স্বাস্থ্য ও শারীরশিক্ষা
চতুর্থ অধ্যায়
পঞ্চম অধ্যায় প্রশ্ন উত্তর পড়তে নিচের লিঙ্ক এ ক্লিক করো
❐ সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর :
১. ঘূর্ণিঝড়ের গতিবেগ কীরূপ হতে পারে ?
উঃ। ঘূর্ণিঝড় প্রতি ঘণ্টায় ৫০ থেকে ১৮০ কিমি বা তারও বেশি গতিবেগে এগিয়ে যেতে পারে।
২. ভারতের কোন উপকূলের জলোচ্ছ্বাস কম বিপদসংকুল ?
উঃ। ভারতের ঘূর্ণিঝড়জনিত জলোচ্ছ্বাস প্রবল উপকূলের মধ্যে পশ্চিম উপকূলের জলোচ্ছ্বাস পূর্ব উপকূলের জলোচ্ছ্বাসের তুলনায় কম বিপদসংকুল।
৩. জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাসে ভারতের কোথায় কোথায় ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয় ?
উঃ। জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাসে মৌসুমি ঝড় ভারতের অস্ত্র, ওড়িশা ও পশ্চিমবঙ্গের উপকূলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করে।
৪. অক্টোবর-ডিসেম্বর মাসে কোথায় কোথায় ঘূর্ণিঝড়ের সম্ভাবনা দেখা যায় ?
উঃ। অক্টোবর-ডিসেম্বর মাসে তামিলনাড়ু, অন্ধ্র, ওড়িশা, পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের উপকূলে ঘূর্ণিঝড়ের সম্ভাবনা দেখা যায়।
❐ রচনাধর্মী প্রশ্ন :
১. ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষতিকারক প্রভাবগুলি আলোচনা করো।
উঃ। (i) ঘরবাড়ি এবং পরিকাঠামোর ক্ষয়ক্ষতি : প্রবল ঝড়ে হালকা চালযুক্ত ঘরবাড়ি ও ভঙ্গুর পরিকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আবার ঝড়ের পরে ভারী বৃষ্টি, বন্যা এবং উপকূল অঞ্চলের ঢেউ-এ ক্ষতিগ্রস্ত হয় পার্শ্ববর্তী এলাকা।
(ii) প্রাণহানির ঘটনা ও জনস্বাস্থ্য : ঝড়ে ভেঙে-যাওয়া বাড়িঘর ও বস্তুর আঘাতে এবং বন্যার জলে ভেসে গিয়ে প্রচুর প্রাণহানি হয়। তাছাড়া বন্যাপ্লাবিত এলকায় কলেরা ও ডায়ারিয়ার মতো রোগ ছড়ায় যা মহামারির আকার নিতেপারে।
(iii) পানীয় জল সরবরাহ ও ভূগর্ভস্থ জল ও নলবাহিত জল উভয়ই বন্যার | জলে দূষিত হতে পারে। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় বিশুদ্ধ পানীয় জলের অভাব দেখা দেয়।
(iv) শস্যের ক্ষতি ও খাদ্য সরবরাহ : প্রবল ঝড় ও বৃষ্টির জল জমে মাঠের ফসল ও মজুত শস্যের ব্যাপক ক্ষতি করে। জলোচ্ছ্বাসের ফলে সমুদ্রের নোনা জল চাষের জমিতে ঢুকে গিয়ে জমি অনুর্বর করে তোলে। বন্যার জলে ডুবে যাওয়ায় খাদ্য সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়।
(v) যোগাযোগ ব্যবস্থার ক্ষতি : প্রবল ঝড় বিদ্যুতের ও যোগাযোগ ব্যবস্থার টাওয়ার, বিদ্যুৎ ও টেলিফোনের খুঁটি টেলিফোন লাইন, অ্যান্টেনা, স্যাটেলাইট ডিস এবং সম্প্রচার ব্যবস্থাকে একেবারে ভেঙে তছনছ করে দিতে পারে। রাস্তা ও ট্রেনের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হতে পারে। তাই ঘূর্ণিঝড় আক্রান্ত এলাকায়। ত্রাণ পৌঁছোতে অসুবিধা হয়।
২. ঘূর্ণিঝড়ের বিপর্যয় কমানোর পদক্ষেপগুলি কী কী ?
উঃ। (i) ঘূর্ণিঝড়ের তীব্রতা কমাতে দৃঢ়মূল ঘনসন্নিবিষ্ট বৃক্ষরোপণ ভীষণ জরুরি। উপকূল অঞ্চলে গাছ লাগানো (বিজ্ঞানভিত্তিক উপায়ে উপকূলরেখা বরাবর ছোটো থেকে বড়ো এই সারিতে গাছ লাগিয়ে সবুজায়ন ঘটানো)-র মাধ্যমে বিপর্যয়ের মাত্রা বা প্রভাব কমানো যেতে পারে।
(ii) বছরের কোন সময়ে কোন কোন অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড়প্রবণ এলাকার মানচিত্র এবং অতীতের আবহাওয়ার নথি, বিগত বছরগুলোতে বাতাসের গতিবেগের পরিসংখ্যান ইত্যাদি ইত্যাদি তথ্যের দ্বারা ঘূর্ণিঝড়ের ধরন, ক্ষয়ক্ষতির তীব্রতা ও ব্যাপকতা সম্পর্কে আগাম জানা যায়। এছাড়া আবহাওয়া সংক্রান্ত নথি, যাতে হাওয়ার গতিবেগ ও দিকনির্দেশ করা থাকে তা থেকে কোনো অঞ্চলে ঝড়ের সম্ভাবনা বোঝা যায়। ফলে অনেকদিন আগে থেকেইক ঘূর্ণিঝড় আসার আগাম পূর্বাভাস আবহাওয়া দফতর দিয়ে থাকে; সেইমতো সতর্কতা গ্রহণ করলে ক্ষয়ক্ষতি, জীবনহানির ঘটনা কম ঘটে।
(iii) জমির ব্যবহার নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট নীতি থাকা দরকার এবং বিল্ডিং কোড যাতে ঠিকঠাক মানা হয় তা নিশ্চিত করা দরকার। বিপদসংকুল এলাকাগুলোতে কেবলমাত্র পার্ক, চারণভূমি, খেলার মাঠ প্রভৃতিকে রাখা উচিত। নির্মাণ কাজের জন্য স্থাপত্যবিদ্যার সঠিক পরামর্শ নেওয়া উচিত।
৩. ভারতের বিভিন্ন ঋতুতে কোন্ কোন্ অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড় দেখা যায় ?
উঃ। বছরের বিভিন্ন সময়ে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানে। এই অঞ্চলগুলি হল— এই অঞ্চলগুলি হল (i) জানুয়ারি থেকে মার্চ মাসে মাঝে মধ্যে তামিলনাড়ু ও শ্রীলঙ্কার উপকূলে ঘূর্ণিঝড় দেখা যায়।
(ii) এপ্রিল ও মে মাসে গ্রীষ্মঋতুতে আরাকান উপকূল, অস্ত্র, ওড়িশা, পশ্চিমবঙ্গ প্রভৃতি অঞ্চলে। ঘূর্ণিঝড় আছড়ে পড়ে।
(iii) জুন-সেপ্টেম্বর মাসে বর্ষা ঋতুতে অন্ধ্র, ওড়িশা, পশ্চিমবঙ্গ ও পূর্ব মধ্য আরব সাগরে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয়।
(iv) অক্টোবর মাসে শীতঋতুতে তাড়িলনাহু, অন্ধ্র, ওড়িশা, পশ্চিমবঙ্গ, বাংলাদেশ উপকূলে ঘূর্ণিঝড়ের সম্ভাবনা দেখা যায়।
৪. ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব বিদ্যালয়ে কীভাবে ঘটে আলোচনা করো।
উঃ। প্রাকৃতিক দুর্যোগ স্বাভাবিক, প্রকৃতির নিয়মে তা হয়, হবে। প্রতিবার একটি দুর্যোগ বিপর্যয়ে ঘটায়, বহু শিশু তারপর আর বিদ্যালয়ে ফিরে আসে না। এইসব বিপর্যয়কে আমরা মোকাবিলা করতে পারি আমাদের জ্ঞান ও বুদ্ধির সঠিক প্রয়োগে, পরিকল্পনার মাধ্যমে, সঠিক প্রস্তুতির ব্যবস্থা নিয়ে।
(i) বিপর্যয়ের সরাসরি প্রভাব পড়ে যখন ছাত্র, শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মীরা একটি অ-সুরক্ষিত বিদ্যালয়ের মধ্যে থেকে. আঘাতপ্রাপ্ত হয়। এই বিদ্যালয়টি নিশ্চয়ই বিপজ্জনকভাবেই তৈরি হয়েছিল অথবা মোকাবিলা করার মতো যথেষ্ট ব্যবস্থা নিয়ে এটাকে তৈরি করা হয়নি।
(ii) ক্ষতিগ্রস্ত একটি বিদ্যালয় ছাত্রদের শিক্ষার অধিকারকে সংকুচিত করে। সময় নষ্ট হলে শিক্ষার গুণগত মান পড়ে যায়। যদি বিদ্যালয়ের চালিয়ে যাওয়ার মতো বিকল্প ব্যবস্থা না থাকে, তবে নিরস্তর শিক্ষায় ছেদ পড়ে, ফলে অনেক ছাত্রছাত্রীই পরবর্তীকালে আর পড়া অনুসরণ করতে পারে না ও শেষ পর্যন্ত শিক্ষার আঙিনা থেকে হারিয়ে যায়।
(iii) একটি ক্ষতিগ্রস্ত বিদ্যালয়কে সারিয়ে তুলতে যে খরচ হয় প্রথম থেকেই একটি সুরক্ষিত বিদ্যালয় তৈরি করার জন্য প্রয়োজনীয় খরচের চেয়ে তা অনেক বেশি। অভিভাবকদের যে আর্থিক ক্ষতি হয়, তাতে বাড়ির ছোটোদের শিক্ষার পিছনে খরচ করতে তারা অপরাগ হয়ে পড়ে।
(iv) বিপর্যয়ের ফলস্বরূপ ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে, তা তাদের মানসিক অবস্থার উপর প্রভাব ফেলে। তাদের ভবিষ্যতের শিক্ষা অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। কিন্তু সঠিকভাবে মোকাবিলা করার মতো ব্যবস্থা আগে থেকে নিলে, ছাত্রছাত্রীরা মোকাবিলা করার আনন্দ উপলব্ধি করে এবং ভবিষ্যতের জন্য মানসিক সবলতা লাভ করে।
৫. ঘূর্ণিঝড়ের মোকাবিলায় ছাত্র-ছাত্রী ও জনগোষ্ঠীর ভূমিকা লেখো।
উঃ। গ্রামের যুবগোষ্ঠী, শিক্ষক, ছাত্রছাত্রী ও জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে মোকাবিলার জন্য গোষ্ঠী গঠন করতে হয়। প্রতিটি এলাকায় অধিবাসীদের সুবিধা অনুযায়ী পাঁচ থেকে দশজন সক্রিয় সদস্য নিয়ে এক-একটি সক্রিয় গোষ্ঠী গঠন করতে হবে। ছাত্রছাত্রীদের সামর্থ্য অনুযায়ী এই জনগোষ্ঠীতে তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য বন্টন করতে হবে।
কোনো একটি এলাকার বিপর্যয়ের পূর্ববর্তী সময়, বিপর্যয়ের সময় ও বিপর্যয়ের পরবর্তী সময়ের জন্য সুসংহত দুর্যোগ নিয়ন্ত্রণ পরিকল্পনা প্রস্তুত করার সময় মোটামুটি ৯টি সক্রিয় গোষ্ঠী গঠন করতে হবে। গোষ্ঠীগুলো হলো—
(i) দুর্যোগের সতর্কীকরণ গোষ্ঠী, (ii) বিপর্যস্ত এলাকা থেকে সরিয়ে আনা ও উদ্ধারকার্য সম্পাদন গোষ্ঠী, (iii) প্রাথমিক শুশ্ৰুষা ও চিকিৎসা গোষ্ঠী, (iv) জল ও শৌচাগার গোষ্ঠী, (v) মৃতদেহ সৎকার গোষ্ঠী, (vi) পরামর্শদাতা গোষ্ঠী, (vii) ক্ষয়ক্ষতি মূল্যায়ন গোষ্ঠী, (viii) ত্রাণ ও সমন্বয় গোষ্ঠী, (ix) আশ্রয়স্থল ব্যবস্থাপনা গোষ্ঠী।
No comments:
Post a Comment