অণুজীবের জগৎ
প্রশ্ন উত্তর
অধ্যায় -৮ প্রশ্ন উত্তর পড়তে ক্লিক করো নিচের লিঙ্ক এ
👉 ( মানুষের খাদ্য ও খাদ্য উৎপাদন )
❐ অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর ঃ
১. অণুজীব কাদের বলে ?
উঃ । যে সমস্ত জীবদের খালি চোখে দেখা যায় না তাদের অণুজীব বলে ।
২. অণুজীবদের কোথায় দেখা যায় ?
উঃ । পৃথিবীর প্রায় সর্বত্র এদের পাওয়া যায় , গরম মরুভূমি , মেরু অঞ্চলের বরফের স্তূপে , নোনা জলে , জলা ভূগর্ভে এমনকি জীবদেহেও পাওয়া যায় ।
৩. এদের বেঁচে থাকার জন্য কী ধরনের জায়গা গুরুত্বপূর্ণ ?
উঃ । এদের বেঁচে থাকার জন্য ভেজা জায়গা খুব গুরুত্বপূর্ণ ।
৪. কোন ধরনের জায়গায় এরা খুব তাড়াতাড়ি বাড়ে ?
উঃ । অন্ধকারময় জায়গায় এরা তাড়াতাড়ি বাড়ে ।
৫. কত বছর ধরে পৃথিবীতে অণুজীব টিকে আছে ?
উঃ । প্রায় 3.8 মিলিয়ন বছর ধরে অণুজীব পৃথিবীতে টিকে আছে ।
৬. মাটিতে কত রকমের অণুজীব বাস করে ?
উঃ । প্রায় 10 লক্ষ ধরনের অণুজীব বসবাস করে ।
৭. এক গ্রাম মাটিতে কত অণুজীব থাকে ?
উঃ । এক গ্রাম মাটিতে 100 কোটি অণুজীব থাকে ।
৮. অনাক্রম্যতা কী ?
উঃ । কোনো জীবদেহের রোগ প্রতিরোধের স্বাভাবিক ক্ষমতাই হল অনাক্রম্যতা ( Immunity ) ।
৯. ভাইরাস কী ?
উঃ । অন্য কোনো জীবদেহে বাসা বাঁধে বা অপর কোনো জীবদেহে থেকে খাদ্য সংগ্রহ করে এমন ধরনের অণুজীব হল ভাইরাস ।
১০. কত তাপমাত্রায় অণুজীবেরা বেশি বাড়ে ?
উঃ । বেশির ভাগ অণুজীব সাধারণত 25 ° C থেকে 38 ° C তাপমাত্রার মধ্যে তাড়াতাড়ি বাড়ে ।
১১. থার্মোফিলিক ব্যাকটেরিয়া কোথায় দেখা যায় ?
উঃ । উষু প্রস্রবণের জলে বা গভীর সমুদ্রের গরম জল বেরোবার উৎসের কাছাকাছি থার্মোফিলিক ব্যাকটেরিয়া পাওয়া যায় ।
১২. ব্যাকটেরিয়া কীরকম আকারের হতে পারে ?
উঃ । ব্যাকটেরিয়া কমা , রড , প্যাঁচানো স্কু আকারের বা গোলাকার হয় ।
১৩. ব্যাকটেরিয়ার দেহে নিউক্লিয়াসের পরিবর্তে কী থাকে ?
উঃ । প্যাঁচানো DNA থাকে ।
১৪. স্টেইন ( Stain ) কী ?
উঃ অণুজীবদের অণুবীক্ষণের মধ্যে দিয়ে দেখার সময় অনেকক্ষেত্রে বিশেষ বিশেষ রঙের সাহায্যে রাঙিয়ে নিতে হয় । এই রঙগুলোকে স্টেইন বলে ।
১৫. অণুজীবেরা প্রধানত কয় ধরনের হয় ?
উঃ । অণুজীবেরা সাধারণত চার ধরনের হয় ।
১৬. জলাতঙ্কের টিকা কে আবিষ্কার করেন ?
উঃ । ফরাসি বিজ্ঞানী লুই পাস্তুর জলাতঙ্কের টিকা আবিষ্কার করেন ।
১৭. কে , কত খ্রিস্টাব্দে ব্যাকটেরিয়া শব্দটি ব্যবহার করেন ?
উঃ । এরেনবার্গ , 1828 খ্রিস্টাব্দে ব্যাকটেরিয়া শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেন ।
১৮. আদ্যপ্রাণীর দেহ কয়টি কোশ দ্বারা গঠিত ?
উঃ । আদ্যপ্রাণীর দেহ একটিমাত্র কোশ দ্বারা গঠিত ।
১৯. শৈবাল কোথায় বাস করে ?
উঃ । শৈবাল প্রধানত জলে থাকে ।
২০. ছত্রাক কোথায় থাকে ?
উঃ । এরা জলে , স্থলে , আলোর উপস্থিতি বা অনুপস্থিতিতে থাকতে পারে ।
২১. অ্যামিবার গমন অঙ্গের নাম কী ?
উঃ । অ্যামিবার গমন অঙ্গের নাম ক্ষণপদ ।
২২. হাইফি কী ?
উঃ । ছত্রাকের দেহ সরু সুতোর মতো অংশ দিয়ে তৈরি । এই সুতোর মতো অংশকে হাইফি বলে ।
২৩. একটি এককোশী শৈবালের নাম লেখো ।
উ: একটি এককোশী শৈবাল হল ক্ল্যামাইডোমোনাস ।
২৪. একটি বহুকোশী শৈবালের নাম লেখো ।
উঃ । একটি বহুকোশী শৈবাল হল স্পাইরোগাইরা ।
২৫. শৈবাল কি নিজের খাদ্য নিজেই তৈরি করতে পারে ?
উঃ । হ্যাঁ , নানা আকৃতির ক্লোরোপ্লাস্ট থাকায় শৈবাল নিজেদের খাদ্য নিজেরা তৈরি করতে পারে ।
২৬. ভাইরাস কথাটির শব্দগত অর্থ কী ?
উঃ । ভাইরাস কথাটির শব্দগত অর্থ হল বিষ ।
২৭. বসন্তরোগের টীকা কে আবিষ্কার করেন ?
উঃ । বিজ্ঞানী এডওয়ার্ড জেনার বসন্ত রোগের টীকা আবিষ্কার করেন ।
২৮. তিনটি ছত্রাকঘটিত রোগের নাম লেখো ।
উঃ । অ্যালার্জি , দাদ , হাজা , ছুলি ।
২৯. ভ্যাকসিন ব্যবহার করে কী উপকার পাওয়া গেছে ?
উঃ । ভ্যাকসিন ব্যবহার করে টাইফয়েড , টিটেনাস , পোলিও , ডিপথেরিয়ার মতো বহু রোগকে প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়েছে ।
৩০. কী চাষ করলে মাটিতে নাইট্রোজেন বৃদ্ধি হয় ?
উঃ । সিম , মটর জাতীয় উদ্ভিদের চাষ করলে মাটিতে নাইট্রোজেন বৃদ্ধি পায় ।
৩১. কয়েকটি ব্যাকটেরিয়াঘটিত রোগের নাম লেখো ।
উঃ । যক্ষ্মা , কলেরা , টাইফয়েড , ডায়ারিয়া , টিটেনাস , ডিপথেরিয়া , নিউমোনিয়া প্রভৃতি ।
৩২. কয়েকটি ভাইরাসঘটিত রোগের নাম লেখো ।
উঃ । ইনফ্লুয়েঞ্জা , পক্স , মাম্পস , জলাতঙ্ক , হেপাটাইটিস , AIDS , পোলিও ইত্যাদি ।
৩৩. তিনটি আদ্যপ্রাণী ঘটিত রোগের নাম লেখো ।
উঃ । ম্যালেরিয়া , কালাজ্বর , অ্যামিবিয়াসিস ।
৩৪. হিমোগ্লোবিন তৈরিতে কোন ভিটামিন সাহায্য করে ?
উঃ । ভিটামিন B
৩৫. মানুষের দেহে কারা ভিটামিন B, তৈরি করে ?
উঃ । মানুষের দেহের ক্ষুদ্রান্তে এশ্চেরেচিয়া কোলাই নামক ব্যাকটেরিয়া থাকে যারা ভিটামিন B , তৈরি করে ।
৩৬. মটরগাছের মূলে কোন্ ব্যাকটেরিয়া থাকে ?
উঃ । মটরগাছের মূলে রাইজোবিয়াম নামক ব্যাকটেরিয়া থাকে ।
৩৭. চাষ করা ফসলের দেহ গঠনের প্রধান উপাদান কী কী ?
উঃ । প্রধান উপাদান প্রোটিন ও নিউক্লিক অ্যাসিড ।
৩৮. রাইজোবিয়াম কোথায় থাকে ?
উঃ । রাইজোবিয়াম ডাল জাতীয় গাছের মূলের অর্বুদে থাকে ।
৩৯. একটি নাইট্রিফাইং ব্যাকটেরিয়ার নাম লেখো ।
উঃ । নাইট্রোসোমোনাস একটি নাইট্রিফাইং ব্যাকটেরিয়া ।
৪০. দই - এ কোন্ ব্যাকটেরিয়া থাকে ?
উঃ । দই - এ ল্যাকটোব্যাসিলাস নামক ব্যাকটেরিয়া থাকে ।
৪১. অধিকাংশ উদ্ভিদ নাইট্রোজেনকে কীরূপে ব্যবহার করতে পারে ?
উঃ । নাইট্রেট NO , বা অ্যামোনিয়াম NH + রূপে ব্যবহার করতে পারে ।
৪২. অ্যামোনিফিকেশন কাকে বলে ?
উঃ । উদ্ভিদ বা প্রাণীরা যখন মারা যায় তখন তাদের দেহের নানা নাইট্রোজেন যুক্ত যৌগ ভেঙে নিয়ে আমোনিয়া তোর হয় । এই পদ্ধতিকে অ্যামোনিফিকেশন বলে ।
৪৩. অণুজীবরা প্রধানত কয় প্রকার ও কী কী ?
উঃ । অনুজীবরা প্রধানত চার প্রকার । যথা— ( i ) ব্যাকটেরিয়া , ( ii ) আদ্যপ্রাণী , ( iii ) ছত্রাক , ( iv ) শৈবাল ।
❐ সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর :
১. অণুজীবদের বৈশিষ্ট্যগুলি লেখো ।
উঃ । i ) পৃথিবীর প্রায় সর্বত্র এরা বসবাস করে । ii ) এদের বেঁচে থাকার জন্য ভেজা জায়গা খুব গুরুত্বপূর্ণ । iii ) অধিকাংশ অণুজীবদের বেঁচে থাকার জন্য অক্সিজেনের প্রয়োজন হয় । আবার ইস্ট কিংবা টিটেনাস রোগ সৃষ্টিকারী অণুজীবরা কম অক্সিজেন ঘনত্বেও বেঁচে থাকতে পারে । iv ) সাধারণত বেশিরভাগ অণুজীব 38 ° C তাপমাত্রার মধ্যে তাড়াতাড়ি বাড়ে ও বেঁচে থাকে । তবে কোনো অণুজীব - 10 ° C- এর নীচে বা 100 ° C তাপমাত্রার ওপরেও বেঁচে থাকতে পারে । v ) অন্ধকারময় জায়গায় এরা তাড়াতাড়ি বাড়ে । সরাসরি সূর্যের আলোর সংস্পর্শে এলে কোনো কোনো অণুজীব মারা যায় ।
২. ব্যাকটেরিয়ার বৈশিষ্ট্যগুলি লেখো ।
উঃ । i ) জীবজগতের কোশীয় জীবদের মধ্যে আকারে সবথেকে ছোটো ও কোশীয় গঠনের দিক থেকে সরলতম । ii ) এরা নানা আকারের হয় রড , কমা , প্যাঁচানো স্কু , গোলাকার । iii ) এদের প্রকৃত নিউক্লিয়াস থাকে না পরিবর্তে প্যাঁচানো DNA থাকে । iv ) এদের কোশপ্রাচীর থাকলেও তা উদ্ভিদ কোশের মতো নয় । v ) এদের একক পর্দা দিয়ে ঘেরা কোনো অঙ্গাণু থাকে না । তবে পর্দাবিহীন । অঙ্গাণু রাইবোজোম থাকে ।
৩. আদ্যপ্রাণীর কয়েকটি বৈশিষ্ট্য লেখো ।
উঃ । i ) এদের দেহ একটিমাত্র কোশ নিয়ে গঠিত । ii ) এরা নানাভাবে চলাচল করে । কারো দেহে ক্ষণপদ , আবার কারও ফ্লাজেলা বা সিলিয়া থাকে । iii ) এরা লম্বা , গোলাকার , ডিম্বাকার প্রভৃতি নানা আকারের হয় । iv ) এরা স্বাধীনভাবে একা থাকে , আবার অনেকে মিলে একসঙ্গে থাকে ।
৩. ছত্রাকের বৈশিষ্ট্যগুলি লেখো ।
উঃ । i ) এদের দেহকে মূল , কাণ্ড বা পাতায় আলাদা করা যায় না । ii ) এদের কোশপ্রাচীর সবুজ উদ্ভিদ কোশের মতো নয় । iii ) ছত্রাক জলে , স্থলে , আলোর উপস্থিতি বা অনুপস্থিতিতে থাকতে পারে । iv ) এদের দেহ এককোশী গোলাকার বা সরু সুতোর মতো অংশ দিয়ে তৈরি । v ) এদের কোশে কোশপ্রাচীর , নিউক্লিয়াস , নানা অঙ্গাণু থাকলেও ক্লোরোপ্লাস্ট থাকে না । তাই এরা নিজেদের খাদ্য নিজেরা বানাতে পারে না । vi ) এরা জলে স্থলে , আলোর উপস্থিতি বা অণুপস্থিতিতে থাকতে পারে ।
৪. শৈবালের কয়েকটি বৈশিষ্ট্য লেখো ।
উঃ । i ) শৈবালের দেহকে মূল , কাণ্ড বা পাতায় আলাদা করা যায় না । ii ) এদের স্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য আলোর প্রয়োজন হয় । iii ) শৈবাল প্রধানত জলে থাকে । iv ) এদের দেহে নানা আকৃতির ক্লোরোপ্লাস্ট থাকায় এরা নিজেদের খাদ্য নিজেরা তৈরি করতে পারে । v ) এদের দেহ এককোশী বা বহুকোশী । অনেকসময় একাধিক কোশ পরস্পর যুক্ত হয়ে বলের মতো গঠন তৈরি করে । vi ) এদের কোশে নিউক্লিয়াস , কোশপ্রাচীর , নানা অঙ্গাণু থাকে । নানা আকৃতির ক্লোরোপ্লাস্ট থাকায় এরা নিজেদের খাদ্য নিজেরা তৈরি করতে পারে ।
৫. “ ভাইরাস ” সম্পর্কে কীভাবে জানা গেছে ? ভাইরাসের কয়েকটি বৈশিষ্ট্য লেখো ।
উঃ । “ ভাইরাস ” কথাটির শব্দগত অর্থ হল বিষ । বিজ্ঞানী এডওয়ার্ড জেনারের বসন্তরোগ সম্পর্কে গবেষণা থেকে আমরা ভাইরাস সম্পর্কে জানতে পারি । 1940 - এর দশকে ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপ আবিষ্কারের আগে অবধি ভাইরাসকে দেখা সম্ভব হয়নি । এদের কয়েকটি বৈশিষ্ট্য হল— i ) এদের কোনোরকম কোশীয় গঠন নেই । ii ) এরা সবাই পরজীবী বা রোগসৃষ্টিকারী । কেবলমাত্র পোষক জীবকোশে প্রবেশ করলে এদের মধ্যে জীবনের বৈশিষ্ট্য দেখা যায় আর পোষক কোশের বাইরে থাকার সময় এরা জড় বস্তুর মতো আচরণ করে । iii ) এদের দেহের কোনো কোনো কোশে আবরণী , সাইটোপ্লাজম বা নিউক্লিয়াস থাকে না ।
৬. অ্যামোনিফিকেশন এবং নাইট্রিফিকেশন কাকে বলে ?
উঃ । উদ্ভিদ বা প্রাণীরা যখন মারা যায় , তখন তাদের দেহের নানা নাইট্রোজেন যুক্ত যৌগ ভেঙে গিয়ে অ্যামোনিয়া তৈরি হয় । এই পদ্ধতিকে অ্যামোনিফিকেশন বলে । নাইট্রোসোমোনাস , নাইট্রোব্যাকটর নামক নাইট্রিফাইং ব্যাকটেরিয়া অ্যামোনিয়ামকে যথাক্রমে নাইট্রাইট ও নাইট্রেটে রূপান্তরিত করে । এই পদ্ধতিকে নাইট্রিফিকেশন বলে ।
৭. কীভাবে খাদ্যকে ভালো রাখা সম্ভব ?
উঃ । i ) বায়ুশূন্য কোনো পাত্রে বা মোড়কে খাদ্যকে রেখে । ii ) মাছ , মাংস বা ফলে নুন মাখিয়ে রাখলে । iii ) খাদ্যকে কম তাপমাত্রায় রেখে । iv ) কাটা আম বা বাঁধাকপির টুকরোকে দীর্ঘসময় রোদে শুকিয়ে নিয়ে । v ) পাত্তুরাইজেশনের মাধ্যমে । vi ) ফলে মিষ্টি চিনি যোগ করে । vii ) কাঁচা আখ , লেবু , বাঁধাকপি , পিঁয়াজে ভিনিগার যোগ করলে খাদ্যকে ভালো রাখা সম্ভব । পরিবেশ ও বিজ্ঞান ।
৮. পরজীবিতা কাকে বলে ?
উঃ । কোনো কোনো রোগের জীবাণুরা যেমন ম্যালেরিয়ার জীবাণু জীবদেহে প্রবেশের পর বিভিন্ন অলোর কোশের মধ্যে প্রবেশ করে । তারপর খাদ্য ও আশ্রয়ের জন্য সম্পূর্ণভাবে ওই অঙ্গের বা কোশের মধ্যে প্রবেশ করলে কোশের নানা অঙ্গানুর কাজে এরা বাধা সৃষ্টি করে । ফলে পোষকের দেহের স্বাভাবিক ছন্দ নষ্ট হয় এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে । পোষক জীবদেহের সঙ্গে অণুজীবদের এই সম্পর্ক হলো পরজীবিতা বলা হয় ।
৯. মানুষের দেহে কোন্ কোন্ পথ দিয়ে অণুজীব প্রবেশ করে ?
উঃ । i ) পানীয় জলের মাধ্যমে , যেমন — কলেরা , ডায়ারিয়া । ii ) রক্ত সঞ্চালনের মাধ্যমে , যেমন — এইডস , হেপাটাইটিস । iii ) শ্বাসবায়ুর মাধ্যমে , যেমন — যক্ষ্মা , বসন্ত , হাম । iv ) বাহকের মাধ্যমে যেমন - ম্যালেরিয়া , প্লেগ । v ) খাদ্যের মাধ্যমে যেমন — কলেরা , বমি , পায়খানা ।
১০. মৃতজীবিতা কী ?
উঃ । বহু অণুজীব মৃত পচাগলা বস্তুর ওপর নিজ দেহ থেকে উৎসেচক ক্ষরণ করে ওই উৎসেচকের ক্রিয়ায় জটিল খাদ্যবস্তু ভেঙে দেয় । ফলে নানা শোষণযোগ্য ও ব্যবহারযোগ্য উপাদান তৈরি হয় । বহু ব্যাকটেরিয়া এবং ছত্রাক এই পদ্ধতিতে পুষ্টিকার্য সম্পন্ন করে । এখানে একই সঙ্গে জটিল জৈববস্তু বিয়োজন ও রূপান্তর ঘটে । এই পদ্ধতিই হল মৃতজীবিতা ।
১০. মিথোজীবিতা কী ? উদাহরণ দিয়ে বুঝিয়ে দাও ।
উঃ । ব্যাকটেরিয়ার পোষক দেহের ক্ষতি না করে তার সঙ্গে সহাবস্থানের মাধ্যমে থাকার যে পদ্ধতি , সেই পদ্ধতিকে মিথোজীবিতা বলে । অনেক সময় একাধিক অণুজীব একে অপরের সঙ্গে সহাবস্থান করে পুষ্টি বিনিময় করে । শৈবাল ও ছত্রাক পাশাপাশি থাকে । ছত্রাক জল ও অজৈব লবণ শোষণ করে শৈবালদের দেয় । আর শৈবালরা ওই পুষ্টিরস ব্যবহার করে নিজেদের দেহে খাদ্য তৈরি করে । ওই খাদ্যের কিছু অংশ ছত্রাকরা ব্যবহার করে শৈবাল ও ছত্রাকের এইরকম যৌগিক গঠনই হল লাইকেন । এটি একধরনের মিথোজীবিতা ।
১২. খাদ্য প্রক্রিয়াকরণে ব্যাকটেরিয়ার ভূমিকা আলোচনা করো ।
উঃ । ( i ) দই - এর মধ্যে থাকা ল্যাকটোব্যাসিলাস ব্যাকটেরিয়াকে 37 ° C উন্নতায় গরম দুধের সঙ্গে মেশানো হলে ওই ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা খুব তাড়াতাড়ি বাড়ে এবং সেটি দুধের ল্যাকটোজকে ল্যাকটিক অ্যাসিডে রূপান্তরিত করে । ( ii ) অণুজীবের ক্রিয়ার জন্যই চিজ , কেক , ষোকলা , ইডলি , খোসা , পাঁউরুটির মতো নানা খাবার বানানো যায় । ( iii ) ইস্টকোশ ফলের রসে থাকা শর্করাকে ভেঙে অ্যালকোহল তৈরি করে । ব্যাকটেরিয়া এই অ্যালকোহলকে ভিনিগারে রূপান্তরিত করে ।
১১. অ্যান্টিবায়োটিক কী ? এটি কোন কাজে ব্যবহৃত হয় ?
উঃ । বিশেষ কিছু ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাকের দেহ নিঃসৃত কিছু কিছু জৈব যৌগ অন্যান্য ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধিতে বাধা দেয় অথবা তাদের মেরে ফেলে । এইসব যৌগকে বিশুদ্ধিকরণের মাধ্যমে ও রাসায়নিকভাবে পরিবর্তনের মাধ্যমে নানা জীবনদায়ী ওষুধ প্রস্তুত করা হয় । এই জীবনদায়ী ওষুধগুলিকে অ্যান্টিবায়োটিক বলা হয় । স্ট্রেপটোমাইসিন , ক্লোরোমাইসেটিন , অ্যাম্পিসিলিন প্রভৃতি নানা অ্যান্টিবায়োটিক মানুষ আবিষ্কার করেছে । পেনিসিলিন মানুষের আবিষ্কৃত প্রথম অ্যান্টিবায়োটিক । অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ রোধ করা যায় । ভাইরাস বা ছত্রাক ঘটিত কোনো রোগে অ্যান্টিবায়োটিক কাজ করে না ।
১২. অ্যান্টিজেন ও অ্যান্টিবডি কাকে বলে ?
উঃ । যখন কোনো জীবাণু আমাদের দেহে প্রবেশ করে , তখন জীবাণুর দেহ থেকে বেরোনো নানা ক্ষতিকারক যৌগ আমাদের দেহে প্রবেশ করে । এরা হল অ্যান্টিজেন । এই অ্যান্টিজেনকে ধ্বংস করার জন্য আমাদের শরীরে একধরনের যৌগ তৈরি হয় । এই প্রোটিনধর্মী যৌগগুলিকে বলা হয় অ্যান্টিবডি ।
১৩. টীকাকরণ কাকে বলে ?
উঃ । এখন কোনো মৃত , দুর্বল , জীবিত অণুজীবকে বা সরাসরি অণুজীবের দেহ থেকে বেরোনো দুর্বল বিষকে নির্দিষ্ট ডোজে আগে থেকে কোনো মানুষের দেহে প্রবেশ করিয়ে দেওয়া হলে ওই ধরনের অণুজীবদের বিরুদ্ধে আগে থেকেই রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা সক্রিয় হয়ে ওঠে । এই পদ্ধতিকে বলা হয় টীকাকরণ ।
১৪. খাদ্য খাওয়ার পর মানুষ অসুস্থ হলে কী বোঝা যাবে ?
উঃ । যদি কেউ খাদ্য খাওয়ার পর অসুস্থ হন তাহলে বুঝতে হবে খাদ্যে কোনো অণুজীবের সংক্রমণ ঘটেছে । সাধারণত ছত্রাক আর ব্যাকটেরিয়া খাদ্যের সংস্পর্শে এলে খাদ্যের মধ্যে থাকা নানা যৌগকে ভেঙে ফেলে । আর অণুজীবের দেহ থেকে বেরোনো বিষাক্ত পদার্থ খাদ্যের সঙ্গে মিশে খাদ্যকে ব্যবহারের অনুপযোগী করে তোলে । কিছু রঙিন ছত্রাক খুবই বিষাক্ত হয় । এগুলি যদি মানুষ ভুল করে খায় তবে বমি , পাতলা পায়খানা এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে ।
১৫. বর্জ্য পরিষ্কারে ব্যাকটেরিয়া কীভাবে সাহায্য করে ।
উঃ । ( i ) কোনো কোনো ব্যাকটেরিয়া কম অক্সিজেন যুক্ত পরিবেশে থাকে । এরা মল ও মূত্রের মতো অশোধিত বর্জ্যকে ভেঙে নানা ব্যবহারযোগ্য যৌগ তৈরি করে । এই যৌগগুলি রোগ সংক্রমণের সম্ভাবনা কমায় আবার মাটির উর্বরতাও বাড়ায় । ( ii ) ভারত বা চিনের মতো দেশে গ্রামের দিকে মানুষ ও অন্য জন্তুর মল , তরকারির খোসা প্রভৃতি বর্জ্যকে মেখানোজেনিক ব্যাকটেরিয়ার সাহায্যে ভেঙে মিথেন গ্যাস তৈরি হয় । এই গ্যাস কয়লা , কেরোসিনের মতো জ্বালানির বিকল্প রূপে ব্যবহৃত হয় । ( iii ) কোনো কোনো শ্যাওলাকে মহাকাশযানে বাতাস পরিষ্কার করতে ব্যবহার করা হয় ।
No comments:
Post a Comment