ঝুমুর অধ্যায়ের প্রশ্ন উত্তর পড়তে নিচের লিঙ্ক এ ক্লিক করো
◼️কবি পরিচিতি;
১৮৮৭ খ্রিস্টাব্দে নদিয়া জেলার শান্তিপুরের হরিপুর গ্রামে কবি যতীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তের জন্ম। তিনি 'দুঃখবাদী কবি' হিসেবে পরিচিত। তাঁর রচিত কাব্যগ্রন্থের মধ্যে উল্লেখযোগ্য—মরীচিকা, মরুশিখা, মরুমায়া, সায়ম, ত্রিযামা, নিশান্তিকা। এ ছাড়াও অনুপূর্বা, কাব্যপরিমিতি প্রভৃতি গ্রন্থ তিনি রচনা করেন। ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দে তাঁর মৃত্যু হয়।
◼️নাম করণ;
সকাল থেকে শুরু করে দুপুর পেরিয়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত হাটটিতে যে বিচিত্র ছবি বদলে বদলে যায়, সেই ছবিই ধরা পড়েছে কবিতাটিতে। সারাদিনের কোলাহল কীভাবে হাটকে মুখরিত করে রাখে, আবার সন্ধ্যাবেলায় অনাদরে পড়ে থাকা হাটের ছবি কেমন হয়ে দাঁড়ায়—এ সবই বলেছেন কবি । উপরন্তু হাটে বেচাকেনা সেরে চলে যাওয়ার সঙ্গে কবি মানুষের জীবনের তুলনা টেনে একটি মহৎ দার্শনিক সত্যকে চিহ্নিত করেছেন। তাই সব মিলিয়ে, এই কবিতার নামকরণ হিসেবে 'হাট' নামটি যথাযথ।
◼️সারমর্ম;
দূরে দূরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা দশ-বারোটি গ্রামের মধ্যে একটিই হাট রয়েছে। সেখানে সন্ধ্যায় কেউ প্রদীপও জ্বালে না, সকালে কেউ ঝাঁট দিয়ে পরিষ্কার করে না। সারাদিনের কেনাবেচা শেষ করে বিকেলে সব ব্যাপারীরা ঘরে ফিরে যায় | ক্লান্ত কাকের ডানা, নদীর হাওয়া, বাঁশবাগানের ফাঁক দিয়ে বয়ে যাওয়া বাতাসের শব্দ অন্ধকার রাতের নীরবতাকে আরও প্রকট করে তোলে। অথচ এই হাটই দিনের বেলায় সরগরম হয়ে থাকে। কত যে ক্রেতা ও বিক্রেতা নিত্য হাটে যাতায়াত করে, তার হিসেব নেই। ঠিক এমনই মানুষের জীবন।
এই প্রকৃতির হাটে মানুষও যেন হাটুরের মতোই নিত্য নতুন আসে, যায়, লাভ অথবা ক্ষতির হিসাব করে। কেউ পেয়ে হাসে, কেউ বা হারিয়ে কাঁদে। কিন্তু প্রকৃতি তার জায়গাতেই চির অপরিবর্তনীয় রূপ ধরে দাঁড়িয়ে থাকে।
◼️ নীচের প্রশ্নগুলির একটি বাক্যে উত্তর দাও;
১. কতগুলি গ্রামের পরে সাধারণত একটি হাট চোখে পড়ে ?
উত্তর: দশ-বারোটি গ্রামের পরে সাধারণত একটি হাট চোখে পড়ে।
২. হাটে সন্ধ্যাপ্রদীপ জ্বলে না কেন ?
উত্তর: হাটে কোনো লোকবসতি না থাকায় সন্ধ্যায় কারও আলোর প্রয়োজন পড়ে না । তাই হাটে সন্ধ্যাপ্রদীপ জ্বলে না।
৩. কার ডাকে রাত্রি নেমে আসে?
উত্তর: একা, দলছুট কাকের ডাকে রাত্রি নেমে আসে।
৪. ওপারের লোক কেন এ পারেতে আসে?
উত্তর: ওপারের লোক পসরা নিয়ে কেনাবেচা করতে এপারে আসে।
৫. “হিসাব নাহিরে-এল আর গেল/কত ক্রেতা বিক্রেতা।”—কোনো হিসাব নেই কেন ?
উত্তর: প্রতিদিন হাটে বেচাকেনা করার জন্য অগুনতি লোকের আবির্ভাব হওয়ায় তাদের সকলের হিসাব রাখা সম্ভব হয় না।
৬. “কারো তরে তার নাই আহ্বান”—এখানে কার কথা বলা হয়েছে ?
উত্তর: এখানে হাটের দোচালার কথা বলা হয়েছে।
৭. ‘ঘরে ফিরিবার বেলা' হাটে কে কী করে ?
উত্তর: ‘ঘরে ফিরিবার বেলা' হাটে কেউ ক্ষতির জন্য কাদে, কেউবা গাঁটে কড়ি বেঁধে খুশি হয়।
৮. ‘হাট' কবিতায় কোন্ কোন্ পাখির কথা রয়েছে?
উত্তর: ‘হাট' কবিতায় বক ও কাকের কথা রয়েছে।
৯.‘হাট' কবিতায় কোন্ কোন্ গাছের কথা আছে ?
উত্তর: ‘হাট’ কবিতায় পাকুড় ও বাঁশ গাছের কথা রয়েছে।
১০. হাটে কারা আসে?
উত্তর: হাটে ক্রেতা, বিক্রেতারা আসে ।
১১.হাটে বেচা-কেনা সেরে সবাই কখন ঘরে ফিরে যায়?
উত্তর: হাটে বেচা-কেনা সেরে সবাই বিকেলবেলা ঘরে ফিরে যায়।
১২. হাটে সন্ধেবেলায় কী জ্বলে না?
উত্তর: হাটে সন্ধেবেলা কোনো প্রদীপ জ্বলে না।
১৩. দিনেরবেলায় হাটে কী হতে দেখা যায় ?
উত্তর: দিনেরবেলা হাটে চেনা-অচেনা লোকের ভিড় আর কোলাহল হতে দেখা যায়।
◼️ নীচের সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যাভিত্তিক প্রশ্নগুলির উত্তর দাও:
১. “দিবসে থাকে না কথার অন্ত / চেনা-অচেনার ভিড়ে”—দিনের বেলায় হাটের ছবিটি কেমন হয় ?
উত্তর: কল্লোল গোষ্ঠীর জনপ্রিয় কবিদের মধ্যে অন্যতম কবি যতীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তের লেখা ‘হাট’ কবিতা থেকে উদ্ধৃতাংশটি নেওয়া হয়েছে। দিনের বেলায় প্রচুর লোক হাটে আনাগোনা করে। তারা কেউ চেনা, কেউ-বা অচেনা। প্রচুর লোকের ভিড়ে হাট সরগরম হয়ে ওঠে। কেউ পসরা সাজিয়ে জিনিস বেচতে আসে, কেউ আবার সেই জিনিস কিনতে আসে। সেই জিনিস নিয়ে কেউ পরখ করে দেখে, দরাদরি করে কেনাকাটা করে। সেই হাঁকাহাঁকি, পসরা নিয়ে টানাটানিতে সব মিলিয়ে দিনের বেলায় হাট একেবারে জমজমাট হয়ে থাকে।
২. . “...সহিয়া নীরব ব্যথা” – কেন বলা হয়েছে ?
উত্তর: কবি যতীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তের লেখা 'হাট' কবিতা থেকে উদ্ধৃতাংশটি নেওয়া হয়েছে । সকাল থেকে শুরু করে দুপুর পেরিয়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত হাটটিতে যে বিচিত্র ছবি বদলে বদলে যায়, সেই ছবিই ধরা পড়েছে কবিতাটিতে। সকালবেলা হাটে বিক্রির উদ্দেশ্যে নিয়ে আসা ফলগুলি সারাদিন শতহাতে যাচাইয়ের ছলনা সহ্য করে বিকালবেলা অবহেলার সঙ্গে সামান্য মূল্যে বিক্রি হয়ে যায়। প্রাপ্য মর্যাদা থেকে বঞ্চিত হওয়ার ক্ষোভকেই এখানে ‘নীরব ব্যথা’ বলা হয়েছে।
৩. হাটের স্থান ছাড়িয়ে দূরের গ্রামের ছবি কীভাবে কবিতায় ফুটে উঠেছে?
উত্তর: সন্ধ্যায় যখন হাট খালি হয়ে যায়, তখন সেখানে কারও আলো জ্বালানোর প্রয়োজন পড়ে না। তাই হাট অন্ধকারে ডুবে থাকে । কিন্তু হাটের চারপাশে যে দূরে দূরে ছড়ানো-ছিটানো দশ-বারোটি গ্রাম রয়েছে, সেই গ্রামগুলিতে প্রদীপ জ্বলে ওঠে।
৪. প্রকৃতির ছবি কীরূপ অসীম মমতায় কবিতায় আঁকা হয়েছে—তা আলোচনা করো।
উত্তর: ‘হাট” কবিতাটিতে কবি যতীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত পরম মমতায় প্রকৃতির ছবিটি ফুটিয়ে তুলেছেন। তাঁর কল্পনায় করে নেমে এসেছে, অস্তে গেছে সূর্য। চারপাশের লোকালয়ে জ্বলে উঠেছে বাতি, কিন্তু হাটটি অন্ধকারে একা পড়ে আছে। রাত্রি ক্রমশ গাঢ় হয়ে এসেছে | দলছুট কোনো কাকের ক্লান্ত ডাক শোনা যাচ্ছে। নিস্তব্ধ হাটের পাশ দিয়ে বয়ে চলা নদীর ধারে বাতাসের শব্দও পরিষ্কার শোনা যাচ্ছে। হাটের দোচালা যেন নীরব হয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে। বাঁশবাগানের ফাঁকে ফাঁকে বাঁশির মতো শব্দে হাওয়া বয়ে চলেছে।
৫. “বাজে বায়ু আসি বিদ্রুপ-বাঁশি”—কবির এমন মনে হওয়ার কারণ কী বলে তোমার মনে হয়?
উত্তর: নির্জন হাটের নিস্তব্ধতাকে ভঙ্গ করার মতো একটি মানুষও রাত্রে উপস্থিত নেই। হাট যেন অন্ধকারে একা দাঁড়িয়ে রয়েছে । তার এই একাকীত্বের পাশে বাঁশবাগানের ভিতর দিয়ে বয়ে চলা হাওয়ার শব্দ যেন আরও বেমানান | তাই কবি কল্পনা করেছেন বায়ু যেন হাটের এই নিস্তব্ধতা ভঙ্গ করে তাকে বিদ্রুপ করছে।
৬. “উদার আকাশে মুক্ত বাতাসে চিরকাল একই খেলা।”—কোন্ প্রসঙ্গে কবি আলোচ্য পক্তিটি লিখেছেন? তিনি এখানে কোন্ 'খেলা'র কথা বলেছেন ? ‘চিরকাল' চলে বলতে কবি কী বোঝাতে চেয়েছেন ?
উত্তর : • জীবন ও মৃত্যু সম্পর্কিত একটি শাশ্বত সত্য বোঝাতে আলোচ্য প্রসঙ্গটির অবতারণা করা হয়েছে।
• তিনি এখানে ‘খেলা” বলতে বুঝিয়েছেন, জীবনের রঙ্গমঞ্চেও হাটুরেদের মতোই নিত্যনতুন যাত্রীর আনাগোনা চলে। অবাধে তারা যাতায়াত করে। ফেরার পথে কেউ লাভ করে আনন্দিত হয়, আবার কেউ বা ক্ষতির পরিমাণ হিসাব করে কাঁদে ।
• ‘চিরকাল' চলে বলতে কবি বুঝিয়েছেন, মানুষের মৃত্যু হয়, কিন্তু জীবনের ধারা এক প্রজন্ম থেকে অন্য প্রজন্মে অব্যাহত থাকে। তাই যাওয়া-আসার এই খেলাও আজীবন চলতেই থাকে।
No comments:
Post a Comment