পরবাসী প্রশ্ন উত্তর | অষ্টম শ্রেণী বাংলা | Parobasi questions and answers class 8th - Psycho Principal

Fresh Topics

Thursday, 26 December 2024

পরবাসী প্রশ্ন উত্তর | অষ্টম শ্রেণী বাংলা | Parobasi questions and answers class 8th

  

পরবাসী
বিষ্ণু দে 



👉(পথচলতি প্রশ্ন উত্তর)


কবি - পরিচিতিঃ 

১৯০৯ সালের ১৮ জুলাই কলকাতায় কবি বিষ্ণু দে  জন্মগ্রহণ করেন । তিনি কলকাতার বিখ্যাত শ্যামাচরণ দে বিশ্বাসের পরিবারভুক্ত ছিলেন । তিনি ছিলেন আধুনিক কালের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি । তাঁর রচিত প্রথম কাব্যগ্রন্থ উর্বশী ও আর্টেমিস ১৯৩২ সালে প্রকাশিত হয় । চোরাবালি , নাম রেখেছি কোমলগান্ধার , সেই অন্ধকার চাই , উত্তরে থাক মৌন , অন্বিষ্ট প্রভৃতি তাঁর উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ । বিষ্ণু দে কেবলমাত্র কবিতাই রচনা করেননি । সাথে সাথে তিনি প্রবন্ধ গ্রন্থ রচনা করেছেন , বিদেশি কবিতার অনুবাদ করেছেন । রুচি ও প্রগতি , সাহিত্যের ভবিষ্যৎ মাইকেল , রবীন্দ্রনাথ , সাহিত্যের দেশবিদেশ , অন্যান্য জিজ্ঞাসা তাঁর উল্লেখযোগ্য প্রবন্ধ গ্রন্থ । তাঁর অনূদিত অজস্র বিদেশি কবিতার মধ্যে রয়েছে সমুদ্রের মৌন , এলিঅর্টের কবিতা , হে বিদেশী ফুল ইত্যাদি । তিনি ১৯৬৫ সালে সাহিত্য অকাদেমি ও ১৯৭৩ সালে জ্ঞানপীঠ পুরস্কারে ভূষিত হন । ১৯৮২ সালে কবি প্রয়াত হন । 


রচনা প্রসঙ্গঃ

অরণ্য , বন , জঙ্গল , যে নামেই ডাকা হোক না কেন , আমাদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে ছোটো পাহাড় , টিলা , শাল , শিমূল , পলাশের প্রান্তর । অল্প ঝোপ , ঘন , গা ঘেঁষাঘেঁষি করে বেড়ে ওঠা গাছপালা অনেক পাখি , খরগোশ , হরিণ ময়ূর । প্রকৃতি সেখানে তার নিজের মতো সাম্রাজ্য সাজিয়ে বসে । বনের মাঝখান দিয়ে তালে তালে পথ চলে গেছে । রাতের বেলায় কচি - কচি খরগোশ লাফ দেয় । সুন্দর টিলায় থাকে পলাশ , তার পাশ দিয়ে বয়ে চলে নদী । সূর্যের আলোয় সেই নদী ঝিলমিল করে । নদীর কলকল শব্দ যেন সেতার বাজায় । সেখানে হরিণের আহ্বান শোনা যায় । চিতা হিংস্ৰ ছন্দে চলে যায় । কিন্তু ক্রমশ এই অরণ্য কমে যাচ্ছে । বৃক্ষহীন মুক্ত প্রান্তর পড়ে থাকছে । সেখানে নেই বসতি , শুকনো প্রান্তরে হাওয়া হাহাকার করছে । জঙ্গল সব সাফ , গ্রাম নেই , শহরেরও পত্তন ঘটেনি । এই ভাবেই দিনের পর দিন একের পর এক জায়গা ধ্বংস হচ্ছে , হারিয়ে যাচ্ছে বন্যপ্রাণ । আমাদের এই দেশের মানুষ এই ক্ষেত্রে মৌন , অসহায় । এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে তারা নিশ্চুপ । নদী , গাছ , পাহাড় এরা এই দেশে গৌণ । তাই প্রয়োজনে , অপ্রয়োজনে তাদের হারিয়ে যেতে হয় । এইসব স্থানে যারা বাস করে , অরণ্য , গাছ , পাহাড় হারিয়ে গেলে তাদেরও সেখান থেকে অন্যস্থানে চলে যেতে হয় । এই যে পরবাসীরা থাকে তারা কোথায় বাসভূমি গড়বে । এই প্রশ্নই এই কবিতার মধ্যে দিয়ে আমাদের সবার সামনে উঠে এসেছে । 


সারমর্মঃ

কবি বন - পাহাড়ে ঘুরে বেড়ান । সেখানে তিনি খরগোশের লাফ দেখেছেন । তাঁবুর ছায়ায় তিনি বনমোরগের নাচের সাথে সোনালি নদীর সেতারের সুষমা মিলিয়েছেন । তিনি চুপিচুপি জল খেতে আসা হরিণের আহ্বান শুনেছেন । দেখেছেন চিতা কেমন হিংস্ৰ , লুব্ধ ছন্দে চলে যায় । এক সময় সেই বন , হারিয়ে যায় । খোলা প্রান্তরে কেবলি শুকনো হাওয়া সেখানে ঘুরে ফিরে বেড়ায় । গ্রামও নেই , বসেনি শহরও । জঙ্গল পরিষ্কার হয়ে গেছে । ময়ূর আজ নাগরিক লালসায় পণ্যে পরিণত হয়েছে । এরপর কবির প্রশ্ন যে এই দেশে মানুষ এত অসহায় , মৌন কেন ? কেনই বা নদী , গাছ , পাহাড় ইত্যাদি মূল্যহীন । তিনি তাঁর পছন্দের স্থান পাওয়ার জন্য সারাদেশময় ঘুরছেন , তাঁর প্রশ্ন যে পরবাসী কবে প্রকৃতির রাজ্য নিজের ভূমিতে বাসা তৈরি করবে । 


নামকরণঃ 

পরবাসী অর্থাৎ যাদের নিজেদের কোনো বাসভূমি নেই । যারা যাযাবর , বা অন্যের জমিতে থাকে । এখানে কবি তাঁর পছন্দের স্থান , অরণ্য , পাহাড় , নদীর মধ্যে বসবাস করতে ভালোবাসেন । সেখানে তিনি নদীর ছন্দ , আবছায়াময় পথ , বনমুরগি , হরিণ , চিতা প্রভৃতি দেখেছেন , বনময়ূরের নাচের সাথে নদীর সেতারের ছন্দ মিলিয়েছেন । হরিণের ডাক , চিতার চলে যাওয়ার ছন্দ তাকে মুগ্ধ করেছে । আবার তিনি দেখেছেন কীভাবে দিনের পর দিন জঙ্গল নষ্ট হচ্ছে , কীভাবে বৃক্ষহীন ফাঁকা প্রাত্তর পড়ে থাকছে । সেখানকার গ্রাম নেই , শহরও বসেনি । সেই প্রান্তরে শুকনো হাওয়া ঘুরে বেরাচ্ছে । এই সকলই ছিল কবির নিজস্ব দেশ , তাঁর বাসভূমি , এখন সেই জায়গা হারিয়ে গেছে , হারিয়ে গিয়ে তার জায়গায় অন্য কোনো , সুন্দর জগৎ গড়ে ওঠেনি । যা গড়ে উঠেছে তা কবির থাকার পক্ষে অনুপযুক্ত , তিনি নিজেকে তাঁর উপযোগী করে তুলতে পারেন নি , তাই তিনি বাস্তুহারা । নিজের দেশে তাঁকে পরবাসী হয়ে থাকতে হচ্ছে । এই যন্ত্রণার কথা তাঁর এই কবিতার মধ্যে উঠে এসেছে । তিনি সারা দেশময় ঘুরে বেড়াচ্ছেন , কিন্তু তাঁর এই দেশে নিজের দেশেও তিনি বসবাস করতে পারছেন না । তাই এই কবিতার নাম ‘ পরবাসী ’ যথোপযুক্ত হয়েছে ।


অষ্টম শ্রেণীর ভূগোল প্রশ্ন উত্তর পড়তে ক্লিক করো

👉  ( তৃতীয় অধ্যায়  শিলা )  


১.১ কৰি বিন্নু দের প্রথম কাব্যগ্রন্থের নাম কী ? 

উঃ কবি বিষ্ণু দের প্রথম কাব্যগ্রন্থের নাম ‘ উর্বশী ও আর্টেমিস ' । 


১.২ তাঁর লেখা দুটি প্রবন্ধের বইয়ের নাম লেখো । 

উঃ তাঁর লেখা দুটি প্রবন্ধের বইয়ের নাম ' রুচি ও প্রগতি ' , ' সাহিত্যের ভবিষ্যৎ । 


২. নিম্নরেখ শব্দগুলি বদলে অন্য শব্দ বসিয়ে অর্থপূর্ণ বাক্য তৈরি করো । 

২.১ দুই দিকে বন , মাঝে ঝিকিমিকি পথ । 

উঃ দুইদিকে বন , মাঝে আলোছায়া পথ । 


২.২ এঁকেবেঁকে চলে প্রকৃতির তালে তালে । 

উঃ এঁকেবেঁকে চলে প্রকৃতির সুরে ছন্দে । 


২.৩ তাঁবুর ছায়ায় নদীর সোনালি সেতারে । 

উঃ তাঁবুর ছায়ায় নদীর রুপালি ভঙ্গিমা । 


২.৪ হঠাৎ পুলকে বনময়ূরের কথক । 

উঃ হঠাৎ পুলকে বনময়ূরের কথাকলি । 


২.৫ বন্য প্রাণের কথাকলি বেগ জাগিয়ে । 

উঃ বন্য প্রাণের নৃত্যছন্দের বেগ জাগিয়ে । 


৩. নীচের প্রশ্নগুলির একটি বাক্যে উত্তর দাও : 

৩.১ পথ কীসের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলে ? 

উঃ পথ প্রকৃতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলে । 


৩.২ চিতার চলে যাওয়ার ছন্দটি কেমন ? 

উঃ চিতার চলে যাওয়ার ছন্দটি লুব্ধ এবং হিংস্র । 


৩.৩ প্রাপ্তরে কার হাহাকার শোনা যাচ্ছে ? 

উঃ প্রাপ্তরে বাতাসের হাহাকার শোনা যাচ্ছে । 


৩.৪ ময়ূর কীভাবে মারা গেছে ? 

উঃ  বিক্রয় বস্তু বা পণ্য হওয়ার জন্য নগরায়নের সাথে ময়ূর মারা গেছে । 


৩.৫ পলাশের ঝোপে কবি কী দেখেছেন ? 

উঃ পলাশের ঝোপে কবি বনময়ূরের কথক নাচ দেখেছেন । 


৪. নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর কয়েকটি বাক্যে লেখো : 

৪.১ জঙ্গলের কোন্ কোন্ প্রাণীর কথা কবি এই কবিতায় বলেছেন ?

 উঃ কবি বিষ্ণু দে ‘ পরবাসী ' কবিতাটিতে জঙ্গলের নানা প্রাণীর কথা উল্লেখ করেছেন । জঙ্গলের কচি কচি খরগোশের কথা বলেছেন । এছাড়া কবি বনময়ূর , চিতা , হরিণ প্রভৃতি প্রাণীদের কথা কবিতায় বলেছেন । 


৪.২ সেভারের বিশেষণ হিসেবে কবি “ সোনালি ” শব্দের ব্যবহার করেছেন কেন ? 

উঃ  নদীর জলকল্লোলের ধ্বনির কথা বলতে গিয়ে কবি ‘ সোনালি সেতার ' কথাটি ব্যবহার করেছেন । নদীর জলে সূর্যের আলো পড়ে বিচ্ছুরিত হয় । তখন নদীর রং সোনালি মনে হয় । এটি বিশেষত ভোরবেলা এবং সন্ধেবেলা হয় । নদীর বয়ে চলার শব্দকে কবি সেতারের বাজনার সাথে তুলনা করেছেন এবং রংটিকে বলেছেন সোনালি । তাই সেতারের বিশেষণ হিসেবে “ সোনালি ” শব্দের ব্যবহার করেছেন ।


৪.৩ কথক ও কথাকলির কথা কবিতার মধ্যে কোন প্রসঙ্গে এসেছে ? 

উঃ কথক ও কথাকলি দুইই এক বিশেষ ধরণের নৃত্যশৈলী কবিতাটিতে কবি কোনো নৃত্যের বর্ণনা প্রসঙ্গে শব্দদুটি ব্যবহার করেননি বরং বিশেষ কোনো ভঙ্গিমা বা ধরন বোঝাতে কবি শব্দদুটি ব্যবহার করেছেন । আনন্দে মেতে ওঠা বনময়ূরের নাচকে কবি কথক নৃত্যের সঙ্গে তুলনা করেছেন এবং লোলুপ ও হিংস্র ছন্দে চিতার চলে যাওয়ার বেগটিকে বোঝাতে কবি বন্য প্রাণের কথাকলি নাচের কথা বলেছেন । 


8.8 " সিন্ধুমুনির হরিণ আহ্বান " —কবি কীভাবে শুনেছেন ? 

উঃ হরিণের জল খাওয়ার সময় একপ্রকার শব্দ হয় । রামায়ণ মহাকাব্যের কাহিনি অনুসারে অধমুনির ছেলে সিন্ধুমুনি জল আনতে গিয়ে যখন জল ভরছিলেন , তখন সেই শব্দ অনেকটা হরিণের জল খাওয়ার শব্দের মতো হয়েছিল । রাজা দশরথ সেই শব্দকে হরিণের জল খাওয়ার শব্দ ভেবে তির ছোঁড়ায় সিন্ধুমুনি নিহত হন । কবি হরিণের জল খাওয়ার শব্দের মধ্য দিয়ে সেই শব্দ শুনেছেন । 


৪.৫ “ ময়ূর মরেছে পণ্যে " এই কথার অন্তর্নিহিত অর্থ কী ? 

উঃ ময়ূর একটি অভি সুন্দর পাখি । তার রংবেরং - এর পেখম আছে । ময়ূরের সবকিছুকেই আমরা কাজে লাগাই । অর্থাৎ মানুষের প্রয়োজন রয়েছে । নগরায়নের সাথে সাথে বনভূমি ধ্বংস হওয়ায় ময়ূরের সংখ্যা কমেছে । অপরদিকে , সমস্ত কিছুকেই পণ্য হিসেবে দেখার প্রবণতা আমাদের জীবন থেকে সব রং মুছে দিচ্ছে । তাই কবি বলেছেন ভোগবাদী দুনিয়া ময়ূর অর্থাৎ সৌন্দর্য্যের মৃত্যু ঘটিয়ে তাঁকেও পণ্যে পরিণত করেছে । 


৫. নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর নিজের ভাষায় লেখো : 

৫.১ বিরামচিহ্ন ব্যবহারের দিক থেকে কবিতারটির শেষ ঔষকের বিশিষ্টতা কোথায় ? এর থেকে কৰি - মানসিকতার কী পরিচয় পাওয়া যায় ? 

উঃ সম্পূর্ণ কবিতাটিতে কবি নানা বিরামচিহ্ন ব্যবহার করলেও শেষ স্তবকে শুধুমাত্র প্রশ্নবোধক চিহ্ন ব্যবহার করেছেন । পর পর চারটি প্রশ্ন চিহ্নের ( ? ) মধ্যে দিয়ে তিনি কবিতাটি শেষ করেছেন । পর পর চারটি লাইনে , এই ভাবে চারটি প্রশ্ন চিহ্নের ব্যবহার শেষ স্তবকটিকে এক বিশিষ্টতা প্রদান করেছে । এর থেকে বোঝা যায় যে হতাশ কবি এখানে অতি দুঃখে ও ক্ষোভে , সমস্ত মানবজাতির প্রতি কিছু প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছেন । এই প্রশ্নগুলির উত্তরও কবি জানেন কিন্তু এর উত্তর অর্থাৎ সিদ্ধান্তগুলিকে সমভাবাপন্ন মানুষদের সমর্থন পাওয়ার জন্য প্রশ্নগুলি তিনি কবিতায় করেছেন । সেই প্রশ্ন কেবল কবির একার নয় , সেই প্রশ্ন কবির মতো অনেক মানুষের যারা একই রকম পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে চলেছেন । তাছাড়া কবির ব্যবহৃত কিছু শব্দ যেমন মৌন , অসহায় এইসব কথার মধ্যে দিয়ে | মানবজাতির প্রতি বিদ্রূপ এবং শ্লেষের আভাস পাওয়া যায় । কবি এক হিসেবে সমগ্র মানব সভ্যতাকে এক প্রশ্নের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছেন । 


৫.২ কৰি নিজেকে পরবাসী বলেছেন কেন ? 

উঃ কবির ভালো লাগে পাহাড় , অরণ্য , নদী , অরণ্যের পশুপাখি । তিনি প্রাকৃতিক আরণ্যক পরিবেশে থাকতে চান , চান সুস্থ এক পরিবেশ , যেখানে সমস্ত কিছু সুন্দর হবে । অরণ্যে যেমন খরগোশের লাফ দেখা যায় , বনময়ূরের নাচ দেখা যায় , শোনা যায় নদীর কলতান , হরিণের আওয়াজ । দেখা যায় শিকারী চিতা কেমন লুব্ধ , দ্রুত ছন্দে চলে যায় একস্থান থেকে অন্যস্থানে । কবি ঠিক তেমন সুন্দর , অমলিন এক সমাজে থাকতে চান । কবির চোখে অন্যদিকে ধরা পড়ছে আর এক দৈন্য রূপ । সেখানে এইসব কিছুই নেই , অরণ্য হারিয়ে গেছে । গ্রাম উঠে গেছে আবার সেই স্থানে বসেনি কোনোও শহর । কেবল ফাঁকা প্রান্তর পড়ে আছে । সেখানে কেবল ধু ধু হাওয়া বইছে । অর্থাৎ কবির পছন্দের সেই পরিবেশ নষ্ট হয়ে গেছে । আর তার বিকল্প কোনো সুস্থ পরিবেশ , যে পরিবেশে কবি মানিয়ে নিতে পারেন তা গড়ে ওঠেনি । তাই কবি তার নিজের জায়গায় থেকেও নিজেকে পরবাসী বলেছেন । 


৫.৩ “ জঙ্গল সাফ , গ্রাম মরে গেছে , শহরের / পত্তন নেই । " — প্রকৃতি ও মানুষের সম্পর্কের পরিপেক্ষিতে এই পত্তিটির প্রাসঙ্গিকতা বিচার করো । 

উঃ দিনের পর দিন জনসংখ্যা বাড়ছে , সেই সঙ্গে প্রতিদিন পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মানুষের অন্ন , বস্ত্র , বাসস্থান ও আনুষাঙ্গিক নানাবিধ চাহিদা । সেই চাহিদার ভার গিয়ে পড়ছে প্রকৃতির উপর । প্রকৃতি ক্রমশ নিঃশেষ হয়ে আসছে । বিপুল চাপ পড়ছে প্রকৃতির ওপর । প্রতিদিন বিপুল পরিমানে অরণ্য লোপ পাচ্ছে । হারিয়ে যাচ্ছে বন্যপ্রাণ । প্রকৃতিকে নষ্ট করে , গ্রাম আবার এর সাথে আছে পর্যাপ্ত পরিকল্পনার অভাব । সেই স্থানে গড়ে উঠছে না সঠিক কোনো শহর । গ্রাম সংখ্যার করো যাচ্ছে । কিন্তু সেই স্থান পূরণ হচ্ছে না , তৈরি হচ্ছে অসাম্য । প্রকৃতি ও মানুষের সম্পর্কের পরিপ্রেক্ষিতে এই পদ্ধপ্তিটি খুবই প্রাসঙ্গিক । আজও প্রাকৃতিক পরিবেশ কে বিনষ্ট করেই উন্নয়ন হচ্ছে । তাই এই ধ্বংস হওয়া প্রকৃতি কখনোই আর নতুনভাবে ফিরতে পারবে না ।


৫.৪. ‘ পরবাসী ' কবিতার প্রথম তিনটি স্তবক ও শেষ দুটি স্তবকের মধ্যে বক্তব্য বিষয়ের কোনো পার্থক্য থাকলে  তা নিজের ভাষায় লেখো । 

উঃ ‘ পরবাসী ’ কবিতার প্রথম তিনটি স্তবকে উঠে এসেছে প্রকৃতির অপার সুন্দর রূপ । যেখানে প্রকৃতি নিজেকে মেলে ধরেছে । সেখানে রয়েছে , শান্তি , সাম্য এবং পূর্ণতা । যেখানে জীবজগৎ খুব সুন্দরভাবে তার শৃঙ্খলা ও সমতা বজায় রেখে চলছে । 

কবিতার শেষ দুটি স্তবকে উঠে এসেছে প্রকৃতির রিক্ত রূপ , যেখানে মানুষের হাতে প্রকৃতির বিনাশ ঘটছে , হারিয়ে যেতে বসেছে প্রকৃতির সম্পদ । যেখানে প্রকৃতির সেই সুন্দর , সহজ , সাম্যাবস্থা ও জীববৈচিত্র্য বিঘ্নিত হয়ে গিয়েছে । তার জায়গায় গড়ে উঠেছে এক চরম অসাম্য । তাই কবি তৃতীয় স্তবকে বলেছেন ময়ূর মরেছে পণ্যে । অর্থাৎ ভোগবাদী দুনিয়া আজ সৌন্দর্যকে বিনষ্ট করে তাকে পণ্যে পরিণত করছে । শুধু ময়ূর নয় বন , গ্রাম প্রকৃতি সবই আজ পণ্য । আর তাই সাথে সাথে আমাদের সামনে উঠে এসেছে কবির করা কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন । আমাদের দায় , আমাদের দায়িত্ব এক্ষেত্রে কতটা । মানুষ কি কখনোই আর নিজ বাসভূমি গড়ে তুলতে পারবেনা ? 


৫.৫ ' পরবাসী ' কবিতাতে কবির ভাবনা কেমন করে এগিয়েছে তা কবিতার গঠন আলোচনা করে বোঝাও । 

উঃ  ‘ পরবাসী ' কবিতাতে কবির ভাবনা এক সংগঠিত জায়গা থেকে ধূসর বর্তমানে এসে পৌঁছেছে । তিনি এক সুন্দর জগতে বসবাস করতেন । সেই সুন্দর , স্বাভাবিক জগতে তাঁর কল্পনা ডানা মেলত । কল্পনার মাধ্যমে তিনি বনময়ূরের নাচের সাথে , নদীর তরঙ্গের সাথে সেতারের বাজনার তাল মেলাতেন । সেই সময় কবি অত্যন্ত সুন্দর এক প্রাকৃতিক জীবনযাপন করতেন । কিন্তু যখন তাঁর সেই জগৎ আর আগের মতো রইল না তখন তিনি সেই অস্বস্তিকর জগৎকে এক প্রশ্নের সামনে দাঁড় করিয়েছেন । সেখানে তিনি সবকিছুর ক্ষেত্রে মানুষের লোভকে দায়ী করেছেন । 


৫.৬ কবিতাটির নাম ' পরবাসী ' দেওয়ার ক্ষেত্রে কবির কী কী চিন্তা কাজ করেছে বলে তোমার মনে হয় ? তুমি কবিতাটির বিকল্প নাম দাও এবং সে নামকরণের ক্ষেত্রে তোমার যুক্তি সাজাও । 

উঃ যে অন্যের জায়গায় বসবাস করে তাকে বলে পরবাসী । এখানে কবি দেখিয়েছেন যে কীভাবে তাঁর পছন্দের জায়গা চলে গিয়ে সেখানে শূন্যতা রয়েছে । কীভাবে সুস্থ স্বাভাবিক এক পরিবেশের বদলে অসুস্থ পরিবেশ এসেছে । তাই সেই স্থান , সেই প্রিয় প্রাকৃতিক পরিবেশ হারিয়ে আজ তিনি পরবাসী হয়ে গেছেন । এছাড়াও কবির মনে হয়েছে যে ক্রমবর্ধমান মানব সভ্যতার বিস্তারের জন্য স্থানের প্রয়োজন আছে , কবি তা মানেন কিন্তু বসতি বৃদ্ধির লক্ষ্য নিয়ে বন কেটে যে নগর পত্তন হবার কথা তা হয়নি , শুধু জঙ্গলের বিনাশ ঘটেছে । গ্রামীণ সভ্যতা ধ্বংস হয়েছে , আধুনিক শহরও গড়ে ওঠেনি । প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আজ পণ্য হয়ে গেছে । 

আমি এই কবিতাটির নামকরণ করলাম ‘ বাস্তুহারা ' । আমরা আমাদের যে প্রিয় প্রাকৃতিক পরিবেশে বেঁচে রয়েছি মানুষের উচ্চাকাঙ্ক্ষা সেই পরিবেশকে প্রতিদিন বিনষ্ট করে চলেছে । এতে ক্ষতি হচ্ছে মানব সমাজেরই । আমরা প্রতিদিন তিলে তিলে হারিয়ে ফেলছি আমাদের প্রিয় এই পৃথিবীর এই বাসস্থানকে । বেঁচে রয়েছি বাস্তুহারা হয়ে । তাই আমার মতে ' বাস্তুহারা ' নামটি সুপ্রযুক্ত হবে । 


টীকা লেখো : 

কথক ঃ 

একটি ভারতীয় উচ্চাঙ্গ নৃত্যকলা । এটি জয়পুর , লক্ষ্ণৌ , বেনারস ঘরানার নৃত্যশৈলী । প্রাচীন ভারতের অন্যতম এই নৃত্যকলা । বর্তমানে ভারত ছাড়া আরও নানাদেশে এই নৃত্যকলা সমাদৃত হয়েছে । 

সেতার ঃ 

একপ্রকার বাদ্যযন্ত্র । তিনটি তার দিয়ে এই যন্ত্রে সুরের মুর্ছনা তোলা হয় । এটি একটি পারস্য দেশীয় বাদ্য যন্ত্র । প্রাচীনকাল থেকে এটি ভারতে ধ্রুপদী সংগীতের সহায়ক বাদ্যযন্ত্র রূপে ব্যবহৃত হয়ে আসছে । 

কথাকলিঃ 

দক্ষিণ ভারতের কেরলের এক ধ্রুপদী নৃত্যশৈলী । আনুমানিক সপ্তদশ শতকে কথাকলি নৃত্যের উদ্ভব হয় । মুখে মুখোশ পড়ে এই নৃত্য পরিবেশন করা হয় । নৃত্যের মাধ্যমে নানা কাহিনি বর্ণনা করা হয় । 

সিন্ধুমুনি : 

রামায়ণ মহাকাব্যে বর্ণিত এক অন্ধমুনির পুত্র হলেন সিন্ধুমুনি । ইনি জলাশয়ে জল আনতে গিয়ে রাজা দশরথ কর্তৃক ভুলবশত নিহত হন । কলসিতে জল ভরার শব্দ শুনে রাজা দশরথ ভেবেছিলেন হরিণ জল খাচ্ছে । তাই তিনি শব্দভেদী বাণ ছোঁড়েন । এতে সিন্ধুমুনি নিহত হন । 

পণ্যঃ 

পণ্য শব্দের অর্থ কোনো দ্রব্য । যা দিয়ে বাণিজ্য করা হয় । অর্থাৎ যা দিলে তার বিনিময়ে কিছু পাওয়া যায় । পণ্য বিক্রয়ের মাধ্যমে মানুষ লাভবান হয় ।


No comments:

Post a Comment