পথচলতি প্রশ্ন উত্তর | অষ্টম শ্রেণী বাংলা প্রশ্ন উত্তর | Pathcholti questions and answers class 8th - Psycho Principal

Fresh Topics

Thursday, 26 December 2024

পথচলতি প্রশ্ন উত্তর | অষ্টম শ্রেণী বাংলা প্রশ্ন উত্তর | Pathcholti questions and answers class 8th

 

পথচলতি 
সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়





👉(প্রশ্ন উত্তর একটা চড়ুই পাখি)


 লেখক - পরিচিতিঃ

প্রখ্যাত ভাষাতাত্ত্বিক ও বহুভাষাবিদ সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় ১৮৯০ সালের ২৬ নভেম্বর হাওড়ার শিবপুরে জন্মগ্রহণ করেন । ভাষাবিদ ছাড়াও তিনি ছিলেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ । তিনি ১৯২৭ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাথে মালয় , সুমাত্রা , জাভা এবং বালি যাত্রা করেছিলেন । তিনি ১৯৫২-১৯৫৮ সাল পর্যন্ত “ ওয়েস্ট বেঙ্গল লেজিসলেটিভ কাউন্সিল ” -এর চেয়ারম্যান এবং সাহিত্য অ্যাকাডেমির প্রেসিডেন্ট ছিলেন । তিনি “ The Origin and Development of the Bengali Language ” রচনার জন্য বিখ্যাত হয়ে আছেন । এছাড়া তাঁর রচিত বিখ্যাত গ্রন্থগুলি হলো “ দ্বীপময় ভারত ও শ্যামদেশ ” , “ ইউরোপ ভ্রমণ ” , “ সাংস্কৃতিকী প্রভৃতি । ” তাঁর আত্মজীবনী “ জীবনকথা ” একটি অত্যন্ত সুখপাঠ্য গ্রন্থ । ১৯৬৩ সালে তিনি ‘ পদ্মবিভূষণ ' উপাধিতে ভূষিত হন । ১৯৬৬ সালে তিনি জাতীয় অধ্যাপক পদে প্রতিষ্ঠিত হন । অসাধারণ পাণ্ডিত্যের অধিকারী এই মানুষটিকে রবীন্দ্রনাথ স্বয়ং ‘ ভাষাচার্য ’ উপাধি দিয়েছেলেন । ১৯৭৭ সালে এই প্রখ্যাত ভাষাবিদের জীবনাবসান হয় । 


সারসংক্ষেপঃ

১৯২৮ সালের এক শীতকালের ঘটনা । লেখক তাঁর শ্বশুরবাড়ি গয়া থেকে ফিরছিলেন । তিনি দেহরা - দুন এক্সপ্রেস ধরবেন স্টেশনে দাঁড়িয়ে আছেন । ট্রেন ঠিক সময় স্টেশনে এল । কিন্তু তাতে প্রচণ্ড ভিড় । সবকটা কামরায় গিজ গিজ করছে লোক । এর মধ্যে একটা তৃতীয় শ্রেণির ফাঁকা কামরা লেখকের চোখে পড়াতে , তিনি এগিয়ে গেলেন ব্যাপারটা দেখার জন্য । সেখানে গিয়ে তিনি দেখলেন ওই কামরাটিতে কয়েকজন কাবুলিওয়ালা সফর করছে । কেউ ধারে কাছে গেলেই তারা হুংকার দিয়ে সেখান থেকে ভাগিয়ে দিচ্ছে । তিনি এই দেখে ঠিক করে নেন যে সেই কামরাতেই উঠবেন এবং জায়গা করে নেবেন । তখনকার দিনে কাবুলিওয়ালাদের লোকে সাংঘাতিক ভয় পেত । একে তো বিরাট দশাশই চেহারা তার উপর এরা বেশ মারদাঙ্গাতে ওস্তাদ ছিল । এঁদের কামরায় লেখক ওঠার সাহস দেখালেন কারণ তাঁর কিছু ফারসি ভাষা জানা ছিল । ফারসি ছিল তখনকার দিনের শিক্ষিত আফগান লোকেদের ভাষা । 

পাঠানদের মাতৃভাষা ছিল পশতু । এই সাহসে ভর করে লেখক কামরাতে উঠতে যেতেই কয়েকজন কাবুলি তাকে ধমকে উঠল । পরিবর্তে তিনি ফরাসি ভাষাতে তাদের বললেন তাকে জায়গা করে দিতে । তাঁর এই কথায় কাবুলিওয়ালারা একটু হকচকিয়ে গেল । তারা ফরাসি ভালো জানতো না । তাদের এই হকচকিয়ে যাবার সুযোগ নিয়ে লেখক ট্রেনে উঠে বসলেন এবং বেশ ভালো করে জায়গা করে নিলেন । কথায় কথায় তিনি বেশ কয়েকজনের সাথে আলাপ জমালেন । এদের মধ্যে এক বৃদ্ধ ব্যবসা করতে আসেন বরিশালে । তাঁর মূল ব্যবসা হিং এবং শীতবস্ত্র বিক্রি , এছাড়া ছিল সুদে টাকা খাটানোর ব্যবসা । এরপর ক্রমশ লেখক তাদের কাছে তাদের ভাষার সর্বশ্রেষ্ঠ কবি খুশ - হাল খাঁ খট্টকের গজল শুনতে চাইলেন । আর তাতেই কাবুলিওয়ালারা খুব খুশি । খুশ - হাল খাঁ খট্টক তাদের পশতু ভাষার সর্বশ্রেষ্ঠ কবি , তিনি ছিলেন আওরঙ্গজেবের সময়কার মানুষ । গজল হবার পর চলল আদম খান আর দুরখানির ভালবাসার গল্প । এইভাবে রেলের কামরায় সাহিত্য সম্মেলন শুরু হয়ে গেল এবং নানা কথায় কথায় রাত গড়াল । রাতে তারা লেখককে একটা বাঙ্ক ছেড়ে দিল ঘুমোনোর জন্য । পরের দিন সকালে ট্রেন এসে কলকাতা পৌঁছোল । এক রাতের জন্য ভিন্ন দেশ ও জাতির কিছু মানুষ লেখকের বড়ো কাছের হয়ে ওঠে । এই সঙ্গলাভ ও যাত্রাপথের কথাটি লেখকের দীর্ঘদিন পরেও মনে রয়ে গেছে । 


নামকরণঃ

“ পথচলতি ” অর্থাৎ কিছুটা ক্ষণিকের , কিছুটা অল্প স্বল্প আলাপ , কথা , দেখা । এই গল্পটিও কয়েক ঘণ্টায় ঘটা একটি কাহিনি । যেখানে সম্পূর্ণ অচেনা , দুই ভিন্ন স্থান , ভাষা এবং সংস্কৃতির লোকের মধ্যে আলাপ হয় , বন্ধুত্ব গড়ে ঘটনাটি । সেখানে লেখক গয়া থেকে ফেরবার পথে দেহরাদুন এক্সপ্রেসের একটি কাবুলিওয়ালা অধ্যুষিত কামরায় উঠে । ওঠে । আবার কয়েকটা বাদে সময়মতো যে যার কাজে চলে যায় । এই ক্ষণিকের দেখা , আলাপ , কথাবার্তা ইত্যাদি নিয়ে তারপর রাত ভোর হয়ে যখন ট্রেন কলকাতা পৌঁছয় তখন আবার তারা নিজের নিজের কাজে যায় । ক্ষণিকের এই বন্ধুত্ব , পড়েন । সেখানে ক্রমশ কাবুলিওয়ালাদের সাথে তাঁর বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে । তারা তাঁকে যথেষ্ট খাতির করে এবং সম্মান দেয় । ক্ষণিকের আলাপ ও অন্তরত্যতা সারাজীবন লেখকের মনে জায়গা করে রয়েছে । এই পুরো ঘটনাটি প্রথমত ঘটে পথে এবং কয়েক ঘণ্টায় । তাই গল্পটির নাম “ পথচলতি ” সার্থক এবং সুপ্রযুক্ত হয়েছে ।


১.১ সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের আত্মজীবনীর নাম কী ? 

উঃ সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের আত্মজীবনীর নাম ‘ জীবনকথা ' । 


১.২ ভাষাতত্ত্ব বিষয়ে কোন্ গ্রন্থ রচনার জন্য তিনি স্মরণীয় হয়ে আছেন ? 

উঃ ভাষাতত্ত্বের উপর তাঁর The Origin and Development of the Bengali Language গ্রন্থটি রচনার জন্য তিনি স্মরণীয় হয়ে আছেন । 


২. নীচের প্রশ্নগুলির একটি বাক্যে উত্তর দাও : 

২.১ লেখকের কোন্ ট্রেন ধরার কথা ছিল ? 

উঃ লেখকের দেহরা - দুন এক্সপ্রেস ধরার কথা ছিল । 


২.২ একটি তৃতীয় শ্রেণির বগির কাছে একেবারেই লোকের ভিড় নেই কেন ? 

উঃ সেখানে কিছু জবরদস্ত চেহারার কাবুলিওয়ালা কামরায় কাউকে ঢুকতে না দেওয়ায় বগিটিতে লোকের ভিড় ছিল না । 


২.৩ পাঠানদের মাতৃভাষা কী ? 

উঃ পাঠানদের মাতৃভাষা পুশতু । 


২.৪ বৃদ্ধ পাঠানের ডেরা বাংলাদেশের কোথায় ছিল ? 

উঃ বৃদ্ধ পাঠানের ডেরা বাংলাদেশের বরিশালের পটুয়াখালিতে ছিল । 


২.৫ খুশ - হাল খাঁ খট্টক কে ছিলেন ? 

উঃ খুশ - হাল খাঁ খট্টক হলেন পশতু ভাষার সর্বশ্রেষ্ঠ কবি । তিনি ছিলেন সম্রাট আওরঙ্গজেবের সময়ের মানুষ । 


২.৬ আদম খাঁ ও দুরখানির কিসসার কাহিনি কেমন ? 

উঃ আদম খাঁ ও দুরখানির কিসসার কাহিনি ছিল খুব দুঃখের পাঠানদের ভাষায় ‘ দিলভাঙা ’ কাহিনি । 


২.৭ এই পাঠ্যে কোন্ বাংলা মাসিকপত্রের উল্লেখ আছে ? 

উঃ এই পাঠ্যে বাংলা মাসিক “ প্রবর্তক ” পত্রিকার উল্লেখ আছে । 


২.৮ রোজার উপোসের আগে কাবুলিওয়ালারা ভরপেট কী খেয়েছিলেন ? 

উঃ  কাবুলিওয়ালারা পাঠান “ রোটা ” অর্থাৎ রুটি আর কাবাব খেয়েছিলেন । 


২.৯ “ তসবিহ ” শব্দের অর্থ কী ? 

উঃ “ তসবিহ ” শব্দের অর্থ জপের মালা ।


২.১০ আরবি ভাষায় ঈশ্বরের নিরানব্বইটি পবিত্র ও সুন্দর নামকে কী বলা হয় ? 

উঃ আরবি ভাষায় ঈশ্বরের নিরানব্বইটি পবিত্র ও সুন্দর নামকে “ নব্বদ - ও - নওঅসমা - ই - হাসানা ” বলা হয় ।


 ৩.নিম্নলিখিত শব্দগুলির সন্ধিবিচ্ছো করোঃ 

হুংকার , স্বস্তি , বিষয়ান্তর । হুম্ + কার । স্বস্তি – সু + অস্তি । বিষয়াপ্তর - বিষয় + অন্তর ।


 ৪. নিম্নলিখিত শব্দগুলির প্রকৃতি প্রত্যয় নির্ণয় করো । ফিরতি , আভিজাত্য , জবরদস্ত , নিবিষ্ট , উৎসাহিত । উঠ । ফিরতি — ফিক্ + তি । আভিজাত্য – অভিজাত + য । জবরদস্ত – জবরদস্ত + অ । নিবিষ্ট — নি + বিশ্ + ত উৎসাহিত – উৎ + সহ + অ + ইত । 


৫. ব্যাসবাক্য সহ সমাসের নাম লেখো : শীতবস্ত্র , মাতৃভাষা , শিশুসুলভ , ত্রিসীমানা ।

 উঃ । শীতবস্ত্র — শীত হইতে রক্ষা পাবার জন্য যে বস্তু । ( মধ্যপদলোপী কর্মধারয় সমাস ) মাতৃভাষা – মায়ের ভাষা । ( সম্বন্ধ তৎপুরুষ সমাস ) শিশুসুলভ — শিশুর পক্ষে সুলভ । ( মধ্যপদলোপী কর্মধারায় সমাস ) ত্রিসীমানা — তিন সীমানার সমাহার । ( দ্বিগু সমাস ) - 


৬. নির্দেশ অনুযায়ী বাক্য পরিবর্তন করোঃ 

৬.১ গাড়িতে সেদিন অসম্ভব ভিড় দেখা গেল ( না - সূচক বাক্যে ) 

উঃ গাড়িতে সেদিন ভিড় কম ছিল না । 


৬.২ কাবুলিওয়ালা পাঠানদের মাতৃভাষা পশতুর সম্মান তখন ছিলনা । ( প্রশ্নবোধক বাক্যে ) 

উঃ কাবুলিওয়ালা পাঠানদের মাতৃভাষা পশতুর সম্মান তখন ছিল কি ? 


৬.৩ কলকাতার ভাষা তাঁর আয়ত্ত হয়নি । ( জটিল বাক্যে ) 

উঃ কলকাতার যা ভাষা তা তাঁর আয়ত্ত হয়নি । 


৬.৪ দুই - একজন মাঝে মাঝে এক - আধ লব্রজ ফারসি বলল বটে , কিন্তু এদের বিদ্যেও বেশিদূর এগোল না । ( সরল বাক্যে ) 

উঃ দুই একজন মাঝে মাঝে এক - আধ লন্জ ফারসি বললেও এদের বিদ্যে বেশিদূর এগোল না । 


৬.৫ বাংলাদেশে তোমার ডেরা কোথায় ? ( নির্দেশক বাক্যে ) 

উঃ বাংলাদেশে তোমার ডেরার কথা জানতে চাইছি । 


৭. প্রসঙ্গ উল্লেখ করে টীকা লেখোঃ কাবুলিওয়ালা , পশতু , ফারসি , আফগানিস্তান , বরিশাল , গজল , উর্দু , নমাজ । 

উঃ কাবুলিওয়ালা — আফগানিস্তানের লোক । এরা জাতিতে পাঠান । রুক্ষ্ম ও পর্বতসংকুল দেশের বাসিন্দা হওয়ার জন্য এরা প্রচণ্ড শক্তিশালী দেহের অধিকারী । এরা ভারতে আসত মূলত হিং - এর ব্যবসা এবং টাকা ধার দেওয়ার কারবার করতে । এছাড়াও তারা আখরোট , পেস্তা বাদাম , কিশমিশ প্রভৃতি শুকনো ফল বিক্রি করত । পাঠ্য রচনাংশটিতে | কাবুলিওয়ালাদের সঙ্গে লেখকের দেখা হয়েছিল দেহরাদুন এক্সপ্রেসের কামরায় । 

পশতু — পাঠানদের ভাষা এবং আফগানিস্তানের আঞ্চলিক ভাষা । এটাই তাদের প্রথম ভাষা তবে সেখানে শিক্ষিত | জনের ভাষাও এটি নয় এবং পশতু ভাষার তেমন একটা সম্মান ছিলনা । কাবুলিওয়ালারা নিজেদের মধ্যে এই ভাষায় কথা বলে । পাঠ্য রচনাটিতে ট্রেনের কামরায় কাবুলিওয়ালারা নিজেদের মধ্যে পুশতু ভাষায় কথা বলছিল । লেখকের পশতু ভাষায় বিশেষ জ্ঞান ছিল না । 

ফারসি — আফগানিস্তানের শিক্ষিত ভদ্রলোকেদের ভাষা । আফগানিস্তানের সরকারি ভাষা ফরাসি । পাঠানরা এই ভাষা বিশেষ জানত না । এটি পারস্যের প্রাচীন জনগোষ্ঠীর ভাষা থেকে উদ্ভুত । পথচলতি রচনাটিতে লেখক এই ভাষাতেই ট্রেনে থাকা কাবুলিওয়ালাদের সাথে আলাপ জমান এবং কথা বলেন । 

আফগানিস্তান — অবিভক্ত ভারতবর্ষের উত্তর - পশ্চিমে অবস্থিত দক্ষিণ পশ্চিম এশিয়ার একটি রাষ্ট্র আফগানিস্তান । সারাদেশে প্রচুর পাহাড় পর্বত , রুক্ষ উষর দেশ । মূলত মুসলিম ধর্মাবলম্বী মানুষ এখানকার অধিবাসী । কাবুলিওয়ালারা এই আফগানিস্তানের অধিবাসী । বরিশাল – বর্তমান বাংলাদেশের নদীবহু একটি জেলা । মূলত কৃষিপ্রধান , এছাড়া এটি একটি বন্দর । পথচলতি ট্রেনের বৃদ্ধ পাঠানটির ডেরা ছিল বরিশালের পটুয়াখালি অঞ্চলে । গল্প – এক জাতীয় ধ্রুপদি সংগীত । আরখ থেকে গজলের উৎপত্তি হলেও ফারসি ভাষাতেই এটি বিকাশলাভ করে । পরবর্তীকালে এটি উর্দু ভাষার জনপ্রিয়তা লাভ করে । গফল হালকা মেজাজের লঘু শাস্ত্রীয় সংগীত । মুলত মুঘল সুলতানদের হাত ধরে এই ভারতে প্রবেশ । আমির খসরু , মীর্জা গালিব , গোরখপুরী ছিলেন প্রখ্যাত গজল লেখক । পথ চলতি রচনাংশটিতে এক পাঠান কাবুলিওয়ালা খুশ - হাল খাঁ খাঁটকের গজল অত্যন্ত দরদ দিয়ে গেয়ে শুনিয়েছিল । উর্দু - আফগানিস্তানের ভাষা । এতে আরব ও ফারসি শব্দের প্রয়োগ দেখা যায় । পাকিস্তান , ভারতে এই ভাষা প্রচলিত । " উর্দু " শব্দটি তুর্কি এবং ওর্দু ' শব্দ থেকে এসেছে এর অর্থ শিবিয় । বেশিরভাগ প্রাচীন ইসলাম সাহিত্য এই ভাষাতেই রচিত । ‘ পথ চলতি ' রচনাটিতে লেখকের উর্দু ভাষায় জ্ঞান থাকায় তিনি পাঠানদের কথা বুঝতে পেরেছিলেন । দুই কাবুলিওয়ালার কথোপকথনে এই ভাষা বিস্তর ছিল । নমাজ – নমাজ হল মুসলিমদের প্রার্থনা । এটি তারা তাদের আল্লাহ - র উদ্দেশ্যে করে থাকে । মুসলিম ধর্মে সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত দিনে পাঁচবার নামাজ পড়ার রীতি রয়েছে । ' পথ চলতি ' রচনায় লেখক দেখেছিলেন ট্রেনে কাবুলিওয়ালারাও নমাজ পড়ছিল । 


৮। নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর কয়েকটি বাক্যে লেখো 


৮.১ স্টেশনে পৌঁছে লেখক কী দেখেছিলেন ?

 উঃ যেলখক স্টেশনে পৌঁছে দেখলেন যে দেহরাদুন এক্সপ্রেস গাড়ির মধ্যম এবং দ্বিতীয় শ্রেণির কামরায় জবরদস্ত ভিড় । সমস্ত ট্রেনটি ঘুরে দেখার জন্য ইঞ্জিনের দিকে যেতে গিয়ে লেখক দেখলেন একখানি তৃতীয় শ্রেণির কামরা একেবারেই ফাঁকা । সেখানে অল্প কয়েকজন জবরদস্ত চেহারার কাবুলিওয়ালা কামরাটি দখল করে রয়েছে । কেউ সেখানে গেলে বা জানালা দিয়ে উকি মারলে তারা হুংকার ও ধমক দিয়ে বলছে , ইয়ে গাড়ি তোমারা ওয়াস্তে নেহি , জো তুম উদর , রেলকর্মচারী বা পুলিশ তাদের ত্রি - সীমানাতেও ঘেষছে না । 


৮.২ দু - চারটি ফারসি বলতে পারার ক্ষমতা লেখককে কী রকম সাহস দিয়েছিল ?

 উঃ লেখক ভিড়ে ঠাসা গাড়ি দেখে ঠিক করেছিলেন যে এই কাবুলিওয়ালাদের কামরাতেই উঠতে হবে । তিনি জানতেন ফারসি ভাষা হচ্ছে আফগানিস্তানের শিক্ষিত লোকেদের ভাষা ও সরকারি ভাষা । তিনি ভাই ভেবেছিলেন যে ফারসি বলতে পারা লোকেদের কাবুলিওয়ালারা সম্মান করবে । তাই তিনি কাবুলিওয়ালা অধ্যুষিত কামরাতে সাহস করে প্রবেশ করে যান । 


৮.৩ " আলেম ” শব্দের মানে কী ? লেখককে কারা কেন “ এক মস্ত আলেম ” ভেবেছিলেন ?

 উঃ  ' আলেম ' শব্দের মানে হলো সর্বজ্ঞ বা জ্ঞানী । দেহরাদুন এক্সপ্রেসের কামরায় ' কাবুলিওয়ালাদের সঙ্গে লেখক ফারসি ভাষায় কথা বলছিলেন । একজন বাঙালির মুখে ফারসি ভাষা শুনে কাবুলিওয়ালারা তাকে “ এক মস্ত আলেম ” ভেবেছিলেন । 


৮.৪ । আগা - সাহের সম্বন্ধে যা জানা গেল , সংক্ষেপে লেখো । 

উঃ আগা সাহেবের বাণিজ্যের স্থান বাংলাদেশের পটুয়াখালি বন্দর । তাঁর মূল ব্যবসা টাকা ধার দেওয়া , শীতবস্ত্র আর হিং বিক্রি করা । বরিশালের ভাষা তিনি তাঁর মাতৃভাষার মতোই বলতে পারেন । তিনি ট্রেনের উপরের বাঙ্কে শুয়েছিলেন , লেখককে দেখে শোয়া অবস্থা থেকে উঠে বসেছিলেন এবং লেখক কে জিজ্ঞাসা করেছিলেন যে তিনি বাংলাদেশ থেকে আসছেন কি না । লেখক পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখেছিলেন যে আগা সাহেব অনেক আগে উঠে বসে তসবিহ বা মালা জপ করছেন । 


৮.৫ লেখকের সামনে বেশ্বির দুই পাঠান সহযাত্রী নিজেদের মধ্যে যে আলোচনা করছিলেন তা নিজের ভাষায় লেখো । লেখক কীভাবে সেই কথার অর্থ বুঝতে পারলেন ? 

উঃ লেখকের সামনের বেঞ্চির দুই পাঠান সহযাত্রী নিজেদের মধ্যে লেখককে নিয়ে আলোচনা করছিলেন । তারা লেখকের বিষয় পশতু ভাষায় আলোচনা করছিল এবং বলছিল যে , এই লেখকরা অত্যন্ত বিদ্বান ও বুদ্ধিমান । তারা ইংরেজি সাহিত্যের নানা বই ও ফারসি পড়েন সাথে সাথে পশতু ভাষাও পড়ে ফেলেছেন এবং তাদের সম্বন্ধে কত খবর রেখেছে এমনকি খাস দেহাতি কথাও অনেক জেনে গিয়েছেন । লেখক পশতু ভাষা বিশেষ জানতেন না । কিন্তু এই ভাষায় প্রচুর ফারসি ও আরবি শব্দ থাকাতে এবং উর্দু ভাষা তাঁর একটু জানা থাকায় লেখক তা বুঝতে পেরেছিলেন ।


 ৯. নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর নিজের ভাষায় লেখো

 ৯.১ পাঠ্য - গদ্যটির ভাবের সঙ্গে " পথচলতি " নামটি কতখানি সংগতিপূর্ণ হয়েছে , বিচার করো । 

উঃ ‘ পথচলতি ' কথার অর্থ পথ চলার মাঝে অর্থাৎ পথের মাঝে কারো সাথে ক্ষণিবো কথা বা ক্ষণিকের দেখা হওয়া ইত্যাদি । পথচলতি রচনাটির পুরোটাই লেখকের চলার পথের বর্ণনায় ভরা । লেখকের সঙ্গে । কয়েকজন কাবুলিওয়ালার আলাপ হয় একটি কলকাতাগামী দেহরা - পুন এক্সপ্রেসের কামরায় । সেখানে কাবুলিওয়ালাদের সাথে লেখক এব রাত ট্রেনে কাটিয়েছিলেন । সেখানে কাবুলিওয়ালাদের সাথে বিস্তর আলাপ , আলোচনা , শল্প , গান ইত্যাদি হয়েছে । পথের এই বন্ধুদের সাথে লেখকের হয়ত আর কখনও এইভাবে দেখা হবে না । তবু পথের এই বন্ধুরা লেখকের সাথে আপন হয়ে গেছেন । পাঠানদের সাহিত্য সংস্কৃতি কথা জানায় তারা লেখককে আপন করে নিয়েছে এবং তাঁকে মস্ত এক আলেম মনে করেছে । পুরো গল্পটিই যাত্রাপথের আলাপ ও দেখার ওপর ভিত্তি করে রচিত হয়েছে । তাই গল্পটির নাম ‘ পথচলতি ’ খুবই সংগতিপূর্ণ হয়েছে । 


৯২ পাঠ্য পদ্যাংশটি থেকে কথকের চরিত্রের কোন্ বৈশিষ্ট্যগুলি তোমার চোখে ধরা পড়েছে । বিভিন্ন ঘটনার উল্লেখ করে লেখো । 

উঃ এখানে কথকের প্রাথমিক যে চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য দেখা গেছে তা হলো তাঁর দুঃসাহস । তিনি কেবল তাঁর ফারসি ভাষাজ্ঞানকে সম্বল করে ওইরকম জবরদত্ত চেহারার কাবুলিওয়ালাদের কামরায় উঠে পড়েছেন । এরপর দেখা গেছে যে তিনি তাদের প্রতি ভ্রাতৃত্বসুলভ আচরণ করেছেন । তিনি তাদের কাছে সম্মানীয় হওয়া সত্ত্বেও তাদেরকে কুকথা বলেন নি । বরং তাদের সাথে গানে গল্পে মেতে উঠেছেন । তিনি একই সাথে আলাপী , বিচক্ষণ ও বিদ্বান । তাঁর ভাষা জ্ঞান অত্যন্ত গভীর । উর্দু আরবি ও ফরাসি ভাষায় তাঁর জ্ঞান প্রবল । এছাড়া লেখকের সাহিত্য জ্ঞান ও সংগীতের প্রতি অনুরাগের পরিচয়ও আমরা পাই । তিনি সুদূর কাবুল দেশের এক অবহেলিত ভাষার গীত এবং গল্প সম্পর্কে যথেষ্ট খবর জানেন । তাই তিনি পশতু রচিত আদম খাঁ দুরখানির ভাষায় কিসসা শুনতে চেয়েছেন । পশতু ভাষার সর্বশ্রেষ্ঠ কবি খুশ হাল খাঁ খট্টকের গজল শুনতে চাওয়ার মধ্যে দিয়ে লেখকের সংগীত প্রেমিক মনের পরিচয় পাওয়া যায় । তিনি তাদের ধর্ম সম্বন্ধেও খবর রাখেন তার পরিচয় পাওয়া যায় । পাঠানরা কীভাবে তাদের ধর্ম পালন করে তার পরিচয় দানের মধ্য দিয়ে । 


৯.৩ কথকের সঙ্গে কাবুলিওয়ালাদের প্রারম্ভিক কথোপকথোনটি সংক্ষেপে বিবৃত করো ।

 উঃ । কথক ভিড় ট্রেনের মধ্যে একখানি কামরা ফাঁকা দেখে তাতে চড়তে গিয়ে দেখলেন যে তাতে কিছু কাবুলিওয়ালা সওয়ার । তিনি সেই কামরায় উঠতে যাওয়াতে কাবুলিওয়ালারা তাকে হুংকার দিয়ে বলে উঠল —— যে কিদর আতে হো ? ” “ হয়ে গাড়ি তুম লোগ কে ওয়াস্তে নেহি , সিফ হম পঠান লোগ ইসমে জাতে হৈ ' অর্থাৎ যে এই গাড়িটি শুধু তাদের । তখন লেখক তাদের ফারসিতে উত্তরে বললেন সে এই গাড়িতে শুধু তার একার জায়গা দিতে । কাবুলিওয়ালারা ফারসি জানত না । তাই তারা হকচকিয়ে গেল । এই বুঝে লেখক আর একটু গলা চড়িয়ে উপহাস ও তাচ্ছিল্যের ভাব দেখিয়ে বললেন যে তারা আফগানিস্তানের কোন অঞ্চল থেকে আসছে যারা ফারসি বোঝে না । এতে কাবুলিওয়ালারা অবাক হয়ে গেল । এমন সময় গাড়ির ভিতর থেকে এক ছোকরা কাবুলিওয়ালা তাকে বলে যে সে ফারসি জানে , লেখক কী বলতে চান ? লেখক তাকে বলেন যে তিনি এই কামরাতে জায়গা চান । এরপর সে জিজ্ঞাসা করে যে লেখক কোথায় যাবেন । লেখক বলেন যে তিনি কলকাতা শহরে যাবেন । তখন তারা তাকে একটা বেশ ছেড়ে দেয় । এইভাবে কাহিনির শুরুতে লেখকের সাথে কাবুলিওয়ালাদের প্রারম্ভিক কথোপকথন শুরু হয় । 


৯.৪ কথক কেন বলেছেন— “ যেন এক পশতু - সাহিত্য - গোষ্ঠী বা সম্মেলন লাগিয়ে দিলুম । ” — সেই সাহিত্য সম্মেলনের বর্ণনা দাও । 

উঃ  লেখক দেহরা - দুন এক্সপ্রেসের কামরায় ষোলোজন শক্তিশালী চেহারার পাঠান কাবুলিওয়ালার সঙ্গে গয়া থেকে কলকাতায় ফিরছিলেন । লেখক ‘ বহুভাষাবিদ ' কিন্তু পশতু ভাষা জানেন না । আর পাঠানরা ফরাসি জানে না তারা জানে তাদের মাতৃভাষা পশতু । লেখক কাবুলিওয়ালাদের সাথে সৌভ্রাতৃত্ব দেখিয়ে তাদেরকে প্রথমে পাঠানদের পশতু ভাষার সর্বশ্রেষ্ঠ কবি খুশ - হাল খাঁ খট্টকের গজল গাইতে অনুরোধ করলেন । তখন এক পাঠান ভাবের আতিশয্যে কখনো কালে হাত দিয়ে কখনো বুকে হাত দিয়ে পশতু ভাষার গজল গাইতে শুরু করলেন । তারপর তিনি আদম খাঁ আর দুরখানির মহব্বতের দিলভাঙা কিসসা শুনতে চান । এরপর এক পাঠান এই কিসসা কতকটা গান করে কতকটা পাঠ করে শোনাতে লাগল । .. এইভাবে ট্রেনের কামরায় যেন পশতু ভাষায় গান এবং সাহিত্যের আসর বসে গেল । তাই লেখক বলেছেন যেন এক পশতু - সাহিত্যগোষ্ঠী বা সম্মেলন লাগিয়ে দিলুম । 


৯.৫  “ পথচলতি ” রচনায় ভাষা ও সংস্কৃতির বিভিন্নতা থাকা সত্ত্বেও যে সহজ বন্ধুত্ব ও উদার সমানুভূতির ছবিটি পাওয়া যায় তার স্বরূপ বিশ্লেষণ করো । বর্তমান সময়ে এই বন্ধুত্ব ও সমানুভূতির প্রাসঙ্গিকতা বুঝিয়ে দাও । 

উঃ “ পথচলতি ” রচনায় দুটি বহু দুরবর্তী স্থানে বসবাসকারী একদমই ভিন্ন দুটি জাতির মানুষের সৌভ্রাতৃত্বের পরিচয় পাওয়া যায় । একজন বাঙালি ও অন্যরা কাবুলিওয়ালা । অথচ একই পথের সহযাত্রী হয়ে এরা একে অপরের বন্ধু হয়ে ওঠে । অন্য ভাষার গান , সাহিত্য বুঝতে কারোর অসুবিধে হয় না । পশতু ভাষী পাঠান কাবুলিওয়ালারা লেখককে বন্ধুত্বপূর্ণ ভাবের জন্যই বুঝেছে তাদের ভাষা ও সংস্কৃতির প্রতি বাঙালি বাবুর সম্মান রয়েছে । বিজাতীয় হলেও ভদ্রতা ও বন্ধুত্বপূর্ণ ও উদার মনোভাবের জন্যই তারা তাঁকে মস্ত আলেম বলে মনে করেছে । ঘুম থেকে ওঠার পর একে অন্যের কুশল জিজ্ঞেস করেছে । এইভাবে দুই ভিন্ন ভাষা ও সংস্কৃতির লোকের মধ্যে সহজ বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে । বর্তমানে যখন নানা জায়গায় জাতিদাঙ্গা , ভিন্ন ধর্মাবলম্বিদের বিদ্বেষ , বর্ণবিদ্বেষ বহুলাংশে বেড়ে চলেছে । দৈনন্দিন হিংসায় সমাজ জর্জরিত হচ্ছে । তখন এই প্রকার ঘটনা আমাদের কাছে সুস্থ ও সুন্দর বার্তা বয়ে আনে । সেই বার্তা মানুষে মানুষে ভালোবাসা , ভ্রাতৃত্ব এবং একে অপরকে সম্মান দেওয়ার কথা বলে । বর্তমানে সমাজে এই ধরনের মানুষের বড়োই প্রয়োজন যাদের অনুভব ও সম্মানবোধ সমাজে একতার পরিবেশ গড়ে তুলবে । পাশাপাশি উদারতা , বন্ধুত্বপূর্ণ মনোভাব ও মুক্তচিন্তা এই বিচ্ছিন্নতাবাদ থেকে আমাদের মুক্তি দেবে । 


১০. রেল ভ্রমণের সময় অচেনা মানুষের সঙ্গে তোমার বন্ধুত্বের অভিজ্ঞতা নিয়ে একটি রম্যরচনা লেখো । 

উঃ একবার আমি বাবা মায়ের সঙ্গে বিষ্ণুপুর বেড়াতে যাচ্ছিলাম । ট্রেনে করে যাবার সময় একজন ভদ্রলোকের সঙ্গে আলাপ । লোকটি ছিলেন ভারি মজার । প্রথমে লোকটি উঠে খাবার খেলেন । খেয়ে আবার ঘুমিয়ে পড়ল । এইভাবে কয়েকবার করার পর আমরা ব্যাপারটা লক্ষ করছি দেখে তিনি বললেন “ আসলে আমার খেলে ঘুম পায় , ঘুম থেকে উঠলে খিদে পায় । আমার এই ব্যাপার এর জন্য স্ত্রী আমায় সারাদিনে আধপেটা খেতে দেয় । আর আজকে অফিসের কাজে বাইরে যাচ্ছি । ছাড়া পেয়ে তাই আনন্দে খাচ্ছি আর ঘুমোচ্ছি । এই শুনে আমরা সবাই হো হো করে হেসে উঠলাম । 



No comments:

Post a Comment