কি করে বুঝবো
আশাপূর্ণা দেবী
👉(প্রশ্ন উত্তর পাড়াগাঁর দু - পহর ভালোবাসা)
লেখিকা - পরিচিতিঃ
আশাপূর্ণা দেবী অন্যতম শ্রেষ্ঠ বাঙালি লেখিকা । তাঁর জন্ম কলকাতায় ১৯০৯ সালে । স্কুল - কলেজে তাঁর পড়ার সুযোগ ঘটেনি । অথচ অসামান্য সূক্ষ্ম দৃষ্টি , সংবেদনশীলতা ও পরিচিত সমাজের অভিজ্ঞতার মাধ্যমে তিনি বাঙালি মধ্যবিত্ত জীবনকে আশ্চর্য দক্ষতার সঙ্গে তাঁর গল্প উপন্যাসে তুলে ধরেছিলেন । তিনি দীর্ঘজীবনে অসংখ্য উপন্যাস , গল্প এবং ছোটোদের জন্য অজস্র বই লিখেছেন । এগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো — ‘ ছোট ঠাকুরদার কাশীযাত্রা ' , ‘ প্রথম প্রতিশ্রুতি ' , ' সুবর্ণলতা ’ , ‘ বকুল কথা ’ , ‘ অগ্নিপরীক্ষা ’ , ‘ সাগর শুকায়ে যায় ’ , ‘ শশীবাবুর সংসার ’ , ‘ সোনার হরিণ ' ইত্যাদি । তাঁর রচিত অন্তত ৬৩ টি গ্রন্থ বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়েছে । তিনি রবীন্দ্র পুরস্কার , সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার , লীলা পুরস্কার , জ্ঞানপীঠ পুরস্কার , একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ডি . লিট . এবং নানা সরকারি খেতাবে ভূষিত হয়েছেন । বাংলার এই মহান লেখিকা ১৯৯৫ সালে পরলোকগমন করেন ।
সারসংক্ষেপঃ
বেনুমাসি , ছেনুমাসি দীর্ঘ দিন পর এসেছেন বোনঝিকে দেখতে সঙ্গে দুরন্ত ডানপিটে ছেলে ডাম্বেল । তাদের সমস্যা হয় একজন স্পষ্টবাদী সাহসী সরল ছেলে বুকু । অসময়ে অতিথিরা আসায় মা অদ্ভুত বিরক্ত হয়ে বুকুর সামনে কিছু বেফাঁস মন্তব্য করে বসেন । সময় - সুযোগে বুকু তা ফাঁস করে দেয় । ডাম্বলও ডানপিটে ছেলে সে আলমারি খুলে বইপত্র ছিঁড়ে ফেলে , শেফের উপর থেকে ল্যাম্প ভেঙে ফেলে , নানা অনিষ্ট করে । বুকু জানায় এগুলো তার রাগী সেজোকাকার বই , তিনি এসব দেখলে মারতেও পারেন । বুকুর মা এসে মাসিদের আপ্যায়ন করেন , কত দিন পরে এলেন বলে অনুযোগ করেন । খুব আনন্দ হচ্ছে বলে উচ্ছাসও প্রকাশ করেন । বুকু অবাক হয়ে যায় , শেষে থাকতে না পেরে বলে ওঠে ও কিমা ! এই যে বললে , বাবারে শুনে গা জ্বলে গেল । অসময়ে বেড়াতে আসা ভালো লাগে না — শুনে বুকুর মায়ের মাথায় যেন বাজ পড়ে । এখন ভাল লাগছে বলছো কেন ? কি সর্বনেশে ছেলে । লোকের সামনে এইরকম বলতে হয় । তখন শুরু হয় শাক দিয়ে মাছ ঢাকা দেবার চেষ্টা । ছেনুমাসি গাল ফুলিয়ে বললেন আহা সত্যিই তো খবর না দিয়ে অসময়ে এসে পড়ায় কাজের ক্ষতি হল । মা বলেন — না না কাজ কীসের ? এখন তেমন কাজ থাকে না ।
আবার বুকু অবাক হয় , মা নির্জলা মিথ্যে বলছেন , মায়ের রান্না না হলে কাজ সারা না হলে বাবা চটে যাবেন । তাদের সিনেমার টিকিট কাটা আছে । এই সত্য বাইরের লোকের কাছে সে তুলে ধরে , তাতে বাবা মা আরও রেগে যান । মায়ের হাতের বড়ো বড়ো রাজভোগ অন্যান্য মিষ্টি খেয়ে অতিথিরা বিদায় নেন । বুকুর মায়ের সব রাগ গিয়ে পড়ে বুকুর উপর । বাইরের অতিথিদের কাছে ঘরের সব কথা বলার জন্য সমস্ত অপমানের প্রতিশোধ তুলতে প্রচণ্ডভাবে মারতে থাকেন ছেলেকে । তাই দেখে বাবা রেগে যান এবং কেন ছেলেকে মারা হচ্ছে তার কৈফিয়ত চান । তখন যা একে একে বুকুর সমস্ত কথা বাবার কাছে তুলে ধরেন । শুনে বাবাও তাকে প্রহার করতে থাকেন । দুজনের হাতে মার খেয়ে বুকু ডুকরে কেঁদে ওঠে । সে জানতে চায় কোনটা বলব বুঝব কি করে ? নিজেই আমাকে শেখালে সদা সত্য বলবে , মিথ্যা বলা পাপ - অথচ মা সমানে মিথ্যা বলেছেন । বাইরের লোকের সামনে তাই সে সত্য কথাগুলোই তুলে ধরেছে । সত্যই এ এক বিচিত্র সমস্যা । শিশুরা কী করে বুঝবে , আসলে কী করতে হবে ?
নামকরণঃ
আশাপূর্ণা দেবী বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রতিভাময়ী লেখিকা । তাঁর রচনার মধ্যে দিয়ে ফুটে উঠেছে অপূর্ব সব শিক্ষা , আলোচ্য গল্পটি নাম ' কি করে বুঝব ? ' আমরা অভিভাবকরা অনেক সময় কাজ করি কিন্তু তাঁর পরিণাম ভাবি না । ছোটোদের আমরা নানা শিক্ষা দিই । কিন্তু সেই শিক্ষা নিজেরা গ্রহণ করিনা । ছোটোরা সহজ , সরল , কেউ কেউ চুপচাপ , যারা কথা বলে না ভীতু প্রকৃতির তাদের নিয়ে অভিভাবকদের অতটা সমস্যা হয় না । কিন্তু ডাম্বল বা বুকুর মতো ডাকাবুকোদের নিয়ে হয় সমস্যা । ছ - বছরের শিশু বুকু বাইরের অতিথিদের সামনে মা - বাবার আড়ালে বলা নানা কথা ফাঁস করে দিয়ে তাদের চরম অপদস্থ করেছে । মা - বাবা ছেলের এই আচরণ দেখে তাকে মারেন । তখন বুকু জানায় যে তাঁরাই তাকে সর্বদা সত্য কথা বলতে এবং কারো কাছে কোনো কিছু না লুকোতে বলেছেন । এটাই সে করেছে তবু সে মার খেল । তাই ছোট্টো বুকুর প্রশ্ন বুঝব কী করে ? বুকুর এই না বুঝতে পারার অসহায়তাই গল্পের মুখ্য বিষয় হওয়ায় ‘ কী করে বুঝব ’ নামকরণটি সুপ্রযুক্ত হয়েছে ।
১.১ আশাপূর্ণা দেবীর লেখা দুটি উপন্যাসের নাম লেখো ।
উঃ । ‘ প্রথম প্রতিশ্রুতি ’ , এবং ‘ সুবর্ণলতা ' ।
১.২ আশাপূর্ণা দেবী তাঁর সাহিত্যকৃতির জন্য কোন্ কোন্ বিশেষ পুরস্কার পেয়েছেন ?
উঃ । আশাপূর্ণা দেবী তাঁর সাহিত্যকৃতির জন্য রবীন্দ্র পুরস্কার , লীলা পুরস্কার , জ্ঞানপীঠ পুরস্কার , অকাদেমি পুরস্কার , সহ একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডি.লিট . উপাধি পেয়েছেন ।
২. একটি বাক্যে উত্তর দাও :
২.১ বুকু কোথায় বসে খেলা করছিল ?
উঃ । বুকু তাদের বাড়ির বাইরের রোয়াকে বসে খেলা করছিল ।
২.২ রিকশা থেকে কারা নামলেন ?
উঃ । রিক্সা থেকে নামলেন বুকুর মা'র ছেনুমাসি এবং বেণুমাসি ও বুকুর বয়সি একটি ছেলে ‘ ডাম্বল ।
২.৩ ডাম্বল আলমারি ভেঙে কার বই নামিয়েছিল ?
উঃ ! ডাম্বল আলমারি ভেঙে বুকুর সেজোকাকার বই নামিয়েছিল ।
২.৪ বুকুর মার কী কেনা ছিল ?
উঃ । বুকুর মার সিনেমার টিকিট কেনা ছিল ।
২.৫ বুকু আর বুকুর সেজো বুড়িমা অতিথিদের জন্যে কী কী খাবার নিয়ে আসে ?
উঃ । বুকু আর বুকুর সেজো খুড়িমা চা , বড়ো বড়ো রাজভোগ , ভালো ভালো সন্দেশ , শিঙাড়া , নিমকি প্রভৃতি খাবার অতিধিদের জন্য নিয়ে এসেছিলেন ।
২.৬ বুকু কোন্ স্কুলে ভরতি হয়েছিল ?
উঃ । বুকু আদর্শ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্কুলে ভরতি হয়েছিল ।
৩. নীচের প্রশ্নগুলির সংক্ষিপ্ত উত্তর দাও :
৩.১ বুকু খেলতে খেলতে তাকিয়ে অবাক হয়ে যায় কেন ?
উঃ । বুকু তাদের বাড়ির বাইরের রোয়াকে বসে খেলছিল । খেলতে খেলতে সে দেখল যে একটি রিকশা তাদের বাড়ির সামনে এসে থামল আর তা থেকে নেমে এলেন দুজন অত্যন্ত মোটাসোটা মহিলা এবং বুকুর বয়সি একটি মোটা ছেলে । রিকশা গাড়ির অতটুকু খোলের মধ্যে এদের জায়গা হয়েছিল কী করে এই কথা ভেবেই বুকু অবাক হয়েছিল ।
৩.২ সিঁড়ি ভেঙে আর উঠতে পারব না বাবা ’ — কারা একথা বলেছেন ? তাঁরা সিঁড়ি ভেঙে উঠতে পারবে না কেন ?
উঃ । একথা বলেছেন বুকুর মা'র ছেনুমাসি ও বেণুমাসি । তাঁদের শরীর ছিল স্থূলকায় । তাঁরা উত্তরপাড়ার বাড়ি থেকে বেরিয়ে দুই - তিনবার বাসবদল করে শেষ অবধি রিকশায় চেপে ভবানীপুরের পৌঁছে ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলেন । তাই সিঁড়ি ভেঙে তাঁরা ওপরে উঠতে চান না বলে জানিয়েছিলেন ।
৩.৩ ও কী ! কী কাণ্ড করেছ তুমি' ' -কে কী কাণ্ড করেছে ?
উঃ । রেণুমাসির ছেলে ডাম্বল । সে চেয়ারে গুছিয়ে বসার বদলে একখানা চেয়ার কনুইয়ের ধাক্কায় উলটেছে । টেবিল - ঢাকাটা কুঁচকে টেনে খানিকটা ঝুলিয়ে দিয়েছে । টেবিলের ওপরের খাতাপত্তরগুলো এলোমেলো করেছে । দেয়ালে রাখা আলমারিটার একটা পাল্লা ধরে এমন হ্যাঁচকা টান মেরেছে যে , চাৰিবন্ধ কলটা বন্ধ অবস্থাতেই পাল্লার সঙ্গে খুলে বেরিয়ে এসেছে । সাজানো গোছানো বইয়ের সারি থেকে কয়েকটা বই নামিয়ে দুর ছাই । ছবি নেই বলে বইগুলো মাটিতে ফেলে , জানালার ওপর পা দোলাতে থাকে । বুকুর সেজোকাকা রাগি মানুষ । তার বইগুলো মাটিতে ছড়ানো দেখে বুকু ডাম্বলকে এই কথা বলেছিল ।
৩.৪ বুকু অবাক হয়ে ফ্যালফেলিয়ে মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে ছিল কেন ?
উঃ । বুকুর মা নির্মলা তার মাসিদের আগমনের সংবাদ পেয়ে নীচে নেমে এসে এসে তাদের অভ্যর্থনা শুরু করেছিল । মা বলেছিলেন যে মাসিরা বেড়াতে আসায় তিনি খুব খুশি হয়েছেন , যা আরও বলেছিলেন যে তার তো মনে হয়েছিল মাসিরা বুঝি তাকে ভুলেই গেছেন । অথচ একটু আগে তিনি বিরক্ত হয়ে মন্তব্য করেছিলেন অসময়ে লোক আসা তার ভালো লাগে না । অথচ মা তাঁর মাসিদের দেখে বলছে ভালো লাগছে । অল্প সময়ের মধ্যেই মায়ের মুখে এই দুরকম কথা শুনে বুকু অবাক হয়ে মায়ের মুখের দিকে ফ্যালফেলিয়ে তাকিয়েছিল ।
৩.৫ ‘ ছেলের কথা শুনেই বুকুর মা - র মাথায় বজ্রাঘাত ।'— ছেলের কথা শুনে বুকুর মা - র মাথায় বজ্রাঘাত হলো
উঃ । বুকু তার মাকে যখন তাঁর মাসিদের আসার খবর জানিয়েছিল তখন তিনি বিরক্ত হয়েছিলেন এবং বুকুর সামনেই বলেছিলেন যে অসময়ে অতিথি আসা তার একেবারেই ভালো লাগে না । অথচ পরে সেই মাসিদের সামনে নিজের মনোভাব সম্পূর্ণ বদলে সামাজিক ভদ্রতা দেখিয়ে তাদের আসায় খুব আনন্দ পেয়েছেন তা বলেছিলেন । বুকু এতে আশ্চর্য হয়ে অতিথিদের সামনে মায়ের বিরক্ত প্রকাশের কথা জানিয়ে দিয়েছিল । অতিথিদের সামনে ছেলের এই কথায় অপদস্থ হয়ে বুকুর মায়ের মাথায় যেন বজ্রাঘাত হয়েছে বলে মনে হয়েছিল ।
৩.৬ ডাম্বলকে ইস্কুলে ভরতি করা হয়নি কেন ?
উঃ । ডাম্বলের কথা অনুযায়ী তার বাবা হাড়কেপ্পন । সাত বছরের ছেলের ইস্কুলের মাইনে সাত টাকা তাঁর কাছে ছিল খুব বেশি , এই টাকা তিনি দিতে পারবেন না । তাই ডাম্বলকে স্কুলে ভরতি করা হয়নি । ডাম্বলের বাবার মতে পড়ে দরকার নেই , ছেলে চাষবাস করে খাবে ।
৩.৭ কেজানে পাগলা - টাগলা হয়ে যাবে নাকি ।'— কার সম্পর্কে এই মন্তব্য করা হয়েছে ? এমন সন্দেহের কারণ কী ?
উঃ । আশাপূর্ণা দেবীর লেখা ' ‘ কী করে বুঝব ’ গল্পে বুকু সম্পর্কে এই মন্তব্য করা হয়েছে ।
ভাষা আলমারি ভেঙে সেজোকাকার বই মাটিতে ফেলে দিয়েছিল । তাই দেখে বুকু বলেছিল যেমন হাতির মতো দেখতে , তেমনি হাতির মতো বুদ্ধি । সেজোকাকা তোমার পিঠের ছাল তুলবেন । এছাড়া সে মায়ের আড়ালে বলা কথাগুলি অতিথিদের সামনে ফাঁস করে দিয়ে মাকে অপদস্য করেছিল - এইসব কথা বেণুমাসির মুখে শুনে , বুকুর মা অপ্রস্তুত হয়ে পড়েছিলেন এবং পরিস্থিতি সামলে নেওয়ার জন্য তিনি লজ্জা পেয়ে কাঁদো কাঁদো ভাবে মাসিদের বলেন যে ছেলেকে নিয়ে তার অনেক অপ্রিয় সত্য কথাগুলো সবার সামনে বুকু বাবা মায়ের সম্পর্কে বলে জ্বালা । যেভাবে চলেছিল তাতে তাঁর সম্মান ধুলোয় মিশে যাচ্ছিল । তাই বুকু সম্বন্ধে তার মায়ের সন্দেহ হতে থাকে । তিনি বুঝতেই পারছিলেন না ছেলে পাগল হয়ে যাবে কি না ।
৩.৮ ' দুজনে মিলে চেঁচান , বল বল কেন ওসব বললি ।'— বুকু কেন ওসব বলেছিল ?
উঃ । বুকু অতিথিদের সামনে মা - বাবার চরিত্রগুলো তুলে ধরেছিল খোলা মনে , কারণ দুপুরেই তার মা তাকে একশোবার করে বলেছিল — সবসময় সত্যি কথা বলবি , কারো কাছে কিছু লুকোবি না — সেটা বিশ্বাস করেই ছোটো বুকু সরলমনে মায়ের উপদেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছিল । সে ভেবেছিল সত্য কথাগুলো বলে দিলে মা বোধহয় খুশি হবে । তাই বুকু ওসব কথা মাকে বলেছিল ।
৪. নীচের প্রশ্নগুলির নিজের ভাষায় উত্তর দাও :
৪. গল্পে বুকুর আচরণ তাঁর মাকে অতিথিদের সামনে অস্বস্তিতে ফেলেছিল।বুকুর এই আচরণ কি তুমি সমর্থন করো ? বুকু কেন অমন আচরণ অতিথিদের সামনে করেছিল ?
উঃ । ছোটোদের বড়োদের সামনে এসে কথা বলা বিশেষ করে বুকুর অতিরিক্ত কথা বলা সমর্থনযোগ্য নয় । বুকুর এই আচরণ ও অতিরিক্ত কথা বলায় মনে হতে পারে যে সে বুঝি একটা বেয়াড়া ছেলে । কিন্তু বুকুর তেমন দোষ ছিল না । সবসময় খুব কাছ থেকে সে মা - বাবার আচরণ লক্ষ্য করেছে । তার উপর সেদিনই দুপুরবেলা সে শিখেছিল সবসময় সত্যকথা বলতে হয় , কাউকে কিছু লুকোতে নেই । বুকু তার শিশুসুলভ বুদ্ধির দ্বারা এই কথার উপর বিশ্বাস করে এমন আচরণ করেছিল ।
৪.২ বাড়িতে অতিথি এলে তাঁদের সঙ্গে কেমন আচরণ করা উচিত ? সে সম্পর্কে বন্ধুকে একটি চিঠি লেখো ।
উঃ । প্রিয় বন্ধু , সৌমালী অনেক দিন তোকে চিঠি লেখা হয়নি । যদিও তোর চিঠি আমি ঠিক সময়েই পেয়েছি । বাৎসরিক পরীক্ষা নিয়ে ব্যস্ত থাকায় সময় হয়নি । সেদিন আমি একটা অদ্ভুত অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছিলাম । এক পরিচিত লোকের বাড়িতে তাদের ছোটো ছেলেটি মা - বাবার সম্পর্কে আমার সামনে এমন কিছু কথা বলছিল যাতে তাঁরা এবং আমি উভয়েই অস্বস্তিতে পড়ে গিয়েছিলাম । আমাদের দেশে অতিথিকে দেবতার স্থান দেওয়া হয় । বলা হয় ‘ অতিথি দেব ভবঃ ' — তাই বাড়িতে মানুষজন এলে তাঁকে যথাযোগ্য সম্মান করা উচিত , এমন কোনো আচরণ তাদের সামনে করা উচিত নয় যাতে বাড়ির লোকের সম্মানহানি হয় । ছোটোরা এলে তাদের সাথে ভালোমনে ভদ্রভাবে মিশতে হবে । অবশ্যই বাড়িতে ছোটোদের শেখাতে হবে তার আচরণ কেমন হওয়া উচিত । পাশাপাশি বড়োদেরও ছোটোদের সামনে এমন কথা বলা উচিত নয় যাতে সে তার কেমন আচরণ করা উচিত তা বুঝতে অসুবিধা হয় । আজ এখানেই শেষ করছি । আমার চিঠির উত্তর দিবি । বড়োদের আমার প্রণাম জানাবি , ছোটোদের আমার পক্ষ থেকে ভালোবাসা জানাস ।
৪.৩ ‘ কী করে বুঝব আসলে কী করতে হবে ? -গল্পে বুকু এই কথা বলেছিল । আসলে কী করা উচিত বলে তোমার মনে হয় ?
উঃ । আশাপূর্ণা দেবীর লেখা ' কী করে বুঝধ ' গল্পটিতে ছয় বছরের ছেলে বুকু বাড়িতে আসা অতিথিদের সামনে নানা কথা বলে দিয়ে মা - বাবাকে অপ্রস্তুত অবস্থার মধ্যে ফেলে দিয়েছিল । তারপর মার খেয়ে অসহায় বুকু তার এই আচরণের কারণ জানিয়ে বলেছে সে আসলে মায়ের উপদেশই পালন করেছে । আসলে কী করতে হবে তা সে কি করে বুঝবে । আমার মনে হয় গল্পের বুকু খুবই ছোটো , ভালোমন্দ , সম্মানবোধ — এসব সম্পর্কে তার ধারণা খুবই কম । সে সদা সত্য কথা বলার জন্য চেষ্টা করেছিল । তাই মা বাবার শেখানো কিছু কথা মনে রাখতে গিয়ে নিজের অজান্তেই অতিথিদের সামনে মা - বাবাকে অপদস্থ করে ফেলেছিল । যুকু তার আচরণের পরিবর্তন নিশ্চয় ঘটাতে হবে । তবে আসলে কী করতে হবে সেটা আগে বুঝতে হবে বড়োদের । সবকথা ছোটোদের সামনে আলোচনা করবার সময় সতর্ক থাকতে হবে বড়োদের । যে শিক্ষা বা উপদেশ তাঁরা ছোটোদের দেবেন খেয়াল রাখতে হবে তা যেন বাস্তবসম্মত হয় । কারণ ছোটোরা অপরিণত বুদ্ধি দিয়ে অভিভাবকদের কথা শোনে ও তাদের অনুসরণ করে । তাই বড়োদের কথা ও কাজের মধ্যে যেন অসংগতি দেখা না যায় , তা মনে রেখেই ছোটোদের উপদেশ দেওয়া বা শাসন করতে হবে ।
৪.৪ গল্পে দুটি ছোটো ছেলের কথা পড়লে বুকুআর ডাম্বল । দুজনের প্রকৃতিগত মিল বা অমিল নিজের ভাষায় লেখো ।
উঃ । গল্পে - ডাম্বল এবং বুকু প্রায় দুজনেই একই বয়সের ছেলে , দুজনের স্বভাবের কিছু মিল ও অমিল রয়েছে । দুজনেই বড়োদের কথায় কথা বলে । সুযোগ পেলেই বাবা - মার অন্যায়ের কথাগুলো তারা অন্যদের সামনে তুলে ধরেছে । তবে বুকু শুধু অনর্গল কথায় তার বাবা মাকে অপদস্থ করে ফেলেছে । কিন্তু ডাম্বল একটু বেশি দুরন্ত , সে অপরের বাড়িতে এসে উৎপাত করেছে । আলমারি ভেঙে বইগুলো মেঝেতে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছে , ল্যাম্প ভেঙেছে । অন্যের বাড়িতে গিয়ে ভদ্র হয়ে থাকার সহবত সে শেখেনি । বুকু সরল , বেশি কথা বলে , মনে যা আসে বলে দেয় । ডাম্বল ডানপিটে এবং বেশি কথাও বলে । একটি বিষয়ে তাদের দুজনের প্রকৃতিগত মিল দেখা যায় যে শিশুসুলভ বুদ্ধির কারণে উচিত - অনুচিত বা ভালোমন্দের জ্ঞান তাদের হয় । নি । তাই তাদের দুজনেরই কথাবার্তা তাদের অভিভাবকদের অপ্রস্তুতে ফেলে দিয়েছে ।
৪.৫ গল্পটি পড়ে বুকুর প্রতি তোমার সহানুভূতির কথা ব্যক্ত করে একটি অনুচ্ছেদ রচনা করো ।
উঃ । এই গল্পে বুকুর কথা পড়লে সত্যি তার উপর একটা সহানুভূতি জন্মায় । ' কী করে বুঝবে ’ গল্পের শেষে আমরা বুকুকে প্রচণ্ড মার খেতে দেখি । বেশি কথা বলা , বড়োদের সামনে থেকে সব কথা শোনা এটাও আমাদের খারাপ লাগে । আসলে তার একটা অভ্যাসে দাঁড়িয়ে গেছে । তারপর মায়ের কাছে সদাসত্য কথা বলা এবং কাউকে কিছু না লুকোনোর সহবত শেখার ফলে কোন্টা ভুল বা উচিত নয় , এ বোধও সে হারিয়ে ফেলেছে । ফলে অতিথিদের সামনে বেফাঁস কথাগুলো বুকু উৎসাহের সঙ্গেই বলেছে আর না বুঝেই বাবা মা দুজনের হাত থেকেই ভীষণ মার খেয়েছে । বাবা মা বা অন্য কাউকে অসম্মান করা তার মতো ছয় বছরের ছেলের উদ্দেশ্য কখনোই হতে পারে না । আসলে ছেলেটি পরিস্থিতির শিকার । তাই বুকুর প্রতি আমাদের স্বাভাবিকভাবে সহানুভূতি জাগে ।
No comments:
Post a Comment