ( v ) কালো চায়ে প্রচুর ভিটামিন B- কমপ্লেক্স আর ফলিক অ্যাসিড থাকে । এদের প্রদাহ প্রতিরোধ আর ক্যানসার প্রতিরোধী ভূমিকা আছে । ( vi ) চায়ে থাকে ফ্র্যাভোনয়েড , ট্যানিন , উদ্বায়ী তেল আর ভিটামিন B যা স্বাস্থ্যের পক্ষে ভালো ।
প্রঃ । কীভাবে চা সংগ্রহ করা হয় ?
উঃ । অগ্রমুকুল , পর্বমধ্য আর তার নীচের 2-3টি পাতাযুক্ত চা গাছের শাখা তোলা হয় অর্থাৎ একটা কুঁড়ি আর 2 টো 3 টে পাতা । এই কাজের ওপরেই নির্ভর করে চায়ের উৎপাদন আর চায়ের গুণাগুণ । বাণিজ্যিক চা গাছগুলো থেকে বছরে 35-40 বার পাতা তোলা হয় । একেকবার প্রতিটি গাছ থেকে 10-15 গ্রাম পাতা তোলা হয় ।
প্রঃ । চা পাতা তৈরির ধরন অনুযায়ী বাণিজ্যিক চা - কে কয়ভাগে ভাগ করা যায় ও কী কী ?
উঃ । তিন ভাগে ভাগ করা যায় যথা —— ( i ) কালো চা ( Black tea ) । ( ii ) উলং চা ( Oolong tea ) । ( iii ) সবুজ চা ( Green tea ) । তবে এর মধ্যে সারা পৃথিবীর চা উৎপাদনের প্রায় 75 শতাংশই হল কালো চা ।
প্র: পশুপালন কী ?
উঃ । প্রাণীজাত খাবার নিয়মিত আর যথেষ্ট পরিমাণে পেতে কিছু কিছু প্রাণী যেমন মৌমাছি , পোলট্রি , মাছ প্রভৃতি প্রতিপালন করা দরকার । আর সেই সঙ্গে দরকার তাদের প্রজননের সুব্যবস্থা করা , এটাই হলো পশুপালন ।
প্রঃ । মৌমাছিরা কীভাবে মৌচাক তৈরি করে ?
উঃ । শ্রমিক মৌমাছির পেটের থলিতে মোমগ্রন্থি থাকে । এই মোমগ্রন্থির ক্ষরণ দিয়ে তারা মৌচাক তৈরি করে , প্রতিটি মৌচাকে অসংখ্য ষড়ভুজাকৃতি প্রকোষ্ঠ থাকে ।
প্রঃ । মৌমাছি কীভাবে মধু সংগ্রহ করে ?
উঃ । শ্রমিক মৌমাছিরা ফুল থেকে মকরন্দ সংগ্রহ করে । সংগ্রহ করা মকরন্দ নিজেদের দেহের মথুথলিতে জমা রাখে । মধু থলিতে মকরন্দের সঙ্গে লালারস মেশে । এর ফলে মকরন্দে থাকা শর্করার কিছু পরিবর্তন হয় । শ্রমিক মৌমাছি এরপর এই মিশ্রণকে মধু প্রকোষ্ঠে উগরে দেয় । আর ডানা দিয়ে ক্রমাগত বাতাস করতে থাকে । ফলে জল বাষ্পীভূত হয়ে মধুতে পরিণত হয় ।
প্রঃ । মৌমাছিরা কীভাবে বেড়ে ওঠে ?
উঃ । মৌমাছিদের জীবনে চারটে দশা দেখা যায় যথা — ডিম , লার্ভা , পিউপা , পূর্ণাঙ্গ । রানি আর পুরুষ মৌমাছির মিলনের পর রানি মৌমাছি ডিম দেয় । তারপর ডিম থেকে লার্ভা আর লার্ভা থেকে হয় পিউপা হয় । এই পিউপারা পূর্ণাঙ্গ মৌমাছিতে পরিণত হয় ।
প্রঃ । মৌমাছি পালন বা মৌচাক কী ? মৌমাছি পালনের আধুনিক পদ্ধতির বর্ণনা করো ।
উঃ । বন্য মৌমাছির চাক থেকে যে মধু পাওয়া যায় , তার পরিমাণ খুবই অল্প । আর সেটা নিয়মিত পাওয়াও যায় না । আর এই মধুর গুণাগুণও নিয়ন্ত্রণ করা যায় না , তাই বিজ্ঞানসম্মত ও কৃত্রিম উপায়ে মৌমাছি প্রতিপালন করা হয় এটাই মৌমাছি পালন বা মৌচাক । ( i ) প্রথমে কৃত্রিম মৌচাক তৈরি করা হয় । ( ii ) একটি রানি মৌমাছি আর কতকগুলো শ্রমিক মৌমাছিদের ধরে এনে কৃত্রিম মৌচাকে ছেড়ে দেওয়া হয় । পরে আরও অনেক মৌমাছি এখানে জড়ো হয় । ( iii ) খুব অল্প সময়ের মধ্যে রানি মৌমাছির ডিম থেকে মৌচাকে প্রচুর মৌমাছির সৃষ্টি হয় । ( iv ) সরষে , তিল , মৌরি , আম , জাম , লেবু প্রভৃতি গাছ থেকে মৌমাছিরা মকরন্দ সংগ্রহ করে । তাই মৌমাছি পালন করতে গেলে মধুমক্ষীশালার কাছাকাছি এইসব গাছ থাকা দরকার । ( v ) মৌচাক থেকে বিশুদ্ধ মধু সংগ্রহ করার জন্য বিশেষ ধরনের মধু নিষ্কাশন যন্ত্র ব্যবহার করা হয় ।
প্র: মধুর পুষ্টিগুণ সম্বন্ধে লেখো । উঃ । মধুতে প্রচুর গ্লুকোজ ও ফ্রুক্টোজ থাকায় মধু অত্যন্ত পুষ্টিকর । এছাড়া এতে অ্যামাইনো অ্যাসিড ও বিভিন্ন খনিজ পদার্থ ( Na , K , Ca , Fe , Mg . P ) থাকে । এছাড়াও মধুতে ভিটামিন A , B কমপ্লেক্স ও C থাকে ।
প্র: সংগ্রহ ভিত্তিক ( Capture ) মাছ চাষ বলতে কী বোঝ ?
উঃ । নদ - নদী ও বিশাল জলাশয়ে মাছ পালন করা সম্ভব হয় না । তাই নদ - নদী ও বিশাল জলাশয়গুলোতে কো মাছ ধরা হয় । একে সংগ্রহভিত্তিক মাছ চাষ বলে ।
প্রঃ পালনভিত্তিক ( Culture ) মাছ চাষ বলতে কী বোঝ ?
উঃ । পুকুর খাল , বিল , ডোবা , ভেড়ি প্রভৃতি জলাশয়ে মাছের চারা ছাড়া হয় । নিয়মিত সার প্রয়োগ , খাদ্য সরবরাহ , রোগ নিয়ন্ত্রণ ও অন্যান্য পরিচর্যার মাধ্যমে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির চেষ্টা করা হয় । একে পালনভিত্তিক ( Culture ) মাছ চাষ বলে ।
প্র: কাপ কী ?
উঃ । মিঠে জলে বাস করা যেসব অস্থিযুক্ত মাছের ত্রিকোণাকৃতি মাথায় আঁশ থাকে না । অতিরিক্ত শ্বাসযন্ত্র ও চোয়ালে দাঁত অনুপস্থিত আর দেহের ভেতরে পটকা থাকে তারাই হল কার্প , যেমন — বুই , কাতলা , বাটা ইত্যাদি মাছ ।
প্রঃ । মেজর কার্পের বৈশিষ্ট্যগুলি লেখো ।
উঃ । মেজর কার্পের বৈশিষ্ট্যগুলি হল ( i ) আকারে বড়ো । ( ii ) তাড়াতাড়ি বাড়ে । সাধারণত বন্ধ জলে ভিম পাড়ে না । ( iii ) ব্যবসায়িক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ আর চাহিদাও বেশি । উদাহরণ — রুই , কাতলা , মৃগেল , কালবোস ।
প্রঃ । মাইনর কার্প - এর বৈশিষ্ট্যগুলি কী ?
উঃ । মাইনর কার্পের বৈশিষ্ট্যগুলি হল ( i ) আকারে ছোটো । ( ii ) তাড়াতাড়ি বাড়ে না , সাধারণত বন্ধ জলে ডিম পাড়ে । ( iii ) ব্যবসায়িক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ নয় । উদাহরণ — বাটা , পুঁটি ইত্যাদি ।
প্রঃ । বহিরাগত কার্পের বৈশিষ্ট্যগুলি লেখো ।
উঃ । ( i ) বিদেশ থেকে আমদানি করা হয় । ( ii ) ভারতীয় জলবায়ুতে মানিয়ে নিয়ে বেড়ে ওঠে আর প্রজননেও সক্ষম । উদাহরণ — গ্রাস কার্প , ঘেসো রুই , কমন কার্প , আমেরিকান রুই , সিলভার কার্প ।
প্র: কীভাবে ডিম পোনা তৈরি হয় ?
উঃ । সাধারণত বর্ষাকালে রুই , কাতলা , মৃগেলের স্ত্রী মাছগুলো অগভীর জলে ডিম ছাড়ে আর পুরুষ মাছ তার শুক্রাণু নিঃসরণ করে । শুক্রাণু আর ডিম্বাণুর মিলনে ডিম পোনা তৈরি হয় , আর মাছচাষিরা জাল দিয়ে হেঁকে ডিম পোনা আর নিষিক্ত ডিমগুলোকে হাঁড়িতে সংগ্রহ করে । নিষিক্ত ডিমগুলো থেকেই ডিম পোনা তৈরি হয় ।
→ টীকা লেখো :
ফসলের জৈব দমন পদ্ধতি :
এই পদ্ধতিতে একটি জীবকে অন্য জীবের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে ব্যবহার করা হয় । পরভূক আর পরজীবীদের মাধ্যমে ফসল ধ্বংসকারী জীবেদের নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হয় । প্রকৃতিগতভাবে কয়েক ধরনের মাকড়সা বোলতা , ভীমরুল , গঙ্গাফড়িং ও বেশ কিছু ধরনের পাখি । ফসলের শত্রুদের যেমন মথ , রস শোষক পোকা , উই , উচ্চিংড়ে প্রভৃতি ধরে খায় । তাছাড়াও কিছু ছত্রাক , প্রোটোজোয়া , ব্যাকটেরিয়া আর ভাইরাস ফসলের শত্রুদের দেহে পরজীবী রূপে বাস করে ওইসব জীবদের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে রাখে ।
খারিফ শস্য : মৌসুমি বায়ুর আগমনের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে ভারতে যে কৃষি ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে , তাকে খারিফ চাষ বলে । সাধারণত জুন জুলাই মাসে এর বপন শুরু হয় এবং বর্ষার শেষে নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে ফসল তোলা হয় । এই কৃষি মৌসুমি বায়ু নির্ভর বলে উৎপাদন প্রায় ব্যাহত হয় । আমন ধান , ভুট্টা , বাদাম , কার্পাস , আখ , ডাল প্রভৃতি হল খারিফ শস্য ।
রবিশস্য : মৌসুমি বায়ুর প্রত্যাগমনের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে ভারতে যে কৃষিজ ফসল উৎপাদন করা হয় তাকে রবিশস্য বলে । সাধারণত অক্টোবর - নভেম্বর মাসে এই ফসলের বপন শুরু হয় এবং শীতের শেষে ফেব্রুয়ারি - মার্চ মাসে ফসল তোলা হয় । এই ফসল সম্পূর্ণ জলসেচ নির্ভর । এই স্বাভাবিক কারণেই সেচসেবিত অঞ্চলের পরিমাণ , সময়ে সেচের জল পাওয়া প্রভৃতি ব্যবস্থার ওপরে রবি চাষের সাফল্য নির্ভর করে । গম , বোরো ধান , ছোলা , জোয়ার , বিভিন্ন শাকসবজি , আলু , তৈলবীজ প্রভৃতি হল রবিশস্য ।
No comments:
Post a Comment