প্রশ্ন উত্তর লোকটা জানলই না সুভাষ মুখোপাধ্যায় || সারমর্ম, নামকরণ, সহায়িকা || অষ্টম শ্রেণী বাংলা প্রশ্ন উত্তর || Class 8th questions and answers class 8th - Psycho Principal

Fresh Topics

Sunday, 29 December 2024

প্রশ্ন উত্তর লোকটা জানলই না সুভাষ মুখোপাধ্যায় || সারমর্ম, নামকরণ, সহায়িকা || অষ্টম শ্রেণী বাংলা প্রশ্ন উত্তর || Class 8th questions and answers class 8th

  

লোকটা জানলই না 
সুভাষ মুখোপাধ্যায়






👉(The Wind Cap Questions And Answers Class 8th English )


লেখক পরিচিতিঃ

আধুনিক কালের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায় । ১৯১৯ সালে কবির জন্ম হয় । জীবনানন্দ দাশের পরবর্তী যুগে আধুনিক কবিদের মধ্যে কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের কবিতা মৌলকত্বের দাবি রাখে , তাঁর কবিতার মধ্যে মূল উপজীব্য সাধারণ মানুষ । তাঁর প্রথম ও অন্যতম শ্রেষ্ঠ কাব্যগ্রন্থ পদাতিক ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত হয় । তাঁর অন্যান্য কাব্যগ্রন্থগুলির মধ্যে অন্যতম হলো অগ্নিকোণ , চিরকুট , ফুলফুটুক , যতদূরেই যাই ; কাল মধুমাস , একটু পা চালিয়ে ভাই , জল সইতে ইত্যাদি । তাঁর বিখ্যাত গদ্য গ্রন্থ গুলি হলো । কাঁচা - পাকা , ঢোলগোবিন্দের আত্মদর্শন , টানাপোড়েনের মাঝখানে ইত্যাদি । ২০০৩ সালে কবির জীবনাবসান হয় । ১৯৬৪ সালে তিনি ' সাহিত্য অকাদেমি ’ পুরস্কার পান । ১৯৯১ সালে ভারত সরকার তাঁকে ' জ্ঞানপীঠ ’ পুরস্কারে সম্মানিত করেন ।


 সারমর্মঃ

কবিতায় আলোচ্য ব্যক্তি অর্থলোলুপ মানুষ । টাকাপয়সাই তার জীবনের ধ্যান - জ্ঞান , টাকাপয়সা উপার্জন করতে এবং তা সামলাতে সামলাতে তার জীবন অতিবাহিত হয় । হৃদয়ের খোঁজে তার অনীহা , মানুষের সন্নিধ্য তার কাম্য নয় । তাই মননশীলতাহীন এক দুপেয়ে জীবের মৃত্যু আসে নিঃশব্দে , তিনি অনুকম্পার পাত্র , শ্রদ্ধার নয় । ইহকালে তিনি ধনবান এবং ভোগী কিন্তু পরকালে পুঁজিশূন্য । তাই কবি তার মৃত্যুকে গুরুত্বহীন ঘটনারূপে বর্ণনা করেন এবং তিনি মানব হৃদয়ে রেখাপাত করেন । কারণ বন্ধুহীন জীবন মৃত্যুরই নামান্তর । 


নামকরণঃ

আজকের জগতে মানুষ সম্পদের পিছনে ছুটতে ছুটতে হৃদয়ের খোঁজ জানে না । খোঁজ রাখেনা মানব হৃদয়ের মধ্যে লুক্কায়িত অপরূপ সম্পদের কথা । মানুষ ধনবান হতে চায় হৃদয়বান নয় । একসময় লক্ষ্মী ধরা দেন তার কাছে , কিন্তু কাছের মানুষ দূরে সরে যায় । তারাও নির্ধন আত্মীয়বান্ধব থেকে বিচ্ছিন্নতা কামনা করেন । অর্থ তাদের সুখ দেয় । দেয় বিলাসিতা আর দেয় এক নিঃসঙ্গ মৃত্যু । কেউ তাদের মৃত্যুতে কাঁদেনা । আত্মগর্বী , স্বার্থপর , পয়সার কাঙাল মানুষের যে পরিণতির কথা কবিতায় পরিস্ফুটিত তার সাপেক্ষে ‘ লোকটা জানলই না ’ নামকরণটি সুন্দর সার্থক এবং যথার্থ হয়েছে ।


১.১ কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের রচিত প্রথম কাব্যগ্রন্থের নাম কী ?

 উঃ । কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের রচিত প্রথম কাব্যগ্রন্থের নাম ‘ পদাতিক ' । 


১.২ তাঁর লেখা দুটি গদ্যগ্রন্থের নাম লেখো । 

উঃ । তাঁর লেখা দুটি গদ্যগ্রন্থ ‘ টানাপোড়েনের মাঝখানে ’ এবং ‘ ঢোলগোবিন্দের আত্মদর্শন ’ ।


২. নীচের প্রশ্নগুলির সংক্ষিপ্ত উত্তর দাও : 

২.১ ' বাঁদিকে বুক পকেটটা সামলাতে সামলাতে ....’- এখানে ' বাঁদিকের বুক পকেট’টা বলতে কী বোঝানো হয়েছে ? 

উঃ । বাঁদিকের বুক পকেট বলতে এখানে টাকার থলে বোঝানো হয়েছে । রোজগার করা মানুষ বাঁ দিকের পকেটেই দিনের উপার্জিত অর্থ রাখেন । আধুনিক মানুষেরা নিজেদের ধন - সম্পত্তি রক্ষার দিকেই মনযোগ দেন । তাই বাঁদিকের বুক পকেট অর্থাৎ অর্থ সামলাতে গিয়েই তাঁদের জীবন কেটে যায় । 


২.২ ইহকাল পরকাল ' — এই শব্দদ্বয় এখানে কী অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে । 

উঃ । ' ‘ ইহকাল ' শব্দটি বর্তমান জীবন এবং ‘ পরকাল ' বলতে বোঝানো হয়েছে মৃত্যুর পরবর্তী অবস্থা । আসলে মানুষটি অর্থের পিছনে ছুটতে ছুটতে মানবিকতাহীন এক যন্ত্রতে পরিণত হয়েছিল ফলে বর্তমান তার কাটে নিঃসঙ্গতায় এবং মৃত্যু তাকে গ্রাস করে কালের নিয়মে । 


২.৩ কবিতায় লোকটির দু - আঙুলের ফাঁক দিয়ে কী খসে পড়ল ? 

উঃ । কবিতায় লোকটির দু - আঙুলের ফাক দিয়ে তার জীবন খসে পড়ল । কথাটি আসলে প্রতীকী মাত্র । এখানে লোকটির জীবনের মূল্যহীনতা বোঝাতে কথাটি ব্যবহৃত হয়েছে । 


২.৪ ' আলাদিনের আশ্চর্য প্রদীপ ' আসলে কী ? 

উঃ । আরব দেশের উপকথায় বর্ণিত এক অলৌকিক ক্ষমতা সম্পন্ন প্রদীপই আলাদিনের আশ্চর্য প্রদীপ । আরব্য রজনীর কাহিনি অনুযায়ী এই প্রদীপটির মধ্যে ছিল এক জিন বা দৈত্য । প্রদীপটি ঘষলে দৈত্য তার ভিতর থেকে বেরিয়ে প্রদীপের মালিকের নির্দেশ অনুযায়ী যে কোনো কাজ করে দিত । আলাদিন এই প্রদীপটি পেয়েছিল । কবি রূপক হিসাবে মানব হৃদয়ের সঙ্গে তার তুলনা করেছেন , কারণ হৃদয়বান মানুষ সমগ্র পৃথিবী জয় করতে পারে আলাদিনের আশ্চর্য প্রদীপের মতো । 


৩. নীচের প্রশ্নগুলির কয়েকটি বাক্যে উত্তর দাও : 

৩.১ ' লোকটাই জানলই না ' — পঙ্ক্তিটি দু'বার কবিতায় আছে । একই পক্তিটি একাধিকবার ব্যবহারের কারণ কী ? 

উঃ । পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ জীব হয়েও কবিতায় বর্ণিত লোকটা অর্থাৎ মানুষ কেবলমাত্র অর্থ উপার্জন এবং ভোগের মধ্য দিয়েই জীবন কাটিয়ে দিল । তার মধ্যে কোনোরূপ মানসিক বিকাশ ঘটেনি । কবি তার ‘ লোকটা জানল না ' কবিতায় এই রকম এক হৃদয়হীন মানুষের কথা বলেছেন যে তার নিজের অস্থিমজ্জার নীচে থাকা হৃদয়ের উপস্থিতির কথা জানতেই পারল না । কবি আক্ষেপ করে এবং লোকটার প্রতি করুণাবশতই দুবার পঙ্ক্তিটি ব্যবহার করেছেন । 


৩.২ কবি ' হায় - হায় ' কোন্ প্রসঙ্গে বলেছেন ? কেন বলেছেন ? 

উঃ । কবি লোকটার প্রতি করুণাবসত ‘ হায় হায় ’ বলেছেন । একজন মানুষ মনের অন্তঃকরণের মধ্যে লুকানো সম্পদের খোঁজই জানতে পারল না কেবল মাত্র অর্থলালসায় , ভালোবাসা , দয়া - মায়া শব্দগুলি তার কাছে অর্থহীন হয়ে থাকল ভোগের নেশায় । তবে যে একটা হৃদয় আছে তা সে জানতে পারল না । এখানেই কবির আক্ষেপ তাই কবি তার প্রতি করুণাবশত ‘ হায় হায় করেছেন । 


৩.৩ কবিতাটির নামকরণ যদি হতো ‘ হৃদয় ' বা ' আলাদিনের আশ্চর্য প্রদীপ ' তাহলে তা কতটা সার্থক হতো ? 

উঃ । হৃদয় বলতে বুঝি মনের অন্তঃকরণ যেখানে দয়া - মায়া , ভালোবাসা , ঔদার্যের মতো মহৎ বস্তুর অবস্থান । যেহেতু ভোগবিলাসী মানুষটি আত্মসর্বস্ব এবং অর্থলোলুপ , তাই হৃদয়হীন মানুষকেন্দ্রিক কবিতার নাম ‘ হৃদয় ’ সার্থক বা যথার্থ হতো না । আবার আলাদিনের মতো সৎ , নির্ভীক এবং পরোপকারী চরিত্র আলোচ্য কবিতার লোকটি নন । আলাদিনের আশ্চর্য প্রদীপ ব্যবহৃত হয়েছে মানব কল্যাণে কিন্তু কবিতার লোকটা স্বার্থান্ধ এবং কৃপণ প্রকৃতির । তাই ওই নামের সার্থকতাও আমি খুঁজে পাই না , বরং কবির দেওয়া নামটিই যথার্থ বলে আমি মনে করি । 


৩.৪ সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের লেখার যে ধরন তোমার চোখে পড়েছে তা নিয়ে বন্ধুকে একটি চিঠি লেখো । 

উঃ । প্রিয় বন্ধু সুমিত , আমাদের পাঠ্যবইয়ে কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের লেখা এক সুন্দর কবিতা পড়লাম । কবিতাটির সাবলীলতা অসাধারণ ‘ অতি সাধারণ শব্দ কতটা ব্যাঞ্জনাময় হতে পারে , তা এই লেখা না পড়লে জানতে পারতাম না । এর আগে তো আধুনিক কবিতা বুঝতাম না , কতকগুলি শব্দের অবিন্যস্ত জাল মাথায় ঢুকত না । তাতে আর যাই হোক কবিতার প্রকৃত ছবি ফুটে উঠত না । কিন্তু ' লোকটা জানলই না ’ কবিতায় সমাজের মানুষ ও তাদের করণীয় কর্তব্য কী হওয়া উচিত তাঁর একটা ধারণা পেলাম । সবমিলিয়ে বলতে পারি আধুনিক কবিতার প্রতি আমার আগ্রহ কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায় অনেক বাড়িয়ে দিলেন । সুযোগ পেলে কবির আরও অন্যান্য লেখা পড়ে দেখার ইচ্ছা রইল , তুইও কবির লেখা সময় পেলে পড়িস । এখানেই থামি । তোমার বন্ধু


৪. ‘ অথচ ’ শব্দটি ব্যাকরণের ভাষায় কী বলি ? কবিতায় এই ‘ অথচ ' শব্দটির প্রয়োগ কবি কেন করেছেন ? 

উ: অথচ ' ’ শব্দটি ব্যাকরণগতভাবে একটি অব্যয় । এখানে দুটি বাক্যের সংযোজক হিসাবে শব্দটিকে কবিতায় প্রয়োগ করা হয়েছে । শব্দটি আসলে করণীয় কর্তব্য না করার কারণ হিসাবে ব্যবহৃত হয়েছে । মানব হৃদয়ের পূর্ণ বিকাশে মানুষ দেবত্ব লাভ করে , তার কীর্তির মধ্যে দিয়ে মানুষ অমরত্ব লাভ করে । সে মানুষের মাঝে বেঁচে থাকে চিরদিন । কিন্তু কবিতার লোকটা তার সন্ধান পেল না কেবল জাগতিক সম্পদ এবং খেয়ে , সুখে থাকার জন্য । লোকটা খাওয়ার জন্য বাঁচতে চেয়েছিল এই আক্ষেপকে কবি কবিতায় ব্যঞ্জনাময় করে তুলতেই শব্দটির প্রয়োগ করেছেন । 


৫. ‘ আলাদিনের আশ্চর্য প্রদীপ ’ পঙ্ক্তিটিতে মোট কটি দল ? রুদ্ধদল এবং মুক্তদলের সংখ্যা বা কত ? 

উঃ । ‘ আলাদিনের আশ্চর্য প্রদীপ ’ পঙক্তিটিতে মোট ৯ টি দল আছে । এর মধ্যে রুদ্ধদলের সংখ্যা চারটি এবং মুক্ত দলের সংখ্যা পাঁচটি । 


৬. কবিতার মধ্যে অসমাপিকা ক্রিয়ার সংখ্যা কটি ও কী কী ? 

উঃ । কবিতার মধ্যে অসমাপিকা ক্রিয়ার সংখ্যা সাতটি । এগুলি হল ( ১ ) সামলাতে ( ২ ) সামলাতে , ( ৩ ) গিলতে ( ৪ ) গিলতে , ( ৫ ) দিলেন , ( ৬ ) ঢুকতে , ( ৭ ) খসে ।


No comments:

Post a Comment