পঞ্চম শ্রেণীর বাংলা মুক্তির মন্দির সোপানতলে প্রশ্ন উত্তর পড়তে নিচের লিংকে ক্লিক করো
পঞ্চম শ্রেণীর বাংলা সাজেশন |পঞ্চম শ্রেণীর বাংলা মহাত্মা গান্ধীর কথা প্রশ্ন উত্তর | ক্লাস পঞ্চম বাংলা মহাত্মা গান্ধীর কথাগুরুত্ব পূর্ণ প্রশ্ন উত্তর, সহায়িকা | Class 5 Bangla Mahatma Gandhir Katha Important Questions And Answers | পঞ্চম শ্রেণীর বাংলা গুরুত্ব পূর্ণ প্রশ্ন উত্তর | #Class5 Bangla Mahatma Gandhir Katha Questions And Answers #Class 5th Bangla Questions And Answers
⬛ লেখক পরিচিতি:
প্রখ্যাত গুজরাটি সাহিত্যিক এবং স্বাধীনতা সংগ্রামী উমাশংকর যোশি গুজরাতের বমনা নামক একটি ছোটো গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। নিজের গ্রামে প্রাথমিক শিক্ষা শুরু করে। তিনি আমেদাবাদের কলেজে ভর্তি হন। তিনি মুম্বই এমফিলস্টোন কলেজ থেকে স্নাতক হন এবং তিনি মুম্বই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গুজরাটি ও সংস্কৃত ভাষায় প্রথম বিভাগে এম. এ. পাশ করেন। তিনি শিক্ষারত অবস্থায় গান্ধিজির নেতৃত্বে দেশের সংগ্রামে যোগ দেন। তিনি বেশ কয়েকবার কারাবরণও করেন। ১৯৩৭ সালে শিক্ষকতা শুরু করেন মুম্বইতে এবং গুজরাজ বিদ্যাসভার অধ্যাপক হন উমাশংকর যোশি। তিনি গুজরাট বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকও ছিলেন। লেখক তাঁর সাহিত্য রচনার অনুপ্রেরণা পেয়েছিলেন তাঁর পাহাড়ি গ্রামজীবন ও সেখানকার মেলা ও উৎসব থেকে। তিনি নিশীথ, গঙ্গোত্রী, মহাপ্রস্থান প্রভৃতি বহু গ্রন্থ রচনা করেন। তিনি ১৯৬৮ সালে তিনি জ্ঞানপীঠ পুরস্কারে ভূষিত হন। এছাড়াও তিনি সাহিত্য অকাদেমী সহ বহু পুরস্কারে সম্মানিত হন। তিনি গুজরাট বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং রাজ্যসভার সদস্যও মনোনীত হয়েছিলেন। ১৯৮৮ সালে লেখকের জীবনাবসান হয়। পাঠটির তরজমা করেছেন ক্ষিতীশ রায়।
⬛ সারসংক্ষেপ :
ছোটো মোহন ছিল ভারী লাজুক স্বভাবের। স্কুলে ছুটি হলেই বইপত্র গুটিয়ে নিয়ে মোহন ছুটত বাড়ির দিকে। সারাক্ষণ তার ভয় যে রাস্তায় পাকড়াও করে ছেলেরা ওকে নিয়ে ঠাট্টাতামাশা করবে। একদিন স্কুলে এলেন মিস্টর গাইলস নামের স্কুল ইনস্পেক্টর। তিনি মোহনদের ক্লাসে পাঁচটি ইংরেজি শব্দ লিখতে দিলেন। এক 'কেল' কথাটি ছাড়া মোহন সব ঠিকঠাক লিখল। মাস্টার সেটা লক্ষ করে মোহনকে ইশারা করলেন পাশের ছেলের দেখে কথাটা টুকে নিতে। মোহন লিখল না, ক্লাসে সবাই পাঁচটা ঠিক লিখেছে শুধু সেই চারটি কথা লিখেছে। ইনস্পেক্টর চলে যেতে মাস্টার চটে অস্থির। রেগে বললেন – তোর দেখছি নকল করাও আসে না! সবাই হাসিতে ফেটে পড়লেও মোহনের দুঃখ হল না, কারণ সে বুঝেছিল সে ঠিক কাজই করেছে। বরং মাস্টারমশাই ওকে নকল করতে বলায় সে কিছুটা দুঃখ পেয়েছিল।
দক্ষিণ আফ্রিকার ফিনিক্সে গান্ধিজি একটি আশ্রম স্থাপন করেছিলেন এবং আশ্রমের ছেলেমেয়েদের জন্য একটা স্কুলও ছিল। সেখানে গান্ধিজি তাঁর নিজস্ব পদ্ধতিতে ছোটোদের শিক্ষা দিতেন। সেই স্কুলে তিনি ছোটোদের এমনভাবে শেখাতেন যাতে তাদের জ্ঞান বাড়ে, আচার ব্যবহার উন্নত হয়। তিনি পরীক্ষায় নম্বরও দিতেন ভিন্নরূপে, সবাইকে একই প্রশ্ন করতেন কিন্তু যে কম নম্বর পেত তার প্রশংসা করতেন আর যে বেশি পেত তাকে ধমকাতেন। একদিন একটা ছেলেকে তিনি কারণটা বললেন— তিনি বুদ্ধিমান দেখে নম্বর দেন না, তিনি দেখতে চান কে কতটা এগিয়ে যেতে পেরেছে, কে কতটা শিখেছে। অল্পবুদ্ধি ছেলেকে হারিয়ে বুদ্ধিমান ছেলে যদি বড়াই করে আর অহংকার করে ভাবে যে সেই সেরা তার তখন বুদ্ধি শুকিয়ে যায়, সে আর খাটাখাটুনি করে না। কিন্তু যে কাজে লেগে থাকে, পুরো মেহনত করে সেই এগিয়ে যেতে পারে, তাকেই তিনি বেশি নম্বর দেন।
অনেক ছোটো ছেলেমেয়ে বাপুর কাছে আসত। বাপুর পোষাক দেখে একটি ছোটো ছেলে একদিন ভাবল – বাপু এতো মস্ত মানুষ অথচ গায়ে জামা দেন না। সে প্রশ্ন করল, বাপুজি আপনি জামা পরেন না কেন? বাপু হেসে বললেন – আমি খুবই গরীব, জামা কেনার পয়সা নেই রে বেটা। ছেলেটি বলে উঠল আমার মা সেলাই করেন। মাকে বলে আমি আপনার জন্য জামা বানিয়ে আনব। আপনি পরবেন তো, বাপু? বাপু প্রশ্ন করলেন তোমার মা কটা জামা সেলাই করে দেবেন? ছেলেটি বলল আপনার কটা চাই বলুন? বাপু কিছুক্ষণ চিন্তার পর বললেন – আমি তো একা মানুষ নই। আমার চল্লিশ কোটি ভাইবোন রয়েছে। তাদের একজনেরও গায়ে যতদিন না জামা ওঠে, ততদিন আমি একা কীভাবে জামা পরব? ছেলেটি বুঝল বাপু ঠিকই বলেছেন, উনি তো সবার বাপু, সকলের চেয়ে বড়ো। সারা দেশ বাপুর পরিবার, প্রত্যেক দেশবাসী তার বন্ধু।
চরকা সংঘের অর্থ সংগ্রহ করতে তখন গান্ধিজি গ্রামে শহরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। সেবার গেছেন ওড়িশায়, এক সভায় বক্তৃতার পর এক গরীব থুরথুরে বুড়ি মঞ্চের দিকে এগিয়ে গেল। তার মাথাভরা শনের মতো চুল, কোমর ধনুকের মতো বেঁকে গেছে। সে বাপুর সামনে হাজির হয়ে বাপুর পায়ের ধুলো নিল আর খুঁট থেকে একটি আধলা পয়সা বের করে গান্ধিজির পায়ের কাছে রেখে চলে গেল। গান্ধিজি আধলা পয়সাটা নিজের কাছে রেখে দিলেন। শেঠ যমুনালাল বাজাজ চরকা সংঘের সব হিসাব রাখতেন। তিনি তহবিলে জমা করার জন্য পয়সাটি চাইলেন, কিন্তু বাপু দিলেন না। যমুনালালজি হেসে বললেন—আমি হাজার হাজার টাকার হিসাব রাখি আর আপনি এই আধলা পয়সাটা আমাকে ভরসা করে দিতে পারছেন না। গান্ধিজি বললেন, এই পয়সাটি হাজার হাজার টাকার তুলনায় মূল্যবান। কারো লাখ দু-লাখ টাকা থাকলে এক দুহাজার দেয়, কিন্তু এই পয়সাটি বুড়ির সর্বস্ব সম্বল। সে তার যথাসর্বস্ব দান করে গেল। সে কত উদার! কত মহান তার ত্যাগ! এই কারণে এই পয়সাটির মূল্য আমার কাছে কোটি টাকার চেয়েও বেশি।
⬛ অতি-সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর; প্রতিটা প্রশ্নের মান -1
১. মোহনের স্বভাব কেমন ছিল?
উঃ। মোহনের স্বভাব ছিল লাজুক প্রকৃতির।
২. স্কুল নাম্পকটাবর নাম কী ছিল ?
উঃ ।তার গাইল্স।
৩. মোহন ক্লাসে কটি কথা লিখেছিল?
উঃ। মোহন ক্লাসে চারটি কথা লিখেছিল।
৪. গন্ধিজি দক্ষিণ আফ্রিকায় কোথায়, কী স্থাপন করেছিলেন?
উঃ । গান্ধিজি দক্ষিণ আফ্রিকায় ফিনিক্স নামক একটি জায়গায় তাঁর আশ্রম স্থাপন করেছিলেন।.
৫. কাদের ওপর গান্ধিজি তীক্ষ্ণ নজর রাখতেন?
উঃ। যারা পরীক্ষায় বেশি নম্বর পেত তাদের ওপর গান্ধিজি তীব্র নজর রাখতেন।
৬. ছোটো ছেলেটি গান্ধিজিকে কী দিতে চেয়েছিল?
উঃ। ছোটো ছেলেটি গান্ধিজিকে তার মায়ের সেলাই করে দেওয়া জামা দিতে চেয়েছিল।
৭. গান্ধিজি কী কারণে শহরে গ্রামে ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন?
উঃ। চরকা সংঘের অর্থ সংগ্রহের কাজে গান্ধিজি শহরে গ্রামে ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন।
৮. কে চরকা সংঘের সমস্ত হিসাব রাখতেন?
উঃ । শেঠ যমুনালাল বাজাজ চরকা সংঘের সমস্ত হিসাব রাখতেন।
৯. স্বেচ্ছাসেবকরা কাকে তেড়ে গিয়েছিল ?
উঃ। গরীব এক থুরথুরে বুড়ির দিকে স্বেচ্ছাসেবকরা তেড়ে গিয়েছিল।
১০. গান্ধিজিকে সবাই কী বলে সম্বোধন করতেন?
উঃ। সবাই গান্ধিজিকে বাপু বা বাপুজি বলে সম্বোধন করতেন।
⬛ সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর :প্রতিটা প্রশ্নের মান -2/3
১. ‘এই ঘটনা নিয়ে মোহনের মনে কোনো দুঃখ হল না'— কোন্ ঘটনা নিয়ে কেন মোহনের দুঃখ হয়নি?
উঃ। মোহনের স্কুলের ইনস্পেক্টর ক্লাসে পাঁচটি বানান লিখতে দেন। মোহন চারটি লিখতে পারে, তা দেখে ক্লাসের মাস্টার ইশারায় মোহনকে পাশের ছেলের সেলেট দেখে কথাটা টুকে নিতে বলেন। মোহন তা না করে চুপচাপ বসে থাকে। এই ঘটনায় মাস্টার রাগ করে মোহনকে বকেন এবং ক্লাসের সবাই হাসিতে ফেটে পড়ে। এই ঘটনায় মোহনের দুঃখ হয় নি। এই ঘটনায় মোহনের দুঃখ না হওয়ার কারণ সে বুঝেছিল যে সে ঠিক কাজই করেছে। অন্যের দেখে টুকে লেখা উচিত কাজ নয়।
২. 'এই কথাটুকু তিনি ছেলেদের মনে গেঁথে দিতেন'–কে কোন্ কথাটি ছেলেদের মনে গেঁথে দিতেন?
উঃ। মহাত্মা গান্ধি তাঁর আশ্রমের স্কুলের ছেলেদের মধ্যে কথাটি গেঁথে দিতেন। গান্ধিজি তাঁর আশ্রমের স্কুলে যেসব ছাত্ররা বেশি নম্বর পেত তাদের দিকে তীক্ষ্ণ নজর রাখতেন। তারা বেশি বেশি শিখছে কিনা তিনি খেয়াল রাখতেন। তিনি ছেলেদের মনে একটা কথা গেঁথে দিতেন যে, বেশি নম্বর পেয়ে যদি কোনো ছাত্রের দেমাক বাড়ে তাতে তার মঙ্গল হয় না। শুধু নম্বর পেলেই হবে না মেহনত করে এগিয়ে যাওয়ার শিক্ষা তিনি ছাত্রদের দিতেন।
৩. 'জামা কিনি এমন পয়সা নেই'—কথাটি কে কাকে বলেছিলেন? কেন এই কথা তিনি বলছিলেন?
উঃ। কথাটি গান্ধিজি একটি ছোটো ছেলেকে বলেছিলেন। বাপু অর্থাৎ গান্ধিজির কাছে অনেক ছোটো ছেলেমেয়ে আসত। গান্ধিজির বেশভূষা দেখে একটি ছোটো ছেলের খুব দুঃখ হয়। সে ভাবে গান্ধিজি এত মস্ত মানুষ তবু তাঁর গায়ে একটা জামাও নেই। সে বাপুকে প্রশ্ন করে আপনি জামা পরেন না কেন? উত্তরে আদর করে গান্ধিজি বলেন আমি খুব গরিব। জামা কিনি এমন পয়সা আমার নেই।
৪. গান্ধিজির সভায় আসা বুড়িটির চেহারা কেমন ছিল? সে কী করেছিল?
উঃ। গান্ধিজির সভায় এসেছিল এক নিতান্ত গরীব থুরথুরে বুড়ি। তার চুল ছিল শনের নুড়োর মতো। তার কোমর ধনুকের মতো বেঁকে গিয়েছিল। পরনে ছিল ছেঁড়াফাটা ময়লা কানি। স্বেচ্ছাসেবকদের সাথে ঝগড়া করে বুড়িটি গান্ধিজির সামনে হাজির হয়েছিল। 'দর্শন করতে আসা'—এই বলে সে বাপুর পায়ের ধুলো নিয়েছিল এবং খুঁট থেকে একটা আধলা পয়সা বের করে তা গান্ধিজির পায়ের কাছে রেখে দিয়ে চলে গিয়েছিল।
৫. গান্ধিজি তাঁর দক্ষিণ আফ্রিকার আশ্রমে কীভাবে শিক্ষা দিতে চেয়েছিলেন?
উঃ। গান্ধিজি তাঁর দক্ষিণ আফ্রিকার আশ্রমে ছেলেমেয়েদের স্কুলে নিজস্ব পদ্ধতিতে ছোটোদের শিক্ষা দিতে চেয়েছিলেন। অন্য স্কুলের পরীক্ষায় যেভাবে নম্বর দেওয়া হতো তা তাঁর মনের মতন ছিলনা। তিনি চাইতেন ছোটোদের সত্যিকারের শিক্ষা দিতে, যে শিক্ষা থেকে তাদের জ্ঞান বৃদ্ধি হবে আর তাদের আচার ব্যবহার আরো উন্নত হবে।
⬛ রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর :প্রতিটা প্রশ্নের মান -2/3
১. ‘তোর দেখছি নকল করাও আসে না'। কে এই কথাটি কাকে বলেছিলেন? কোন্ ঘটনায় তিনি এই কথাটি বলেছিলেন ?
উঃ। এই কথাটি মোহনের স্কুলের শিক্ষক তাঁর ছাত্র মোহন অর্থাৎ গান্ধিজিকে বলেছিলেন। একদিন মোহনের স্কুলে মিস্টার গাইস নামে একজন স্কুল ইনস্পেক্টর এসেছিলেন। তিনি মোহনদের ক্লাসে পাঁচটি ইংরাজি কথা লিখতে দিলেন। শুধুমাত্র 'কেল' কথাটি ছাড়া বাকি চারটি কথা মোহন ঠিকঠাক লিখে ফেলল। ক্লাসের শিক্ষক লক্ষ্য করলেন মোহন 'কেল' কথাটি লিখতে পারেনি। তিনি ইন্সপেক্টরের নজর এড়িয়ে মোহনকে ইশারা করলেন সে যাতে পাশের ছেলের সেলেট দেখে কথাটি টুকে নেয়। কিন্তু মোহন তা না লিখে চুপচাপ বসে রইল। ক্লাসের সব ছেলেই পাঁচটি কথা নির্ভুল লিখেছিল। এরপর ইনস্পেক্টর চলে যেতে শিক্ষক মহাশয় মোহনের ওপর প্রচন্ড। রেগে গেলেন। তিনি বললেন আমি তো তোকে চোখের ইশারায় বললাম পাশের ছেলের দেখে কথাটা লিখে নিতে। তোর দেখছি নকল করাও আসেনা। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষক মহাশয় মোহনকে উপরের কথাটি বলেছিলেন।
২. ‘তাঁর এই নম্বর দেবার ধরণটা ছেলেরা ঠিক বুঝে উঠতে পারতনা'— তিনি কোন পদ্ধতিতে কেন এইভাবে নম্বর দিতেন ?
উঃ। গান্ধিজি দক্ষিণ আফ্রিকার ফিনিক্স নামে এক জায়গায় একটি আশ্রম ও তার সাথে ছোটো ছেলেমেয়েদের জন্য একটি স্কুল খুলেছিলেন। সেখানে অন্য স্কুলের পরীক্ষায় যেভাবে নম্বর দেওয়া হতো তা গান্ধিজির মনঃপুত ছিল না। তাঁর নম্বর দেবার পদ্ধতি ছিল ভিন্ন ধরনের। একই শ্রেণির সকল ছেলেমেয়েকে তিনি একই রকমের প্রশ্ন করতেন। কিন্তু যে ছাত্র কম নম্বর পেত তিনি তার প্রশংসা করতেন এবং যে বেশি নম্বর পেতেন তাকে তিনি ধমকাতেন। গান্ধিজি কেন এইভাবে নম্বর দেন তা ছাত্রছাত্রীরা ঠিক বুঝে উঠতে পারত না। একদিন একটি ছেলে প্রশ্ন করল যে, ঠিকঠাক উত্তর লিখেও কেন সে কম নম্বর পেল। গান্ধিজি এর কারণ বুঝিয়ে দিয়ে বললেন, তিনি কে বেশি বুদ্ধিমান তা বলতে চান না এবং সেভাবে নম্বরও দেন না। তিনি দেখতে চান যে, আগেরবার যে যেখানে ছিল সেখান থেকে কে কতটা এগিয়ে যেতে পেরেছে, কে কতটা শিখতে পেরেছে। তিনি মনে করতেন যে কোনো বুদ্ধিমান ছেলে যদি কোনো অল্পবুদ্ধির ছেলেকে পরাস্ত করে বড়াই করে আর ভাবে যে আর খাটাখাটনি করে পড়াশোনা করার দরকার নেই, তার সাথে কেউ পাল্লা দিতে পারবে না, তাহলে সে ভুল করে, এতে তার বুদ্ধি শুকিয়ে যায়। তাই যে মেহনত করে কাজে লেগে থাকে সেই একমাত্র এগিয়ে যেতে পারে। তাই তাকেই গান্ধিজি বেশি করে নম্বর দিতেন।
৩. 'কিন্তু বাপু সেটা দিতে রাজি হলেন না।' বাপু কী দিতে রাজি হলেন না? সেটি তিনি কীভাবে পেলেন? কেন তিনি তা দিতে রাজি হননি সেই বিষয়ে গান্ধিজির ভাবনা কী ছিল ?
উঃ। একটি আধলা পয়সা বাপু দিতে রাজি হলেন না। চরকা সংঘের অর্থ সংগ্রহের জন্য একবার গান্ধিজি ওড়িশায় সফর করছিলেন। সেখানে এক সভায় গান্ধিজির বক্তৃতা শেষ হবার পর গরীব এক থুরথুরে বুড়ি শ্রোতাদের ভিতর থেকে উঠে মঞ্চের দিকে এগিয়ে গেল। স্বেচ্ছাসেবকেরা হৈ হৈ করে বুড়িতে বাধা দিতে এগিয়ে এল পাছে সে গান্ধিজির দিকে ধাওয়া করে। কিন্তু সে বাধা না মেনে বাপুর সামনে হাজির হল। আপনাকে দর্শন করতে এসেছি এই বলে সে বাপুর পদধূলি নিল এবং খুট থেকে একটি আধলা পয়সা বের করে বাপুর পায়ের কাছে রেখে দিয়ে চলে গেল। পয়সাটা তুলে নিয়ে গান্ধিজি নিজের কাছে রেখে দিলেন। এই পয়সাটি চরকা সংঘের তহবিলে জমা করার জন্য শেঠ যমুনালাল বাজাজ গান্ধিজির থেকে চাইলেন। কিন্তু গান্ধিজি সেটা দিতে রাজি হলেন না। শেঠ যমুনালাল বাজাজ চরকা সংঘের সমস্ত হিসাব কেতাব রাখতেন। তিনি গান্ধিজির তহবিলে জমা করার জন্য আধলা পয়সাটা চাইলেন কিন্তু শাদিজ সেটি দিতে চাইলেন না। এই ঘটনায় যমুনালালজি হেসে গান্ধিজিকে বললেন— চরকা সংঘের জন্য আমি হাজার হাজার টাকার চেক নিয়ে থাকি আর এই আধলা পয়সাটা ভরসা করে বাপু তাকে দিতে পারছেন না। এই বিষয়ে উত্তর দিতে গিয়ে গান্ধিজি তাঁর ভাবনা ব্যক্ত করে বললেন যে, এই আধলা পয়সাটি হাজার হাজার টাকার তুলনায় অনেক বেশি মূল্যবান। কারো লাখ দু-লাখ টাকা থাকলে সে তা থেকে দু-এক হাজার দেয়, এটা এমন আর বেশি কী! কিন্তু এই বুড়ির কাছে এই আধলাটি ছিল যথাসর্বস্ব সম্বল। সে তার সর্বস্ব দান করে গেল। তার কতো বড়ো উদার হৃদয়, মহান তার ত্যাগ। এই কারণেই এই আধলা পয়সার মূল্য গান্ধিজির কাছে কোটি কোটি টাকার চেয়েও বেশি।
৪. ‘শিশু-ভোলানাথ এতক্ষণে বুঝতে পারল সারা দেশ হল বাপুর পরিবার'—শিশুটি কোন্ ঘটনায় এই ব্যাপারটি উপলব্ধি করতে পেরেছিল তা বিবৃত করো।
উঃ। প্রতিদিনই গান্ধিজির কাছে অনেক ছোটো ছেলেমেয়ে আসত। এদের মধ্যে একটি ছোটো ছেলের বাপুর বেশভূষা দেখে ভারী দুঃখ হল। সে ভাবল এত মহৎ মানুষ গান্ধিজি অথচ তার গায়ে একটা জামা নেই। সে জিজ্ঞাসা করে বসল, আপনি জামা পরেন না কেন বাপুজি? সস্নেহে গান্ধিজি ছেলেটাকে উত্তর দিলেন,— আমি বড়ো গরিব। জামা কিনি এমন পয়সা নেই। ছেলেটির মনে বেদনা অনুভূত হল, সে বলে উঠল তার মা সেলাই জানেন, তার পরনে থাকা সব জামাকাপড় তার মা তৈরি করে দিয়েছেন। সে আরো বলল মাকে বলে আমি আপনার জন্য জামা সেলাই করিয়ে দেবো। আপনি পরবেন তো বাপু? বাপু জিজ্ঞাসা করলেন তোমার মা কটা জামা সেলাই করে দেবেন? ছেলেটি বলল যে ক-টা আপনার চাই মা সেলাই করে দেবেন। কিছুক্ষণ চিন্তা করে গান্ধিজি বললেন –বাবা, আমি তো একা নই। কী করে একা একা জামা পরি? আমার চল্লিশ কোটি ভাইবোন আছে। তাদের একজনেরও গায়ে যতদিন না জামা ওঠে, আমি কী করে জামা পরি? তোমার মা কি আমাদের সকলের জন্য জামা সেলাই করে দিতে পারবেন?অনেক চিন্তা করে ছেলেটি এবার বুঝতে পারল গান্ধিজি তো ঠিকই বলেছেন। চল্লিশ কোটি ভাই বোন, অর্থাৎ সারা দেশ হলো বাপুর পরিবার। উনি তো সকলের চেয়ে বড়ো, সবার বাপু। প্রত্যেক দেশবাসী তাঁর বন্ধু, সাথী। যতদিন না এরা সবাই জামা পরতে পারছে ততদিন উনি নিজে কী করে পরবেন?
No comments:
Post a Comment