অধ্যায় ফাঁকি প্রশ্ন উত্তর পড়তে নিচের লিংকে ক্লিক করো
◼️কবি পরিচিতি;
অমিয় চক্রবর্তী ১৯০১ সালের ১০ এপ্রিল হুগলি জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর কয়েকটি কাব্যগ্রন্থ হল— খসড়া, পারাপার, পালাবদল, পুষ্পিত ইমেজ ইত্যাদি। তাঁর লেখা কয়েকটি গদ্যের বই—চলো যাই, সাম্প্রতিক, পুরবাসী ইত্যাদি। অমিয় চক্রবর্তী ১৯৬৩ সালে সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৮৫ সালে তাঁর মৃত্যু হয় ।
◼️নাম করণ;
আলোচ্য কবিতায় কবি পিঁপড়েদের স্বভাব, তাদের চলেফিরে বেড়ানো, অনুভূতির কথা তুলে ধরেছেন। পিঁপড়েরা আকার-আকৃতিতে ভীষণ ছোটো হয়। দ্রুত গতিতে তারা সারিবদ্ধভাবে এগিয়ে চলে। তাদের তাড়াহুড়ো করে চলাফেরা করা কবির চোখে ‘ব্যস্ত মধুর চলা' | আলোর আভা আর ধুলোর রেণু গায়ে মেখে তারা যেন পৃথিবীকে ভরিয়ে রাখে | কবি তাই তাদের দূরে সরিয়ে রাখতে চান না, কাউকে দুঃখ দিতে চান না ।
ছোটো ছোটো পিঁপড়েরা অজানা দেশে যেন কবিকে যেতে আহবান করে | মাটির বুকে পিঁপড়েরা তাদের শোভা দিয়েই যেন সকলকে আদর দিয়ে ঘিরে থাকে। কবিতার অন্যতম চরিত্র পিঁপড়ের নাম অনুসারে তাই কবিতাটির এই নামকরণ সার্থক।
◼️সারমর্ম;
আধুনিক যুগের মানুষেরা ব্যস্ত | ক্ষুদ্র কীট পিঁপড়েরাও ব্যস্ত । কিন্তু এই দুই ব্যস্ততার মধ্যে ফারাক অনেক। আমাদের চলাফেরা, কাজ করার মধ্যে যান্ত্রিকতা রয়েছে, পিঁপড়েদের ক্ষেত্রে আছে এক ধরনের মাধুর্য । কবির চোখে তাদের দল বেঁধে চলার মধ্যে ব্যস্ততা থাকলেও তা মধুর। তাই তিনি আঁটোসাটো জীবন থেকে মুক্তি পেতে ক্ষুদ্র পিঁপড়েদের দিকে চোখ ফিরিয়েছেন ।
কবি চান না তাদের বিরক্ত করতে, ব্যথা দিতে। তিনি শুধু চেয়ে চেয়ে দেখেন কীভাবে তারা পথে পা বাড়ায়, কীভাবে মাটির অতলে নিজের বাসায় হঠাৎ অদৃশ্য হয়ে যায়। কবি আধুনিক যান্ত্রিক পৃথিবীর বাসিন্দা হিসেবে এভাবেই যেন মুক্তির স্বাদ খুঁজে নিতে চান ।
◼️নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর দাও:
১. কবির চোখে পিঁপড়ের চলা কেমন?
উত্তর: কবির চোখে পিঁপড়ের চলা ব্যস্ত মধুর।
২. পিঁপড়ে কী দিয়ে ভুবন ভরিয়ে রাখবে?
উত্তর: পিঁপড়ে আলোয় গন্ধে এই ভুবন অর্থাৎ পৃথিবী ভরিয়ে রাখবে।
৩. ‘পিঁপড়ে' কবিতার কবির নাম লেখো ।
উত্তর: ‘পিঁপড়ে কবিতার কবি অমিয় চক্রবর্তী।
৪. কীসের রেণুর কথা কবিতায় বলা হয়েছে?
উত্তর: কবিতায় ধুলোর রেণুর উল্লেখ রয়েছে।
৫. কবির কীসে ভয় ?
উত্তর: পিঁপড়েদের সরিয়ে দিতে কবি ভয় পান |
৬. ভোরবেলা পিঁপড়েরা কোথায় চলে ?
উত্তর: ভোরবেলা পিঁপড়ের দল গাছের তলা দিয়ে নীচের গর্তে হেঁটে চলে।
৭. কোথা থেকে পিঁপড়ের ডাক কবি শুনতে পান ?
উত্তর: কবি সুদূর অতল থেকে পিঁপড়েদের ডাক শুনতে পান ।
৮. পৃথিবীর বাসকে ক-দিনের ঘরের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে?
উত্তর: পৃথিবীতে বসবাসকে কবি দু-দিনের ঘরের সঙ্গে তুলনা করেছেন।
◼️নীচের প্রশ্নগুলির নিজের ভাষায় উত্তর লেখো।
১. “আহা পিঁপড়ে ছোটো পিঁপড়ে ঘুরুক দেখুক থাকুক”—কবি ‘আহা' শব্দটি ব্যবহার করেছেন কেন?
উত্তর: পিঁপড়েরা স্বল্পতম আঘাতেই আহত বা নিহত হয়। কবি এই দুর্বল প্রাণের মধ্যেও জীবনের স্পন্দন খুঁজে পেয়েছেন। তাদের ব্যস্ত গতি কবির চোখে মধুর। পিঁপড়ের প্রতি তিনি এক ধরনের মায়া ও মমতাবোধ অনুভব করেছেন। তাই কবিতার বিভিন্ন পঙ্ক্তিতে তিনি ‘আহা’ শব্দটি ব্যবহার করেছেন।
২. “স্তব্ধ শুধু চলায় কথা বলা—”—তাৎপর্য ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: বাইরে থেকে পিঁপড়েদের দেখে নির্বাক মনে হয়। স্বাভাবিকভাবেই আমাদের মনে প্রশ্ন জাগে যে, তারা ঠিক কীভাবে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রক্ষা করে? কবির মতে, পিঁপড়ের চলার গতির মধ্যে এক ধরনের ছন্দ রয়েছে। প্রত্যেকের হাঁটার ধরন বিভিন্ন | এর মাধ্যমেই তারা নিজেদের মধ্যে ভাবের আদান-প্রদান করে, একে অন্যের অগ্রবর্তী হয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ বুঝে নিতে পারে।
৩. কবির কী দেখে 'কেমন যেন চেনা লাগে' মনে হয়েছে?
উত্তর: পিঁপড়ের দলের সারিবদ্ধভাবে চলা দেখে কবির 'কেমন যেন চেনা লাগে'।
৪. “কেমন যেন চেনা লাগে”—কথাটির অর্থ বুঝিয়ে দাও।
উত্তর: পিঁপড়ের চলার মধ্যে এক ধরনের ছন্দ রয়েছে। তার ব্যস্তসমস্তভাবে হেঁটে যাওয়ার ভঙ্গিটি কবিকে পরিচিত কোনো একজনের হাঁটবার ছন্দের কথা মনে করিয়ে দিয়েছে, অথচ তিনি বুঝে উঠতে পারছেন না সেই পরিচিত। মানুষটি আসলে কে। তাই কবি উদ্ধৃত মন্তব্যটি করেছেন।
৫. কবি কাউকে দুঃখ দিতে চাননি কেন?
উত্তর: কবি পিঁপড়েদের সংবেদনশীলতার সঙ্গে লক্ষ করেছেন। তাদের মধ্যে তিনি নরম জীবনের স্পর্শ খুঁজে পেয়েছেন | আর এই কারণেই তিনি তাদের কাউকেই দুঃখ দিতে চাননি ।
৬. “সেই অতলে ডাকুক”- কে কাকে এই ডাক দেয় ?
উত্তর: পিঁপড়ে কবিকে এই ডাক দেয় |
৭. কবি আজ প্রাণের কোন্ পরিচয় পেয়েছেন ?
উত্তর: কবি আজ গতিময় প্রাণের পরিচয় পেয়েছেন।
৮. ‘দু-দিনের ঘর' বলতে কী বোঝ ?
উত্তর: ‘ঘর' বলতে পৃথিবীতে বসবাস করাকে বোঝানো হয়েছে। এখানে আমরা চিরতরে বেঁচে থাকি না। একদিন- না-একদিন পৃথিবী ছেড়ে সকলকেই চলে যেতে হয়। খুব অল্প সময়ের জন্যই আমাদের বেঁচে থাকা। এই সত্যটি বোঝাতেই কবি ‘দু-দিনের ঘর' কথাটি ব্যবহার করেছেন ।
◼️নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর নিজের ভাষায় লেখো।
১. পিঁপড়ের ভাষাহীন চলাচলের মধ্যে বিনিময়ের ভঙ্গিটি কেমন?
উত্তর: পিঁপড়েদের হাঁটাচলায় ব্যস্ততার ভাব ফুটে ওঠে। তারা নিজেরা নির্বাকভাবে চলে, কিন্তু তাদের ছন্দোময় হাঁটায় কথা ফুটে ওঠে। আর এভাবেই সারি সারি পিঁপড়ে নিজেদের মধ্যে কথাবার্তা সেরে নেয়। এটাই তাদের ভাববিনিময়ের কৌশল বা পদ্ধতি।
২. “মাটির বুকে যারাই আছি এই দু-দিনের ঘরে”— ‘এই দু-দিনের ঘরে' বলতে কী বোঝ? কে সবাইকে কীভাবে ‘এই দু-দিনের ঘরে আদরে ঘিরে রাখে ?
উত্তর: • ‘দু-দিনের ঘর' বলতে এই পৃথিবীতে আমাদের বসবাসকে বোঝানো হয়েছে।
পিঁপড়েদের গতিবিধি, তাদের চলার ভঙ্গির মধ্যে কবি খুঁজে পেয়েছেন পেলব প্রাণের স্পন্দন | আলো আর ধুলোর স্পর্শ গায়ে মেখে তারা ‘ভুবন’-কে ভরিয়ে রাখে। তাদের চলা মধুর। তাতে ফুটে ওঠে কথা। আর একসময় মাটির গভীরে, কোন্ এক অতল প্রদেশে তারা চলে যায়। মোট কথা, এই ধরিত্রীর সঙ্গে পিঁপড়েদের অচ্ছেদ্য, নিবিড় .যোগ | আর এই সম্পর্কের কারণেই পিঁপড়ে যেন সকলকে আদর দিয়ে ঘিরে রাখে।
৩. এই কবিতায় কবির কীরূপ মনোভাব প্রকাশ পেয়েছে তা বুঝিয়ে দাও ।
উত্তর: আলোচ্য ‘পিঁপড়ে' কবিতায় কবি অমিয় চক্রবর্তীর সংবেদনশীল মানসিকতা প্রকাশ পেয়েছে। পিঁপড়েদের প্রাণশক্তি ক্ষীণ। কবি সেটা জেনেই বলেছেন— 'আহা পিঁপড়ে ছোটো পিঁপড়ে ঘুরুক দেখুক থাকুক...।' তিনি তাদের দূরে সরিয়ে দিতে চান না, চান না কাউকে দুঃখ দিতে | কবি শুধু চুপচাপ তাদের চলার ভঙ্গিমা দেখে যেতে চান। পিঁপড়েরা এতটাই ছোটো যে তাদের গতিবিধি সহজে আমাদের নজরে আসে না । কবি তাই নিপুণভাবে পিঁপড়ের চলার ভঙ্গি লক্ষ করেছেন। এমনকি তাদের সূক্ষ্ম অনুভূতিটুকুও নিজে উপলব্ধি করতে চেয়েছেন।
No comments:
Post a Comment