চিঠি কবিতার প্রশ্ন উত্তর পড়তে নিচের লিংকে ক্লিক করো
◼️লেখক পরিচিতি;
১৮৯৫ খ্রিস্টাব্দের ১ আগস্ট বর্তমান বাংলাদেশের ফরিদপুর জেলায় গোপালচন্দ্র ভট্টাচার্য জন্মগ্রহণ করেন। তিনি উদ্ভিদ ও প্রাণীবিদ্যার গবেষণা ছাড়াও ছবি আঁকা, ফোটোগ্রাফি, ইলেকট্রিকের কাজ, মোটর মেকানিক্স্, কার্পেন্ট্রি—সমস্তই শিখেছিলেন। মাকড়সা, পিঁপড়ে, প্রজাপতি, শুঁয়োপোকা, মাছ ও ব্যাঙাচি নিয়ে তিনি মৌলিক গবেষণা করেছেন, যা বিদেশেও উচ্চ প্রশংসা পেয়েছে। তাঁর লেখা কয়েকটি বিখ্যাত বইয়ের মধ্যে রয়েছে— বাংলার মাকড়সা, বাংলার কীটপতঙ্গ, বাংলার গাছপালা, বিস্ময়কর জীবজগৎ ইত্যাদি | ১৯৮১ খ্রিস্টাব্দের ৮ এপ্রিল তাঁর মৃত্যু হয়।
◼️নামকরণ;
আলোচ্য প্রবন্ধটিতে লেখক গোপালচন্দ্র ভট্টাচার্য আলোচনা করেছেন কুমোরে-পোকার বাসা বাঁধার কৌশল নিয়ে। একটি বাসা তৈরি করার পিছনে রয়েছে কুমোরে-পোকার প্রচুর পরিশ্রম। দীর্ঘ দিন ধরে নানারকম পরীক্ষানিরীক্ষা করে বাসার জন্য মনোমতো জায়গা খুঁজে ঠিক করে কুমোরে-পোকা | তারপরেও আরও দীর্ঘ সময় ব্যয় হয় তার বাসাটি গড়ে তুলতে | বাসা যদি মাঝপথে ভেঙে যায় অথবা নষ্ট হয়ে যায়, সেক্ষেত্রে আবার নতুন উদ্যমে বাসা বাঁধতে শুরু করে কুমোরে-পোকা। বাসা বাঁধার পরে সেখানে প্রয়োজনীয় খাদ্য সঞ্চয় করে রেখে তারপরে ডিম পেড়ে তবে তার অব্যাহতি। এই রচনাটির মধ্যে দিয়ে কুমোরে- পোকার বাসা বানানোর শুরু থেকে শেষ অবস্থার বর্ণনা রয়েছে | তাই আলোচ্য পাঠ্যাংশটির নাম হিসেবে ‘কুমোরে- পোকার বাসাবাড়ি' নামটি সার্থক।
◼️সারমর্ম;
আমাদের দেশ ভারতে কুমোরে-পোকা দেখতে পাওয়া যায়। এদের গায়ের রং কালো, শরীরের মাঝের অংশটি হলুদ। ডিম পাড়ার সময় হলে এরা কাদামাটি দিয়ে এবড়োখেবড়ো লম্বাটে বাসা বানায়। বাসা বানানোর আগে এরা উপযুক্ত স্থান পছন্দ করে যায় কাদামাটির সন্ধানে। কাদামাটির জন্য সাধারণত আশপাশের চল্লিশ-পঞ্চাশ গজের মধ্যে থাকলেও প্রয়োজন পড়লে দেড়শো দুশো গজ দূর থেকেও এরা কাদামাটি সংগ্রহ করে। কোনো কারণে অর্ধেক তৈরি হওয়া বাসা নষ্ট হয়ে গেলে আবার আগের জায়গায় বাসা তৈরি করতে শুরু করে তারা। কুমোরে- পোকা মাটি সংগ্রহ করার সময়েও পরীক্ষানিরীক্ষা করে দেখে নেয়।
একটানা তীব্র তীক্ষ্ণ গুনগুন শব্দ করতে করতে মাটি খুঁড়ে তোলা থেকে শুরু করে মাটি দিয়ে বাসা তৈরি করা পর্যন্ত প্রক্রিয়াটি শেষ করে কুমোরে-পোকা। তার সেই গুনগুন আওয়াজ শুনেই টের পাওয়া যায় যে, সে বাসা বাঁধার কাজ চলছে। দু-দিন ধরে সোয়া ইঞ্চি লম্বা গাঁথুনি দিয়ে এক-একটি কুঠুরি গড়ে তোলে কুমোরে-পোকা। বাসার ভিতরে লালা মাখিয়ে কুঠুরির দেয়ালে প্রলেপ দিয়ে দেয় ।
তারপরে বেছে বেছে সেই মাকড়সাদের শিকার করে, যারা জাল বোনে না, ঘুরে ঘুরে শিকার ধরে। তাদের ধরে বিষাক্ত হুল ফুটিয়ে অসাড় করে জ্যান্ত অবস্থায় ধরে নিয়ে আসে কুঠুরিতে। তার পেটের এক পাশে ডিম পেড়ে কুঠুরির মুখটা আবার মাটি দিয়ে বন্ধ করে দেয়। একইভাবে গায়ে গায়ে একসঙ্গে চার-পাঁচটি কুঠুরি তৈরি করে কুমোরে-পোকা উড়ে চলে।
◼️নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর দাও;
১. গোপালচন্দ্র ভট্টাচার্য বাংলা ভাষায় কী ধরনের লেখালিখির জন্য স্মরণীয় হয়ে আছেন?
উত্তর: গোপালচন্দ্র ভট্টাচার্য বাংলা ভাষায় প্রকৃতি ও প্রাণীজগৎ নিয়ে লেখালিখির জন্য স্মরণীয় হয়ে আছেন।
২. তাঁর লেখা একটি বইয়ের নাম লেখো।
উত্তর: গোপালচন্দ্র ভট্টাচার্যের লেখা একটি বই— বাংলার কীটপতঙ্গ।
৩.কুমোরে-পোকার চেহারাটি কেমন?
উত্তর: কুমোরে-পোকার দেহটি আগাগোড়া মিশমিশে কালো । কেবল শরীরের মধ্যস্থলের বোঁটার মতো সরু অংশটি হলদে।
৪. কুমোরে-পোকা কী দিয়ে বাসা বানায়? উত্তর: কুমোরে-পোকা কাদামাটি দিয়ে বাসা বানায় ।
৫.কোনো অদৃশ্য স্থানে কুমোরে-পোকা বাসা বাঁধছে—তা কীভাবে বোঝা যায়?
উত্তর: বাসা তৈরির সময় কুমোরে-পোকা মুখে একরকম গুনগুন আওয়াজ করে। ফলে বোঝা যায় যে তারা বাসা বানাচ্ছে।
৬. মাকড়সা দেখলেই কুমোরে-পোকা কী করে ?
উত্তর: মাকড়সা দেখলেই কুমোরে-পোকা ছুটে গিয়ে তার ঘাড় কামড়ে ধরে। কিন্তু তাকে মেরে না ফেলে তার শরীরে হুল ফুটিয়ে একরকম বিষ ঢেলে দেয়। এতে বিধবস্ত ও মৃতপ্রায় মাকড়সা অসাড় হয়ে পড়ে।
◼️ নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর দাও:
১. কুমোরে-পোকা কখন গুনগুন শব্দ করতে থাকে
উত্তর: মাটি খুঁড়ে তোলার সময় থেকে শুরু করে সেই মাটি দিয়ে বাসা বানানো পর্যন্ত কুমোরে-পোকা একটানা তীব্র তীক্ষ্ণ স্বরে গুনগুন করতে থাকে।
২. কুমোরে-পোকা বাচ্চার জন্য বাসায় কী খাদ্য সংগ্রহ করে রাখে?
উত্তর: যেসব মাকড়সা জাল বোনে না, দশ-পনেরোটা সেইরকম মাকড়সা সংগ্রহ করে কুমোরে-পোকা বাচ্চার জন্য খাদ্য হিসেবে জমা করে রাখে।
৩. কুমোরে-পোকার বাসা কোথায় দেখতে পাওয়া যায় ?
উত্তর: কুমোরে-পোকার বাসা দেখতে পাওয়া যায় ঘরের আনাচেকানাচে বা দেয়ালে।
৪. কুমোরে-পোকা কখন বাসা তৈরি করতে বেরোয় ?
উত্তর: কুমোরে-পোকা ডিম পাড়বার সময় হলেই বাসা তৈরির জন্য উপযুক্ত স্থান খুঁজতে বেরোয় ।
৫. কুমোরে-পোকা বাচ্চার জন্য বাসায় কী খাদ্য সংগ্রহ করে রাখে?
উত্তর: যেসব মাকড়সা জাল বোনে না, দশ-পনেরোটা সেইরকম মাকড়সা সংগ্রহ করে কুমোরে-পোকা বাচ্চার জন্য খাদ্য হিসেবে জমা করে রাখে।
◼️ নীচের প্রশ্নগুলির নিজের ভাষায় উত্তর লেখো;
১. কুমোরে-পোকার বাসাবাড়িটি দেখতে কেমন?
উত্তর: কুমোরে-পোকার বাসাবাড়িটি দেখে মনে হয় যেন লম্বাটে ধরনের, এবড়োখেবড়ো একটা মাটির ডেলা ।
২. কুমোরে-পোকা বাসা বানানোর প্রস্তুতি কীভাবে নেয় ?
উত্তর: ডিম পাড়বার সময় হলেই কুমোরে-পোকা বাসা বানানোর জন্য উপযুক্ত জায়গা খুঁজতে বেরোয় । দু-চারদিন ঘোরাফেরা করার পর পছন্দসই জায়গা খুঁজে, তার আশেপাশে ঘুরে প্রথমে পরীক্ষা করে দেখে। তারপর একটু দূরে উড়ে গিয়ে আবার ফিরে আসে ও জায়গাটাকে বারবার দেখে নেয়। দু-তিনবার এইভাবে এদিক-ওদিক করে শেষে কাদামাটির খোঁজে বেরোয়।
৩. কুমোরে-পোকার বাসা বানানোর প্রক্রিয়াটিকে নিজের ভাষায় লেখো ৷
উত্তর: ডিম পাড়ার সময় হলে কুমোরে-পোকা বাসা খুঁজতে বেরোয় এবং নানাভাবে পরীক্ষানিরীক্ষা করে তবে পছন্দসই বাসা ঠিক করে। তারপর বাসার চল্লিশ-পঞ্চাশ গজ থেকে শুরু করে দুশো গজ দূরত্বের মধ্যেকার নালা, জলাশয় ইত্যাদি থেকে কাদামাটি সংগ্রহ করে। কাদামাটি সংগ্রহের পর ডেলা ডেলা মাটি মুখে করে ছোট্ট ছোট্ট মটরদানার মতো গোল আকার দিয়ে তার সেগুলিকে দেয়ালে আধখানা ঢাকার আকারে একের পর এক বসিয়ে দেয়। এইসময় তারা মুখে একপ্রকার গুনগুন আওয়াজ করে।
এইভাবে এক-একটি কুঠুরি সোয়া ইঞ্চি করে গেঁথে তোলা হয়। কুঠুরি তৈরি হলে কুঠুরির দেয়ালে কুমোরে-পোকা তার লালা মাখায় | তারপর মাকড়সা শিকার করে, তাকে হুল ফুটিয়ে অসাড় করে তাকে ধরে বাসায় নিয়ে আসে । মাকড়সাটিকে কুঠুরিতে রেখে তার পেটের একপাশে ডিম পেড়ে রেখে কুঠুরির মুখ বন্ধ করে দিয়ে কুমোরে-পোকা উড়ে যায় |
৪. “এইসব অসুবিধার জন্য অবশ্য বাসা নির্মাণে যথেষ্ট বিলম্ব ঘটে।”—কোন্ অসুবিধাগুলির কথা এ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে?
উত্তর: লেখক খেয়াল করেছেন যে, পুরোপুরি তৈরি হয়ে ওঠার আগেই যদি কুমোরে-পোকার বাসা সরিয়ে দেওয়া হয় বা নষ্ট করে দেওয়া হয়, সেক্ষেত্রে কুমোরে-পোকা আবার কাদামাটি নিয়ে এসে ওই একই বাসা তৈরি করা শুরু করে। এর ফলে বাসা তৈরিতে তাদের অনেকটা সময় নষ্ট হয়ে যায়। এইসব অসুবিধাকেই বাসা নির্মাণের ক্ষেত্রে “অসুবিধা’ বলা হয়েছে ।
৫. কুমোরে-পোকার শিকার ধরার উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করো। শিকারকে সে কীভাবে সংগ্রহ করে ?
উত্তর: • কুমোরে-পোকা শিকার ধরে তার বাচ্চাদের জন্মের পর যে খাবার প্রয়োজন, তা আগে থেকেই সঞ্চয় করে রাখার জন্য ।
• বাসার কুঠুরি তৈরি হয়ে গেলে কুমোরে-পোকা শিকার ধরতে বেরোয়। যেসব মাকড়সা জাল বোনে না, ই ঘুরে ঘুরে শিকার ধরে, কুমোরে-পোকা সেইসব মাকড়সাই ধরে এবং বিষাক্ত হুল ফুটিয়ে তাদের জ্যান্ত অবস্থাতেই অবশ করে দেয় | তারপরে মুখে করে সেই মাকড়সাটিকে বাসায় নিয়ে আসে।
৬. “বাসার আর কোনো খোঁজখবর নেয় না।” —কখন কুমোরে-পোকা তার বাসার আর কোনো খোঁজখবর নেয় না?
উত্তর: বাসা তৈরি করার পর বাসায় ভবিষ্যৎ বাচ্চার জন্য ক খাবার সঞ্চয় করে রাখা, ডিম পাড়া এবং অবশেষে কুঠুরির য় মুখ বন্ধ করা হয়ে গেলে কুমোরে-পোকা উড়ে চলে যায় র এবং তার বাসার আর কোনো খোঁজখবর নেয় না।
৭. “কুমোরে-পোকা ইচ্ছামতো ডিম পাড়বার সময় নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।” – কেন এ কথা বলা হয়েছে?
উত্তর: লেখক কুমোরে-পোকার বাসা বানানোর প্রক্রিয়াটি মন দিয়ে লক্ষ করে দেখেছেন, কুমোরে-পোকা প্রথমে একটি কুঠুরি তৈরি করে। তারপর তার মধ্যে উপযুক্ত পরিমাণ খাদ্য, অর্থাৎ পোকামাকড় ভরতি করে তাতে একটিমাত্র ডিম পাড়ে। এর পরে কুমোরে-পোকা সেই কুঠুরিটির মুখ বন্ধ করে তার গা ঘেঁষে আর একটি কুঠুরি তৈরি করতে আরম্ভ করে। একইভাবে সেই কুঠুরিটিও তৈরির পর তাতে খাদ্য সঞ্চিত রেখে তবে কুমোরে-পোকা সেখানে ডিম পাড়ে। এই ঘটনা থেকেই লেখক সিদ্ধান্তে এসেছেন যে, কুমোরে-পোকা ইচ্ছামতো ডিম পাড়বার সময় নিয়ন্ত্রণ করতে পারে ।
৮. কুমোরে-পোকার কাদামাটি সংগ্রহের প্রক্রিয়াটি লেখো।
উত্তর: মাটি সংগ্রহ করতে গিয়ে কুমোরে-পোকা সবার আগে ভিজে মাটির ওপর বসে লেজ নাচাতে নাচাতে এদিক- ওদিক ঘুরে ফিরে দেখেশুনে যাচাই করে নেয় যে সেটি নির্মাণের উপযুক্ত কি না । উপযুক্ত মনে হলে তারা চোয়ালের সাহায্যে ছোটো ছোটো মটরদানার মতো খণ্ডে খন্ডে মাটি তোলে। মাটি খুঁড়ে তোলার সময় তাদের মুখ থেকে তীক্ষ্ণস্বরে একটানা গুনগুন আওয়াজ হতে থাকে। এরপর জোগাড় করা মাটির ডেলাগুলিকে তারা মুখে করে নিয়ে বাসা নির্মাণের স্থানে ফিরে যায়। এরপর তারা মাটির ডেলাগুলিকে মুখ দিয়ে চেপে চেপে দেয়ালের গায়ে আধখানা চাকার আকারে বসিয়ে দেয়।
No comments:
Post a Comment