মাসিপিসি জয় গোস্বামী প্রশ্ন উত্তর | অষ্টম শ্রেণী বাংলা প্রশ্ন উত্তর | Class 8th questions and answers class 8th - Psycho Principal

Fresh Topics

Sunday, 29 December 2024

মাসিপিসি জয় গোস্বামী প্রশ্ন উত্তর | অষ্টম শ্রেণী বাংলা প্রশ্ন উত্তর | Class 8th questions and answers class 8th

  

মাসিপিসি 
জয় গোস্বামী







👉(টিকিটের অ্যালবাম সুন্দর রামস্বামী প্রশ্ন উত্তর)



কবি - পরিচিতিঃ 

জয় গোস্বামী আধুনিক বাংলা সাহিত্যের এক অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি । ১৯৫৪ সালে কলকাতায় কবির জন্ম হয় । ১৯৭৬ সালে ‘ দেশ ’ পত্রিকায় তিনি প্রথম লেখেন । তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘ ক্রীশমাস ও শীতের সনেটগুচ্ছ ' প্রকাশিত হয় ১৯৭৭ সালে । তাঁর কবিতার মূল বিষয়বস্তু আজকের সমাজকেন্দ্রিক । মূলত মধ্যবিত্ত এবং সমাজের নিম্ন শ্রেণির সমস্যাগুলি তাঁর কবিতায় বারবার এসেছে । ' যারা বৃষ্টিতে ভিজেছিল ' তাঁর লেখা অন্যতম কাব্য উপন্যাস । তাঁর উল্লেখযোগ্য কবিতার বই প্রত্নজীব , ভুতুম ভগবান , উন্মাদের পাঠক্রম , ঘুমিয়েছ ঝাউপাতা ইত্যাদি । তাঁর লেখা ‘ সেই সব শেয়ালেরা ' উপন্যাস আধুনিক বাংলা সাহিত্যের এক শ্রেষ্ঠসম্পদ । এছাড়া ‘ সুড়ঙ্গ ’ এবং ‘ প্রতিরক্ষা ' উপন্যাস দুটিও উল্লেখযোগ্য । তিনি ‘ আনন্দ পুরস্কার ' এবং ২০০০ সালে ' সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন । 


সারমর্মঃ

সমাজের একেবারে তলার দিকের অসহায় নারীদের কথা বলা হয়েছে কবিতায় । যাদের সমাজে চলতি নাম কাজের মাসি বা কাজের পিসি । পেটের টানে তাদের ভোর থেকেই কাজে ঝাঁপিয়ে পড়তে হয় এবং শ্রান্ত ও ক্লান্ত দেহে তারা ঘরে ফেরে অনেক রাত্রে । এই মাসিপিসিদের বাড়িতে অনেক বড়ো পরিবার কিন্তু তাদের রোজগার সামান্য বা একমুঠো । তারা শ্রমদান করে থাকথিত ভদ্র সমাজের বিলাসব্যসনের পথ প্রশস্ত করে , অথচ তাদের প্রাপ্য মজুরিটুকুও সমাজ তাদের দিতে চায়না , বরং নানা কৌশলে তাদের শোষণ এবং পীড়ন করে । দিন , সাল , মাসের হিসেব থাকে না , তাদের জীবনের কোনো পালাবদল ঘটে না । তাই কবি বলেছেন শতবর্ষ আসে যায় পরিবারের মুখে অন্ন যোগাতে এরা লালগোলা , বনগাঁয় চালের বস্তা তুলে শহরের দিকে এগিয়ে চলে সামান্য রোজগারের আশায় । মাসিপিসির জীবন ও জীবিকার কোনো পরিবর্তন ঘটে না । এইসব মানুষের দুঃখবেদনাকে কবি পরিস্ফুটিত করেছেন আলোচ্য কবিতায় । 


নামকরণঃ

 সমাজের শোষিত বঞ্চিত দরিদ্র অসহায় মানুষের কথা বর্ণিত হয়েছে কবিতায় । বলা হয়েছে সমাজের দুর্বলতম অসহায় নারীদের কথা যায় দিনরাত খেটে মরে কেবলমাত্র একমুঠো অন্ন জোগাড়ের চেষ্টায় , যাদের তথাকথিত ভদ্রসমাজ কাজের মাসি বা কাজের পিসি বলে ডাকে । যে ডাকের মধ্যে নেই সম্পর্কের শ্রদ্ধা বরং আছে চরম অশ্রদ্ধা । নিজেদের অস্তিত্ব বিসর্জন দিয়ে পেটের তাগিদে তাদের চলতে হয় ক্ষমতাবান সমাজের ইচ্ছে অনুযায়ী । আলোচ্য কবিতায় বিষয়বস্তুকে অতিক্রম করে বিষয়ের ব্যানায় পৌঁছে যায় । তাই কবিতায় নামকরণ ' মাসিপিসি ' অত্যন্ত সার্থক এবং ব্যঞ্জনাময় হয়ে উঠেছে ।



১.১ জয় গোস্বামীর লেখা দুটি কবিতার বইয়ের নাম লেখো । 

উ: । জয় গোস্বামীর লেখা দুটি কবিতার বই ‘ প্রত্নজীব ’ ও ‘ উন্মাদের পাঠক্রম ' । 


১.২ জয় গোস্বামীর লেখা একটি উপন্যাসের নাম লেখো । 

উঃ । জয় গোস্বামীর লেখা একটি উপন্যাস হলো ' সেই সব শেয়ালেরা ' । 


২. নীচের প্রশ্নগুলির অভিসংক্ষেপে উত্তর দাও :

২.১ অনেকগুলি পেট বাড়িতে ’ ... ‘ পেট ’ - এর আভিধানিক অর্থ কী ? এখানে কী অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে ?

 উঃ । ' পেট ' শব্দটির আভিধানিক অর্থ হলো উদর বা জঠর । কবিতায় ' পেট ' শব্দটি মাসিপিসিদের বড়ো পরিবারের অনেকজন সদস্য এবং তাদের ক্ষুধার্ত মানুষরূপে বোঝাতে ব্যবহৃত হয়েছে । 


২.২ সাত ঝামেলা জোটায় ' — এখানে ' সাত ' শব্দটির ব্যবহারের কারণ কী ? 

উঃ । এখানে ' সাত ' শব্দটি বিভিন্ন বা নানা ধরনের ঝামেলার কথা বোঝাতে ব্যবহার করা হয়েছে । 


২.৩ ‘ মাহিনা ’ শব্দটি কবিতায় কী অর্থে ব্যবহৃত । শব্দটির অন্য কোনো অর্থ তোমার জানা আছে ?

 উঃ । কবিতার মাহিনা শব্দটি এখানে ‘ মাস ' অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে । এটি একটি হিন্দি শব্দ । শব্দটির দ্বারা মাসিক বেতনও বোঝানো হয় । 


২.৪ কোন্ শব্দ থেকে এবং কী করে ‘ জষ্টি ' শব্দটি এসেছে ? 

উঃ । ' জষ্টি ' শব্দটি বাংলা ‘ জ্যৈষ্ঠ ’ থেকে পরিবর্তিত হয়ে এসেছে । বর্ণবিকার দ্বারা শব্দটির রূপান্তর ঘটেছে । 


৩. নীচের প্রশ্নগুলির সংক্ষেপে উত্তর দাও : 

৩.১ শুকতারাটি ছাদের ধারে , চাঁদ থামে তালগাছে ' — এই পঙ্ক্তিটির মাধ্যমে দিনের কোন সময়ের কথা বলা হয়েছে ? তোমার উত্তরের পক্ষে যুক্তি দাও । 

উঃ । প্রদত্ত পঙ্ক্তিটির মাধ্যমে গভীর রাত এবং ভোরের মধ্যবর্তী সময়ের কথা বলা হয়েছে । শুকতারা প্রথম নজরে আসে পূর্ব দিগন্তে , চাঁদও উদিত হয় পূর্বদিকে । এখানে কবি বোঝাতে চেয়েছেন এখনো পর্যন্ত সূর্য ওঠেনি । আবার কবি বলেছেন , ' চাঁদ থামে তালগাছে ' অর্থাৎ আকাশে এখনো চাঁদ রয়েছে । এ থেকেই বোঝা যাচ্ছে । রাত শেষ হয়ে আসছে , ভোরের সূচনা হতে চলেছে ।


 ৩.২ দু - ফোঁটা শিশির ঢাকায় ঘাসের থেকে ঘাসে ' এই পঙ্ক্তিটিতে যে ছবিটি ফুটে উঠেছে তা নিজের ভাষায় লেখো । 

উঃ । এই পঙ্ক্তিটি দ্বারা কবি জয় গোস্বামী শীতের ভোরের এক সুন্দর ছবি ফুটিয়ে তুলেছেন । এই পংপ্তিটিতে কবি বর্ণনা করেছেন ভোরের দিকে ঘাসে ঘাসে শিশির পড়ে , প্রতি ঘাসের মাথায় জমা হয় দু - এক ফোঁটা শিশিরবিন্দু । তার .উপর সূর্যের আলো পড়ে তা জ্বলজ্বল করে ওঠে এবং এক মনোরম দৃশ্য তৈরি হয় । মনে হয় যেন প্রতিটি শিশিরবিন্দু একে অপরের দিকে তাকিয়ে রয়েছে ।


 ৩.৩ ' মাস মাহিনার হিসেবে তো নেই — মাস মাহিনার হিসেব নেই কেন ? 

উঃ । জয় গোস্বামী রচিত মাসিপিসি কবিতায় মাসিপিসিরা দিন আনা দিন খাওয়া মানুষ । তাদের কোনো বিশ্রাম নেই । কাজ বন্ধ হলে এদের সেদিন রোজগার হয় না । এই কঠিন পরিশ্রম ও রাতদিন এক করে ছুটে চলার মাঝে এরা দিন , মাস বা বছরের হিসাব রাখতে পারে না । তাই সাল - মাহিনার হিসাব তাদের কাছে নিতান্তই অর্থহীন । 


৪. নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর নিজের ভাষায় লেখো:

৪.১ শতবর্ষ এগিয়ে আসে শতবর্ষ যায় ' — এই পঙ্ক্তিটির মধ্যে দিয়ে কবি কী বলতে চেয়েছেন ? 

উঃ । শ্রেণি বিভক্ত সমাজব্যবস্থায় সমাজের নীচুতলের শ্রমজীবী মানুষগুলি আজও সমানভাবে অবহেলিত এবং শোষিত । তাদের কর্মপ্রবাহ চিরকালীন । সভ্যতার অগ্রগতির সাথে সাথে সামগ্রিক উন্নয়নের ছোঁয়া তাদের স্পর্শ করতে পারেনি । বছর পেরিয়ে গেলেও তাদের জীবনের গতির পরিবর্তন হয় না । কঠিন পরিশ্রমের মধ্যে দিয়ে তারা দু - মুঠো অস্ত্রের জোগাড় করে । তাই কবি বলেছন শতবর্ষ আসে ও যায় এই সব শ্রমজীবী মানুষের কাজের কোনো বিরাম ঘটে না ।


৪.২ ' মাসিপিসি ' কবিতায় এই মাসিপিসি কারা ? তাদের জীবনের কোন ছবি তুমি খুঁজে পাও ?

উঃ । যে সমস্ত মহিলাগণ আমাদের বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করেন , গ্রাম থেকে শহরে চাল শাকসবজির জোগান দেন কবিতায় তাঁদেরই মাসিপিসি বলা হয়েছে । তবে কবি ব্যাপক অর্থে গ্রাম থেকে জীবিকার সন্ধানে শহরে আসা সমস্ত শ্রমজীবী মহিলাদেরই বুঝিয়েছেন । উদয়াস্ত পরিশ্রম করে এই সব মহিলারা তাঁদের সংসার প্রতিপালন করেন । তাঁদের জীবনে কোনো অবসর নেই , সমাজ তাঁদের সেবায় উপকৃত হয় বিনিময়ে প্রাপ্য সম্মান ও অর্থ তাঁরা পান না । এককথায় চরম জীবনসংগ্রামের মধ্য দিয়ে তাঁদের দিন কাটে । দিন , মাস ও বছর কেটে যায় তাঁদের কর্মধারায় কোনো পরিবর্তন আসে না । 


৪.৩ ' মাসিপিসি ' কবিতার এই মাসিপিসিদের মতো আর কাদের কথা তুমি বলতে পারো যাদের ট্রেনের উপর নির্ভর করে জীবন অর্জন করতে হয় ? 

উঃ । কলকাতার বহু বাড়ির পরিচারিকাদেরই ট্রেনের উপর জীবিকা নির্ভর করে । কারণ বহুদূর থেকে তাদের আসতে হয় । ট্রেনের হকারদের জীবিকাও সম্পূর্ণ রূপেই ট্রেনের উপর নির্ভর করে । 


৪.৪ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ ওরা কাজ করে ’ কবিতাটি তুমি পড়ে নাও । ' মাসিপিসি ' কবিতার সঙ্গে ‘ ওরা কাজ করে ’ কবিতা কোন সাদৃশ্য তোমার চোখে পড়ল তা আলোচনা করো । 

উঃ । ‘ ওরা কাজ করে ’ কবিতার সঙ্গে আলোচ্য কবিতার বিষয়বস্তুর যে সাদৃশ্য দেখা যায় তা হলো কাজের ভিত্তিতেই মানব সভ্যতা গড়ে ওঠে ও বেঁচে থাকে । যুগে যুগে তারাই মানুষের দৈনন্দিন জীবনের প্রয়োজন মিটিয়ে এসেছে । রাজার পরিবর্তন হয় , সাম্রাজ্যের অবসান ঘটে কিন্তু মেহনতি মানুষের পরিশ্রমের কোনো পরিবর্তন আসেনা তাদের কর্মধারায় কখনও ছেদ পড়ে না । এটাই উভয় কবিতার মূল বিষয়বস্তু । রবীন্দ্রনাথ তাঁর কবিতায় শ্রমজীবী মানুষের কর্মসংস্কৃতির ধারা বয়ে চলার কথাটি বোঝাতে ' চিরকাল ' শব্দটি ব্যবহার করেছেন । একই ধরনের সাদৃশ্য আমরা জয় গোস্বামী রচিত আলোচ্য ‘ মাসিপিসি ' কবিতায় দেখতে পাই যেখানে কবি বলেছেন শতবর্ষ এগিয়ে আসে শতবর্ষ যায় । 


৫. নির্দেশ অনুযায়ী বাক্য পরিবর্তন করোঃ 

৫.১ ফুল ছুঁয়ে যায় চোখের পাতায় , জল ছুঁয়ে যায় ঠোটে । ( জটিল বাক্যে ) 

উঃ । যেমন ফুল ছুঁয়ে যায় চোখের পাতায় , তেমন জল ছুঁয়ে যায় ঠোঁটে ।


 ৫.২ ঘুমপাড়ানি মাসিপিসি রাত থাকতে ওঠে । ( জটিল বাক্যে ) 

উঃ । যে মাসিপিসি ঘুমপাড়ানি তারা সব রাত থাকতে ওঠে । 


৫.৩ অনেকগুলো পেট বাড়িতে , একমুঠো রোজগার । ( যৌগিক বাক্যে ) 

উঃ । অনেকগুলো পেট বাড়িতে কিন্তু একমুঠো রোজগার ।

No comments:

Post a Comment