প্রাথমিক চিকিৎসা
প্রশ্ন উত্তর
চতুর্থ অধ্যায় প্রশ্ন উত্তর পড়তে নিচের লিঙ্ক এ ক্লিক করো
👉 ( চতুর্থ অধ্যায় প্রশ্ন উত্তর )
❐ সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর :
১. ভারতবর্ষে সরকারি হিসাবে কত মানুষ সাপের কামড়ে মারা যান ?
উঃ । প্রতিবছর ভারতবর্ষে সরকারি হিসাবে প্রায় ত্রিশ হাজার মানুষ সাপের কামড়ে মারা যান । এছাড়া ওঝা ও গুণিনদের হাতে সাপের কামড়ের ভুল চিকিৎসায় বহু মানুষ মারা যায় ।
২. সাপের কামড়ে বেশিরভাগ মানুষ কীভাবে মারা যান ?
উঃ । আমাদের রাজ্যের অধিকাংশ সাপই বিষধর নয় । সাপ কামড়ালে যে পরিমাণ বিষ ঢালে তাতে অধিকাংশ মানুষের মৃত্যু হওয়ার কথা নয় । কিন্তু সাপে কামড়ানো মানুষের মধ্যে একটা বেশিরভাগ অংশই আতঙ্কে হার্টফেল করে মারা যায় ।
৩. ভারতবর্ষে কয় প্রকার বিষাক্ত সাপ দেখা যায় ? কয়েকটি বিষধর সাপের নাম লেখো ।
উঃ । ভারতবর্ষে সাধারণত মাত্র চার রকম বিষাক্ত সাপের দেখা পাওয়া যায় । কয়েকটি মারাত্মক বিষধর সাপ হলো কালাচ , কেউটে , গোখরো , শাঁখামুটি , শঙ্খচূড় ও চন্দ্রবোড়া ।
৪. কয়েকটি ক্ষীণ বিষধর ও নির্বিষ সাপের নাম লেখো ।
উঃ । কয়েকটি ক্ষীণ বিষধর সাপ হলো — কালনাগিনী , লাউডগা , নোনাবোড়া , মেটেলি ইত্যাদি । কয়েকটি নির্বিষ সাপ হলো — জলঢোঁড়া , দাঁড়াশ , ঘরচিতি , অজগর , পুঁয়ে , থুথুক , বেলেসাপ ইত্যাদি ।
৫. সাপুড়েরা সাপের খেলা দেখানোর পর সাথে সাথেই সাপটিকে তার ঝাঁপির মধ্যে পুরে দেয় কেন ?
উঃ । সাপ বিষধর প্রাণী । হঠাৎ করে সে যাতে কাউকে কামড়ে না দেয় সেজন্যই তাকে দ্রুত ঝাঁপির মধ্যে আটকে রাখা হয় ।
৬. যে কোনো ধরণের সাপ কামড়ালেই কি মানুষ মারা যেতে পারে ?
উঃ । না , শুধুমাত্র বিষধর সাপ কামড়ালেই বিপদের আশঙ্কা বেশি থাকে ।
৭. বিষধর সাপ কামড়ালে মারা যায় কেন ?
উঃ । বিষধর সাপ কামড়ালে অধিকাংশ ক্ষেত্রে সঠিক চিকিৎসা না করে ওঝা , গুণিন এর কাছে নিয়ে গিয়ে সময় নষ্ট করার ফলে রোগী মারা যায় ।
৮. সাপে কাটা রোগীর সঠিক চিকিৎসা কী ?
উঃ । প্রথমে প্রাথমিক চিকিৎসা করে তারপর যত দ্রুত সম্ভব নিকটবর্তী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া ।
৯. সাপের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও ।
উঃ । সাপ সরীসৃপ প্রাণী । এদের দৃষ্টি তীক্ষ্ণ নয় । এরা স্থির বস্তু ভালো দেখতে পায় না । সাপের বহিঃকর্ণ নেই , বাতাসে উৎপন্ন কোনো শব্দ এরা শুনতে পায় না । সাপ মানুষের থেকে জোরে দৌড়াতেও পারে না । সব সাপ বিষাক্ত নয় । মানুষ সাপের খাদ্যবস্তুও নয় , সাপ ভয় পেয়ে আত্মরক্ষার জন্য মানুষকে কামড়ায় ।
১০. সাপের বিষ কীভাবে ক্ষতিসাধন করে ?
উঃ । সাপের বিষ মূলত দু - প্রকারে ক্ষতিসাধন করে ( a ) নিউরোটক্সিন ( স্নায়ুতন্ত্রের ক্রিয়া ধ্বংস করে ) ( b ) হেমাটোটক্সিন ( রক্তকলার ক্ষতি করে ) । বিষধর সাপের বিষের উপাদানগুলো কোনোটি স্নায়ুতন্ত্রের ক্রিয়া ধ্বংস করে , আবার কোনোটি দেহকলা বিনষ্ট করে । কিডনির পচন ঘটে — লোহিতকণিকা ধ্বংস করে রক্ত জমাট বাঁধে ।
❐ রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর :
১. সাপে কাটা রোগীর ক্ষেত্রে কী করা উচিত নয় ?
উঃ । ( i ) উত্তেজনাকর কিছু খাওয়ানো যাবে না । ( ii ) তাবিজ , কবচ , ওঝা , শেকড় - বাকড়ে সময় নষ্ট করবে না । ( iii ) রোগীকে হাঁটাবে না , নাড়াচাড়া করাবে না । ( iv ) হাসপাতালে পাঠাতে বিলম্ব করবে না । ( v ) ক্ষতস্থান কাটবে না । ( vi ) মুখ দিয়ে টেনে বিষ করবার চেষ্টা করবে না । ( vii ) ক্ষতস্থানে কোনো রাসায়নিক পদার্থ দেবে না । ( viii ) হাঁটাচলা করাবে না এবং কড়া বাঁধন না দিয়ে হালকা বাঁধন দিতে হবে । ( ix ) ইলাস্টিক ব্যান্ডেজ বা পরিষ্কার মোটা কাপড়ের পাড় দিয়ে এমনভাবে আটকাতে হবে যাতে ক্ষতস্থানে নাড়ির স্পন্দন বন্ধ না হয়ে যায় ।
২. সাপে কাটা রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলা হয় কেন ?
উঃ । হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে প্রচুর পরিমাণ অ্যান্টিভেনম ইনজেকশন মজুত থাকে । ফলে রোগীকে সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তারের পরামর্শমতো অ্যান্টিভেনম ইনজেকশকন দেবার সুযোগ পাওয়া যায় । সেক্ষেত্রে রোগীকে বাঁচানো সহজ হয় ।
৩. সাপ মানুষের বন্ধু বা শত্রু ? তাদের বাঁচানো প্রয়োজন কেন ?
উঃ । সাপ মানুষের বন্ধু । সাপের বিষ মানুষের ক্ষতির জন্য সৃষ্টি হয়নি । সাপের বিষ একটি প্রাকৃতিক নিঃসরণ যা কিছুদিন পরপর তৈরি হয় । সাপ তার বিষ খাদ্যবস্তুকে হজম করার কাজে ব্যবহার করে । সাপ নিরীহ জীব । পৃথিবীতে ১৩.৫ কোটি বছর আগে সাপ আবির্ভূত হয়েছিল , এর অনেক পরে মানুষ সৃষ্টি হয়েছিল । তাই মানুষ কোনোদিনই সাপের খাদ্য ছিল না এবং এখনও নয় । সাপ জীববৈচিত্র্যের অন্যতম প্রাণী । সাপ বিলুপ্ত হলে প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হবে ফলে পরিবেশ বিপর্যয়ে তা ইন্ধন জোগাবে । একটি সাপ বছরে গড়ে ৩৫০ টি ইঁদুর খেতে পারে । কীটপতঙ্গ , মশার লার্ভা প্রভৃতি ক্ষতিকারক প্রাণীদের নিয়ন্ত্রণ করে । সাপের বিষ থেকে বিষের প্রতিষেধক এ . ভি . এস তৈরি হয় । এছাড়া ক্যানসার , হার্ট অ্যাটাক , উচ্চরক্তচাপ , ডায়াবেটিস প্রভৃতি রোগের ওষুধ তৈরি করা হচ্ছে এবং গবেষণা চালানো হচ্ছে । সাপ ভয় পেয়ে আত্মরক্ষার জন্য মানুষকে কামড়ায় । এই পৃথিবীতে তাদেরও বাঁচার অধিকার আছে । তাই সাপ বাঁচুক সাপের জগতে , মানুষ বাঁচুক তার নিজ কর্মে ।
৪. কেউটে সাপের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি দাও ।
উঃ । কেউটের বিজ্ঞানসম্মত নাম Naja naja Kautia । ভয়ংকর বিষধর সাপ কেউটে । এই সাপ কামড়ানোর কয়েক ঘন্টার মধ্যে মানবদেহের স্নায়ুতন্ত্রকে বিনষ্ট করে দেয় । বিপজ্জনক মাত্রায় বিষ ঢালতে পারলে আর সঙ্গে সঙ্গে যদি বিজ্ঞানসম্মত চিকিৎসা না করা হয় তাহলে মৃত্যু অনিবার্য । কেউটের গতি দ্রুত ও এরা খুবই সজাগ । ভয় পেলে শরীর তুলে হিস হিস শব্দ করে এরা কামড়াতে আসে । এদের ফণা আছে , ফণার পিছনে একটি গোল চিহ্ন থাকে । ফণার সামনের দিকে দু - পাশে কালো চিহ্ন থাকে । চিহ্নের নীচের দিকে আড়াআড়ি কালচে ব্যান্ড বা পটি দেখা যায় । শরীরের রং বাদামি , হলুদ , ধূসর বা কালোর সঙ্গে সমান বা হলুদ - কালো ডোরাকাটা । এদের ফণার পিছনে একটি চোখের মতো দাগ সবসময় চোখে পড়ে । লেজের তলার আঁশ গাঢ় । অপ্রাপ্তবয়স্কদের রং কালো । বয়সের সঙ্গে সঙ্গে রং বদলে বাদামি রং - এর হয়ে যায় । চারপাঁচ ফুটের মতো লম্বা হয় । ফণা তুলে কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই নামিয়ে নেয় । জানুয়ারি থেকে মার্চ মাসে এরা ৮ থেকে ১৮ টি ডিম পাড়ে । অল্প ভেজা মাটিতে এরা থাকতে ভালোবাসে । সুন্দরবনে এই সাপ দেখা যায় । এছাড়াও হরিয়ানা গাঙ্গেয় উপকূলবর্তী এলাকা , পশ্চিমবঙ্গ , ওড়িশা , সিকিম , আসাম ও অরুণাচল প্রদেশে এদের দেখা যায় । খেত খামার , উইঢিবি , গাছের কোটর , ইঁদুরের গর্ত , পানাডোবার ধারে বা ধানের গোলায় এরা বাস করে । ধান পাকবার সময় ধানের জমিতে বা জমির আলের গর্তে এরা খাদ্যের সন্ধানে ওঁত পেতে থাকে । ইঁদুর , ব্যাং , গিরিগিটি , টিকটিকি , পাখির বাচ্চা , ছোটো সাপ ইত্যাদি এদের খাদ্য । কেউটে মূলত নিশাচর হলেও ভোরে ও সন্ধেবেলা এরা চলাচল করে । এদের চোখে রডকোশ থাকায় এরা রাতে ভালো দেখতে পায় এবং নিখুঁত নিশানায় আঘাত হানে ।
৫. চন্দ্রবোড়া সাপের পরিচয় দাও ।
উঃ । চন্দ্রবোড়া সাপের বৈজ্ঞানিক নাম Vipera russelli . এই সাপের দেহ মোটা , মাথা ত্রিকোণ দেহের মাঝের অংশটি মোটা ও মাথা এবং লেজের দিকটি সরু । এই সাপ গোল পাকিয়ে থাকতে ভালোবাসে । এদের শরীরের রং বাদামি বা হলদে বাদামির সঙ্গে তিনটে করে লম্বালম্বি গাঢ় বাদামি গোল গোল দাগ । দেখতে অনেকটা শিকলের মতো বলে অনেকে ‘ চেইন ভাইপার ’ বলে । এদের পেটের রং সাদা । এদের কোনো ফণা নেই । এরা বাচ্চা দেয় , ডিম পাড়ে না । এই সাপ মূলত নিশাচর , স্ত্রী সাপ মে - জুলাই মাসে ৬ থেকে ৬৩ টি বাচ্চা প্রসব করে । এই সাপ বিরক্ত হলে জোরে হিসহিস শব্দ । করে । উত্তেজিত হলে বা কোণঠাসা হলে মাথা থেকে দেহের কিছুটা অংশ তীব্রবেগে শূন্যে ছুঁড়ে দিয়ে যে কোনো দিকে সজোরে কামড়াতে পারে । চন্দ্রবোড়ার বিষদাঁত ভারতীয় সাপেদের মধ্যে সবচেয়ে লম্বা ফলে এদের দংশনের গভীরতা অনেক বেশি । চন্দ্রবোড়ার বিষ হেমটোটক্সিন বা রক্তনাশক । খোলা মাঠ , বাঁশঝাড় , কচুবন , পুরোনো ইটের গাঁজা , উইঢিবি , কাঁটাগাছের জঙ্গল , পাথরের মাঝে এদের দেখা যায় । এদের মূল খাদ্য হলো ইঁদুর , ব্যাং , টিকটিকি ইত্যাদি ।
৬. শাঁখামুটি সাপ সম্বন্ধে যা জানো লেখো । উঃ । শাঁখামুটি সাপের বৈজ্ঞানিক নাম Bungarus Fasciatus । এই সাপ দেখতে ভারি সুন্দর । এর আঁশ মসৃণ , মাথা ঘাড়ের চেয়ে সামান্য চওড়া । এদের চোখ কালো , লেজ ছোটো ও ভোঁতা । এদের দেহে হলুদ ও কালো মোটা পটির মতো দাগ দেখা যায় । স্ত্রী সাপ এপ্রিল মাস নাগাদ ৪ থেকে ১৪ টি ডিম পাড়ে । শাঁখামুটি দিনের বেলায় খুবই শাস্ত কিন্তু রাতে প্রচণ্ড সক্রিয় । এদের বিষ নিউরোটক্সিন জাতীয় । এদের মূল খাদ্য সাপ , সাপের ডিম , ইঁদুর , মাছ , ব্যাং । এমনকি কালাচ , চন্দ্রবোড়া সাপ পর্যন্ত খেয়ে ফেলে এরা পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখে । সাধারণত ঝোপজঙ্গল , বিহার , ওড়িশা , আসাম , অরুণাচল প্রদেশ , উত্তর প্রদেশে এই সাপ দেখা যায় ।
৭. কালাচ সাপের পরিচয় দাও ।
উঃ । কালাচ সাপের বিজ্ঞানসম্মত নাম Bungarus Caruleus । এই সাপের আঁশ মসৃণ , মাথা ঘাড়ের চেয়ে সামান্য চওড়া , চোখ সম্পূর্ণ কালো । এদের রং চকচকে , কালো , ধূসর , কালচে নীল বা গাঢ় বাদামির ওপরে সরু নীলের আভা । এদের পেটের রং চকচকে সাদা বা হলদে । স্ত্রী সাপ মার্চ থেকে মে মাসে ৮ থেকে ১৮ টি ডিম পাড়ে এবং দু'মাস পর্যন্ত ডিম পাহারা দেয় । এই সাপ নিশাচর , ভারতবর্ষের সমস্ত স্থলচর সাপের মধ্যে এই সাপের বিষ সবচেয়ে শক্তিশালী । কালাচ সাপ মূলত রাত্রে কামড়ায় এবং শরীরের ক্ষতস্থান অসাড় করে দেয় । এদের বিষে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যায় এদের বিষ স্নায়ুনাশক ও রক্তনাশক হয়ে থাকে । ফলে বিষের তীব্রতা বুঝতে না পেরে চিকিৎসায় দেরী হওয়ায় মৃত্যু অনিবার্য হয়ে ওঠে । উইয়ের ঢিবি , ইঁদুরের গর্ত , ইটের ভাটায় , জলের ধারে , বাগানে এমন কি ভাঁজ করা বা মোড়ানো গালিচায় কালাচ সপিকে বাস করতে দেখা যায় । সাপ , ইঁদুর , টিকটিকি , ব্যাং ইত্যাদি এদের খাদ্য ।
৮. গোখরো সাপের পরিচয় দাও ।
উঃ । গোখরো সাপের বিজ্ঞানসম্মত নাম Najanaja । এই সাপের দেহের আঁশ মসৃণ , খয়েরি বা কালচে ধরনের হয় । এদের ফণা বেশ চওড়া । ফণার পিছনে দুটি গোল চিহ্ন । ইংরেজি " U " চিহ্ন দিয়ে যুক্ত । এই গোল চিহ্ন থাকলে বাইনোসিলেট বলে । গোখরো পাঁচ থেকে ছয় ফুট লম্বা হয় । এলবিড পরিবারভুক্ত গোখরো মারাত্মক বিষধর হয়ে থাকে । মার্চ থেকে জুলাই মাসে এরা ১২ থেকে ৩০ টি ডিম পাড়ে । এরা খুব দ্রুতগামী ও সজাগ এবং স্বভাবে লাজুক । তবে ভয় পেলে বা বিরক্ত হলে সামনের শরীর খাড়া করে অনেক সময় শরীরকে অর্ধেকের বেশি দাঁড় করিয়ে দেয় এবং হিস হিস শব্দ করে সজোরে আঘাত করে । এদের বিষ নিউরোটক্সিন প্রকৃতির । উপযুক্ত চিকিৎসা না হলে পক্ষাঘাত , বমি , শ্বাসকষ্ট হয়ে রোগীর মৃত্যু ঘটে । সাধারণত এরা শুকনো জায়গা পছন্দ করে । ইঁদুরের গর্ত , ধানের গোলা , পুরোনো বাড়ি , ইটের পাঁজা , উইঢিবি ও পাকা ধানের জমিতে এদের দেখা যায় । এদের প্রিয় খাদ্য ব্যাং , ইঁদুর , গিরগিটি , টিকটিকি , কীটপতঙ্গ ইত্যাদি । অনেক সময় এরা হাঁস মুরগির ছানা ধরেও খায় । ভারতের সর্বত্র এই সাপ দেখা যায় ।
জলে ডোবা ও তার প্রাথমিক প্রতিবিধান
❐ সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর ঃ
১. জলে ডোবা মানুষ কখন অজ্ঞান হয়ে যায় ?
উঃ । মানুষ যখন জলে ডুবে যায় তখন তার নাক ও মুখ দুটোই স্কুলে ভরতি হয়ে যায় এবং শরীরে বাতাস ঢুকতে পারে না । তখন মানুষ অজ্ঞান হয়ে যয়।
২. যার শ্বাস বন্ধ হয়ে গেছে তার আয়ু কতক্ষণ ধরা হয় ?
উঃ । যার শ্বাস বন্ধ হয়ে গেছে তার আয়ু ধরা হয় ৩ মিনিট । এই অমূল্য ৩ মিনিট সময়কে বলা হয় জীবন মৃত্যুর দূরত্ব ।
৩. জলে ডোবা মানুষ কীভাবে শ্বাসকষ্টে ভোগে ?
উঃ । তার নাক - মুখ ততই জলে বোঝাই হতে থাকে , আর জল শ্বাসনালিতেও ঢুকে যায় । জলে ডোবা মানুষ দু - ভাবে শ্বাসকষ্টে ভোগে । ( i ) জল শ্বাসপথে চলে যাওয়ার জন্য শ্বাসকষ্টে ভোগে । ( ii ) গলার পেশির খিঁচুনিতে শ্বাসপথ সংকুচিত হয়ে শ্বাসকষ্টে ভোগে ।
৪. অক্সিজেনের অভাবে কীভাবে মানুষের মৃত্যু ঘটে ?
উঃ । ফুসফুসে গ্যাস বিনিময় বন্ধ হয়ে যাওয়ার দরুন মস্তিষ্কের কোশগুলোতে অক্সিজেন পৌঁছানো থেমে যায় , সৃষ্টি হয় । অক্সিজেন ক্ষুধা এর ফলে মানুষ জ্ঞান হারায় । ফলে অক্সিজেনের অভাবের কারণে থেমে যায় হৃৎপিণ্ডের কাজ এবং হূৎপিণ্ডের কাজ বন্ধ হলে মস্তিষ্কে অক্সিজেন পৌঁছানো সম্ভব হয় না । তাই ২-৩ মিনিট পর এমন অবস্থা চললে মস্তিষ্কে কোশগুলো অকেজো বা মৃত হয়ে যায় । আর কিছুক্ষণ পরে মস্তিষ্কের মৃত্যু হওয়ায় মানুষের মৃত্যু হয় ।
৫. অ্যাসফিকসিয়া কাকে বলে ?
উঃ । জলে ডুবে যাওয়া , শ্বাসরোধ হওয়া ও মাটির ধসে চাপা পড়া , ফুসফুসে অক্সিজেন ঢোকা সম্পূর্ণ বন্ধ হওয়ার অবস্থাকে বলে শ্বাসরোধ অবস্থা বা অ্যাসফিকসিয়া ।
৬. শিশু ও নাবালকদের জলে ডোবা থেকে কীভাবে বাঁচানো যায় ?
উঃ । শিশু ও নাবালকদের তাদের পেটের ওপর হাত রেখে মুখ হাত মাটির দিকে ঝুলিয়ে দিয়ে রাখতে হবে । যেহেতু বেশিরভাগ জল খাদ্যনালি দিয়ে পাকস্থলীতে পৌঁছোয় তাই তা বের করবার জন্য সময় নষ্ট না করাই ভালো । আর ফুসফুসের ভেতরে ঢোকা জল এইভাবে বার করাও কার্যত অসম্ভব । শ্বাসনালির সামনের ভাগের সামান্য জল খুব অল্প সময়েই বের হয়ে যায় ।
❐ রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর ঃ
১. ‘ জীবন সহায়ক কৌশল ’ কৃত্রিম উপায়ে হৃদযন্ত্রে , ফুসফুস ও মস্তিষ্কের ক্রিয়াশীলতা বজায় রাখা কীভাবে সম্ভব ?
উঃ । শ্বাসপ্রশ্বাস নেওয়ার পথ বন্ধ হলে ফুসফুসের মাধ্যমে হৃদযন্ত্রের অক্সিজেন পৌঁছোয় না । প্রাথমিকভাবে ফুসফুস বা হৃৎপিণ্ড বিকল হলে অক্সিজেন মেশানো বিশুদ্ধ রক্ত , আমাদের শরীরের কোথাও পৌঁছোতে পারে না । এছাড়াও বহুবিধ কারণে হৃৎপিণ্ডের কাজ বন্ধ হয়ে যেতে পারে । এই সংকটজনক মুহূর্তে অন্য সব অঙ্গপ্রত্যঙ্গ অনেকক্ষণ কাজ করার মতো অবস্থায় থাকলেও মোটামুটি তিন মিনিট পরেই মস্তিষ্কের স্নায়ুকোশগুলোর অপমৃত্যু ঘটে । এরপর কৃত্রিম শ্বাসযন্ত্রের সাহায্যে সেই মানুষটিকে জীবিত করবার সময় চেষ্টা করলেও মানুষটি খুব বেশি হলে , কার্যত জীবস্মৃত হয়ে থাকবে , কারণ মস্তিষ্ক কার্যক্ষমতাহীন হয়েই থাকে । তাই এই অমূল্য তিন মিনিট সময়কে বলা হয় জীবন ও মৃত্যুর দূরত্ব । এই তিন মিনিটের মধ্যে চিকিৎসক আসবার আগেই ; ওই মানুষটির আশেপাশে থাকা একজন / দুজন প্রশিক্ষিত মানুষ ‘ প্রাথমিক জীবন সহায়ক কৌশল ’ বা হৃদযন্ত্র ও ফুসফুসের ক্রিয়াশীলতা বজায় রেখে পদ্ধতিটির সঠিক প্রয়োগ করতে পারলে অকালমৃত্যু অনেকাংশে রোধ করা সম্ভব হবে ।
২. হৃৎপিণ্ডের কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়াকে কয়টি ভাগে ভাগ করা যায় ও কী কী ?
উঃ । হৃৎপিণ্ডের কাজ বন্ধ হওয়াকে দুই প্রকারে ভাগ করা হয় । যেমন ( i ) অ্যাসিস্টোল , যাতে সম্পূর্ণভাবে হৃৎপিণ্ডের সব বিভাগের কাজ বন্ধ হয়ে যায় । ( ii ) নিলয়গুলোর ফাইব্রিলেশন যাতে হৃৎপিণ্ডের মাংসপেশির বিশেষ বিশেষ তন্তু ইচ্ছামতো সংকুচিত হতে থাকে , অন্যগুলোর সঙ্গে কোনো সম্বন্ধ না রেখে । এই দুই প্রকারেই হৃৎপিণ্ড রক্ত পাম্প বন্ধ করে দেয় এবং রক্তবাহী শিরাগুলোর মধ্যে রক্তের স্রোত বন্ধ হয়ে যায় ।
No comments:
Post a Comment