ভালোবাসা কি বৃথা যায় শিবনাথ শাস্ত্রঈ | অষ্টম শ্রেণী বাংলা প্রশ্ন উত্তর | Class 8th questions and answers class 8th - Psycho Principal

Fresh Topics

Sunday, 29 December 2024

ভালোবাসা কি বৃথা যায় শিবনাথ শাস্ত্রঈ | অষ্টম শ্রেণী বাংলা প্রশ্ন উত্তর | Class 8th questions and answers class 8th

  

ভালোবাসা কি বৃথা যায় 
শিবনাথ শাস্ত্রঈ






👉(ঘুরে দাঁড়াও প্রণবেন্দু দাশগুপ্ত প্রশ্ন উত্তর )


লেখক পরিচিতিঃ

বাংলা সাহিত্যের প্রতিভাবান লেখক শিবনাথ শাস্ত্রী । ১৮৪৭ খ্রিস্টাব্দে দক্ষিণ চব্বিশ পরগণার মজিলপুরে তিনি জন্মগ্রহণ করেন । সমাজসংস্কার ও ব্রাহ্ম আন্দোলনের সঙ্গে তাঁর নিবিড় যোগাযোগ ছিল । সে যুগের বিখ্যাত পত্রিকা ' সোমপ্রকাশ ' সম্পাদনার দায়িত্ব তিনি গ্রহণ করেছিলেন । ১৮৬৯ খ্রিস্টাব্দে তিনি ব্রাহ্মসমাজে যোগ দেন । গোঁড়া হিন্দু ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্ম হলেও সেকালের কুসংস্কার ও অর্থহীন আচরণ তিনি সমর্থন করতেন না । ব্রাহ্মসমাজের পক্ষ থেকে ' সখা ' নামক একটি পত্রিকা তিনি প্রকাশ করে ছিলেন । তাঁর রচিত উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলি হলো যুগান্তর , বঙ্গসাহিত্য , সাঁওতালি উপকথা , দূর্বা ইত্যাদি । ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে তাঁর জীবনাবসান ঘটে । 


সারসংক্ষেপঃ

মানুষ যদি মানুষকে ভালোবাসে তবে তা বৃথা যায় না , পৃথিবীতে যারা প্রকৃত বড়োমনের মানুষ তাঁরাই সবাইকে ভালোবাসতে পারে । তাঁরা যেমন মানুষকে ভালোবাসতেন মানুষও তেমনি তাঁদের ভালোবাসতেন । এদেশে দুজন ইংরেজ একজন ডেভিড হেয়ার , আর একজন ড্রিঙ্ক ওয়াটার বিটন ( বেথুন ) । এর নামের প্রকৃত উচ্চারণ বিটন কিন্তু এদেশে বেথুন হয়ে পড়েছেন । হেয়ার সাহেব ছিলেন ঘড়ির মিস্ত্রী । ঘড়ি তৈরি ও ঘড়ি মেরামত করে জীবিকা অর্জন করতেন । হেয়ার সাহেব স্কটল্যান্ড দেশীয় লোক ; প্রায় আশি - নব্বই বৎসর আগে তিনি ঘড়িওয়ালার কাজ করবার জন্য এদেশে আসেন । রামমোহন রায়ের সঙ্গে তাঁর পরিচয় ঘটে ও আত্মীয়তা জন্মায় । কীভাবে এদেশে বালিকাদের শিক্ষার প্রসার ঘটানো যায় এই ছিল তাঁদের চিন্তার বিষয় ।

 ১৮১৭ খ্রিস্টাব্দে রামমোহন রায় ও হেয়ারের উদ্যোগে ও তখনকার সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি স্যার হাইড ইস্ট সাহেবের সহায়তায় এদেশের বালকদের ইংরেজি শিক্ষার জন্য স্কুল খোলা হয় । সেই থেকে হেয়ার সাহেব সব কাজ ছেড়ে কলিকাতার নানা স্থানে বিদ্যালয় খুললেন । একটি সভা স্থাপন করে স্কুলপাঠ্য পুস্তক প্রকাশ করতে লাগলেন । সংক্ষেপে বলা যায় হেয়ার সাহেব ছিলেন এদেশে ইংরাজি শিক্ষার পিতা । পথে যেতে যেতে তিনি যে সমস্ত পাড়া পার হতেন , তাদের মধ্যে যাদের ওষুধ কেনবার সামর্থ্য ছিল না তাদের জন্য তিনি ওষুধ নিয়ে যেতেন । অনেক বাড়ির বৃদ্ধা গৃহিণীদের এমন মনোভাব তৈরি হয়েছিল যে , হেয়ার সাহেব এলে তারা মনে করত তাদের নিজের কেউ এসেছে । তিনি ছোটো বাচ্চাদের এত ভালোবাসতেন , সুযোগ পেলেই দাঁড়িয়ে তাদের খেলা দেখতেন , তাদের সাথে খেলতেন , খেলনা কিনে দিতেন । একবার চন্দ্রশেখর দেব নামে এক ছাত্র তাঁর কাছে গিয়েছিল । কাজকর্ম সেরে বাড়ি ফেরার সময় বৃষ্টি এসে গেল । বৃষ্টি থামলে যেতে অনেক রাত্রি হবে , ছেলেটিকে আবার মাতাল গোরাপাড়ার মধ্যে দিয়ে যেতে হবে । তাই তিনি নিজে তাকে পটলডাঙা পৌঁছে দিয়েছিলেন । মাঝরাস্তা বরাবর ছেলেটি সাহেবকে চলে যেতে বলল কারণ এবার সে নিজেই বাড়ি যেতে পারবে কিন্তু তিনি থাকতে না পেরে সেই রাত্রেই পুনরায় ছেলেটির বাড়ি যান এবং সে ফিরেছে কিনা দেখেন । তাই দক্ষিণারঞ্জন মুখোপাধ্যায় নামে একজন শিক্ষিত যুবক বক্তৃতা করবার সময় হেয়ারকে বলেছিলেন , তিনি বাঙালিদের মায়ের মতো ভালোবাসেন । ভালোবাসা কখনই বৃথা যায় না । 

শোনা যায় হেয়ার সাহেবের মৃত্যুর সময় প্রবল প্রাকৃতিক দূর্যোগ উপেক্ষা করে অন্তত দশ হাজার স্কুলবালক ও সাধারণ ভদ্রলোক তাঁর মৃতদেহের সঙ্গে এসেছিলেন । মহিলারা কেঁদে আকুল হয়েছিলেন । প্রেসিডেন্সি কলেজে যে তাঁর প্রতিমূর্তি আছে তা তৈরি করতে যে ব্যয় হয়েছে তার টাকা দিয়েছে এদেশের সাধারণ মানুষ । তাই লেখক বলেছেন ভালোবাসা কি কখনো বৃথা যায় ? আর এক মহাত্মা বেথুন সাহেব বাঙালির মেয়েদের জন্য যা করেছেন , তার নমুনাও বিরল । ইনি গভর্নর জেনারেলের আইন মন্ত্রী হয়ে বড়ো পদ নিয়ে এদেশে এসেছিলেন । এদেশের নারীদের দুর্দশা দেখে তাঁর চোখ ফেটে জল আসত । এদেশে যাতে স্ত্রীশিক্ষা প্রচলিত হয় তার জন্য তিনি প্রাণপণ চেষ্টা করেছিলেন । কলিকাতা বালিকা বিদ্যালয় খুলে নিজেই তার তত্ত্বাবধান করতেন । যে মেয়ে স্কুলে আসত , তাদের পিঠে চড়িয়ে খেলাতেন । কেউ একটু পড়তে পারলেই পুরস্কার দিতেন । নিজের গাড়িতে চড়িয়ে বড়ো বড়ো সাহেবদের বাড়ি নিয়ে যেতেন , অলংকার দিতেন । আজ তাঁর প্রতিষ্ঠিত বেথুন স্কুল থেকে মেয়েরা বি.এ. , এম.এ. পাশ করে বের হচ্ছে । তাই বিদ্যাসাগর মহাশয় বেথুন সাহেবের নাম শুনলে কেঁদে ফেলতেন । আমাদের ঘরে ঘরে রামমোহন , বেথুন হেয়ার সাহেবের প্রতিমূর্তি থাকা উচিত বলে লেখক মনে করেন । 


নামকরণঃ

ভালোবাসা বৃথা যায় না । কাউকে ভালোবাসলে , তার শতগুণ হয়ে তা ফেরত আসে । মহাত্মা হেয়ার সাহেব ঘড়ির মিস্ত্রী হয়েও শিক্ষাক্ষেত্রে রেখে গেছেন অপরিসীম অবদান , তাঁর প্রতিষ্ঠিত হেয়ার স্কুল আজ তীর্থক্ষেত্র । মানুষকে ভালোবেসে তিনি তাঁর সমস্ত কিছু তাদের জন্যই দিয়ে গেছেন । স্কুল , স্কুলপাঠ্য তৈরি , ভালোবেসে ছাত্রদের কাছে টেনে নিয়ে তাদের জন্য লেখাপড়ার ব্যবস্থা করা , সময় কাটানো , –এই সবকিছু তিনি করতেন , মানুষকে ভালোবেসে । তাই তো বাঙালি তাঁকে শ্রদ্ধার আসনে বসিয়েছিলেন ।

 আর এক মহাত্মা বেথুন । স্ত্রী শিক্ষার প্রসারের চেষ্টায় নিজের জীবনপাত করেছেন । মেয়েদের জন্য স্কুল খুলে নিজে তত্ত্বাবধান করেছেন । মেয়েদের স্কুলে আনতেন , দিয়ে আসতেন । তারা একটু পড়তে পারলে আনন্দে চোখের জল ফেলতেন । মেয়েদের সঙ্গে করে তখনকার বড়ো বড়ো সাহেবদের বাড়ি নিয়ে যেতেন , তাদের পোশাক অলংকার কিনে দিতেন । তা শুনলে স্বয়ং বিদ্যাসাগর কেঁদে ফেলতেন । মৃত্যুকালে তাঁর প্রতিষ্ঠিত স্কুলের জন্য হাজার - হাজার টাকার ব্যবস্থা করেছেন । এই স্কুল পরবর্তীকালে কলেজে পরিণত হয়েছে । সেখান থেকে মেয়েরা বিএ . , এমএ . পাশ করেছে । সাহিত্যে নামকরণ সর্বদাই অন্যমাত্রা আনে । এখানে গল্পের বিষয়বস্তু অনুসারে নামকরণ করা হয়েছে সেটি যথার্থ হয়েছে । এখানে সাধারণ মানুষ তথা বালক বালিকাদের প্রতি হেয়ার ও বেথুন সাহেবের ভালোবাসার কথা লেখক কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করেছেন । তাই রচনার নামকরণটিও ' ভালোবাসা কি বৃথা যায় ' সুপ্রযুক্ত হয়েছে বলে মনে হয় ।


অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর 

১. হেয়ার সাহেব কীসের কাজ করতেন ?

 উঃ । হেয়ার সাহেব ঘড়ির মিস্ত্রী ছিলেন । তিনি ঘড়ি তৈরি ও মেরামত করতেন ।


 ২. কখন হেয়ার সাহেব কাজ বন্ধ করে দিয়েছিলেন ? 

উঃ । স্কুল প্রতিষ্ঠার জন্য তিনি দিনরাত ছেলেদের শিক্ষার পিছনে পড়ে স্কুলের তত্ত্বাবধান করতেন । ফলে ঘড়ি তৈরির কাজ এক সময় তিনি ছেড়েই দেন । 


৩. হেয়ার সাহেব কোন্ দেশের লোক ছিলেন ?

 উঃ । হেয়ার সাহেব স্কটল্যান্ড দেশের লোক ছিলেন । 


৪. তিনজন শিক্ষাব্রতীর নাম লেখো লেখক যাঁদের মূর্তি ঘরে রাখা উচিত বলেছেন ।

 উঃ । তিনিজন শিক্ষাব্রতী হলেন রাজা রামমোহন রায় , মহাত্মা বেথুন ও মহাত্মা ডেভিড হেয়ার ।


 ৫. কার সাথে হেয়ারের বন্ধুত্ব জন্মেছিল ? 

উঃ । রাজা রামমোহন রায়ের সাথে হেয়ারের বন্ধুত্ব ও আত্মীয়তা জন্মেছিল । 


৬. বেথুন সাহেব কী পদ নিয়ে এদেশে এসেছিলেন ? 

উঃ । বেথুন সাহেব গভর্নর জেনারেলের আইনমন্ত্রী হয়ে বড়ো পদ নিয়ে এদেশে এসেছিলেন । 


৭. হিন্দু স্কুলের টিফিনের সময় হেয়ার সাহেব কী করতেন ? 

উঃ । হিন্দু স্কুলে একটার সময় টিকিনের ছুটি হলে হেয়ার সাহেব একদৃষ্টে দাঁড়িয়ে ছেলেদের খেলা দেখতেন । 


৮. চন্দ্রশেখর দেব কোথায় কার বাড়িতে গিয়েছিল ? 

উঃ । চন্দ্রশেখর দেব নামে একটি বালক লালদিঘির ধারে হেয়ার সাহেবের বাড়িতে তাঁর সাথে দেখা করতে গিয়েছিল ।


৯. হরমোহন চট্টোপাধ্যায় কে ছিলেন ? 

উঃ । হরমোহন চট্টোপাধ্যায় ছিলেন হিন্দু স্কুলের কার্যায্যক্ষ । 


১০. বেথুন সাহেবের প্রকৃত নাম কী ছিল ? 

উঃ । বেথুন সাহেবের প্রকৃত নাম ছিল ড্রিন্ক ওয়াটার বিটন । তাঁর নামের প্রকৃত উচ্চারণ বিটম এদেশে বেথুন হয়ে পড়েছিল । 


সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর 

১. কাদের সহায়তায় ইংরাজি শিক্ষার স্কুল খোলা হয় ? 

উঃ । ১৮১৭ খ্রিস্টাব্দে রামমোহন রায় ও হেয়ার সাহেবের উদ্যোগে এবং তখনকার সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি স্যার হাইড ইস্ট সাহেবের সহায়তায় ইংরেজি শিক্ষার স্কুল খোলা হয় । 


২. কে কেন বেথুন সাহেবের নাম করলে কেঁদে ফেলতেন । 

উঃ । বেথুন সাহেবের নাম করলে বিদ্যাসাগর মহাশয় কেঁদে ফেলতেন । এদেশের মানুষের প্রতি বেথুন সাহেবের ভালোবাসা ও শিক্ষাবিস্তারের কথা স্মরণ করে তিনি কেঁদে ফেলতেন । 


৩. কোথায় হেয়ারের প্রতিমূর্তি রয়েছে ? তাঁর নির্মান খরচ কারা দিয়েছিল ? 

উঃ । কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজের উঠোনে হেয়ার সাহেবের প্রতিমূর্তি আছে । তাঁর নির্মাণ খরচ বহন করেছিলেন এদেশের অধিকাংশ মানুষ । 


৪. হেয়ার সাহেব কোথায় কেন কাঠের বল নিয়ে গেলেন ? 

উঃ । মহাত্মা হেয়ার সাহেব , সুফিয়া স্ট্রিটে হিন্দু স্কুলের কার্যাধ্যক্ষ পরলোকগত হরমোহন চট্টোপাধ্যায়ের বাড়িতে এসে গোটা কয়েক কাঠের বল নিয়ে গিয়েছিলেন । তিনি ওই বলগুলি একটি ব্রুদনরত বালককে দিয়েছিলেন । কিছু ছেলে ওই বাচ্চাটির বল কেড়ে লালদিঘির জলে ফেলে দিয়েছিল । পরের দিন হেয়ার স্কুলে এসে বালকটির ক্লাসে গিয়ে তাকে কোলে করে বলগুলি দিয়ে ছিলেন । 


৫. দক্ষিণারঞ্জন মুখোপাধ্যায় তাঁর বক্তৃতায় হেয়ার সাহেবকে কী বলে সম্বোধন করেছিলেন । 

উঃ । ' আপনি আমাদের জ্ঞানদাতা পিতা , বলেই সংশোধনপূর্বক দক্ষিণারঞ্জন পুনরায় বলেন ' না , না , আপনি আমাদের মাতার মতো । এটা ছিল সঠিক বক্তব্য , হেয়ার সাহেব বাঙালিদের মায়ের মতো স্নেহ করতেন ।


রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর 

১. ' সেকালের লোকের মুখে শুনিয়াছি ' — লেখক লোকের মুখে কী শুনেছিলেন ? 

উঃ । লেখক শিবনাথ শাস্ত্রী লোকের মুখে শুনেছিলেন যে হেয়ার সাহেব প্রতিদিন একটি পালকিতে চেপে স্কুল দেখতে আসতেন আর সেই পালকিতে থাকত নানারকমের ওষুধ । পালকিটি যেন একটি চলমান ডিসপেনসারি ছিল । তিনি সঙ্গে করে ওষুধ নিয়ে যেতেন এই কারণে যে পথে যাওয়ার সময় যে সব পাড়া পড়বে তার সব বাড়িতে তিনি যেতেন । যাদের ওষুধ কেনার সামর্থ্য ছিল না তাদের তিনি ওষুধ দিয়ে যেতেন । তাঁর সুপ্রসন্ন মুখে দেখে অনেক বাড়ির বৃদ্ধা গৃহিণীরা মনে করতেন যে হেয়ার সাহেব বোধহয় তাদেরই আপনজন । ২. হেয়ার সাহেব কবে , কীভাবে শিক্ষাবিস্তার শুরু করেন ? উঃ । হেয়ার সাহেব ঘড়ির কাজ করার জন্য এদেশে এসেছিলেন । 

রাজা রামমোহন রায়ের সঙ্গে তাঁর পরিচয় ও বন্ধুত্ব হয় । দুই বন্ধু মিলে সবসময় আলোচনা চালাতেন যে কীভাবে এদেশের ছেলেদের ইংরেজি শিক্ষায় শিক্ষিত করে তোলা যায় । এই ভাবনা থেকেই ১৮১৭ খ্রিস্টাব্দে রামমোহন রায় ও হেয়ার সাহেবের উদ্যোগে তৎকালীন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি স্যার হাউড ইস্ট সাহেবের সহায়তায় এদেশের ছেলেদের ইংরাজি শিক্ষার জন্য হিন্দু স্কুল খোলা লেগে গেলেন । এছাড়া তিনি হলো । সেই থেকে হেয়ার সাহেব অন্য সব কাজ ছেড়ে এই কা কলকাতার নানা জায়গায় অনেকগুলি স্কুল খুললেন এবং একটি সভা স্থাপন করে স্কুলপাঠ্য বইগুলি প্রকাশ করাতে লাগলেন । তাঁর এই মহান কাজের কথা স্মরণ রেখে বলা যায় হেয়ার সাহেব ছিলেন বাংলাদেশের ইংরেজি শিক্ষার পিতা । -ডেভিড হেয়ার 


৩. হেয়ার সাহেবের ভালোবাসা যে বৃথা যায়নি তা তাঁর মৃত্যুর পরবর্তী ঘটনা উল্লেখ করে বুঝিয়ে দাও । 

উঃ । ভালোবাসা কখনো বৃথা যায় না , হেয়ার সাহেব যেমন মানুষকে ভালোবেসেছিলেন , মানুষও হেয়ার সাহেবকে আপন করে নিয়েছিল । যেদিন হেয়ার সাহেবের মৃতদেহ কবরে দেওয়া হয় , সেদিন ভয়ানক প্রাকৃতিক দুর্যোগ হয়েছিল । তবুও তা উপেক্ষা করে শহরের সব ছোটো - বড়ো ভদ্রলোকেরা এসেছিলেন । সেদিন যাঁরা উপস্থিত ছিলেন তাঁদের বক্তব্য অনুযায়ী হেয়ারের মৃতদেহের সঙ্গে অন্তত দশ হাজার স্কুলের বালক ও বাঙালি ভদ্রলোক এসেছিলেন । হেয়ার সাহেব ইহলোকে নাই এই সংবাদ ছড়িয়ে পড়ায় অনেক বাঙালি ঘরের স্ত্রীলোকেরা কেঁদে ফেলেছিলেন । অনেক বালক এমনভাবে ছিল যেন তাদের মৃতাশৌচ হয়েছে । 


৪. হেয়ার সাহেব চন্দ্রশেখর দেব নামক বালকটিকে কীভাবে বাড়িতে পৌঁছে দেন সেই ঘটনাটি লেখো । 

উঃ । একবার চন্দ্রশেখর দেব নামে একটি বালক লালদিঘির ধারে হেয়ার সাহেবের বাড়িতে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে এসে মুষলধারে বৃষ্টির জন্য আটকে পড়লে হেয়ার সাহেব তাকে নিয়ে প্রকাণ্ড একটা লাঠি হাতে বাড়ি পৌঁছে দিতে চান । বৌবাজারের মোড়ে এসে চন্দ্রশেখর সাহেবকে ফিরে যাওয়ার অনুরোধ করল । সাহেব বললে , ' চল পটলডাঙার মোড় পর্যন্ত তোমাকে পৌঁছে দিয়ে আসি ' । সেখান থেকে চন্দ্রশেখর তার বাসাতে ফিরে গেলেও ডেভিড হেয়ার নিশ্চিন্ত হতে পারেননি । পুনরায় তিনি তার বাড়ি গিয়ে স্বচক্ষে দেখে এলেন , চন্দ্রশেখর বাড়ি ফিরেছে কিনা ? এরপর তার বাড়ির লোকের সঙ্গে কথা বলে চন্দ্রশেখরের ফেরার খবর জেনে সন্তুষ্টমনে হেয়ার সাহেব ঘরে ফিরলেন । 


 ৫. স্ত্রীশিক্ষা বিস্তারে বেথুন সাহেবের অবদান লেখো । 

উঃ । এদেশের রমণীদের দুরবস্থা দেখে বেথুনসাহেব বড়ো দুঃখ পেতেন । এদেশে যাতে স্ত্রী শিক্ষার প্রসার ঘটে তাই কলিকাতায় মেয়েদের জন্য তিনি স্কুল খুলেছিলেন । মেয়েদের তিনি নিজের পিঠে চড়িয়ে তাদের সঙ্গে খেলতেন । মেয়েদের নিজের গাড়িতে করে বড়ো বড়ো সাহেবদের বাড়ি নিয়ে যেতেন । তারা একটু পড়তে পারলেই তিনি যেন আকাশের চাঁদ হাতে পেতেন । মেয়েদের তিনি নানা উপহার , কাপড় ও অলংকার দিতেন । মৃত্যুকালে তিনি নিজের প্রতিষ্ঠিত স্কুলের জন্য অনেক হাজার টাকা রেখে গিয়েছিলেন ।

No comments:

Post a Comment