একাদশ অধ্যায়
প্রশ্ন উত্তর
অষ্টম শ্রেণীর ইতিহাস বিষয়ের প্রথম অধ্যায় প্রশ্ন উত্তর
❐ অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর:
1. অস্ট্রেলিয়ার সর্বোচ্চ শৃঙ্গ কী ? এর উচ্চতা কত ?
উঃ নিউ ইংল্যান্ড রেঞ্জের মাউন্ট কোসিয়াস্কো অস্ট্রেলিয়ার সর্বোচ্চ শৃঙ্গ । এর উচ্চতা 2230 মিটার ।
2. ওশিয়ানিয়াকে কয়ভাগে ভাগ করা হয়েছে ও কী কী ?
উঃ । ওশিয়ানিয়াকে চার ভাগে ভাগ করা হয়েছে । যেমন ( 1 ) অস্ট্রেলেশিয়া , ( 2 ) মাইক্রোনেশিয়া , ( 3 ) মেলানেশিয়া , ( 4 ) পলিনেশিয়া ।
3. অস্ট্রেলিয়া কী উৎপাদনে প্রথম স্থান অধিকার করে ?
উঃ । পশম উৎপাদনে অস্ট্রেলিয়া প্রথম স্থান অধিকার করে ।
4. ওশিয়ানিয়ার আয়তন কত ?
উঃ । 44 লক্ষ বর্গকিমি ।
5. ওশিয়ানিয়া মহাদেশের সীমা আলোচনা করো ।
উঃ । উত্তরে 15 ° উত্তর অক্ষাংশ থেকে দক্ষিণে 47 ° দক্ষিণ অক্ষাংশ আর পশ্চিমে 114 ° পূর্ব দ্রাঘিমা থেকে 134 ° পশ্চিম দ্রাঘিমা পর্যন্ত বিস্তৃত ।
6. ওশিয়ানিয়া মহাদেশের সর্বোচ্চ শৃঙ্গটির নাম লেখো । এর উচ্চতা কত ?
উঃ । পাপুয়া নিউগিনির মাউন্ট উইলহেলম । এর উচ্চতা 4509 মি .।
7. ওশিয়ানিয়ার দীর্ঘতম নদীর নাম কী ?
উঃ । অস্ট্রেলিয়ার মারে - ডার্লিং ।
৪. মারে ডার্লিং অববাহিকার প্রধান কৃষিজ ফসলগুলির নাম কী ?
উঃ । মারে ডার্লিং অববাহিকার প্রধান কৃষিজ ফসল গম ।
9. মারে ডার্লিং অববহিকায় কোন্ কোন্ পশু পালিত হয় ?
উঃ মেরিনো , লিঙ্কন , মার্স প্রভৃতি উৎকৃষ্ট জাতের মেষ ও দুগ্ধ , মাংস প্রদায়ী গবাদি পশু পালিত হয় ।
10. অস্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত প্রবাল প্রাচীরের নাম কী ?
উঃ গ্রেট ব্যারিয়ার রিফ ।
11. নিউজিল্যান্ড অস্ট্রেলিয়ার কোন্দিকে অবস্থিত ?
উঃ । নিউজিল্যান্ড অস্ট্রেলিয়ার দক্ষিণ - পূর্বদিকে অবস্থিত ।
12. কোন্ কোন্ দ্বীপের সমন্বয়ে নিউজিল্যান্ড গঠিত হয়েছে ?
উঃ । উত্তর দ্বীপ , স্টুয়ার্ট , চ্যাথাম এবং আরো কতগুলি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দ্বীপ নিয়ে নিউজিল্যান্ড গঠিত হয়েছে ।
13. নিউজিল্যান্ডের সর্বোচ্চ শৃঙ্গের নাম কী ?
উঃ । দক্ষিণ আল্পস পর্বতের মাউন্ট কুক । ( 3764 মিটার )
14. কুক প্ৰণালী কোথায় অবস্থিত ?
উঃ । উত্তর ও দক্ষিণ দ্বীপের মধ্যস্থ প্রণালীর নাম কুক প্রণালী ।
15. নিউজিল্যান্ড দেশটি কারা আবিষ্কার করেন ?
উঃ । ওলন্দাজরা নিউজিল্যান্ড দেশটি প্রথম আবিষ্কার করেন ।
16. ওশিয়ানিয়ার একটি সক্রিয় আগ্নেয়গিরির নাম লেখো ।
উঃ । মৌনালোয়া ।
17. মারে - নদী কোথা থেকে উৎপন্ন হয়েছে ?
উঃ । মারে - নদী অস্ট্রেলিয়ান আত্মস থেকে উৎপন্ন হয়েছে ।
18. মারে ডার্লিং অববাহিকায় কী কী খনিজ সম্পদ পাওয়া যায় ?
উঃ রুপা , সীসা , দস্তা , সোনা , তামা , টিন প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য খনিজ সম্পদ পাওয়া যায় ।
19. মারে ডার্লিং অববাহিকার আয়তন কত ?
উঃ । মারে ডার্লিং অববাহিকার আয়তন প্রায় 9.1 বর্গ কি.মি .।
20. অস্ট্রেলিয়ার পশ্চিমের মালভূমি অঞ্চলের মাঝে অবস্থিত মরুভূমিগুলির নাম লেখো ।
উঃ । ভিক্টোরিয়া , গিবসন , গ্রেট স্যান্ডি মরুভূমি ।
21. ডাউনস কাকে বলে ?
উঃ । মাঝে ডার্লিং অববাহিকা অঞ্চলে বৃষ্টিপাত কম বলে বিশাল অঞ্চলে তৃণভূমি গড়ে উঠেছে , একে ডাউনস বলে ।
22. মারে ডার্নিং অববাহিকার জলবায়ু কী প্রকৃতির ?
উঃ । মারে ডালিং নদী অববাহিকার জলবায়ু মূলত নাতিশীতোয় প্রকৃতির ।
23. নিউজিল্যান্ডের দীর্ঘতম নদী কোনটি ?
উঃ । ওয়াইটাকি নিউজিল্যান্ডের দীর্ঘতম নদী ।
24. কোন্ শহরকে ' রুপার শহর ' বলা হয় ?
উঃ । ব্রোকেনহিল শহরকে ।
25. ওশিয়ানিয়ার একটি জীবন্ত আগ্নেয়গিরির নাম লেখো ।
উঃ । ৱুয়াপেহু ।
26. পাপুয়া নিউগিনির একটি নদীর নাম করো ।
উঃ । ফ্লাই ।
27. নিউজিল্যান্ডের প্রধান নদ - নদীগুলি কী কী ?
উঃ । ওয়াইটাকি , ক্লথ , ওয়ানগামই , টায়েরি প্রভৃতি এখানকার প্রধান নদনদী ।
28. কোন্ মহাদেশে ক্যাঙ্গারু দেখা যায় ?
উঃ । অস্ট্রেলিয়া মহাদেশে ।
30. পৃথিবীর গভীরতম খাতটির নাম কী ?
উঃ । মারিয়ানা খাত ।
31. অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড কোন্ গোলার্ধে অবস্থিত ?
উঃ । দক্ষিণ গোলার্ধে অবস্থিত ।
32. ওশিয়ানিয়ার কয়েকটি আগ্নেয় দ্বীপের নাম লেখো ।
উঃ হাওয়াই , সলোমন , ফিজি , তাহিতি ।
33. মারে ডার্লিং অববাহিকায় একটি উল্লেখযোগ্য বন্দরের নাম লেখো ।
উঃ । অ্যাডিলেড ।
34. টাসমানিয়া কোন্ প্রণালী দ্বারা অস্ট্রেলিয়ার মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন ?
উঃ । বাস প্রণালী দ্বারা মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন ।
35. নিউজিল্যান্ডের হিমবাহ সৃষ্ট বৃহত্তম হ্রদ কোন্টি ?
উঃ । নিউজিল্যান্ডের হিমবাহ সৃষ্ট বৃহত্তম হ্রদ তাউপো ।
36. ওশিয়ানিয়া মহাদেশের লোকসংখ্যা কত ?
উঃ । প্রায় সাড়ে তিন কোটি ।
37. মারে ডার্লিং অববাহিকার দক্ষিণে ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু অঞ্চলে কী কী ফলের চাষ হয় ।
উঃ । আঙুর , লেবু , আপেল , পিচ , কমলালেবু , ন্যাসপাতি প্রভৃতি ফলের চাষ হয় ।
39. কে এবং কত সালে পিটাকেয়ার্স দ্বীপে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন ?
উঃ । 1739 সালে ব্রিটিশ রয়্যাল নৌবাহিনীর বিদ্রোহীরা পিটকেয়ার্স দ্বীপে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন ।
40. মৃত প্রবাল জমে সৃষ্টি হয়েছে এমন কতগুলি দ্বীপের নাম লেখো ।
উঃ । মৃত প্রবাল জমে সৃষ্টি হয়েছে এমন কতগুলি দ্বীপের নাম হল মার্শাল , গিলবার্ট , ক্যারোলাইন ।
41. জ্যাকোস কী ?
উঃ । মারে ডার্লিং অববাহিকার পশুখামারগুলি খুব বড়ো আর যারা এই পশু খামারগুলিতে কাজ করে , তাদের বলে জ্যাকোস ।
42. ওশিয়ানিয়ার দুটি অন্তবাহিনী নদীর নাম লেখো ।
উঃ । কুপার , আয়ার ।
❐ সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর :
1. ওশিয়ানিয়া মহাদেশটি কীভাবে গঠিত হয়েছে ?
উঃ । অস্ট্রেলিয়া , টাসমানিয়া , নিউজিল্যান্ড প্রভৃতি দ্বীপ এবং সলোমান , ফিজি , নিউ হেব্রিডিস , নিউ ক্যালিডোনিয়া , বিসমার্ক , চেস্টারক্লিড , সান্টাক্রুজ প্রভৃতি দ্বীপপুঞ্জের সমন্বয়ে ওশিয়ানিয়া মহাদেশটি গঠিত হয়েছে ।
2. মৌনোলোয়ার উচ্চতা মাউন্ট এভারেস্টের থেকে বেশি হওয়া সত্ত্বেও এভারেস্ট কে পৃথিবীর সর্বোচ্চ শৃঙ্গ বলা হয় কেন ?
উঃ । মৌনোলোয়ার মোট উচ্চতা সমুদ্র তলদেশ থেকে 9.170 মিটার । এর মধ্যে 5000 মিটার রয়েছে সমুদ্রপৃষ্ঠের নীচে আর বাকি 8.17 মিটার রয়েছে সমুদ্রপৃষ্ঠের উপরে । মাউন্ট এভারেস্টের উচ্চতা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে 8.848 মিটার । তাই মোট উচ্চতার বিচারে মৌনালোয়ার উচ্চতা বেশি । কিন্তু পৃথিবীর উচ্চতা মাপা হয় সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে । তাই মাউন্ট এভারেস্ট কে পৃথিবীর সর্বোচ্চ শৃঙ্গ বলা হয় ।
3. ওশিয়ানিয়া মহাদেশের বিচিত্র প্রাণী ও উদ্ভিদের বর্ণনা দাও ।
উঃ । ওশিয়ানিয়া মহাদেশে বিচিত্র প্রাণী ও উদ্ভিদের দেখা পাওয়া যায় । যাদের অন্য কোনো মহাদেশে দেখা যায় না । যেমন — ক্যাঙারু , ওয়ালবি , প্লাটিপাস ( হাঁস ও ছুঁচোর মিশ্রণ ) , গাছে থাকা ছোটো কোয়ালা ভাল্লুক , এমু পাখি , ডানা নেই কিউই পাখি প্রভৃতি । এখানে ইউক্যালিপটাস গাছের জন্ম । এছাড়া জারা , কারি প্রভৃতি চিরহরিৎ গাছ কেবল এই মহাদেশেই দেখা যায় ।
4. অস্ট্রেলিয়ার সংক্ষিপ্ত ভৌগোলিক বিবরণ দাও ।
উঃ । ওশিয়ানিয়ার প্রধান স্থলভূমি অস্ট্রেলিয়া । এটি একটি সুবৃহৎ দ্বীপ । আয়তনে এই দ্বীপটি এত বড়ো যে , একে দ্বীপ মহাদেশ বলা হয় । অস্ট্রেলিয়ার আয়তন 77 লক্ষ 25 হাজার বর্গ কিলোমিটার অর্থাৎ ভারতের আয়তনের প্রায় আড়াই গুণের সমান । সমগ্র ওশিয়ানিয়া মহাদেশের 87 শতাংশ এলাকাই অস্ট্রেলিয়ার অন্তর্গত ।
5. গ্রেট ব্যারিয়ার রিফ কী ?
উঃ । অস্ট্রেলিয়ার উত্তর - পূর্বদিকে উপকূলের প্রায় সমান্তরালে কোরাল সাগরে রয়েছে প্রায় 2000 কিলোমিটার লম্বা বিশ্বের দীর্ঘতম প্রবাল প্রাচীর । একে বলে গ্রেট ব্যারিয়ার রিফ । এটি অস্ট্রেলিয়ার পূর্ব উপকূলের একটি আকর্ষণীয় বৈশিষ্ট্য । প্রবাল কীট জমে সমুদ্রের মধ্যে এই আশ্চর্য প্রাচীর সৃষ্টি হয়েছে । জাহাজ চলাচলে বাধার সৃষ্টি করে বলে এই প্রাচীরের নাম গ্রেট ব্যারিয়ার রিফ ।
6. মারে ডার্লিং অববাহিকার শিল্পের বিবরণ দাও ।
উঃ । মারে ডার্লিং অববাহিকায় খনিজ সম্পদের অভাবে ধাতব শিল্পের সেভাবে বিকাশ ঘটেনি । কৃষিভিত্তিক শিল্পের মধ্যে ময়দা , বেকারি , সুরা খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ ও সংরক্ষণ গড়ে উঠেছে । পশু সম্পদের উপর নির্ভর করে এখানে পশম , বজ্রবাণ , প্যাকিং ডেয়ারি ও মাংস শিল্প গড়ে উঠেছে । এছাড়া ইন্জিনিয়ারিং ও রাসায়নিক শিল্প এখানে রয়েছে । ব্রোকেনহিল এ রূপা ও লৌহ ইস্পাত শিল্পের বিকাশ ঘটেছে ।
7. মাইক্রোনেশিয়ার ভৌগোলিক বিবরণ দাও ।
উঃ । নিরক্ষরেখার উত্তরে প্রশান্ত মহাসাগরের মধ্য ও পশ্চিমের অনেকগুলো ছোটো ছোটো দ্বীপ নিয়ে মাইক্রোনেশিয়া গঠিত । এই অঞ্চলের মারিয়ানা , ক্যারোলিন , মার্শাল , গিলবার্ট ও গুয়াম দ্বীপপুঞ্জ উল্লেখযোগ্য । সমস্ত দ্বীপগুলোই মূলত প্রবাল দ্বীপ । এখানকার আদিম অধিবাসীদের গায়ের রং কালো । পৃথিবীর গভীরতম সমুদ্রখাত মারিয়ানা খাত এই অঞ্চলেই অবস্থিত ।
৪. পলিনেশিয়ার ভৌগোলিক বিবরণ দাও ।
উঃ । উত্তরে হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জ থেকে শুরু করে দক্ষিণ পশ্চিম নিউজিল্যান্ড ও দক্ষিণ - পূর্বে ইন্টার দ্বীপপুঞ্জসহ পলিনেশিয়ার | অন্তর্গত । হাওয়াই , তাহিতি , মার্কুইসাস , সামোয়া , সোসাইটি , ফিনিক্স টোঙ্গা প্রভৃতি দ্বীপ ও দ্বীপপুঞ্জ এখানে আছে । এই দ্বীপগুলি | প্রধানত আগ্নেয়গিরির লাভা ও প্রবাল কাঁটের দেহাবশেষ দিয়ে তৈরি । এই অঞ্চলের আদিম অধিবাসীদের গায়ের রং তামাটে । পলিনেশিয়ার হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জের মৌনালোয়া ও মাউন্ট কিলাউই দুটি জীবন্ত আগ্নেয়গিরি ।
9. ওশিয়ানিয়ার অবস্থান বর্ণনা করো ।
উঃ । ওশিয়ানিয়া নিরক্ষরেখার দক্ষিণে সম্পূর্ণ দক্ষিণ গোলার্ধে অবস্থিত । দক্ষিণ গোলার্ধে অবস্থানের জন্য ওশিয়ানিয়ার আর এক নাম অস্ট্রেলেশিয়া । | এই মহাদেশ উত্তরে প্রায় 3 ° দক্ষিণ অক্ষরেখা থেকে দক্ষিণ 43 ° দক্ষিণ অক্ষরেখার মধ্যে এবং পশ্চিমে প্রায় 113 ° পূর্ব দ্রাঘিমা থেকে পূর্বে 180 পূর্ব দ্রাঘিমার মধ্যে অবস্থিত ।
10. আয়ার রক কী ?
উঃ । অস্ট্রেলিয়ার পশ্চিমের মালভূমি অঞ্চলের আয়ার রক একটি দর্শনীয় বস্তু । এটি লাল স্যান্ডস্টোন শিলা দ্বারা গঠিত । | সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত দিনের বিভিন্ন সময়ে এর রং পরিবর্তন হয় । একে দেখতে কখনো লালচে বাদামি , কখনো হলদে আটিজিয় কৃপ আবার কখনো বা হালকা বেগুনি হয় ।
11. আর্টিজিয় কূপ কী ?
উঃ । অস্ট্রেলিয়ার প্রাকৃতিক পরিবেশের একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল বিস্তৃত এলাকায় অসংখ্য আর্টেজীয় কূপের অবস্থান । ভাঁজযুক্ত শিলাগঠিত অঞ্চলে যখন দুটি অপ্রবেশ্য শিলাস্তরে মধ্যভাগে অবস্থিত একটি প্রবেশ্য শিলাস্তরে বৃষ্টির জল সঞ্চিত হয় । সেখানে কূপ খনন করলে জল স্বাভাবিকভাবেই ফোয়ারার মতো নির্গত হয় , একে আর্টিজিয় কূপ বলে । অস্ট্রেলিয়ায় এই জাতীয় কূপের সাহায্যে কৃষিক্ষেত্রে জলসেচ ও তৃণভূমিতে পশুপালন করা হয় । কার্পেন্টরোয়া নিম্নভূমি অঞ্চলে এই কূপ দেখা যায় ।
11. মারে ডার্লিং অববাহিকার জলবায়ুর বিবরণ দাও ।
উঃ । মারে - ডার্লিং অববাহিকার জলবায়ু মূলত নাতিশীতোয় প্রকৃতির । গ্রীষ্মকালে ও শীতকালে এখানকার গড় তাপমাত্রা থাকে যথাক্রমে 25 ° সেও : 10 ° সে .। এই অববাহিকা গ্রেট ডিভাইডিং রেঙের পশ্চিমে বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চলে অবস্থিত হওয়ায় বৃষ্টিপাতের | পরিমাণ এখানে খুবই কম , বছরে মাত্র 50-70 সেমি । দক্ষিণের সমুদ্র উপকূলে ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ুর প্রভাব দেখা যায় ।
12. মারে ডার্লিং অববাহিকার স্বাভাবিক উদ্ভিদ ও কৃষির বিবরণ দাও ।
উঃ । নাতিশীতোয় জলবায়ু ও কম বৃষ্টিপাতের জন্য মারে ডার্লিং অববাহিকায় ছোটো ছোটো ঘাসের বিশাল তৃণভূমি দেখা যায় । এই তৃণভূমি ডাউনস নামে পরিচিত । এই অববাহিকার পূর্বদিকের কয়েকটি স্থানে ওক , ম্যাপল , পপলার প্রভৃতি পর্ণমোচী গাছ দেখা যায় । দক্ষিণের অ্যাডিলেড অঞ্চলে ভূমধ্যসাগরীয় উদ্ভিদ জন্মায় । মারে - ডার্লিং অববাহিকা অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে কৃষিসমৃদ্ধ অঞ্চল । এই অববাহিকার প্রধান কৃষিজ ফসল হল গম । এখানে উন্নত যন্ত্রের সাহায্যে যব , ভুট্টা , ওট , রাই উৎপাদন করা হয় । অববাহিকার দক্ষিণের ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু অঞ্চলে আঙুর , লেবু , আপেল , পিচ , কমলালেবু , ন্যাসপাতি প্রভৃতি ফলের চাষ হয় ।
13. ওশিয়ানিয়া মহাদেশের ক্রান্তীয় তৃণভূমি ও নাতিশীতোয় অরণ্যের বিবরণ দাও ।
উঃ । অস্ট্রেলিয়ার উত্তরে কম বৃষ্টিপাতযুক্ত অঞ্চলে বড়ো বড়ো ঘাস জন্মায় । অস্ট্রেলিয়ার এই অঞ্চল ‘ পার্কল্যান্ড সাভানা ’ নামে পরিচিত । এই তৃণভূমিতে মাঝে মাঝে ইউক্যালিপটাস ও জুরা জাতীয় গাছ দেখা যায় । পূর্ব অস্ট্রেলিয়া , তাসমানিয়া ও নিউজিল্যান্ডে বৃহৎ পাতাযুক্ত নাতিশীতোয় পর্ণমোচী গাছ দেখা যায় । এরা শীতের আগে পাতা ঝরিয়ে দেয় । এই অরণ্যের প্রধান প্রধান উদ্ভিদগুলি হল ওক , ম্যাপল , পপলার , এলম প্রভৃতি ।
14. ওশিয়ানিয়া মহাদেশের ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু ও ব্রিটিশ জলবায়ুর বিবরণ দাও ।
উঃ । অস্ট্রেলিয়ার উপকূল বরাবর পারথ্ ও অ্যাডিলেড অঞ্চলে ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ুর প্রভাব দেখা যায় । এখানে গ্রীষ্মকাল উয় ও শীতকালে পশ্চিমা বায়ুর প্রভাবে বৃষ্টিপাত হয় । দক্ষিণ - পূর্ব অস্ট্রেলিয়া , তাসমানিয়া , নিউজিল্যান্ডে , ব্রিটিশ জলবায়ু দেখা যায় । গ্রীষ্মকালে এখানে হালকা উগ্ন ( 14 ° সে ) এবং শীতকালে বেশ ঠান্ডা ( 5 ° সে ) পশ্চিমাবায়ুর প্রভাবে এখানে সারাবছর প্রচুর বৃষ্টিপাত ( 200 সেমি ) হয় ।
❐ রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তরঃ
1. অস্ট্রেলিয়ার ভূ - প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যের যে কোনো একটি ভাগের বিবরণ দাও ।
উঃ ওশিয়ানিয়ার অন্তর্গত দ্বীপ মহাদেশ অস্ট্রেলিয়া প্রায় আফ্রিকার মতো মালভূমিময় অঞ্চল । এখানে বিভিন্ন অংশের মধ্যে সামান্যই ভূ - প্রকৃতিগত বৈচিত্র্য লক্ষ্য করা যায় । প্রকৃতির গঠনের বন্ধুরতা অনুসারে অস্ট্রেলিয়াকে মোটামুটি চারটি প্রাকৃতিক অঞ্চলে ভাগ করা যায় । যেমন ( i ) পূর্বের উচ্চভূমি , ( ii ) পশ্চিমের মালভূমি , ( iii ) মধ্যভাগের সমভূমি , ( iv ) উপকূলের সমভূমি । পূর্বের উচ্চভূমি ঃ এই পার্বত্যভূমি উপকূলের প্রায় সমান্তরালে উত্তরে ইয়র্ক অন্তরীপ থেকে দক্ষিণে ভিক্টোরিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত । অস্ট্রেলিয়ার সমগ্র পূর্ব উপকূল জুড়ে গ্রেট ডিভাইডিং রেঞ্জ পর্বতমালা শাখা - প্রশাখা সহ অবস্থিত । এই পর্বতমালার বিভিন্ন অংশ ভিন্ন ভিন্ন নামে পরিচিত । এটি একটি প্রাচীন ভঙ্গিল পর্বতমালা । উত্তর - দক্ষিণে এর দৈর্ঘ্য প্রায় 3200 কিমি . এবং উচ্চতা 1000 থেকে 1500 মিটার । এর বিভিন্ন অংশের বিভিন্ন নাম , যেমন – উত্তর - পূর্ব কুইন্সল্যান্ড এর নাম ক্লার্ক রেঞ্জ , ম্যাকফ্যাসন রেঞ্জ ও ডার্লিং ডাউনস । ভিক্টোরিয়ার অস্ট্রেলিয়ান আল্পস , নিউ সাউথ ওয়েলস - এ নিউ ইংল্যান্ড রেঞ্জ , লিভারপুল রেঞ্জ , ও বু রেঞ্জ । আর এর দক্ষিণ সীমান্তে অবস্থিত মাউন্ট কোসিয়াস্কো এই পর্বতমালার সর্বোচ্চ শৃঙ্গ । ভিক্টোরিয়াতে অবস্থিত মাউন্ট টাউনসেন্ড ( 2213 মিটার ) হল এই দেশের দ্বিতীয় উচ্চতম শৃঙ্গ ।
2. পশ্চিমের মালভূমি বিবরণ দাও ।
উঃ । অস্ট্রেলিয়ার পশ্চিমে অর্ধেকের বেশি অংশ জুড়ে উঁচু নীচু ঢেউ খেলানো মালভূমি দেখা যায় । এখানকার গড় উচ্চতা 200-500 মিটার । এই মালভূমির শিলাগুলো ভারতের দাক্ষিণাত্য মালভূমির মতোই পুরানো । পূর্ব ও পশ্চিমে কয়েকটি ছোটো ছোটো পাহাড় দেখা যায় । আর মাঝখানে রয়েছে মরুভূমি অঞ্চল । এই মরুভূমির বিভিন্ন জায়গার বিভিন্ন নাম রয়েছে । যেমন — ভিক্টোরিয়া , গিবসন , গ্রেট স্যান্ডি মরুভূমি । মরুভূমির মধ্যে মাঝে মাঝে লবণাক্ত জলের হ্রদ প্রায়া ও মরূদ্যান দেখা যায় ।
3. মধ্যভাগের সমভূমি বিবরণ দাও ।
উঃ । পূর্বে গ্রেট ডিভাইডিং রেঞ্জ আর পশ্চিমে মালভূমির মাঝের অঞ্চলটি সমতল । গ্রে ও সেলউইন নামে দুটি উচ্চভূমি এই সমতল ভূমিকে তিনভাগে ভাগ করেছে । দক্ষিণে রয়েছে মারে - ডার্লিং নদীর অববাহিকা , বা রিভেরিনা সমভূমি , মাঝে আয়ার ভূগোল হ্রদের অববাহিকা । আর উত্তরে কার্পেন্টারিয়া নিম্নভূমি । কাপেন্টারিয়া নিম্নভূমি অঞ্চলে শিলাস্তরের আকৃতি এমনই যে কুপ খুঁড়লে মাটির নীচের জল পাম্পের সাহায্য ছাড়াই বেরিয়ে আসে । এই ধরনের কূপকে আটিজিও কূপ বলে ।
4. উপকূলের সমভূমি বিবরণ দাও ।
উঃ । অস্ট্রেলিয়ার চারপাশের উপকূলেই সমভূমি রয়েছে । তবে বেশিরভাগ সমভূমিই খুব সংকীর্ণ । উত্তরে কার্পেন্টারিয়া উপসাগর ও দক্ষিপে গ্রেট অস্ট্রেলিয়ান বাইটের উপকূল কিছুটা চওড়া । আর উত্তর - পূর্ব উপকূল বরাবর সমুদ্রের মধ্যে সমান্তরালে অবস্থান করছে পৃথিবীর বৃহত্তম প্রবাল প্রাচীর গ্রেট ব্যারিয়ার রিফ । গ্রেট ব্যারিয়ার রিফ অস্ট্রেলিয়ার পূর্ব উপকূলের একটি আকর্ষণীয় বৈশিষ্ট্য । অস্ট্রেলিয়ার উত্তর - পূর্ব উপকূল থেকে 80-205 কিমি . দূরত্বে প্রবাল কাঁট জমে সমুদ্রের মধ্যে এক আশ্চর্য প্রাচীর সৃষ্টি হয়েছে । এই প্রবাল প্রাচীর উপকূলের সমান্তরালে 2000 কিমি প্রসারিত হয়েছে । জাহাজ চলাচলে বাধা সৃষ্টি করে বলে এই প্রাচীরের নাম গ্রেট ব্যারিয়ার রিফ ।
5. নিউজিল্যান্ডের সংক্ষিপ্ত ভৌগোলিক বিবরণ দাও ।
উঃ । এই দেশটি ওশিয়ানিয়ার অন্তর্গত । প্রধানত উত্তর দ্বীপ ও দক্ষিণ দ্বীপ নিয়ে এই দেশটি গঠিত হলেও দক্ষিণভাগে ক্ষুদ্র স্টুয়ার্ট ও পূর্বভাগে চ্যাথাম দ্বীপ নিউজিল্যান্ডের অন্তর্গত । দক্ষিণ দ্বীপের পশ্চিম দিক বরাবর দক্ষিণ আল্পস পর্বতমালা বিস্তৃত । এর সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট কুক , 3765 মিটার উচ্চ । মাউন্ট টামথাস ( 3498 মি . ) ও মাউন্ট এস পাইরিং ( 3041 মি . ) দক্ষিণ দ্বীপের অন্যান্য উল্লেখযোগ্য শৃঙ্গ । ওশিয়ানিয়ার অন্যান্য যেসব দ্বীপমালা আছে তাদের অধিকাংশই প্রবাল দ্বারা গঠিত এবং নিমজ্জিত আগ্নেয় পর্বতের অংশবিশেষ । এই দ্বীপের পূর্ব উপকূল বরাবর রয়েছে বিখ্যাত ক্যান্টারবেরি সমভূমি । দক্ষিণ আল্পস পর্বতে অনেক হিমবাহ দেখা যায় । নিউজিল্যান্ডের প্রধান নদনদীগুলি হল ওয়াইটাকি , কুথ , ওয়ানগামুই , টায়েরি । এগুলি দৈর্ঘ্যে ছোটো এবং খরস্রোতা । নিউজিল্যান্ডের পার্বত্য অঞ্চলে অসংখ্য হিমবাহ সৃষ্ট হ্রদ আছে । এদের মধ্যে তাউপো হল বৃহত্তম ।
6. ওশিয়ানিয়ার অভিযান সম্পর্কে যা জানো লেখো ।
উঃ । ইউরোপীয়দের অভিযানের আগে ওশিয়ানিয়ার দ্বীপগুলিতে বিভিন্ন আদিবাসীরা বসবাস করত । যেমন - অস্ট্রেলিয়ার অ্যাবরিজিন্যাল , নিউজিল্যান্ডে মাওরি । ষোড়শ শতাব্দীতে ফার্দিনান্দ ম্যাগেলান তাঁর বিখ্যাত পৃথিবী পরিভ্রমণের সময় ম্যারিনাস সহ কয়েকটি দ্বীপের সন্ধান পান । 1644 সালে ডাচ নাবিক এবেল তাসমান অস্ট্রেলিয়া , নিউজিল্যান্ড , টোঙ্গা , ফিজি দ্বীপপুঞ্জে পৌঁছান । 1770 সালে জোনস কুক অস্ট্রেলিয়ার পূর্ব উপকূল ( সিডনি ) ও প্রশান্ত মহাসাগরের বিভিন্ন দ্বীপে পৌঁছান । 1789 সালে ব্রিটিশ রয়্যাল নৌবাহিনীর বিদ্রোহীরা পিটকেয়ার্ন দ্বীপে স্থায়ীভাবে বাস করতে শুরু করেন । এরপরে অস্ট্রেলিয়া , নিউজিল্যান্ড , ফিজিতে ব্রিটিশ উপনিবেশ স্থাপিত হয় । পরে অন্যান্য ইউরোপীয় শক্তি বিশেষত ফরাসিরা কয়েকটি দ্বীপে আধিপত্য বিস্তার করে । ঊনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময় থেকে অস্ট্রেলিয়ায় সোনার খনি আবিষ্কার এবং অন্যান্য সম্পদের টানে ইউরোপ থেকে দলে দলে মানুষ এসে সেখানে ভিড় করতে থাকে ।
7. ওশিয়ানিয়ার নদনদীর বিবরণ দাও ।
উঃ । এশিয়ানিয়ার মধ্যে অস্ট্রেলিয়া আয়তনে সবচেয়ে বড়ো দেশ হলেও এখানকার পরিবেশ রুক্ষ , শুষ্ক এবং ভূ - প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যও কম । ফলে নদ - নদীর সংখ্যাও কম । এখানকার অধিকাংশ নদী গ্রেট ডিভাইডিং রেঞ্জের পূর্ব ও পশ্চিম ঢাল থেকে উৎপন্ন হয়েছে । এর মধ্যে প্রধান হল মারে - ডার্লিং নদী । ভিক্টোরিয়া প্রদেশের অস্ট্রেলিয়ান আল্পস থেকে উৎপন্ন হয়ে মারে নদী এনকাউন্টার উপসাগরে পড়েছে । মারের প্রধান উপনদী ডার্লিং , নিউ ইংল্যান্ড রেঞ্জ থেকে উৎপন্ন হয়ে দক্ষিণ - পশ্চিম দিকে প্রবাহিত হয়ে ওয়েন্টওয়ার্থ শহরের কাছে মারে নদীতে পড়েছে । মারের অপর একটি উপনদী হল মারামবিজি । অস্ট্রেলিয়ার অন্যান্য নদীগুলি হল হান্টার , ফ্রিজয় , ব্রিসবেন , কুপার , আয়ার প্রভৃতি নদী গ্রেট ডিভাইডিং রেঞ্জ থেকে বেরিয়ে পূর্বদিকে প্রশান্ত মহাসাগরে পড়েছে ।। ওশিয়ানিয়া মহাদেশের অন্যান্য নদনদীর মধ্যে নিউজিল্যান্ডের ওয়াইটাকি , ক্লথ , ওয়ানগামুই , পাপুয়া নিউগিনির ফ্লাই , তাসমানিয়ার ডারওয়েন্ট , মকওয়াবি ও গর্ডন উল্লেখযোগ্য ।
No comments:
Post a Comment