একুশের কবিতা প্রশ্ন উত্তর পড়তে নিচের লিঙ্ক এ ক্লিক করো
👉 ( একুশের কবিতা প্রশ্ন উত্তর )
কবি পরিচিতিঃ
“ নবযুগের প্রাণবান সাহিত্যের স্পর্শে কল্পনবৃত্তি যেই নবপ্রভাতে উদ্বোধিত হল অমনি মধুসূদনের প্রতিভা তখনকার বাংলাভাষার পায়ে চলা পথকে আধুনিককালে রথযাত্রার উপযোগী করে তোলাকে দুরাশা বলে মনে করলে না ।
” —রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মাইকেল মধুসূদন দত্ত ১৮২৪ খ্রিস্টাব্দের ২৫ জানুয়ারি বর্তমান বাংলাদেশের যশোহর জেলার সাগরদাঁড়ি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন । তাঁর পিতা রাজনারায়ণ দত্ত পেশায় ছিলেন সম্ভ্রান্ত আইনজীবী , মাতা জাহুবীদেবীর তত্ত্বাবধানে তাঁর লেখাপড়া গ্রামের পাঠশালায় শুরু হয় । বেশ কিছু পরে ১৮৩৭ খ্রিস্টাব্দে তিনি কলকাতায় এসে হিন্দু কলেজে ভরতি হন । কবির জীবনে হিন্দু কলেজের যথেষ্ট প্রভাব ছিল । ইংরেজি ভাষায় ছিল তাঁর অসাধারণ দক্ষতা । ১৮৪৩ খ্রিস্টাব্দে বিলেতে গিয়ে খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করে তিনি ‘ মাইকেল ' নামধারী হন । ছাত্রজীবন থেকে বিভিন্ন ইংরেজি রচনার পাশাপাশি ‘ TheCaptive Lady ' এবং ' Visions of the Past ' নামের দুখানি গ্রন্থও তাঁর প্রকাশিত হয় । ১৮৫৬ খ্রিস্টাব্দে তাঁর পিতার মৃত্যুর পর কলকাতায় ফিরে এলে একে একে বেশ কতকগুলি বাংলা নাটক তিনি রচনা করেন । সেগুলি যথাক্রমে — ‘ শর্মিষ্ঠা ’ , ‘ একেই কি বলে সভ্যতা ’ , ‘ বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রোঁ ’ , ‘ পদ্মাবতী ’ , ‘ কৃয়কুমারী ’ প্রভৃতি । বাংলা ভাষায় ‘ Blank Verse ’ বা ‘ অমিত্রাক্ষর ছন্দ ’ - এর স্রষ্টা তিনিই । ' তিলোত্তমাসম্ভব কাব্য ’ - এ এই ছন্দের প্রয়োগ করে তিনি তাঁর ছন্দসৃষ্টির দক্ষতা প্রমাণ করেছিলেন প্রাথমিকভাবে ; পরে এই ছন্দেই আরও গভীর দক্ষতায় তিনি রচনা করেন ‘ মেঘনাদবধ কাব্য ’ , ‘ বীরাঙ্গনা কাব্য ’ , ‘ ব্রজাঙ্গনা কাব্য ’ , ‘ তিলোত্তমাসম্ভব কাব্য ’ । ইংরেজি সনেট - এর অনুসরণে বাংলায় ‘ চতুর্দশপদী কবিতাবলী ’ রচনার প্রথম কৃতিত্বও তাঁর । ‘ চতুর্দশপদী কবিতাবলী ’ তাঁর প্রতিভার অনন্য কৃতিত্ব । জীবনের শেষপর্বে ‘ হেক্টর বধ ’ নামে তাঁর একটি গদ্য আখ্যান প্রকাশিত হয় । ১৮৭৩ খ্রিস্টাব্দের ২৯ জুন এই মহাকবির প্রয়াণ ঘটে ।
উৎসঃ
‘ বঙ্গভূমির প্রতি ’ মাইকেল মধুসূদন দত্তের একটি গীতিকবিতা । ‘ মধুসূদন রচনাবলী ’ সংকলন করতে গিয়ে সংকলক এই কবিতাটিকে সরাসরি সংকলন করেছিলেন গ্রন্থেরই ‘ নানা কবিতা ’ বিভাগে । ১৮৬২ খ্রিস্টাব্দের ৯ জুন ফ্রান্সে যাওয়ার পূর্বে ৫ জুন কবি এই কবিতাটি রচনা করেন । বন্ধু গৌরদাস বসাককে লেখা একটি চিঠিতে এর উল্লেখ আছে ।
পাঠপ্রসঙ্গঃ
বঙ্গমাতার কোল ছেড়ে একদা কবি শ্রীমধুসূদন চলে গিয়েছিলেন অনেক দূরে । প্রথমে তিনি গিয়েছিলেন স্বদেশের মাদ্রাজে , পরে ইংল্যান্ডে এবং তারও পরে ফ্রান্সের ভার্সাই নগরে । দুরন্ত প্রতিভাবান , ইংরেজি সাহিত্যের প্রবল অনুরাগী মধুসূদন ভেবেছিলেন বিশ্ব কাব্যমঞ্চে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করে যশস্বী হবেন । তাই তাঁর মনে হয়েছে , মাতা বঙ্গভূমির প্রতি তিনি কোনোদিনই যথেষ্ট সচেতন থাকেননি ; তেমনভাবে কোনো দায়িত্বপালন করেননি । তাই এই কবিতায় তিনি বঙ্গমাতা বঙ্গভূমিকে যেন পূজা করেছেন । তাঁর বক্তব্য তিনি মাকে ভুলে থাকলেও মা যেন তাঁকে মনে রাখেন । মার মন যেন কিছুতেই মধুহীন না হয় ।
বিষয় সংক্ষেপঃ
মা যেন তাঁর চিরদাস কবিকে মনে রাখেন , বঙ্গভূমির প্রতি কবির এই মিনতি । মনের ইচ্ছাপূরণ করতে যদি কোনো ভুল ঘটে থাকে , তবুও মা যেন তাঁর লালপদ্ম সদৃশ মনকে মধুহীন না করেন । বিদেশে দৈবের বা ভাগ্যের কারণে যদি কবির জীবনতারা খসে পড়ে দেহের আকাশ থেকে , তাতে কবির কোনো খেদ বা দুঃখ নেই । কারণ কবি জানেন জন্ম নিলে মরতে একদিন হবেই ; কেউ কোথাও অমর নয় । নদীতে যেমন জল কখনও স্থির থাকে না , তেমনি জীবননদীতেও প্রাণ স্থির বা অচঞ্চল নয় । কিন্তু মা যদি কবিকে মনে রাখেন , তাহলে কবি মৃত্যুকেও ভয় পান না ।
কারণ অমরতা দানকারী অমৃতে যদি মাছি গিয়ে পড়ে , তবে সে অমর হয় না , তারও মৃত্যু হয় । মানবসমাজে সেই ধন্য যাকে মানুষ কখনও ভোলে না , মনের মন্দিরে চিরকালের আসন দিয়ে ধরে রাখে । কিন্তু কবির এমন কোন্ গুণ আছে যে , দেশ - মায়ের কাছে এমন অমরতা কবি দাবি করতে পারেন । তবে শ্যামা জন্মদাত্রী যদি তাঁকে দয়া করেন , ভুল বা দোষকে গুণ বলে ধরে নেন ; তাহলে তিনি সুবরদাত্রী বলে কবিকে অমরতার বর দান করতে পারেন । কবি যেন স্মৃতিজলে ফুটে থাকেন মধুমাখা পদ্মের মতো , বসন্তে কিংবা শরতে ।
নামকরণঃ
নামকরণ সাহিত্যের এমন একটি বিষয় , যা যে - কোনো সাহিত্যসৃষ্টির ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ , কেন - না উক্ত রচনার শিরোনামই পাঠকের সঙ্গে রচনাটির প্রাথমিক পরিচয় করিয়ে দেয় । কবিতার ক্ষেত্রে এই ভাবনা আরও যুক্তিসংগত , কারণ কবিতা অন্যান্য রচনার থেকে অনেক জটিল । কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত তাঁর এই কবিতায় মনের যে ভাবটিকে সর্বাধিক প্রাধান্য দিয়েছেন , তা হল — দেশমাতৃকার প্রতি তাঁর অকৃত্রিম ভালোবাসা । তাঁর প্রবাসী মন সর্বদা ছুটে চলেছে যেন বঙ্গমাতাকে তথা বঙ্গভূমিকে বন্দনা জানাতে । মনের সাধপূরণ করতে তাঁকে বরণ করে নিতে হয়েছে অনিবার্য প্রবাসজীবন । কিন্তু তিনি দেশমাতৃকার কাছে যেন নিজ মনটিকে গচ্ছিত রেখেছেন । সমগ্র কবিতাটিতে মায়ের কাছে সন্তানের একান্ত আবেদন - নিবেদনই চূড়ান্ত রূপলাভ করেছে । অর্থাৎ মায়ের প্রতি সন্তানের নিজস্ব নিবেদনই কবিতাটিতে প্রাধান্য পেয়েছে । অতএব যাঁর কাছে তাঁর এই আত্মনিবেদন যেহেতু তিনি বঙ্গমাতা , তাই কবির এই কবিতার নামকরণ যথার্থ ও সার্থক ।
প্রশ্ন উত্তর
◽সঠিক উত্তরটি নির্বাচন করো
প্রতিটি প্রশ্নের মান-১
1. ‘ বঙ্গভূমির প্রতি ’ কবিতার কবি ( রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর / মাইকেল মধুসূদন দত্ত / সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত ) ।
উত্তরঃ মাইকেল মধুসূদন দত্ত
2. কবি বঙ্গভূমির কাছে প্রার্থনা করেছেন ( অর্থ / মোক্ষ / অমরতা ) ।
উত্তরঃঅমরতা
3.‘ মধুহীন কোরো না গো তব মনঃকোকনদে ।'— এখানে ‘ মধু ’ বলতে বোঝানো হয়েছে ( কবি মধুসূদন / মধু / সুধা ) -কে ।
উত্তরঃকবি মধুসূদন
4. ‘ কোকনদ ’ শব্দের অর্থ হল – ( লাল পদ্ম / নীল পদ্ম / সাদা পদ্ম / লাল গোলাপ )
উত্তরঃলাল পদ্ম
5.কবি জীবনকে তুলনা করেছেন ( নদের সঙ্গে / সমুদ্রের সঙ্গে / মরীচিকার সঙ্গে ) ।
উত্তরঃনদের সঙ্গে
6. নরকুলে সে - ই ধন্য ( লোকে যাকে ভুলে যায় / লোকে যাকে ভোলে না / যে প্রচুর ধনসম্পদ লাভ করে ) ।
উত্তরঃলোকে যাকে ভোলে না
7. মধুময় তামরস / কি বসন্ত , কি ( মাঘে / শরদে / আষাঢ়ে )
উত্তরঃশরদে
◽শূন্যস্থান পূরণ করো
প্রতিটি প্রশ্নের মান-১
1.রেখো না দাসেরে মনে, এ➖➖➖ করি পদে।
উত্তরঃ মিনতি
2. ➖➖➖ কোরো নাগো তব মনঃ কোকনদে।
উত্তরঃ মধুহিন
3. এ➖➖➖হতে নাহি ➖➖➖ তাহে।
উত্তরঃ দেহ আকাশ, খেদ
4. চির স্থির কবে➖➖➖ হয় রে জীবন নদে?
উত্তরঃ নীর
5. মনের মন্দিরে সদা সেবে➖➖➖।
উত্তরঃ সর্বজন
6. ➖➖➖ তামরস কি বসন্ত, কি শরদে!
উত্তরঃ মধুময়
◽অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর
প্রতিটি প্রশ্নের মান-১
১.‘ বঙ্গভূমির প্রতি ’ কবিতায় এক বিদেশি কবির নাম আছে , তিনি কে ?
উঃ‘ বঙ্গভূমির প্রতি ’ কবিতায় যে বিদেশি কবির নাম আছে , তিনি হলেন ইংরেজ কবি লর্ড বায়রন ।
২. মা যাতে মনে রাখেন , সেইজন্য কবি নিজেকে কী বলে উল্লেখ করেছেন ?
উঃ মা - এর মনে রাখার জন্য কবি নিজেকে ‘ দাস ’ বলে উল্লেখ করেছেন ।
৩.‘ প্রবাস ’ বলতে কী বোঝায় ?
উঃ ‘ প্রবাস ’ বলতে বোঝায় — বিদেশ ।
৪.‘ মক্ষিকা ’ শব্দটির অর্থ কী ?
উঃ ‘ মক্ষিকা ’ শব্দটির অর্থ হল ‘ মাছি ’ ।
৫. ‘ অমৃত ’ শব্দটি দিয়ে কবি কী বোঝাতে চেয়েছেন ?
উঃ অমৃত ’ শব্দটি দিয়ে কবি বোঝাতে চেয়েছেন — এমন এক পানীয় , যা পান করলে মৃত্যু হয় না ।
৬. ‘ সুবরদে ’ শব্দটি দিয়ে কবি কাকে সম্বোধন করেছেন ?
উঃ সুবরদে ’ শব্দটির অর্থ হল — সুবরদাত্রী , এই শব্দ দ্বারা তিনি বঙ্গভূমিকে সম্বোধন করেছেন ।
৭.‘ ফুটি যেন স্মৃতি - জলে , ' — এখানে কার , কী হয়ে ফোটার কথা বলা হয়েছে ?
উঃ উদ্ধৃত অংশে কবির স্মৃতি জল পদ্ম হয়ে ফুটে ওঠার কথা বলা হয়েছে ।
◽দুটি বা তিনটি বাক্যে উত্তর দাও
প্রতিটি প্রশ্নের মান -২
১. ' বঙ্গভূমির প্রতি ' কবিতায় কবির প্রথম প্রার্থনা কী ছিল ?
উঃ প্রবাসে থাকাকালীন কবি এক মুহূর্তের জন্যও তাঁর অতি প্রিয় বঙ্গভূমিকে ভুলতে পারেননি । তাই বঙ্গভূমির প্রতি তাঁর প্রথম প্রার্থনাই ছিল , মা যেন দাস অর্থাৎ কবিকে মনে রাখেন । এই প্রার্থনাকেই তিনি ‘ মিনতি ’ বলেছেন ।
২. ‘ প্রবাসে , দৈবের বশে , ' — প্রবাসে থাকাকালীন কোন্ ঘটনা ঘটার প্রসঙ্গ এনেছেন কবি ?
উঃ প্রবাসে থাকাকালীন ভাগ্যের পরিহাসে কবি তাঁর মৃত্যু ঘটার প্রসঙ্গ এনেছেন । এক্ষেত্রে তাঁর বক্তব্য ভাগ্যের পরিহাসে যদি তাঁর জীবনতারা দেহ - আকাশ থেকে খসে যায় , তবু তিনি সেজন্য দুঃখ করবেন না ।
৩. ‘ চিরস্থির কবে নীর , হায় রে , জীবন - নদে ? ' — এই উদাহরণের আড়ালে কবি কী বলতে চেয়েছেন ?
উঃ ‘ বঙ্গভূমির প্রতি ’ কবিতায় কবি বলতে চেয়েছেন মানুষ জন্মগ্রহণ করলে তাকে একদিন মরতেই হয় , কেউই অমর নয় ।
যেমন জীবনরূপ নদীতে জল কখনও স্থির হয়ে থাকে না , তেমনি মানুষের জীবনও যে - কোনো দিন শেষ হয়ে যেতে পারে ।
৪. ' হেন অমরতা আমি , ' — এখানে কবির অমরতা লাভের রূপটি কেমন ?
উঃ ‘ বঙ্গভূমির প্রতি ' কবিতাটিতে কবি জন্মভূমির প্রতি তাঁর অকৃত্রিম শ্রদ্ধা - ভালোবাসা প্রকাশ করেছেন । মাতৃরূপিণী শ্যামা - জন্মদে - র কাছে সেই অমরতা প্রার্থনা করেছেন , যে অমরতা ধরা থাকে মানবমনে । কবির অমরতা হল মানুষ যেন তাঁকে না ভোলে , মনের মন্দিরে সর্বদা ধরে রাখে ।
৫. ভুল দোষ , গুণ ধরো , ' — ' ভুল দোষ ’ , বা ‘ গুণ ’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে ?
উঃ কবি মধুসূদন মাতৃভাষাকে উপেক্ষা করে , স্বদেশ ত্যাগ করে , বিদেশে গিয়েছিলেন বিদেশি ভাষায় সাহিত্যচর্চা করে খ্যাতিমান হবেন বলে । মনের এই সাধকেই ‘ ভুল দোষ ’ বলা হয়েছে । আর কাব্য - নাটক রচনা করে তিনি যে বঙ্গভূমির সেবা করতে চান , তাকে ‘ গুণ ’ বলে প্রচার করেছেন ।
◽কমবেশি ছয়টি বাক্যে উত্তর দাও
প্রতিটি প্রশ্নের মান -৩
১.‘ বঙ্গভূমির প্রতি ' কবিতাটি কার লেখা ? বঙ্গভূমিকে কবি কী মিনতি করেছেন ?
উঃ ‘ বঙ্গভূমির প্রতি ' কবিতাটি কবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের লেখা । কবি তাঁর প্রবাসজীবনে ব্যথাভরা মন নিয়ে বঙ্গভূমিকে আন্তরিকভাবে স্মরণ করেছেন । তাঁর মনে হয়েছে , মা - এর স্নেহচ্ছায়া থেকে তিনি দূরে চলে এসেছেন বলে মা বুঝি তাঁকে ভুলে গেছেন । তাই তিনি মা - এর কাছে আত্মনিবেদনের মাধ্যমে করুণ মিনতি জানিয়েছেন । তাঁর এই মিনতিটি হল — মা যেন তাঁর মাতৃদাস এই সন্তানকে ভুলে না যান । মনের সাধ সাধন করতে গিয়ে যদি কোনো ভুল তাঁর হয়ে থাকে , তবু মায়ের মন যেন কখনও মধুহীন না হয় ।
২.প্রবাসকালে কী ঘটলে কবি তার জন্য খেদ করবেন না ?
উঃ কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত একদা স্বেচ্ছায় প্রবাসজীবন বেছে নিয়েছিলেন । ফ্রান্সে যাওয়ার আগে তিনি বঙ্গভূমির প্রতি এক অকৃত্রিম টান বা আকর্ষণ অনুভব করেন । তারই অনিবার্য ছাপ লক্ষ করা যায় এই কবিতায় । তিনি বলেন — দৈব অনুগ্রহে প্রবাসে যদি তাঁর মৃত্যু হয় , তবে তার জন্য তাঁর কোনো খেদ থাকবে না । কারণ জন্ম হলে মৃত্যু ঘটবেই । কেউই এই পৃথিবীতে অমর নয় ।
৩. মৃত্যুর অনিবার্যতা বোঝাতে কবি কবিতায় যে দুটি উদাহরণ রেখেছেন , সে দুটির উল্লেখ করো ।
উঃ মৃত্যু যে অনিবার্য তা বোঝাতে কবি প্রথমে বলেছেন— জীবননদীর জল কখনোই স্থির নয় –
‘ চিরস্থির করে নীর , হায় রে , জীবন - নদে ?
অন্যদিকে কবি বলেছেন — কোনো মাছি যদি অমৃতে পড়ে , তবুও অমৃতের সঞ্জীবনী গুণ তাকে অমরতা দেয় না , পরিবর্তে তার মৃত্যু হয় — ‘ মক্ষিকাও গলে না গো , পড়িলে অমৃত - হ্রদে ! ’
৪. ‘ বঙ্গভূমির প্রতি ' কবিতায় কবি নির্দেশিত প্রকৃত অমরতার রূপটি কেমন ?
উঃ ‘ বঙ্গভূমির প্রতি ’ কবিতায় কবি দেশমাতৃকার কাছে তাঁর মনোগত অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছেন । কবি বলেছেন — তিনি যদিও যথেষ্ট গুণের অধিকারী নন , তবুও অমরতার প্রতি তাঁর আসক্তি আছে । সেই অমরতা হল – লোকে যেন তাঁকে না ভোলে , মনের মন্দিরে তাঁকে ধরে রাখে এবং স্মরণ করে ।
৫. অমরতার পরিপ্রেক্ষিতে কবি মায়ের কাছে কী বর প্রত্যাশা করেছেন ?
উঃ ‘ বঙ্গভূমির প্রতি ’ কবিতায় দেশ মায়ের কাছে অমরতা চাইতে গিয়ে কবি মনে করেছেন তাঁর তেমন গুণ নেই , তবে মা যদি দয়া করে তাঁর ভুল - দোষগুলিকে গুণ বলে ধরেন , তবে তাঁকে বর দান করতে পারেন । যেহেতু মা সুবরদাত্রী , তাই সে বর অবশ্যই অমরতার বর , যে অমরতার অর্থ সৃষ্টির জন্য জনমানসে বেঁচে থাকা । কবি মায়ের কাছে এই বর প্রত্যাশা করেছেন ।
৬. কবি সুবরদে বলতে কাকে বুঝিয়েছেন ? তাঁর কাছে কবি কী বর চেয়েছেন ? এভাবে ‘ বর ’ প্রার্থনার কারণ উল্লেখ করো ।
উঃ কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত তাঁর ‘ বঙ্গভূমি ’ কবিতায় ‘ সুবরদে ’ বলে মাতৃভূমি বঙ্গদেশকে বুঝিয়েছেন । মাতৃভূমির কাছে কবি অমর হওয়ার বর চেয়েছেন । কবি মনে করেন তিনি জীবনে বহু ভুল করেছেন । ভুল করে তিনি বহু মূল্যবান সময় , সম্পদ , শক্তি নষ্ট করেছেন । মাতৃভূমির জন্য তিনি কিছু করতে পারেননি । মাতৃভূমি মাতৃভাষাকে অবহেলা করে তিনি বিদেশে পাড়ি দিয়েছেন । তাই কবি অনুতাপে মাতৃভূমির কাছে এভাবে বর প্রার্থনা করেছেন ।
◽রচনা ধর্মীয় প্রশ্ন উত্তর
প্রতিটি প্রশ্নের মান -৫
১. ‘ বঙ্গভূমির প্রতি ’ কবিতাটি একটি সার্থক গীতিকবিতা কি না আলোচনা করো ।
উঃ ইউরোপে থাকাকালীন ফ্রান্সে যাওয়ার পূর্বে মাইকেল মধুসূদন দত্ত ‘ বঙ্গভূমির প্রতি ’ কবিতাটি রচনা করেন । এটি একটি গীতিকবিতা । এই ধরনের কবিতা হল এমন কবিতা , যেখানে কবির মনোভাবই কাব্যিক ব্যঞ্জনায় সার্থক রূপলাভ করে । প্রবাসে কবি নিজেকে বৃহত্তম কাব্যমঞ্চের শ্রেষ্ঠ কবি হিসেবে প্রকাশ করতে চেয়েছিলেন । বেশ কিছু কাব্যকবিতা ইংরেজি ভাষায় প্রকাশিত হয়েছিল কবির । কিন্তু মাতৃভাষার প্রতি অকৃত্রিম টান অনুভব করেছিলেন কবি মনের গভীরে । দেশ , দেশীয় ভাষা , দেশের সারস্বত সমাজ , সাধারণ মানুষ তাঁকে গভীরভাবে টানলেও ; কবিতাটির রচনাকালে তিনি এসব কিছু থেকে ছিলেন বহুদূরে । তাই তাঁর মনের যন্ত্রণাই এই কবিতাটিতে প্রধান ভাব হিসেবে ব্যঞ্জনাময় হয়ে উঠেছে । ছন্দ - অলংকার ও ভাষার সুন্দর প্রকাশে কবিতাটি তাই আধুনিক পদ্ধতিতে ভাবপ্রকাশের শ্রেষ্ঠ নিদর্শন হয়ে উঠেছে । কবিতার বক্তা অর্থাৎ কবি তাঁর মনের ব্যক্তিগত ভাবকেই কবিতায় বড়ো করে স্থান করে দিয়েছেন , আর এতেই কবিতাটি সার্থক হয়ে উঠেছে ।
২.‘ বঙ্গভূমির প্রতি ' কবিতায় কবির দেশভক্তির যে পরিচয় লিপিবদ্ধ আছে , তার পরিচয় দাও ।
উঃ আধুনিক যুগের মহাকাব্যকার মাইকেল মধুসূদন দত্তের ‘ বঙ্গভূমির প্রতি ’ কবিতাটি একটি গীতিকবিতা । কবিতায় প্রবাসে থাকাকালীন কবির দেশের প্রতি আন্তরিক টান ও ভালোবাসা প্রকাশিত হয়েছে । কবি তখন ইউরোপে , ফ্রান্সে যাওয়ার পূর্বে যখন তিনি এই কবিতা রচনা করেন , তখন তাঁর মনে প্রবল আবেগ দেশকে নিয়ে । তাই এই কবিতায় দেশকে মা সম্বোধন করে তিনি বলেন — মা যেন তাঁকে মনে রাখেন , মনের সাধ সাধন করতে গিয়ে যদি তিনি কোনো ভুল করে থাকেন , তবুও মা যেন তাঁর মনকুসুমকে মধুহীন না করেন । দেশমাতৃকাকে ভুলে তিনি যে প্রবাসী হয়েছেন — এই দুঃখ থেকে তিনি বলেন — ভাগ্যের বশে প্রবাসে যদি তাঁর মৃত্যুও হয় , তাতে তাঁর কোনো খেদ নেই ; কারণ তিনি জানেন , জন্ম নিলে একদিন মরতেই হয় । কেউই অমর নয় । মা যদি সন্তানকে মনে রাখেন , তবে তিনি যমকেও ভয় পান না । অবশেষে কবি বলেন — তাঁর তেমন কোনো গুণ নেই যা দিয়ে তিনি মা - এর কাছে অমরতা চাইতে পারেন । তবে মা যেহেতু সুবরদাত্রী , তাই তিনি যদি একান্তই কোনো বর দান করেন , তা যেন হয় দেশের মানুষের মনে চিরকালীন হয়ে বেঁচে থাকা । এইভাবেই কবি দেশমাতা তথা বঙ্গভূমির প্রতি তাঁর শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ করেছেন । ;
No comments:
Post a Comment