সুভা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রশ্ন উত্তর | অষ্টম শ্রেণী বাংলা প্রশ্ন উত্তর | Class 8th questions and answers class 8th - Psycho Principal

Fresh Topics

Sunday, 29 December 2024

সুভা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রশ্ন উত্তর | অষ্টম শ্রেণী বাংলা প্রশ্ন উত্তর | Class 8th questions and answers class 8th

  

সুভা 
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর





👉(পরাজয় শান্তিপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায় প্রশ্ন উত্তর)


লেখক পরিচিতিঃ

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নামটি উচ্চারণের সঙ্গে সঙ্গে বাঙালিদের মানসপটে একটা চিত্র ভেসে ওঠে । বাঙালি মাত্রই সেই চিত্রটির সঙ্গে পরিচিত । বিশ্ববরেণ্য এই কবির জন্ম হয় জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতে ১৮৬১ খ্রিস্টাব্দে । পিতা দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং মাতা সারদা দেবীর কনিষ্ঠ সন্তান রবীন্দ্রনাথ । শিশুকাল থেকেই তাঁর প্রতিভার স্ফুরণ দেখা যায় । তিনি জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি থেকে প্রকাশিত ভারতী ও বালক পত্রিকায় নিয়মিতভাবে লিখতেন । বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে নানা ক্ষেত্রে তাঁর প্রতিভার বিকাশ দেখা যায় । সাহিত্যের এমন কোনো বিভাগ নেই যেখানে তিনি নিজের প্রতিভার স্বাক্ষর রেখে যাননি । তবে কবিরূপেই তাঁর পরিচিতি সর্বাধিক । তাছাড়া প্রবন্ধ , নাটক , উপন্যাস , ছোটোগল্প এবং গান ও চিত্রাঅঙ্কনে তিনি অসাধারণ প্রতিভার স্বাক্ষর রেখে গেছেন । তাঁর কাব্যগ্রন্থের মধ্যে প্রভাত সঙ্গীত , সন্ধ্যাসঙ্গীত , ক্ষণিকা , চিত্রা , কথা ও কাহিনি ; শিশু , শিশু ভোলানাথ ইত্যাদি বিশেষ উল্লেখযোগ্য । ডাকঘর , চিরকুমার সভা , প্রভৃতি নাটক , গোরা , চোখের বালি , যোগাযোগ , চার অধ্যায় , নৌকাডুবি , প্রভৃতি উপন্যাস এবং মধ্যবর্তিনী , গুপ্তধন , মুসলমানীর গল্প , প্রভৃতি ছোটো - গল্প বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য । তাঁর প্রবন্ধের মধ্যে শিক্ষা , শান্তিনিকেতন , চরিত্র পূজা সর্বাপেক্ষা উল্লেখের দাবি রাখে । এছাড়া তিনি প্রায় দু'হাজারের ওপর গান রচনা করেছেন যা রবীন্দ্রসংগীত নামে জনপ্রিয় । তাঁর ভ্রমণ কাহিনিগুলিও অত্যন্ত চিত্তাকর্ষক । এ বিষয়ে জাপানযাত্রীর ডায়রি , য়ুরোপপ্রবাসীর পত্র , রাশিয়ার চিঠি প্রভৃতির নাম সর্বাগ্রে উল্লেখ করতে হয় । এছাড়াও তিনি সারাজীবনে অজস্র ছবি এঁকেছেন । তাঁর সাহিত্য প্রতিভার নিদর্শন স্বরূপ ১৯১৩ খ্রিস্টাব্দে Song Offerings- এর জন্য তিনি এশিয়ার মধ্যে প্রথম নোবেল পুরস্কার লাভ করেন । তাঁর অসাধারণ প্রতিভার জন্য ইংরেজ সরকার তাঁকে ‘ নাইট ’ উপাধি দেন । কিন্তু জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে তিনি ওই উপাধি ত্যাগ করেন । তাঁর রচিত ' জনগণমন অধিনায়ক এবং ‘ সোনার বাংলা ’ যথাক্রমে ভারত ও বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত । তিনি সারা পৃথিবীর অধিকাংশ দেশে গিয়েছেন এবং সর্বত্র পেয়েছেন অনন্য সম্মান । ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দে তাঁর জীবনাবসান হয় । 

 

সারসংক্ষেপঃ

মেয়েটি জন্মাবার সময় বড়ো দুই বোনের সঙ্গে নাম মিলিয়ে তার নাম রাখা হয়েছিল সুভাষিণী । কিন্তু সকলে তাকে আদর করে ডাকত সুভা বলে । যতদিন যায় মেয়েটির কথা না বলে অনুভব করা দেখে সকলে চিন্তায় পড়ে গেল এবং ক্রমশ বোঝা গেল যে মেয়েটি বোবা হয়েই জন্মেছে । তার মা তাকে নিজের ত্রুটি স্বরূপ দেখলেও পিতা বাণীকণ্ঠ কিন্তু মেয়েকে খুবই ভালোবাসত । সুভার কথা ছিল না । সে সকল কিছু অনুভব করত আর তার ঠোঁট নবীন কিশলয়ের মতো কেঁপে উঠত । সুভার সকল অভাব পূরণ করে দিত চণ্ডীপুর গ্রামের প্রকৃতি । সেই গ্রামের নদীর কলধ্বনি , মাঝির গান , পাখির কোলাহলে সে আত্মীয়তা অনুভব করত । তার বন্ধু ছিল তাদের গোয়ালের দুটি গাভী সর্বশী এবং পাঙ্গুলি । সুভার ব্যথা - বেদনা সবই তারা অনুভব করত । একসময় সুভার সাথে গোঁসাইদের ছেলে প্রতাপের পরিচয় হয় । সে তাকে ‘ সু ’ বলে ডাকত । তার ছিপে মাছ ধরার নিত্যসঙ্গী ছিল এই সুভা । ক্রমশ সুভার বয়স বেড়ে উঠলে কলিকাতার তার জন্য পাত্র দেখা হয় । অবশেষে পত্রিকা মিলিয়ে শুভলগ্নে সুভার বিবাহ সম্পন্ন হয় । কিন্তু কিছুদিন পরেই সকলে বুঝতে পারে নববধূ বোবা । ফলস্বরূপ তার জীবনে নেমে আসে ভাগ্যের কুঠারাঘাত । যা অন্তর্যামী ছাড়া সকলের কাছেই অজ্ঞাত থেকে যায় । আর তার স্বামী পরীক্ষা করে ভাষাবিশিষ্ট এক কন্যাকে দেখেশুনে বিবাহ করে আনে । 


নামকরণঃ

মেয়েটি জন্মাবার সময় তার বড়ো বোনেদের সঙ্গে নাম মিলিয়ে সুভাষিণী রাখা হলো ও তার ডাক নাম সুভা । ক্রমে দেখা গেল যে মেয়েটি বোবা । তার মা তাকে নিজের ত্রুটি স্বরূপ মনে করে অবহেলা করত । কিন্তু তার বাবা তাকে ভালোবাসত । সুভার চোখে ছিল অতল গভীরতা , তাই কেউ তার সাথে খেলত না । কিন্তু তার দুটি বন্ধু ছিল গোয়ালের দুটি গাভী সর্বশী ও পাঙ্গুলি । এরাও ছিল তারই মতো মুক । এছাড়াও গোঁসাইদের কাজকর্মহীন নিতান্ত অকর্মণ্য ছেলে প্রতাপ তাকে ভালোবাসত । কারণ প্রতাপ যেকোনো কাজে সঙ্গী খুঁজত । আর তাই ছিপ দিয়ে মাছ ধরার মতো কাজে সুভার মতো নির্বাক সঙ্গীই তার প্রয়োজন ছিল । কিন্তু একদিন প্রতাপের মুখে সুভা জানতে পারল তার কলিকাতায় বিবাহ ঠিক হয়েছে । তাকে এখানের দুই প্রিয় বন্ধুকে ফেলে কলিকাতা যেতে হবে । তার দুঃখের সীমা রইল না । কলিকাতা গিয়ে তার বিবাহ হলো কিন্তু বিবাহের কিছুদিনের মধ্যেই তার স্বামী জানতে পারল যে সুভা বাক্শক্তিহীনা । ফলে সে আবার দেখেশুনে একটা বিয়ে করল । আর এভাবেই দেখা গেল যে গল্পটি শুরু থেকে শেষপর্যন্ত সুভাকে নিয়েই আবর্তিত । সুভার আশা - আকাঙ্খা , বেদনা নিয়ে গল্পটি এক করুণ পরিণতির দিকে এগিয়েছে । তাই এক্ষেত্রে গল্পের চরিত্র অনুসারে নামকরণ সার্থক এবং সুপ্রযুক্ত হয়েছে ।


        ইতিহাস প্রশ্ন উত্তর পড়তে ক্লিক করো

👉 ( দ্বিতীয় অধ্যায় আঞ্চলিক শক্তির উত্থান প্রশ্ন উত্তর) 


১.১ জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ি থেকে প্রকাশিত কোন্ পত্রিকায় রবীন্দ্রনাথ নিয়মিত লিখতেন ? 

উঃ । ঠাকুরবাড়ি থেকে প্রকাশিত ' ভারতী ' ও ' বালক ' পত্রিকায় রবীন্দ্রনাথ নিয়মিত লিখতেন । 


১.২ ভারতের কোন্ প্রতিবেশী দেশে তাঁর লেখা গান ‘ জাতীয় সংগীত ' হিসাবে গাওয়া হয় ? 

উঃ । ভারতের প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশে তাঁর লেখা গান জাতীয় সংগীত হিসাবে গাওয়া হয় । 


২. নীচের প্রশ্নগুলির একটি বাক্যে উত্তর দাও : 

২.১ সুভার প্রকৃত নাম কী ? 

উঃ । সুভার প্রকৃত নাম সুভাষিণী । 


২.২ সুভার বাবা কে ? 

উঃ । সুভার বাবা হলেন বাণীকণ্ঠ । 


২.৩ মুডা কোন্ গ্রামে বাস করত ? 

উঃ । সুভা চণ্ডীপুর গ্রামে বাস করত । 


২.৪ গল্পে সুভার কোন্ কোন্ বন্ধুর কথা রয়েছে ? 

উঃ । গল্পে সুভার বাড়ির গোয়ালের দুটি গাভী সর্বশী ও পাঙ্গুলি নামে বন্ধুর কথা রয়েছে । এছাড়া গোঁসাইদের ছোটো ছেলে প্রতাপের সঙ্গেও সুভার বন্ধুত্ব ছিল । 


২.৫ কে সুভাকে ' সু ' বলে ডাকত ? 

উঃ । গোঁসাইদের ছোটো ছেলে প্রতাপ সুভাকে ' সু ' বলে ডাকত । 


৩. নীচের প্রশ্নগুলির সংক্ষিপ্ত উত্তর দাও : 

৩.১ ' সে নির্জন দ্বিগ্রহরের মতো শব্দহীন এবং সঙ্গীহীন ' — সূভা সম্পর্কে এরকম উপমা লেখক ব্যবহার করেছেন কেন ? 

উঃ । রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা ' সুভা ' গল্পের মূল চরিত্র । সুভা কথা বলতে পারে না । সকল অভিব্যক্তিতেই তার ঠোঁট নবীন কিশলয়ের মতো কেঁপে উঠত । তার মুখের মধ্যে ছেয়ে থাকত অসীম উদারতা ও গভীরতার অতল স্পর্শ । তাই বালক - বালিকারা একপ্রকার ভয়ে তার সাথে খেলা করত না । দ্বিপ্রহর অর্থাৎ দুপুরবেলায় যেমন পথঘাট নির্জন এবং শব্দহীন হয় সেভাবেই সুভার ভাষা ব্যবহারের অক্ষমতাকে লেখক নির্জন দ্বিপ্রহরের মতো শব্দহীন এবং সঙ্গীহীন এই উপমা ব্যবহার করেছেন । 


৩.২ চণ্ডীপুর গ্রামের বর্ণনা দাও । 

উঃ । চন্ডীপুর গ্রামটি এক তন্বী নদী দিয়ে ঘেরা । নদীটি বাংলাদেশের একটি ছোটো নদী । গৃহস্থ ঘরের মেয়েটির মতো , বহুদূর পর্যন্ত তার প্রসার নয় । গ্রামের দু - ধারের সকলের সঙ্গেই তার একটা - না - একটা সম্পর্ক আছে । দু - ধারে লোকালয় এবং তরুছায়াঘন উচ্চতট , নিম্নতল দিয়ে গ্রামলক্ষ্মী স্রোতস্বিনী আত্মবিস্মৃত দ্রুত পদক্ষেপে প্রফুল্ল হৃদয়ে আপনার অসংখ্য কল্যাণকর্ম করে চলেছে । সুভার বাবা কালীপ্রসন্ন চণ্ডীপুর গ্রামেই বাস করতেন । 


৩.৩ সুভার সঙ্গে সর্বশী ও পাঙ্গুলির সম্পর্ক কী রকম ছিল ? 

উঃ । সুভার মতো সর্বশী ও পাঙ্গুলিও নির্বাক ছিল । কারণ তারা ছিল সুভার গোয়ালের দুটি গাভী । সুভা সকল কথা বুঝতে পারলেও প্রকাশ করতে পারত না , এই গাভী দুটি ছিল তার অন্তরঙ্গ বন্ধু । তার পায়ের আওয়াজ তারা চিনত । তাই সূভা কখন তাদের আদর করছে আর কখন ভর্ৎসনা করছে তারা মানুষের অপেক্ষা ভালো বুঝত । তাই বলা যায় সর্বশী ও পাণ্ডুলির সাথে সুভার একটা আন্তরিক সম্পর্ক বর্তমান ছিল । 


৩.৪ ‘ এইজন্য প্রতাপ সুভার মর্যাদা বুঝিত — প্রতাপের কাছে সুভা কীভাবে মর্যাদা পেত , তা গল্প অবলম্বনে লেখো । 

উঃ । চণ্ডীপুর গ্রামের গোঁসাইদের ছোটো ছেলেটির নাম প্রতাপ । তার প্রধান শখ ছিল ছিপ ফেলে মাছ ধরা । কারণ এতে অনেকটা সময় কাটানো যায় । আর প্রতাপ যেকোনো কাজে একটা সঙ্গী পেলে ভালো থাকে । মাছ ধরার সময় বাক্যহীন সঙ্গীই সর্বশ্রেষ্ঠ , এই জন্যই প্রতাপ সুভার মর্যাদা বুঝিত । সে সুভাকে ' সু ' বলে ডাকত । প্রতাপ পান খেত তাই সুভা নিজে সেটি সেজে এনে তাকে দিত । 


৩.৫ তাহাদের জাতি ও পরকাল রক্ষা হইল ' - কাদের সম্পর্কে এ কথা লেখক বলেছেন ? তাঁর এরূপ মন্তব্যের কারণ বিশ্লেষণ করো । 

উঃ । ' সুভা ' গল্পে সুভার মা - বাবার সম্পর্কে একথা লেখক বলেছেন । সুভা জন্ম থেকেই বোবা ছিল । এই বোবা মেয়ের বিয়ের বয়স হওয়ায় সুভার বাবা মা চিন্তিত ছিলেন । তাছাড়া লোকে নিন্দা করা শুরু করেছিল , তাদের একঘরে করা হতে পারে এমন প্রস্তাবও উঠেছিল । কিন্তু তার মা - বাবা সেকথা কলিকাতার পাত্রের কাছে অঙ্গতি রেখে সুভার বিবাহ দিল এতে তাদের জাতি ও পরকাল রক্ষা হলো বলে লেখক কটাক্ষ করেছেন । 


৪. নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর নিজের ভাষায় লেখো : 

৪.১ ' প্রকৃতি যেন তাহার ভাষার অভাব পুরণ করিয়া দেয় ' — মানুষের ভাষার অভাব কীভাবে প্রকৃতি পূরণ করতে পারে তা আলোচনা করো । 

উঃ । যেকোনো মানুষই প্রকৃতির অনুশাসন দ্বারা পরিচালিত । আর সুভা একটি বোবা মেয়ে । তার সঙ্গে প্রকৃতির যে একটি বিশেষ সম্পর্ক থাকবে এটাই স্বাভাবিক । আসলে সে তার সমস্ত ব্যথা - বেদনা প্রকৃতির সঙ্গে ভাগ করে নেয় । কারণ প্রকৃতি নিজে কথা বলে না । বোবা হওয়ার কারণে প্রকৃতির ইঙ্গিত , ভঙ্গি ভাষার সাথেই সুভা একাত্মতা স্থাপিত হয় । আর এভাবেই মানুষের ভাষার অভাব প্রকৃতি পূরণ করে দেয় । 


৪.২ সুভার সঙ্গে মনুষ্যেতর প্রাণীর বন্ধুত্ব কেমন ছিল তা লেখো । 

উঃ । সুভার সঙ্গে মানুষের খুব একটা সম্পর্ক না থাকলেও মনুষ্যতর প্রাণীর সম্পর্ক তথা বন্ধুত্ব খুব ভালোই ছিল । সর্বশী ও পাঙ্গুলি নামে দুটি গাভী এবং একটি বিড়াল শাবক ও একটি ছাগল ছিল সুভার অন্তরঙ্গ বন্ধু । তারা যেমন সুভার দুঃখে দুঃখিত হতো তেমনি সুভার আদর , ভৎসনা , মিনতি সবই তারা বুঝতে পারত । সুভা যখন দুহাত দিয়ে সর্বশীর গলা জড়িয়ে তার কানের কাছে নিজের গাল ঘষত , তখন পাঙ্গুলি স্নেহের দৃষ্টিতে দেখে তার গা চেটে দিত । বাড়িতে কেউ কোনো কঠিন কথা বললে সুভা এই মুক বন্ধু দুটির কাছে চলে আসত , আর তারাও যেন সহিয়ু শাস্ত্র দৃষ্টিতে কোনও এক অনুমান বলে সুভার মনোবেদনা বুঝতে পারত । তার কাছে এসে হাতে শিং ঘষে তাকে সান্ত্বনা দিত । গোয়ালের গাভী ছাড়াও ছাগল এবং বিড়ালছানাও ছিল সুভার বন্ধু । বিড়ালশিশুটি সুভার কোলে ঘুমোতে এলে সে তার ঘাড়ে ও পিঠে আঙুল বুলিয়ে ঘুমের সহায়তা করত । 


৪.৩ শুক্লা দ্বাদশীর রাত্রিতে সুভার মনের অবস্থা কেমন ছিল ? তার মনের অবস্থা এরকম হওয়ার কারণ কী ? 

উঃ । শুক্লা দ্বাদশীর রাত্রিতে সুভার মন বেদনায় ভারাক্রান্ত ছিল । সে তার শয়নকক্ষ থেকে বাইরে এসে তার চিরপরিচিত নদীর তীরে ঘাসের শয্যায় লুটিয়ে পড়ে সেই নীরব ধরণীমাতাকে জড়িয়ে ধরে বলতে চেয়েছিল যে মা যেন তাকে যেতে -না দেন , দুই বাহু বাড়িয়ে তিনি যেন তাকে ধরে রাখেন । কারণ , কলিকাতায় সুভার বিবাহের জন্য পাত্র দেখা হয়েছিল । তাই তাকে কলিকাতায় যেতে হতো । সে তার এই গ্রাম ও বাল্যসঙ্গীদের ছেড়ে যেতে চায়নি । সে কথা বলতে পারে না । নিজের অক্ষমতা সে জানত তাই বড়ো হয়ে ওঠার ফলে সমাজের কঠিন দৃষ্টিও সে বুঝতে পেরেছিল । তার চেনা পরিবেশ ছেড়ে সম্পূর্ণ অন্য জগতে সে ভালো থাকবে না এই কথা সে বুঝতে পেরে মানসিক বেদনায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছিল । 


৪.৪ গল্পের একেবারে শেষ বাক্যটি গল্পের ক্ষেত্রে কতখানি প্রয়োজন আলোচনা করো ।

 উঃ । রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত ' সুভা ' গল্পের একেবারে শেষ বাক্যাটি হলো ‘ এবার তাহার স্বামী চক্ষু এবং কর্মেন্দ্রিয়ের দ্বারা পরীক্ষা করিয়া একভাষা বিশিষ্ট কন্যা বিবাহ করিয়া আনিল । ‘ সুভা ' গল্পে বোবা মেয়ে সুভার জীবনের অনিশ্চয়তার কথা না ভেবে নিজেদের জাতি ও পরকাল রক্ষার জন্য পাত্রপক্ষকে লুকিয়ে সুভার বাবা বাণীকণ্ঠ তার বিয়ে দেন । তাঁরা বোঝার চেষ্টাই করলেন না যে কথা বলতে না পারার অক্ষমতার কথা না জানালে সুভার জীবনে চরম বিপর্যয় নেমে আসবে । আসলে লেখক শেষের এই বাক্যটির মাধ্যমে আমাদের সমাজকে ব্যঙ্গ ও বিদ্রুপ করেছেন । কারণ আমাদের সমাজ অনুশাসন অনুযায়ী পাত্র মেয়ে তথা পাত্রীকে চক্ষু কর্ণের দ্বারা পরীক্ষা করেই তবে বিবাহ করেন । কিন্তু সুভা কথা বলতে না পারায় তাকে শ্বশুরবাড়ি থেকে বিদায় দেওয়া হয় । তাই সমাজের অবস্থা বোঝাতে বাক্যটির প্রয়োজন অনিবার্য ছিল । শেষ বাক্যটির মধ্যে দিয়ে লেখক সুভার স্বামীর মানসিকতাকে কটাক্ষ করেছেন এবং এতে পাঠকের কাছে সুভার জীবনের করুণ পরিণতির এক ভবিষ্যত চিত্রও তুলে ধরেছেন । এই কারণেই গল্পের শেষ বাক্যটি গুরুত্বপূর্ণ তাৎপর্য বহন করে এনেছে । 


৪.৫ মানুষ ও মনুষ্যেতর প্রাণীর বন্ধুত্ব নিয়ে আরো দু - একটি গল্পের নাম লেখো এবং ‘ সুভা ' গল্পটির সঙ্গে তুলনা করো । 

উঃ । মানুষ ও মনুষ্যতর প্রাণীর বন্ধুত্ব নিয়ে আরো দুটি গল্প হলো শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত ‘ মহেশ ’ এবং বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত ' আদরিনী ' ।

মহেশ ও আদরিণী গল্পে মনুষ্যেতর প্রাণীর বন্ধুত্ব , ও ভালোবাসার কাহিনি বর্ণিত হলেও সুভা গল্পের প্রধান চরিত্র সুভা ছিল মানুষ । এই গল্পে সুভা মনুষ্যেতর প্রাণীদের ভালোবেসে তার বেদনার প্রকাশ ও ভাব বিনিময় করেছে । মনুষ্যেতর প্রাণীগুলির চরিত্র গল্পে প্রাধান্য পায়নি ।


 ৫. নীচের বাক্যগুলিতে কর্তা - খণ্ড ও ক্রিয়া - খণ্ডে ভাগ করে দেখাও :

 ৫.১ সে নির্জন বিগ্রহরের মতো শব্দহীন ও এবং সঙ্গহীন । 

উঃ । সে – কর্তাখণ্ড । নির্জন দ্বিগ্রহরের মতো শব্দহীন ও এবং সঙ্গীহীন — ক্রিয়াখণ্ড ।


 ৫.২ সে যে কাজকর্ম করিয়া সংসারের উন্নতি করিতে যত্ন করিবে , বহু চেষ্টার পর বাপ - মা সে আশা ত্যাগ করিয়াছেন । 

উঃ । সে – কর্তাখণ্ড । বাপ - মা যে কাজকর্ম করিয়া সংসারের উন্নতি করিতে যত্ন করিবে । বহু চেষ্টার পর সে আশা ত্যাগ করিয়াছিল । — ক্রিয়াখণ্ড ।


 ৫.৩ এই বাক্যহীন মনুষ্যের মধ্যে বৃহৎ প্রকৃতির মতো একটা বিজন মহত্ত্ব আছে ।

 উঃ । এই বাক্যহীন মনুষ্যের – কর্তাখণ্ড । মধ্যে বৃহৎ প্রকৃতির মতো একটা বিজন মহত্ব আছে — ক্রিয়াখণ্ড । 


৬. নির্দেশ অনুযায়ী বাক্য পরিবর্তন করোঃ

 ৬.১ সুভা তেঁতুলতলায় বসিয়া থাকিত এবং প্রতাপ অনতিদূরে মাটিতে ছিপ ফেলিয়া জলের দিকে চাহিয়া থাকিত । ( জটিল বাক্যে ) 

উঃ । যখন সুভা তেঁতুলতলায় বসিয়া থাকিত তখন প্রতাপ অনতিদূরে মাটিতে ছিপ ফেলিয়া জলের দিকে চাহিয়া থাকিত । 


৬.২ বাণীকণ্ঠ নিম্না হইতে উঠিয়া শরনগৃহে তামাক খাইতেছিল । ( জটিল বাক্যে ) 

উঃ । যদিও বাণীকণ্ঠ নিদ্রা হইতে উঠিয়াছিল তবুও শয়নগৃহে তামাক খাইতেছিল । 


৬.৩ বাণীকন্ঠের ঘর একেবারে নদীর উপরেই । তাহার বাখারির বেড়া , আটচালা , গোয়ালঘর , ঢেঁকিশালা , খড়ের স্তূপ , তেঁতুলতলা , আম , কাঁঠাল এবং কলার বাগান নৌকোৰাহী মাত্রেরই দৃষ্টি আকর্ষণ করে । ( একটি জটিল বাক্যে পরিণত করো ) 

উঃ । যদিও বাণীকন্ঠের ঘর একেবারে নদীর উপরেই তবুও তাহার বাখারির বেড়া , আটচালা , গোয়ালঘর , ঢেঁকিশালা , খড়ের স্তুপ , তেঁতুলতলা , আম , কাঁঠাল এবং কলার বাগান নৌকোবাহী মাত্রেরই দৃষ্টি আকর্ষণ করে । 


৬.৪ প্রকৃতি যেন তাহার ভাবা অভাব পূরণ করিয়া দেয় । যেন তাহার হইয়া কথা কয় । ( একটি সরল বাক্যে পরিণত করো ) 

উঃ । প্রকৃতি তার হয়ে কথা বলে তার ভাষার অভাব পূরণ করে দেয় ।

No comments:

Post a Comment