পরাজয়
শান্তিপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায়
লেখক - পরিচিতিঃ
লেখক শান্তিপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায় ১৯৪৫ সালে জন্মগ্রহণ করেন । তিনি টাকিসরকারি বিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন । পরে টার্কি সরকারি কলেজ ও সিটি কলেজ থেকে পড়াশোনা করেন । তিনি দীর্ঘদিন এরিয়ান্স ক্লাবের হয়ে ক্রিকেট খেলেছেন । তাঁর লেখা প্রথম বই ' সেরারি উপন্যাস ' । তাঁর লেখা উল্লেখযোগ্য বইগুলি হলো ক্লাবের নাম । মোহনবাগান , ক্লাবের নাম ইস্টবেঙ্গল , ক্রিকেট খেলার আইনকানুন , ক্রিকেট খেলা শিখতে হলে , রিংয়ের রাজা আলি , মারাদোনা মারাদোনা , ক্রিকেট মাঠের বাইরে , ফুটবলের পাঁচ নক্ষত্র , পাঁচ ক্রিকেটের নক্ষত্র ইত্যাদি । তিনি দৈনিক বসুমতী ও যুগান্তর পত্রিকায় ক্রীড়া সম্পাদক ও পরে যুগান্তরের বার্তা সম্পাদক হন । তিনি নবকল্লোল ও শুকতারা পত্রিকার সম্পাদনা বিভাগে কর্মরত ছিলেন । ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৫ সালে তাঁর জীবনাবসান হয় ।
সারসংক্ষেপঃ
রঞ্জন সরকার একজন ফুটবল খেলোয়াড় । সে যে ক্লাবের হয়ে খেলে সেই ক্লাবে আজ বারপুজো । তাই সকালে উঠে রঞ্জন স্নান সেরে তৈরি হয়ে থাকে গাড়ি আসার অপেক্ষায় । কিন্তু সময় গড়িয়ে গেলেও গাড়ি আসে না । আসলে ক্লাবের লোকেরা তার আর কদর করে না । তারা নতুনদের নিয়ে উৎসাহী । এতে রঞ্জন অপমানিত হয় । সে স্বপন দা দের ক্লাবে যোগ দেবে স্থির করে । ইতিপূর্বে তাদের লাখ লাখ টাকার প্রলোভনেও সে কিন্তু টলে নি বরং নিজের দলের হয়েই অল্প টাকায় খেলেছে । আজ ক্লাবের থেকে পাওয়া অপমানের পর সে নতুন ক্লাবের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করে । একথা জানাজানি হলে তার পুরানো ক্লাবকর্তাদের টনক নড়ে এবং তারা রঞ্জনকে খুঁজতে যায় । কিন্তু রঞ্জন তখন কলকাতার বাইরে । অবশেষে যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে তার পুরোনো ক্লাবের বিরুদ্ধ পক্ষ হিসেবে নতুন জার্সি গায়ে রঞ্জনকে দেখা যায় এবং নতুন দলের হয়ে সে একটি গোল করে দলকে জেতায় । এভাবেই সে নিজের অপমানের , অবহেলার প্রতিশোধ তুলে নেয় । কিন্তু জয়ের পরে দুহাতে মুখ ঢেকে কোনো এক অজানা কারণে রঞ্জন সরকার কাঁদতে থাকে ।
নামকরণঃ
সাহিত্যে নামকরণ একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার । এই নামকরণের মাধ্যমেই গল্পের মূল বিষয় পাঠকের কাছে উদ্ভাসিত হয় । সাহিত্যে বিশেষত বাংলা সাহিত্যে বিভিন্ন ধরনের নামকরণ অনুসৃত হয় । আলোচ্য গল্পে দেখি , রঞ্জন সরকার একজন ফুটবল খেলোয়াড় । যে জীবন দিয়ে ভালোবেসেছিল ফুটবল খেলাকে এবং নিজের ক্লাবকে । কিন্তু সেই ক্লাবের লোকেরাই তাদের বারপুজোয় তাকে আমন্ত্রণ না করলে এবং প্রতিবারে মতো গাড়ি না পাঠালে সে অপমানিত বোধ করে । অনেক মানসিক দোটানার পর সে অন্য ক্লাবে যোগ দেবে মনস্থির করে । সেই মতো অন্য ক্লাবের সাথে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় । কিন্তু একথা জানাজানি হলে তার পুরোনো ক্লাবের সদস্যসহ কর্তাদের টনক নড়ে । রঞ্জন কিন্তু তার সিদ্ধান্তে অবিচল থাকে এবং এভাবেই সে নিজেকে প্রমাণ করার সুযোগ পেয়ে যায় । যুবভারতীতে তার পুরানো দলের সঙ্গে ম্যাচ শুরু হয় এবং রঞ্জন দারুণ খেলে একটি গোলে জয়লাভ করে । কিন্তু এই জয়ে সকলে উল্লসিত হলেও রঞ্জন কিন্তু সাজঘরে বসে দু - হাতে - মুখ ঢেকে কান্নায় ভেঙে পড়ে । কারণ এটা সে চায়নি , জীবনের যুদ্ধক্ষেত্রে তার জয়লাভ ঘটলেও নিজের মনের কাছে সে পরাজিত হয় । তাই আলোচ্য গল্পটির ব্যঞ্জনাধর্মী ‘ পরাজয় ' নামটি সর্বাংশে সার্থক ও সুপ্রযুক্ত হয়েছে ।
১.১ শান্তিপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রথম বইয়ের নাম লেখো ।
উঃ । শান্তিপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রথম বই ‘ দেরারি ’ । এটি একটি উপন্যাস ।
১.২ কলকাতার ফুটবল নিয়ে লেখা তাঁর দুটি বইয়ের নাম লেখো ।
উঃ । কলকাতার ফুটবল নিয়ে তাঁর দুটি বই হলো। ক্লাবের নাম মোহনবাগান ’ এবং ‘ ক্লাবের নাম ইস্টবেঙ্গল ।
২. নীচের প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর একটি বাক্যে লেখো :
২.১ এত দুঃখ এত ব্যথা সে কখনও পায়নি ।'— এখানে কার দুঃখ বেদনার কথা বলা হয়েছে ?
উঃ । এখানে গল্পের প্রধান চরিত্র খেলোয়াড় রঞ্জন সরকারের দুঃখ বেদনার কথা বলা হয়েছে ।
২.২ ' রঞ্জনদা তুমি কাল ক্লাবে যাওনি ? ' — এই প্রশ্নের উত্তরে রঞ্জন কী বলেছিল ?
উঃ । প্রশ্নটির উত্তরে রঞ্জন বলেছিল যে সে আগের দিন কলকাতার বাইরে গিয়েছিল । তাই সে বারপুজোর দিন মাঠে যেতে পারেনি ।
২.৩ গঙ্গার পাড়ে গিয়ে কোন্ দৃশ্য রঞ্জনের চোখে ভেসে উঠল ?
উঃ । গঙ্গার বুকে কয়েকটা ছোটো বড়ো জাহাজ নোঙর করে দাঁড়িয়ে আছে ।
২.৪ ' সিদ্ধান্তটা নেওয়ার পর রানের মন অনেকটা শান্ত হলো ' ।— এখানে রানের কোন সিদ্ধান্তের কথা বলা হয়েছে ?
উঃ । ফুটবলার রঞ্জন সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল দুদিনের মধ্যে ক্লাবের কেউ যোগাযোগ না করলে সে ক্লাব ছেড়ে দেবে , কিন্তু খেলা ছাড়বে না — সে প্রমাণ করে দেবে , যে সে ফুরিয়ে যায়নি ।
২.৫ ‘ ঘোষদা একটা বড়ো খবর আছে ' — কী সেই ' বড়ো ' খবর ?
উঃ । ‘ বড়ো ’ খবর হলো রঞ্জন সরকার তাঁর দীর্ঘদিনের ক্লাব ছেড়ে স্বপনবাবুদের ক্লাবে আসতে চাইছে ।
২.৬ রানের দলবদল করার খবর ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে টনক নড়েছিল ক্লাব কর্তাদের ’ — কীভাবে ক্লাবকর্তাদের যে টনক নড়েছে তা বোঝা গেল ?
উঃ । রঞ্জনের ক্লাব বদল করার সংবাদে ক্লাবকর্তারা রঞ্জনের বাড়ি ছোটাছুটি শুরু করলেন ও জনে জনে ফোন করতে আরম্ভ করলেন । রঞ্জন সেসব খেলোয়াড়দের ছোটো ভাইয়ের মতো দেখে তাদের লাগানো হলো তার মত বদল করানোর জন্য ।
২.৭ ' ব্যাপারটা কী হলো বুঝতে একটু সময় লাগল সমর্থকদের ' — এখানে কোন ব্যাপারটির কথা বলা হয়েছে ?
উঃ । রঞ্জনের চকিতে ব্যাকভলিতে গোল করার ব্যাপারটার কথা বলা হয়েছে ।
২.৮ ' দুহাতে মুখ ঢেকে শুয়ে পড়ল একটা বেঞ্চিতে ।'— স্ট্রাইকার রঞ্জন সরকারের এভাবে শুয়ে পড়ার কারণ কী ?
উঃ । সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে সত্যি কথা সে বলতে পারবে না তাই রঞ্জন পাশের ঘরে গিয়ে দুহাতে মুখ ঢেকে একটা বেঞ্চিতে শুয়ে পড়ল ।
৩. নীচের প্রশ্নগুলির কয়েকটি বাক্যে উত্তর দাও :
৩.১ একটু আগে ও সবকটা কাগজে বারপুজোর রিপোর্ট পড়েছে । — এখানে ‘ ও ’ বলতে কার কথা বোঝানো হয়েছে ? সে সবকটা কাগজে একই বিষয়ে রিপোর্ট পড়ল কেন ?
উঃ । এখানে ‘ ও ’ বলতে খেলোয়াড় রঞ্জন সরকার - এর কথা বোঝানো হয়েছে । কলকাতার একটি বিখ্যাত ক্লাবের দীর্ঘদিনের দক্ষ ফুটবলার ও ক্লাবের একান্ত ঘনিষ্ঠ হিসেবে ক্লাবের বারপুজোয় রঞ্জুনের আমন্ত্রণ পাওয়াটাই স্বাভাবিক । কিন্তু এবছর মহাসমারোহে বারপুজো পালিত হলেও তাকে একটা টেলিফোন করেও নিমন্ত্রণ করা হয়নি । এই কারনে দুঃখ ও অভিমানে তার মন ভরে ছিল । তাই কিঙ্খিত আশা নিয়েই রঞ্জন সবকটি কাগজে বারপুজোর রিপোর্ট পড়ছিল যদি তাকে নিয়ে বা তার এবছর ফুটবল টিমে যোগদান বিষয়ে কোনো লেখা বেরিয়ে থাকে । অপমানের যন্ত্রণা থেকেই সে সবকটা কাগজে একই বিষয়ের রিপোর্ট পড়ছিল ।
৩.২ ওকে নিয়ে মাতামাতি ঠিক আগের মতো নেই ।'— আগে ' ওকে নিয়ে কী ধরনের মাতামাতি হতো ?
উঃ । আগে প্রতি বছর ফোনের পর ফোন আসত — প্রেসিডেন্ট , সেক্রেটারি , ফুটবল সেক্রেটারি সকলেই বারপুজোয় যাওয়ার জন্য ফোন করতেন । বাড়িতেও নিতে আসতেন কেউ কেউ । তারপর পয়লা বৈশাখে সাতসকালে ক্লাব থেকে মাঠে আসার গাড়ি রঞ্জনের বাড়িতে এসে হাজির হতো । স্নান সেরে রঞ্জন বেরিয়ে পড়ত ক্লাবের উদ্দেশ্যে । আগে রঞ্জন সরকারকে নিয়ে এই ধরনের মাতামাতি হতো ।
৩.৩ ঠিক এক বছর আগের ঘটনা ।'— একবছর আগে কোন্ ঘটনা ঘটেছিল ?
উঃ । ঠিক এক বছর আগেও রঞ্জনের পুরোনো ফুটবল সেক্রেটারি ও কোচ এসে রানের সঙ্গে দল গড়া নিয়ে আলোচনা করেছিলেন । কাকে কাকে দলে আনা হবে তাই নিয়ে ওর পরামর্শ চেয়েছিলেন । এঁদের সঙ্গে কথাবলার পর রপ্তনের মনে জমে ওঠা মেঘ কেটে গিয়েছিল ।
৩.৪ ' রপ্তন সারাটাদিন আর বাড়ি থেকে বেরোয়নি ।'— কোনদিনের কথা বলা হয়েছে ?
উঃ । পয়লা বৈশাখে ক্লাবের বারপুজোর অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ না পাওয়ায় রপ্তন দীর্ঘদিনের ক্লাবের ঘনিষ্ঠ ফুটবলার হিসেবে এতটাই মানসিক কষ্ট পেয়েছিল , যে রাগে , দুঃখে ও অভিমানে সেইদিন আর বাড়ি থেকে হালখাতা করতেও বেরোয়নি । এখানে সেই দিনটির কথা বলা হয়েছে ।
৩.৫ ' রঞ্জন নামগুলো পড়ার চেষ্টা করে ।'- রসুন কোন নামুগুলি পড়ার চেষ্টা করে ?
উঃ । রঞ্জন অফিস থেকে বেরিয়ে গঙ্গার ধারে একটি পার্কের বেঞ্চে বসে গঙ্গায় দূরে নোঙর করা কটা ছোটো বড়ো জাহাজ দেখতে পায় । সে সেই জাহাজগুলির নাম পড়ার চেষ্টা করে ।
৩.৬ ' রঞ্জন টেলিফোনটা রেখে দিল ।'— কোন কথা শুনে রঞ্জন টেলিফোনটা রেখে দিলো ?
উঃ । বারপুজোর দুদিন কেটে যাওয়ার পর তৃতীয় দিন রাত্তিরে রঞ্জন অন্য বড়ো ক্লাবের সেক্রেটারি স্বপনদার সাথে কথোপকথন শুরু করে । টেলিফোনে স্বপনবাবু বুঝে নেন রপ্তনের মনের অবস্থা । তিনি বলেন যে তিনি আধঘণ্টার মধ্যেই আসছেন । এই কথা শুনে রঞ্জন টেলিফোনটা রেখে দিল ।
৩.৭ সত্যি ওরা তোমার সঙ্গে উচিত কাজ করেনি ' — কোন অনুচিত কাজের প্রতি নির্দেশ করা হয়েছে ?
উঃ । ক্লাবের সুখে - দুঃখে জড়িত দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞ খেলোয়াড় রখনকে এবছর হঠাৎ করে ক্লাবের বারপুজোতে আমন্ত্রণ না করে তার প্রতি ক্লাব কর্তারা যে অসহিয়ূ আচরণ করেছেন । রঞ্জনের এতদিনের পুরোনো ক্লাবের এই অনুচিত কাজের কথাই এখানে বলা হয়েছে ।
৩.৮ ' মন স্থির করে ফেলেছ তো ? ' — উদ্দিষ্ট ব্যক্তি কোন বিষয়ে মন স্থির করে ফেলেছে ?
উঃ । ক্লাবের দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞ খেলোয়াড় রঞ্জনের সঙ্গে এবছর ক্লাব যে আচরণ করেছে , তার পরিপ্রেক্ষিতে অন্য বড়ো ক্লাবে যোগদান করার বিষয়ে রপ্তন মনস্থির করে ফেলেছে ।
৩.৯ ' আপনি সব ব্যবস্থা করুন ।'- কোন ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে ? উঃ । দীর্ঘদিন ক্লাবের অতি ঘনিষ্ঠ অভিজ্ঞ খেলোয়াড় রঞ্জন সরকার ক্লাবের কাছ থেকে যে অপমানসূচক ব্যবহার পেয়েছে , তার কারণে সে নতুনভাবে অন্য বড়ো ক্লাবে যোগদান করবে — তাঁর সিদ্ধান্ত কেউ বদলাতে পারবে না । তাঁর এই মনোভাব নিশ্চিত বোঝাবার জন্য সে অন্য বড়ো ক্লাবের সেক্রেটারি স্বপনদাকে তাদের ক্লাবের খেলোয়াড় হিসেবে যোগদানের ব্যবস্থা নেওয়ায় অনুরোধ জানিয়েছে ।
৪. নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর নিজের ভাষায় লেখো :
৪.১ ' রাগে ফুঁসছিল রঞ্জন ’ - তার এই রাগের কারণ কী ?
উঃ । কলকাতার একটি নামী ফুটবল ক্লাবের অভিজ্ঞ খেলোয়াড় রঞ্জন সরকার ক্লাবের জন্য অনেক অবদান রেখেছে । পনেরো বছর ধরে সে ক্লাবের সুখে - দুঃখে জড়িয়ে আছে । শত প্রলোভনেও সে ক্লাব ছেড়ে যায়নি । লক্ষ লক্ষ টাকার অফার , বিশাল চাকরির হাতছানি সে হাসতে হাসতে ফিরিয়ে দিয়েছে । কিন্তু এবছর বারপুজোয় তাকে একবারের জন্যও ডাকা হলো না । এমনকি বিভিন্ন পত্রপত্রিকা পয়লা বৈশাখে ক্লাবের বারপুজো অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত খেলোয়াড়দের নিয়ে যে দল তৈরির রিপোর্ট প্রকাশিত হয় সেগুলি ও রপ্তন খুঁটিয়ে পড়েছে । তাতে কোথাও রঞ্জনের সম্বন্ধে কোনো কথা লেখা নেই । ক্লাবের এই দুর্ব্যবহারে রঞ্জন রাগে ফুঁসছিল ।
৪.২ ' এত দুঃখ , এত ব্যথা সে কোথাও পায়নি - এই দুঃখ - যন্ত্রণার দিনে কীভাবে অতীতের সুন্দর দিনগুলির কথা রঞ্জনের মনে এসেছে ?
উঃ । দীর্ঘ পনেরো বছর ক্লাবের একজন একনিষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবে অবদান রাখার পর এবছর ক্লাবের তার প্রতি উদাসীন ব্যবহারে ব্যথিত রঞ্জনের অতীতের সোনালি দিনগুলির স্মৃতি মানসপটে ভেসে ওঠে । আগে প্রত্যেক বছর পয়লা বৈশাখে বারপুজোর অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার জন্য ক্লাব প্রেসিডেন্ট থেকে শুরু করে ক্লাব সেক্রেটারি , গেম সেক্রেটারি সকলের ফোনের পর ফোন আসতে থাকত । বাড়িতেও আমন্ত্রণ করতে আসতেন কেউ কেউ । এরপর পয়লা বৈশাখের দিনে সকালে মাঠে যাবার গাড়ি এসে হাজির হতো রঞ্জনকে বিশেষ আপ্যায়ন করে নিয়ে যাবার জন্য । আজ খেলোয়াড় জীবনের অন্তিম লগ্নে এসে ক্লাবের এই ব্যবহারে হতাশ হয়ে রঞ্জনের অতীতের সেই সুন্দর দিনগুলির কথা মনে আসে ।
৪.৩ রঞ্জনের ক্লাবের সঙ্গে তার পনেরো বছরের সম্পর্ক কীভাবে ছিন্ন হলো ? এই বিচ্ছেদের জন্য কাকে তোমার দায়ী বলে মনে হয় ?
উঃ । দীর্ঘ পনেরো বছর ধরে একজন অভিজ্ঞ খেলোয়াড় হিসেবে ক্লাবে থাকার পর এ বছর পয়লা বৈশাখে বারপুজোর অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ না পাওয়ায় দুঃখিত মনে রঞ্জনের কলকাতার অন্য একটি বড়ো ক্লাবে যোগদানের মাধ্যমে রঞ্জনের ক্লাবের সঙ্গে তার পনেরো বছরের সম্পর্ক ছিন্ন হলো । যে কোনো বড়ো ক্লাবেই প্রতিবছর দলবদলের পালা আসে । উঠতি নামী খেলোয়াড়দের নিয়ে কাড়াকাড়ি পড়ে যায় । সেই সুযোগে অনেক উঠতি খেলোয়াড়ও দাম হাঁকিয়ে বসে এবং ক্লাবে সই করে । পরের বছর অন্য ক্লাবে বেশি টাকার অফার পেলে আগের ক্লাব ছেড়ে দেয় । অর্থাৎ ক্লাব নিয়ে তাদের কোনো আবেগ থাকেনা । কিন্তু রঞ্জন সরকার সে ধরনের খেলোয়াড় নয় ।
একজন সুদক্ষ খেলোয়াড় হিসেবে সে অতীতে বহু বড়ো ক্লাবের ডাক পেয়েছে । কিন্তু সে তার ক্লাবকে দীর্ঘ পনেরো বছরে শত প্রলোভনেও ছেড়ে যায়নি । কিন্তু তাঁর এই ভালোবাসার কোনো দামই এবছর ক্লাবকর্তারা দিলেন না , তাঁরা ভাবলেন রঞ্জন সরকার ফুরিয়ে গেছে । ফলে তাঁদের দিক থেকে উদাসীনভাব দেখা গিয়েছিল । তাঁদের বোঝা উচিত ছিল , যে খেলোয়াড় দীর্ঘদিন ক্লাবের সুখে - দুঃখে জড়িয়ে গেছে বারপুজোর অনুষ্ঠানে তাঁকে সমাদরে আমন্ত্রণ করা দরকার । কিন্তু তাঁরা তা করেন নি । তাই রঞ্জনের সঙ্গে ক্লাবের বিচ্ছেদের জন্য প্রথমেই আমার ক্লাবের কর্মকর্তাদের দায়ী মনে হয় । এছাড়া কিছুটা হলেও অন্য বড়ো ক্লাবের সেক্রেটারি স্বপনবাবুও দায়ী বলে আমি মনে করি । কারণ তাঁরা মনে মনে চাইতেন রঞ্জন দল ছেড়ে তাদের ক্লাবে আসুক । তাই রঞ্জনকে সান্ত্বনা দেওয়ার আছিলায় তাঁরা তাঁর অভিমানকে উসকে দিয়েছিলেন ।
8.8 ' কী করবে ও ঠিক করে ফেলেছে ।'— এখানে কার কথা বলা হয়েছে ? সে কী ঠিক করে ফেলেছে ? তার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সে পরবর্তী সময়ে চলতে পারল কি ?
উঃ । এখানে খেলোয়াড় রঞ্জন সরকারের কথা বলা হয়েছে । রঞ্জন ঠিক করে ফেলেছে যে দুটো দিন সে অপেক্ষা করবে । এর মধ্যে ওর সঙ্গে যদি ক্লাবের কেউ যোগাযোগ করে ভালো , না হলে ও ক্লাব ছেড়ে দেবে । কিন্তু খেলা সে ছাড়বে না , প্রমাণ করে দেবে যে সে ফুরিয়ে যায়নি । সিদ্ধান্তটি নেওয়ার পর টানা দুদিন রঞ্জন পূর্ণসময় অফিস করল । এরপর ক্লাবের সাড়া না পেয়ে তৃতীয়দিন রাত্রে অন্য বড়ো ক্লাবের সেক্রেটারি স্বপনদাকে ফোন করে তাঁর প্রতি ক্লাবের এই দুর্ব্যবহারের কথা জানায় ও অন্য বড়ো ক্লাবের ডাকে সেই ক্লাবের হয়ে খেলার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে । মরশুমের শুরু থেকেই দুর্দান্ত খেলতে শুরু করল রঞ্জন । অবশেষে একদিন এল তার পুরোনো ক্লাবের সঙ্গে নতুন ক্লাবের ম্যাচ । সেই ম্যাচে একাই সে দলকে জিতিয়ে প্রমাণ করে দিল যে সে ফুরিয়ে যায়নি । কিন্তু সে তার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চলতে পারেনি । ক্লাবকে জিতিয়েও সে অনুভব করে তার দুচোখ বেয়ে অঝোরে জল ঝরছে । পনেরো বছরের সম্পর্ক ছেড়ে নতুন ক্লাবে এসে সব অপমানের বদলা নেবার মুহূর্তে সে নিজের কাছে হেরে গেল । তার মনে জমে থাকা কষ্ট চোখের জল হয়ে রঞ্জনকে ভাসিয়ে নিয়ে গেল ।
৪.৫ ‘ তৃতীয় দিনে টেলিফোন করল অন্য বড়ো ক্লাবের সেক্রেটারিকে — কোনদিন থেকে তৃতীয় দিনের কথা বলা হয়েছে ? এই তিনদিন সময় তার কীভাবে কেটেছে ? টেলিফোনটি করায় কোন পরিস্থিতি তৈরি হলো ?
উঃ । এবছর পয়লা বৈশাখের বারপুজোয় আমন্ত্রণ না পাওয়ায় তারপর দিন থেকে দুদিন অপেক্ষা করে তৃতীয়দিন রাত্রে রঞ্জনের অন্য বড়ো ক্লাবের সেক্রেটারিকে ফোনের কথা বলা হয়েছে । পয়লা বৈশাখের ঘটনার পরদিন অফিস থেকে তাড়াতাড়ি বেরিয়ে গঙ্গার ধারে একটি পার্কের বেঞ্চে বসে রঞ্জন দুদিন অপেক্ষা করার সিদ্ধান্ত নিল । যদি ক্লাবের থেকে কোনো ইতিবাচক সাড়া আসে এই আশায় । তাই পরের দুটো দিন রঞ্জন ছটফট করে বেড়াল । অফিস ছাড়া কোথাও গেলনা । সম্পূর্ণ সময় অফিসে কাটিয়ে বাড়িতে এসে সারাক্ষণ টেলিফোনের সামনে বসে থাকত ।
এরপর ক্লাবের কোনো ফোন না পেয়ে তৃতীয়দিন রাত্রে কলকাতার অন্য বড়ো ফুটবল ক্লাবের সেক্রেটারিকে ফোন করল রঞ্জন । দীর্ঘ পনেরো বছর একটি ক্লাবেই খেলে যাওয়ার কারণে রঞ্জনের পারফরম্যান্স ভালো থাকলেও তাঁর প্রতি ক্লাবকর্তারা এবছর দল তৈরির প্রাক্মুহূর্তে একটু উদাসীন হয়ে পড়েন । যার প্রমান বারপুজোয় রঞ্জনের আমন্ত্রণ না পাওয়া । পাশাপাশি অন্য বড়ো ক্লাবগুলোও তাকেচাইত । তাই রঞ্জনের ফোন পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কলকাতার অন্য বড়ো ক্লাবের সেক্রেটারি স্বপনদা যেন হাতে চাঁদ পেলেন । তিনি তাঁকে আন্তরিক সমবেদনা জানিয়ে তাঁর ক্লাব প্রেসিডেন্টকে ঘটনাটি জানিয়ে রঞ্জনকে স্থির সিদ্ধান্ত নিয়ে তাদের ক্লাবে সসম্মানে যোগদান করার আমন্ত্রণ জানালেন । এরপর রঞ্জন সরকার স্বপনদাদের ক্লাবে যোগদান করল ।
No comments:
Post a Comment