⬛লেখক পরিচিতি;
শান্তিসুধা ঘোষ ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দে বরিশালের এক অভিজাত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবার নাম ক্ষেত্রনাথ ঘোষ, যা অন্নদাসুন্দরী দেবী। স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশ নেওয়ায় তিনি দীর্ঘদিন প্রথমে কারাবন্দি ও পরে গৃহবন্দি হয়েছিলেন। তিনি জয়ত্রী, মন্দিরা, যুগান্তর প্রভৃতি পত্রিকায় লেখালেখির পাশাপাশি অধ্যাপনাও করেছেন। ১৯২২ খ্রিস্টাব্দে তাঁর মৃত্যু হয়। তাঁর জীবনের রঙ্গমঞ্চে নামক আত্মজীবনীটি অত্যন্ত সুখপাঠ্য।
⬛নামকরণ;
‘খোলামেলা দিনগুলি' রচনাটিতে ফুটে উঠেছে শান্তিসুধা ঘোষের ছেলেবেলার সুন্দর দিনগুলোর কথা। কলকাতা থেকে দূরে বরিশালে গিয়ে তিনি প্রকৃতির মাঝে অসামান্য কয়েকটি দিন কীভাবে কাটিয়েছিলেন, সেই কথাই রয়েছে এখানে। ফুলের হাসি, পাখির গান, সবুজ গাছ, পুকুরের টলটলে জল—সব মিলিয়ে শহরের ইট-কাঠ-পাথরের মধ্যে বন্ধ জীবনের অন্ধকার থেকে বেরিয়ে এই দিনগুলো তাঁকে যে উজ্জ্বল স্মৃতি উপহার দিয়ে গিয়েছিল, তাতে মনে হয় এই “খোলামেলা দিনগুলি' নামটি এই রচনার মেজাজটিকে সার্থকভাবে তুলে ধরেছে।
⬛সারমর্ম;
শান্তিসুধা ঘোষের ‘খোলামেলা দিনগুলি' রচনাটি থেকে জানা যায় যে, তাঁর ছোটোবেলায় স্কুলের ছুটিতে হাঁপধরানো কলকাতা ছেড়ে তিনি যখন বরিশালের বাড়িতে যেতেন, তখন খোলা প্রকৃতি দু-হাত বাড়িয়ে তাঁকে টেনে নিত আপন জগতে। বাবার কাছ থেকেই প্রকৃতিকে ভালোবাসার গুণ নিজের মধ্যে পেয়েছিলেন তিনি। ফুল, পাখি, গাছ—সব মিলিয়ে এক অন্য জগতে হারিয়ে যেতেন তিনি। ঝুমকো জবা গাছের লাল লাল ফুল, গাছেদের একসঙ্গে মিলেমিশে থাকা, পুকুরঘাটে বাসন মাজতে গিয়ে শাপলা ফুলের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে রূপকথার গল্প মনে পড়া—সব মিলিয়ে এক অপূর্ব সুন্দর জগতের বর্ণনা পাই এই রচনাটির মধ্যে দিয়ে।
⬛ নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর দাও:
১. বরিশালের বাড়ির বাগানে কী কী গাছ ছিল?
উত্তর: বরিশালের বাড়ির বাগানে শিউলি, গন্ধরাজ আর হাসনুহানার গাছের মাঝখানে ছিল বসোরা গোলাপের চারা।
২. 'খোলামেলা দিনগুলি' রচনাটিতে লেখিকা মহানগরী ছেড়ে কোথায় গিয়েছিলেন ?
উত্তর: 'খোলামেলা দিনগুলি' রচনাটিতে লেখিকা মহানগরী ছেড়ে বরিশালে গিয়েছিলেন।
৩. প্রকৃতি চেনায় লেখিকার ওপরে কার প্রভাব পড়েছিল ?
উত্তর: প্রকৃতি চেনায় লেখিকার ওপরে তাঁর বাবার প্রভাব পড়েছিল।
৪. লেখিকার বাবা কীভাবে মাটি তৈরি করতেন?
উত্তর: লেখিকার বাবা খুরপি দিয়ে মাটি কুপিয়ে মাটি তৈরি করতেন।
৫. লেখিকার বাবা কীভাবে বাড়ি সাজিয়েছিলেন ?
উত্তর: লেখিকার বাবা ফুলের বাগান করে ও ফসলের খেত বানিয়ে বাড়ি সাজিয়েছিলেন।
বরিশালের বাড়িতে কোথায় বাগান ছিল ?
উত্তর: বরিশালের বাড়িতে বাগান ছিল দক্ষিণের দরজার পাশে।
৭. কী দেখে লেখিকা দোর খুলে থমকে দাঁড়িয়ে পড়েছিলেন?
উত্তর: বসোরা গোলাপের গাছে একটি স্তবকে ফোটা দুটি ফুল দেখে লেখিকা দোর খুলে থমকে দাঁড়িয়ে পড়েছিলেন।
৮. কোথায় একটি নালা ছিল ?
উত্তর: বরিশালে লেখিকার বাড়ি ও এক ইঞ্জিনিয়ার সাহেবের বাড়ির মাঝখানে একটি নালা ছিল।
৯.নালায় কী কী মাছ ছিল?
উত্তর: নালায় অনেক বড়ো বড়ো শিঙি আর মাগুর মাছ ছিল।
১০. “আমি অনেক সময় গিয়ে দাঁড়াই”—কোথায় দাঁড়ানোর কথা বলা হয়েছে?
উত্তর: লেখিকার বাবা যখন ছিপ ফেলে মাছ ধরতে বসতেন, তখন লেখিকা সেখানে গিয়ে দাঁড়াতেন। এখানে সেই কথাই বলা হয়েছে।
১১. খালের পাশে কী কী গাছ ছিল ?
উত্তর: খালের পাশে একটি গনিয়ারি গাছ ও একটি ঝুমকো জবার গাছ ছিল।
১২. ঝুমকো জবা ও গনিয়ারি গাছ দুটিকে লেখিকা কীসের সঙ্গে তুলনা করেছেন ?
উত্তর: ঝুমকো জবা ও গনিয়ারি গাছ দুটিকে লেখিকা রাধাকৃষ্ণের সঙ্গে তুলনা করেছেন।
১৩. লেখিকা কোথায় বাসনপত্র মাজতে যেতেন ?
উত্তর : লেখিকা খিড়কির পুকুরঘাটে বাসনপত্র মাজতে যেতেন ।
১৪. লেখিকা কেন বাসন মাজতে যেতেন ?
উত্তর: বাড়ির চাকর আনন্দ দেশে গেলে লেখিকা প্রাতরাশের পর খিড়কির পুকুরঘাটে বাসনপত্র মাজতে যেতেন ।
১৫. লেখিকাদের বাড়ির পুকুরে কী কী ফুল ফুটত ?
উত্তর: লেখিকাদের বাড়ির পুকুরে রক্ত শাপলা আর শ্বেতশাপলা ফুল ফুটত।
⬛নীচের সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যাভিত্তিক প্রশ্নগুলির উত্তর দাও:
১. ‘খোলামেলা দিনগুলি' রচনাংশে লেখিকা কীভাবে প্রাকৃতিক শোভা উপভোগ করতেন ?
উত্তর: বরিশালের বাড়িতে উন্মুক্ত প্রকৃতির মধ্যে লেখিকার মন আরও উদার হয়ে উঠেছিল । বাগানের ফুলের গাছগুলি আপন সৌন্দর্য ভরিয়ে রাখত তাঁর দিনগুলিকে । কোনোদিন সকালে বসোরা গোলাপের গাছে একটি স্তবকে ফোটা দুটি ফুল দেখে মুগ্ধ হয়ে তিনি থমকে দাঁড়াতেন, কোনোদিন-বা গনিয়ারি গাছের সঙ্গে পাশাপাশি জড়াজড়ি করে দাঁড়িয়ে থাকা ঝুমকো জবার গাছ তাঁকে রাধাকৃষ্ণের কথা মনে করিয়ে দিত।
পুকুরঘাটে বাসন মাজতে বসে পুকুরের জলে ফুটে থাকা রক্তশাপলা আর শ্বেতশাপলার ফুল দেখে মনে হত, তার বোঁটাগুলি যেন কোন্ অতলে রূপবতী রাজকন্যার পাতালপুরীতে পৌঁছে গেছে। স্বপ্নের মতো মনে হত চারপাশ, মনে হত যেন তিনি যেন নিজেই সেই রাজকন্যা।
No comments:
Post a Comment