👉(প্রশ্ন উত্তর আষাঢ়ের কোনো ভেজা পথে )
কবি - পরিচিতিঃ
রবীন্দ্র পরবর্তী বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি জীবনানন্দ দাশের জন্ম হয় ১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দে অধুনা বাংলাদেশের বরিশালে । তাঁর মা কুসুমকুমারী দেবী ছিলেন একজন কবি । তাঁর কবি জীবনের সূত্রপাত দেশবন্ধুর মৃত্যুতে তাঁর লেখা ‘ দেশবন্ধুর প্রয়াণে ’ যা বঙ্গবাসী পত্রিকায় ছাপা হয় । তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ ' বরাপালক ' ১৯২৭ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত হয় । কলকাতার বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় তাঁর রচিত কবিতা নিয়মিত ছাপা হতো । এইসব পত্রপত্রিকার মধ্যে কালিকলম , কল্লোল , প্রগতি প্রধান ছিল । তাঁর সবচেয়ে বিতর্কিত কবিতা ‘ ক্যাম্পে ' প্রকাশিত হয় ‘ পরিচয় ’ পত্রিকায় । ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দে তাঁর বিখ্যাত কবিতা ' বনলতা সেন প্রকাশ পায় । তাঁর বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থের মধ্যে ‘ রূপসী বাংলা ’ যা তাঁর মৃত্যুর পর প্রকাশ পায় । তাছাড়া ‘ সাতটি তারার তিমির ’ , ‘ ধূসর পাণ্ডুলিপি ( ১ ) ও ( ২ ) ’ , ‘ বেলা - অবেলা কালবেলা ’ উল্লেখযোগ্য । এছাড়া ‘ মাল্যবান ’ , ‘ সুতীর্থ ’ তাঁর লেখা গদ্য । ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দে এক ট্রাম দুর্ঘটনায় কবির জীবনাবসান হয় । পাঠ্য কবিতাটি তাঁর ‘ রূপসী বাংলা ’ কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে ।
সারমর্মঃ
কবি জীবনানন্দ দাশ পাড়াগাঁর দ্বিপ্রহরে বেলাকে ভালোবাসেন । কবির মতে , পাড়াগাঁয়ের দুপুরে যেন স্বপ্নের গন্ধ লেগে থাকে । স্বপ্নের সেই গল্পের কী কাহিনি , কী রূপ তা কবি ছাড়া কেউ জানে না । কেবলমাত্র জানে প্রান্তরের শঙ্খচিল কারণ তাদের কাছেই কবির হৃদয় এই জন্মেই নয় , বহু জন্ম ধরে নানা কথা শিখে এসেছে । স্বপ্নের সেই বেদনা ছড়িয়ে আছে শুকনো পাতা , শালিকের স্বর এবং ভাঙা মাঠের মধ্যে । সেই বেদনা ছড়িয়ে আছে যে মেয়েটি নক্শাপেড়ে শাড়ি পড়ে রৌদ্রের মধ্যে ছুটে যায় । কবির বেদনা ছড়িয়ে আছে তাঁর আশেপাশে থাকা সব জিনিসের ভিতর । কবি দেখেন নিষ্পন্দ বুনো চালতার গাছ , যার শাখাগুলি জলসিড়ি নদীর পাশের ঘাসে নুয়ে রয়েছে । নদীর জলে তার ছায়া পড়ে আছে । কবি সেই বুনো চালতার গাছটিকে দেখেন । কবি আরো দেখেন নদীর জ্বলে একটা ডিঙি নৌকো ভাসছে । নৌকোটিকে কেউ হিজল গাছের ডালে বেঁধে রেখে গেছে । সেই নৌকোর খোঁজে কোনোদিন তার মালিক আসেনি । সেই নৌকো চিরকাল এমনই যেন বাঁধা হয়ে রয়েছে । জলে পড়ে থাকতে থাকতে নৌকোটার কাঠ ফোঁপরা হয়ে ঝাঁঝরা হয়ে গেছে । তবুও কবির কাছে সেই ডিঙি নৌকো বড়োই আদরের । কবি তাই দুপুরের সেই রৌদ্র ভেজা সময়ে যেন বেদনার গন্ধ পান । কবির কাছে তা বড়োই প্রিয় । সেই বেদনা যা আকাশের তলে কেঁদে কেঁদে ভাসাচ্ছে তা কবির অত্যন্ত আপনার , অত্যন্ত ভালোবাসার , এবং একান্ত নিজস্ব বলে মনে হয় ।
নামকরণঃ
প্রসঙ্গত বলা যায় , কবিতার এই নামকরণ কবির দেওয়া নয় । কবিতাটি ‘ রূপসী বাংলা ’ শীর্ষক কাব্যগ্রন্থের একটি কবিতা । যা ‘ ধূসর পাণ্ডুলিপি'র শেষ পর্যায়ের কবিতা । সমগ্র কাব্যগ্রন্থটিতে কবি রাংলাকে নারীরূপে দেখেছেন এবং তাঁর কবিতাগুলি তার আধাররূপেই রচিত । তাই ওই কাব্যগ্রন্থের কোনো কবিতার কোনো নামকরণ নেই । আছে কেবল কবিতাটি অর্থাৎ নামহীন অবয়ব । কবির কবিতাগুলির মধ্যে সেই অস্পষ্ট অবয়বের ছাপ পাওয়া যায় । এই কবিতাটিও তার ব্যতিক্রম হয়নি । এখানেও সেই অস্পষ্টতার ছাপ চোখে পড়ে । বাংলার প্রতি চিরকালীন ভালোবাসার কথাই তিনি সর্বদা বলতে চেয়েছেন । আলোচ্য কবিতাটিতে তাঁর গ্রামের দুপুরের একটি চিত্র পাঠকের সামনে তিনি তুলে ধরেছেন । তাঁর বলার মধ্যে ভাই বেদনার ছোঁয়া রয়েছে , রয়েছে যেন শূন্যতার আভাস । গাছের শুকনো পাতা , শালিখের ডাক কিংবা নকশাপাড় শাড়িপরা কোনো মেয়ে যখন রৌদ্রের ভেতর হলুদ পাতার মতো সরে যায় তখন সেই বেদনার আভাস দিয়ে যায় । সব কিছু শূন্য , নিঃসঙ্গ করে দেবার আভাস পাওয়া যায় । নিঃসঙ্গ দুপুর যেন অসীম আকাশের নীচে কেঁদে কেঁদে ভাসছে । সমগ্র কবিতাটি জুড়ে এই বিপ্রাহরিক নিঃসঙ্গতা কবিতাটির আলোচ্য বিষয় । কবির চেতনায় জাগ্রত তাঁর পাড়াগাঁর • বিহর । তাই কবিতার নামকরণ যথাযথ হয়েছে বলেই আমার মনে হয় ।
- ১.১ জীবনানন্দ দাশের লেখা দুটি কবিতার বইয়ের নাম লেখো ।
উ:। জীবনানন্দ দাশের লেখা দুটি বই হলো — ' বনলতা সেন ' এবং ' সাতটি তারার তিমির ' ।
১.২ তাঁর লেখা প্রথম কাব্যগ্রন্থের নাম কী ?
উঃ । জীবনানন্দ দাশের লেখা প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘ ঝরাপালক ' ।
২. নীচের প্রশ্নগুলির একটি বাক্যে উত্তর দাও :
২.১ ‘ দু - পহর ' শব্দের অর্থ কী ?
উঃ । ' দু - পহর ' শব্দের অর্থ দ্বি - প্রহর ।
২.২ কেবল প্রান্তর জানে তাহা ' — ‘ প্রান্তর ' কী জানে ?
উঃ । কবির হৃদয়ে কোন গল্প কাহিনি ও অচেনা স্বপ্ন ঘর বেঁধেছে তা ‘ প্রান্তর ’ জানে ।
২.৩ ' তাহাদের কাছে যেন এ জনমে নয় — যেন ঢের যুগ ধরে কথা শিখিয়াছে এ হৃদয় ’— কাদের কথা এখানে বলা হয়েছে ?
উঃ । এখানে কবির পাড়াগাঁয়ের প্রান্তর ও প্রান্তরের শঙ্খচিলের কথা বলা হয়েছে ।
২.৪ ' জলসিড়িটির পাশে ঘাসে ......— কী দেখা যায় ?
উঃ । জলসিড়িটির পাশে ঘাসে দেখা যায় বহুদিনের বুনো চালতার শাখাগুলি ছন্দহীন ভাবে নুয়ে আছে ।
২.৫ জলে তার মুখখানা দেখা যায় ...... জ্বলে কার মুখ দেখা যায় ?
উঃ । জলে বুনো চালতা গাছটিকে দেখা যায় ।
২.৬ ডিঙিও ভাসিছে কার জলে .... — ডিভিটি কেমন ?
উঃ । ডিভিটি বহুদিনের একটি ঝাঁঝরা ফোঁপরা ডিঙি ।
২.৭ ডিডিটি কোথায় বাঁধা রয়েছে ?
উঃ । ডিঙিটি জলসিড়ি নদীর পাশে হিজল গাছে বাঁধা আছে ।
৩. নীচের প্রশ্নগুলির কয়েকটি বাক্যে উত্তর দাও :
৩.১ পাড়াগাঁয়ের দ্বিপ্রহরকে কবি ভালোবাসেন কেন ?
উঃ । কবি জীবনানন্দ বাংলার প্রকৃতির সঙ্গে এক নাড়ির টান খুঁজে পান । পাড়াগাঁয়ের রৌদ্রস্নাত দ্বিপ্রহরটি কবির অত্যন্ত প্রিয় । তার কারণ পাড়াগাঁয়ের দ্বিপ্রহরে কবি যেন তাঁর মনের গল্প , কাহিনির স্বপ্নের সন্ধান পান । ওই নির্জন দুপুরে কবি যেন প্রান্তরের কাছে তাঁর হৃদয়ের কথা শুনতে পান , স্বপ্নের সন্ধান পান । তাই দ্বিপ্রহরটিকে কবি ভালোবাসেন ।
৩.২ ' স্বপ্নে যে - বেদনা আছে — কবির স্বপ্নে কেন বেদনার অনুভূতি ?
উঃ । কবির হৃদয়ে জমা থাকা কষ্ট যেন তিনি পাড়াগাঁয়ের দুপুরের সঙ্গে ভাগ করে নিতে চান । কবির জীবনে পাড়াগাঁর দুপুরের ছবিগুলি অমলিন হয়ে আছে । তিনি যে স্বপ্ন দেখেন তা তাঁর মতে সত্যি হওয়া দুষ্কর । সেখানে রয়েছে গল্প ও কাহিনি । সেই গল্প বা কাহিনি যা বহু জন্মের পারের সুদূর ও পুরাতন । সেই স্বপ্নের কথা কবির মনে জাগ্রত হয় । কিন্তু তা অস্পষ্ট , তাই কবি তাকে ভালোভাবে দেখতে পান না , বুঝতে পারেন না তাই তিনি বেদনাহত হন । তাঁর সেই বেদনাহত ভাবনা স্বপ্নের মধ্যে পরিস্ফুট হয় । তাই কবির স্বপ্নে বেদনার অনুভূতি ।
৩.৩ প্রকৃতির কেমন ছবি কবিতাটিতে ফুটে উঠেছে তা আলোচনা করো ।
উঃ । জীবনানন্দ দাশ গ্রাম বাংলার অপরূপ সৌন্দর্যের কথা তাঁর এই কবিতায় ব্যস্ত করেছেন । গ্রাম বাংলার দুপুরের রৌধে কীসের যেন গন্ধ লেগে থাকে । তিনি যেন এই জন্মের নয় , বহু জন্মের পুরোনো কোনো কথা বলছেন । তাঁর সেই পুরোনো স্বপ্নের কথা কেউ জানে না জানে কেবল প্রাত্তর আর জানে প্রান্তরের শঙ্খচিল । অর্থাৎ কবির চোখে রৌদ্রের মধ্যেও জমাট হয়ে রয়েছে এক বেদনা । কবি যেন সেই বেদনার ছবি দেখতে পাচ্ছেন শুষ্ক পত্র , শালিকের কন্ঠস্বর , ভাঙা মঠ আর নকশাপেড়ে শাড়ি পরা মেয়েটির মধ্যে । বুনো চালতার শাখাগুলি বহুদিন নুয়ে আছে জলসিড়ি নদীর পাশে ঘাসের মধ্যে । জলে ওই গাছের ছায়া পড়ে আছে ।
একটা ঝাঁঝরা ফোঁপরা ডিঙি নৌকো কেউ হিজল গাছের ডালে বেঁধে রেখেছে । ডিঙি নৌকোটির মালিক নেই । সেটি একাই পড়ে রয়েছে । পাড়াগাঁয়ের বিগ্রাহরিক জীবনের শান্তশিষ্ট এক মায়াময় , রূপ কবির চোখে আজ ধরা পড়েছে । সেই চিত্র দেখে কবির মনে হচ্ছে যেন দুপুরের রৌদ্রে অনেকদিনের পুরোনো ভিজে বেদনার গন্ধ আছে । কোনো সুদুর অতীতের এই গন্ধ যেন কবিকে অজানা প্রাচীন কালের কথা বলছে । এইভাবে আলোচ্য কবিতায় দ্বিপ্রহরের ক্লান্ত ও বিষণ্ণ প্রকৃতির এক পরিচয় ফুটে উঠেছে ।
৩.৪ ' কেঁদে কেঁদে ভাসিতেছে আকাশের তলে ' — কবির এমন মনে হওয়ার কারণ কী বলে তোমার মনে হয় ?
উঃ । কবির মনে হয়েছে সমস্ত বিশ্বপ্রকৃতি যেন কেঁদে কেঁদে কবির কাছে আকুতি করছে । কবি দুপুরের বেদনার ছবি তাঁর কবিতায় ব্যক্ত করতে চেয়েছেন । কবি এখানে আকাশের তলে দুপুরের রোদকে দেখে তার মধ্যে বেদনার গন্ধ অনুভব করেছেন । আসলে পাড়াগাঁর দ্বিপ্রহরে এক বিষণ্ণ প্রকৃতিকে কবি দেখেছেন । তিনি দেখেছেন শুকনো ঝরা পাতা , শালিকের স্বর , ভাঙা মঠ , নকশা পাড়ের মেয়েটির হলুদ পাতার মতো সরে যাওয়া আর ঝাঁঝরা হয়ে যাওয়া ডিঙি নৌকো । কবি বোঝাতে চেয়েছেন আসলে প্রতিদিনই প্রকৃতি বিনষ্ট হয়ে চলেছে । এই নষ্ট হয়ে যাওয়া পৃথিবীর কান্নার ছবি সর্বত্র ছড়িয়ে আছে । তাই প্রতি মুহূর্তে ক্ষয় হওয়া প্রকৃতি আকাশের নীচে যেন কেঁদে চলেছে ।
৪. নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর নিজের ভাষায় লেখো :
৪.১ ‘ পাড়াগাঁর দু - পহর ভালোবাসি ... শীর্ষক কবিতাটি ‘ রূপসী বাংলা ’ কাব্যগ্রন্থের কতসংখ্যক কবিতা ? ' পাড়াগাঁর দু - পহর ভালোবাসি ’ কবিতায় কবি জীবনানন্দের কবি মানসিকতার পরিচয় কীভাবে ধরা দিয়েছে , তা বুঝিয়ে দাও ।
উঃ । পাড়াগাঁর দু - পহর ভালোবাসি ' শীর্ষক কবিতাটি ‘ রূপসী বাংলা ' কাব্যগ্রন্থের পঁচিশ সংখ্যক কবিতা । কবি জীবনানন্দ দাশ তাঁর এই কবিতায় গ্রাম বাংলার একটি চিত্র সুচারুভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন । কবি তাঁর এই কবিতায় পাড়াগাঁয়ের দুপুরবেলার একটি অন্যরকম ছবি আমাদের সামনে তুলে ধরেছেন । তিনি দেখিয়েছেন দুপুরবেলা পৃথিবীর সব কিছু শান্ত থাকে , প্রকৃতি যেন একটা অন্য জগতে বিচরণ করে । সেখানে কোনো মানুষ নেই প্রকৃতিই সেখানে বিদ্যমান । সাধারণত জীবনের ফেলে আসা দিনগুলোর স্মৃতি নির্জনতার মাঝেই মানুষের মনকে নাড়া দেয় , বেদনার্ত করে তোলে । কবির মনের যে বেদনা তা যেন আমরা প্রকৃতির মধ্যে দেখতে পাই । কবি ভালোবাসেন পাড়াগাঁয়ের দুপুর । তাঁর হৃদয়ে যে স্বপ্ন রয়েছে তার কথা জানে এই দুপুর , দুপুরের প্রান্তর এবং প্রান্তরে উড়ে চলা শঙ্খচিল । তাদের কাছে কবি যেন এই জন্ম নয় বহু দুর থেকে আগত জন্মের কথা জানতে পারেন ।
কবি যেন শুষ্ক পাতা , শালিখের ডাক আর ভাঙা মঠের মধ্যে তাঁর সেই পুরোনো স্বপ্নকে খুঁজে পান , যে স্বপ্নে বেদনা আছে । কবির সেই নকশাপেড়ে শাড়ি পরা বালিকা যে রৌদ্রের ভিতর দৌড়ে পালায় তার কথা মনে পড়ে । তিনি সেই মেয়েটির প্রতি আকর্ষণ বোধ করেন । মেয়েটি যেন বহু পুরাতন স্মৃতির মধ্যে বেদনার মতো কবির চোখের সামনে থেকে সরে যায় । চোখের সামনে নুয়ে পড়া বুনো চালতার ডাল যার প্রতিবিম্ব জলে দেখা যায় কিংবা সেই ডিঙি নৌকো যা হিজল গাছে বাঁধা । যার কোনো মাঝি নেই , মালিক নেই , অব্যবহারে সেটি জীর্ণ হয়ে গেছে । এইসব কিছুর মধ্যে কবি বেদনা খুঁজে পান । দুপুরের ঝিমিয়ে পড়া রোদে কবি যেন তাঁর দূরাগত স্বপ্নের সন্ধান পান । এমন স্বপ্ন যাতে রয়েছে বেদনার ছোঁয়া । এই সব দৃশ্য কবিই শুধুমাত্র হৃদয় দিয়ে অনুভব করেন আর তা লেখনীর মধ্যে দিয়ে পাঠকের মনে কাব্য ও ছন্দের সপ্তার ঘটায় ।
এভাবেই কবিতায় কবি মানসিকতার পরিচয় পাওয়া যায় ।
৪.২ কবিতাটির গঠন - প্রকৌশল আলোচনা করো ।
উঃ । জীবনানন্দ দাশ আধুনিক বাংলা কবিতার অন্যতম দিশারী । রবীন্দ্রনাথের পরবর্তী যুগের এই কবিকে যুগসন্ধিক্ষণের কবিরূপে চিহ্নিত করা হয় । কবি জীবনানন্দ দাশের লেখা আলোচ্য কবিতাটি একটি আধুনিক গদ্যধর্মী কবিতা । কবিতায় কবি গ্রামের বিপ্রাহরিক চিত্রটি কোনো রূপকল্প ছাড়াই সহজ ভঙ্গিতে ব্যক্ত করেছেন । কবি তাঁর কবিতায় প্রতিটি পঙ্ক্তিতে তাঁর মনের বেদনার কথা গদ্যরূপে ব্যক্ত করেছেন । সমগ্র কবিতাটি দুটি স্তবকে বিভক্ত । কিন্তু দুটি স্তবকের আলাদা আলাদা বস্তুব্য নেই । দুটি স্তবক এমনভাবে লেখা হয়েছে যেন স্তবকটির ভেতরের বক্তব্য মিলেমিশে একই কথা বলেছে । একটি স্তবকের বক্তব্য পরবর্তী স্তবকের মধ্যে সঞ্চারিত হবার ফলে পুরো কবিতাটিই একটি স্তবকের ওপরই লেখা হয়েছে বলে মনে হয়েছে । কবিতাটিতে কবি প্রচলিত রচনারীতির অনুসরণ করেন নি । সনেটধর্মী কবিতাটির চৌদ্দটি চরণের মধ্যে বারোটি চরণে ২২ টি করে বর্ণ ব্যবহার করা হলেও চতুর্থ ও সপ্তম চরণে যথাক্রমে ২১ টি ও ২৩ টি বর্ণ ব্যবহার করা হয়েছে যা চতুর্দশপদী কবিতার ক্ষেত্রে একটি ত্রুটি ।
৪.৩ ‘ গন্ধ লেগে আছে রৌদ্রে যেন ভিজে বোনার ' — কবিতায় কীভাবে এই অপরূপ বিষণ্ণতার স্পর্শ এসে লেগেছে , তা যথাযথ পক্তি উদ্ধৃত করে আলোচনা করো ।
উঃ । পাঠ্য কবিতাটি একটি বিষণ্ণতার কবিতা সমগ্র কবিতায় কবির বিষণ্ণতা ছড়িয়ে আছে । প্রথমেই কবি বলছেন “ কোন গল্প ....... … . -কেই তাহা জানে নাকো । ” অর্থাৎ কবিতার শুরুতেই একটা বিষণ্ণতার ছোঁয়া পাওয়া যাচ্ছে । কবিতায় কবি যেন এক দূরাগত স্বপ্নের কথা , বেদনার কথা ব্যক্ত করেছেন । তাঁর সেই স্বপ্ন বেদনা জাগায় । কবিতায় কবি নানা স্থানে তাঁর বিষণ্নতার কথা তুলে ধরেছেন । যেমন একস্থানে তিনি বলেছেন “ স্বপ্নে যে বেদনা আছে ভাঙা মঠ ” অর্থাৎ কবিতায় কবি যা দেখাতে চেয়েছেন তা হলো স্বপ্নে থাকা বেদনা কেবল তাঁরই নয় এই বেদনা শুকনো পাতা , শালিকের কন্ঠস্বর , ভাঙা মঠ সব কিছুর মধ্যেই সঞ্চারিত হচ্ছে । আবার যখন কবি বলছেন যে , “ ভিঙিও ভাসিছে তখন সেখানে কবির নিঃসঙ্গতা পরিস্ফুট হচ্ছে । কবির মন যেন হিজলগাছের ডালে বাঁধা ডিঙি নৌকাটির মতো একাকী । -হিজলে ” — সেই নৌকো যার কেউ মালিক নেই , কেউ কখনো যার খোঁজ করে না । কবি যেন সেই ডিঙি নৌকোটির মতোই একা নিঃসঙ্গ । সেই নিঃসঙ্গতা বারেবারে যেন তাঁকে বেদনাহত করে । সমগ্র কবিতা জুড়েই কবির বিষণ্ণতা ছড়িয়ে পড়েছে । এই বিষণ্ণতার অপরূপ ছবি টুকরো টুকরোভাবে গোটা কবিতায় চিহ্নিত হয়েছে ।
৫. নীচের শব্দগুলির ধ্বনিতাত্ত্বিক বিচার করো ঃ
পাড়াগাঁ , দু - পহর , স্বপন , জনম , ভিজে ।
উঃ । পাড়াগী = পাড়াগ্রাম > পাড়াগাঁ ( নাসিক্যভবন ) ।
দু - পহর = দুই প্রহর > দু - পহর ( বর্ণলোপ ) ।
স্বপন = স্বপ্ন > স্বপন ( স্বরভক্তি ) ।
জনম = জন্ম > জনম ( স্বরভক্তি )
ভিজে = ভিজা > ভিজে ( অভিশ্রুতি ) ।
৬. নীচের শব্দগুলির ব্যাসবাক্যসহ সমাসের নাম লেখো : শঙ্খচিল , নকণাপেড়ে , ছদ্মহীন ।
উঃ । শঙ্খচিল শঙ্খ রঙের চিল ( মধ্যপদলোপী কর্মধারায় সমাস ) । নকশাপেড়ে নকশা পাড় আছে যার ( বহুব্রীহি সমাস ) । ছন্দহীন — নাই ছন্দ যার ( নঞর্থক বহুব্রীহি সমাস ) ।
৭. নীচের বাক্যগুলিতে ক্রিয়ার কাল নির্দেশ করো :
৭.১ পাড়াগাঁর দু - পহর ভালোবাসি ।
উঃ । নিত্য বর্তমানকাল ।
৭.২ রৌদ্রে যেন গন্ধ লেগে আছে স্বপনের ।
উঃ । বর্তমানকাল ।
৭.৩ শাখাগুলো নুয়ে আছে বহুদিন ছন্দহীন বুনো চালতার ...।
উঃ । পুরাঘটিত বর্তমানকাল ।
৭.৪ ডিঙিও ভাসিছে কার জলে ।
উঃ । ঘটমান বর্তমান ।
৭.৫ কোনোদিন এইদিকে আসিবে না আর ।
উঃ । সাধারণ ভবিষ্যত ।
No comments:
Post a Comment