প্রশ্ন উত্তর ছন্নছাড়া অষ্টম শ্রেণী | অষ্টম শ্রেণী বাংলা প্রশ্ন উত্তর | Class 8th questions and answers class 8th - Psycho Principal

Fresh Topics

Thursday, 26 December 2024

প্রশ্ন উত্তর ছন্নছাড়া অষ্টম শ্রেণী | অষ্টম শ্রেণী বাংলা প্রশ্ন উত্তর | Class 8th questions and answers class 8th

  

ছন্নছাড়া
অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত 



👉(অষ্টম শ্রেণী, বাংলা গাছের কথা প্রশ্ন উত্তর)


কবি - পরিচিতিঃ 

বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রতিভাবান ব্যক্তিত্ব হলেন অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত । ১৯০৩ সালে বাংলাদেশের অন্তর্গত নোয়াখালিতে তাঁর জন্ম হয় । বিচিত্র সব কর্ম - অভিজ্ঞতার সাক্ষী এই লেখক প্রথম জীবনে আইনের ডিগ্রি অর্জন করে বিচার বিভাগের কাজে নিযুক্ত ছিলেন । তিনি বাংলা সাহিত্যের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই স্বচ্ছন্দ বিচরণ করেছেন । তাঁর উল্লেখযোগ্য গল্প , উপন্যাসগুলি হলো ‘ বেদে ’ , ‘ বিবাহের চেয়ে বড়ো ’ , প্রাচীর ও প্রান্তর ' , ' অকালবসন্ত ' , ' অধিবাস ' , ‘ যতনা বিধি ' , ' সারেঙ ' প্রভৃতি । ' অমাবস্যা ' , ' আমরা ' , ' প্রিয়া ও পৃথিবী ’ , ‘ নীল আকাশ ' , ' আজন্ম সুরভি ' তাঁর রচিত বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ । ' কল্লোল ' পত্রিকার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত এই লেখক , কবি , কল্লোল যুগ , কবি শ্রীরামকৃষ্ণ প্রভৃতি স্মরণীয় প্রবন্ধগ্রন্থের প্রণেতা । ' পরমপুরুষ শ্রীশ্রী রামকৃর ’ গ্রন্থটি তাঁর জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ সফলতম গ্রন্থ বলে অনেকে মনে করেন । ১৯৭৬ সালে এই প্রতিথযশা লেখকের জীবনাবসান হয় । 


সারমর্মঃ

গলির মোড়ে একটা গাছ দাঁড়িয়ে তাতে ডালপালা নেই , যেন ভূতের মতো দাঁড়িয়ে আছে । মনে হচ্ছে যেন প্রেতচ্ছায়া রুক্ষ , বুষ্ট , রিক্ত , জীর্ণ , লতা নেই পাতা নেই , তার ছালবাকল নেই , কোথাও এতটুকু সবুজের রেখাও নেই । কোথাও নেই এতটুকু আঁচড়ের প্রতিশ্রুতিও । 

লেখক জরুরি দরকারে যাচ্ছিলেন ট্যাক্সি করে , ড্রাইভার বললে ওদিকে যাবে না । দেখছেন না রাস্তার মাঝে যে সমস্ত ছেলে ছোকরারা রয়েছে , তারা ছন্নছাড়া বেকারের দল । তাদের পরনে চোঙা প্যান্ট , চোখা জুতো । ওদের রোখা মেজাজ , ঠোকা কপাল , তাদের সামনে দিয়ে গেলেই বলবে দাদা লিফট দিন , হাওয়া খাওয়ান । ওরা কারা ? ওরা আজকের সমাজের বলি , এক অসহায় অন্ধকার জীবনের শিকার , এক নেই রাজ্যের বাসিন্দা । ওদের কিছুই নেই , ভিটে নেই , ভিত নেই , রীতি নেই , নীতি নেই , ওরা আইনকানুন কিছুই মানে না , গ্লীলতা - শালীনতা বোধটুকু পর্যন্ত নেই । ওরা এইরকম কেন ? কারণ ওরা নেই রাজ্যের বাসিন্দা , ওদের জন্য কলেজে সিট নেই । অফিস কারখানায় কাজ নেই , ট্রামেবাসে জায়গা নেই । খেলা হোক বা মেলা ওদের জন্য টিকিট নেই , হাসপাতালে বেড নেই , বাড়িতে ওদের জন্য কোনো আলাদা ঘর নেই , খেলবার মাঠ নেই , ওদের প্রতি কারোর দরদ , প্রেম , ভালোবাসা কিছুই নেই । ওদের বসার জন্য পাড়ার একটি রকছিল , সেটাও লোপাট হয়ে গেছে । তাই ওরা রাস্তায় এসে দাঁড়িয়েছে । ওদের না আছে বর্তমানের গতি না আছে ভবিষ্যতের ঠিকানা । 

লেখক চিন্তাশীল , ড্রাইভার এড়িয়ে যেতে চাইলেও তিনি ওই পথ দিয়ে যেতে চান , সেই নেই রাজ্যের বাসিন্দা ছেলেদের তিনি কাছ থেকে দেখতে চান । কাছাকাছি হতেই মুখ বাড়িয়ে লেখক বললেন , তোমাদের ট্যাক্সি লাগবে , লিফ্ট চাই , তিনজন সোল্লাসে ট্যাক্সিতে উঠে পড়ে জানায় তারা সামনেই যাবে । না সিনেমা , জলসা বা কোনো ফিল্মি তারকাকে দেখতে নয় একজন ভিখারিকে চাপা দিয়েছে একটা গাড়ি । সেই দেহটা ট্যাক্সিতে তুলে নিয়েছে । আর চিৎকার করছিল প্রাণ আছে , প্রাণ আছে । ওদের একটা দল ট্যাক্সিটাকে অনুসরণ করছে । ভিখারিটা বেওয়ারিশ কেউ নেই , শোবার জন্য ফুটপাথ আছে কিন্তু মাথার উপর ছাদ নেই । 

কবি ট্যাক্সি থেকে নেমে হাঁটা পথ ধরলেন , কানে বাজতে লাগল প্রাণ আছে , প্রাণ আছে । কবি আবার ফিরে গেলেন গলির মোড়ে দেখতে পেলেন গাছ থেকে বের হয়ে এসেছে হাজার হাজার কচিপাতা , দেখতে দেখতে গুচ্ছে গুচ্ছে উথলে উঠছে ফুল । উড়ে এসেছে রং - বেরংয়ের পাখি ধীরে ধীরে ফিরে এসেছে শ্যামল আত্মীয়তা । কবির কানে বাজে , প্রাণ আছে , প্রাণ আছে । শুধু প্রাণই আশ্চর্য সম্পদ , এক ক্ষয়হীন আলো , এক মৃত্যুহীন মর্যাদা । 


নামকরণঃ

বাস্তববাদী কবি অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত এই কবিতায় এক অপ্রাসঙ্গিক রোমান্টিকতার উত্তর নিয়েছেন । সমাজে যাদের আমরা অপাঙক্তেয় , অযোগ্য বলে মনে করি , যাদের আমরা সমাজ জীবনে ব্রাত্য বলে মনে করি , তারাই এগিয়ে আসে যে - কোনো বিপদে - আপদে অথচ এই মানুষদের ফেলা হয় অমানুষদের দলে । ওদের কিছু নেই , ওরা নেই দলের বাসিন্দা , ভালবাসা , স্নেহ - মমতা পাওয়ার এক বেওয়ারিশ ভিখিরির প্রাণ বাঁচানোর জন্য ছন্নছাড়া , দামাল এই বেকারদের মানবিকতা প্রশংসার যোগ্য । তাদের এই কাজ ছন্দহীন জীবন ও প্রকৃতিকে যেন একসূত্রে বেঁধে দিয়েছে । তাই কবিতার নামকরণ হিসেবে ‘ ছন্নছাড়া ’ সার্থক হয়েছে । 


১.১ অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্তের লেখা দুটি বইয়ের নাম লেখো । 

উঃ । ' অকালবসপ্ত ’ , ‘ পরমপুরুষ শ্রীশ্র 


১.২ তিনি কোন্ পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন ? 

উঃ । ' কল্লোল ' পত্রিকার সঙ্গে তিনি যুক্ত ছিলেন । 


২. নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর একটি বাক্যে লেখো : 

২.১ কৰি প্রথমে গাছটিকে কেমন অবস্থায় দেখেছিলেন ? 

উঃ । কবি প্রথমে গাছটিকে দেখেছিলেন রুক্ষ , বুষ্ট , রিক্ত , জীর্ণ , লতাপাতাহীন , ছায়াহীন , স্থালবাঞ্চল নেই অবস্থায় । 


২.২ ড্রাইভার বললে , ওদিকে যাব না ' ।— ওদিকে না যেতে চাওয়ার কারণ কী ? 

উঃ । ওদিকে ছন্নছাড়া বেকাররা রাস্তার মোড়ে আড্ডা দেয় , তারা গাড়ি থামিয়ে লিফট চাইবে । তাই ড্রাইভার ওদিকে যেতে চায় নি । 


২.৩ তাই এখন পথে এসে দাঁড়িয়েছে সড়কের মাঝখানে । সড়কের মাঝখানে , পথে এসে দাঁড়ানোর কারণ কী ? 

উঃ । মধ্যবিত্ত বাড়ির এক চিলতে একটি ফালতু রক ছিল । সেখানেই ছন্নছাড়া ওই বেকারের দলটি তাদের আদর বসাতো সেটাই এখন লোপাট হয়ে গেছে । তাই তারা সড়কের মাঝখানে পথে এসে দাঁড়িয়েছে ।


2.৪ ' আমি বললুম , না ওখান দিয়েই যাব ।'— কবির ওখান দিয়েই যেতে চাওয়ার কারণ কী ? 

উঃ । কবি ড্রাইভার কথিত ছ্যাছাড়া ছেলেগুলোকে দেখতে চান বুঝতে চান । তাই ওই মোড়ের রাস্তা দিয়ে তিনি যেতে চান । 


২.৫ ' ওই দেখতে পাচ্ছেন না জি । ওখানে কীসের ভিড় ? 

উঃ । ওইখানে একটা নিরীহ মানুষ গাড়ি চাপা পড়েছে তারই ভিড় । 


২.৬'কে সে লোক P– লোকটির পরিচা দাও । 

উঃ । লোকটি একজন বেওয়ারিশ ভিখারি , তার কেউ নেই , কিছু নেই । 


২.৭ ' চেঁচিয়ে উঠল সমস্বরে ... কী বলে তারা সমস্বরে চেঁচিয়ে উঠল ? 

উঃ । তারা সমস্বরে আনন্দে ঝংকৃত হয়ে চেঁচিয়ে উঠল প্রাণ আছে , এখনও প্রাণ আছে ।


 ২.৮ ' আমি নেমে পড়লুম তাড়াতাড়ি ।'— কবি তাড়াতাড়ি নেমে পড়লেন কেন ? 

উঃ । কবির গায়ে সেই বেওয়ারিশ ভিখিরির রক্তের দাগ লেগে যেতে পারে । এর থেকে নিজের ভব্যতা ও শালীনতাকে বাঁচাতে গিয়ে কবি তাড়াতাড়ি ট্যাক্সি থেকে নেমে পড়লেন । 


২.৯ ' ফিরে আসতেই দেখি ....– ফেরার পথে কবি কী দেখতে পেলেন ?

 উঃ । ফেরার পথে কবি দেখতে পেলেন গলির মোড়ে গাছের সেই শুকনো বৈরাগ্য বিদীর্ণ করে বেরিয়ে পড়েছে হাজার হাজার সোনালি কচিপাতা , মর্মরিত হচ্ছে বাতাসে । আর তার ডালে ডালে উড়ে এসেছে নানা রঙের পাখি । 


২.১০ ' অবিশ্বাস্য চোখে দেখলুম ।'— কবির চোখে অবিশ্বাসের ঘোর কেন ? 

উঃ । কারণ কবি যা শুনে ছিলেন , তা সবটা ঠিক ছিল না , তাই অবিশ্বাস্য চোখে তিনি দেখলেন যে কীভাবে এক মুহুতে সমস্ত কৃত্রিমতা , অমানবিকার শিকড়কে তুলে ফেলে শাস্তির বারিধারা প্রকৃতিকে স্নিগ্ধ করতে পারে । 


৩. নির্দেশ অনুসারে নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর দাও : 

৩.১ ওই পথ দিয়ে জরুরি দরকারে যাচ্ছিলাম ট্যাক্সি করে ।'— কবির যাত্রাপথের অভিজ্ঞতার বিবরণ দাও । 

উঃ । কবির যাত্রাপথের মোড়ে পড়ে একটা গাছ । গাছ বললে ভুল হয় কারণ ওটা গাছের প্ৰেতছায়া , আঁকাবাঁকা শুকনো কতকগুলি কাঠি কঙ্কাল মাত্র । শূন্যের দিকে এলোমেলো তুলে দেওয়া রুক্ষ , বুষ্ট , রিন্তু , জীর্ণ চেহারা , যার লতা নেই পাতা নেই , ছালবাকল নেই । কোথাও এক আঁচড় সবুজের প্রতিশ্রুতি বা একবিন্দু সরসের সম্ভবনাও নেই । তিনি আরও দেখেছিলেন দুরে রাস্তার ধারে একদল কর্মহীন ছোকরার জটলা ও গাড়ি চাপা পড়া এক বেওয়ারিশ ভিখিরেকে । তারপর তারা সেই দেহটিকে তুলে আনল গাড়িতে । তখনও তার প্রাণ আছে একথা ভেবেই তারা উল্লাসে ফেটে পড়ল । গায়ে সেই ভিখিরির রক্ত লেগে যেতে পারে তাই ভদ্রতা এবং শোভনতা রক্ষা করতে কবি নেমে গেলেন গাড়ি থেকে । ফেরার পথে কবির চোখে পড়ল সেই পত্রহীন গাছটিকে সেই গাছটি এখন সোনালি সবুজ পাতায় ভরে গেছে এবং তার ডালে উড়ে এসে বসেছে নানা রঙের পাখি । 


৩.২ ‘ গলির মোড়ে একটা গাছ দাঁড়িয়ে । গাছ না গাছের প্রেচ্ছায়া ।'— একটি গাছ দাঁড়িয়ে আছে বলেও কেন পরের পত্তিতে ' গাছের প্রেতচ্ছায়া ' বলা হয়েছে তা বুঝিয়ে দাও । 

উঃ । গলির মোড়ে যেটি দাঁড়িয়ে ছিল সেটা নিঃসন্দেহে গাছ কিন্তু সেটা কেবল আকৃতিতে , প্রকৃতিতে নয় । একটা গাছ বলতে বোঝায় প্রচুর ডালপালা সমৃদ্ধ সবুজ প্রাণের প্রাচুর্য । কিন্তু এই গাছটির ছিল না পাতা , এমন কি ছালবাকলও ছিল না , ছিল না এক আঁচড় সবুজের প্রতিশ্রুতি , তাই তাকে কবি প্রেতচ্ছায়া বলেছেন । কারণ সেটা যেন কোনো এক নিষ্প্রাণ কাঠামো ।


৩.৩ ওই পথ দিয়ে / জরুরি দরকারে যাচ্ছিলাম ট্যাক্সি করে ।'— এভাবে কবিতায় উত্তমপুরুষের রীতি কীভাবে ব্যবহৃত হয়েছে , অন্তত পাঁচটি পত্তি উদ্ধৃত করে দেখাও । 

 ( ১ ) আমি বললুম না এখান দিয়েই যাব

 ( ২ ) ওখান দিয়েই আমার শর্টকাট 

( ৩ ) বললুম , বন্ধুর যাবে ,

 ( ৪ ) আমি নেমে পড়লুম তাড়াতাড়ি ।

 ( ৫ ) অবিশ্বাস্য চোখে চেয়ে দেখলুম । 


৩.৪ ‘ কারা ওরা ’ ? কবিতা অনুসরণে তাদের পরিচয় দাও । 

উঃ । ওরা ছন্নছাড়া বেকারের দল , রাস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে আড্ডা দিচ্ছে । চোঙা প্যান্ট , চোখা জুতো , রোখা মেজাজ , ঠোকা কপাল । ওখানে দিয়ে গেলে তারা গাড়িতে লিফট চায় , বলে হাওয়া খাওয়ান । ওরা এক নেই রাজ্যের বাসিন্দা , ওদের অনুনয় , বিনয় , ভদ্রতা , শালীনতা নেই । সেই রাস্তায় উঠে আসা ছন্নছাড়ার দল কিন্তু প্রকৃত অর্থে মানবিক । তারাই নামগোত্রহীন এক ভিখিরির প্রাণ বাঁচাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে । 


৩.৫ ‘ ঘেঁষবেন না ওদের কাছে ? ' — এই সাবধানবাণী কে উচ্চারণ করেছিলেন ? ' ওদের ' বলতে কাদের কথা বোঝানো হয়েছে ? ওদের কাছে না ঘেঁষার পরামর্শ দেওয়া হলো কেন ?

 উঃ । ছন্নছাড়া কবিতায় যে ট্যাক্সি ড্রাইভার কবিকে তার গাড়িতে নিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি এই সাবধানবাণী উচ্চারণ করেছিলেন । ওদের বলতে পথের ধারে থাকা একদল ছন্নছাড়া বেকার যুবকদের কথা বলা হয়েছে । ড্রাইভারের ধারণা ওই ছন্নছাড়া যুবকদের কোনো বিনয় নেই , ভদ্রতা নেই , শ্লীলতা নেই , শালীনতা নেই । ওরা এক নৈরাজ্যের বাসিন্দা । ওঁদের কোন রীতিনীতি নেই । সব থেকে বড়ো কথা ওদের কাছে গেলেই ওরা হাওয়া খাওয়ার জন্য ট্যাক্সিতে লিফট্ চাইবে । তাই ট্যাক্সি ড্রাইভার কবিকে ওদের কাছে না ঘেঁষতে দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন । 


৩.৬ ' তাই এখন এসে দাঁড়িয়েছে সড়কের মাঝখানে ।'— এখানে কাদের কথা বলা হয়েছে ? তাদের জীবনের এমন পরিণতির কারণ কবিতায় কীভাবে ধরা পড়েছে তা নির্দেশ করো । 

উঃ । এখানে কবিতায় বর্ণিত অধিকারহীন , নৈরাজ্যের বাসিন্দা সেই সমস্ত ছেলেদের কথা বলা হয়েছে । যারা রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকে , গাড়ি দেখলেই লিফট চায় বলে দাদা হাওয়া খাওয়ান , তাদের কথা বলা হয়েছে । তারা একসময় মধ্যবিত্তের পরিবারের বাড়ির একচিলতে রকে বসে আড্ডা মারত । কিন্তু তারা রক শুধু লোপাট করে দিল । ফলে সেই বেকার যুবকরাই এখন সড়কের মাঝখানে এসে দাঁড়িয়েছে । রাস্তার মোড়েই আড্ডার আসর জমায় । এছাড়াও তারা ছিল নৈরাজ্যের ও এক নেই রাজ্যের বাসিন্দা । তাদের জন্য কোনো অধিকার নেই , কলেজে সিট নেই , অফিসে চাকরি নেই , কারখানায় কাজ নেই , মেলায় - খেলায় তাদের জন্য টিকিট নেই , বাড়িতে ঘর নেই , খেলার মাঠ নেই , তাদের ভালোবাসারও কেউ নেই । এই কর্মহীন যুবকের দলকে তথাকথিত ভদ্রসমাজ এক বিড়ম্বনা বলে মনে করেন । কিন্তু তাদের জীবনের এই পরিণতির জন্য দায়ী ধনবান শাসকের শোষণ , যার ফলশ্রুতি হিসেবে তাদের জীবনে এসেছে হতাশা , যন্ত্রণা । এসবই সামাজিক ও আর্থিক পরিস্থিতির করুণ পরিণাম । 


৩.৭ জিজ্ঞেস করলুম / তোমাদের ট্যাক্সি লাগবে ? ' - প্রশ্নবাক্যটিতে প্রশ্নকর্তার কোন অনুভূতির প্রকাশ ঘটেছে ? তাঁর এই প্রশ্ন ছুঁড়ে দেওয়ার পর কীরূপ পরিস্থিতি তৈরি হলো ? 

উঃ । প্রশ্নকর্তা যে মানুষের প্রতি সহানুভূতিশীল তাঁর প্রশ্নের মধ্য দিয়ে সেই মানসিকতারই প্রকাশ ঘটেছে । লেখক জিজ্ঞাসা করলেন ট্যাক্সি লাগবে ? লিফট চাই লিফট ? প্রশ্নকর্তা বা লেখক প্রশ্নের মধ্যে দিয়ে মহত্ত্বের পরিচয় দিয়েছেন , তিনি ব্যাতিক্রমী , তাই তিনি অবহেলিত এই ভবঘুরেদের মহৎ প্রচেষ্টার পাশে দাঁড়াতে চেয়েছেন । ট্যাক্সি পেয়ে ছেলের দল সোল্লাসে চিৎকার করে এবং সিটি দিয়ে ওঠে । আর দেরি না করে চাপা পড়া বেওয়ারিশ ভিখিরির দলা পাকানো দেহটি তুলে নিল গাড়ির ভিতরে । তখনও লোকটা বেঁচে ছিল , তাই যুবকেরা প্রাণ আছে বলে আনন্দে চেঁচিয়ে ওঠে এবং তারা চলে যায় কোনো হাসপাতালে । 


৩.৮ ' প্রাণ আছে , এখানো প্রাণ আছে ।'— এই দুর্মর আশাবাদের ‘ তপ্ত শঙ্খধ্বনি ' কবিতায় কীভাবে বিঘোষিত হয়েছে , তা আলোচনা করো । 

উঃ । এই পৃথিবীতে প্রাণই সবকিছু । প্রাণ না থাকলে পৃথিবীটা তো ইট - কাঠ - পাথরে ভরা এক বস্তুতে পরিণত হতো ।

কবি দেখেছেন সভ্যতার কঠিন শাসনে পড়ে সবই নিষ্প্রাণ হয়ে যায় । সবাই স্বার্থপর হয়ে যায় । এই পৃথিবীতে ছন্নছাড়া অপাত্তেয় বলে পরিচিত যারা আসল প্রাণ তাদের মধ্যেই লুকিয়ে আছে । 


৩.৯ কবিতায় নিজের ভব্যতা ও শালীনতাকে বাঁচাতে চাওয়া মানুষটির ছন্নছাড়াদের প্রতি যে অনুভূতির প্রকাশ ঘটেছে তা বুঝিয়ে দাও ।

 উঃ । ‘ ছন্নছাড়া ’ কবিতার কথক একজন ভদ্র , সভ্য ও রুচিসম্পন্ন নাগরিক । তিনি বিশেষ কাজে ট্যাক্সি চেপে যাচ্ছিলেন । যাবার পথে রাস্তার মোড়ে কয়েকটি ছেলেকে দেখে ড্রাইভার যেতে চাইল না , বলল ওরা ছন্নছাড়া । কবি নিজে এই ছন্নছাড়াদের প্রতি সহানুভূতিশীল ছিলেন , তিনি জানতেন কোনো স্বার্থপর মানুষদের শোষণে একদল মানুষ অসহায় হয়ে পড়ে । তাই তিনি তাদের নিজের গাড়িতে লিফট দিয়েছিলেন । তিনি বুঝেছিলেন এই ছন্নছাড়া মানুষদের মধ্যেই লুকিয়ে আছে প্রাণ , যা অন্য কারো মধ্যে নেই । কবি একজন ব্যতিক্রমী মানুষ । তাই বিবেক বর্জিত মানুষ হয়ে তিনি থাকতে চান না । তাই ছন্নছাড়া অথচ মানবিক এই যুবকদের প্রতি তার পূর্ণ সমবেদনা ছিল । তাদের মহৎ প্রচেষ্টার সহযোগী হবার জন্য কবির ক্ষুদ্র চেষ্টা কবিতায় অন্য রূপ পায় । তাই ট্যাক্সিতে লিফট দিয়ে লেখক এই ছন্নছাড়াদের মহৎ উদ্দেশ্যকে অন্তরের সম্মান জানান । 


৩.১০ কবিতায় ‘ গাছটি কীভাবে প্রাণের প্রতীক হয়ে উঠেছে তা আলোচনা করো । 

উঃ । কবি প্রথমে যখন গাছটিকে দেখেছিলেন তখন তাঁর মনে হয়েছিল এটি গাছ কিন্তু গাছ নয় , এটি গাছের প্রেতচ্ছায়া । ডাল নেই , এমন কি ছাল , বাকলও নেই । কিন্তু ছন্নছাড়া মানুষ বলে যারা পরিচিত , কবি তাদের মধ্যে খুঁজে পেলেন প্রাণের সন্ধান , রাস্তার একটি বেওয়ারিশ ভিখারিকে বাঁচাতে তারা ছুটে গিয়েছিল । অথচ তারাই নিজেরাই নিঃস্ব । এইভাবে প্রাণের খোঁজ পেয়ে কবির দৃষ্টিভঙ্গি গেল পাল্টে । যে গাছকে তিনি প্রেতচ্ছায়া ভেবেছিলেন , তার মধ্যেই দেখতে পেলেন প্রাণের রূপ , গাছের পাতাগুলো সোনালি কচি পাতায় ভরে গেছে , চারিদিকে পাখির কাকলি , প্রজাপতি উড়ছে । পথের ধারে পড়ে থাকা নামগ্রোত্রহীন ভিখিরির প্রাণের দাবি যেমন মানবিকতার ছোঁয়ায় জীবন্ত হয়ে উঠেছে , তেমনই তারই হাত ধরে সমগ্র প্রকৃতি যেন সঞ্জীবনী সুধার পরশে প্রাণ পেল । তাই কবিতায় গাছটি যথার্থভাবে প্রাণের প্রতীক হয়ে উঠেছে । 


৩.১১ ‘ এক ক্ষয়হীন আশা / এক মৃত্যুহীন মর্যাদা ।'— ‘ প্রাণকে ' কবির এমন অভিধায় অভিহিত করার সঙ্গত কারণ নিজের ভাষায় বিশ্লেষণ করো । 

উঃ । ' ছন্নছাড়া কবিতায় প্রথমেই কবি গাছের একটি প্রতীক চিত্র ব্যবহার করেছেন । তিনি গাছটিকে প্রথমে গাছ বললেও পরে তাকে গাছের প্রেতচ্ছায়া বলেছেন । কবির মনে হয়েছিল যে গাছ মানুষকে বাঁচাতে সাহায্য করে তাতে আর প্রাণ নেই । সেই প্রাণহীন গাছটি যেন গোঁটা মানবসমাজের প্রতীক । ওই গাছটির মতো যুবক সমাজও নষ্ট হয়ে গেছে । কিন্তু কবির প্রাণ সম্পর্কে এই ধারণা বদলে গেল যখন তিনি দেখলেন । কবির ট্যাক্সিতে সেই ছন্নছাড়া যুবকের দল এক বেওয়ারিশ ভিখিরির রক্তাক্ত দেহ তুলে নিল এবং প্রাণ আছে প্রাণ আছে বলে সোল্লাসে চেঁচিয়ে উঠল । তখন কবি বুঝলেন যে যুব সমাজকে তিনি প্রাণ হীন মনে করছিলেন তাদের মধ্যে রয়েছে পরোপকারী মানসিকতা , দয়ামায়া , যেগুলি জীবনের লক্ষণ । তাই শেষে কবি দেখলেন প্রেতের মতো গাছটির ডালে ডালে সবুজ সোনালি পাতার সমারোহ অর্থাৎ এই পৃথিবী প্রাণময় হয়ে উঠুক এটাই কবির আশা । কিন্তু প্রাণ না থাকলে পৃথিবী জড় বস্তুতে পরিণত হবে । কারণ প্রাণ আশার প্রতীক , প্রাণ ভরসার প্রতীক , প্রাণ হচ্ছে মৃত্যুহীন । এক প্রাণ চলে যায় সৃষ্টি করে যায় আর একটি প্রাণ , তাই পৃথিবী কখনো প্রাণশূন্য হয় না । এই কারণে কবি প্রাণকে বলেছেন এক মৃত্যুহীন মর্যাদা ।


No comments:

Post a Comment