হরিচরণ বন্দোপাধ্যায়
হীরেন্দ্রনাথ দত্ত
👉(ভালোবাসা কি বৃথা যায় শিবনাথ শাস্ত্রঈ)
লেখক পরিচিতিঃ
হীরেন্দ্রনাথ দত্ত একজন প্রতিভাধর লেখক ও বাংলা সাহিত্যের অনুপম স্রষ্টা । বাংলা সাহিত্যে তিনি ' ইন্দ্রজিৎ ' ছদ্মনামে পরিচিত । এই প্রথিতযশা লেখক জন্মগ্রহণ করেন ১৯০৩ সালে । ১৯৪৩ - এ তিনি শান্তিনিকেতনে আশ্রম বিদ্যালয়ে যোগ দেন । প্রথমে অধ্যাপকরূপে এবং পরে সেখানে উপাধ্যক্ষ ও অধ্যক্ষ হন । কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যে এম.এ পাশ করেন । ১৯৪২ সালে ভারত ছাড়ো আন্দোলনে যোগ দিয়ে তিনি গ্রেপ্তার হন । ' ইন্দ্রজিতের খাতা ' ও ' ইল্লজিতের আসর ’ তাঁর প্রথম গ্রন্থ । তাঁর লেখা অন্যান্য গ্রন্থগুলি হলো — ‘ অচেনা রবীন্দ্রনাথ ’ , ‘ আপন মনের মাধুরী মিশায়ে ’ , ‘ কালের যাত্রার ধ্বনি ’ , ‘ খেলা ভাঙার খেলা ' , ' শান্তিনিকেতনের একযুগ ’ , ‘ শেষ পাড়ানির কড়ি ’ , ‘ সাহিত্যের আড্ডা’ইত্যাদি । হীরেন্দ্রনাথ দত্ত দীর্ঘজীবন লাভ করেন , তাঁর কলম আমৃত্যু চলমান ছিল । ১৯৯৫ সালে ১২ বছর বয়সে তাঁর জীবনাবসান হয় ।
সারসংক্ষেপঃ
শান্তিনিকেতন বিদ্যালয়ের প্রথম যুগে যাঁরা রবীন্দ্রনাথের আহ্বানে অধ্যাপনার কাজে এসে যোগ দিয়েছিলেন , তাঁরা সকলেই কেউ অসাধারণ ব্যক্তিত্বের অধিকারী ছিলেন না । দুএকজন অবশ্যই অসাধারণ ছিলেন । তাঁদের কথা অবশ্যই আলাদা । যাঁরা সাধারণের তালিকায় পড়েন , তাঁরা স্বেচ্ছায় এমন সব কার্যভার নিজের হাতে গ্রহণ করেছিলেন ও তাতে ভীষণভাবে সফল হয়েছিলেন , যা দেখলে সাংসারিক বুদ্ধি সম্পন্ন ব্যক্তিরা সেটাকে হঠকারিতা বলে মনে করবেন । মনে হবে একটা সাধনায় ভুলে গিয়ে তাঁরা সাধ্যাতীতের স্বপ্ন দেখেছেন । কিন্তু শেষে অবিশ্বাসীর অবিশ্বাসকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে তাঁরা আপন সাধনায় সিদ্ধিলাভ করেছেন । কথায় বলে কর্তা অকিঙ্কন , কীর্তি সুমহান , বস্তুত তা হয় না । সেই শক্তি নিশ্চয়ই তাঁদের চরিত্রের মধ্যে নিহিত ছিল । আর ছিল নিষ্ঠা এবং অভিনিবেশ , বিদ্যাবুদ্ধি তো ছিলই । এই দুই গুণের সংমিশ্রণে সাধারণ মানুষের দ্বারাও অসাধারণ কার্য সম্পাদন সম্ভব হয়েছিল । শিক্ষাক্ষেত্রে শান্তিনিকেতনের দান অপরিসীম । শান্তিনিকেতন দেশকে প্রথম শিখিয়েছে যে বিদ্যালয় কেবলমাত্র বিদ্যাদালের স্থান নয় , বিদ্যাচর্চার স্থান , শুধু বিদ্যাচর্চা নয় , বিদ্যা বিকিরণের স্থান ।
হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় মহাশয় যখন রবীন্দ্রনাথের নির্দেশে বঙ্গীয় শব্দকোষ রচনায় প্রবৃত্ত হন তখন বঙ্গীয় পণ্ডিত সমাজে তিনি সম্পূর্ণ অপরিচিত ছিলেন । বয়সে নবীন , অভিজ্ঞতায় অপ্রবীন , বিশ্ব - বিদ্যালয়ের ছাপটুকু পর্যন্ত নেই । প্রামাণিক কোনো গ্রন্থ রচনা করে পাণ্ডিত্যের পরীক্ষায় উত্তীর্ণও হননি । কিন্তু গুরুদেবের মনে তা নিয়ে কোনো সংশয় ছিল না । ক্ষিতিমোহন বাবু বলতেন গুরুদেব নিজ হাতে আমাদের গড়ে দিয়েছেন । নইলে যে বিদ্যা শিখে এসেছিলাম তাও ঠিকমতো ব্যবহার করা আমাদের সাধ্যে কুলোত না । রবীন্দ্রনাথের সারা জীবনের সাধনা ছিল উদ্বৃবৃত্তের সাধনা । জমিদারি মহল্লা পরিদর্শন করতে গিয়ে আমিনের সেরেস্তার নিযুক্ত হরিচরণকে তিনি জিজ্ঞাসা করেছিলেন , দিনে সেরেস্তার কাজ করে রাত্রে কী করেন ? উত্তর পেলেন সংস্কৃতের চর্চা করি । এইটুকুর মধ্যেই তিনি যা দেখার দেখে নিলেন । নিয়ে এলেন হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়কে । তখন তিনি বিদ্যালয়ের প্রয়োজনে “ সংস্কৃত প্রবেশ ” নামে একটি পুস্তক রচনায় ব্যস্ত ছিলেন । তা হস্তান্তর করেন হরিচরণের হাতে – অধ্যাপনার অবসরে কবির নির্দেশ মতো ওই বই রচনা তিনি সমাপ্ত করেন । হরিচরণ তাঁর কর্মনিষ্ঠার মধ্যে দিয়ে সকলের শ্রদ্ধা , গুরুদেবের বিশ্বাস অর্জন করেছিলেন ।
শান্তিনিকেতনে যোগ দেবার দুই বৎসর পরে ৩৭-৩৮ বৎসর বয়সে তিনি একটি অভিধান রচনার কাজে হাত দিয়েছিলেন । ১৩১২ বঙ্গাব্দে অভিধান রচনার কাজ শুরু হয় । রচনা কাজ শেষ হয় ১৩৩০ বঙ্গাব্দে — জীবনের চল্লিশটি বছর এক ধ্যান , এক জ্ঞান , এক কাজ নিয়ে তিনি কাটিয়েছেন , এ কাজ মহাযোগীর জীবন । বাঙালির চরিত্রে অনেক গুণ আছে কিন্তু নিষ্ঠার অভাব । এদিক থেকে হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় বাঙালি জাতির সম্মুখে এক অত্যুজ্জ্বল দৃষ্টান্ত রেখে গিয়েছিলেন । অভাব - দারিদ্র্য তাঁকে পিছুটান দিয়েছিল তবে কিছু বিশিষ্ট মানুষের সহযোগিতাও তিনি পেয়েছিলেন । পেয়েছেন মহারাজ মনীন্দ্রচন্দ্রের মাসিক পঞ্চাশ টাকার বৃত্তি , কোনো ক্রমে এগিয়েছে তাঁর সংসারের চাকা । অভিধান লেখা শেষ হলেও তা ছাপার সামর্থ্য বিশ্বভারতীর ছিলনা । তাই কয়েক বছর হরিচরণকে অপেক্ষা করতে হয় । নিষ্ঠার যথার্থ পুরস্কার অভীষ্ট কার্যের সফল সমাপ্তি , এর বেশি কোনো প্রত্যাশা তাঁর ছিল না । তবে দীর্ঘ শ্রমের নিষ্ঠার কিছু জাগতিক পুরস্কার জুটে ছিল হরিচরণের কপালে — কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় তাকে ‘ সরোজিনী স্বর্ণপদক ’ , বিশ্বভারতী তাকে ‘ দেশিকোত্তম ’ ( ডি . লিট . ) উপাধিতে সম্মানিত করেন । এরূপ বিশাল একটি সংস্কৃত অভিধান তিনি একা রচনা করেছিলেন , চল্লিশ বছরের নিবিড় সাধনায় কিছু ত্রুটি - বিচ্যুতি রয়ে যেতে পারে । অভিধান ছাড়াও তিনি বেশ কিছু গ্রন্থ রচনা করেন । অবসর গ্রহণের পরেও অভিধান শেষ হবার পর ও ১৪ বছর তিনি জীবিত ছিলেন । তাঁকে দেখলে মনে হতো প্রসন্নচিত্তেই ছিলেন । এইরকম সাধক মানুষের মনে কোথাও একটি প্রশান্তি বিরাজ করে । এইজন্য সুখে - দুঃখে কখনো তাঁরা বিচলিত হন না ।
নামকরণঃ
হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন একনিষ্ঠ সাহিত্য সেবক নিষ্ঠাবান কর্মী । প্রতিভাবান ব্যক্তিদের প্রতিভা নির্ণয়ে রবীন্দ্রনাথের জুড়ি ছিল না । এই রচনার নামকরণ দেখে মনে হয় এ বুঝি শুধুমাত্র জীবনী । কিন্তু এটি শুধুমাত্র তথ্যসমৃদ্ধ রচনা নয় । হরিচরণের আন্তরিক পরিচয়ও এতে পাওয়া যায় । এই রচনায় রবীন্দ্রনাথ ও শান্তিনিকেতন প্রসঙ্গ , হরিচরণের কাজের প্রতি নিষ্ঠা অধ্যাবসায় সবই বর্ণিত হয়েছে । তবে সবকিছুকে ছাপিয়ে এই রচনাংশটির সমস্ত প্রসঙ্গ জুড়ে রয়েছেন বঙ্গীয় শব্দকোষ রচয়িতা চিরনমস্য হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় । তাই তাঁর নামে গদ্যের নামকরণ সুপ্রযুক্ত হয়েছে ।
১.১ হীরেন্দ্রনাথ দত্ত রচিত দুটি বই - এর নাম লেখো ।
উঃ । হীরেন্দ্রনাথ দত্ত রচিত দুটি বই হলো অচেনা রবীন্দ্রনাথ ’ , ‘ আপন মনের মাধুরী মিশায়ে ' ।
১.২ কোন্ নামে তিনি সমধিক পরিচিত ?
উঃ । ইন্দ্ৰজিৎ নামে তিনি সমধিক পরিচিত ছিলেন ।
২. নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর নিজের ভাষায় লেখো :
২.১ শান্তিনিকেতন বিদ্যালয়ে প্রথম যুগে যাঁরা রবীন্দ্রনাথের আহ্বানে বিদ্যালয়ের কাজে এসে যোগ দিয়েছিলেন , এমন কয়েকজনের কথা আলোচনা করো ।
উঃ । বিধুশেখর শাস্ত্রী , ক্ষিতিমোহন সেন , হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ হলেন শান্তিনিকেতনের প্রথম যুগের মানুষ যাঁদের রবীন্দ্রনাথ আশ্রম বিদ্যালয়ে আহ্বান করেছিলেন এবং তাঁর ডাকে সাড়া দিয়ে সকলেই বিদ্যালয়ের কাজে যোগ দিয়েছিলেন ।
বিধুশেখর শাস্ত্রী : ইনি ইংরেজি ভাষায় অভিজ্ঞ টোলের পণ্ডিত । খুব অল্প বয়সে তিনি কাব্যতীর্থ হয়েছিলেন । কাশীতে গিয়ে তিনি দর্শন , ন্যায়শাস্ত্র , বেদান্ত অধ্যয়ন করেন । ভারতীয় পণ্ডিত সমাজে সর্বাগ্রগণ্যদের মধ্যে তিনি ছিলেন অন্যতম ।
ক্ষিতিমোহন সেন ঃ সংস্কৃতজ্ঞ পণ্ডিত , তাঁরও জিজ্ঞাসা নতুন পথে প্রবাহিত হয় । মধ্যযুগীয় সাধুসন্তদের বাণী সংগ্রহ করে ভারতীয় জীবন সাধনার বিস্মৃত প্রায় এক অধ্যায়কে তিনি পুনঃরুজ্জীবিত করেন । এই সমস্ত সম্ভব হয়েছিল রবীন্দ্রনাথের গুরুত্বপূর্ণ সহযোগিতার ফলে । কর্মজীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তিনি বিশ্বভারতী বিদ্যাভবনের অধ্যক্ষ পদে নিযুক্ত ছিলেন ।
২.২'এর কৃতিত্ব অনেকাংশে শান্তিনিকেতনের প্রাপ্য ' শান্তিনিকেতনের প্রাপ্য ' বলে লেখক মনে করেছেন কেন ? -কোন্ কৃতিত্বের কথা বলা হয়েছে ?
উঃ । শান্তিনিকেতনের বিদ্যালয়ে যাঁরা প্রথম যুগে রবীন্দ্রনাথের ডাকে এসে কাজে যোগ দিয়েছিলেন তাঁরা সকলেই খুব অসাধারণ ব্যক্তি ছিলেন না । দু - একজন অবশ্যই আলাদা । অন্য সকলের পক্ষে এ - কথা খাটে না । কিন্তু তাঁরা স্বেচ্ছায় এমন সব কার্যভার গ্রহণ করেছিলেন এবং তা সম্পন্ন করেছিলেন যার তুলনা খুঁজে পাওয়া ভার । প্রবল মনোযোগ , বিদ্যাবুদ্ধি । এবং একনিষ্ঠ সাধনার দ্বারা তাঁরা এই মহৎ কর্ম সম্পাদন করতে পেরেছিলেন । তাঁদের মতো সাধারণ মানুষজন যে বৃহৎ ও মহৎ কর্ম সফল করতে পেরেছিলেন বলে লেখক মনে করেছেন ।
সেই কৃতিত্বের কথা এখানে বলা হয়েছে । এর কৃতিত্ব অনেকটাই শান্তিনিকেতনের প্রাপ্য কারণ এইরকম মানুষ শান্তিনিকেতন নিজ হাতে তৈরি করে নিয়েছে । স্থান মাহাত্ম্য বলে একটা কথা আছে যে স্থান মানুষের কাছ থেকে বড়ো কিছু দাবি করতে পারে তবে সেই অধিকার অর্জন করতে হয় । বিদ্যালয়ের কাজ বিদ্যাচর্চার পথ সুগম করে দেওয়া , অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় যা ভাবেনি শান্তিনিকেতন তা ভেবেছে । শান্তিনিকেতনের জল হাওয়ায় , সেখানকার অনুকূল পরিবেশে এইসব মহৎ মানুষেরা তাঁদের প্রতিভার বিকাশ ঘটাতে পেরেছেন । শান্তিনিকেতন ছাড়া আর কোথাও তা সম্ভব হতো না বলে এই কৃতিত্ব শান্তিনিকেতনের প্রাপ্য বলেই লেখক মন্তব্য করেছেন ।
২.৩ ' আমাদের শিক্ষাক্ষেত্রে শান্তিনিকেতনের দান অপরিসীম ।'— লেখক এ প্রসঙ্গে শান্তিনিকেতনের কোন্ কোন গুরুত্বপূর্ণ অবদানের উল্লেখ করেছেন ?
উঃ । শিক্ষাক্ষেত্রের শান্তিনিকেতনের অবদান অপরিসীম । রবীন্দ্রনাথ আদর্শ শিক্ষাকেন্দ্র তৈরির উদ্দেশ্যে শান্তিনিকেতন স্থাপন করেন । লেখক বলেছেন যে শান্তিনিকেতনই দেশকে প্রথম শিখিয়েছে যে বিদ্যালয় শুধুমাত্র বিদ্যাদানের কেন্দ্র নয় , বিদ্যাচর্চার কেন্দ্র । সে স্থান বিদ্যা বিকিরণের স্থান । সূর্য যেভাবে তার আলোক দিকে দিকে ছড়িয়ে দেয় , শান্তিনিকেতন সেভাবেই দেশে বিদ্যা বিকিরণ করেছে । বিদ্যা অর্জন করার পথ যাতে সুগম হয় সেদিকেও শান্তিনিকেতন দৃষ্টি দিয়েছে । যে সময় আমাদের দেশের বিদ্যালয়গুলি এসব ভাবেওনি শান্তিনিকেতন তার প্রতিষ্ঠার শুরুতেই সে সব ভেবেছে এবং সেজন্য নিজেকে প্রস্তুত করেছে । এছাড়া ছিলেন রবীন্দ্রনাথ , তিনি নিজের সর্বশক্তি নিয়োগ করেছিলেন এবং তাঁর দ্বারা যাঁদের তিনি আহ্বান করেছিলেন তাঁদের কাছ থেকেও সবটুকু পেয়েছিলেন ।
২.৪ ' আপাতদৃষ্টিতে যে মানুষ সাধারণ তাঁরও প্রচ্ছন্ন সম্ভাবনা রবীন্দ্রনাথের সর্বদর্শী দৃষ্টিতে এড়াতে পারেনি ।'— লেখক এ প্রসঙ্গে কাদের কথা স্মরণ করেছেন ? জ্ঞান - বিজ্ঞানের চর্চায় তাঁদের অবদান সম্পর্কে আলোচনা করো ।
উঃ । লেখক এই প্রসঙ্গে হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় , ক্ষিতিমোহন সেন , বিধুশেখর শাস্ত্রী প্রমুখের নাম স্মরণ করেছেন । এদের মধ্যে হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় শান্তিনিকেতনের সংস্কৃত পণ্ডিতের পদ অলংকৃত করেন । তিনি বাংলা ভাষার বৃহত্তম অভিধান বঙ্গীয় শব্দকোষ রচনা করেন । বিধুশেখর শাস্ত্রী ছিলেন বৌদ্ধশাস্ত্র ও পালি ভাষার পণ্ডিত । তিনি ইংরেজি না জেনেও বহু ভাষাবিদ ছিলেন । ক্ষিতিমোহন সেন সংস্কৃত পণ্ডিত থেকে তাঁর নিজের জীবন জিজ্ঞাসাকে অন্যপথে প্রবাহিত করেন মধ্যযুগীয় সাধুসন্তদের বাণী সংগ্রহ করে ভারতীয় জীবন সাধনার বিস্তৃত প্রায় এক অধ্যায়কে তিনি পুনরুজ্জীবিত করেন ।
২.৫ ‘ এঁরা প্রাণপণে সেই দাবি পূরণ করেছেন ।'— কাদের কথা বলা হয়েছে ? কীই বা সেই দাবি ? সেই দাবিপূরণে প্রাণপণে তাঁদের নিয়োজিত হওয়ারই বা কারণ কী বলে তোমার মনে হয় ?
উঃ । এঁরা হলেন হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় , বিধুশেখর শাস্ত্রী , ক্ষিতিমোহন সেন প্রমুখ । শান্তিনিকেতন স্থাপনের পর রবীন্দ্রনাথ চেয়েছিলেন শিক্ষার মান উন্নয়ন করার জন্য নতুন গ্রন্থ রচনা করতে । তাই বিদ্যাচর্চায় নতুন ধারার প্রবর্তনে তিনি বিভিন্ন ব্যক্তিকে আহ্বান জানিয়ে ছিলেন । তাঁদের কাছে রবীন্দ্রনাথের দাবি ছিল তারা যেন এই জ্ঞানচর্চার মহৎকর্মে আত্মনিয়োগ করেন । সেই দাবি পূরণে এইসব মহৎ ব্যক্তিদের প্রাণপণে নিয়োজিত হবার অন্যতম কারণ রবীন্দ্রনাথের সর্বদর্শী দৃষ্টি । তিনি মানুষের মধ্যে প্রচ্ছন্ন সম্ভাবনা দেখতে পেতেন । এছাড়া ছিল রবীন্দ্রনাথের প্রেরণা , উৎসাহ ও নির্দেশনা । যার ফলে এঁরা নিজেদের কাজ ছাড়াও জ্ঞানচর্চার ক্ষেত্রকে পরিপুষ্ট করেছেন ।
২.৬ শান্তিনিকেতনের সঙ্গে হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সম্পর্ক কীভাবে গড়ে উঠেছিল ? প্রবন্ধ অনুসরণে তাঁর সারাজীবনব্যাপী সারম্বত - সাধনার পরিচয় দাও ।
উঃ । জমিদারি মহল্লা পরিদর্শন করতে গিয়ে রবীন্দ্রনাথ আমিনের সেরেস্তায় নিযুক্ত কর্মচারী হরিচরণকে দেখে প্রশ্ন করেন দিনে সেরেস্তার কাজ সেরে রাত্রে কী করেন ? উত্তর পান সংস্কৃত চর্চা করি । কবি তাঁর রচিত পাণ্ডুলিপি চেয়ে নেন ও কিছুদিন পরেই সংস্কৃতজ্ঞ কর্মচারীটিকে তিনি নিজের কাছে অর্থাৎ শান্তিনিকেতনে ডেকে নেন । তাঁর হাতে ‘ সংস্কৃত প্রবেশ ’ — নামে পুস্তক রচনার ভার সেন । তারপর কাজে যোগ দেবার পর তাঁকে বৃহত্তম অভিযান রচনার কাজে নিযুক্ত করেন । ১৩১২ বঙ্গাব্দে তিনি অভিধান রচনার কাজ শুরু করেন । পাণ্ডুলিপি রচনার কাজ শেষ হয় ১৩৩০ বঙ্গাব্দে । মাঝে আর্থিক অনটনের জন্যে লেখার কাজ থমকে যায় ।
গুরুদেব নিজে বিদ্যোৎসাহী মহারাজ মণী নদীকে হরিচরণকে সাহায্য করার জন্য আবেদন করেন । মহারাজ রবীন্দ্রনাথের ওই আবেদনে সাড়া দিয়ে মাসিক পঞ্চাশ টাকা বৃত্তির ব্যবস্থা করে দেন । ১৩১৮ সাল থেকে অভিধান সংকলনের কাজ শেষ হওয়া পর্যন্ত তেরো বছর তিনি এই বৃত্তি পেয়ে এসেছেন । মুণ কাজ শুরু হওয়ার আগেই মহারাজা মনীচন্দ্রের মৃত্যু হয় । ১০৫ খণ্ডের মুদ্রণ শেষ হবার আগে রবীন্দ্রনাথও বিদায় নেন । ১৩১২ বঙ্গাব্দে যে রচনার শুরু হয়েছিল ১৩৫২ বঙ্গাব্দে তা সমাপ্ত হয় । জীবনের চল্লিশ বছর ধরে এক ধ্যান , এক জ্ঞান , এক কাজ নিয়ে হরিচরণ কাটিয়েছেন । তাঁর এই কাজ মহাযোগীর জীবন । তিনি বাঙালি জাতির সম্মুখে এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত রেখে গিয়েছিলেন । তাঁর নিষ্ঠার যথার্থ পুরস্কার ছিল তাঁর কাজের সফল সমাপ্তি ।
২.৭ রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্যের পরিচয় প্রবন্ধটিতে কীভাবে উদ্ভাসিত হয়ে উঠেছে আলোচনা করো ।
উঃ । শান্তিনিকেতনে আশ্রম বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠালম্বে রবীন্দ্রনাথ যে সকল কর্মী মানুষকে পেয়েছিলেন তাঁদের মধ্যে হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন অন্যতম । তাঁর সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের আন্তরিক সম্পর্ক ছিল গভীর । জমিদারি মহল্লার কাজ পরিদর্শন করতে গিয়ে রবীন্দ্রনাথ খুঁজে এনেছিলেন আর এক গুণীজনকে যিনি হয়তো সারাজীবন সেরেস্তার হিসাব করতে করতে জীবন কাটিয়ে দিতেন । সামান্য বাক্যালাপে তিনি হরিচরণের মধ্যে সম্ভাবনার স্ফুলিঙ্গ দেখতে পেয়েছিলেন । তাই তাঁকে নিয়ে আসেন শান্তিনিকেতনে । হরিচরণের রচিত পাণ্ডুলিপিটি ভালোভাবে পড়ে কবি বুঝে যান তাঁর মধ্যে উদ্বৃত্ত কিছু রয়েছে । যার দ্বারা তিনি বাড়তি কিছু দেওয়ার ক্ষমতা ধরেন ।
এরপর কবির নির্দেশে তিনি সংস্কৃত প্রবেশ ’ নামক গ্রন্থটি রচনার ভার নেন এবং সেটি তিন খণ্ডে সমাপ্ত হয় । এরপর কবি তাঁকে বঙ্গীয় শব্দকোষ রচনার বৃহৎ কাজে আত্মনিয়োগ করার দায়িত্ব দেন । আর্থিক দুরবস্থার জন্য রবীন্দ্রনাথ মহারাজা মনীন্দ্রচন্দ্র নন্দীর কাছে বৃত্তির জন্য নিজে আবেদন করেন । কবির আবেদন শিরোধার্য করে মহারাজ হরিচরণের তেরো বছর ব্যাপী মাসিক পণঞ্চাশ টাকা বৃত্তির ব্যবস্থা করে দেন । কবি হরিচরণ বাবু সম্পর্কে ভবিষ্যতবাণী করেন— “ মহারাজের বৃত্তিলাভ ঈশ্বরের অভিপ্রেত , অভিধানের সমাপ্তির পূর্বে তোমার জীবননাশের শঙ্কা নাই । ” করিবাক্য মিথ্যা হয় না , হয়ওনি । তাঁদের মধ্যে প্রভু কর্মচারীর যে সম্পর্ক তার বাইরে গিয়ে রবীন্দ্রনাথ অনন্য প্রতিভাধর হরিচরণকে দিয়ে যোগ্য কাজ করিয়ে নিয়েছিলেন । এভাবেই কবি রবীন্দ্রনাথ ও হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্য নানা চিত্র প্রবন্ধটিতে উদ্ভাসিত হয়ে উঠেছে ।
২.৮ ' একক প্রচেষ্টায় এরূপ বিরটি কাজের দৃষ্টান্ত বিরল ! ' — কোন্ কাজের কথা বলা হয়েছে ? একে ‘ বিরাট কাজ বলার কারণ কী ?
উঃ । হীরেন্দ্রনাথ দত্ত বিরচিত ' হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় ’ রচনায় লেখক গুরুদেবের নির্দেশে যে বঙ্গীয় শব্দকোষ রচিত হয়েছিল এখানে সেই কাজের কথা বলা হয়েছে । ১০৫ খণ্ডের বঙ্গীয় শব্দকোষ রচনা সহজ কাজ ছিল না । হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় নিজের একক চেষ্টায় চল্লিশ বছরের সাধনায় তা সম্ভব করে দেখিয়েছিলেন । অন্যদেশে কোনো বিশ্ববিদ্যালয় বা কোনো বিষৎ পরিষদ অর্থাৎ পণ্ডিত গোষ্ঠীর দ্বারা সম্পন্ন হয়েছে যে কাজ — সেই কাজ একক চেষ্টায় সম্পন্ন করেছেন হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় । এই অভিধানের বৈশিষ্ট্য ছিল বাংলা এবং সংস্কৃত সাহিত্য থেকে প্রত্যেক শব্দের বহুবিধ প্রয়োগের দৃষ্টান্ত । তাই এই কাজকে বিরাট কাজ বলা হয়েছে ।
২.৯ ইরিচরণবাবুকে দেখে তাঁর সম্পর্কিত শ্লোকটি আমার মনে পড়ে যেত — শ্লোকটি কার লেখা ? শ্লোকটি উদ্ধৃত করো ।
উঃ । শ্লোকটি প্রথম যুগের কর্মীদের সম্পর্কে দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুর মহাশয় - এর লেখা । -কোথা গো ডুব মেরে রয়েছ তলে হরিচরণ । কোন গরতে ? বুঝেছি ! শব্দ - অবধি - জলে মুঠাচ্ছ খুব অরখে ।
২.১০ হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় সংকলিত অভিধানটির নাম কী ? গ্রন্থটির রচনা মুদ্রণ ও প্রকাশনার ক্ষেত্রে নানাবিধ ঘটনার প্রসঙ্গ প্রাবন্ধিক কীভাবে স্মরণ করেছেন ?
উঃ । হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত অভিধানটির নাম হলো ' বঙ্গীয় শব্দ - কোষ ' । লেখকহীরেন্দ্রনাথ দত্ত অত্যন্ত সুকৌশলে ও সুনিপুণ দক্ষতার পরিচয় দিয়ে এই রচনাটি লিপিবদ্ধ করেছেন । এর সাথে দেখিয়েছেন কবিগুরু কেমনভাবে একটি প্রতিভাকে চয়ন করে এনেছেন তাঁর শান্তিনিকেতনের জন্য । হরিচরণের কর্মনিষ্ঠা লক্ষ করে রবীন্দ্রনাথ তাঁকে অভিধান রচনায় নিয়োজিত করেন । কবির আদেশকে আশীর্বাদ বলে ধরে নিয়ে ১৩১২ বঙ্গাব্দে হরিচরণ অভিধান রচনা শুরু করেন । নদী আর্থিক অনটনে কাজ বন্ধ হবার উপক্রম হলে গুরুদেব নিজে উপযাচক হয়ে আর এক গুণীর পৃষ্ঠপোষক মহারাজা মণীন্দ্রচন্দ্রের কাছে হরিচরণের বৃত্তির জন্য অনুরোধ জানান । কবির আবেদন ব্যর্থ হয়নি । মহারাজা হরিচরণের মাসিক ৫০ টাকা বৃত্তির ব্যবস্থা করে দেন । অভিধান রচনা শেষ হবার পর মুদ্রিত করার সামান্য সামর্থ্য নিয়ে হরিচরণ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র খঙে তা প্রকাশের আয়োজন করেন । কারণ এই বিরাট গ্রন্থ প্রকাশের সামর্থ্য বিশ্বভারতীর ছিল না । প্রাচ্য বিদ্যামহার্ণব নগেন্দ্রনাথ বসু মুদ্রণের ব্যাপারে উদ্যোগী হয়েছিলেন । শান্তিনিকেতনের প্রাক্তন ছাত্ররা এবং কিছু অনুরাগী শিক্ষিত ব্যক্তি নিয়মিত গ্রাহক হয়ে এই ব্যাপারে আনুকুল্য করেন । পরে সাহিত্য অকাদেমির উদ্যোগে বঙ্গীয় শব্দকোষ প্রকাশিত হয় ।
২.১১ প্রাবন্ধিকের সঙ্গে হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ব্যক্তিগত স্মৃতির প্রসঙ্গ প্রবন্ধে কীরূপ অনন্যতার স্বাদ এনে দিয়েছে তা আলোচনা করো ।
উঃ । প্রাবন্ধিকের সঙ্গে হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্মৃতির প্রসঙ্গ রচনাটিতে এক অনন্যতার স্বাদ এনে দিয়েছে , কারণ যখন তিনি শান্তিনিকেতনের কাজে যোগ দেন তখনো তাঁর অভিধানের মুদ্রণকার্য শেষ হয়নি । লেখক লাইব্রেরি গৃহের একটি অনতিপ্রশস্ত প্রকোষ্ঠে হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিবিষ্ট মনে কাজ করতে দেখেছেন । কর্মে নিবিষ্ট হরিচরণ বাবুকে দেখে লেখকের দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা একটি শ্লোকের কথা মনে পড়ে যেত । লেখক যখন শান্তিনিকেতনে তাঁকে দেখেন তখন তিনি পঁচাত্তর বছর বয়সী এবং বিশ্বভারতীর কাজ থেকে অবসর গ্রহণ করেছেন । মুদ্রণ শেষ হবার পরও লেখক তাঁকে প্রতিদিন সকাল ও সন্ধ্যায় ভ্রমণ করতে দেখেছেন । ক্ষীণদৃষ্টির জন্য সব সময় সবাইকে চিনতে পারতেন না । চিনতে পারলে সস্নেহে কুশলবার্তা জিজ্ঞাসা করতেন । শেষ পর্যন্ত মস্তিষ্কের শক্তি অটুট ছিল । গ্রন্থ শেষ হবার পরেও চোদ্দো বছর তিনি জীবিত ছিলেন । লেখক দেখেছেন যে তিনি সবসময় প্রসন্নচিত্তে থাকতেন । ১৯৫৯ সালে ৯২ বছর বয়সে তাঁর জীবনাবসান হয় । তাঁর সঙ্গে লেখকের ব্যক্তিগত স্মৃতিচারণা প্রবন্ধটিতে এক অন্যান্য স্বাদ এনে দিয়েছে ।
২.১২ ' তিনি অভিধান ছাড়াও কয়েকখানা গ্রন্থ রচনা করে গিয়েছেন ।'— হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত অন্যান্য কয়েকটি গ্রন্থের নাম ও বিষয়বস্তুর সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও ।
উঃ । লেখক হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় প্রথমে সংস্কৃত প্রবেশ গ্রন্থটি রচনা করেন তিনখণ্ডে । এটি ছিল একটি বহুমুখী রচনা , সংস্কৃত শিক্ষার সহস্র প্রণালী উদ্ভাবনই ওই পুস্তকের উদ্দেশ্য ছিল । এছাড়াও তিনি লিখেছেন ' কবির কথা ’ , ‘ রবীন্দ্রনাথের কথা ’ , ‘ ব্যাকরণ কৌমুদী ' । লেখক এখানে তাঁর ‘ বঙ্গীয় শব্দকোষ ' রচনাটিকে বিশেষভাবে তুলে ধরেছেন । ১০৫ খণ্ডে এটি মুদ্রিত হয়েছিল । এর বিষয় ছিল বাংলা ও সংস্কৃত বিষয়ক অভিধান । এই অভিধানের বৈশিষ্ট্য ছিল — বাংলা এবং সংস্কৃত সাহিত্যে থেকে প্রত্যেক শব্দের বহুবিধ প্রয়োগের দৃষ্টান্ত । এই অভিধান সাহিত্যরূপে মহামূল্যবান ।
২.১৩ হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি প্রাবন্ধিক হীরেন্দ্রনাথ দত্ত তাঁর অনুরাগ কীভাবে ব্যক্ত করেছেন তা বিশদভাবে আলোচনা করো ।
উঃ । লেখক হীরেন্দ্রনাথ দত্ত হরিচরণের একজন একনিষ্ঠ ভক্ত ছিলেন । রচনাটির প্রতিটি ছত্রে ছত্রে লেখক তাঁর আন্তরিক শ্রদ্ধা ফুটিয়ে তুলেছেন হরিচরণ বন্দোপাধ্যায়ের প্রতি । তিনি হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতিভার সাথে ইংরেজ ঐতিহাসিক ও লেখক গিবনের তুলনা পর্যন্ত করে দেখিয়েছেন । ১২ বছরের সাধনায় গিবনের — ‘ দ্য ডিক্লাইন অ্যান্ড ফল অফ দ্য রোমান এম্পায়ার ' নামক গ্রন্থের রচনার পর তিনি অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলেন । তাঁর মনে হয়েছিল জীবনের সব কাজ ফুরিয়ে গেছে কিছুই আর করবার নেই । কিন্তু লেখক দেখেছেন হরিচরণের মস্তিষ্ক সচল , তিনি বেশ প্রসন্নচিত্তেই বিরাজ করেছেন । লেখক তাঁকে সাধক মানুষের সঙ্গে তুলনা করেছেন এবং বলেছেন তাঁর মাঝে এক প্রশান্তি বিরাজ করুক । সুখে দুখে তিনি সাধকদের মতোই কখনো বিচলিত হতেন না ।
No comments:
Post a Comment