1. ধ্বনি কত প্রকার ও কী কী?
উত্তরঃ ধ্বনি দুই প্রকার-(ক) স্বরধ্বনি (খ) ব্যঞ্জনধ্বনি।
2. স্বরধ্বনির ভাগগুলি কী কী?
উত্তরঃ (ক) মৌলিক স্বরধ্বনি ও (খ) যৌগিক স্বরধ্বনি।
3. স্বরধ্বনির বর্ণগুলি কী কী?
উত্তরঃ অ, আ, ই, ঈ, উ, ঊ, ঋ, এ, ঐ, ও, ঔ।
4. পার্শ্বিক ধ্বনি কী?
উত্তরঃ যে ধ্বনি উচ্চারণকালে জিহ্বার দু'পাশ দিয়ে বায়ু নির্গত হয়, তাকে পার্শ্বিক ধ্বনি বলে।
5. মৌলিক স্বরধ্বনি কী?
উত্তরঃ যে স্বরধ্বনিগুলিকে বিশ্লেষণ বা বিভাজন করা যায় না তাদের মৌলিক স্বরধ্বনি বলে। যেমন-অ, আ প্রভৃতি।
6. যৌগিক স্বরধ্বনি কী?
উত্তরঃ ভিন্ন ভিন্ন দুটি স্বরধ্বনির সাহায্যে গঠিত স্বরধ্বনিকে যৌগিক স্বরধ্বনি বলে। যেমন: ওই ঐ, \
7. ফ্ল্যাপড?
উত্তরঃ যে ধ্বনিগুলির উচ্চারণে জিভ প্রতিবেষ্টিত হয়ে কঠিন তালুর অগ্রভাগে তাড়না বা আঘাত সৃষ্টি করে, এই ধ্বনিগুলিকে তাড়িত ধ্বনি বলে। যেমন-ড়, ঢ়।
8. উদাহরণ দাও: ঘোষীভবন, উষ্মধ্বনি।
উত্তরঃ ঘোষীভবন-কাক > কাগ 'ক' উচ্চারিত হয়েছে 'গ' হয়ে। উন্নধ্বনি-শ, স, হ।
9. ব্যঞ্জনধ্বনি কাকে বলে?
উত্তরঃ যেসব ধ্বনি স্বরধ্বনির সাহায্য ছাড়া নিজেরা উচ্চারিত হতে পারে না, তাদের ব্যঞ্জনধ্বনি বলে।
10. নীচের ধ্বনিগুলি উচ্চারণ-স্থান অনুযায়ী কী ধ্বনি নির্ধারণ করো জ, ধ, হ, ল।
উত্তরঃ তালব্য ব্যঞ্জন। হ-কণ্ঠনালীয় ব্যঞ্জন। ধ-দন্ত্যব্যঞ্জন। ল-দন্তমূলীয় ব্যঞ্জন।
11. হ্রস্বস্বর কাকে বলে?
উত্তরঃ যে স্বরধ্বনিগুলি উচ্চারণ করতে কম বা অল্প সময় লাগে, তাদের বলে হ্রস্বস্বর। যেমন: অ, ই, উ, ঋ।
12. দীর্ঘস্বর কাকে বলে?
উত্তরঃ যেসব স্বরধ্বনি উচ্চারণ করতে অপেক্ষাকৃত দীর্ঘ সময় লাগে, তাদের বলে দীর্ঘস্বর। যেমন: আ, ঈ, উ, এ, ও, ঔ, ঐ।
13. প্লুতস্বর কাকে বলে?
উত্তরঃ গান করার সময়, কাউকে ডাকার সময়, আবেগ প্রকাশের সময়, স্বরধ্বনির টেনে টেনে উচ্চারণকে বলে প্লুতস্বর। যেমন: ও হে-এ-এ। যদু হে-এ-এ-এ-এ। পুতস্বর কমপক্ষে তিন মাত্রায় হয়।
14. সংবৃত স্বর কাকে বলে?
উত্তরঃ যে স্বরধ্বনি উচ্চারণকালে মুখগহ্বর সংবৃত বা সংকুচিত হয়, সেই স্বরধ্বনিকে বলে সংবৃত স্বর। যথা: ই, উ, ঈ, উ। এদের উচ্চারণে ঠোঁটের ফাঁক সবচেয়ে বেশি হয়।
15. বিবৃত স্বরধ্বনি কাকে বলে?
উত্তরঃ যে স্বরধ্বনি উচ্চারণকালে মুখগহ্বর বিবৃত বা প্রসারিত হয়, সেই স্বরধ্বনিকে বলে বিবৃত স্বর। যথা: আ-এই স্বরধ্বনি উচ্চারণ করতে ঠোঁটের ফাঁক সব চাইতে কম হয়।
16. বর্গীয় বর্ণ বা স্পর্শ বর্ণ কাকে বলে?
উত্তরঃ ক্ থেকে ম্ পর্যন্ত পাঁচটি বর্গের পঁচিশটি ব্যঞ্জনধ্বনিকে বলে বর্গীয় বর্ণ। এই বর্ণগুলি উচ্চারণ করবার সময় জিহ্বার অগ্রভাগ, মধ্যভাগ ও মূলভাগ কণ্ঠ, তালু, মূর্ধা, দন্ত স্পর্শ করে আবার ওষ্ঠ ও অধরের স্পর্শেও উচ্চারিত হয় বলে এই বর্ণগুলিকে স্পর্শ বর্ণ বলে।
17. খৃষ্ট বর্ণ বা ঘৃষ্ট ধ্বনি কাকে বলে?
উত্তরঃ যে বর্ণগুলি উচ্চারণের সময় জিহ্বা এবং তালুর স্পর্শে ঘর্ষণজাত ধ্বনি সৃষ্টি করে, সেই বর্ণগুলিকে বলে ঘৃষ্ট বর্ণ। যথা: চ, ছ, জ, ঝ। এই ব্যঞ্জনধ্বনিগুলি শুরুতে স্পর্শ বর্ণের মতো এবং শেষে উষ্ম বর্ণের মতো উচ্চারিত হয়। যেমন-চ = ক+শ, ছ= ত্+স্।
18. নাসিক্য বা অনুনাসিক বর্ণ কাকে বলে?
উত্তরঃ যে বর্ণগুলি উচ্চারণের সময় মুখের ভিতরে কিংবা ঠোঁঠে ঠোঁঠে স্পর্শ ঘটে থাকে এবং মুখের ভিতরের বায়ু শুধু মুখ থেকে না বেরিয়ে নাসিক্য দিয়েও বের হয়, সেই বর্ণগুলিকে বলে নাসিক্য বা অনুনাসিক বর্ণ। যথা: ৬, ঞ, ণ, ন, ম-অর্থাৎ প্রতিটি বর্গের পঞ্চম বর্ণ।
19. অল্পপ্রাণ ব্যঞ্জনবর্ণ কাকে বলে?
উত্তরঃ যে ব্যঞ্জনবর্ণগুলি উচ্চারণ করবার জন্য অল্প পরিমাণ প্রাণ অর্থাৎ নিঃশ্বাস বায়ুর প্রয়োজন হয়-সেই বর্ণগুলিকে বলে অল্পপ্রাণ ব্যঞ্জন বর্ণ। যথা: প্রত্যেক বর্গের প্রথম, তৃতীয় ও পঞ্চম বর্ণ-কৃ, ছ, ট্, ত্, পঃ গ, জ, ভূ, দ, ব এবং য, র, ল, ব।
20. মহাপ্রাণ বর্ণ কাকে বলে?
উত্তরঃ যে বর্ণগুলি উচ্চারণ করবার সময় অধিক পরিমাণ প্রাণ অর্থাৎ শ্বাসবায়ুর প্রয়োজন হয়-সেই বর্ণগুলিকে বলে মহাপ্রাণ বর্ণ। যথা: বর্গের দ্বিতীয় ও চতুর্থ বর্ণ-স্, ছ, ঠ, থ, ফ; ঘ, ঝ, ঢ়, ধূ।
21. পীনায়ন ও ক্ষীণায়নের পার্থক্য উদাহরণের সাহায্যে বুঝিয়ে দাও।
উত্তরঃ অল্পপ্রাণ ধ্বনি মহাপ্রাণ ধ্বনির মতো উচ্চারিত হলে তাকে বলে পীনায়ন। যেমন মহাপ্রাণ ধ্বনি অল্পপ্রাণ ধ্বনির মতো উচ্চারিত হলে, তাকে বলে ক্ষীণায়ন। যেমন আঠা হয়েছে অল্পপ্রাণ ধ্বনি 'ট'), দেখছে দেখচে, চোখ চোক। কাঁটাল > কাঁঠাল, থুতু থুথু। আটা ('ঠ' মহাপ্রাণ ধ্বনি উচ্চারণে
22. অঘোষ বর্ণ বা ধ্বনি কাকে বলে?
উত্তরঃ 'ধ্বনির গাম্ভীর্যকে ধ্বনিবিজ্ঞানে বলা হয় ঘোষ' (সুনীতিকুমার)। যে ব্যঞ্জন ধ্বনিগুলি গাম্ভীর্যহীন বা মৃদুভাবে উচ্চারণ করা হয়-সেই ধ্বনিগুলিকে বলে অঘোষ বর্ণ বা ধ্বনি। যথা: পৃ, ফ্।
23. অঘোষীভবন কাকে বলে?
উত্তরঃ উচ্চারণের কারণে কোনো কোনো ঘোষ ধ্বনি অঘোষ ধ্বনিতে পরিণত হয়। একে অঘোষী ভবন বলে। যেমন- কাগজ > কাগচ, বীজ > বিচি।
24. ঘোষীভবন কাকে বলে?
উত্তরঃ উচ্চারণের কারণে অঘোষ ধ্বনি ঘোষ ধ্বনিতে পরিবর্তিত হলে, সেই পরিবর্তনকে ঘোষীভবন বলে। যেমন-কাক কাগ, শাক > শাগ।
25. নাদ বর্ণ বা ঘোষ বর্ণ কাকে বলে?
উত্তরঃ যে বর্ণগুলি উচ্চারণের সময় কন্ঠস্বরে গাম্ভীর্যের প্রয়োজন হয়, সেই বর্ণগুলিকে বলে নাদ বর্ণ বা ঘোষ বর্ণ। যথা: বর্গের তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম বর্ণ-গ, জ, ড. দ.বঃ ঘ. বা. ঢ়, ধ, ভূ।
26. পার্শ্বিক বর্ণ কাকে বলে?
উত্তরঃ যে বর্ণটি উচ্চারণ করবার সময় জিহ্বার অগ্রভাগ দন্তমূলে ঠেকিয়ে রেখে জিহ্বার দুই পাশ থেকে বায়ু বেরিয়ে যায় সেই বর্ণটিকে পার্শ্বিক বর্ণ বলে। যথা: ল্।
27. তরল স্বর কাকে বলে?
উত্তরঃ যে ব্যঞ্জনবর্ণ দু'টি ঋ ও ৯-এর মতো উচ্চারিত হয়, সেই ব্যঞ্জনবর্ণ দু'টিকে তরল স্বর বলে। যথা: র, ল্।
28. আশ্রয়স্থানভাগী বর্ণ বা অযোগবাহ বর্ণ কাকে বলে?
উত্তরঃ যে বর্ণগুলি অন্য কোনো স্বরবর্ণ বা ব্যঞ্জনবর্ণকে আশ্রয় করে উচ্চারিত হয়, সেই বর্ণগুলিকে অযোগবাহ বর্ণব আশ্রয়স্থানভাগী বর্ণ বলে। যথাং (অনুস্বর), (বিসর্গ)। এই দুটো বর্ণের সঙ্গে স্বর ও ব্যঞ্জনবর্ণের কোনো যোগ নেই বার এরা অযোগ, এরা উচ্চারণে অন্য বর্ণের সঙ্গে সংযোগ ছাড়া উচ্চারিত হতে পারে না। যেমন- পুনঃ, বরং।
29. ধ্বনি পরিবর্তনের দুটি কারণ লেখো।
উত্তরঃ ধ্বনি পরিবর্তনের দুটি কারণ হল, বাগযন্ত্রের ত্রুটি ও দুর্বলতা এবং উচ্চারণের সরলীকরণ ও শিথিলতা।
30. ধ্বনি পরিবর্তন কয় প্রকার ও কী কী?
উত্তরঃ ধ্বনি পরিবর্তন সাধারণত তিন প্রকার-ধ্বনির আগমন, ধ্বনির লোপ এবং ধ্বনির রূপান্তর। ধ্বনির স্থানবদলকে কেউ কেউ ধ্বনির রূপান্তরেরই অন্তর্ভুক্ত করেন, আবার কেউ কেউ একটি পৃথক উপবিভাগ করেন।
31. ধ্বন্যাগম কাকে বলে?
উত্তরঃ উচ্চারণের সুবিধার জন্য কখনো-কখনো শব্দের প্রথমে, মধ্যে বা অন্তে নতুন একটি স্বরধ্বনির বা ব্যঞ্জনধ্বনির আগম হয়। একে ধ্বন্যাগম বলে। যথা: স্কুল ইস্কুল; স্পর্ধা > আস্পর্ধা প্রভৃতি।
32. স্বরাগম কত প্রকার ও কী কী?
উত্তরঃ স্বরাগম তিনপ্রকার।
(ক) আদি স্বরাগম,
(খ) মধ্য স্বরাগম এবং
(গ) অন্ত স্বরাগম।
33. আদি স্বরাগম, মধ্য স্বরাগম, অন্ত স্বরাগম-এর একটি করে উদাহরণ দাও।
উত্তরঃ আদি স্বরাগম স্কুল > ইস্কুল, মধ্য স্বরাগম-রত্ন > রতন, অন্ত স্বরাগম বেঞ্চ > বেশি।
34. আদি স্বরাগম কাকে বলে? একটি উদাহরণ দাও।
উত্তরঃ শব্দের প্রথমে বা আদিতে স্বরধ্বনির আগমন ঘটলে তাকে আদি স্বরাগম বলে। যেমন-স্কুল > ইস্কুল।
35. মধ্য স্বরাগম কাকে বলে? একটি উদাহরণ দাও।
উত্তরঃ শব্দের মাঝে স্বরধ্বনির আগমন ঘটলে তাকে মধ্য স্বরাগম বা স্বরভক্তি বা বিপ্রকর্ষ বলে। যেমন-রত্ন > রতন ইত্যাদি।
36. অন্ত স্বরাগম কাকে বলে? একটি উদাহরণ দাও।
উত্তরঃ শব্দের শেষে অতিরিক্ত স্বরধ্বনির আগমন ঘটলে তাকে অন্ত স্বরাগম বলে। যেমন-ইঞ্চ ইঞ্চি, বেঞ্চ > বেঞ্চি ইত্যাদি
37. ব্যঞ্জনাগম বলতে কী বোঝ?
উত্তরঃ শব্দের মধ্যে অতিরিক্ত ব্যঞ্জনধ্বনির আগমনকে ব্যঞ্জনাগম বলে। যেমন-উপকথা রূপকথা, নানা নানান ইত্যাদি।
38. ব্যঞ্জনাগম কত প্রকার ও কী কী?
উত্তরঃ ব্যঞ্জনাগম তিনপ্রকার যথা- (ক) আদি ব্যঞ্জনাগম, (খ) মধ্য ব্যঞ্জনাগম এবং (গ) অন্ত ব্যঞ্জনাগম।
39. মধ্য ব্যঞ্জনাগম কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
উত্তরঃ শব্দের মাঝে অতিরিক্ত ব্যঞ্জনধ্বনির আগমন ঘটলে তাকে মধ্য ব্যঞ্জনাগম বলে। যেমন-অম্ল অম্বল, বানর > বান্দর ইত্যাদি।
40. অন্ত ব্যঞ্জনাগম কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
উত্তরঃ শব্দের অন্তে বা শেষে অতিরিক্ত ব্যঞ্জনধ্বনির আগমন ঘটলে তাকে অন্ত ব্যঞ্জনাগম বলে। যেমন-নানা নানান, বং > বহুল ইত্যাদি।
41. ধ্বনিলোপ কাকে বলে?
উত্তরঃ উচ্চারণের সুবিধার জন্য শব্দের অন্তর্গত কোনো বর্ণের ওপর বিশেষ জোর আরোপিত হলে অনাদৃত স্বরধ্বনি লোগ পায়। তাকে ধ্বনিলোপ বলে। যথা: অলাবু লাউ; জানালা > জানলা।
42. ধ্বনিলোপের কারণ কী?
উত্তরঃ ধ্বনিলোপ একাধিক কারণে ঘটতে পারে। উচ্চারণে ত্রুটি, শ্বাসাঘাত, দ্রুত উচ্চারণ, অসাবধানতা, অনুকরণ, বাগযন্ত্রের ত্রুটি।
43. ধ্বনিলোপ কত প্রকার ও কী কী?
উত্তরঃ ধ্বনিলোপ দুই প্রকার-স্বরধ্বনিলোপ এবং ব্যঞ্জনধ্বনিলোপ।
45. স্বরধ্বনিলোপ কত প্রকার ও কী কী?
উত্তরঃ কোনো শব্দ থেকে স্বরধ্বনি লুপ্ত হলে তাকে স্বরধ্বনিলোপ বলে।
অবস্থান ভেদে স্বরধ্বনিলোপ তিন প্রকার-আদি স্বরলোপ, মধ্য স্বরলোপ, অন্ত স্বরলোপ।
46. আদি স্বরলোপ বলতে কী বোঝ?
উত্তরঃ শব্দের প্রথম থেকে কোনো স্বরধ্বনি লুপ্ত হলে তাকে আদি স্বরলোপ বলে। যেমন-আছিল ছিল, অলাবু > লাউ ইত্যাদি।
47. মধ্য স্বরলোপ বলতে কী বোঝ?
উত্তরঃ শব্দের মাঝখান থেকে কোনো স্বরধ্বনি লুপ্ত হলে তাকে মধ্য স্বরলোপ বলে। যেমন-কলিকাতা > কল্কাতা, নাতিজামাই > নাজ্জামাই, গামোছা > গামছা ইত্যাদি।
48. অন্ত স্বরালোপ বলতে কী বোঝ?
উত্তরঃ শব্দের অন্ত স্বর লুপ্ত হলে অন্ত স্বরলোপ বলে। যেমন-রাশি রাশ, অগ্র > আগ্ ইত্যাদি।
49. ব্যঞ্জনধ্বনিলোপ কত প্রকার ও কী কী?
উত্তরঃ শব্দ থেকে ব্যঞ্জনধ্বনি লুপ্ত হলে তাকে ব্যঞ্জনধ্বনিলোপ বলে। যেমন-পাটকাঠি > পাকাঠি, গ্রাম > গাঁ ইত্যাদি।
50. ব্যঞ্জনধ্বনিলোপ কত প্রকার ও কী কী?
উত্তরঃ ব্যঞ্জনধ্বনিলোপ চারপ্রকার; অবস্থান ভেদে তিনপ্রকার এবং সমাক্ষরলোপ। অবস্থান ভেদে-আদি ব্যঞ্জনলোপ, মধ্য ব্যঞ্জনলোপ এবং অন্ত ব্যঞ্জনলোপ।
51. আদি ব্যঞ্জনলোপ বলতে কী বোঝ?
উত্তরঃ শব্দের আদি ব্যঞ্জনধ্বনি লুপ্ত হলে তাকে আদি ব্যঞ্জনলোপ বলে। যেমন-স্থান > থান, স্থিতু > থিতু ইত্যাদি।
52. মধ্য ব্যগুনলোপ বলতে কী বোঝ?
উত্তরঃ শব্দের মধ্য থেকে কোনো ব্যঞ্জনধ্বনি লুপ্ত হলে তাকে মধ্য ব্যঞ্জনলোপ বলে। যেমন-পাটকাঠি > পাকাঠি, ফলাহার > ফলার ইত্যাদি।
53. অন্ত ব্যঞ্জনলোপ বলতে কী বোঝ?
উত্তরঃ কোনো শব্দের অন্ত বা শেষ থেকে কোনো ব্যঞ্জনধ্বনি লুপ্ত হলে তাকে অন্ত ব্যঞ্জনলোপ বলে। যেমন-সখী > সই, নাহি > নাই, গাত্র > গা।
54. সমাক্ষরলোপ বলতে কী বোঝ?
উত্তরঃ কোনো শব্দের মধ্য থেকে পাশাপাশি অবস্থিত দুটি সমাক্ষর বা সমধ্বনির একটি লুপ্ত হলে তাকে সমাক্ষরলোপ বলে। যেমন-বড়দাদা > বড়দা, ছোটদিদি > ছোটদি, পটললতা > পলতা ইত্যাদি।
55. ধ্বনির রূপান্তর কত প্রকার ও কী কী?
উত্তরঃ ধ্বনির রূপান্তর দুই প্রকার-(ক) স্বরধ্বনির রূপান্তর এবং (খ) ব্যঞ্জনধ্বনির রূপান্তর।
56. স্বরসংগতি বলতে কী বোঝ?
উত্তরঃ 'স্বরসংগতি' শব্দের অর্থ বিভিন্ন ধরনের স্বরের মধ্যে সমতাবিধান। শব্দের মধ্যে একাধিক স্বরধ্বনি থাকলে একটির প্রভাবে অন্যটি বদলে যায়, আবার কখনও পরস্পরের প্রভাবে উভয়েই পরিবর্তিত হয়ে ধ্বনিসাম্য লাভ করে, ধ্বনি পরিবর্তনের ভাষায় একেই স্বরসংগতি বলে। যেমন: দেশি > দিশি।
57. স্বরসংগতি কত প্রকার ও কী কী?
উত্তরঃ স্বরধ্বনি পরিবর্তনের অভিমুখ অনুসারে স্বরসংগতি চার প্রকার-প্রগত, পরাগত, মধ্যগত এবং অন্যোন্য।
58. প্রগত স্বরসংগতি বলতে কী বোঝ?
উত্তরঃ পূর্ববর্তী স্বরের প্রভাবে পরবর্তী স্বরধ্বনি বদলে গেলে তাকে প্রগত স্বরসংগতি বলে। যেমন-মিথ্যা > মিথ্যে, আ > এ, 'ই'-এর প্রভাবে অনুরূপে হিসাব > হিসেব, তিনটা > তিনটে ইত্যাদি।
59. পরাগত স্বরসংগতি বলতে কী বোঝ?
উত্তরঃ পরবর্তী স্বরধ্বনির প্রভাবে পূর্ববর্তী স্বরধ্বনি বদলে গেলে তাকে পরাগত স্বরসংগতি বলে। যেমন-দেশি > দিশি, পিছন > পেছন ইত্যাদি।
60. সন্ধি কাকে বলে?
উত্তরঃ পরস্পর সন্নিহিত দুইটি ধ্বনির মিলনের নাম সন্ধি।
61. সন্ধি প্রধানত কত প্রকার ও কী কী?
উত্তরঃ সন্ধি প্রধানত তিন প্রকার-(ক) স্বরসন্ধি (খ) ব্যঞ্জন সন্ধি (গ) বিসর্গসন্ধি।
62. বাংলা সন্ধি প্রকরণে ধ্বনির সঙ্গে ধ্বনির মিলন ঘটে কত রকম ভাবে ও কী কী?
উত্তরঃ তিন রকম ভাবে-(ক) ব্যঞ্জন সন্ধির নিয়মে
(খ) স্বরসন্ধির নিয়মে
(গ) বিসর্গ সন্ধির নিয়মে।
63. ভবেশ, দিগজ, নিরাকার, গবাদি-এই শব্দগুলির সন্ধি বিচ্ছেদ করো।
উত্তরঃ ভবেশ = ভব + ঈশ, নিরাকার = নিঃ+ আকার, দিগজ = দিক্ + গজ, গবাদি গো + আদি।
64. নিপাতনে সিদ্ধ সন্ধি বলতে কী বোঝ?
উত্তরঃ যে সন্ধিগুলো সন্ধির নিয়মকে না মেনে সন্ধিবদ্ধ হয়েছে তাকে নিপাতনে সিদ্ধ সন্ধি বলে। যেমন-সিংহ = হিনস্ + অ।
65. স্বরসন্ধির একটি নিয়ম লেখো। উদাহরণ দাও।
উত্তরঃ অ-কার কিংবা আ-কারের পর ই-কার কিংবা ঈ-কার থাকলে, উভয়ে মিলে এ-কার হয়। যেমন: নর ইন্দ্র = নরেন্দ্র।
66. ব্যল্গুন সম্বির একটি নিয়ম উদাহরণসহ বুঝিয়ে দাও।
উত্তরঃ 'চ' বর্গের পর 'ন' থাকলে সেই 'ন' স্থানে 'ঞ' হয়। যেমন-যজ্ + ন = যজ্ঞ।
67. বাংলা সন্ধি বলতে কী বোঝ উদাহরণ-সহ লেখো।
উত্তরঃ বাংলা উচ্চারণ-বৈশিষ্ট্য অনুসারে যখন পাশাপাশি দুটি ধ্বনির মৌখিক মিলন ঘটে বা কখনও দুটির মধ্যে একটি লোপ পায় আবার কখনও তাদের খানিক বিকৃতি ঘটে তখন তাকে বাংলা সন্ধি বলে। যেমন- চার + টি = চাট্টি।
68. খাঁটি বাংলা সন্ধির ক্ষেত্রে সংস্কৃত ব্যাকরণের সূত্র কতদূর কার্যকর হয়।
উত্তরঃ খাঁটি বাংলা সন্ধির ক্ষেত্রে সংস্কৃত ব্যাকরণের সূত্র কার্যকর হয় না।
69. বাংলায় বিসর্গ সন্ধির ব্যবহার কেমন?
উত্তরঃ বাংলায় বিসর্গ সন্ধির ব্যবহার খুব কম, কেননা বাংলা উচ্চারণ-বৈশিষ্ট্য অনুসারে বিসর্গযুক্ত অনেক সংস্কৃত শব্দই বিসর্গ ছাড়া বাংলায় লেখা হয়।
No comments:
Post a Comment