প্রশ্ন উত্তর স্বাধীনতা ল্যাংস্টন হিউজ | অষ্টম শ্রেণী বাংলা প্রশ্ন উত্তর | Class 8th questions and answers class 8th - Psycho Principal

Fresh Topics

Sunday, 29 December 2024

প্রশ্ন উত্তর স্বাধীনতা ল্যাংস্টন হিউজ | অষ্টম শ্রেণী বাংলা প্রশ্ন উত্তর | Class 8th questions and answers class 8th

 

স্বাধীনতা 
ল্যাংস্টন হিউজ




👉(আদাব সমরেশ বসু প্রশ্ন উত্তর )



 কবি - পরিচিতিঃ 

ল্যাংস্টন হিউজ প্রখ্যাত মার্কিন কবি । বিংশ শতকের কুড়ির দশকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হার্লেম রেনেসাঁসের অন্যতম নেতা হিসাবে তিনি সমধিক পরিচিত । এই মহান সাহিত্যিক জন্মগ্রহণ করেন ১৯০২ সালে । তিনি শুধু কবি ছিলেন না , তিনি একাধারে কবি , ঔপন্যাসিক ও নাট্যকার ছিলেন । এছাড়াও তাঁর একটি বিশেষ পরিচয় ছিল । তিনি ছিলেন একজন সমাজকর্মী তথা সমাজসেবী । সমাজ চেতনার সঙ্গে জড়িত এই কবি তাঁর রচনায় মানবতার জয়গান গেয়েছেন । তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থের নাম The Weavy Blues । তাঁর রচিত অন্যান্য বই Male Bone , Jerico Jim Crow প্রভৃতি । কাব্যস্রষ্টা হিসাবে বহু পুরস্কারে তিনি সম্মানিত হয়েছিলেন । তাঁর সমস্ত রচনায় , মানবতাই বেশি প্রাধান্য পেয়েছে । ১৯৬৭ সালে কবি পরলোকগমন করেন । 


সারমর্মঃ

স্বাধীনতা শব্দটির অর্থ উপলব্ধি বিশাল , একে অনুভব করতে হয় , প্রতিনিয়ত এর প্রয়োজন হয় । স্বাধীনতায় মানুষ কেবল নিজের অধীন হয় , নিজের বশে চলে । তাই স্বাধীনতা সবারই কাম্য । স্বাধীনতা অ্যাচিত ভাবে পাওয়া যায় না , ভয় অথবা সমঝোতার মধ্যে দিয়ে স্বাধীনতা আসে না । তার জন্য চাই লড়াই । লড়াই হলো বাঁচার মূলমন্ত্র । অন্য সকলের মতো আমাদের অর্থাৎ সাধারণ মানুষের বাঁচার অধিকার আছে । অধিকার আছে দু - পায়ে দাঁড়িয়ে থাকার , দুকাঠা জমির মালিক হবার । সবাই বলে স্বাধীনতা আসবে , সময় হলেই সব হবে , কাল একটা নতুন দিন , একই কথা শুনতে শুনতে বিরক্তি ধরে গেছে । যতক্ষণ সে বেঁচে আছে ততক্ষণই স্বাধীনতার প্রয়োজন । মৃত্যুর পরে কোনো স্বাধীনতার দাবির কোনো প্রয়োজন নেই , ভবিষ্যতের রুটি দিয়ে কি বর্তমানের প্রয়োজন মেটানো যায় ? স্বাধীনতা একটি বিশাল শক্তিশালী বীজপ্রবাহ । বাঁচার জন্য এটির বড়ো প্রয়োজন । তুমি , আমি , আমরা সবাই একটি বৃহত্তম স্থানে থাকি তাই স্বাধীনতা আমাদের সকলেরই সমান প্রয়োজন । স্বাধীনতা কোনো ব্যক্তির নয় , সারা বিশ্বের সকল মানুষের স্বাধীনতা । 


নামকরণঃ

মার্কিন কবি ল্যাংস্টন হিউজ একজন মানবতাবাদী কবি , তাঁর লেখা ' স্বাধীনতা ' কবিতাটিকে বাংলায় তরজমা করেছেন কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায় ও মুকুল গুহ । কবিতার মূল ভাবটি হলো স্বাধীনতাবোধ যা পৃথিবীব্যাপী মানুষের মনে এক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে । কবিতাটিতে কবি অত্যন্ত সংবেদনশীলভাবে স্বাধীনতা পাওয়ার প্রবল বাসনাকে ফুটিয়ে তুলেছেন । স্বাধীনতা প্রাপ্তি যে বাঁচার জন্য বড়ো প্রয়োজন তা কবি বুঝিয়ে দিয়েছেন । সমগ্র কবিতা জুড়েই স্বাধীনতার জয়গান গাওয়া হয়েছে তাই বক্তব্যের নিরিখে নামকরণটি যথাযথ হয়েছে বলা যেতে পারে ।


১.১ ল্যাংস্টন হিউজের প্রথম কাব্যগ্রন্থের নাম কী ? 

উঃ । ল্যাংস্টন হিউজের প্রথম কাব্যগ্রন্থ ' The Weavy Blues | 


১.২ তিনি কোন দেশের রেনেসাঁসের অন্যতম নেতা হিসাবে পরিচিত ? 

উঃ । বিংশ শতকের কুড়ির দশকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হার্লেম রেনেসাঁসের অন্যতম নেতা হিসাবে তিনি পরিচিত ছিলেন । 


২. নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর নিজের ভাষায় লেখো : 

২.১ স্বাধীনতা বলতে কী বোঝ ? কী কী বিষয়ে মানুষের স্বাধীনতা প্রয়োজন বলে তুমি মনে করো ? 

উঃ । কবি স্বাধীনতা বলতে বুঝিয়েছেন নিজের ক্ষমতায় নিজের পায়ে দাঁড়ানো , নিজের ইচ্ছে মতো জীবনকে পরিচালনা করা । স্বাধীনতা সব বিষয়েই প্রয়োজন , নিজের পায়ে দাঁড়াতে , নিজের সম্পদ অর্জন করতে , খাদ্য সংগ্রহ করতে , বাঁচার জন্যও স্বাধীনতার প্রয়োজন । পাশাপাশি অন্যের অধীনে পরিচালিত না হয়ে নিজের ওপর পূর্ণ অধিকার ফিরিয়ে আনতে মানুষের স্বাধীনতা প্রয়োজন । 


২.২ মানুষ পরাধীন হয় কখন ? 

উঃ । মানুষ যখন তার ইচ্ছামতো জীবনযাত্রা উপভোগ করতে পারে না । চলার পথে প্রতিমুহূর্ত বাধা পায় তখন আসে পরাধীনতা । এককথায় সবধরনের অধিকার বঞ্চিত মানুষ হলো পরাধীন । অনেক সময় দেখা যায় বলপ্রয়োগ করে মানুষ মানুষের স্বাধীন সত্ত্বাকে হরণ করে । তখনই মানুষ হয়ে যায় পরের অধীন । তাঁর নিজের ওপর তার কোনো নিয়ন্ত্রণ থাকে না ! 


২.৩ পরাধীন মানুষের স্বাধীনতা পাওয়ার পথগুলি কী কী ? 

উঃ । স্বাধীনতা পাওয়ার প্রথম পথ হলো ভয় না পাওয়া , দ্বিতীয় পথ হলো অন্যায়ের সাথে , ইচ্ছার বিরুদ্ধে আপোষ বা সমঝোতা না করা । বেঁচে থাকার অধিকার , সবকিছু পাওয়ার অধিকার সবার আছে । পরাধীন মানুষ চিরকাল পরের অধীন হয়ে থাকবে না । এর জন্য অপরের মানসিক ও চিন্তাশক্তিকে জাগিয়ে তুলতে হবে । মানুষের একত্র সংগ্রামই পরাধীনতা মোচনের একমাত্র পথ । তীব্র আন্দোলন ও গণচেতনা দ্বারা পরাধীন মানুষ স্বাধীনতা অর্জন করতে পারে । স্বাধীনতা অযাচিতভাবে আসে না । কেউ তা হাতে করে তুলেও দেয় না । তা অর্জন করতে হয় প্রতিবাদ করে ছিনিয়ে নিয়ে । তবে শুধু প্রতিবাদ নয় , পাশাপাশি পরাধীন মানুষকে আত্মগঠন করার মধ্য দিয়ে নিজেকে যোগ্য করে তোলারও প্রয়োজন । 


২.৪ ' স্বাধীনতা ' কবিতাটির মধ্যে দুটি ‘ পক্ষ ' আছে ।— ' আমি - পক্ষ ' আর তুমি - পক্ষ ' । এই ' আমি পক্ষ ' আর ‘ তুমি - পক্ষ ’ – এর স্বরূপ বিশ্লেষণ করো । এই ক্ষেত্রে ‘ সে পক্ষ ’ নেই কেন ? 

উঃ । ল্যাংস্টন হিউজ রচিত ‘ স্বাধীনতা ’ কবিতায় স্পষ্টভাবে দুটি পক্ষের উল্লেখ রয়েছে । এখানে ‘ আমি - পক্ষ ' হলো পরাধীন মানুষ যারা প্রতিদিন শোষিত ও অত্যাচারিত হয়ে চলেছে লেখক নিজেও তাই । ' তুমি - পক্ষ ' হলো শাসক শ্রেণি যারা মানুষকে পরাধীন করে রেখেছে । সে পক্ষ এখানে নেই কারণ , সমাজে দুটি প্রধান শ্রেণি শাসক ও শাসিত । স্বাধীনতা আছে অথচ নেই , সেটাকে নিজের মতো করে অর্জন করতে হবে , তাই ‘ সে পক্ষ ’ নেই ।

 

২.৫ ' সময়ে / সবই হবে , কাল একটা নূতন দিন ' — কবিতার মধ্যে উদ্ধৃতিচিহ্নের ভিতরে থাকা কথাটি কার / কাদের কথা বলে তোমার মনে হয় ? তারা এ ধরনের কথা বলেন কেন ? 

উ: । কথাটি অবশ্যই কবি ল্যাপ্টেন হিউজের । কবিতায় কথাটি প্রাচীনপন্থী মানুষদের বলে মনে হয় । এরা সাময়িক নিরাপত্তার কথা ভেবে শাসকের অত্যাচারের প্রতিবাদ করেন না অথচ আশা নিয়ে বাঁচেন । এদের দিন চলে গেলেই হয় । সাময়িক সুখকেই এরা বড়ো মনে করে । তারা অসম সংগ্রামে যেতে চান না । ক্ষমতা ধরে আঁকড়ে বাঁচতে চায় তাই , এই ধরনের কথা তারা বলে থাকে । অবস্থার পরিবর্তন ঘটিয়ে , দৃঢ়ভাবে নতুন সমাজ তৈরি করতে তারা ভয় পায় । অথচ বিশ্বাস করেন দিন একদিন বদলাবে । 


২.৬ আগামীকালের রুটি / দিয়ে কি আজ বাঁচা যায় ।'— এখানে ‘ আগামীকাল ' আর ' আজ ' বলতে কী বোঝানো হয়েছে ? 

উ: । এখানে আগামীকাল বলতে ভবিষ্যত জীবনের কথা বলা হয়েছে । ভবিষ্যতে কি পাবো তাই দিয়ে বর্তমানকে চালানো যায় না । আজ বলতে বর্তমানকে বোঝানো হয়েছে । আগামীকাল অর্থাৎ ভবিষ্যত আশা বহন করে আনতেও পারে না আর আজ হলো এখনই যখন আমি আমার স্বার্থ প্রয়োজন বুঝে নিতে পারি । 


৩. নীচের পদ্ধক্তিগুলির তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো : 

৩.১ মৃত্যুর পরে তো আমার .......... প্রয়োজন হবে না । 

উঃ । উপরের উক্তিটি ল্যাংস্টন হিউজ রচিত ‘ স্বাধীনতা ' কবিতার অংশ । মানুষ যতদিন জীবিত থাকে ততদিন তার নিজের অধিকারও স্বাধীনতা নিয়ে বাঁচার প্রয়োজন হয় । মৃত মানুষের যেহেতু জীবনের কোনো লক্ষণ দেখা যায় না তাই তার স্বাধীনতার প্রয়োজন হয় না । তাই আমাদের যা চাই তা পেতে হবে বেঁচে থাকতে । বাঁচতে গেলে স্বাধীনতা অবশ্যই চাই । পরাধীনতার মাঝে বেঁচে থাকার কোনো অর্থ হয় না । স্বাধীনতা ভোগ করে জীবন কাটানোই হলো সঠিকভাবে বেঁচে থাকা । 


৩.২ স্বাধীনতা একটা শক্তিশালী বীজপ্রবাহ । 

উঃ । উপরের অংশটি ল্যাংস্টন হিউজ রচিত ' স্বাধীনতা ’ কবিতা থেকে গৃহীত । স্বাধীনতা মানুষের বাঁচার মূলমন্ত্র । এটি একটা শক্তিশালী বীজপ্রবাহ । জন্মগ্রহণ করে মানুষ স্বাধীনতা অর্জন করে । কোনো কারণে সে যদি পরাধীনও হয় তবুও তার অন্তরে স্বাধীনতার বীজ লালিত হতে থাকে । বীজ যেমন সঠিক পরিবেশে অঙ্কুরিত হয় তেমনই স্বাধীনতা পরিবেশ ও পরিস্থিতি বুঝে উম্মাদনার মতো বেরিয়ে আসে । এই শক্তি মানুষকে অতীত থেকে বর্তমান হয়ে ভবিষ্যতের পথে বয়ে নিয়ে চলে । 


৩.৩ আমাদেরও তো অন্য সকলের জমির মালিকানার । 

উঃ । আলোচ্য অংশটি প্রখ্যাত মার্কিন কবি ল্যাংস্টন হিউজ রচিত ‘ স্বাধীনতা ' কবিতার অংশ বিশেষ । স্বাধীনতা হলো মানুষের আপন অধিকার । এটি বিভিন্ন প্রকৃতির হতে পারে । কিন্তু যদি স্বাধীনতা না থাকে তাহলে মানুষের মধ্যে জমে থাকা অধিকারবোধেরই মৃত্যু ঘটে যায় । কবি সমঝোতা করে নয় , অধিকার অর্জন করে নিতে চান । তিনি সকলের মতো স্বাধীনতার অধিকার চান যা তাঁকে দু - পায়ে শক্ত হয়ে দাঁড়াতে সাহায্য করবে , তিনি চান সেই ভূমি যা হবে তাঁর একান্ত আপন । তাই দুর্বল মানুষেরও নিজের পায়ে দাঁড়াবার , জমির মালিক হবার অধিকার রয়েছে । কিছু মানুষ নানাভাবে অধিকাংশ মানুষকে পরাধীন করে রেখেছে । সেই শ্রেণিবৈষম্যের কথাই কবি এখানে বলেছেন । 


৩.৪ স্বাধীনতা আমার প্রয়োজন / তোমার যেমন । 

উঃ । ' স্বাধীনতা ’ কবিতা থেকে উপরের অংশটি গৃহীত হয়েছে । কবি হলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হার্লেম রেনেসাঁসের অন্যতম নেতা ল্যাংস্টন হিউজ । স্বাধীনতা হীনতায় কেউ বাঁচতে চায় না , দাসত্ব শৃঙ্খল কেউ পরতে চায় না । তাই স্বাধীনতা কবির যেমন প্রয়োজন , সমস্ত মানুষেরও তেমন প্রয়োজন , নিজে জানতে বুঝতে , সমস্ত কিছুর স্বাদ পেতে হলে নিজস্ব ইচ্ছা অনুযায়ী চলা প্রয়োজন । মুষ্টিমেয় কিছু মানুষ একা স্বাধীনতা ভোগ করবেন এটা হতে পারে না । কাই কবি বলেছেন স্বাধীনতার অধিকার সকলকেই দিতে হবে , স্বাধীনতা সবারই প্রয়োজন ।

No comments:

Post a Comment