ঘুরে দাঁড়াও
প্রণবেন্দু দাশগুপ্ত
👉(সুভা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রশ্ন উত্তর)
কবি - পরিচিতিঃ
কবি প্রণবেন্দু দাশগুপ্ত আধুনিক কবিদের মধ্যে অন্যতম । ১৯৩৩ সালে তিনি জন্মগ্রহণ করেন । তিনি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনামূলক সাহিত্য বিভাগের অধ্যাপক ছিলেন । নানান ধরনের কবিতা তিনি রচনা করেছিলেন । এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ‘ এক ঋতু ’ , ‘ সদর স্ট্রীটের বারান্দা ' , ‘ নিজস্ব ঘুড়ির প্রতি ’ , ‘ হাওয়া স্পর্শ করো ' প্রভৃতি । শুধু কাব্যগ্রন্থ রচনা নয় , অধ্যাপনার পাশাপাশি তিনি বিভিন্ন পত্রপত্রিকার জন্য কলম ধরেছিলেন । তিনি ' ‘ অলিন্দ ' নামে একটি কবিতা পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন । দীর্ঘদিন সুনামের সঙ্গে অধ্যাপনা করেছেন । ২০০৭ সালে এই পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে কবি পরলোকগমন করেন ।
সারমর্মঃ
ঘুরে দাঁড়াও ’ কবিতাটিতে কবি প্রণবেন্দু দাশগুপ্ত যে মানুষ প্রতি মুহূর্তে পিছিয়ে পড়ছে তাকে ঘুরে দাঁড়াতে পরামর্শ দিয়েছেন । নিজের স্থান বলে একটা কথা আছে । যেটাকে ধরে রাখতে হয় । হয়তো প্রয়োজনে কিছু বদল ঘটাতে হয় । কিন্তু নিজের স্থান থেকে সরলে চলবে না । তাই কবি বলেছেন সরতে সরতে আর কতদূরে কোথায় সরবে ? একসময় ঘুরে দাঁড়াতে হবেই । নতুবা বিন্দুর মতো মিলিয়ে যেতে হবে । ছোট্ট একটা তুক করে বাইরেটা পালটে দিতে হবে । পরিবর্তন আনতে হবে । সাইকেল - রিকশোগুলো চলে যাক বনে - বনান্তরে , কাদা - ভরতি রাস্তা উঠে পড়ুক ছায়াপথের কাছাকাছি । গাছগুলো নদীর জলে স্নান করে আসুক । সুন্দর পরিচ্ছন্ন শহরগুলি নতুন করে জেগে উঠুক । যেকোনো মূল্যে বদল তোমাকে আনতেই হবে । এছাড়া দ্বিতীয় কোনো পথ খোলা নেই । পরিস্থিতি যদি বদলে দিতে না পারো তাহলে তাঁর মৃত্যু অবধারিত । দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মরতে হবে । যে যেখানে আছে সেখান থেকেই সবকিছুকে টেনে আনতে হবে না হলে সরতে সরতে সরতে একেবারে বিন্দুর মতো মিলিয়ে যেতে হবে , এখন সময় এসেছে ঘুরে দাঁড়াতে হবে ।
নামকরণঃ
সাহিত্যে নামকরণ একটি বিশেষ ব্যাপার । নামকরণের মধ্যে দিয়ে কবিতার মূল বক্তব্য ফুটে ওঠে । কবিতার নামকরণ করা হয়েছে ‘ ঘুরে দাঁড়াও ' । কবি সমস্ত মানুষকে ঘুরে দাঁড়াতে ডাক দিয়েছেন , যারা আজকের দিনে ক্রমশ দূরে দূরে সরে যাচ্ছে । কবি চান আজকের প্রজন্ম যেমন করেই হোক ঘুরে দাঁড়াক , পরিবর্তন ঘটাক সব অবক্ষয়ের । কবির ভাষায় সাইকেল - রিকশাগুলো চলে যাক বনান্তরে , কাদা ভরতি রাস্তা উঠুক পড়ুক ছায়া পথের কাছাকাছি , গাছগুলো নদীর জলে স্নান করে আসুক , জেগে উঠুক শহরগুলি । যা কিছু জীর্ণ তা বাতিল হোক , আসুক নতুন । তার স্পর্শে সবকিছু আলোকিত হয়ে উঠুক । যত বেশি ছেড়ে দেবে তত পিছনে সরে যেতে হবে । একটা সময় আসবে যখন অস্তিত্ব সংকট দেখা দেবে । তাই এখনই সাহায্যের হাত বাড়াতে হবে । মার খেতে খেতে দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে তাই ঘুরে দাঁড়ানো চাই । কবির তাই ডাক ‘ ঘুরে দাঁড়াও ' । কবিতার নামকরণটি এখানে বিষয়কেন্দ্রিক এবং সুপ্রযুক্ত হয়েছে ।
১.১ প্রণবেন্দু দাশগুপ্ত সম্পাদিত কবিতা পত্রিকাটির নাম কী ?
উঃ । প্রণবেন্দুদাশগুপ্ত সম্পাদিত কবিতা পত্রিকাটির নাম ‘ অলিন্দ ’ ।
১.২ তাঁর রচিত দুটি কাব্যগ্রন্থের নাম লেখো ।
উঃ । তাঁর রচিত দুটি কাব্যগ্রন্থ হলো — ‘ এক ঋতু ’ এবং ‘ সদর স্ট্রিটের বারান্দা ' ইত্যাদি ।
২. নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর নিজের ভাষায় লেখো :
২.১ কবিতায় কবি কোন্ আহ্বান জানিয়েছেন ?
উঃ । কবি বারে বারে সরে না গিয়ে সকলকে ঘুরে দাঁড়াবার আহ্বান জানিয়েছেন । তিনি বলেছেন নিজেকে বদলাতে হবে এবং হাত বাড়াতে হবে । যেখানেই রয়েছ সেখান থেকেই সবকিছুকে টেনে আনতে হবে ।
২.২ ‘ ছোট্ট একটা তুক করে বাইরেটা পাল্টে দাও ' — ' বাইরে'টায় কী ধরনের বদল ঘটবে বলে কৰি আশা করেন । সেই কাঙ্ক্ষিত বদল ঘটলে জীবন কীভাবে অন্যরকম হবে বলে কবি মনে করেন ?
উঃ । ঘুরে দাঁড়াও কবিতাটিতে কবি মানুষকে ঘুরে দাঁড়াতে বলেছেন । তিনি বলেছেন বাইরের পৃথিবীটাকে বদলে দিতে হবে । কবির ভাষায় , সাইকেল - রিকশোগুলো শিস দিয়ে চলে যাবে বনে - বনান্তরে , কাদা ভরতি রাস্তা উঠে পড়বে ছায়া পথের কাছাকাছি আর গাছগুলো নদীর জলে স্নান করে আসবে এবং সা - রা - রা - রা করে উপাত্তের শহরতলি উঠবে জেগে । এই আকাঙ্ক্ষিত বদল ঘটলে অবশ্যই জীবন অন্যরকম হবে এবং একঘেয়েমি থেকে মুক্ত হওয়া মানুষ এক বৈচিত্রের সন্ধান পাবে । নতুবা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মরতে হবে এবং বিন্দুর মতো মিলিয়ে যেতে হবে ।
২.৩ সরতে সরতে সরতে / তুমি আর কোথায় সরবে ? ' — কবি কোথা থেকে এই ‘ সরণ ’ লক্ষ করেছেন ? এক্ষেত্রে তাঁর দেওয়া পরামর্শটি কী ?
উঃ । কবি এই চলমান পৃথিবীর মাঝে দাঁড়িয়ে জীবন থেকে উপলব্ধি করে এই ‘ সরণ ’ লক্ষ করেছেন । এক্ষেত্রে জীবনে যে অবক্ষয় শুরু হয়েছে তাতে লেখকের পরামর্শ যেমন করেই হোক ঘুরে দাঁড়াতে হবে । হাত বাড়িয়ে দিতে হবে আর নিজের দিকে সব কিছুকে টেনে আনতে হবে । শুধু ঘুরে দাঁড়ালেই হবে না চারপাশটাও বদলে দিতে হবে ।
২.৪ ‘ এবার ঘুরে দাঁড়াও । ' আর ‘ এখন ঘুরে দাঁড়াও ।'— পত্তি দুটিতে ‘ এবার ’ আর ‘ এখন ' শব্দ দুটির প্রয়োগের সার্থকতা বুঝিয়ে দাও ।
উঃ । মানুষ ভাগ্যের হাতে মার খেতে খেতে ক্রমশ পিছন দিকে সরে যাচ্ছে , সরতে সরতে সে কোথায় যাবে ? যাবারও তো একটা শেষ আছে , তাই প্রথমবার কবি বলেছেন ‘ এবার ঘুরে দাঁড়াও । মানুষকে পরিবর্তন আনতেই হবে , তাই দেরি করার সময় নেই । যেখানে যারা আছে সবকিছুই সেখানে টেনে আনতে হবে । এখন সময় এসেছে , তাই কবি ‘ এখন ঘুরে দাঁড়াও ’ বাক্যটি ব্যবহার করেছেন । কবি ঘুরে দাঁড়ানোর বিষয়টিতে জোর দেবার জন্যই ‘ এবার ’ ও ‘ এখন ’ এই দুটি সময়বাচক শব্দকে সার্থকভাবে প্রয়োগ করেছেন ।
৩. নির্দেশ অনুসারে বাক্য পরিবর্তন করোঃ
৩.১ তুমি আর কোথায় সরবে ? ( প্রশ্ন পরিহার করো )
উঃ । তোমার আর সরবার কোনো জায়গা নেই ।
৩.২ এবার ঘুরে দাঁড়াও । ( না - সূচক বাক্যে )
উঃ । এবার সরে যেও না ।
৩.৩ ভূমি যদি বদলে দিতে না পারো , তাহলে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মরতে হবে । ( সরল বাক্যে )
উঃ । বদলে দিতে না পারলে তোমায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মরতে হবে ।
৩.৪ নইলে সরতে সরতে তুমি বিন্দুর মতো মিলিয়ে যাবে । ( প্রশ্নবোধক বাক্যে )
উঃ । নইলে কি সরতে সরতে কি তুমি বিন্দুর মতো মিলিয়ে যাবে না ?
৩.৫ গাছগুলো নদীর জলে স্নান করে আসুক ( নির্দেশক বাক্যে )
উঃ । গাছগুলোর নদীর জলে স্নান করবে ।
৪. ব্যাসবাক্যসহ সমাসের নাম লেখো :
বনান্তর , ছায়াপথ , উপান্ত , সাইকেল - রিকশো । উঃ । বনান্তর — অন্য বন ( নিত্য সমাস ) ।
ছায়াপথ – ছায়াঘেরা পথ– ( মধ্যপদলোপী কর্মধারায় সমাস ) ।
উপাত্ত – উপ - অন্ত ( অব্যয়ীভাব সমাস ) ।
সাইকেল রিকশো – সাইকেল ও রিকশো— ( দ্বন্দ্ব সমাস ) ।
অতি - সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর
১. ‘ সরতে সরতে ' কথাটি কোন্ কবিতার অংশ , কার লেখা ? কোথায় সরবে ?
উঃ । এই কথাটি ‘ ঘুরে দাঁড়াও ' কবিতার অংশ , কবি হলেন প্রণবেন্দু দাশগুপ্ত । জীবনের চলার পথ থেকে সরবে ।
২. গাছগুলো কী করবে ?
উঃ । গাছগুলো নদীর জলে স্নান করে আসবে।
৩. সাইকেল - রিকশোগুলো কেমনভাবে কোথায় যাবে ?
উঃ । সাইকেল - রিকশোগুলো শিস দিয়ে বনে বনাত্তরে চলে যাবে ।
৪. ' বাইরেটা পালটে দেবার জন্য কবি কী করতে বলেছেন ?
উঃ । ' বাইরেটা পালটে দেবার জন্য করি মানুষকে ‘ তুক ' করতে বলেছেন । -
৫. বদল করতে না পারলে কী হবে ?
উঃ । বদল করতে না পারলে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মরতে হবে ।
৬. সরতে সরতে কী অবস্থা হবে ?
উঃ । সরতে সরতে শেষে বিন্দুর মতো শূন্যে মিলিয়ে যেতে হবে ।
৭. কেমন করে বদল করতে হবে ?
উঃ । সাহায্যের হাত বাড়াতে হবে , যেখানে যে আছে সেখান থেকেই সবকিছুকে টেনে আনতে হবে তবেই বদল হবে ।
৮. শহরতলি কেমনভাবে জেগে উঠবে ?
উঃ । সা - রা - রা - রা করে উপাত্তের শহরতলি জেগে উঠবে ।
৯. কাদা ভরতি রাস্তা কোথায় উঠবে ?
উঃ । কাদা ভরতি রাস্তা উঠে পড়বে ছায়াপথের কাছাকাছি ।
১০. ‘ ঘুরে দাঁড়াও ' কথাটি কবিতায় কতবার ব্যবহার করা হয়েছে ?
উঃ । ঘুরে দাঁড়াও কথাটি কবিতায় দু - বার ব্যবহার করা হয়েছে ।
১১। গাছগুলো নদীর জলে স্নান করবে কেন ?
উঃ । দূষণের ফলে গাছগুলো মলিন ও বিবর্ণ হয়ে পড়েছে । নদীর নির্মল জলে স্নান করলে গাছেদের সেই মলিনতা ঘুরে যাবে । তাই গাছগুলো নদীর জলে স্নান করে আসবে ।
১২. ‘ তুক করে ’ কথাটির দ্বারা কবি কী বোঝাতে চেয়েছেন ?
উঃ । ‘ তুক ’ কথাটির অর্থ হল জাদুমন্ত্র । কবি মানুষতে তুক করতে বলেছেন । কিন্তু এখানে তিনি কোনো জাদুমন্ত্র বা ম্যাজিক করার জন্য কথাটি ব্যবহার করেননি । তিনি মনে করেছেন মানুষের মধ্যে থাকা সদিচ্ছাই হল এক আশ্চর্য ক্ষমতা সেই ক্ষমতা হল তুক । তাই তিনি সেই সদিচ্ছার ক্ষমতা দিয়ে বাইরেটা বদলে দেবার কথা বলেছেন ।
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন ও উত্তর
১. বাক্য পরিবর্তন করো ।
( ক ) ছোট্ট একটা ভুক করো সব পালটে দাও । ( যৌগিক বাক্যে )
উঃ । ছোট্ট একটা তুক করো এবং পালটে দাও ।
( খ ) এবার ঘুরে দাঁড়াও । ( যৌগিক বাক্যে )
উঃ । এবার কিন্তু ঘুরে দাঁড়াও ।
( গ ) তুমি যদি বদলে দিতে না পারো । ( সরল বাক্যে )
উঃ । তুমি বদলে দিতে না পারো ।
( ঘ ) এখন হাত বাড়াও , ধরো । ( যৌগিক বাক্যে )
উঃ । এখনও হাত বাড়াও এবং ধরো ।
( ঙ ) তুমি বিন্দুর মতো মিলিয়ে যাবে । ( জটিল বাক্যে )
উঃ । যদিও তুমি বিন্দুর মতো মিলিয়ে যাবে ।
( চ ) নইলে সরতে সরতে সরতে তুমি বিন্দুর মতো মিলিয়ে যাবে । ( যৌগিক বাক্যে )
উঃ । নইলে কিন্তু সরতে সরতে সরতে তুমি বিন্দুর মতো মিলিয়ে যাবে ।
( ছ ) এখন ঘুরে দাঁড়াও । ( ভাব বাচ্যে )
উঃ । এখন ঘুরে দাঁড়ানো হোক ।
( জ ) যেখানে আছো , সেখান থেকেই সবকিছুকে টেনে আনো । ( যৌগিক বাক্যে )
উঃ । যেখানে আছো সেখান কিন্তু সবকিছুকে টেনে আনো ।
( ঝ ) সারা - রা করে জেগে উঠুক উপান্তের শহরতলি । ( জটিল বাক্যে )
উঃ । সা - রা - রা করে যেন জেগে উঠুক উপাত্তের শহরতলি ।
২. পদ পরিবর্তন করো ।
উঃ । স্নান - স্নাত ।
জেগে - জাগরণ ।
মরতে - মরা ।
মিলিয়ে - মিল ।
বদলে - বদল ।
No comments:
Post a Comment