মাটির ঘরে দেয়ালচিত্র প্রশ্ন উত্তর ষষ্ঠ শ্রেণী || ষষ্ঠ শ্রেণীর বাংলা প্রশ্ন উত্তর মাটির ঘরে দেয়ালচিত্র, সহায়িকা | Class 6th Bangla Question And Answer - Psycho Principal

Fresh Topics

Thursday, 2 January 2025

মাটির ঘরে দেয়ালচিত্র প্রশ্ন উত্তর ষষ্ঠ শ্রেণী || ষষ্ঠ শ্রেণীর বাংলা প্রশ্ন উত্তর মাটির ঘরে দেয়ালচিত্র, সহায়িকা | Class 6th Bangla Question And Answer

  

মাটির ঘরে দেয়ালচিত্র
প্রশ্ন উত্তর






অধ্যায় পিপড়ে প্রশ্ন উত্তর পড়তে নিচের লিংকে ক্লিক করো

👉 ( পিঁপড়ে প্রশ্ন উত্তর )



◼️লেখক পরিচিতি;

শিল্পী তপন করের জন্ম ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দে | বর্তমানে তিনি একটি সরকারি বিদ্যালয়ের শিল্পশিক্ষক | শিল্পকলা বিষয়ে তাঁর একাধিক রচনা প্রকাশিত হয়েছে, যেমন—'অসামান্য মানভূম’, ‘ছবি আঁকতে শেখা' ইত্যাদি। পাঠ্য অংশটি তাঁর লেখা ‘মাটির ঘরে দেয়ালচিত্র' নামক প্রবন্ধ থেকে সংকলিত।


◼️নামকরণ;

এই পাঠ্যাংশটিতে লেখক একটি প্রাচীন লোকশিল্পের ধারা নিয়ে আলোচনা করেছেন। মাটির ঘরের দেয়ালে মেয়েরা যেসব চিত্রবিচিত্র নকশা এঁকে থাকেন, তা-ই হয়ে উঠেছে তাঁর আলোচনার বিষয় | কোন্ কোন্ উপজাতিদের মধ্যে এই শিল্পচর্চার প্রচলন রয়েছে, কোন্ উৎসব উপলক্ষ্যে এই দেয়ালচিত্র অঙ্কন করা হয়, দেয়ালচিত্র আঁকার পদ্ধতিটি কী—সবই সবিস্তারে বর্ণনা করেছেন তিনি। তাঁর আলোচনায় সবচেয়ে বেশি পরিমাণে উঠে এসেছে দেয়ালচিত্রের নকশার বিভিন্ন ধরন। তাঁর আলোচনার বিষয়বস্তুকে মনে রেখে তাই বলা যায় যে, এই রচনাংশের নামকরণ ‘মাটির ঘরে দেয়ালচিত্র' সার্থক হয়েছে।


◼️সা র ম র্ম;

সাধারণত গ্রামের মেয়েরাই নিজের পছন্দসই বিষয়বস্তু নিয়ে নিজেদের রোজকার ব্যস্ততার মধ্যে থেকে সময় বের করে দেয়ালচিত্র এঁকে থাকেন। পুরুলিয়া ও তার সংলগ্ন জেলাগুলিতে বসবাসকারী আদিবাসী জনজাতিদের মধ্যে সাঁওতাল, ভূমিজ ও খেড়িয়ারাই এই কাজে অগ্রসর | মাটির দেয়ালে এই অস্থায়ী আলপনাগুলি দুর্গাপূজা ও দীপাবলি উপলক্ষ্যে সাধারণত দেওয়া হয়। এর মূল উদ্দেশ্য গৃহের অলংকরণ।

সাঁওতালি দেয়ালচিত্রে সাধারণত নানা রঙের রেখা, ত্রিভুজ, চতুষ্কোণ প্রভৃতি জ্যামিতিক নকশা থাকে ।

এ ছাড়া ভূমিজ, কুর্মি বা অন্যান্য গোষ্ঠীর মানুষের আঁকায় পদ্ম, মোরগঝুঁটি, সূর্য, ইস্কাবন, হরতন, সাধারণ লতাপাতা, পাখি, ময়ূর, কদমঝাড়, শালুকলতা ইত্যাদি মোটিফ ব্যবহৃত হয় |

সাধারণত উন্মুক্ত জায়গা, যেমন—ঘরের দেয়াল, পাঁচিল—এইসব জায়গাকে বেছে নেওয়া হয় নকশার জন্য ।



◼️নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর নিজের ভাষায় লেখো।


১. তোমার জানা কোন অঞ্চলের লোকসমাজে দেয়ালে ছবি আঁকার চল আছে ?

 উত্তর: পুরুলিয়ার মানবাজারের কাছে কুমারী গ্রামের লোকসমাজে দেয়ালে ছবি আঁকার চল আছে।


২. মানভূম জেলা সংলগ্ন আর কোন্ কোন্ জেলায় দেয়ালচিত্রণ হয়ে থাকে ?

উত্তর: মানভূম জেলা সংলগ্ন মেদিনীপুর, বাঁকুড়া, বর্ধমান জেলার পশ্চিম অংশ ও বীরভূম জেলায় প্রচুর দেয়ালচিত্রণ হয়ে থাকে।


৩. মানভূম জেলায় কোন্ কোন্ আদিবাসী গোষ্ঠীর বাস ? 

উত্তর: মানভূম জেলায় সাঁওতাল, হো, অসুর, ভূমিজ, মুন্ডা, ওঁরাও, খেড়িয়া, শবর, কোল, বীরহড় প্রভৃতি আদিবাসী গোষ্ঠীর বাস।


৪. মাটির দেয়ালচিত্রগুলি সাধারণত কোন্ কোন্ উৎসবে আঁকা হয় ?

উত্তর: মাটির দেয়ালচিত্রগুলি সাধারণত দুর্গাপূজা ও কার্তিকের অমাবস্যা বা দীপাবলি — এই দুই উৎসবে আঁকা হয়।


৫. দেয়ালচিত্র করার জন্য কী কী উপাদান ব্যবহৃত হয়? 

উত্তর: দেয়ালচিত্রের মূল উপাদান হল মাটি । রঙিন করার জন্য এর ওপরে গিরিমাটি দিয়েও অলংকরণ করা হয়। 


৬. কোন্ তিথিতে কৃষিজীবীরা কীভাবে তাদের গৃহসজ্জা করে লেখো ।

উত্তর: কালীপূজা অর্থাৎ কার্তিকের অমাবস্যায় রাঢ়বঙ্গের কৃষিজীবী সমাজের প্রাচীন উৎসব গোবন্দনা, অলক্ষ্মী বিদায়, কাড়াখুঁটা, গোরুখুটা প্রভৃতি পালিত হয়। সমগ্র ঘরবাড়ি মেরামত, লেপামোছা করার পর গৃহাঙ্গনের প্রবেশদ্বার থেকে উঠোন, গোয়াল, ধানের গোলা বা মরাই এবং মূল বাসগৃহ, সর্বত্র আলপনা দিয়ে সাজানো হয় ।


৭. কোন্ কোন্ জাতির দেয়ালচিত্রের সাধারণ লক্ষণ পদ্ম ? 

উত্তর: সাঁওতাল ব্যতীত অন্যদের মধ্যে ভূমিজ, কুর্মি বা অন্যান্য গোষ্ঠীর মানুষেরা যে চিত্রণ করে থাকেন তার সাধারণ লক্ষণ হল পদ্ম ।


৮. দুধেমাটির ওপর কীভাবে চিত্রণ করা হয় ?

উত্তর: মসৃণভাবে নিকোনো দেয়ালে অপেক্ষাকৃত হালকা রঙের বেলেমাটি বা দুধেমাটির গোলা দিয়ে ন্যাতা দেওয়া হয়। এরপর মাটির প্রলেপটি ভিজে থাকতে থাকতেই এর ওপরে হাতের আঙুলের ডগা দিয়ে দাগ টেনে ছবি আঁকা হয়।


৯. মোরগঝুঁটির চালচিত্রে আর কী কী নকশা থাকে? 

উত্তর: মোরগঝুঁটির চালচিত্রের ধার বরাবর থাকে সারিবদ্ধ উদীয়মান সূর্যের নকশা। সূর্যগুলির ফাঁকে ফাঁকে উঠে আসে একটি করে আধফোটা পদ্ম | এর বাইরে পড়ে থাকা শূন্যস্থানে নানা রকমের ছোটো ছোটো মোটিফ, যেমন— পদ্ম, ইস্কাবন, সাধারণ লতাপাতা, পাখি, ময়ূর ইত্যাদিও আঁকা থাকে।


১০. কার্তিকের অমাবস্যায় রাঢ়বঙ্গের কৃষিজীবীরা কোন্ কোন্ প্রাচীন উৎসব পালন করে?

উত্তর: কার্তিকের অমাবস্যায় রাঢ়বঙ্গের কৃষিজীবীরা তাদের প্রাচীন উৎসব গোবন্দনা, অলক্ষ্মী বিদায়, কাড়াখুঁটা, গোরুখুঁটা প্রভৃতি উৎসব পালন করে।


১১. সাঁওতালি দেয়ালচিত্রে কী কী রং ব্যবহার করা হয়? 

উত্তর: সাঁওতালি দেয়ালচিত্রে কালো, গেরুয়া, সাদা, আকাশি, গেরুয়া বা হলদে রং ব্যবহার করা হয় ।


১২. পুরুলিয়াকে চলতি ভাষায় কী নামে ডাকা হয় ? 

উত্তর: পুরুলিয়াকে চলতি ভাষায় ‘পুরুল্যা’ নামে ডাকা হয় |


১৩. কোথায় মাটি সুলভ ?

উত্তর: পশ্চিমবঙ্গের প্রায় সর্বত্রই মাটি সুলভ।


১৪. ‘গোহাল’ কথাটির প্রচলিত রূপ কী?

উত্তর: ‘গোহাল’ কথাটির প্রচলিত রূপ হল গোয়াল |


১৫. পশ্চিমবঙ্গের মানুষ গৃহনির্মাণের প্রধান উপকরণ হিসেবে কী বেছে নিয়েছে?

উত্তর: পশ্চিমবঙ্গের মানুষ গৃহনির্মাণের প্রধান উপকরণ হিসেবে মাটি বেছে নিয়েছে।


১৬. বাংলার কৃষিজীবী সমাজের সর্বত্র কী দেখা যায় ?

উত্তর: বাংলার কৃষিজীবী সমাজের সর্বত্র লালচে গিরিমাটি বা গেরুয়া রঙের মাটিতে গিরিফল চুবিয়ে বাড়ির দরজার মাথায় ও দুইপাশে ছাপ দেওয়ার রীতি দেখা যায় |


১৭. ‘মুরগা ঝাড়’-এ সূর্যের ফাঁকে কী থাকে? 

উত্তর: ‘মুরগা ঝাড়’-এ সূর্যের ফাঁকে আধফোটা পদ্ম থাকে।


◼️ নীচের সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যাভিত্তিক প্রশ্নগুলির উত্তর দাও: 

১. সাঁওতালি দেয়ালচিত্রে কীভাবে জ্যামিতিক আকার- আশ্রিত বর্ণের সমাবেশ ঘটানো হয়?

উত্তর: সাঁওতালি দেয়ালচিত্রে চওড়া রঙিন ফিতের মতো সমান্তরাল রেখা, চতুষ্কোণ, ত্রিভুজ সবই থাকে। চতুষ্কোণের ভিতরে চতুষ্কোণ অথবা ত্রিভুজের ভিতের ত্রিভুজ বসিয়ে সাধারণত নকশা করা হয়। ঘরের চারপাশে ঘিরে থাকা মূল বেদিটিকে কালো রং করে তার সমান্তরালে বিঘতখানেক চওড়া একটি গেরুয়া রেখা টানা হয় । আবার তার ওপরে সমান ছাড় দিয়ে আর একটি সমান্তরাল কালো রেখা টানা হয় । এর ওপরে সাদা, আকাশি, গেরুয়া বা হলদে রঙের রেখা দিয়ে চতুষ্কোণ বা ত্রিভুজ পাশাপাশি বসিয়ে দেয়াল ভরিয়ে তোলা হয় । সাধারণত এভাবে মাটি থেকে ছ- ফুট পর্যন্ত উচ্চতায় চিত্রণটি বিস্তৃত হয় |


২. মানভূমি দেয়ালচিত্রের প্রতীক পদ্মটি কীভাবে আঁকা হয় ?

উত্তর: মানভূমি দেয়ালচিত্রের প্রতীক পদ্মটি আঁকা হয় নানানভাবে। একটি বৃত্তের পরিধিতে যে-কোনো বিন্দুকে কেন্দ্র করে আর একটি বৃত্ত টানলে পরিধির ওপরে যে ছেদবিন্দু দুটি পাওয়া যায় তার ওপরে আবার কেন্দ্র করে ক্রমাগত বৃত্ত টানতে থাকলে ক্রমে একটি পদ্মের রেখাচিত্র পাওয়া যায় | এই পদ্মের পাপড়িগুলি বিচিত্র বর্ণে ভরে দেওয়া হয়| কখনও দেখা যায়, একটা টব বা কলস থেকে ফুলের গাছটি উঠে আসছে এবং দু-পাশে শাখা ছড়িয়ে শাখার আগায় ফুল ফোটাচ্ছে। সেখানেও প্রস্ফুটিত ফুলটিকে শতদল বলেই বোঝা যায় ।



No comments:

Post a Comment