⬛কবি পরিচিতি;
বর্তমান বাংলাদেশের খুলনা জেলায় ১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দের ২৫ মার্চ শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য উপন্যাসগুলি হল— ' -'বৃহন্নলা', 'কুবেরের বিষয় আশয়’, ‘অনিলের পুতুল', ‘সরমা ও নীলকান্ত', 'নির্বান্ধব' ইত্যাদি। ১৯৯৩ খ্রিস্টাব্দে তিনি শাহজাদা দারাশুকো উপন্যাসের জন্য ‘সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার লাভ করেন।
⬛ নামকরণ;
ছোট্ট ছেলে শংকরের পড়াশুনো চলে এক অভিনব পদ্ধতিতে । পড়ার জগৎ, বইয়ের পৃষ্ঠা ছাড়িয়ে ছড়িয়ে পড়ে তার চারপাশে। তার শিক্ষকও বলেন, সজাগ হয়ে এই প্রকৃতিকে খোলা বইয়ের মতো যদি পড়া যায়, তাহলেই প্রকৃত শিক্ষা লাভ করা যায়। সুতরাং, সেনাপতি যেমন সব সৈন্যের মধ্যে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন, তেমনই প্ৰকৃত শিক্ষাগ্রহণের ক্ষেত্রে সব ছাত্রের মধ্যে শংকরই এগিয়ে। আবার তার পদবিও সেনাপতি। সুতরাং, এই গল্পের নাম হিসেবে ‘সেনাপতি শংকর' যথাপ্রযুক্ত ও সার্থক।
⬛ বিষয়বস্তু;
আকন্দবাড়ি স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র শংকর কিছুটা আপনভোলা প্রকৃতির। তার স্বপ্নের গল্প বলতে গিয়ে ক্লাসে সবার হাসির পাত্র হয় সে । তার কল্পনায় আন্দিজ পর্বতমালার দৌড়বাজ পাখি এমু উড়ে এসে বসে ঘোলপুকুরের বড়োদিঘির পাড়ে—সবেদা গাছের ডালে ।স্বপ্নে তার কাছে ধরা দেয় নীল রঙের বাতাস, খয়েরি রঙের ঘরবাড়ি। সেখানে কোনো ব্যথা নেই। আছে শুধু হাঁড়িচাচা, তিতির আর পানকৌড়ি। বিভীষণ মাস্টারমশাই এই কল্পনাপ্রবণ ছাত্রটির মনের কথা অনুভব করতে পারেন। তিনি বলেন, 'এই খোলামেলা পৃথিবীই সবচেয়ে বড়ো বই। তাকে চোখ ভরে দেখাই সবচেয়ে বড়ো পড়াশুনো।'
⬛ নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর দাও।
১. শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায়ের লেখা দুটি বইয়ের নাম লেখো।
উত্তর: শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায়ের লেখা দুটি বই হল বেঁচে থাকার স্বাদ এবং ভাস্কো দা গামার ভাইপো।
২.তিনি কোন্ বইয়ের জন্য সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার পেয়েছিলেন ?
উত্তর: শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায় শাহজাদা দারাশুকো উপন্যাসের জন্য সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার পেয়েছিলেন |
৩. আকন্দবাড়ি স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা কোন্ কোন্ জায়গা থেকে পড়তে আসে ?
উত্তর: আকন্দবাড়ি স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা ভেটুরিয়া, সাঁইবাড়ি, ঘোলপুকুর এবং আকন্দবাড়ি থেকে পড়তে আসে |
৪.স্কুলের জানলা থেকে কী কী দেখা যায় ?
উত্তর: স্কুলের জানলা থেকে আকাশের মেঘ দেখা যায় |
৫. শংকর কীসের স্বপ্ন দেখে ?
উত্তর: শংকর স্বপ্নে শঙ্খচিলের মতো ভেসে যায়। কখনো- কখনো সে এমু পাখির স্বপ্নও দেখে।
৬. শংকরের স্বপ্নে বাতাসের রং কী ?
উত্তর: শংকরের স্বপ্নে বাতাসের রং নীলচে।
৭. এমু ছাড়া উড়তে পারে না শুধু দৌড়োতে পারে এমন একটি পাখির নাম লেখো ।
উত্তর: এমু ছাড়া উড়তে পারে না শুধু দৌড়োতে পারে এমন একটি পাখি হল উটপাখি।
⬛ নীচের প্রশ্নগুলির নিজের ভাষায় উত্তর লেখো ।
১. “পাগলা বাতাসে তার ঢেউয়ের গুঁড়ো সবসময়ে উড়ে আসছে” এখানে বাতাসকে 'পাগলা' বলা হল কেন ?
উত্তর: আকন্দবাড়ি গ্রামের মাত্র পাঁচ-সাত মাইল দূরেই রয়েছে বঙ্গোপসাগর। তাই এখানকার হাওয়ায় সমুদ্রের জলীয় বাষ্প অথবা সামুদ্রিক হাওয়ার দাপট বেশ ভালোমতোই টের পাওয়া যায়। এই এলোমেলো হাওয়াকেই 'পাগলা' বলা হয়েছে।
২. “বিভীষণ দাশ এমু পাখির কথা বলছিলেন” গল্পের ‘বিভীষণ দাশ'-এর পরিচয় দাও। এমু পাখি ছাড়া গল্পে আর কোন্ পাখির প্রসঙ্গ এসেছে?
উত্তর: • আলোচ্য গল্পের বিভীষণ দাশ আকন্দবাড়ি স্কুলের প্রকৃতিবিজ্ঞানের শিক্ষক । তাড়াহুড়োয় ছাত্ররা তাঁকে ডাকে ‘মাসাই” নামে। শিক্ষক হিসেবে তিনি অত্যন্ত দায়িত্ববান | খুঁটিয়ে পড়ানোর পাশাপাশি ছাত্ররা পড়ার বিষয়ে মনোযোগী কিনা, সেদিকেও ছিল তাঁর তীক্ষ্ণ নজর। আবার বকাঝকা করার পাশাপাশি তিনি ছাত্রদের প্রশংসা করে কাছে টেনে নিতেও জানতেন। শংকরকে তিনি উৎসাহিত করেছিলেন পড়ার বইয়ের বাইরের পৃথিবীটাকে জানতে।
এমু পাখি ছাড়াও গল্পে শঙ্খচিল, বাজ, হাঁড়িচাচা, তিতির, পানকৌড়ি, মাছরাঙা প্রভৃতি পাখির প্রসঙ্গ রয়েছে।
৩. “শংকর বুঝল, কোথাও একটা বড়ো ভুল হয়ে যাচ্ছে।”—কে এই শংকর ? তার স্বভাবের প্রকৃতি কেমন? তার যে কোথাও একটা বড়ো ভুল হয়ে যাচ্ছে—এটা সে কীভাবে বুঝতে পারল ?
উত্তর: • আকন্দবাড়ি স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র ছিল শংকর। তার পুরো নাম শংকর সেনাপতি।
• শংকর একটু ভাবুক প্রকৃতির ছেলে। সে তার নিজের কল্পনার জগতে বিচরণ করতে ভালোবাসে। তার স্বপ্নের সেই জগতে অন্য কারও প্রবেশাধিকার নেই । সারাদিন ধরে বনে বনে, গাছে গাছে ঘুরে বেড়ানো শংকর ভালোবাসে গাছ আর পাখি। রাতের বেলায় শংকরের স্বপ্নে সেসব ফিরে আসে ।
• শংকর একদিন প্রকৃতিবিজ্ঞানের ক্লাসে হঠাৎই জানলার বাইরে শঙ্খচিল দেখতে দেখতে অন্যমনস্ক হয়ে পড়ে। শিক্ষকের ডাকে হুঁশ ফেরে তার। তখন তাকে এমু পাখি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে সে বলে, সে ঘোলপুকুরে বড়োদিঘির পাড়ে সবেদা গাছের ডালে এমু পাখিকে এসে বসতে দেখেছে । শংকরের এই উত্তরে তাদের প্রকৃতিবিজ্ঞানের শিক্ষক বিভীষণ মাস্টারমশাই তাকে বিদ্রূপের সুরে জিজ্ঞাসা করেন যে, এমু পাখি কেমন দেখতে। তখন শংকরের মনে হয় যে, সে কোথাও একটা খুব বড়ো ভুল করে ফেলেছে।
৪. এমু পাখির যে বর্ণনা শংকর দিয়েছিল তার সঙ্গে পাখিটির মিল বা অমিল কী লেখো।
উত্তর: শংকরের কল্পনার এমু পাখির সঙ্গে বাস্তবের প্রমু পাখির বিন্দুমাত্রও মিল ছিল না। বাস্তবে এমু পাখি থাকে আন্দিজ পর্বতমালায়। তিন বছর অন্তর একবার বড়ো বড়ো দুটো ডিম পাড়ে। অথচ শংকর তাকে ঘোলপুকুরের বড়োদিঘির পাড়ে সবেদা গাছের ডালে বসে থাকতে দেখেছিল। এমু পাখি ভালো উড়তে পারে না। ফলে এই পাখিকে ঘোলপুকুরে দেখাটা অসম্ভব ব্যাপার । তার ওপরে শংকরের বর্ণনায়, এমু পাখি জোরে বাতাস কেটে উড়ে বেড়াচ্ছিল। দৌড়বাজ পাখি এমুর পক্ষে যা একেবারেই সম্ভব ছিল না। তাই এমুর যে বর্ণনা শংকর দিয়েছিল, তা বাস্তবের এমু পাখির সঙ্গে একেবারেই মেলেনি ।
৫. “এটা কি পঞ্চানন অপেরা পেয়েছ ?”—'অপেরা' বলতে কী বোঝা ? এখানে অপেরার প্রসঙ্গ এল কেন?
উত্তর: • সাধারণ অর্থে 'অপেরা' বলতে গাননির্ভর যাত্রাপালাকেই বোঝায় । প্রকৃতিবিজ্ঞানের শিক্ষক বিভীষণ মাস্টারমশাই ক্লাসে পড়াতে পড়াতে শংকরের কাছে এমু পাখির বর্ণনা জানতে চাইলে শংকর সেই পাখির যে বর্ণনা দেয়, তা তার স্বপ্নে দেখা। ফলে, সেই বর্ণনার সঙ্গে বাস্তবের এমু পাখির বর্ণনা একেবারেই মেলেনি। শংকরের এইরকম মনগড়া বর্ণনায় বিরক্ত মাস্টারমশাইয়ের মনে হয় সে-ও পঞ্চানন অপেরার অভিনেতার মতোই বানানো, নাটকীয় সংলাপ বলছে। তাই তিনি এই প্রসঙ্গটি টেনে এনে শংকরকে বকাঝকা করেন।
৬. “বলো, বলতেই হবে” –কাকে এ কথা বলা হল ? উদ্দিষ্টকে কোন্ কথা বলতে হবে বলে দাবি জানানো হয়েছে?
উত্তর: • শংকরকে মাস্টারমশাই।কথা বলেছেন বিভীষণ
• শংকরকে পড়া ধরতে গিয়ে বিভীষণ মাস্টারমশাই জিজ্ঞাসা করেন যে, এমু পাখি কেমন দেখতে। তখন শংকর বলে, সে এমু পাখিকে ঘোলপুকুরে বড়োদিঘির পাড়ে সবেদা গাছের ডালে উড়ে এসে বসতে দেখছে। এতে মাস্টারমশাই অবাক হয়ে যান। কারণ আন্দিজ পর্বতমালায় এমু পাখি থাকে। সে উড়তেও পারে না। ফলে তাঁর মনে হয়, শংকর ইচ্ছে করে সব বানিয়ে বানিয়ে বলছে । তিনি এ-ও বুঝতে পারেন যে, শংকর এতক্ষণ কোনো পড়াই শোনেনি | তাই তিনি রেগে গিয়ে দাবি করেন যে, শংকর কীভাবে এখানে এমু পাখি দেখতে পেয়েছে তা তাকে বলতেই হবে।
৭. গল্প অনুসরণে আকন্দবাড়ি স্কুলের প্রকৃতিবিজ্ঞান ক্লাসে উদ্ভূত পরিস্থিতি নিজের ভাষায় লেখো ।
উত্তর: প্রকৃতিবিজ্ঞানের ক্লাসে একদিন শংকর খোলা জানলা দিয়ে নারকেল গাছের মাথায় ভেসে বেড়ানো শঙ্খচিল দেখতে দেখতে অন্যমনস্ক হয়ে পড়ে। মাস্টারমশাই তার সংবিৎ ফেরানোর জন্য তাকে ডেকে পড়া জিজ্ঞাসা করেন। উত্তর দিতে গিয়ে শংকর বলে যে, সে ঘোলপুকুরের বড়োদিঘির পাড়ে এমু পাখিকে উড়ে এসে বসতে দেখেছে। এমনকি সে এও বলে যে, এমু পাখিকে নাকি সে জোরে শব্দ করে বাতাস কেটে উড়তেও শুনেছে।
এতে মাস্টারমশাই অত্যন্ত রেগে যান। কারণ, এমু পাখি থাকে আন্দিজ পবর্তমালায়। এই পাখি উড়তেই পারে না যে, সে এখানে এসে বসবে। তিনি বুঝতে পারেন, শংকর পড়া শুনছিল না। কোথা থেকে শংকর এমু পাখির বর্ণনা দিল তা জানতে চাইলে শংকর তাঁকে জানায়, হয়তো সে স্বপ্ন দেখেছে। এতে মাস্টারমশাইও তার ওপরে রেগে যান, ক্লাসের অন্যান্য ছেলেরাও তাকে নিয়ে হাসাহাসি করে।
৮. “স্বপ্নে সে অনেক কিছু জানতে পেরেছে।”— কার স্বপ্ন দেখার কথা বলা হয়েছে? স্বপ্ন দেখে সে কী জেনেছে?
উত্তর: • এখানে আকন্দবাড়ি স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র শংকরের স্বপ্ন দেখার কথা বলা হয়েছে।
• শংকর স্বপ্নে এমু পাখিকে দেখেছিল উড়ে এসে ঘোলপুকুরের বড়োদিঘির পাড়ে সবেদা গাছের ডালে বসতে। গাঢ় ছাই রঙের, বাজপাখির চেয়েও বড়ো সেই পাখি ডানায় বাতাস কাটার শব্দ করে যখন উড়ে বেড়ায়, তখন অন্যান্য পাখিরা তার কাছ থেকে সরে যায়। তার স্বপ্নে হাওয়ার রং নীল আর ঘরবাড়ি সব খয়েরি রঙের। স্বপ্নে কোথাও ধাক্কা খেলে, কিংবা জলে পোঁতা বাঁশে গা ঘষে গেলেও ব্যথা লাগে না ।
৯. “পাখি দেখার জন্য যখন মাঠে বা বাগানে ঘুরবে” – তখন কীভাবে চলতে হবে ?
উত্তর: পাখি দেখার জন্য যখন মাঠে বা বাগানে ঘুরতে হবে, তখন খুব সাবধানে পা টিপে টিপে চলা উচিত। পায়ে বেশি শব্দ হলে পাখি উড়ে যাবে। এ ছাড়া জামাকাপড়ের রং যদি শুকনো পাতার রং অথবা জলপাই রঙের হয়, তাহলে গাছপালার সঙ্গে মিশে থাকা যাবে। তাছাড়া পাখিরা যেহেতু বেগুনি রং দেখতে পায় না, তাই বেগুনি রঙের জামাও পরা যেতে পারে।
১০. “তাদের কথা বলতে পার ?”— এই প্রশ্নের সূত্র ধরে বক্তা-শ্রোতার কথোপকথনের অংশটুকু নিজের ভাষায় লেখো
উত্তর: এই প্রশ্নটি করেছেন আকন্দবাড়ি স্কুলের প্রকৃতিবিজ্ঞানের শিক্ষক বিভীষণ মাস্টারমশাই তাঁর ছাত্র শংকরকে। এখানে 'তাদের' বলতে পাখিদের কথা বোঝানো হয়েছে |
এখানে বিভীষণ মাস্টারমশাই শংকরকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন যে, সে তো সারাদিন গাছে গাছে ঘুরে বেড়ায়, বেশ কিছু পাখিও দেখে। তাদের কথা কি সে বলতে পারবে? এই কথা শুনে শংকর খুব খুশি হয়েছিল। সে মাছরাঙা, পানকৌড়ি, হাঁড়িচাচা, ডৌখোল, তিতির প্রভৃতি পাখির নাম বলেছিল। তাতে মাস্টারমশাই তার প্রশংসা করে বলেন যে, সে যেন এই প্রকৃতিকে খোলা চোখে ভালো করে দেখে নেয় ।
No comments:
Post a Comment