এক ভুতুড়ে কান্ড প্রশ্ন উত্তর পড়তে নিচের লিংকে ক্লিক করো
👉 ( এক ভুতুড়ে কান্ড প্রশ্ন উত্তর )
◼️লেখক পরিচিতি;
দক্ষিণারঞ্জন মিত্র মজুমদার ১৮৭৭ খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশের ঢাকা জেলার উলাইল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর লেখা বিখ্যাত গ্রন্থগুলি হল- -ঠাকুমার ঝুলি, ঠাকুরদাদার ঝুলি, দাদামশায়ের থলে, উৎপল ও রবি, কিশোরদের মন, বাংলার সোনার ছেলে, চিরদিনের রূপকথাইত্যাদি। ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দে বঙ্গীয় শিশু সাহিত্য পরিষদ তাঁকে ‘ভুবনেশ্বরী' পদক দিয়ে সম্মানিত করে। দক্ষিণারঞ্জন মিত্র মজুমদার ১৩৬৩ বঙ্গাব্দের (১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দ) ১৬ চৈত্র কলকাতায় মারা যান।
◼️নাম করণ;
কাহিনির শুরুতে দেখি বর্ষার ছবি লেখক তুলে ধরেছেন। চারিদিক জলে টইটম্বুর । তার মধ্য দিয়ে ভেসে চলেছে একটি পিঁপড়ে। একটি পাতাকে আঁকড়ে ধরে সে ডুবতে ডুবতে চলেছিল | বৃষ্টি একটু কমে গেলে সে জীবন বাঁচাতে সমর্থ হয়। বৃষ্টি থমকে দাঁড়ায় এবং মুমূর্ষু পিঁপড়েকে বলে, যে পৃথিবীতে জল-স্থল, বৃষ্টি-রৌদ্র প্রত্যেকেরই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। মাটি না থাকলে যেমন জল বইতে পারত না, তেমনি বৃষ্টি না পড়লে সবুজ পাতায় এই পৃথিবী ভরে উঠত না | বলতে বলতে মেঘের ফাঁক দিয়ে সূর্য উঁকি দেয়। একটানা বর্ষার পর রোদের কিরণ যেন আশীর্বাদ হয়ে দেখা দেয়। রচনায় লেখক দক্ষিণারঞ্জন এই ভাবটিকেই তুলে ধরতে চেয়েছেন। এই কারণে পাঠ্যাংশটির নাম ‘আশীর্বাদ' সার্থক ও যথাযথ।
◼️সারমর্ম;
‘আশীর্বাদ' রচনাটিতে বন্যার কথা বলা হয়েছে। জলে যখন সারা দেশ ভরে গিয়েছে তখন একটি পিঁপড়ে তার প্রাণ বাঁচানোর জন্য ঘাসের পাতাকে আঁকড়ে ধরে ভেসে যায়। সেই অবস্থায় ভাসতে ভাসতে সে জানায় রৌদ্র ও ডাঙা তার পছন্দের, বর্ষা অপছন্দের। সে ধন্যবাদ দেয় পাতাকে। আর ঘাসপাতাটি জানায় মাটি, জল, রোদ—প্রত্যেকেরই নিজস্ব গুরুত্ব রয়েছে। তার কথাকে সমর্থন করে বৃষ্টিও। সে- ও পিঁপড়েকে সাহস জোগায় এই বলে, যে, খুব শীঘ্রই শরৎ আসবে । বলতে বলতেই মেঘ কেটে আকাশের বুকে রোদ হেসে ওঠে এবং তা যেন শরতের আশীর্বাদ হিসেবে নীচে নেমে আসে।
◼️নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর দাও।
১. দক্ষিণারঞ্জন মিত্র মজুমদারকে সবচেয়ে বেশি কী আকর্ষণ করত?
উত্তর: রূপকথা, লোককথা ও উপকথার কাহিনি দক্ষিণারঞ্জন মিত্র মজুমদারকে সবচেয়ে বেশি আকর্ষণ করত ।
২. তিনি শিশুসাহিত্যের কোন্ পুরস্কারে পুরস্কৃত
হয়েছিলেন?
উত্তর: দক্ষিণারঞ্জন ‘ভুবনেশ্বরী পদক'-এ পুরস্কৃত হয়েছিলেন।
৩. বন্যায় প্রকৃতির রূপ কেমন হয়?
উত্তর: বন্যায় প্রকৃতি জলে থইথই করতে থাকে।
৪. পিঁপড়ে কোথায় আশ্রয় নিয়েছিল ?
উত্তর: পিঁপড়ে আশ্রয় নিয়েছিল একটি ঘাসের পাতার নীচে।
৫. বৃষ্টির সময়ে গাছের পাতা কাঁপছিল কেন ?
উত্তর: বৃষ্টির ফোঁটার স্পর্শে গাছের পাতা কাঁপছিল ।
৬. পিঁপড়ে নিজেকে বাঁচাবার জন্য কী করল ?
উত্তর: পিঁপড়ে নিজেকে বাঁচাবার জন্য ঘাসপাতাকে প্রাণপণ শক্তি দিয়ে কামড়ে ধরে ভেসে গিয়েছিল।
৭. পিঁপড়ে কখন 'বাপ! বাঁচলেম' বলে উঠল?
উত্তর: বৃষ্টি একটু কমলে ঘাসপাতাটি সোজা হয় এবং পিঁপড়ে তার ওপর বসে ‘বাপ! বাঁচলেম' বলে ওঠে।
৮. জল কেমন শব্দে হেসে উঠেছিল ?
উত্তর: জল খল খল শব্দে হেসে উঠেছিল।
৯. “বুক ভেঙে নিশ্বাস পড়ল পিঁপড়ের।”—কেন এমন হল ?
উত্তর: চারিদিকে প্রচুর জল ও বৃষ্টির অবিশ্রান্ত ধারা দেখে পিঁপড়ের ‘বুক ভেঙে নিশ্বাস পড়ল'।
১০. “শরতের আশীর্বাদ তোমাদেরও উপরে ঝরুক।”— কে এমনটি কামনা করেছিলেন?
উত্তর: আকাশের সূর্য এমনটি কামনা করেছিলেন
১১. ‘আশীর্বাদ' গল্পের শুরুতে কোন্ ঋতুর কথা রয়েছে?
উত্তর: ‘আশীর্বাদ' গল্পের শুরুতে বর্ষা ঋতুর কথা রয়েছে।
১২. বৃষ্টি কোথা থেকে পিঁপড়ে আর পাতার কথা • শুনছিল ?
উত্তর: বৃষ্টি মেঘের আড়াল থেকে পিঁপড়ে আর পাতার কথা শুনছিল ।
◼️ নীচের প্রশ্নগুলির কয়েকটি বাক্যে উত্তর দাও।
১. পাঠ্যাংশে কোন্ কোন্ ঋতুর প্রসঙ্গ রয়েছে ? প্রতি ক্ষেত্রে একটি করে উদাহরণ পাঠ থেকে খুঁজে নিয়ে লেখো।
উত্তর: পাঠ্যাংশে বর্ষা ও শরৎ ঋতুর প্রসঙ্গ রয়েছে ।
• বর্ষাকাল—‘বর্ষা খুব নেমেছে।'
শরৎকাল—‘আশীর্বাদ করি, শরতের আশীর্বাদ তোমাদেরও উপরে ঝরুক।'
২. পাতা গাছের কী প্রয়োজনে লাগে ?
উত্তর: পাতায় ‘সালোকসংশ্লেষ' প্রক্রিয়ার মাধ্যমে গাছের খাদ্য তৈরি হয়।
৩. পিঁপড়ের বাসস্থান সম্পর্কে অনধিক তিনটি বাক্যে লেখো।
উত্তর: পিঁপড়েরা বিভিন্ন গাছের কোটরে বা ঘরের খাঁজে বাসা তৈরি করে বসবাস করে। প্রয়োজনে মাটির কণা এনে তা দিয়ে ঘর বানায় | পিঁপড়েরা সেখানে খাদ্য সংগ্রহ করে আনার পর সঞ্চয় করে রাখে।
৪. বৃষ্টি পাতাকে কোন্ পরিচয়ে পরিচায়িত করেছে ?
উত্তর: বৃষ্টি পাতাকে ‘বন্ধু” বলে পরিচয় দিয়েছে |
৫. সবার কথা শুনে পিঁপড়ে কী ভাবল ?
উত্তর: সবার কথা শুনে পিঁপড়ে ভাবে এই পৃথিবী একদিন তার হয়ে উঠবে।
৬. প্রকৃতির বুকে শরতের আশীর্বাদ কীভাবে ঝরে পড়ে ?
উত্তর: প্রকৃতির বুকে শরতের আশীর্বাদ সূর্যের কিরণ হয়ে ঝরে পড়ে।
◼️নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর নিজের ভাষায় লেখো।
১. বৃষ্টির সময় তোমার চারপাশের প্রকৃতি কেমন রূপ নেয় সে সম্পর্কে কয়েকটি বাক্যে লেখো ।
উত্তর: বৃষ্টির সময় আমার বাড়ির চারপাশ জলে ভরে যায় গাছপালার পাতাগুলি বৃষ্টিধোয়া জলে আরও ঝকঝকে, সবুজ বলে মনে হয়। রাস্তাঘাটে হাঁটুজল জমে এবং সেই জল ঠেলে ঠেলে সাধারণ পথচারীদের যেতে হয়। সে সময় সাধারণ পশুপাখিদের খুব করুণ অবস্থা হয়। তাদের বাসা ভেঙে যায় এবং গৃহস্থবাড়ির মধ্যে তারা আশ্রয় নেওয়ার চেষ্টা করে।
২. পিঁপড়ে গাছের পাতায় আশ্রয় নিয়েছিল কেন?
উত্তর: পিঁপড়েটি বন্যার জলে হাবুডুবু খেতে খেতে ভেসে চলেছিল। নিজের প্রাণ বাঁচাতে তার তখন প্রয়োজন ছিল যে-কোনো একটি আশ্রয় বা অবলম্বনের। সেই কারণেই পিঁপড়ে ঘাসপাতার তলা আঁকড়ে ধরে।
৩. পাতা কী বলে পিঁপড়েকে প্রবোধ দিতে চেয়েছিল? “কাজে আসে না কোনোটাই”— এখানে তার কোন্ কাজে না আসার কথা বলা হয়েছে?
উত্তর: • পাতা পিঁপড়েকে ‘কাজের লোক' বলে প্রবোধ দিতে চেয়েছিল। পিঁপড়ে ঘাসপাতাকে বলেছিল, যে সে নিজে সাঁতার কাটতে, হাঁটতে এবং দৌড়োতে জানলেও প্রয়োজনের সময় কোনোটাই কাজে আসে না। ডাঙায় রোদ্দুরের দিনে তাকে পুড়ে মরতে হয় এবং বন্যার সময় হাবুডুবু খেতে খেতে ভেসে চলতে হয়।
৪. “তাই আজ বেঁচে গেলাম” —বক্কার 'আজ' বেঁচে যাওয়ার কারণ কী ?
উত্তর: ঘাসপাতা পিঁপড়েকে আশ্রয় দিয়ে ডুবে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা করেছিল বলে তার ধারণা সে 'আজ' বেঁচে গিয়েছিল।
৫. পিঁপড়ে আর পাতা কীভাবে নিজেদের কষ্টের কথা গল্পে বলেছে তা একটি অনুচ্ছেদে লেখো।
উত্তর: পিঁপড়ে ঘাসের পাতাকে বলেছিল দিনের বেলা রৌদ্রে সে পুড়ে মরে, বর্ষার জলে হাবুডুবু খায়। পৃথিবীতে বেঁচে থেকে সে শুধু খাটে, খায়, দায়। নতুন কিছু সৃষ্টির ক্ষমতা তার নেই ।
অন্যদিকে প্রখর রোদে পাতা পুড়ে যায়, ধুলোয় ভরে ওঠে তার শরীর।
৬. 'মাটি সবারই'— পাতার এই কথার মধ্যে দিয়ে কোন্ সত্য ফুটে উঠেছে?
উত্তর: পৃথিবীর সমস্ত নাগরিক ভাই-ভাই। গোটা পৃথিবীকে যদি নিজেদের পরিবার বলে আমরা মনে করি তাহলে এর মাটি, জল, বায়ু, ফুল, ফল ব্যবহারের অধিকার আমাদের সকলের রয়েছে। পাতা যে কথাটি বলেছে, 'মাটি সবারই'—তার মধ্যে দিয়ে বিশ্বভ্রাতৃত্বের বোধটি ফুটে উঠেছে। আমরা সকলেই যে ভাই-ভাই ——এই সত্যটি লেখক তুলে ধরতে চেয়েছেন।
৭. মেঘের আড়াল থেকে বৃষ্টি কোন্ কথা শুনতে পেয়েছিল ? তা শুনে বৃষ্টি পিঁপড়েকে কী বলল ?
উত্তর: • ঘাসপাতা ও পিঁপড়ে নিজেদের দুঃখময় জীবন নিয়ে কথাবার্তা বলছিল । বিশেষ করে পিঁপড়ে জানিয়েছিল যে সে কোনো কাজের নয়। সে খুব দুঃখে ছিল। পাতা তাই তাকে সান্ত্বনাও দিয়েছিল।
• ঘাসপাতা ও পিঁপড়ের কথাবার্তা শুনতে পেয়ে বৃষ্টি পিঁপড়েকে ভয় পেতে, দুঃখ করতে বারণ করেছিল। সে পাতার উদাহরণ টেনে বলেছিল, রোদে পুড়ে গেলে, ধুলোয় ভরে গেলেও ঘাসপাতা কখনোই ভয় পায় না। বৃষ্টির ধারা নেমে আসবার সঙ্গে সঙ্গে আবার সবুজ, প্রাণবন্ত ও সজীব হয়ে ওঠে সে।
৮. শরৎ ঋতুর প্রকৃতি কেমন সে বিষয়ে একটি অনুচ্ছেদ রচনা করো।
উত্তর: শরৎ ঋতুতে সারা প্রকৃতি যেন উৎসবের মেজাজে সেজে ওঠে। নদীর চরে কাশফুলের মেলা দেখা যায়। শিউলির গন্ধে চারিদিক ভরে ওঠে। প্রকৃতি এই সময় ফল ও ফসলের পসরা নিয়েও হাজির হয়। সরষে, ভুট্টা, গম, যব, আলুর মতো ফসলে বাংলার জমি, খেত পরিপূর্ণ থাকে। ফলের মধ্যে তাল, বাতাবিলেবু, চালতার দেখা মেলে এই সময়েই। শরতের সোনালি রোদে মাঠ-ঘাট-পথ-প্রান্তরে খুশির রং ছড়িয়ে পড়ে। শোনা যায় পুজোর বার্তা। না চারপাশের প্রকৃতি আমাদের মনে করিয়ে দেয়, দেবী আসছেন।
৯. পাতা, বৃষ্টি, জল, ঘাসের পাতা কে কীভাবে পিঁপড়ের মনে সাহস জুগিয়েছিল—তা আলোচনা করো ।
উত্তর: পাতা পিঁপড়েকে বলেছিল যে সে যথেষ্ট ভালোভাবে কাজ করতে পারে। পিঁপড়ে তার মতে ‘কাজের লোক’। আবার বৃষ্টি জানায় রোদের ভয়ংকর উত্তাপ সহ্য করেও পাতা জীবিত থাকে। বর্ষা এলে সে আবার সজীব, প্রাণময় হয়ে ওঠে। সুতরাং, পিঁপড়ে যেন ভেঙে না পড়ে পাতাকে দেখে সাহস সঞ্চয় করে। জলও বলে বর্ষাকালে ডুবে থাকলেও শরতের মরমে ঘাস কাশফুলের দলের সঙ্গে হেসে ওঠে, খুশিতে জেগে ওঠে। পিঁপড়ে যেন এভাবেই বেঁচে থাকবার সাহস সঞ্চয় করে।
১০. পিঁপড়ে কেন দুঃখে ছিল ?
উত্তর: পিঁপড়ে বন্যার জলে হাবুডুবু খাচ্ছিল। তার প্রাণ বাঁচানোই কঠিন হয়ে পড়েছিল। পাতার শিরা কামড়ে সে তখনকার মতো জীবন রক্ষা করে। ঠিক তখনই পিঁপড়ের মনে হয় যে সে সাঁতার কাটতে কিংবা হাঁটতে, দৌড়োতে জানলেও কাজের সময় কোনোটাকেই কাজে লাগাতে পারে না । দিনরাত পরিশ্রম করে, খেয়ে-দেয়ে ঘুমিয়েই তার সময় কেটে যায় । নতুন কিছু সৃষ্টির ক্ষমতা তার নেই। এই কারণেই পিঁপড়েটি দুঃখ করছিল ।
১১. এই গল্পে পাতার ‘শিরা'-র উল্লেখ রয়েছে। তুমি একটি পাতার আর কোন্ কোন্ অংশের নাম জান লেখো ।
উত্তর: পাতার ওপরের যে চ্যাপটা অংশ থাকে, তাকে আমরা ‘পত্রফলক' বলি। পাতার ফলকটিকে সূর্যের আলোর দিকে তুলে ধরে যে অংশ, তার নাম ‘পত্রবৃন্ত’। কান্ডের বা প্রশাখার সঙ্গে পাতার যে অঙ্গটি যুক্ত থাকে তাকে 'পত্রমূল' বলে।
No comments:
Post a Comment