পাগলা গণেশ শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় প্রশ্ন উত্তর সপ্তম শ্রেণী | Pagla Ganesh by Shirshendu Mukhopadhyay Questions and Answers Class 7th - Psycho Principal

Fresh Topics

Monday, 16 December 2024

পাগলা গণেশ শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় প্রশ্ন উত্তর সপ্তম শ্রেণী | Pagla Ganesh by Shirshendu Mukhopadhyay Questions and Answers Class 7th

 

পাগলা গণেশ
শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়




👉(সপ্তম শ্রেণি বাংলা বঙ্গভূমির প্রতি প্রশ্ন উত্তর (MCQ, SAQ, LAQ)
 

⏹ লেখক পরিচিতিঃ
অসামান্য খ্যাতিমান ও জনপ্রিয় ঔপন্যাসিক ছোটোগল্প রচয়িতা শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় বর্তমান বাংলাদেশের ময়মনসিংহ জেলায় ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দের ২ নভেম্বর জন্মগ্রহণ করেন । বাবা রেলে চাকরি করতেন । সেই সূত্রে তাঁর বাল্য ও কৈশোর উত্তরবঙ্গ , আসাম , বিহারের বিভিন্ন জায়গায় অতিবাহিত হয় । নিজের এই সমৃদ্ধ অতীত তাঁর রচনায় প্রভাব ফেলেছে । চলমান জীবনের নিখুঁত উপস্থাপনার সঙ্গে সঙ্গে তার মানসিক জিজ্ঞাসার প্রকাশ তাঁর রচনাগুলিকে জীবনমুখী করে তোলে ৷ কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ পাস করার পর বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা দিয়ে তার কর্মজীবনের সূচনা এবং পরে সাংবাদিকতাকেই পেশা হিসেবে গ্রহণ করে ‘ আনন্দবাজার ’পত্রিকাগোষ্ঠীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত হন । অজস্র ছোটোগল্প ও উপন্যাস রচনা করেছেন তিনি । ‘ ঘুণপোকা ’ তাঁর প্রথম উপন্যাস । এ ছাড়া – ‘ উজান ’ , ‘ পারাপার ’ , ‘ মানবজমিন ’ , ‘ দূরবীণ ’ , ‘ পার্থিব ’ প্রভৃতি তাঁর উল্লেখনীয় উপন্যাস । তাঁর গল্পগ্রন্থ‘পাগলা গণেশ ’ , ‘ শ্রেষ্ঠ গল্প ’ , ‘ গল্পসমগ্র ’ ( তিন খণ্ড ) । শিশু বা কিশোর সাহিত্যেও শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের অবদান অপরিসীম । অনেক পুরস্কার তিনি লাভ করেছেন । সাহিত্যস্বীকৃতির সেই পুরস্কারগুলি হল — ‘ বিদ্যাসাগর পুরস্কার ’ , ‘ আনন্দ পুরস্কার ’ ও ১৯৮১ - তে পাওয়া ‘ সাহিত্য অকাদেমি ’ পুরস্কার।ক্রীড়াপ্রেমিক এই লেখকের লেখা গল্প ‘ ক্রিকেট ’ , ‘ ক্রীড়াভূমি ’ , ‘ খেলা ’ , ‘ খেলার ছল’ইত্যাদি ।


উৎসঃ
কল্পবিজ্ঞানের কাহিনি নিয়ে লেখা শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের গল্পগ্রন্থ ‘ পাগলা গণেশ ’ । ‘ পাগলা গণেশ ’ গল্পটি ওই গ্রন্থের নাম গল্প । গল্পটিতে লেখকের খেয়ালি কল্পনায় সমাজবাস্তবতার প্রকৃত স্বরূপ ধরা পড়েছে । 



পাঠ প্রসঙ্গঃ
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিদ্যা এবং যন্ত্রসভ্যতার প্রতি মানুষের নির্ভরতা সমগ্র পৃথিবীতে ক্রমে বৃদ্ধি পাচ্ছে । এতে মানুষের বেগ বাড়ছে , কিন্তু আবেগে পড়ছে ভাটা । এর থেকে যে সমস্যাটি প্রবল হয়ে উঠছে , সেটি হল – বিজ্ঞানের প্রতি অস্বাভাবিক নির্ভরতা ব্যাবহারিক জীবনকে ঋদ্ধ করলেও , মানব - মানসিকতায় শিল্পপ্রভাব ক্রমে বর্জিত হচ্ছে । অতএব ‘ পাগলা গণেশ ’ গল্পের মধ্যে প্রকাশিত বার্তাটি হল — মানসিক দিক থেকে মৃত্যুমুখিন পৃথিবীকে বাঁচাতে হবে । কেন - না মানুষ শুধু মেধায় বাঁচে না , মনেও বাঁচে । বিজ্ঞান - প্রযুক্তি - যন্ত্র যে আধুনিক ঝকঝকে জীবন উপহার দেয় , তাতে প্রয়োজনের অতিরিক্ত পাওয়া আছে , কিন্তু  জীবনের ছোঁয়া নেই । জীবনে মেধার প্রয়োজন তো আছে , কিন্তু তাতে মনস্বীতার স্পর্শ , কল্পনা ও মননের স্পর্শও জরুরি । তাই গল্পের পটভূমিতে গণেশ বিজ্ঞানের ছাত্র - অধ্যাপক ও বিজ্ঞানকর্মে লিপ্ত মানুষ হওয়া সত্ত্বেও , লক্ষ করেন সংস্কৃতির চর্চা থেমে গেছে , খেলাধুলার পাট চুকে গেছে , মহাকাশে পাড়ি জমাচ্ছে পৃথিবীর মানুষ , মানুষ মৃত্যুঞ্জয়ী হয়ে উঠছে । তাই তিনি হিমালয়ের গিরিগুহায় আশ্রয় নিয়ে অবিরাম ছবি আঁকা , গান - গাওয়া , ভাস্কর্য করা , কবিতার চর্চা করতে শুরু করেন । সঙ্গে সঙ্গে এই বার্তা দিয়ে যান — সৃষ্টিশীলতার মধ্যেই প্রকৃত বেঁচে থাকা সম্ভব ৷


⏹ বিষয় সংক্ষেপঃ
পৃথিবীতে এক ধরনের মলম আবিষ্কৃত হয়েছে , যা মাধ্যাকর্ষণ শক্তিকে ছাড়িয়ে উড়ান পথে মানুষকে নিয়ে যাচ্ছে । নানান ধরনের উড়ান যন্ত্রে উড়ে গিয়ে মানুষ ৩৫৮৯ সালে সূর্যের শেষ দুটো গ্রহও আবিষ্কার করে ফেলেছে । অনেকে মহাকাশের দূর দিগন্তে পাড়ি দিয়ে একশো - দেড়শো বছর পরে ফিরছে । পৃথিবীতে মানুষ মৃত্যুহীন হয়ে গেছে । এই মানুষেরা গত দেড়শো বছরে পৃথিবীতে কোনো শিশুর জন্ম দেখেনি । পৃথিবী থেকে নান্দনিক সকল বিষয় উধাও হয়ে গেছে । মানুষ ঝুঁদ হয়ে আছে কেবল বিজ্ঞান নিয়ে । পাগলা গণেশ একে বাড়াবাড়ি মনে করেন । তিনি মৃত্যুঞ্জয় টনিক সেবন করে জীবনের শেষ প্রান্তকে বাঁধ দিয়ে ফেলেছেন । সুকুমার শিল্পবিরোধী আন্দোলন দেখেছেন তিনি । তিনি বেঁচে থাকার দীর্ঘ ক্লান্তি থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য হিমালয়ে নিপাট নির্জনতার সন্ধান করছেন । হিমালয়ও তাকে তা দিতে পারছে না । গণেশ কবিতা লিখছেন , গান গাইছেন , ছবি আঁকছেন । আর বিজ্ঞানের অবিরাম সাধনায় যারা মগ্ন তারা গণেশের এমন কাজকে অকেজো বলে অবহেলা করছে । তাই গণেশ পৃথিবীর ভারসাম্যের কথা ভাবেন । নিজের পারিবারিক জীবনও তিনি ভুলে গেছেন । বউ - ছেলেমেয়ে কারো মুখ তিনি মনে করতে পারেন না ৷ বহু বছর ধরে তারাও মহাজ্যোতিষ্কমণ্ডলে এক - একজন কৃতী বিজ্ঞানী । তারা আর আসে না । গণেশ কবিতা লিখছিলেন । লেখা পাতাগুলো তিনি বাতাসে উড়িয়ে দিচ্ছিলেন । একজন পুলিশ আকাশপথে ধামা থেকে নেমে এসে চিনতে পেরেছিল — গণেশবাবু তার স্যার , সায়েন্স কলেজের প্রাক্তন অধ্যাপক ৷ পুলিশটি একখানা পাতা কুড়িয়ে নিয়ে পড়ে কিছু বুঝতে না পারলেও নিজের প্রিয় শৈশবকে ছুঁতে পেরেছিল । নতুন করে শৈশবকে অনুভব করার আনন্দ খুঁজে পেয়েছিল সে । সে তার মাকে আর বউকেও এনেছিল । সেদিন একটা নান্দনিকচর্চার ছোটোখাটো আসর হয়েছিল গণেশের ডেরায় । সে তার পুলিশ বন্ধুদের আনতে শুরু করে । তারপর গণেশের ডেরায় লোক আসা বাড়তে থাকে । সপ্তাহখানেক পরে রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিব এসে গণেশের কাণ্ডটাকে বিজ্ঞানবিরুদ্ধ ঘোষণা করে জানায় পৃথিবীর লোক গান গাইছে , কবিতা লিখছে , ছবি আঁকছে । গণেশ তখন তৃপ্তির হাসি হেসে তার প্রসন্নতাকে উজাড় করে দিয়ে বলেন , ‘ তাহলে আর ভয় নেই । দুনিয়াটা বেঁচে যাবে।


⏹ নাম করণঃ
সাহিত্যিক মাত্রেই তাঁর সৃজিত সাহিত্যনির্মিতির নামকরণ করেন এবং তা করা হয় যথেষ্ট গুরুত্বের সঙ্গে , কেন - না নামকরণ বা শিরোনামই সংশ্লিষ্ট সাহিত্যশৈলীটিকে প্রথম পরিচিত করে তোলে পাঠকচক্ষে । সেদিক থেকে বিবেচনা করলে নামকরণ হল সাহিত্য ও পাঠকের মধ্যে সংযোগসেতু । গল্পের ক্ষেত্রে নামকরণে করা হয়ে থাকে কোন বিশিষ্ট চরিত্র , সংশ্লিষ্ট কোনো ভাববাহী ■ } ঘটনা , কিংবা কোনো ব্যঞ্জনা অথবা বক্তব্যবিষয়ের প্রতীকতা প্রকাশ করে । ‘ পাগলা গণেশ ’ গল্পের নামকরণটি নির্মিত হয়েছে ‘ পাগলা ’ ও ‘ গণেশ ’ শব্দদুটির অসাধারণ ব্যঞ্জনা নিয়ে এবং গল্পের কাহিনিরসের সঙ্গে শব্দদুটির অনন্য সংযুক্তিসাধন করে । বলাবাহুল্য গল্পের চমকপ্রদ বিষয়বস্তুটি এখানে নামকরণের প্রসঙ্গটিকে নিঃসন্দেহে সহায়তা দান করেছে । দেখা যায় ‘ গণেশ ’ শব্দটি পৌরাণিক । এর বিশেষণরূপে ‘ পাগলা ’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে নামকরণে । ফলত নামকরণে একটি দ্বিমাত্রিক বৈচিত্র্য এসেছে নিঃসন্দেহে । মহাভারতের লিপিকার গণেশের মতোই উক্ত গল্পের প্রধান তথা কেন্দ্রীয় চরিত্র ‘ গণেশ ’ - ও রচনাকার , তিনি কবিতা লেখেন , ভাস্কর্য করেন , গান গেয়ে ওঠেন ।
গল্পে দেখা যায় ৩৫৮৯ সালের প্রেক্ষাপটে যখন কবিতা - গান - কবি - কথাসাহিত্য - নাটক ইত্যাদি বিষয়চর্চা ‘ নিতান্ত পাগলামি ’ , ‘ দয়া - মায়া - করুণা - ভালোবাসা কেবলই ‘ অনাবশ্যক ভাবাবেগ ’ , তখন এককভাবে বিজ্ঞানচর্চার ঊর্ধ্বে উঠে মানবিক কাজ করতে চেয়েছিলেন গণেশ । বিজ্ঞানের অসম্ভব রকমের এককভাবে বাড়াবাড়িরও যে একটা সীমা থাকা উচিত এই বিশ্বাস নিয়ে পাগলের মতো মানবমনের সুকুমার শিল্পবোধগুলিকে চর্চিত রাখায় তৎপর হন গণেশ , অথচ তখন প্রতিটি মানুষই ঝুঁদ হয়ে আছে বিজ্ঞানে , সব মানুষই কম বেশি বিজ্ঞানকর্মে লিপ্ত । বিজ্ঞান বাদে অন্য কোনো চৰ্চাই তখন থেমে গেছে । মানবমনের সুকুমার বৃত্তিগুলি মরতে বসেছে । এমনকি মানুষ আর প্রকৃতির অঙ্গনে গিয়েও একটি মুহূর্ত অতিবাহিত করতে চায় না । গণেশ নিশ্চিত জানেন , কালের চাকার গতিকে একা তিনি উলটো দিকে ঘোরাতে পারবেন না । তবুও তিনি হিমালয়ের নির্জন গিরিগুহায় আশ্রয় নিয়ে সময়ের স্রোতকে নিজ ভাবনার অনুকূলে আনায় সচেষ্ট হন ।
অতএব রোমাঞ্চকর এই কল্পবিজ্ঞান গল্পে গণেশের একক এবং সাধু প্রচেষ্টাটিকেই পাগলামির নামান্তর হয়ে প্রকাশিত হতে দেখা যায় । গণেশ নামক ব্যক্তিটির সঙ্গে তার এই পাগলপনা নিবিড়ভাবে সংযুক্ত হয়ে গল্পের নামকরণটিকে অসাধারণ চমৎকারিত্ব দান করেছে বলে এই নামকরণটি সার্থক হয়েছে ।


সঠিক উত্তরটি বেছে নিয়ে লেখো :

প্রতিটি প্রশ্নের মান -১
১.  ' পাগলা গণেশ ' একটি বিষয়ক গল্প ৷  বিজ্ঞান / কল্পবিজ্ঞান / রূপকথা )
উত্তর কল্পবিজ্ঞান ।

২. ' অবজার্ভেটরি ' - র বাংলা প্রতিশব্দ ( পরীক্ষাগার / গবেষণাগার / নিরীক্ষণাগার ) ।
উত্তর নিরীক্ষণাগার ।

৩. সভ্যসমাজ থেকে দূরে পালিয়ে গিয়ে গণেশ ( হিমালয়ের গিরিগুহায় / গভীর জঙ্গলে / মহাকাশে ) আশ্রয় নিয়েছিলেন ।
উত্তর হিমালয়ের গিরিগুহায় ।

.  গল্পের তথ্য অনুসারে মৃত্যুঞ্জয় টনিক আবিষ্কার হয়েছিল ( ৩৫৮৯/৩৪৩৯/৩৫০০ ) সালে ।
উত্তর ৩৪৩৯ সালে ।

৫. গত এক দেড়শো বছরের মধ্যে কেউ পৃথিবীতে শিশুর কান্না শোনেনি , কারণ
(বিজ্ঞান নিয়ে সকলে ঝুঁদ হয়ে আছে / প্রত্যেকেই কোনো না কোনো বিজ্ঞানের বিজ্ঞানী / কবিতা , গান , ছবি আঁকা , কথাসাহিত্য , নাটক , সিনেমা এসব নিয়ে কেউ মাথা ঘামায় না
সব মানুষই বেঁচে আছে বলে নতুন মানুষের জন্ম হচ্ছে না ) ।
উত্তর: সব মানুষই বেছে আছে বলে নতুন মানুষের জন্ম হচ্ছেনা।

৬.  ‘ অনাবশ্যক ভাবাবেগ ’ বলতে
বিজ্ঞানচর্চা / শিল্পচর্চা /সাহিত্য - শিল্পচর্চার ) কথা বলা হচ্ছে ।
উত্তর: সাহিত্য - শিল্পচর্চার ) কথা বলা হচ্ছে ।

. “ ব্যতিক্রম অবশ্য এক আধজন আছে । ” — ব্যতিক্রম চরিত্রটি কে ?
( পাগলা গণেশ নিজেই / পাগলা গণেশের স্ত্রী / পাগলা গণেশের মেয়ের কথা বলা হচ্ছে ) । মৃত্যুঞ্জয় টনিক আবিষ্কার হয়েছিল ( পাগলা গণেশের দুশো বছর বয়সে / পাগলা গণেশের পঞ্চাশ বছর বয়সে / পাগলা গণেশের ষাট বছর বয়সে ) ।
উত্তর: পাগলা গণেশ নিজেই

. অন্তহীন আয়ুতে গণেশের উপলব্ধি হল
( মৃত্যুহীন জীবনের যন্ত্রণা / সুইসাইডের ইচ্ছা / মরা মানুষকে বাঁচিয়ে তোলা ) ।
উত্তর: মৃত্যুহীন জীবনের যন্ত্রণা ।

.গণেশ লেখে ( উপন্যাস / কবিতা / গল্প ) ।
উত্তর: কবিতা।

১০.গণেশের কবিতা ( আকাশ , বাতাস , প্রকৃতি / ছাত্র , ছাত্রের মা / পাঁচজন শ্রোতা ) শুনবে বলে গণেশের বিশ্বাস ।
উত্তর: আকাশ , বাতাস , প্রকৃতি।

১১.“ গণেশ তাদের মুখশ্রী ভুলে গেছে । ” কাদের ? ( ছাত্রদের / ছেলেমেয়েদের / বি জ্ঞানীদের ) ।
উত্তর: ছেলেমেয়েদের।

১২. গণেশকে কবিতায় পেলে গণেশ ( কবিতা সুর দিয়ে গান করে / অনেক কবিতা লেখে / কবিতা লেখার পাতা ভাসিয়ে দেয় )
উত্তর: কবিতা লেখার পাতা ভাসিয়ে দেয়।

১৩.‘ এক সপ্তাহ পরে ’ ( রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিব গণেশের ডেরায় নামলেন / সবাই হিজিবিজি ছবি আঁকছে / লোকে গান গাইতে লেগেছে ) ।
উত্তর: রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিব গণেশের ডেরায় নামলেন ।

১৪. ‘ পৃথিবী যে উচ্ছন্নে গেল ! ' — এই দুশ্চিন্তা হল ( পাগলা গণেশের / এক ভদ্রমহিলার / রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিবের ) ।
উত্তর: রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিবের

১৫. ‘ যাঃ তাহলে আর ভয় নেই ।'— ভয় ছিল ( গবেষণার / সুকুমার শিল্পে / পৃথিবী মরছে — এই মরে যাওয়াতে ) ।
উত্তর: পৃথিবী মরছে — এই মরে যাওয়াতে ।

১৬. - “ গণেশ হোঃ হোঃ করে হেসে উঠে বলল ” – ভাবদৃষ্টির পরিচয় হল ( সাফল্য / অবহেলা / খোঁচা দেওয়া ) ।
উত্তর: সাফল্য

১৭. ‘ দুনিয়াটা বেঁচে যাবে ...’– এই নিশ্চিন্ত ভাবটি হল ( পাগলা গণেশের / মৃত্যুহীন মানুষের / রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিবের ) ।
উত্তর: পাগলা গণেশের


সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তরঃ
প্রতিটি প্রশ্নের মান-১
১.‘ পাগলা গণেশ ’ গল্পটি কার লেখা ?
উঃ‘ পাগলা গণেশ ’ গল্পটি শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের লেখা ।

২. ‘ পাগলা গণেশ ’ গল্পটি লেখকের কোন গ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে ?
উঃ‘ পাগলা গণেশ ’ গল্পটি লেখকের ‘ পাগলা গণেশ ’ নামক গল্পগ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে ।

৩.‘ পাগলা গণেশ ’ গল্পটি কী ধরনের গল্প ?
উঃ ‘ পাগলা গণেশ ’ কল্পবিজ্ঞানের গল্প ।

৪.মাধ্যাকর্ষণ প্রতিরোধকারী মলম আবিষ্কারের পর পৃথিবীতে কীসের হিড়িক পড়ে গেছে ?
উঃ মাধ্যাকর্ষ প্রতিরোধকারী মলম আবিষ্কারের পর পৃথিবীতে নানারকম উড়ান যন্ত্র আবিষ্কারের হিড়িক পড়ে গেছে ।

৫.পাগলা গণেশের বয়স কত ?
উঃ পাগলা গণেশের বয়স দুশো বছর ।

৬.মাজ থেকে দেড়শো বছর আগে কী আবিষ্কার হয়েছিল ?
উঃ আজ থেকে দেড়শো বছর আগে মৃত্যুঞ্জয় টনিক আবিষ্কৃত হয়েছিল ।

৭.গণেশ কেন অমর হয়ে গেল ?
উঃ মৃত্যুঞ্জয় টনিক সেবন করে গণেশ অমর হয়ে গেল ।

৮.গণেশকে কীসের বাতিকে পেয়েছে ?
উঃ গণেশকে কবিতা লিখে আকাশে উড়িয়ে দেওয়ার বাতিকে পেয়েছে ।

৯.গণেশের ক - টি ছেলে ও ক - টি মেয়ে ?
উঃ গণেশের তিন ছেলে ও এক মেয়ে ৷

১০.গণেশের স্ত্রী কোথায় কাজ করেন ?
উঃ গণেশের স্ত্রী ক্যালিফোর্নিয়া মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্রে কাজ করেন ।

১১.গণেশ আগে কোথায় , কী পড়াতেন ?
উঃ গণেশ আগে কলকাতার সায়েন্স কলেজে মাইক্রো ইলেকট্রনিকস পড়াতেন ।

একমুখী তথ্যনুসন্ধানী প্রশ্ন উত্তরঃ
প্রতিটি প্রশ্নের মান-২
১.‘ পাগলা গণেশ ’ গল্পে সভ্যতার কোন সমস্যার দিকে ইঙ্গিত রয়েছে ?
উত্তরঃ আলোচ্য ‘ পাগলা গণেশ ’ নামক কল্পবিজ্ঞানধর্মী গল্পে দেখা যায় , মানবসভ্যতা বিজ্ঞানের হাত ধরে সুদূর ভবিষ্যতে উন্নতির শিখরে পৌছেছে । এই পরিস্থিতিতে বিজ্ঞানের বাড়াবাড়ি এবং মানবমনের সৃষ্টিশীলতার মৃত্যু হওয়ার সমস্যাটিকে ইঙ্গিতবাহী করে তোলা হয়েছে ।

২. ‘ পাগলা গণেশ ' গল্পে যেসকল উড়ানযন্ত্রের উল্লেখ আছে সেগুলির পরিচয় দাও ।
উত্তরঃ ‘ পাগলা গণেশ ’ গল্পে মাধ্যাকর্ষণ প্রতিরোধী মলম আবিষ্কারের ফলে নানারকম উড়ানযন্ত্র আবিষ্কারের হিড়িক পড়ে যায় । সেগুলি হল — ডাইনিদের বাহন ডান্ডাওলা ঝাঁটার মতো , নারদের ঢেঁকির মতো , কার্পেটর মতো , কার্তিকের বাহন ময়ূরের মতো সব উড়ানযন্ত্র ।

3.“ খামোখা সময় নষ্ট । ” — এমন ভাবনার কারণ কী ?
উত্তরঃ ঘরে ঘরে মানুষ বিজ্ঞান নিয়ে এমন ঝুঁদ হয়ে আছে যে , প্রতি ঘরের প্রত্যেকেই কোনো - না - কোনো বিজ্ঞানী । ফলে বিজ্ঞান চর্চা ছাড়া অন্য কোনো চর্চায় কেউ মাথা ঘামায় না ৷ কবিতা , গান , ছবি আঁকা , কথাসাহিত্য , নাটক সিনেমা এসব নিয়ে মাথা ঘামানো মানে খামোখা সময় নষ্ট করা । কারণ চারদিকে বিজ্ঞানচর্চার মধ্যে এসব চর্চা কোনো কাজে লাগে না ।

৪. “ খেলাধুলোর পাটও চুকে গেছে । ” — কীভাবে বোঝা গেল ? "
উত্তরঃ বিজ্ঞানের চরমতম সাফল্য ও প্রসারের যুগেও খেলাধুলোর বল থাকতেই পারে , কেন - না বিজ্ঞান মস্তিষ্কের বিষয় , খেলাধুলো শরীরচর্চা ও বিনোদনের ব্যাপার । তবুও যখন ‘ পাগলা গণেশ ’ সাহিত্য বিচিত্রা গল্পে ৩৫৮৯ সালের প্রেক্ষাপটে দেখা গেল — মানুয বিজ্ঞানে বুদ , খেলাধুলোর সের - জনপ্রিয় আসরগুলি , অর্থাৎ অলিম্পিক - বিশ্বকাপ উঠে গেছে , তখনই বোঝা যায় খেলাধুলোর পাট চুকে গেছে ।

৫. “ আছে শুধু বিজ্ঞান আর বিজ্ঞান । ” — পৃথিবীতে আর কী কী থাকার কথা ?
উত্তরঃ বিজ্ঞান মানুষের কাজে এক আশীর্বাদস্বরূপ শক্তির উৎস সন্দেহ নেই ৷ কিন্তু বিজ্ঞানই যে মানুষের জীবনের একমাত্র বিষয় , তা কখনো হতে পারে না । মানবমনের সুকুমার শিল্পবোধের নান্দনিক প্রকাশ কবিতা - গান - কবির মতো বিষয়গুলিও তাই মানবসভ্যতার অঙ্গ হওয়ার কথা ছিল । সেইসঙ্গে ক্রীড়া ও দয়া মায়া - করুণা - ভালোবাসার মতো আবেগ - অনুভূতিও থাকা জরুরি ।

৬. পাগলা গণেশের জীবনের প্রতি বিরক্তি কীভাবে গড়ে উঠেছিল ?
উত্তরঃ দুশো বছর বয়সি পাগলা গণেশের পঞ্চাশ বছর বয়সে যে মৃত্যুঞ্জয় টনিক আবিষ্কার হয়েছিল , তা সে সেবন করায় তার অমর হয়ে যায় । আর দেড়শো বছর আগে যে সুকুমার শিল্পবিরোধী আন্দোলন গড়ে উঠেছিল তা পাগলা গণেশের পছন্দ হয়নি । এইভাবেই তার জীবনের প্রতি বিরক্তি গড়ে ওঠে ।

৭. ঢেঁকি থেকে নামা আর ভেলা থেকে নামা লোক দুটোর সঙ্গে গণেশের কী কথা হয়েছিল ?
উত্তরঃ একটা ঢেঁকি আর একটা ভেলায় চড়ে আসা লোক দুটো গণেশের কাজের ফিরিস্তি থেকে জেনেছিল , গণেশ কবিতা লিখছে , কবিতার পাতা বাতাসে ভাসিয়ে দিচ্ছে — যদি কেউ কুড়িয়ে পায় আর পড়তে ইচ্ছে হয় তো পড়বে । এরপর লোক দুটো গণেশের কাজের প্রতি অবহেলার ভাব প্রকাশ করে ।

৮. ‘ একা সে পৃথিবীর গতি কিছুতেই উল্টে দিতে পারবে না ।'— গণেশের এরূপ ধারণা কেন হয়েছিল ?
উত্তরঃ গণেশ কবিতা লিখে দুটো লোকের কাছ থেকে অবহেলা পেয়েছে , আর গান গাওয়ায় দুটো পাখাওয়ালা ভদ্রলোকের কাছ থেকে কথার খোঁচা খেয়েছে এবং ছবি খোদাই করতে গিয়ে এক ভদ্রমহিলার কাছ থেকে সে উপেক্ষা লাভ করেছে । তারপরেই তার মনে হয়েছে , পৃথিবীর গতিপ্রকৃতি সে একা উলটে দিতে পারবে না ।

৯. ‘ পৃথিবীর বাঁচবার ওষুধ ।'— পৃথিবীর কী অসুখ করেছে বুঝিয়ে দাও ।
উত্তরঃ পৃথিবীর গভীর থেকে গভীরতর অসুখ এখন । এই অসুখে পৃথিবী বিষণ্ণ ৷ বিজ্ঞানের বাড়াবাড়িতে গার্হস্থ্যধর্মের মায়া - মমতার সবরকম পথ নষ্ট হয়ে গেছে । তাকে ফেরত পাওয়ার ওষুধ হল সুকুমার শিল্প । সুতরাং পৃথিবীর প্রকৃতপক্ষে গভীর অসুখ করেছে ।

১০. ‘ গণেশ হোঃ হোঃ করে হেসে উঠে বলল , ।'— গণেশের এই হাসির অর্থ লেখো ।
উত্তরাঃ গণেশের এই হাসিতে যে উচ্চধ্বনি আছে তাতে সাফল্যের আনন্দ প্রকাশিত । গণেশের বিশ্বাস পৃথিবীর লোক তার সঙ্গে আছে , তাই দুনিয়াটা সত্যিই বেঁচে যাবে ।


◽সংক্ষেপে উত্তর দাও :
প্রতিটি প্রশ্নের মান-৩
১ “ সালটা ৩৫৮৯ । ” — এই সময়ের মধ্যে পৃথিবীতে কোন্ কোন্ নতুন বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের কথা গল্পে বলা হয়েছে ?
উত্তরঃ শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের ‘ পাগলা গণেশ ’ গল্পটি একটি কল্পবিজ্ঞানের কাহিনি । আলোচ্য গল্পে ৩৫৮৯ সাল নাগাদ পৃথিবীতে কেমন অবস্থা তৈরি হতে পারে তারই ইঙ্গিত দিয়েছেন লেখক । উক্ত সময়ে নতুন নতুন বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার ঘটবে পৃথিবীতে । যেমন — ওই সময়ের মধ্যে মাধ্যাকর্ষণ প্রতিরোধকারী মলম আবিষ্কৃত হবে , যার ফলে পৃথিবীতে নানারকম উড়ানযন্ত্র আবিষ্কারের হিড়িক পড়ে যাবে । মানুষ মৃত্যুঞ্জয়ী টনিক আবিষ্কার করবে , সূর্যের আরও দুটি গ্রহ আবিষ্কৃত হবে এবং জানা যাবে যে সূর্যের আর কোনো গ্রহ নেই । ইতিমধ্যে চাঁদ , মঙ্গল , শুক্র গ্রহে মানুষ ল্যাবরেটরি স্থাপন করবে ।

২. “ ওসব অনাবশ্যক ভাবাবেগ কোনো কাজেই লাগে না । ” — ‘ অনাবশ্যক ভাবাবেগ ’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে ? তাকে সত্যিই তোমার ‘ অনাবশ্যক ' বলে মনে হয় কি ?
উত্তরঃ প্রশ্নোক্ত অংশটি শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের ‘ পাগলা গণেশ ’ নামক গল্প থেকে নেওয়া হয়েছে । ‘ অনাবশ্যক ভাবাবেগ ’ বলতে কিছু শিল্পসৃষ্টির কথা বলা হয়েছে । যেমন — কবিতা , গান , ছবি আঁকা , কথাসাহিত্য , নাটক , সিনেমা প্রভৃতির চর্চা ।
আলোচ্য গল্পে লেখক ৩৫৮৯ সালের যে সময়ের প্রতি ইঙ্গিত করেছেন , সেই সময়ে মানুষ বিজ্ঞান ছাড়া অন্য কিছুর চর্চাই করবে না হয়তো , তাই তাদের কাছে মনের আবেগের কোনো মূল্য থাকবে না । তাই শিল্পেরও কোনো মর্যাদা থাকবে না । কিন্তু আমার মনে হয় মনের আবেগ হারিয়ে গেলে পৃথিবীটা মরুভূমির মতোই রুক্ষ হয়ে পড়বে । পৃথিবীকে তথা মানুষকে তো বাঁচিয়ে রাখবে মনের আবেগ । কবিতা , গান , ছবি আঁকা প্রভৃতি চর্চা করলে , এগুলির মধ্যে মানুষ বেঁচে থাকার আনন্দ খুঁজে পাবে । তাই কবিতা , গান , আঁকা প্রভৃতির চর্চাকে ‘ অনাবশ্যক ’ মনে করি না ।

৩.  " “ চর্চার অভাবে মানুষের মনে আর ওসবের উদ্রেক হয় না । ” — মানুষের মন থেকে কোন্ কোন্ অনুভূতিগুলি হারিয়ে গেছে ?
উত্তরঃ প্রশ্নোক্ত অংশটি সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের কল্পবিজ্ঞানের কাহিনি ‘ পাগলা গণেশ ’ থেকে নেওয়া হয়েছে । মানুষের মন থেকে হারিয়ে গেছে সৌন্দর্য , দয়া - মায়া - করুণা প্রভৃতির অনুভূতি । এইসব অনুভূতিগুলির আর প্রয়োজন না থাকায় , মানুষের জীবনে এসবের চর্চাও আর হয় না ।

৪. “ ব্যতিক্রম অবশ্য এক আধজন আছে । ” — ব্যতিক্রমী মানুষটি কে ? কীভাবে তিনি ‘ ব্যতিক্রম ’ হয়ে উঠেছিলেন ?
উত্তর : প্রশ্নোক্ত অংশটি সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের ‘ পাগলা গণেশ ’ নামক কল্পবিজ্ঞানের কাহিনি থেকে নেওয়া হয়েছে । এখানে ব্যতিক্রমী মানুষটি হলেন স্বয়ং পাগলা গণেশ । এই গল্পে বর্ণিত ৩৫৯৮ সালেরও ১৫০ বছর পূর্বে যখন ‘ মৃত্যুঞ্জয় ‘ টনিক ’ আবিষ্কৃত হয় , তখন অন্য অনেকের মতো গণনাও তার ৫০ বছর বয়সে তা পান করেন এবং তার আর মৃত্যু হয় না । প্রায় সমসময় থেকেই শিল্পবিরোধী আন্দোলনও শুরু হয় । মানুষের কাছে তখন থেকেই বিজ্ঞান হয়ে ওঠে চর্চার একমাত্র বিষয় । চর্চার বিষয় থেকে অনিবার্যভাবে বাদ পড়ে যায় সাহিত্য , শিল্প , সংগীত । বিষয়গুলিকে মানুষ অনাবশ্যক বলে বিবেচিত করে । সমকালীন ঘটনার এই গতিপ্রকৃতি গণেশের পছন্দ হয় না । বিজ্ঞানের বাড়াবাড়িরও যে একটা সীমা থাকা দরকার এ তার মনে হয় । তাই একক প্রচেষ্টায় কালের গতিকে উলটো দিকে ফেরানোর ব্যর্থ চেষ্টা না করে গণেশ আশ্রয় নেন সভ্যসমাজ থেকে দূরে হিমালয়ের গিরিগুহায় । একান্ত নির্জনে ব্যতিক্রমী প্রচেষ্টায় গণেশ করতে শুরু কবিতাচর্চা , গান গাওয়া , ছবি আঁকার সাধনা । এভাবেই তিনি বেগের যুগে আবেগনির্ভরতার পথে , যুগবিরুদ্ধ কাজ করে ব্যতিক্রমী হয়ে ওঠেন ।

৫. “ ও মশাই , অমন বিকট শব্দ করছেন কেন ? ” — কার উদ্দেশে কারা এ কথা বলেছিল । কোন কাজকে তারা ‘ বিকট শব্দ ' মনে করেছিল ?
উত্তরঃ প্রশ্নোক্ত অংশটি শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের ‘ পাগলা গণেশ ’ নামক গল্প থেকে নেওয়া হয়েছে । কথাগুলি বলা হয়েছিল পাগলা গণেশের উদ্দেশে । দুটি পাখাওয়ালা লোক কথাগুলি বলেছিল । পাগলা গণেশের গানের গলা ভালোই ছিল । একদিন সন্ধেবেলা তিনি গলা ছেড়ে গান গাইতে শুরু করেন । সেইসময় দুটো লোক আকাশযানে চড়ে লাসা থেকে ইসলামাবাদ উড়ে যাচ্ছিল , যেতে যেতে তাদের কানে পাগলা গণেশের গানের শব্দ পৌঁছোয় । তারা গণেশের গানের কোনো অর্থ বা আবেগ বুঝতে পারে না , তাই তারা বিরক্ত হয় । তাদের মনে হয় ওই গানের আওয়াজ বিকট শব্দ ছাড়া আর কিছুই নয় । অর্থাৎ ব্যতিক্রমী মানুষ পাগলা গণেশের গলা ছেড়ে গান গাওয়াকেই মানুষরা মনে করে ‘ বিকট শব্দ ’ ।

৬. “ গণেশ তাদের মুখশ্রী ভুলে গেছে । ” — গণেশ কাদের মুখশ্রী ভুলে গেছে ? তার এই ভুলে যাওয়ার কারণ কী বলে তোমার মনে হয় ?
উত্তরঃ প্রশ্নোক্ত অংশটি শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের ‘ পাগলা গণেশ ' নামক গল্প থেকে নেওয়া হয়েছে । গণেশের তিন ছেলে ও এক মেয়ে আছে । তাদের মুখশ্রী তিনি একেবারে ভুলে গেছেন । গণেশ নিজে যেমন কৃতী মানুষ , তেমনই তার ছেলেমেয়েরাও প্রত্যেকেই এক - একজন কৃতী বিজ্ঞানী । বিগত একশো বছর ধরে ছেলেমেয়েদের দেখতে না পাওয়ার জন্যই পাগলা গণেশ ছেলেমেয়েদের মুখশ্রী ভুলে গেছেন ।

৭.‘ গণেশকে সসম্ভ্রমে অভিবাদন করে বলল , ” – কে , কী বলেছিল ? তার এভাবে তাকে সম্মান জানানোর কারণটি কী ?
উত্তরঃ প্রশ্নোক্ত অংশটি শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের ‘ পাগলা গণেশ ’ নামক গল্প থেকে নেওয়া হয়েছে । একজন পুলিশম্যান গণেশকে সম্ভ্রমের সঙ্গে অভিবাদন জানিয়ে বলেছিল — তিনি যে পাহাড়ময় এত কাগজ ছড়িয়ে দিচ্ছেন , তার কারণ কী ? এটা কী নতুন কোনো বিষয়ে গবেষণা ?
একদিন গণেশ যখন আপন মনে কবিতা লিখে বাতাসে ভাসিয়ে দিচ্ছিলেন , তখন আকাশ থেকে একটা পিপে মাটিতে নেমে আসে । তার মধ্য থেকে একজন পুলিশম্যান বেরিয়ে এসে গণেশকে ‘ স্যার ’ বলে অভিবাদন জানায় । গণেশ যখন কলকাতার সায়েন্স কলেজে মাইক্রো ইলেকট্রনিক্স পড়াতেন , তখন তার ছাত্র ছিল ওই পুলিশম্যান । তাই মাস্টারমশাইয়ের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতেই সে সসম্ভ্রমে তাকে ‘ স্যার ' অভিবাদন জানিয়ে সম্মান জানিয়েছে ।

৮.  “ আমি পৃথিবীকে বাঁচানোর চেষ্টা করছি । ” — বক্তা কীভাবে পৃথিবীকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছিল ? তার প্রয়াস শেষপর্যন্ত সফল হয়েছিল কি ?
উত্তরঃ প্রশ্নোক্ত অংশটি শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের ' পাগলা গণেশ ’ নামক গল্প থেকে নেওয়া হয়েছে । উক্তিটির বক্তা হলেন গণেশ নিজেই । গণেশ ছবি এঁকে , কবিতা লিখে , গান গেয়ে পৃথিবীকে বাঁচাতে চেয়েছিলেন ।
গণেশের প্রয়াস যে শেষপর্যন্ত সফল হয়েছিল , গল্পশেষে তার স্পষ্ট ইঙ্গিত রয়েছে । রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিব গণেশের একক প্রচেষ্টার খবর পেয়ে তাঁর বিমান থেকে গনেশের ডেরায় নেমে যে উক্তি করেছিলেন , তাতেই সেই ইঙ্গিত রয়েছে । তিনি বলেছিলেন — ‘ লোকে গান গাইতে লেগেছে , কবিতা মকসো করছে , হিজিবিজি ছবি আঁকছে । ' অর্থাৎ গণেশের প্রয়াস যে ব্যর্থ হয়নি , তা নিঃসন্দেহে বোঝা যায় ।

৯. “ লোকটা অসহায়ভাবে মাথা নেড়ে বলল , ” — এখানে কার কথা বলা হয়েছে ? সে কী বলল ? তার অসহায়ভাবে মাথা নাড়ার কারণ কী ?
উত্তরঃ শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের ‘ পাগলা গণেশ ’ গল্পের উদ্ধৃত অংশে ‘ লোকটা ’ অর্থাৎ পুলিশম্যানের কথা বলা হয়েছে , যে একসময় পাগলা গণেশের ছাত্র ছিল ৷
সে গণেশের কবিতা পড়ে অসহায়ভাবে মাথা নেড়ে বলল যে , সে কিছুই বুঝতে পারছে না । কোনোদিনই সে এ জিনিস পড়েনি এবং তাদের সময়ে শিক্ষানিকেতনে এসব পড়ানো হত না । এ আসলে উক্ত পুলিশম্যানের আমলে শিক্ষানিকেতনে কবিতা পড়ানো হত না । ফলে কবিতার সঙ্গে পুলিশম্যানের কোনো সম্পর্কই ছিল না । গণেশের কবিতা পড়ে সে কিছুই বুঝতে পারেনি । গণেশের কবিতার ভাব বা আবেদন তার মাথাতেই ঢোকেনি । এই কারণেই সে অসহায়ভাবে মাথা নেড়েছিল ।

১০. “ তিনজন মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে বসে রইল । ” — এই তিনজন কারা ? তাদের মুগ্ধতার কারণ কী ?
উত্তরঃ প্রশ্নোক্ত অংশটি শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের ‘ পাগলা গণেশ ’ নামক কল্পবিজ্ঞানের কাহিনি থেকে নেওয়া হয়েছে । আলোচ্য অংশের তিনজন হলেন গণেশের প্রাক্তন ছাত্র পুলিশম্যান , পুলিশম্যানের মা এবং স্ত্রী ।
পুলিশম্যান গণেশের কবিতা পাঠ করে কিছুই বুঝতে না পেরে চলে গেলেও পরের দিনই সে তার স্ত্রী এবং মা - কে নিয়ে আসে গণেশের কাছে , গণেশের কবিতা শোনার জন্য । গণেশ তাদের দেখে খুশি হয় এবং তাদের কবিতা শোনায় । তবে শুধু তাই নয় , গণেশ তাদের গান শোনায় এবং ছবিও দেখায় । গণেশের এই শিল্পকর্মে পুলিশম্যান , তার মা ও স্ত্রী মোহিত হয়ে পড়ে । তারা যেন কোনো অনাস্বাদিত বস্তুর রস আস্বাদন করতে থাকে । তাই তারা গণেশের কবিতা , গান শুনে এবং ছবি দেখে মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিল ।

১১.“ সালটা ৩৫৮৯। ” –সমসময়ের কেমন ছবি গল্পে ফুটে উঠেছে লেখো ।
উত্তরঃ শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের কল্পবিজ্ঞান - গল্প ‘ পাগলা গণেশ’ এর পটভূমিতে উল্লিখিত সালটি সুদূরতম ৩৫৮৯। স্বভাবতই কল্পনা করে নিতে হয় বিজ্ঞানের অকল্পনীয় উন্নতির যুগ সেটা । সে - যুগে মানুষ পৃথিবীর উপগ্রহ চঁাঁদে ছাড়াও অন্য দুই গ্রহ মঙ্গল ও শুক্রে ল্যাবরেটরি স্থাপন করেছে । আবিষ্কার করেছে সূর্যের আরও দুটি গ্রহ এবং নিশ্চিত হয়ে গেছে সূর্যের আর কোনো গ্রহ অনাবিষ্কৃত নেই । হাজার হাজার মানুষ মহাকাশের নক্ষত্রপুঞ্জের দিকে আলোর চেয়েও দ্রুতগতির মহাকাশযানে ১০০-১৫০ বছর আগে রওনা হয়ে গেছে বা যাচ্ছে । কাছেপিঠে যাওয়া মানুষেরা ফিরবে ফিরবে করবে । তবে তাদের আসার সময়টি নিশ্চিত নয় । এ পৃথিবীতে মানুষ মরণশীল নয় । পুরাণ কালের মানুষেরা আজও জীবন্ত । তাই মহাকাশগামী মানুষেরা ফিরে এলে সেই আমলের লোকেদের দেখতে পাবে । নতুন মানুষেরও আর জন্ম হচ্ছে না , তাই নবজাতকের কান্নাও আর শোনা যায় না । ঘরে ঘরে বিজ্ঞানী , মানুষ বিজ্ঞানে বুঁদ হয়ে আছে ৷

১২.“ বিজ্ঞান ছাড়া কোন চর্চাই নেই । ” –বিজ্ঞান বিষয়টি কীভাবে গুরুত্ব পাচ্ছে ? বিজ্ঞান ছাড়া অন্য কোনো বিষয়গুলি কী কী ? ( 3 + 2 )
উত্তরঃ ‘ পাগলা গণেশ ’ নামক কল্পবিজ্ঞান গল্পে সালটি তখন ৩৫৮৯। অভাবনীয় উন্নতিতে বিজ্ঞান মানুষের মনের সবটুকু আবিষ্কার করে নিয়েছে । ঘরে ঘরে মানুষ এত বেশি বিজ্ঞান নিয়ে ঝুঁদ হয়ে আছে যে , ‘ প্রতিঘরের প্রত্যেকেই কোনো না কোনো বিজ্ঞানের বিজ্ঞানী । ' তাই বিজ্ঞানমনস্ক মানুষের বিজ্ঞানচর্চায় বিজ্ঞান বিষয়টি সর্বক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে । চারদিকে শুধু বিজ্ঞান আর বিজ্ঞান । বিজ্ঞান ছাড়া অন্য যে যে বিষয়গুলি চর্চাহীন হয়ে পড়েছে , সেগুলির মধ্যে মূলত পড়ে কবিতা , গান , ছবি আঁকা , কথাসাহিত্য , নাটক , সিনেমা ইত্যাদি । এসব নিয়ে কেউ যেমন মাথা ঘামায় না , তেমনই কোনো কাজে লাগে না বলে এসব বিষয়কে মানুষ ‘ অনাবশ্যক ভাবাবেগ ’ বলে মনে করে । অন্যদিকে খেলাধুলোর পাটও চুকে গেছে । ‘ অলিম্পিক ’ ও ‘ বিশ্বকাপ ’ - এর মতো জনপ্রিয় ক্রীড়াবাসর অবলুপ্ত , দয়া - মায়া - করুণা - ভালোবাসা এসবের প্রয়োজন না থাকায় বা চর্চার অভাবে মানুষের মন থেকে এই আবেগ - অনুভূতিগুলিও মুছে গেছে ।

১৩. “ তা বলে হিমালয় যে খুব নির্জন জায়গা তা নয় । ” –হিমালয়ের প্রসঙ্গ এল কেন ? হিমালয়ও যে নির্জন জায়গা নয় তা কীভাবে প্রমাণিত হয় ? ( 3 + 2 )
উত্তরঃ ২০০ বছর বয়সি গণেশ বিজ্ঞানের চরম উৎকর্ষতার যুগে বিজ্ঞানের বাড়াবাড়িকেই ‘ সভ্যতার সংকট ’ বলে মনে করেছিলেন । তাই অনেক চেষ্টা করেও তিনি যখন দেখলেন কালের চাকার গতি উলটো দিকে ঘোরানো যাবে না , তখন তিনি সভ্যসমাজ থেকে দূরে থাকার জন্য হিমালয়ের এক গিরিগুহায় আশ্রয় নেন । তাই গল্পে হিমালয়ের প্রসঙ্গ এসেছে ।
আপাতদৃষ্টিতে হিমালয়কে খুব নির্মল জায়গা বলে মনে হলেও গণেশ জানেন তা সহজ সত্য নয় । কেন - না তখন এভারেস্টের চূড়া চেঁছে সেখানে হয়েছে অবজার্ভেটরি । রূপকুণ্ডে বায়োকেমিস্ট্রির ল্যাবরেটরি তৈরি হয়েছে , নামকরা অনেক নির্জন জায়গাই এখন মানুষের চলাচলে নির্জনতা হারিয়েছে । কে টু , কাঞ্চনজঙ্ঘা , যমুনেত্রী , গঙ্গোত্রী , মানসসরোবর সব জায়গাতেই কোনো - না - কোনো গবেষণাগার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে । সমুদ্রতলেও চলেছে নানান পরীক্ষানিরীক্ষা । তাই পরিষ্কার বোঝা যায় , ভূপৃষ্ঠে - ভূগর্ভে - অন্তরীক্ষে কোথাও নিবিড় - নির্জনতা নেই ।

১৪. ‘ যাঃ তাহলে আর ভয় নেই । দুনিয়াটা বেঁচে যাবে ... ' —কখন গণেশ নিশ্চিত হলেন দুনিয়াটা বেঁচে যাবে ?
উত্তরঃ খ্যাতিমান কথাসাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের ‘ পাগলা গণেশ ’ নামক কল্পবিজ্ঞান গল্পে দেখা যায় , বিজ্ঞানের সর্বগ্রাসী কামড় থেকে গণেশ দুনিয়াটাকে বাঁচানোর চেষ্টায় রত । তাই তার এক সময়ের ছাত্র পুলিশম্যানের কাছে তার সহজ স্বীকারোক্তি — ‘ আমি পৃথিবীটাকে বাঁচানোর চেষ্টা করছি । ' হিমালয়ের নিভৃত কোলে তিনি কবিতা লেখেন , উদাত্ত কণ্ঠে গান গেয়ে থাকেন , পাথর কেটে ছবি আঁকেন । অনেকে ব্যঙ্গ - বিদ্রুপ করলেও , ওই পুলিশম্যান একদিন তার মা ও স্ত্রীকে নিয়ে এসে গণেশের কবিতা শুনিয়ে নিয়ে গেল । পরদিন ওই পুলিশের সঙ্গে তার চার সহকর্মী গণেশের দ্বারস্থ হয় কবিতা - গান - ছবি বুঝতে । পরদিন আরও জনাদশেক ব্যক্তি উপস্থিত হয় । অবশেষে একদিন রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিব গণেশের ডেরায় এসে খেদ প্রকাশ করেন — ‘ এ আপানি কী কাণ্ড করেছেন ? পৃথিবী যে উচ্ছন্নে গেল ! ’ গণেশ জানতে পারলেন , লোকে আবার গান গাইছে , কবিতা চর্চা করছে , হিজিবিজি ছবি আঁকছে । তখনই গণেশ নিশ্চিত হলেন ‘ দুনিয়াটা বেঁচে যাবে ... ’ ।

রচনা - ধর্মী প্রশ্ন- উত্তরঃ
প্রতিটি প্রশ্নের মান-৫
১.‘ পাগলা গণেশ ’ গল্পের মুখ্য চরিত্র গণেশকে তোমার কেমন লাগল ?
উত্তরঃ প্রখ্যাত কথাশিল্পী শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় ‘ পাগলা গণেশ ’ গল্পে গণেশ মুখ্য তথা কেন্দ্রীয় চরিত্র । তিনি একাধারে অসাধারণ এবং ব্যতিক্রমী একটি চরিত্র । মৃত্যুঞ্জয় টনিক গণেশকে অমরতা দান করেছে । তিনি নিজে বিজ্ঞানের অধ্যাপক , অথচ কেবল যুগের হুজুগে না চলে , নিছক বিজ্ঞানকর্মে নিজেকে ব্যাপৃত না রেখে , মানুষের মধ্যে উপ্ত মানসবৃত্তিগুলির বিকাশে তিনি আন্তরিক সচেষ্ট হয়েছেন । যুগধর্ম অনুযায়ী তখন পৃথিবীর সর্বত্র বিজ্ঞান ছাড়া আর যেন ভাবনার কোনো বিষয়ই নেই । গত ১৫০ বছরে বিজ্ঞানের অভাবনীয় উন্নতি হয়েছে । আবার পাশাপাশি ‘ সুকুমার শিল্পবিরোধী আন্দোলন ’ - ও চলছে । তাই মানবমন থেকে আবেগ , স্নেহ - মায়া - মমতার মতো অনুভূতিগুলি যেমন হারিয়ে যাচ্ছে , তেমনই শিল্প - সাহিত্যসংস্কৃতির পাঠও চুকে যাচ্ছে । তার তখন মনে হয়েছিল — ‘ বিজ্ঞানের বাড়াবাড়িরও একটা সীমা থাকা দরকার । ' এমতাবস্থায় প্রায় একক প্রচেষ্টায় কবিতা - গান - আঁকা ইত্যাদির চর্চার জন্য গণেশ হিমালয়ের গিরিগুহায ডেরা বাঁধেন । সেখানে কবিতা লিখে তিনি ভাসিয়ে দেন বাতাসে , ভাবেন যদি কারও কাছে পৌছোয় , যদি কেউ পড়ে । কখনও তিনি গান করেন , ছবি আঁকেন । এমন সৃষ্টিছাড়া কীর্তিকলাপ যার , তাকে তো ‘ পাগলা ’ বলে মনে হতেই পারে । কিন্তু গণেশ ‘ পাগলা ’ নন , তিনি আন্তরিক । যান্ত্রিক পৃথিবীর হৈ - হল্লার মাঝে নিঃসঙ্গ হলেও তিনি মানবতার পূজারি । বিজ্ঞাননির্ভর মানুষ একে অপরের থেকে বিচ্ছিন্ন । তাই পারস্পরিক আবেগের সূত্রে মানুষকে বাঁধতে তিনি বিজ্ঞানের পাশে মানুষের সৃষ্টিশীলতা ও মানসবৃত্তিকে প্রতিষ্ঠা দিতে চেয়েছেন । একক যুদ্ধের সার্থক সৈনিক গণেশ তাই এক সার্থক মানবচরিত্র হিসেবে এ গল্পে আত্মপ্রকাশ করেছেন । গল্পশেষে তাই রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিব যখন জানান লোকে গান গাইতে লেগেছে , কবিতা মকসো করছে , হিজিবিজি ছবি আঁকছে । ' তখন গণেশের প্রাণময় উক্তি— “ যাঃ তাহলে আর ভয় নেই । দুনিয়াটা বেঁচে যাবে ... ”।

২.“ এই মৃত্যহীন জীবন , এই অন্তহীন আয়ু কি এভাবেই যন্ত্রণার মধ্যে কাটাতে হবে ? ” — গণেশ ‘ যন্ত্রণা ’ বলেছেন কাকে ? তাঁর এমন মনে হওয়ার কারণ কী ? ( ২+৩ )
উত্তরঃ মৃত্যুঞ্জয় টনিক গণেশকে অস্বাভাবিক দীর্ঘজীবন দান করেছিল , তিনি অমরতা লাভ করেছিলেন । পাশাপাশি দীর্ঘজীবনে বিজ্ঞানের অস্বাভাবিক বাড়াবাড়িও তার মনকে পীড়া দিতে শুরু করে । বিশেষত , তিনি যখন লক্ষ করেন , বিজ্ঞানের বেগধর্মী যোজনায় মানুষের জীবন থেকে ক্রমে হারিয়ে যাচ্ছে দয়া - মায়া - করুণা - ভালোবাসার মতো আবেগ - অনুভূতি এবং সাহিত্য - শিল্প - সংস্কৃতির পাটও চুকে যাচ্ছে , তখন তার মন অস্থির হয়ে ওঠে । তা ছাড়া হিমালয়ের নির্জন - পরিসরে , একান্তে , এককভাবে যে একটু চারুকলা অর্থাৎ সৃষ্টির চর্চায় তিনি ডুবে থাকবেন — তাও তিনি পারছিলেন না , সেখানেও তাকে মাঝেমধ্যে মানুষের ব্যঙ্গাত্মক উক্তি শুনতে হচ্ছিল । জীবনের এই পরিস্থিতিকে তাই গণেশ যন্ত্রণা বলে মনে করেছেন ।
বিজ্ঞান যখন সর্বগ্রাসী হয়ে সমগ্র পৃথিবীতে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে , তখন সে বিষয়ে নিতান্ত বিব্রত হয়েই যোদ্ধার মতো গণেশ সভ্যসমাজ থেকে দূরে হিমালয়ের গিরিগুহায় আশ্রয় নেন । সেই নির্জনতার অবকাশে চলতে থাকে তার একক শিল্পচর্চা । তিনি গান গেয়ে তৃপ্তি পান , পাথর কেটে বানান ছবি , কবিতা লিখে ছড়িয়ে দেন বাতাসে — যদি কেউ পড়ে এই ভেবে । কিন্তু গণেশের ওই নিভৃত শিল্পসংগ্রাম অন্য অনেকের ভালো লাগে না । একদিন ঢেঁকি ও ভেলা - যাত্রী দুই ব্যক্তি গণেশের কবিতাচর্চাকে তীব্র ব্যঙ্গ করে । অন্য একদিন দুটো পাখাওয়ালা লোক তাকে এসে রীতিমতো ধমক লাগিয়ে জিজ্ঞাসা করে– “ ও মশাই , এমন বিকট শব্দ করছেন কেন ? ” গণেশ তার গানচর্চার ব্যাখ্যা দিলে , তারা তার গানকে ‘ বিটকেল শব্দ ’ আখ্যা দেয় । অন্য একদিন গণেশ যখন যান্ত্রিক বাটালি দিয়ে পাথর কেটে ছবি আঁকছিল , ধামায় আরোহিণী এক মহিলা তার সেই চর্চা দেখে ব্যঙ্গোক্তি করে— “ খেয়েদেয়ে কাজ নেই ! ছবি হচ্ছে ! হুঁঃ ! ” এসব ঘটনা গণেশের মনে তীব্র হতাশার জন্ম দেয় । তাই গণেশ এমন মনে করতে বাধ্য হন ।

No comments:

Post a Comment