আবহমান কবিতার প্রশ্ন উত্তর নবম শ্রেণি বাংলা | নবম শ্রেনীর বাংলা প্রশ্ন উত্তর | Class 9th Bangla Abohoman Question and Answers (MCQ, SAQ, DAQ) - Psycho Principal

Fresh Topics

Monday, 14 April 2025

আবহমান কবিতার প্রশ্ন উত্তর নবম শ্রেণি বাংলা | নবম শ্রেনীর বাংলা প্রশ্ন উত্তর | Class 9th Bangla Abohoman Question and Answers (MCQ, SAQ, DAQ)

 

আবহমান কবিতার 
প্রশ্ন উত্তর 




👉(চিঠি কবিতার প্রশ্ন উত্তর )


❐ কমবেশি ১৫টি শব্দের মধ্যে উত্তর দাও :


1. 'আবহমান' কবিতাটি কার লেখা?

উত্তরঃ 'আবহমান' কবিতাটির কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী।


2. 'আবহমান' কবিতাটি কবির কোন্ কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া?

উত্তরঃ 'আবহমান' কবিতাটি কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর 'অন্ধকার বারান্দা' নামক কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া।


3. 'আবহমান' কথাটির অর্থ কী?

উত্তরঃ 'আবহমান শব্দটির অর্থ হল চিরকালীন।


4.  'যা গিয়ে ওই উঠানে তোর দাঁড়া'-কবি উঠানে গিয়ে দাঁড়াতে বলেছেন কেন?

উত্তরঃ 'আবহমান' কবিতায় কবি ফেলে আসা শৈশব-জীবনের কথা মনে করিয়ে দেবার জন্যই উঠোনে গিয়ে দাঁড়াতে বলেছেন।


5.  কবি কোথায় দাঁড়াতে বলেছেন?

উত্তরঃ 'আবহমান' কবিতায় কবি, উঠোনে লাউমাচাটির পাশে গিয়ে দাঁড়াতে বলেছেন।


6. 'ছোট্ট একটা ফুল দুলছে'-কীসের 'ফুল' দুলছে?

উত্তরঃ বর্তমানের প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে কবি বারে বারে ফিরে আসা শৈশবের স্মৃতিগুলিকেই ফুল দোলার সাথে তুলনা করেছেন।


7. কবি উঠোনের লাউমাচাটার পাশে গিয়ে দাঁড়াতে বলেছেন কেন?

উত্তরঃ 'আবহমান' কবিতায় কবি ফেলে-আসা গ্রাম-জীবনে ফিরে যাওয়ার উদ্দেশ্যে স্মৃতিবিজড়িত উঠোনের লাউমাচার পাশে গিয়ে দাঁড়াতে বলেছেন।


8. 'যা গিয়ে ওই উঠানে তোর দাঁড়া'-এখানে 'উঠান' কীসের প্রতীক বলে তোমার মনে হয়?

উত্তরঃ 'আবহমান' কবিতায় 'উঠান' হল জন্মস্থান বা মাতৃভূমিস্বরূপ স্বাধীন উন্মুক্ত পরিসরের প্রতীক।


9. 'যা গিয়ে ওই উঠানে তোর দাঁড়া'-'তোর' বলতে কাকে সম্বোধন করা হয়েছে?

উত্তরঃ 'আবহমান' কবিতার কবি এখানে 'তোর' বলতে স্বদেশহারা, গ্রামছাড়া ব্যক্তিমনকে সম্বোধন করেছেন।


10. 'লাউমাচাটার পাশে'- কবি লাউমাচার অনুষঙ্গ ব্যবহার করেছেন কেন?

উত্তরঃ 'লাউমাচা' অনুষঙ্গ ব্যবহারের কারণ গ্রামবাংলায় চিরায়ত রূপটিকে ফুটিয়ে তোলা, যেখানে শৈশবকে খুঁজে পাওয়া যেতে পারে।


11. সন্ধ্যার বাতাসে কী দুলছে?

উত্তরঃ 'আবহমান' কবিতায় ছোট্ট ফুলটি সন্ধ্যার বাতাসে দুলছে।


12. কে এইখানে এসেছিল অনেক বছর আগে- কোনখানে আসার কথা বলা হয়েছে?

উত্তরঃ 'আবহমান' কবিতা থেকে উদ্ধৃত অংশে 'এইখানে' বলতে শৈশবের গ্রামের কথা বলা হয়েছে।


13.  'কে এইখানে এসেছিল অনেক বছর আগে'-এখানে অনেক বছর আগে মানুষটি কী করেছিল?

উত্তরঃ অনেক বছর আগে মানুষটি এই গাঁয়ে নিবিড় অনুরাগে-ভালোবাসায় ঘর বেঁধেছিল।


14.  'কে এইখানে হারিয়ে গিয়েও আবার ফিরে আসে।'- হারিয়ে যাওয়ার কারণ কী?

উত্তরঃ পরিস্থিতির চাপে মানুষকে স্বদেশ বা জন্মস্থান ছেড়ে যেতে হয়, তাই সে তার স্বদেশ ও শৈশবকে হারিয়ে ফেলে।


15.  'কে এইখানে হারিয়ে গিয়েও আবার ফিরে আসে'-'এইখানে' আবার ফিরে আসার কারণ কী?

উত্তরঃ 'আবহমান' কবিতায় গ্রামছাড়া মানুষ জন্মভূমির টানে, অর্থাৎ নিজের শিকড়ের টানে 'আবার ফিরে আসে'।


16. 'কে এইখানে হারিয়ে গিয়েও আবার ফিরে আসে,'- এখানে 'কে' পদটি কী ধরনের সর্বনামের দৃষ্টান্ত?

উত্তরঃ  প্রশ্নে উদ্ধৃত অংশে প্রদত্ত 'কে' হল প্রশ্নবাচক সর্বনামের দৃষ্টান্ত।


17. 'ফুরয় না তার কিছুই ফুরয় না'- কী ফুরায় না?

উত্তরঃ মানুষের মাতৃভূমির প্রতি আকর্ষণ, ভালোবাসা এবং টান কখনোই ফুরায় না।


18.  'নটেগাছটা বুড়িয়ে ওঠে'-'নটেগাছ' বলতে কার বা কীসের কথা বলা হয়েছে?

উত্তরঃ 'আবহমান' কবিতা থেকে গৃহীত উদ্ধৃতাংশে 'নটেগাছ' হল মানুষ ও তার মাতৃভূমির সম্পর্কের আবহমানতার প্রতীক।


19.  'বুড়িয়ে ওঠে' বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন?

উত্তরঃ উদ্ধৃতাংশে 'বুড়িয়ে ওঠে' বলতে মানুষের বয়স বেড়ে যাওয়ার কথা বুঝিয়েছেন।


20.  'কিন্তু মুড়য় না'-'মুড়য় না' বলতে কবি কী বলতে চেয়েছেন?

উত্তরঃ সময়ের সাথে সাথে মাতৃভূমির সঙ্গে মানুষের সম্পর্কে সময়ের ছাপ পড়লেও তা কখনও মুছে যায় না। কবি সে কথাই বোঝাতে চেয়েছেন।


21. যাওয়া-আসা না ফুরানোর কারণ কী?

উত্তরঃ 'আবহমান' কবিতায় কবি মাতৃভূমিহারা মানুষটির স্মৃতিতাড়িত স্বভূমিতে যাওয়া-আসার অন্তহীন মানসযাত্রার কথা ব্যক্ত করেছেন।


22. 'ফুরয় না সেই একগুঁয়েটার দুরন্ত পিপাসা। -'দুরন্ত পিপাসা' বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন?

উত্তরঃ 'আবহমান' কবিতায় কবি, স্বদেশচ্যুত মানুষটির স্বভূমিতে ফিরে আসার দুর্নিবার ইচ্ছাকেই 'দূরন্ত পিপাসা' বলেছেন।


23. ফুরয় না সেই একগুঁয়েটার দুরন্ত পিপাসা। 'একগুঁয়ে' শব্দটি ব্যবহারের তাৎপর্য কী?

উত্তরঃ প্রদত্ত উদ্ধৃতাংশে মাতৃভূমিহারা মানুষটির নিজভূমে ফেরার একরোখা মানসিক জেদকে বোঝাতে এখানে 'একগুঁয়ে' শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে।


24.  'সারাটা দিন আপন মনে ঘাসের গন্ধ মাখে'-উদ্ধৃতিটির সরলার্থ কী?

উত্তরঃ জন্মভূমি থেকে দূরে থাকা মানুষ মনে মনে সবুজ ঘাসে ভরা জন্মভূমি স্নেহস্পর্শ শরীরে মেখে নেয়।


25.  'সারাটা রাত তারায়-তারায় স্বপ্ন এঁকে রাখে'-বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন?

উত্তরঃ কবি ফেলে আসা শৈশব ও স্বদেশের স্মৃতি ফিরে পাওয়ার অপূর্ণ বাসনার ছবি সুদূরের হাতছানি দেওয়া তারায় তারায় এঁকে রাখে।


26. 'নেভে না তার যন্ত্রণা'- কীসের যন্ত্রণা?

উত্তরঃ 'আবহমান' কবিতায় কবি মাতৃভূমি থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার অনিঃশেষ মানসিক যন্ত্রণার কথা বলেছেন।


27. 'দুঃখ হয় না বাসি',-দুঃখ বাসি হয় না কেন?

উত্তরঃ  মানুষের শৈশব বা স্বদেশ হারানোর দুঃখ-যন্ত্রণা সর্বদা তার স্মৃতিতে সজীব থাকে। তাই কবি এমন উক্তি করেছেন।


28. কুন্দফুলের হাসি কখনো হারায় না বলার কারণ কী?

উত্তরঃ মানুষের শৈশব ও স্বদেশ হারানোর দুঃখ-যন্ত্রণা যেমন হারিয়ে যায় না, ঠিক একইভাবে বাগান থেকে কুন্দফুলের হাস্যময় ছবি হারিয়ে যায় না।


29. 'আবহমান' কবিতায় কী কখনও হারায় না বলা হয়েছে?

উত্তরঃ  'আবহমান' কবিতায় বাগান থেকে কুন্দফুলের হাসি কখনও হারায় না বলে কবি মনে করেছেন।


30.  'তেমনি করেই সূর্য ওঠে' বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন?

উত্তরঃ কবি আবহমান কবিতায় মানুষের দুঃখ-যন্ত্রণা, বাগানের কুন্দফুলে, হাসির চিরন্তনতার অনুষঙ্গে সূর্য ওঠার প্রসঙ্গ এনে শৈশবের প্রাকৃতিক অনুষঙ্গগুলির অপরিবর্তনীয়তা বোঝাতে চেয়েছেন।


❐ কমবেশি ৬০ শব্দের মধ্যে উত্তর দাও:


1. 'যা গিয়ে ওই উঠানে তোর দাঁড়া' - প্রসঙ্গ উল্লেখ করে উদ্ধৃতাংশটির তাৎপর্য বুঝিয়ে দাও? অথবা, 'যা গিয়ে ওই উঠানে তোর দাঁড়া' - কবিতায় 'উঠান' কীসের প্রতীক হয়ে উঠেছে? কবি সেখানে গিয়ে দাঁড়াতে বলেছেন কেন? ২+১=৩

উত্তরঃ 'আবহমান' কবিতায় গ্রামছাড়া-শৈশবহারা পাঠকের  ব্যক্তিমনের উদ্দেশে কবির এই আকুতি। একই সঙ্গে এ আকুলতা তাঁর নিজের অন্তর্মনেরও। 'উঠান' শব্দটির আভিধানিক অর্থ ঘরের সামনের উন্মুক্ত আঙিনা বা প্রাঙ্গণ। কিন্তু কবিতায় 'উঠান' ভিটেচ্যুত মানুষের জন্মস্থান বা মাতৃভূমি-স্বরূপ স্বাধীন মুক্ত পরিসরের প্রতীক হয়ে উঠেছে। কবি স্বভূমিহারা মানুষকে তার আজন্ম পরিচিত মাটি-হাওয়ায় পরিপূর্ণ সেই প্রাণময় আশ্রয়ভূমিতে গিয়ে দাঁড়ানোর আহ্বানমন্ত্র শুনিয়েছেন।


2. 'লাউমাচাটার পাশে' -ধ্রুবপদের মতো এই পঙ্ক্তিটি কবিতার বারবার ফিরে আসে কেন? অথবা, 'লাউমাচাটার পাশে' -লাউমাচার অনুষঙ্গ জীবনের কোন্ গূঢ় অর্থ প্রকাশ করে বলে তোমার মনে হয় লেখো। ৩

উত্তরঃ 'আবহমান' কবিতাটি গ্রাম-বাংলা ও তার কোল থেকে বিচ্যুত সন্তানের পারস্পরিক অনুরাগ ও আকুলতার আলেখ্য। লাউমাচা বাংলার গ্রামীণ গার্হস্থ্য জীবনের সহজলভ্য সমৃদ্ধি ও সচ্ছলতার সূচক। আবার অন্যদিকে লাউমাচার অনুষঙ্গে অবলম্বন বা আশ্রয়ের এক প্রচ্ছন্ন ব্যঞ্জনাও ফুটে ওঠে। কবি আজন্ম-চেনা জন্মস্থানের প্রকৃতি-লালিত চিরন্তন অবলম্বন বা শিকড়ের নিবিড় সান্নিধ্য হৃদয়ে অনুভব করেন বলেই 'লাউমাচাটার পাশে' উদ্ধৃতাংশটি ধ্রুবপদের মতো কবিতায় বারবার ফিরে আসে।


3.  'কে এইখানে এসেছিল অনেক বছর আগে,' -কার কথা বলা হয়েছে? সে অনেক বছর আগে এইখানে এসে কী করেছিল? অথবা, 'কে এইখানে ঘর বেঁধেছে নিবিড় অনুরাগে'। কার কথা বলা হয়েছে? উদ্ধৃতাংশটির তাৎপর্য ব্যাখ্যা করো। ১+২=৩

উত্তরঃ উদ্ধৃতাংশে কবি কোনো ব্যক্তি বিশেষের কথা বলেননি। নাগরিক জীবনের সুখভোগের হাতছানিতে যারা নিজের শৈশবের ভিটেমাটি ছেড়ে গিয়ে সেখানে হাঁপিয়ে উঠে ফেলে আসা জন্মভূমিতে আবার ফিরে আসার স্বপ্ন দেখছে, তাদের কথা বলেছেন।

আগে এরা এইখানে অর্থাৎ এই গ্রামের প্রকৃতির কোলে এই লালিত পালিত হয়েছে। এখানকার প্রকৃতির সঙ্গে তাদের একাত্মতা  ঘটেছে এবং গভীর অনুরাগে তারা এখানে ঘর বেঁধেছিল। কিন্তু ৪। আজ তা তাদের কাছে অতীত। সেই প্রসঙ্গেই উদ্ধৃত উক্তিটি।


4. 'কে এইখানে হারিয়ে গিয়েও আবার ফিরে আসে' -উদ্ধৃতাংশটির তাৎপর্য ব্যাখ্যা করো। অথবা, 'কে এইখানে হারিয়ে গিয়েও আবার ফিরে আসে' -কে হারিয়ে গিয়েও আবার ফিরে আসে কেন বুঝিয়ে দাও।

উত্তরঃ 'আবহমান' কবিতায় কবি গ্রামছাড়া-দেশত্যাগী মানুষের অন্তর্মনের আকুলতাটিকে ফুটিয়ে তুলেছেন। গ্রামীণ প্রকৃতির উন্মুক্ত শ্যামলিমায়, অনুরাগ ও একাত্মতায় কাটানো শৈশব-স্মৃতির অচ্ছেদ্য বন্ধন তাকে আলোড়িত করে। আজন্ম চেনা উঠান, লাউমাচা, ছোট্ট ফুলের স্বপ্নময় দোদুল্যমানতার আহ্বানবার্তা, মাতৃভূমি-হারা মানুষটিকে ফিরতে অনুপ্রাণিত করেছে। তাই নিজের হারিয়ে যাওয়া শিকড়ের অমোঘ আকর্ষণেই সে স্বভূমিতে আবার ফিরে আসতে উদ্বুদ্ধ হয়েছে।


5. 'এই মাটিকে এই হাওয়াকে আবার ভালোবাসে।' বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন? 'অথবা, 'এই মাটিকে এই হাওয়াকে আবার ভালোবাসে'। -'মাটি' ও 'হাওয়া' বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন? তাকে ভালোবাসার কারণ কী? ২+১ = ৩

উত্তরঃ  প্রশ্নে উদ্ধৃত অংশে মাতৃভূমিহারা মানুষের চিরকালীন আবেগ ও ভালোবাসার কথা ধ্বনিত হয়েছে। পল্লিপ্রকৃতির কোনো এক নিভৃত অন্তরে নিবিড় অনুরাগে তারা ঘর বেঁধেছিল। সেখানকার উঠান-লাউমাচা-ছোটো ফুল-ঘাসের প্রাণময় গন্ধ-বাগানের শুভ্র কুন্দফুলের হাসি অর্থাৎ হাওয়া ও মাটির অমোঘ আকর্ষণই তাকে বিচ্যুত স্বদেশে ফিরিয়ে আনে। কেননা শৈশবের স্মৃতিবিজড়িতলি জন্মস্থানের মাটি-হাওয়ার চিরন্তন আহ্বানের আর্তি তার নির্বাসিত ব্যক্তিমনকে অফুরান মুক্তির আকুলতায় জীবনভর জাগিয়ে শে রাখে।


6. 'ফুরয় না তার কিছুই ফুরয় না'- উদ্ধৃতাংশটির তাৎপর্য বুঝিয়ে লেখো।৩

উত্তরঃ উদ্ধৃতাংশটি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর 'আবহমান' কবিতার অংশবিশেষ। নাগরিক স্বাচ্ছন্দ্যের হাতছানিতে মানুষের গ্রাম ছেড়ে নগরযাত্রা আজও বিদ্যমান, কিন্তু কিছুটা সময় অতিবাহিত হওয়ার পর নাগরিক সভ্যতায় ক্লান্ত হয়ে মানুষ চায় মুক্তি। কবি সেইসব মানুষদের যারা এক সময় গ্রাম বাংলার প্রকৃতিকে গভীর ভাবে ভালোবেসে নিবিড় অনুরাগে ঘর বেঁধেছিল, তাদের পুনরায় ফিরে আসাকে স্বাগত জানিয়েছেন। তাদের অভয় দিতে তিনি প্রশ্নোদ্ভূত উক্তিটি করেছেন। অর্থাৎ তাদের শৈশবের লীলাভূমি আজও অটুট আছে।


7. 'ফুরয় না তার যাওয়া এবং ফুরয় না তার আসা', যাওয়া এবং আসা ফুরায় না কেন? ৩

উত্তরঃ বড়ো হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জীবনের প্রয়োজনে মানুষ তার স্বভূমি থেকে বিচ্যুত হয়। শৈল্পের সেই আনন্দময়  খেলাঘর থেকে সে বহু দূরে চলে যায়। কিন্তু নির্বাসিত মন পড়ে থাকে শৈশবের সেই ফেলে আসা বিচরণভূমিতে, যেখানে সে একদিন নিবিড় অনুরাগে বাঁধা পড়েছিল। সেই অনুরাগে প্রতিটি মানুষই বারবার, রূঢ় নাগরিকতা-ক্লিষ্ট বর্তমান থেকে শৈশবের হারানো প্রকৃতিলালিত জগতের অন্তর্লোকে ফিরে যায়। নির্বাসিত ব্যক্তিমনের যাওয়া-আসার এই অন্তহীন মানসযাত্রাই এখানে প্রকাশিত হয়েছে।


8.  'নটেগাছটা বুড়িয়ে ওঠে, কিন্তু মুড়য় না।'-'নটে গাছ' বুড়িয়ে ওঠে কেন? তা 'মুড়য় না' বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন? 'অথবা, 'নটেগাছটা বুড়িয়ে ওঠে, কিন্তু মুড়য় না।-উদ্ধৃতাংশটির তাৎপর্য ব্যাখ্যা করো।অথবা, 'নটেগাছ মুড়য় না'- এই অনুভূতি কোন্ ভাবসত্যকে প্রকাশ করে, কবিতা অবলম্বনে ব্যাখ্যা করো। ৩

উত্তরঃ উদ্ধৃতাংশটি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর আবহমান কবিতায় অংশবিশেষ। লোককাহিনির গল্প শেষ হবার সঙ্গে সঙ্গে নটেগাছটি মুড়িয়ে যায়। এক্ষেত্রে কিন্তু নটেগাছটি মুড়িয়ে যায় না কিন্তু বুড়িয়ে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে; একটা চিরন্তন প্রবাহমানতার কথা এক্ষেত্রে ফুটে উঠেছে। কালের নিয়মে মানুষ শৈশব থেকে বার্ধক্যে উপনীত হয় কিন্তু প্রকৃতি লালিত আজন্মচেনা উঠোন- লাউমাচা-কুন্দফুল সন্ধ্যা নদীর হাওয়ায় পরিপূর্ণ মাতৃভূমির স্বরূপ স্মৃতিপট থেকে বিস্মৃত হয়ে যায় না। তাই ব্যক্তির বার্ধক্য স্মৃতিকে শেষ করতে পারে না বোঝাতেই এমন উক্তি।


9. 'ফুরয় না সেই একগুঁয়েটার দুরন্ত পিপাসা' - 'একগুঁয়েটার দুরন্ত পিপাসা' বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন? তা ফুরোয় না কেন? ২+১ = ৩

উত্তরঃ প্রদত্ত উদ্ধৃতাংশে কবি স্বভূমিচ্যুত ব্যক্তিমনের একরোখা মানসিক জেদকে বোঝাতে 'একগুঁয়ে' শব্দটি ব্যবহার করেছেন। স্মৃতিতাড়িত মানুষের আপন জন্মের আঙিনায় ফিরে যাওয়ার আকাঙ্ক্ষা চিরদিনের। তাই মাতৃভূমির 'নিবিড় অনুরাগ'কে হৃদয়ে অনুভব করার ব্যাকুলতা মূর্ত হয়ে ওঠে 'দুরন্ত পিপাসা' শব্দবন্ধের মাধ্যমে। নিজ জন্মভূমির নদী-হাওয়া-মাটির সঙ্গে মানুষের শিকড়ের বাঁধন। আজন্ম-চেনা প্রকৃতিলোকে ফিরে যাওয়ার আনন্দ যেন নির্বাসিত নাগরিক মনের ছিন্নমূল হওয়ার বেদনার উপশম ঘটায়। তাই 'একগুঁয়ে ব্যক্তিমনের' 'দুরন্ত পিপাসা' কখনও মেটে না।


10.  'সারাটা দিন আপন মনে ঘাসের গন্ধ মাখে', -প্রসঙ্গ উল্লেখ করে এমন কথা বলার তাৎপর্য বুঝিয়ে দাও। অথবা, 'সারাটা দিন আপন মনে ঘাসের গন্ধ মাখে',- এখানে 'ঘাসের গন্ধ' কীসের প্রতীক হয়ে উঠেছে ব্যাখ্যা করো। ৩

উত্তরঃ প্রদত্ত উদ্ধৃতাংশে কবি প্রকৃতি ও মাতৃভূমিহারা মানুষের অচ্ছেদ্য নিবিড়তার কথা ফুটিয়ে তুলেছেন। গ্রামছাড়া, নির্বাসনের যন্ত্রণায় ক্লিষ্ট মানুষটি আবেগবিহ্বল হয়ে সবুজ ঘাসের মাতৃত্বের উদ্বৃতায় পরিপূর্ণ আদুরে স্পর্শে আবিষ্ট হয়। সে ঘাসের অনাবিল গন্ধ প্রাণভরে শরীর ও মনে মেখে নির্বাসনের বেদনার্ত অনুভূতির উপশম খুঁজে পায়। এখানে ঘাসের গন্ধ আসলে, নিজের শিরা-ধমনি ও রক্তের মধ্যে প্রবাহিত আজন্ম চেনা প্রকৃতি-লালিত পরিপার্শ্বের প্রিয় নিজস্বতার গন্ধের প্রতীক হয়ে উঠেছে।


11.  'সারাটা রাত তারায়-তারায় স্বপ্ন এঁকে রাখে। -উদ্ধৃতাংশটির তাৎপর্য ব্যাখ্যা করো। অথবা, 'সারাটা রাত তারায়-তারায় স্বপ্ন এঁকে রাখে।' -কে স্বপ্ন আঁকে? কেন? ১+২ = ৩

উত্তরঃ প্রশ্নে উদ্ধৃত অংশে কবি শহরে নির্বাসিত ব্যক্তিমনের স্মৃতিমেদুরতার স্বরূপ উন্মোচন করেছেন। আজন্ম চেনা নদী-হাওয়া-মাটির অন্তর্লীন অনুভূতির শিকড় সত্তার গভীরে বহমান। তাই ছিন্নমূল মানুষ তার প্রিয় প্রকৃতিলোকে পুনরায় ফেরার ব্যাকুলতায় অস্থির হয়। এই ব্যাকুলতার তীব্রতায় অন্ধকার রাতের নির্জন প্রহরে সে একাকী এক স্বপ্নে পাড়ি দেয়। সে ফেলে আসা অতীতের সুখস্মৃতি এবং তা ফিরে না পাওয়ার অপূর্ণ বাসুনা-সম্বল নানান ছবি যেন সুদুর তারায়-তারায় এঁকে চলে নিজস্ব খেয়ালে।


12. নেভে না তার যন্ত্রণা যে, দুঃখ হয় না বাসি, -যন্ত্রণা নেভে না কেন? 'দুঃখ হয় না বাসি' বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন? অথবা, 'নেভে না তার যন্ত্রণা যে, দুঃখ হয় না বাসি, -উদ্ধৃতাংশটির তাৎপর্য ব্যাখ্যা করো।

উত্তরঃ উদ্ধৃত পঙ্ক্তিটিতে মাতৃভূমি থেকে তার সন্তানের বিচ্ছেদজনিত বেদনা বা যন্ত্রণার কথা বলা হয়েছে। আজন্ম চেনা প্রকৃতির অঙ্গন থেকে বিচ্যুতি ও নির্বাসনের বেদনা অন্তহীন। তাই যন্ত্রণা নেভে না।

'বাসি' শব্দটির অর্থ 'টাটকা' নয় অর্থাৎ আজকের নয়। 'কবি বু দুঃখ হয় না বাসি' কথাটির মধ্যে দিয়ে বলতে চেয়ে মাতৃভূমি স্মৃ থেকে বিচ্ছেদজনিত বেদনা যেমন উভয়ের মনেই সজীব থাকে পাি ঠিক অনুরূপভাবে জন্মভূমি ছাড়ায় বেদনাও সর্বদা মানসপটে আ সজীব হয়ে থাকে।


13. 'হারায় না তার বাগান থেকে কুন্দফুলের হাসি। -কুন্দফুলের হাসি হারায় না বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন? অথবা, 'হারায় না তার বাগান থেকে কুন্দফুলের হাসি।' -এখানে কোন্ জীবনসত্য প্রতিভাত হয়েছে লেখো। ৩

উত্তরঃ 'আবহমান' কবিতায় মাতৃভূমি ও তার সন্তানের দুঃখ-যন্ত্রণার আকুলতার পাশেই কবি কুন্দফুলের চিরকালীন অনাবিল হাস্যময় অবস্থানের ছবি এঁকেছেন। এখানে শুভ্র কুন্দফুল যেন প্রকৃতির চিরন্তনতা ও বিশুদ্ধতাকে প্রতীকায়িত - করে। নাগরিক কৃত্রিমতার আগ্রাসনে পঙ্গু ব্যক্তিমনের দর্পণে কুন্দফুল যেমন ফেলে আসা শৈশবের আনন্দঘন মুহূর্তের দ্যোতক তেমনই প্রকৃতি এবং মানুষের পারস্পরিক সম্পর্কের সুখময়তার চিহ্ন। নদী, জল, হাওয়া, ফুলের মতো অবিনশ্বর প্রকৃতির নানান অনুষঙ্গে সুখাবহতার এই চিরায়ত রেশ নিহিত থাকে বলেই তা কখনো হারায় না। এখানে জীবনের এই গভীর সত্যই মূর্ত হয়ে উঠেছে।


❐ কমবেশি ১৫০ শব্দের মধ্যে উত্তর দাও :


1. 'আবহমান' কবিতাটির মর্মার্থ আলোচনা করো।'অথবা, 'আবহমান' কবিতায় প্রকৃতি বা মাতৃভূমি-বিচ্ছিন্ন মানুষের যন্ত্রণা ও আকুলতা কীভাবে প্রকাশিত হয়েছে তা কবিতা অবলম্বনে লেখো।৫

উত্তরঃ  কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী 'আবহমান' কবিতায় একটি চিরন্তন জীবনসত্যকে অসাধারণ কাব্যময় ব্যঞ্জনায় প্রকাশ করেছেন। পল্লিপ্রকৃতি-স্বরূপ মাতৃভূমি এবং সেই স্বভূমি থেকে নির্বাসিত ব্যক্তিমনের আকর্ষণ-ভালোবাসা ও আকুলতার আর্তি ব্যক্ত হয়েছে আলোচ্য পাঠ্য কবিতায়। জন্মভূমির ও শৈশবের প্রতি মানুষের মমত্ববোধ সহজাত। সেই মমত্বে-পূর্ণ বন্ধ দরজার চৌকাঠ ডিঙিয়ে কবি আমাদের দাঁড় করিয়ে দেন আজন্ম-চেনা এক বাড়ির উঠানের লাউমাচাটার পাশে। 

এই উঠান-লাউমাচা দোদুল্যমান ছোট্ট ফুল যেন নিমেষে  নির্বাসিত অন্তর্মনে আপন শিকড়ের নিবিড় সান্নিধ্যের স্পর্শ জাগায়। সেই স্পর্শের রেশ অতীতের ওপর থেকে বিস্মৃতির  চাদর সরিয়ে নেয়। আমরা দেখতে পাই অনেককাল আগে এই গ্রামীণ পরিপার্শ্বই ছিল মানুষের পরম আশ্রয়। মানবীয় এটি সম্পর্কের আন্তরিকতায়-সোহাগে প্রকৃতিলোকের উদার অভ্যন্তরে এই তারা সাধের ঘর বেঁধেছিল, গার্হস্থ্যজীবনের সহজ যুথবদ্ধতায় এখানকার মাটি-হাওয়ার সঙ্গে একাত্ম হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু শহরের আগ্রাসনে, পরিস্থিতির চাপে জন্মস্থান থেকে তাদের বিচ্যুত হতে হয়। আর এই বিচ্যুতি কিংবা আশ্রয়হীনতার অনুভূতি তার স্মৃতিভূমিতে চিরকাল জেগে থাকে। সে আজও আপন মনে ঘাসের গন্ধ মাখে, তারায় তারায় স্বপ্ন এঁকে চলে, কিংবা আপন মনোভূমিতে অন্তহীন যাওয়া-আসায় মেতে ওঠে। কেননা জন্মস্থানের মাটি-হাওয়ার চিরন্তন আর্তি, প্রকৃতিলালিত পরিপার্শ্বের ঘাসের গন্ধের মধ্যে নিজস্বতার ঘ্রাণ এবং বিনিদ্র রাতে তারায়-তারায় বাসনা ও সুখস্মৃতির স্বপ্নময় উড়ান তার বেদনার্ত হৃদয়ের উপশম ঘটায়। 

সে উপলব্ধি করে সূর্য, ছায়া, নদীর হাওয়া ও কুন্দফুলের হাসিতে পরিপূর্ণ অবিনশ্বর প্রকৃতির নানান অনুষঙ্গে আছে চিরায়ত সুখাবহতার রেশ। এই স্বভূমিকে হারানোর বেদনা শুধু তার একার নয়, সন্তান হারানো জন্মভূমির দুঃখ-কষ্ট-যন্ত্রণাও অনিঃশেষ। মনোবেদনার এই উভমুখিতা আছে বলেই তো তা বাসি হয় না; কখনও নেভে না। এইজন্যেই তুচ্ছ ছোট্ট ফুলের দোদুল্যমান ডাকে প্রতিনিয়ত মানুষের হৃদয় উথালপাথাল হয়। এই আবহমান আহ্বানদৃশ্য এক সতেজ প্রাণময় প্রবাহের মতো চিরকাল দুজনকে পরস্পরের প্রতীক্ষায় রাখে। চলমান সময় তাকে গ্রাস করতে পারে না। তাই লোককাহিনির নটেগাছ মুড়োলেও, মাতৃভূমি ও তার সন্তানের সম্পর্কের আবহমানতার প্রতীক-স্বরূপ নটেগাছটি মুড়োয় না। এভাবেই প্রকৃতির রূপচ্ছবিতে, মানবমনে বহমানতার অফুরান দ্যোতনা নিয়ে কবিতাটি উজ্জ্বল হয়ে থেকে যায়।


2. 'আবহমান' কবিতাটির নামকরণের সার্থকতা বিচার করো।

উত্তরঃ  সাহিত্যের যে-কোনো আঙ্গিকেই নামকরণ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। নামকরণের মধ্যে সৃষ্টিকর্তার মধ্যে তার লালিত চিন্তার বহিপ্রকাশ জনিত এক আনন্দ দুঃখ বা বেদনার বহিপ্রকাশ ঘটে। এই নামকরণের ক্ষেত্রে সাহিত্যিকেরা কতগুলি পথ অবলম্বন করেন। কাব্য কবিতায় নামকরণের ক্ষেত্রে সাধারণত বিষয়বস্তু, ভাব বা ব্যঞ্জনা অনুসরণ করে থাকেন। এক্ষেত্রে আমাদের বিচার্য যে কবির এই 'আবহমান' নামকরণটি কবিতা অনুসরে কতটা সার্থক ও যথার্থ হয়েছে।

'আবহমান' শব্দটির অর্থ চিরকালীন অর্থাৎ যা ধারাবাহিকভাবে চলে আসছে। কবিতার বিষয়বস্তু খুবই সংক্ষিপ্ত কিন্তু তার প্রকাশে কবি আগাগোড়া ব্যঞ্জনার আশ্রয় নিয়েছেন। গ্রামীণ মানুষ নাগরিক জীবনের মোহে তার শৈশবের মাঠ, ঘাট, লাউমাচা, ফুলের বাগান, নদীর তীর যেখানে সে তার জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সময় শৈশবকে অতিবাহিত করেছে, তা ছেড়ে পা রেখে নাগরিক জীবনে। কিন্তু নাগরিক জীবনে সে ক্লান্ত, তাই সে আবার ফিরে আসার ইচ্ছা পোষণ করে তার শৈশবের লীলাক্ষেত্রে। কবি সেই ক্লান্ত পথিককে তার শৈশবের লীলাভূমি যে এতটুকু বদলায়নি, সে যে তাকে তার শৈশব ফিরিয়ে দিতে পারে সে কথাই বলতে চেয়েছেন। কবি কবিতাটির ছত্রে ছত্রে চিরকালীন প্রবাহমানতার ছবি এঁকেছেন) ৪ তাই কবির 'আবহমান' এই ব্যঞ্জনাধর্মী নামকরণটি যথার্থ ও সার্থক বলে মনে হয়।


3.  'আবহমান' কবিতাটি ব্যক্তি-মানুষের ঘ আত্মানুসন্ধানের আলেখ্য' করো। উক্তিটির সারবত্তা বিশ্লেষণ  অথবা, 'কবি এবং পাঠকের অন্তর্মনের এক বিশেষ অনুভূতি 'আবহমান' কবিতায় ব্যক্ত হয়ে উঠেছে'- আলোচনা করো। অথবা, 'ফুরয় না তার যাওয়া এবং ফুরয় না তার আসা,' বলতে কবি মানবজীবনের কোন্ যাওয়া-আসার অন্তহীন ছবি ফুটিয়ে তোলেন তা কবিতা অবলম্বনে লেখো।

উত্তরঃ নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী তাঁর 'আবহমান' কবিতায় নাগরিক। যন্ত্রণায় দীর্ণ আমাদেরকে নিয়ে গিয়ে দাঁড় করিয়েছেন আজন্ম পরিচিত এক বাড়ির উঠোনের লাউমাচার পাশে। যেখানে একটা ফুল ক্রমান্বয়ে দুলে চলেছে। যার দোল ক্রমাগত এসে লাগে হৃদয় আর নির্বাসিত মন সবরকম আবদ্ধতা ভেঙে পায় মুক্তির স্বাদ। নগর জীবনের বেড়া ভেঙে মন চলে যায় প্রকৃতির মাঝে যেখানে অনেককাল আগে ঘর বাঁধা হয়েছিল সেখানে। কালের নিয়মে প্রয়োজনের তাগিদে ও দ্রুত নগরায়ণের জেরে আমাদের অনেককই ছাড়তে হয় শৈশবের স্মৃতি বিজড়িত অনুরাগ আন্তরিকতায় পূর্ণ ঘর। আর হৃদয়ে সেজন্য জেগে ওঠে ব্যাকুলতা। জীবন যতই এগোক, যতই বাঁক পরিবর্তন করুক, নিজের ফেলে আসা শৈশবের, হারিয়ে যাওয়া শিকড়ের অনুসন্ধানে মানুষের মানস যাত্রা তীব্র থেকে তীব্রতর হয়। সে অনুভব করে সু র্যের উজ্জ্বলতা, ঘনায়মান ছায়ায় অন্ধকার, সান্ধ্য নদীর হাওয়া ও কুন্দফুলের হাসির মধ্যে প্রকৃতির চিরন্তন আহবান বার্তা। একইভাবে জন্মভূমিও আমাদেরকে ফিরে পেতে চায়। এই উভয়ার্তিই হৃদয়ে জাগায় দুরন্ত পিপাসা। সে একগুঁয়ের মতো খুঁজে বেড়ায় ঘাসের গন্ধের মধ্যে নিজস্বতার ঘ্রাণ, হাতের তারায় তারায় আঁকা অপূর্ণ বাসনা ও সুখস্মৃতি। কবিতায় প্রতিটি স্তবকের শুরুতে। "যা গিয়ে ওই উঠোনে তোের দাঁড়া" স্তবকের মধ্যে দিয়েই বোঝায় স্বদেশ, শৈশব ও প্রকৃতির অন্তর্গত শিকড়ে অফুরান যাওয়া-আসা অবিরাম চলে এবং এর ফলে আমরা প্রতিনিয়ত নিজেদের প্রতিফলিত রূপ প্রত্যক্ষ করি যা এই কবিতার মূল সুর। 


4.  'এই মাটিকে এই হাওয়াকে আবার ভালোবাসে'। -এই 'মাটি' ও 'হাওয়া' বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন? তাকে ভালোবাসার তাৎপর্য ব্যাখ্যা করো। ৩+২ = ৫

উত্তরঃ 'আবহমান' কবিতায় কবি যেমন সুনির্দিষ্ট কারও কথা বলেন না, ঠিক তেমনই মাটি-হাওয়া বলতে তিনি গ্রাম-বাংলার উদার অভ্যন্তরের চিরব্যাপ্ত প্রাকৃতিক পরিপার্শ্বকেই ইঙ্গিত করেন। আসলে নাগরিক সভ্যতার আগ্রাসনে নির্বাসিত ব্যক্তিমন আপন অতীতের আয়নায় হারিয়ে যাওয়া এক চিরকালীন ঘর-গেরস্থালির ছবি ফুটে উঠতে দেখে। যে প্রকৃতি-লালিত নিভৃত নীড় ছিল মানুষের পরম আশ্রয়, মানবীয় সম্পর্কের গভীর উয়তায় তা ছিল পরিপূর্ণ। এই সরল-অনাড়ম্বর প্রকৃতির কোলে একদিন মানুষ তার সাধের ঘর বেঁধেছিল। গ্রামজীবনের মাতৃভূমির স্নেহ-স্পর্শ মাখা মাটি-হাওয়ার নিবিড় সান্নিধ্যে তারা সহজ-একাত্ম ও যূথবদ্ধ জীবনের চিরন্তন আস্বাদ পেয়েছিল। প্রকৃতির শাশ্বত অনুষঙ্গের অনুরাগ-মাখা সেই অন্তরকেই কবি মাটি ও হাওয়ার মধ্য দিয়ে ফুটিয়ে তুলেছেন।

 প্রকৃতিলোকের শাশ্বত চলমানতার ছবি কখনও বদলায় না। তার হৃদয়ের সৌরকরোজ্জ্বল উজ্জ্বলতা-ঘনায়মান ছায়ার মন্থর গাম্ভীর্য, দুরন্ত উচ্ছ্বাসে পূর্ণ সান্ধ্য হাওয়া, শুভ্র কুন্দফুলের অনাবিল হাসি ও লাউমাচার ছোট্ট ফুলের দোলা-এসবই কখনও পরিবর্তিত হয় না। জীবন থেকে হারিয়ে যাওয়া মায়াময় প্রকৃতির এসমস্ত আজন্ম-চেনা অনুষঙ্গ নির্বাসিত ব্যক্তিমনে এক চিরন্তন মুক্তির আবেদন জাগায়। নিজের শিকড়ের প্রতি, ভালোবাসার আশ্রয়ভূমির প্রতি মানুষের অন্তর্মনের মমত্বে পূর্ণ আর্তি অফুরান-এই নিগূঢ় সত্যই ব্যক্ত হয়েছে।


5. 'ফুরয় না তার কিছুই ফুরয় না, / নটেগাছটা বুড়িয়ে ওঠে, কিন্তু মুড়য় না!' - কী ফুরায় না বলে কবি মনে করেন? নটেগাছটা মুড়ায় না বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন? ২+৩=৫

উত্তরঃ জন্মভূমির সঙ্গে তার সন্তানের অর্থাৎ মানুষের সম্পর্ক অবিচ্ছেদ্য। এ বন্ধন নাড়ীর বন্ধন। যা থেকে মানুষকে সাময়িকভাবে বিচ্ছিন্ন করা গেলেও চিরকালের জন্য উৎপাটিত করা যায় না। তাই এই কবিতায় পঙ্ক্তিটির এক ব্যঞ্জনায় প্রতিধ্বনি করতে করতে বারে বারে ফিরে এসেছে। কবির মতে মানুষ তার প্রয়োজনে, পারিপার্শ্বিক চাপে কিংবা নগরজীবনের হাতছানিতে তার শৈশবের আঙিনা থেকে দূরে চলে যায়। কিন্তু তার মন থেকে জন্মভূমির স্মৃতি কোনোদিন মুছে যায় না। ঠিক একইভাবে সন্তানের প্রতি মায়ের স্নেহের মতো মানুষকেও জন্মভূমি ভুলতে পারে না। অর্থাৎ মানুষের সাথে জন্মভূমির যে টান তা ফুরোয় না বলে কবি মনে করেন।

 বাংলার লোক গল্পে একটি কথা আছে সেটি হল 'আমার গল্পটি ফুরোলো, নটেগাছটি মুড়োলো'। আমাদের পাঠ্য কবিতা 'আবহমান'-এর লেখক শ্রদ্ধেয় নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী সেই ও অনুষঙ্গেই গল্পটি পুরোপুরি উলটে দিয়ে বলেছেন "নটেগাছটা - বুড়িয়ে ওঠে, কিন্তু মুড়য় না।” বয়স বা সময়ের সাথে সাথে আমরা কৈশোর থেকে যৌবন ও যৌবন থেকে বার্ধক্যে উপনীত - হই। প্রয়োজনের তাগিদে কিংবা পারিপার্শ্বিক নানান কারণে - আমরা চলে যাই দূরে। জন্মভূমির সঙ্গে সঙ্গে যে সম্পর্ক  সেই স্মৃতিতে জমতে থাকে ধুলো, সন্ধ্যার বাতাসে একটা ছোট্ট ফুলের দোলা যেন আমাদের হৃদয়ের স্মৃতিপটকে নাড়িয়ে দেয়। শৈশবের সেই উজ্জ্বল স্মৃতিগুলো যেন আমাদের ঘরে ফেরার আহবান জানায়। বয়সের ভারে ভারাক্রান্ত হলেও আমাদের স্মৃতিপট থাকে চিরভাস্বর। তাই কবি বলেছেন নটেগাছটি বুড়িয়ে উঠলেও মুড়িয়ে যায় না।


6. 'ফুরয় না সেই একগুঁয়েটার দুরন্ত পিপাসা' -'একগুঁয়েটার দুরন্ত পিপাসা' বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন? পিপাসা না ফুরানো কীসের ইঙ্গিত বলে তুমি মনে কর? ২+৩ = ৫

উত্তরঃ 'একগুঁয়ে' শব্দটির সাহায্যে একরোখা মানসিক জেদকে বোঝানো হয়, আর 'দুরন্ত পিপাসা' বলতে ভীষণ তৃষ্ণা। এক্ষেত্রে ভীষণ আশা অর্থে ব্যবহৃত কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী তাঁর 'আবহমান' কবিতায় 'একগুঁয়েটার দুরন্ত পিপাসা' বলতে বুঝিয়েছেন, জন্মভূমি থেকে মানুষ নানান কারণে দূরে চলে যায়, কর্মব্যস্ত হয়ে পড়ে, ভুলে যেতে বসে শৈশবের স্মৃতি। কিন্ত তার শৈশবের প্রতি আকর্ষণ শেষ হয়ে যায় না। মাঝে মাঝে তার মনের মধ্যে ব্যাকুলতার সৃষ্টি হয় গ্রামজীবন ও প্রকৃতির আকর্ষণে জন্মভূমিতে ফিরে যাওয়ার এই দুর্নিবার আকর্ষণকেই কবি 'একগুঁয়েটার দুরন্ত পিপাসা'র রূপে ব্যক্ত করেছেন।

 মানুষের সঙ্গে তার শৈশবের প্রকৃতি অর্থাৎ যেখানে সে বড়ো হয়ে ওঠে সেই গ্রামীণ জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সে সেখানে তৈরি করে নেয় নিজের মতো জগৎ এবং তার তৈরি জগতে ছন্দবদ্ধ জীবনযাপন করতে থাকে। উঠোনের লাউমাচার ছোট্ট ফুল, বাগানের কুন্দফুলের হাসি তার চলমান জীবনের পারিপাঠ্যেয় প্রতীক। কিন্তু নাগরিক সভ্যতার হাতছানিতে কিংবা নানান পারিপার্শ্বিক ঘটনায় সে বিচ্যুত হয় তার আজন্ম লালিত শৈশব থেকে। সে হাঁপিয়ে ওঠে। নাগরিক মনে সে অনুভব করে উঠোনের লাউমাচা, কুন্দফুল, ছায়ানিবিড় সান্ধ্য হাওয়া। সারাদিন আপন মনে ঘাসের গন্ধ মেখে ও তারায় তারায় স্বপ্ন এঁকে সে প্রকৃতির কাছে ফিরে আসতে চায়। এই আকাঙ্ক্ষা মানুষের মনের চিরকালীন আকাঙ্ক্ষা, কোনোদিন তা ফুরোয় না।


7. 'সারাটা দিন আপন মনে ঘাসের গন্ধ মাখে/ সারাটা রাত তারায় তারায় স্বপ্ন এঁকে রাখে।'-'ঘাসের গন্ধ মাখা' এবং 'তারায় তারায় স্বপ্ন এঁকে' রাখার মধ্য দিয়ে কবি কী বোঝাতে চেয়েছেন আলোচনা করো। 

উত্তরঃ (প্রদত্ত উদ্ধৃতাংশে কবি প্রকৃতি ও মাতৃভূমিহারা মানুষের অচ্ছেদ্য নিবিড়তার কথা ফুটিয়ে তুলেছেন। প্রকৃতির স্নেহ আশ্রয়ের চিরন্তন প্রতীক ঘাস। গ্রামছাড়া, নির্বাসনের যন্ত্রণায় ক্লিষ্ট মানুষটি আবেগবিহ্বল হয়ে সবুজ ঘাসের মাতৃত্বের উয়তায় পরিপূর্ণ আদুরে স্পর্শে আবিষ্ট হয়। সে ঘাসের অনাবিল গন্ধ প্রাণভরে শরীর ও মনে মেখে নিয়ে নির্বাসনের বেদনার্ত অনুভূতির উপশম খুঁজে পায়। এখানে ঘাসের গন্ধ আসলে, নিজের শিরা-ধমনি ও রক্তের মধ্যে প্রবাহিত আজন্ম-চেনা প্রকৃতি-লালিত পরিপার্শ্বের প্রিয় নিজস্বতার গন্ধের প্রতীক হয়ে উঠেছে।

 প্রশ্নে উদ্ধৃত অংশে কবি শহরের আগ্রাসনে নির্বাসিত ব্যক্তিমনের স্মৃতিমেদুর স্বপ্নময়তার স্বরূপ উন্মোচন করেছেন। আজন্ম চেনা নদী-হাওয়া-মাটির অন্তর্লীন অনুভূতির শিকড় সত্তার গভীরে বহমান। তাই ছিন্নমূল মানুষের অন্তর্মন তার নিবিড় অনুরাগে পূর্ণ প্রকৃতিলোকে পুনরায় উপস্থিত হওয়ার ব্যাকুলতায়  অস্থির হয়। এই ব্যাকুলতার তীব্রতায় অন্ধকার রাতের নির্জন  প্রহরে সে একাকী এক স্বপ্নিল উড়ানে চেপে পাড়ি দেয়। সে - ফেলে আসা অতীতের সুখস্মৃতি এবং তা ফিরে না পাওয়ার  অপূর্ণ বাসনা-সম্বলিত নানান ছবি যেন সুদূর তারায়-তারায় ২ এঁকে চলে নিজস্ব খেয়ালে। নিঃসঙ্গ মানুষের কাছে এই স্বপ্নময় উড়ান, মুক্তির চিরন্তন জানলা।


No comments:

Post a Comment