◼️লেখক পরিচিতি;
১৮৭১ খ্রিস্টাব্দ প্রিয়ম্বদা দেবীর জন্ম হয়। তাঁর পিতা ছিলেন কৃস্নকুমার বাগচী এবং মা কবি প্রসন্নময়ী দেবী। প্রিয়ম্বদা দেবীর প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয় ভারতী পত্রিকায়| তাঁর স্মরণীয় কাব্যগ্রন্থ হল রেণু। এ ছাড়া তাঁর উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থগুলি হল পত্রলেখা, অংশু, চম্পা ও পাটল ইত্যাদি। ১৯৩৫ সালে এই সাহিত্যিকের মৃত্যু হয়।
◼️নামকরণ;
আলোচ্য পাঠ্যাংশটিতে লেখক তাঁর ময়ূর পোষার গল্পটি বলেছেন। এই গল্পের গোটাটাই জুড়ে রয়েছে ময়ূরটির ছোটো থেকে বেড়ে ওঠার কাহিনি, তার হাঁটাচলা, খাওয়া- দাওয়া, হাবভাব । ময়ূরটিকে যে তিনি খুবই ভালোবাসতেন, তা বোঝা যায় এই লেখাটি পড়ে। ক্রমশ সে-ই হয়ে ওঠে তাঁর সর্বক্ষণের সঙ্গী। ময়ূরটিই এই রচনার কেন্দ্রে থাকায় এই রচনাটির নাম হিসেবে ‘আমার ময়ূর' নামটি সার্থক।
সারমর্ম;
লেখক একবার একটি ময়ূর পুষেছিলেন। সে যখন প্রথমে এল, তখন সে একেবারেই ছোটো, ময়ূরের সৌন্দর্য তার কিছুই ছিল না। তার পছন্দের খাবার ছিল মোটা ভাত আর চিংড়ি মাছ। পেট ভরে খেয়ে নড়াচড়া বন্ধ করে সে এক কোনায় পড়ে থাকত । যত্নে সে খুব শিগগির বেড়ে উঠেছিল। সোনালি সবুজ মাথার চূড়ায়, গায়ের ধূপছায়া আর ময়ূরকণ্ঠী রঙের মিশেলে, লেজের ওপরে নীলকণ্ঠ মণির খণ্ড খণ্ড চাঁদে তাকে খুবই সুন্দর দেখাত | ক্রমশ সে বেশ দুষ্টু আর মিষ্টি হয়ে উঠল।
সারাক্ষণ লেখকের পায়ে পায়ে ঘুরত সে । তিনি যখন ভাঁড়ার দিতে, তরকারি কুটতে যেতেন, সে- ও তাঁর সঙ্গে সঙ্গে যেত। গোছানো জিনিস ছড়িয়ে দিত। দাসীরা মারতে গেলে তাঁর কাছেই এসে আশ্রয় নিত। তাঁর লেখার সময়ে, তাঁর চৌকির হাতায় এসে বসে, হাতে ঠুকরে,চুল টেনে তাঁর মনোযোগ আকর্ষণের চেষ্টা করত। খাঁচায় বন্দি পাখি সে একেবারেই পছন্দ করত না । লেখকের পোষা একটি পাহাড়ি ময়নাকে সে খাঁচা খুলে উড়িয়ে দিয়েছিল। বড়ো হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ি ছেড়ে সে বাইরে যাওয়া শুরু করেছিল। একদিন ভোর থেকেই সে নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিল। বেলা প্রায় একটার সময় একজন তাকে কোলে করে ফিরিয়ে এনেছিল । হারিয়ে যাওয়া প্রিয় ময়ূরকে ফিরে পেয়ে লেখকের ভারি আনন্দ হয়েছিল।
◼️নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর দাও:
১. ময়ূরের লোভ কীভাবে তাকে মুশকিলে ফেলত ?
উত্তর: ময়ূরটি লোভী হওয়ায় সে বেশি খাবার মুখে পুরে আর গিলতে পারত না। তখন চোখ বুজে, ঘাড় বাঁকিয়ে অনেক কষ্টে তা গিলে খেত।
২.ময়ূর ছাড়া লেখক আর কী কী পাখি পুষতেন ?
উত্তর: ময়ূর ছাড়া লেখক একটি কেনারি, একজোড়া চিনে টিয়া আর একটি ময়না পুষতেন।
৩. লেখক কেন ময়ূর পুষেছিলেন ?
উত্তর: লেখক খুব পাখি ভালোবাসতেন। কিন্তু খাঁচায় পাখি পুষলে তাদের ওপরে অত্যাচার করা হয় বলে তিনি খাঁচা ছাড়াই রাখা যায় এমন পাখি হিসেবে ময়ূর পুষেছিলেন।
৪. “ও যেন একটি ময়ূরছানা”—এই কথা দিয়ে কী বোঝানো যায় ?
উত্তর: ছোটো বয়সে কুশ্রী দেখতে ময়ূরছানাটির ক্রমে বড়ো হয়ে সুন্দর হয়ে ওঠা বোঝাতে এই কথাটি ব্যবহৃত হয়েছে।
৫. ময়ূরটি যখন প্রথম এল, তখন তাকে কেমন দেখতে ছিল ?
উত্তর: ময়ূরটি যখন প্রথম এল, তখন তার গায়ের রং ছিল একেবারে ঘাসের মতো, শুকনো মাটির মতো |
৬. ময়ূরটি কী খেত ?
উত্তর: ময়ূরটি মোটা ভাত আর চিংড়ি মাছ খেতেই ভালোবাসত । ফল, ধান বা চাল খেতে সে পছন্দ করত না।
৭. ময়ূরটিকে ছোটোবেলায় কীভাবে ঘুম পাড়ানো হত ?
উত্তর: ময়ূরটি যখন ছোটো ছিল, তখন তাকে রাত্রিবাসের জন্য একটি বড়ো ঝুড়ি ঢাকা দিয়ে ঘরের একপাশে রাখা হত।
৮. বড়ো হয়ে যাওয়ার পর ময়ূরটি কোথায় ঘুমোত ?
উত্তর: বড়ো হয়ে যাওয়ার পর ময়ূরটি ছাদের সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠে, ছাদের পাশেই এক প্রকাণ্ড দেবদারু গাছে ঘুমোত ।
৯. লেখক ময়নাকে কী বলতে শেখাচ্ছিলেন?
উত্তর: লেখক ময়নাকে 'বন্দেমাতরম' বলতে শেখাচ্ছিলেন ।
◼️নীচের সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যাভিত্তিক প্রশ্নগুলির উত্তর দাও:
১. বড়ো হয়ে লেখকের ময়ূর কেমন দেখতে হয়েছিল ?
উত্তর: যত্নে পোষা ময়ূরটি খুব তাড়াতাড়ি বেড়ে উঠেছিল। তাকে দেখতেও তখন ভারি সুন্দর হয়েছিল। তার সর্বাঙ্গে রঙের লীলা দেখা দিয়েছিল। মাথার চূড়াটি বেড়ে উঠে সোনালি সবুজে ভরে উঠেছিল। হাওয়ায় সেটি যখন কাঁপত তখন সুন্দর দেখাত। গায়ের মাটির মতো রংটি ক্রমশ সোনালি-সবুজ নীল মিশিয়ে যাকে ধূপছায়া আর ময়ূরকণ্ঠী রং বলে, সেই রং হয়েছিল। একটু নড়াচড়া করলেই নীল বিদ্যুতের শিখার মতো একটি আভা তার গায়ের ওপরে ঢেউ খেলিয়ে যেত। তার লেজটি যত বেড়ে উঠে ছড়িয়ে পড়তে লাগল, তাতে ততই নীলকান্ত মণির খন্ড খন্ড চাঁদ দেখা দিল।
২. বড়ো হয়ে উঠে ময়ূর কীভাবে দুষ্টুমি করত ?
উত্তর: বড়ো হয়ে উঠে ময়ূরটি একেবারেই লেখকের সঙ্গ ছাড়তে চাইত না। তিনি যখন সকালে ভাড়ার ঘরে যেতেন, কুটনো কুটতে যেতেন, সে-ও অমনি সঙ্গে সঙ্গে যেত। তার বরাদ্দ চাল বা ধান তার পছন্দ হত না, গোছানো জিনিস সে ঠুকরে চারিদিকে ছড়িয়ে দিত। দাসীরা তাড়া দিলে উলটে তাদেরকেই তাড়া করত। লেখক বকলে কিংবা মারার ভান করলে দাঁড়িয়ে চোখ মিটমিট করত, অথবা আরও বেশি দুষ্টুমি করে, সব ছড়িয়ে পাখা ছড়িয়ে দিয়ে তাঁর কাছেই গিয়ে আশ্রয় নিত। তাঁর লেখার সময়ে তাঁর চৌকির হাতায় গিয়ে ময়ূরটি বসত। তিনি সেদিকে তাকিয়ে না দেখলে তাঁর হাতে ঠুকরে, চুল ধরে টেনে এমন করত, যে তিনি তার দিকে মন না দিয়ে বেশিক্ষণ থাকতে পারতেন না ।
No comments:
Post a Comment