👉(জেলখানার চিঠি প্রশ্ন উত্তর সুভাষচন্দ্র বসু)
কবি - পরিচিতিঃ
১৯০৪ খ্রিস্টাব্দে কবি জসীমউদ্দীনের জন্ম হয় অধুনা বাংলাদেশের ফরিদপুরে । তিনি ‘ পল্লীকবি ' নামে পরিচিত । কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা বি.এ. , পরে এম.এ. ডিগ্রি নেন । পল্লি সাহিত্যের ওপর তিনি কাজ করেন । তিনি ছিলেন ‘ পূর্ববঙ্গ গীতিকা'র অন্যতম সংগ্রাহক । তিনি প্রায় ১০০০০ পল্লিগীতি সংগ্রহ করেন । ছাত্রজীবন থেকেই তাঁর কবিতা লেখার সূত্রপাত । ‘ কবর ’ তাঁর প্রথম উল্লেখযোগ্য কবিতা । সোজন বাদিয়ার ঘাট , নক্সীকাঁথার মাঠ , বালুচর , ধানক্ষেত প্রভৃতি তাঁর অমর সৃষ্টি । বেদের মেয়ে শীর্ষক গীতিনাট্য , চলে মুসাফির নামক ভ্রমণ কাহিনি ও ঠাকুরবাড়ির আঙ্গিনায় গ্রন্থরচনায় তার সাহিত্য প্রতিভার অনন্যতা ধরা পড়েছে । ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দে তাঁর জীবনাবসান হয় । পাঠ্যাংশটি ' সোজন বাদিয়ার ঘাট ' কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে ।
সারমর্মঃ
গড়াই নদীর ধারে একটি ছোটো কুটিরের কথা কবি বলেছেন । কবির ভাষায় কুটিরটি ছোটো , নানা লতাপাতায় ছাওয়া যেন মায়ায় ঘেরা কুটির । সন্ধ্যা সকালে সেখানে আলো খেলা করে । কুটিরের উঠোনের একধারে বুনো ফুল ফুটে আছে । আর মাচায় আছে লাউ , কুমড়ো , সিম প্রভৃতির ঝাড় । লাউকুমড়ো গাছের ফুলের সঙ্গেই রয়েছে লাল নটেশাক , লাল শাক যেন রঙের ঢেউ তুলেছে । দেখে মনে হচ্ছে যেন কুটিরের কোনো বউ একখানি লালশাড়ি মেলে দিয়ে গেছে । ডাহুকের দল সেখানে এঁদো ডোবা থেকে নিজের ছানাদের নিয়ে এসে গান গেয়ে গেয়ে কথা বলে । বনের পাখির দল এখানে এতটা নির্ভয় যে মনেই হয় না কুটিরে কোনো মানুষের বাস আছে । তারা মনের সুখে কুটিরের আশেপাশে উড়ে বেড়ায় । বাড়ির উঠোনে বাড়ির মেয়েরা মটর ডাল , মুসুরির ডাল , কালো জিরে , ধনে , লংকা , মরিচ সব সারি দিয়ে এমন করে মেলে রেখেছে দেখে মনে হয় কেউ রঙের আলপনা দিয়ে রেখেছে । সে চিত্রটি এমনই সুন্দর ও চমৎকার যে রঙিন মেঘের দল বাড়িটিকে ভালোবেসে তার ওপর কিছুক্ষণের জন্য থেমে বাড়িটিকে দেখতে থাকে । পল্লি বাংলার এমনই এক নিরাভরণ সুন্দর জীবদ্ভচিত্র কবি এই কবিতায় এঁকেছেন ।
নামকরণঃ
কবি জসীমউদ্দীন রচিত ‘ গড়াই নদীর তীরে ' কবিতায় একটি গ্রামীণ চিত্রের পরিচয় পাওয়া যায় । গড়াই নদীর ধারে একটি ছোটো কুটির যেখানে চমৎকার লতাপাতা ফুল যেন মায়ায় ঘিরে রয়েছে । যেখানে সকাল - সন্ধ্যা বাতাস খেলে , বুনোফুল ফুটে থাকে । মাচায় ফলে সিম , লাউ , কুমড়োর ঝাড় । এমন এক কুটির যেখানে লাল নটেশাকে কুটিরের চারপাশ রঙিন হয়ে থাকে । কুটিরের প্রাঙ্গণে নানা ডাল মশলা শুকনো করতে দেওয়া দেখে যেন মনে হয় রঙের আলপনা দেওয়া । সেখানে বনের পাখি নির্ভয়ে ঘুরে বেড়ায় , ডাহুকের দল গান গেয়ে যায় । কুটিরটি গড়াই নদীর তীরে বলে কবিতাটির এই নামকরণ হয়েছে । কবিতাটিতে পল্লিবাংলার একটি ছোট্টো কুটিরের কথা একটি চমৎকার রূপচিত্রে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে । চিত্রটি খুবই সাধারণ এবং সর্বজনগ্রাহ্য কিন্তু ‘ পল্লিকবি ’ তার মধ্যেই তাঁর অসাধারণত্ব দেখিয়েছেন । বিভিন্ন রঙের ডাল , মশলা , শুকনো করার কথা বলতে গিয়ে এমনভাবে বলেছেন যেন মনে হচ্ছে একটি সম্পূর্ণ রঙিন ছবি আঁকা হয়েছে কথার পরে কথা সাজিয়ে । সব মিলিয়ে কবিতার বিষয়ের সঙ্গে নামকরণটির সাযুজ্য থাকায় নামকরণটি যথাযথ হয়েছে বলা যায় ।
১.১ কবি জসীমউদ্দীন কোন্ অভিধায় অভিহিত ?
উঃ । কবি জসীমউদ্দীন ‘ পল্লীকবি ' অভিধায় অভিহিত ।
১.২ তাঁর লেখা দুটি কাব্যগ্রন্থের নাম লেখো ।
উঃ । তাঁর লেখা দুটি কাব্যগ্রন্থের নাম হলো ' নর্গীকাঁথার মাঠ ' এবং ' সোজন বাদিয়ার ঘাট ।
২. একটি বাক্যে উত্তর দাও :
২.১ কবিতায় বর্ণিত নদীটির নাম কী ?
উঃ । কবিতায় বর্ণিত নদীটির নাম গড়াই নদী ।
২.২ মাচানের পরে কী আছে ?
উঃ । মাচানের পরে সিম লতা ও লাউ - কুমড়ার ঝাড় আছে ।
২.৩ মানুষের বসত করার কথা এখানে কারা বোঝেনি ?
উঃ । এখানে বনের পাখিরা মানুষের বসত করবার কথা বোঝেনি ।
২.৪ উঠানেতে কী কী শুকাচ্ছে ?
উঃ । উঠোনেতে মটর ডাল , মুসুর ডাল , কালোজিরা , ধনে , লংকা ও মরিচ শুকোচ্ছে ।
২.৫ বাড়িটিকে ভালোবেসে কারা বেড়াতে এলে কিছুক্ষণ থেমে রয় ?
উঃ । বাড়িটিকে ভালোবেসে সন্ধ্যা সকালের রঙিন মেঘেরা বেড়াতে এলে কিছুক্ষণ থেমে থাকে ।
৩. নীচের প্রশ্নগুলির কয়েকটি বাক্যে উত্তর দাও :
৩.১ কুটিরখানিরে লতাপাতা ফুল মায়ায় রয়েছে ঘিরে ' — এখানে কুটিরটিকে লতাপাতা - ফুলের মায়া দিয়ে ঘিরে রাখা বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন ?
উঃ । কবি জসীমউদ্দীন গড়াই নদীর তীরে থাকা একখানি কুটিরের কথা বলেছেন । পল্লিগ্রামের কুটির কখনো একটা কেবলমাত্র ঘর এমন নয় । কুটিরের আশেপাশে থাকে গাছপালা , লতাপাতা , ফুলফলের গাছ । সেইসব গাছ সাধারণত কুটিরে বসবাসকারী মানুষেরাই রোপণ করে । কুটিরে যেন তাদের মায়া ছড়িয়ে থাকে । আসলে লতা , পাতা , ফুল , ফলে কুটিরটিকে এমনভাবে ঘিরে রয়েছে তা দেখে মনে হয়েছে প্রকৃতি যেন পরম স্নেহের বন্ধনে বেঁধে কুটিরটিকে রক্ষা করে চলেছে । একথা বোঝাতেই কবি কুটিরটিকে লতাপাতা - ফুলের মায়ায় ঘেরা বলেছেন ।
৩.২ ' ডাহুক মেয়েরা বেড়াইতে আসে গানে গানে কথা কয়ে ' — ‘ ডাহুক মেয়ে ' কারা ? তারা কাদের নিয়ে আসে ? তারা কীভাবে কথা বলে ?
উঃ । কবিতায় ডাহুক মেয়ে হলো পল্লি প্রকৃতির এঁদো ডোবায় থাকা জলচর মেয়ে পক্ষী । ডাহুক হলো একধরনের জলচর পাখি । তাদের ছানা বা বাচ্চারা এঁদো ডোবাতে থাকে । সেইসব ডাহুক বা জলচর পাখিরা যেন নিজেদের বাচ্চাদের নিয়ে বেড়াতে আসে । ডাহুকরা গান গেয়ে গেয়ে কথা বলে । অর্থাৎ তাদের মিষ্টি ডাক দিয়ে যেন মনের ভাব বোঝায় ।
৩.৩ ‘ যেন একখানি সুখের কাহিনি নানান আখরে ভরি ’ — ' আখর ’ শব্দটির অর্থ কী ? সুখের কাহিনির যে নানা ছবি কবি এঁকেছেন তার মধ্যে কোন্টি তোমার সবচেয়ে বেশি ভালো লেগেছে এবং কেন ?
উঃ । আখর শব্দের অর্থ হলো অক্ষর বা বর্ণ । কবি জসীমউদ্দীন ‘ গড়াই নদীর তীরে ' কবিতাটিতে সুখের কাহিনির যে ছবিটি তুলে ধরেছেন তা বেশ মনোমুগ্ধকর । কবিতাটিতে তিনি কুটিরের সামনে পরপর যে বিভিন্ন ডাল শুকনো করা , মশলা শুকনো করার ছবিটি দিয়েছেন তা অনবদ্য । মটরডাল হলুদ বর্ণের , মুসুর ডাল লালচে - গোলাপি , তার পাশে কালোজিরে কালো আর ধনে হলদেটে । আবার লংকা লাল , মরিচ কালচে , সবমিলিয়ে এ যেন রঙের মেলা । দেখে মনে হচ্ছে নানা রঙের মিশ্রণে সমৃদ্ধি ও খুশি যেন উপচে পড়ছে । বিভিন্ন রঙের আলপনা দেওয়া হয়েছে । বিভিন্ন রঙের বাহারে উঠোনটা যেন হাসছে । বাড়িটাও যেন একটা নতুন প্রাণ পেয়েছে বলে মনে হয় । কবির আঁকা এই ছবিটিই আমার সবচেয়ে ভালো লেগেছে । কারণ প্রকৃতির স্বাভাবিক শস্যের রং মানুষের হাতের স্পর্শে এক রঙিন চিত্র তৈরি করেছে যা দেখে মনে হয়েছে এ যেন প্রকৃতিরই সৃষ্টি । এই পটে আঁকা চিত্রের মাঝে কুটিরটির অবস্থানের দৃশ্যটি আমার মন ছুঁয়ে গেছে ।
৩.৪ কিছুখন যেন থামিয়া রয়েছে এ বাড়িরে ভালোবেসে - রঙিন মেঘেরা বাড়িটিকে ভালোবেসে থেমে থাকে । এর মধ্য দিয়ে কবি কী বোঝাতে চেয়েছেন ?
উঃ । কবির মতে গড়াই নদীর তীরবর্তী কুটিরটি ছোটো কিন্তু তা এত সুন্দর , এমন চমৎকার যে রঙিন মেঘের দলও বাড়িটিকে দেখে থমকে দাঁড়ায় । তারাও যেন বাড়িটির সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে যায় । সাদামাটা বাড়িটি ও তার আটপৌরে সাজ দেখে তারাও যেন কুটিরটির সঙ্গে একাত্মতা অনুভব করে । আকাশ এবং মাটির মধ্যে যে ব্যবধান মায়াভরা এই কুটিরটি যেন সেই দূরত্ব ঘুচিয়ে দেয় ।
৪. নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর নিজের ভাষায় লেখো :
৪.১ ‘ এ বাড়ির যতো আনন্দ হাসি আঁকা জীবন্ত করি ' — কবিতায় কবি প্রকৃতির সঙ্গে একাত্ম যে গ্রামীণ কুটিরের জীবন্ত ছবি এঁকেছেন তার বিবরণ দাও ।
উঃ । কবি জসীমউদ্দীন তাঁর কবিতায় পল্লিগ্রামের কুটিরের এক জীবন্ত চিত্র এঁকেছেন । পল্লিগ্রামের গড়াই নদীর ধারে থাকা কুটিরখানি যেন লতাপাতায় ঘেরা ও মায়া মমতায় জড়ানো । বুনোফুল তার চারপাশে ছড়ানো , মাচানের ওপর লাউ , কুমড়ো , সিম কলে রয়েছে । মাচানের তলায় লাল নটে শাকের যেন ঢেউ খেলে গেছে দেখে মনে হয় বাড়ির কোনো বউ লালশাড়ি মেলে গেছে । এই রঙিন কুটিরখানিতে এঁদো ডোবার ডাহুকের দল ছানা নিয়ে গান গাইছে । শুনে মনে হচ্ছে যেন মিষ্টি সুরে তারা গান গেয়ে মনের ভাব প্রকাশ করছে । বনের পাখিরা এখানে নির্ভয়ে গান গেয়ে যাচ্ছে । মানুষের চলাফেরা এখানে এতই নিস্তদ্ধ যে বনের পাখিরা নির্ভয়ে ঘুরে বেড়াতে পারছে । বাড়ির মেয়েরা মটর , মুসুর প্রভৃতি ডাল , লংকা , জিরে , মরিচ প্রভৃতি বিভিন্ন মশলা পাশাপাশি এমনভাবে মেলে রেখেছে যেন মনে হচ্ছে রঙের মেলা বসেছে । দূর আকাশের রঙিন মেঘেরাও এই কুটিরকে ভালোবেসে যাওয়ার সময় থমকে যায় । সবমিলিয়ে কুটিরের দৃশ্যটি যেন একটি রঙিন চিত্র । কবি এখানে তুলি নয় শব্দের পর শব্দ দিয়ে গেঁথে রঙিন ছবি এঁকেছেন । তাঁর আঁকা ছবি যেন জীবন্ত হয়ে উঠেছে ।
৪.২ ' সোজন বাদিয়ার ঘাট ' কবিতায় কবি পরম মমতায় গ্রামীণ কুটিরের ছবি এঁকেছেন । আমাদের প্রত্যেকেরই নিজের বাড়ির সঙ্গে এমন একটি মমতাময় সম্পর্ক আছে । তুমি তোমার বাড়ির বিভিন্ন অনুষঙ্গের বিবরণ দিয়ে একটি অনুচ্ছেদ লেখো ।
উঃ । আমাদের বাড়িটি শহরে অবস্থিত । কিন্তু আমাদের বাড়িটি শহরের একটি প্রাপ্তে হওয়ায় সেখানে শহরের কোলাহল তেমনভাবে নেই । বাড়ির পিছনে রয়েছে একটি বাগান , সেখানে নানারকম ফলের গাছ রয়েছে । সামনের দিকে একপাশে লন অন্যদিকে ছোটো কিচেন গার্ডেন আছে । লনের তিনদিকে ফুলগাছ দিয়ে ঘেরা । লনে বসে আমরা শীতের রোদ পোহাই , গ্রীষ্মের বিকেলে বেড়াই । কিচেন গার্ডেনটি আমার মা নিজের হাতে বানিয়েছেন । মা এখানে লংকা ও ধনেপাতার গাছ লাগিয়েছেন । ছোটো একটি পেঁপে গাছও আছে । মা একটা ছোটো ঘৃতকুমারী গাছও লাগিয়েছেন আর আছে কারিপাতা গাছ । আমাদের বাড়ির পুবদিকে রয়েছে একটা নিমগাছ । আমরা সারা বছরই নিমপাতা পাই । পিছনে ফলের বাগান ছাড়াও পশ্চিমে একটা হাল্গুহানা ফুলের গাছও আছে । তার গন্ধ খুবই মধুর । সব মিলিয়ে আমাদের বাড়িটি একেবারে সবুজে ভরা ।
No comments:
Post a Comment