❐ অনধিক ১৫টি শব্দে নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর লেখো:
1. শব্দ কী?
উত্তরঃ কণ্ঠনিসৃত অর্থপূর্ণ এবং সুসজ্জিত ধ্বনিসমষ্টিকে শব্দ বলে।
2. যৌগিক শব্দ কী?
উত্তরঃ যে সমস্ত সাধিত শব্দের ব্যুৎপত্তিগত অর্থ ও ব্যবহারিক অর্থ এক ও অভিন্ন তাকে বলে যৌগিক শব্দ। যেমন: দক্ষতা।
3. সাধিত শব্দ বলতে কী বোঝ?
উত্তরঃ যে শব্দের শেষে কোনো প্রত্যয়, সমাস বা স্বরান্তর ঘটিয়ে নতুন শব্দ তৈরি করা হয় তাদের সাধিত শব্দ বলে।
4. শব্দের দু'টি বৈশিষ্ট্য লেখো।
উত্তরঃ (i) অর্থবহ না হলে একটি ধ্বনি বা ধ্বনিসমষ্টি শব্দ হবে না।
(ii) ধ্বনির লিখিত রূপ বর্ণ। বর্ণ দিয়ে শব্দ লেখা হয়।
5. ধ্বন্যাত্মক শব্দ কত প্রকার ও কী কী?
উত্তরঃ ধ্বন্যাত্মক শব্দ দুই প্রকার-(ক) বাস্তব শ্রুতিগ্রাহ্য বা ধ্বনিবাচক। (খ) ভাবপ্রকাশক।
6. শব্দদ্বৈতর দু'টি উদাহরণ দাও।
উত্তরঃ (ক) ফাঁকা-ফাঁকা রাস্তা। (খ) হাসি হাসি মুখ-একই শব্দ প্রথমটিতে 'ফাঁকা ফাঁকা' ও দ্বিতীয়টিতে 'হাসি হাসি' হল 'শব্দদ্বৈত'-এর উদাহরণ।
7. 'Portmanteau word' কথাটির আভিধানিক অর্থ কী?
উত্তরঃ 'জোড়কলম শব্দ' যেমন- 'ধোঁয়াশা'; ধোঁয়া ও কুয়াশা-এই দুটি শব্দের যোগ।
8. 'ভদ্ভব' শব্দের অর্থ কী? 'তদ্ভব'-এর প্রতিশব্দ রূপে আর কী ব্যবহার করা হয়?
উত্তরঃ 'তৎ' অর্থে সেই অর্থাৎ সংস্কৃত। 'ভব' অর্থে 'উদ্ভুত'। সুতরাং 'তদ্ভব' হল সংস্কৃত থেকে উদ্ভূত বা জাত।
9. উৎসের দিক থেকে নীচের শব্দগুলি কোন্ কোন্ শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত তা নির্ধারণ করো-দেউটি, কাঠ, সওগাত, শ্রদ্ধা।
উত্তরঃ দেউটি-তদ্ভব, কাঠ-তদ্ভব, সওগাত-বিদেশি, শ্রদ্ধা-তৎসম।
10. স্বরাস্তরযুক্ত সাধিত শব্দের উদাহরণ দাও।
উত্তরঃ চলা > চালা, নড়া নাড়া।
11. মৌলিক শব্দ কাকে বলে?
উত্তরঃ যে শব্দকে কোনোক্রমেই ভাঙা যায় না বা ভাঙলে কোনো অর্থ প্রকাশ করে না তাদের মৌলিক শব্দ বলে। যেমন: নাক, ঘর, মা ইত্যাদি
12. ক্রমিক সংখ্যা শব্দ বা পূরণবাচক শব্দ কাকে বলে?
উত্তরঃ যে সংখ্যা শব্দগুলির সাহায্যে কোনো বস্তুর ক্রম বা অবস্থান বোঝায়, তাদের ক্রমিক সংখ্যা শব্দ বা পূরণবাচক শব্দ বলে। যেমন: তৃতীয় সন্তান, পয়লা মে প্রভৃতি।
13. শব্দের গঠনগত শ্রেণিবিভাগ কয়টি ও কী কী?
উত্তরঃ শব্দের গঠনগত শ্রেণিবিভাগ-দুটি। মৌলিক ও সাধিত।
14. শব্দের অর্থমূলক শ্রেণি বলতে কী বোঝ?
উত্তরঃ সাধিত শব্দের ব্যুৎপত্তিগত ও প্রচলিত অর্থের পার্থক্যের নিরিখে শব্দকে যৌগিক, বুঢ়ি ও যোগরুঢ়-এই তিনটি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়। একে শব্দের অর্থমূলক শ্রেণিবিভাগ বলে।
15. বুঢ়ি শব্দ কাকে বলে?
উত্তরঃ যে সমস্ত সাধিত শব্দের ব্যুৎপত্তিগত অর্থের সঙ্গে প্রচলিত অর্থের সম্পর্ক অস্পষ্ট বা প্রায় নেই বললেই চলে তাদের বুঢ়ি শব্দ বলে। যেমন: হরিণ-হরণকারী (ব্যুৎপত্তিগত অর্থ), মৃগ বা পশুবিশেষ (প্রচলিত অর্থ)। প্রবীণ-বীণা নামক বাদ্যযন্ত্র বাজাতে পটু (ব্যুৎপত্তিগত অর্থ), প্রবীণ-বয়স্ক (প্রচলিত অর্থ)। কুশল-কুশ বহনকারী (ব্যুৎপত্তিগত অর্থ), মঙ্গল (প্রচলিত অর্থ)।
16. যোগরূঢ় শব্দ বলতে কী বোঝ?
উত্তরঃ যে সমস্ত সাধিত শব্দের ক্ষেত্রে একাধিক ব্যুৎপত্তিগত অর্থ থাকলেও, প্রচলিত অর্থে কেবল তার একটিকেই বোঝায়, তাকে যোগরূঢ় শব্দ বলে। যেমন: পঙ্কজ-পাঁক বা পাঁকে যা জন্মায় (ব্যুৎপত্তিগত অর্থ), কিন্তু প্রচলিত অর্থে কেবল পদ্মকেই বোঝায়। জলদ-জল প্রদানকারী (ব্যুৎপত্তিগত অর্থ), কিন্তু প্রচলিত অর্থ মেঘ।
17. শব্দদ্বৈত কাকে বলে?
উত্তরঃ ভাবের বিবিধ বৈচিত্র্য সম্পাদনের জন্য একই শব্দ পর পর দুবার পূর্ণরূপে বা ঈযৎ পরিবর্তিত রূপে প্রয়োগ করলে তাকে শব্দদ্বৈত বলে। যেমন ঘুরে ঘুরে ক্লান্ত।
18. শব্দদ্বৈত কয় প্রকার?
উত্তরঃ শব্দদ্বৈত তিন প্রকার দ্বিরুক্তি, যুগ্ম শব্দের শব্দদ্বৈত, বিকারজাত শব্দদ্বৈত।
19. ধ্বন্যাত্মক শব্দ কাকে বলে?
উত্তরঃ বাস্তব ধ্বনির অনুকরণে সৃষ্ট শব্দকে ধ্বন্যাত্মক বা অনুকার শব্দ বলে। যথা: হুহু। খিল খিল।
20. ধ্বনিবাচক ধ্বন্যাত্মক শব্দ কাকে বলে?
উত্তরঃ যে শব্দ বাস্তব ধ্বনিকে অনুকরণ করে, সেই শব্দকে ধ্বনিবাচক ধ্বন্যাত্মক শব্দ বলে। যথা: কড় কড় করে বাজ পড়ল। কড় কড় শব্দটি বাজ পড়ার শব্দকে অনুকরণ করল।
21. ভাবপ্রকাশক বা ভাববাচক ধ্বন্যাত্মক শব্দ কাকে বলে?
উত্তরঃ যে শব্দ অনুভূতিগ্রাহ্য ভাবকে প্রকাশ করে তাকে ভাববাচক ধ্বন্যাত্মক শব্দ বলে। যথা: আমার মনটা হু হু করছে। এখানে হু হু শব্দটি মনের শূন্যতাকে প্রকাশ করল।
22. তিন প্রকার শব্দদ্বৈতের তিনটি উদাহরণ দাও।
উত্তরঃ দ্বিরুক্তি-পথে পথে নেমেছে মানুষ। যুগ্মশব্দ-দিন-রাত খেটে মরি। বিকারজাত শব্দদ্বৈত-টুপটাপ পড়েছে শিশির।
23. অনুকার শব্দ কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
উত্তরঃ যে সমস্ত জোড় শব্দের প্রথম অংশ সার্থক, পরের অংশ নিরর্থক, অথবা প্রথম অংশ নিরর্থক পরের অংশ সার্থক, কিংবা দুটি অংশই নিরর্থক হয়, সেই যুগ্ম শব্দকে অনুকার শব্দ বলে। যেমন চাল টাল ধুয়ে তাড়াতাড়ি ভাত বসাও।
24. একটি সমার্থক বা প্রায় সমার্থক এবং একটি বিপরীতার্থক যুগ্মশব্দের (শব্দদ্বৈত) উদাহরণ দাও।
উত্তরঃ সমার্থক বা প্রায় সমার্থক যুগ্মশব্দ-কাজ-কর্ম। বিপরীতার্থক যুগ্মশব্দ-সুখ-দুঃখ।
25. একটি ভাবপ্রকাশক এবং একটি ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য অনুকার শব্দদ্বৈতের উদাহরণ দাও।
উত্তরঃ ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য অনুকার-টুপটাপ। ভাবপ্রকাশক অনুকার-নিশপিশ।
26. বিশেষ্য পদ কাকে বলে?
উত্তরঃ যে পদ কোনো বস্তু, ব্যক্তি, গুণ, জাতি বা ক্রিয়ার নাম বোঝায় তাকে বিশেষ্য পদ বলে।
27. কোনো কিছুর নাম বোঝালে তাকে কী বলে?
উত্তরঃ কোনো কিছুর নাম বোঝালে তাকে বিশেষ্য পদ বলে।
28. বিশেষ্য পদ কত প্রকার?
উত্তরঃ বিশেষ্য পদ সাধারণত সাত প্রকার।
29. নামবাচক বা ব্যক্তিবাচক বিশেষ্য পদ কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
উত্তরঃ যে বিশেষ্য পদ প্রাণী বা অপ্রাণীবাচক কোনো কিছুর নাম বোঝায় তাকে নামবাচক বা ব্যক্তিবাচক বিশেষ্য পদ বলে। যেমন-বিবেকানন্দ, বিদ্যাসাগর, গঙ্গানদী, শাল, পলাশ ইত্যাদি।
30. গুণবাচক বিশেষ্য পদ কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
উত্তরঃ যে বিশেষ্য পদ কোনো গুণ জাতীয় অবস্থার নাম বোঝায় তাকে গুণবাচক বিশেষ্য পদ বলে। যেমন-দয়া, দুঃখ, রাগ, 'ঘৃণা, বিদ্যা, প্রেম, ভালোবাসা, ক্ষমা ইত্যাদি।
31. জাতিবাচক বিশেষ্য পদ কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
উত্তরঃ যে বিশেষ্য পদ কোনো জাতির নাম বোঝায় তাকে জাতিবাচক বিশেষ্য পদ বলে। যেমন-রুশ, গোরু, ছাগল, পাখি, বাঙালি ইত্যাদি।
32. বস্তুবাচক বিশেষ্য পদ কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
উত্তরঃ যে বিশেষ্য পদ বস্তু বা জিনিসের নাম নির্দেশ করে তাকে বস্তুবাচক বিশেষ্য পদ বলে। যেমন-বালতি, জামা, জুতো, চাল, ভাত, আকাশ ইত্যাদি।
33. ক্রিয়াবাচক বিশেষ্য পদ কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
উত্তরঃ যে বিশেষ্য পদ কোনো ক্রিয়ার নামকে চিহ্নিত করে তাকে ক্রিয়াবাচক বিশেষ্য পদ বলে। যেমন-দর্শন, বিশ্রাম, সাঁতার, রান্না, খাওয়া ইত্যাদি।
34. সমষ্টিকে বিশেষ্য পদ কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
উত্তরঃ যে বিশেষ্য পদ কোনো দল, গোষ্ঠী বা ওই শ্রেণির সমষ্টিকে চিহ্নিত করে তাকে সমষ্টিবাচক বিশেষ্য পদ বলে।। যেমন-শিক্ষক, ডাক্তার, গরিব, নেতা, বিদেশি, ক্রেতা ইত্যাদি।
35. অবস্থাবাচক বিশেষ্য পদ বলতে কী বোঝ?
উত্তরঃ যে বিশেষ্য পদ কোনো কিছুর অবস্থা বোঝায় তাকে অবস্থাবাচক বিশেষ্য পদ বলে। যেমন: অস্ফুট শৈশবকাল যেন রে আমার।
36. বিশেষণ পদ কাকে বলে?
উত্তরঃ যে পদ বিশেষ্য, (বিশেষণ), অব্যয়, সর্বনাম, ক্রিয়া ইত্যাদি পদের দোষ, গুণ, অবস্থা, পরিমাণ, সংখ্যা ইত্যাদি নির্দেশ করে তাকে বিশেষণ পদ বলে। যেমন-অনেক, ছোটো, জটিল, অল্প, ভালো ইত্যাদি।
37. বিশেষ্যের বিশেষণ পদ কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
উত্তরঃ যে বিশেষণ পদ কোনো বিশেষ্যের দোষ, গুণ, অবস্থা বা প্রকৃতি, সংখ্যা, পরিমাণ ইত্যাদি বোঝায় তাকে বিশেষ্যের বিশেষণ পদ বলে। যেমন-নীল আকাশ, কোমল শিশু ইত্যাদি।
38. বিশেষণের বিশেষণ পদ কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
উত্তরঃ বিশেষণ শব্দের অর্থের তীব্রতা, বিস্তার, আধিক্য, পুনরাবৃত্তি ইত্যাদি বোঝানোর জন্য বিশেষণের আগে যে পদ ব্যবহার করা হয়, সেগুলিকে বিশেষণের বিশেষণ পদ বলে। যেমন-গাঢ় লাল, তুলতুলে নরম ইত্যাদি।
39. সর্বনামের বিশেষণ পদ কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
উত্তরঃ যে বিশেষণ পদ কোনো সর্বনাম পদের দোষ, গুণ, অবস্থা বা প্রকৃতি, সংখ্যা, পরিমাণ বা বর্ণ ইত্যাদি বোঝায় তাকে সর্বনামের বিশেষণ পদ বলে। যেমন-মুর্খ তুই কিছু জানিস? অনভিজ্ঞ ওই লোকটির দ্বারা কিছু হবে না।
40. অব্যয়ের বিশেষণ পদ কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
উত্তরঃ যে বিশেষণ পদ কোনো অব্যয়ের দোষ, গুণ, অবস্থা বা প্রকৃতি ইত্যাদি বোঝায় তাকে অব্যয়ের বিশেষণ পদ বলে। যেমন-আচ্ছা বিপদ তো, এখন কী করি? বেশ, এটাই হবে ইত্যাদি।
41. ক্রিয়ার বিশেষণ পদ কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
উত্তরঃ যে বিশেষণ পদ কোনো বাক্যের ক্রিয়ার সময়, স্থান, প্রকৃতি অর্থাৎ দ্রুততা, ব্যাপ্তি, তীব্রতা ইত্যাদি বোঝায় তাকে ক্রিয়ার বিশেষণ পদ বলে। যেমন-সচকিতে বীরবর দেখিলা সম্মুখে। লোকটি চেঁচিয়ে বলল ইত্যাদি।
42. বিশেষণ পদ অন্য পদের আগে না পরে বসে?
উত্তরঃ বিশেষণ পদ অন্য পদের আগে বসে।
43. সংখ্যা বিশেষণ পদ বলতে কী বোঝ?
উত্তরঃ যে বিশেষণ পদ দ্বারা বিশেষ্য পদের কোনো সংখ্যা বা পরিমাপ নির্দেশ করা হয়, তাকে সংখ্যা বিশেষণ পদ বলে। যথা: এক, দুই, শত, সহস্র ইত্যাদি। ছয় জামাই ছয় বিঝ/বিশেষ বলিব কী। তাঁর পুরস্কারের অর্থমূল্য হাজার টাকা। একখানি ধুতি এনো।
44. ব্যাকরণ আলোচনায় সর্বনামের প্রয়োজনীয়তা কতখানি?
উত্তরঃ বাক্যের মধ্যে ভাষার সৌন্দর্য রক্ষায় সর্বনামের ভূমিকা অনেকখানি। একই বিশেষ্য পদ বহুবার ব্যবহার হওয়ার ফলে বাক্যের মধ্যে ভাষার সৌন্দর্যহানি ঘটে এবং শ্রুতিকটু লাগে। কিন্তু সর্বনাম প্রয়োগের ফলে সেই ভাষা হয়ে ওঠে শ্রুতিমধুর। তাই ব্যাকরণ আলোচনায় সর্বনামের প্রয়োজনীয়তা আছে।
45. সর্বনাম পদ কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
উত্তরঃ বাক্যের মধ্যে কোনো নাম বা ওই জাতীয় কোনো পদের পরিবর্তে বা পূর্বে লিখিত প্রসঙ্গের পুনরুক্তি না করে যেসব পদ ব্যবহার করা হয় তাদের সর্বনাম বলে। যেমন-আমি, তুমি, সে, ইহা, তিনি, কে, কাহারা, কেউ কেউ, কোনো কিছু প্রভৃতি।
46. সর্বনাম পদকে কয়টি ভাগে ভাগ করা যায় ও কী কী?
উত্তরঃ সর্বনামকে মোট ৮টি শ্রেণিতে ভাগ করা যায়। যথা-ব্যক্তিবাচক, নির্দেশক, অনির্দেশক, প্রশ্নবাচক, আত্মবাচক, সমষ্টিবাচক, সাপেক্ষবাচক এবং পারস্পরিক সর্বনাম। এছাড়াও সংযোগবাচক সর্বনাম বলে আর একটি শ্রেণির কথাও কেউ কেউ বলেন।
47. ব্যক্তিবাচক সর্বনাম কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
উত্তরঃ যে সর্বনাম উত্তম, মধ্যম ও প্রথম-এই তিন পুরুষের কোনো ব্যক্তিকে বোঝায় তাকে ব্যক্তিবাচক সর্বনাম বলে। যেমন-তুমি কেমন করে গান করো হে গুণী।/ বলছি তোমায় চুপি চুপি। কে বটেন আপনি? আমি স্বার্থপর নই।
48. পুরুষ ভেদে ব্যক্তিবাচক সর্বনামকে কয়টি ভাগে ভাগ করা যায় ও কী কী?
উত্তরঃ পুরুষ ভেদে ব্যক্তিবাচক সর্বনামকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যথা- উত্তম পুরুষ মধ্যম পুরুষ এবং প্রথম পুরুষ।
49. উত্তম পুরুষ কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
উত্তরঃ আমি বা আমরা জাতীয় যাবতীয় বিষয়গুলিকে উত্তম পুরুষ বলে। যেমন-আমরা সিনেমাটি দেখেছিলাম। আমি তো জীবন্ত প্রাণ, আমি এক অঙ্কুরিত বীজ। আমার বেলা যে যায় সাঁজবেলাতে।
50. মধ্যম পুরুষ কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
উত্তরঃ তুমি বা তোমরা জাতীয় যাবতীয় বিষয়গুলিকে মধ্যম পুরুষ বলে। যেমন-তোমায় দেখেছি শারদপ্রাতে, মধ্যম পুরুষে সম্মানের তারতম্য অনুসারে তিনটি রূপ ব্যবহৃত হয়। যেমন-তুই, তোকে, তোর, তোরে, তোদেরকে, তোরা, তোমাকে, তোমরা, তোমাদের; আপনি, আপনারা, আপনাদের প্রভৃতি।
51. 'তুই' কোন্ অর্থে ব্যবহৃত হয়? প্রয়োগ দেখাও।
উত্তরঃ 'তুই'-বন্ধুত্বে, আদর অর্থে, স্নেহ বোঝাতে, তুচ্ছার্থে এবং অনাদর অর্থেও ব্যবহৃত হয়।
প্রয়োগ-তুই এখন বাড়ি যা। তোদের এই কাজটা শিখতে হবে। তোর কলমটি আমাকে দে। তোরা কি পারবি কাজটা করতে? ইত্যাদি।
52. 'তুমি' কোন্ অর্থে ব্যবহৃত হয়? প্রয়োগ দেখাও।
উত্তরঃ 'তুমি'-বন্ধু, স্নেহভাজন, ঘনিষ্ঠ, নিম্ন পদমর্যাদাসম্পন্নদের সম্বন্ধে ব্যবহৃত হয়। ঈশ্বর সম্বন্ধেও 'তুমি' প্রয়োগ দেখা যায়। প্রয়োগ-তুমি কোথায় যাবে? তুমিই না হয় চুপ করে থাকো ভাই। হে ঈশ্বর তুমি কি পাষাণ।
53. 'আপনি' কোন্ অর্থে ব্যবহৃত হয়? প্রয়োগ দেখাও।
উত্তরঃ 'আপনি'-গৌরব, সম্মান, সম্ভ্রম এবং সৌজন্য প্রকাশের জন্য ব্যবহৃত হয়। যেমন-আপনি, আপনারা, আপনাকে, আপনাদেরকে ইত্যাদি। প্রয়োগ-এটা আপনার লেখা নয়। আপনি কি এখনই খাবেন?
54. প্রথম পুরুষ কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
উত্তরঃ আমি-তুমি ছাড়া যাবতীয় বিষয়গুলিকে প্রথম পুরুষ বলে। যেমন-তিনি যে কী এবং কী নয় একথা ঠিক কেউ জানে না। প্রথম পুরুষে দুটি রূপ-'সে' এবং 'তিনি'।
'সে'-যাকে 'তুমি' বা 'তুই' বলে অভিহিত করা হয়, অনুপস্থিতকালে তার উদ্দেশ্যে 'সে' ব্যবহার করা হয়। যেমন-সে কি এসেছিল? 'তিনি'-যাকে 'আপনি' বলা হয় তার অনুপস্থিতকালে 'তিনি' ব্যবহৃত হয়। যেমন-তিনি একজন সিদ্ধপুরুষ।
55. নির্দেশক সর্বনাম কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
উত্তরঃ যে সর্বনাম কোনো বস্তু বা ব্যক্তিকে নির্দেশ করে, তাকে নির্দেশক সর্বনাম বলে। যেমন-ইনি আমাদের প্রতিষ্ঠানের প্রাণপুরুষ। ইনি, উনি, ইহা, উহা, ইহারা, এটা, এগুলি, ওগুলি ইত্যাদি থাকলে নির্দেশক সর্বনাম হয়।
56. নিদের্শক সর্বনামের কয়টি ভাগ ও কী কী?
উত্তরঃ নির্দেশক সর্বনামের দু'টি ভাগ-(১) সামীপ্যবাচক সর্বনাম এবং (২) দূরত্ববাচক সর্বনাম।
57. সামীপ্যবাচক সর্বনাম কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
উত্তরঃ যে নির্দেশক সর্বনাম কাছের ব্যক্তি বা বস্তুকে নির্দেশ করে তাকে সামীপ্যবাচক সর্বনাম বলে। যেমন-এ, এরা, এই, ইহারা, ইনি, একে, এটা ইত্যাদি।
58. দূরত্ববাচক সর্বনাম কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
উত্তরঃ যে নির্দেশক সর্বনাম দূরের ব্যক্তি বা বস্তুকে নির্দেশ করে তাকে দূরত্ববাচক সর্বনাম বলে। যেমন-ও, ওরা, উহারা, উহা, উনি, ওটা ইত্যাদি।
59. অনির্দেশক সর্বনাম কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
উত্তরঃ যে সর্বনাম কোনো অনির্দিষ্ট ব্যক্তি, বস্তু বা ভাবের পরিবর্তে বসে, তাকে অনির্দেশক সর্বনাম বলে। যেমন-কেউ, কেউ কেউ, কিছু, কিছু কিছু ইত্যাদি।
60. যৌগিক বা মিশ্র সর্বনাম কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
উত্তরঃ কয়েকটি অনির্দেশক সর্বনাম বিশেষণ বা অব্যয়ের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যে সর্বনাম পদ গঠন করে, তাকে যৌগিক বা মিশ্র সর্বনাম বলে। যেমন-আর কেউ, আর কিছু, অন্য কিছু, অপর কিছু, কেউ না কেউ, কিছু না কিছু, কোনো কিছু, কেউ বা, যে কেউ, যে সে, যা তা ইত্যাদি।
61. প্রশ্নবাচক সর্বনাম কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
উত্তরঃ যে সর্বনাম পদে কোনো কিছু জানার ইচ্ছা প্রকাশ পায়, তাকে প্রশ্নসূচক সর্বনাম বলে। যেমন-কে, কি, কী, কোন্টা, কারা, কীসে, কে কে, কী কী, কোনগুলি, কোনগুলো ইত্যাদি।
62. আত্মবাচক সর্বনাম কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
উত্তরঃ যে সর্বনামে কারও সহায়তা ছাড়াই অহং-এর ভাবটি জোরের সঙ্গে বোঝানো হয়, তাকে আত্মবাচক সর্বনাম বলে। যেমন-নিজ, আপনি, স্বয়ং।
63. সমষ্টিবাচক বা সাকল্যবাচক সর্বনাম কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
উত্তরঃ যে সর্বনাম সমষ্টিবাচক ব্যক্তি, বস্তু বা ভাবের পরিবর্তে প্রয়োগ করা হয়, তাকে সাকল্যবাচক বা সমষ্টিবাচক সর্বনাম বলে। এর তিনটি রূপ-উভয়, সকল, সব। যেমন- 'উভয়'-উভয়ে একসঙ্গে উত্তর দিল। 'সকল'-সকলে মিলে আমরা কাজটি সমাধান করলাম। 'সব'-পাখি সব করে রব রাতি পোহাইল।
64. সাপেক্ষবাচক সর্বনাম কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
উত্তরঃ বাক্যে ব্যবহৃত দুটি সর্বনাম যখন পরস্পর পরস্পরের উপর নির্ভরশীল হয়ে বাক্যের কোনো ভাবকে পূর্ণতা দেয় তখন তাকে সাপেক্ষবাচক সর্বনাম বলে। যেমন-যার আসার কথা ছিল তিনি এলেন না। যে পরিশ্রম করবে সেই সফল হবে। ইত্যাদি।
65. পারস্পরিক সর্বনাম কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
উত্তরঃ যে সর্বনাম ব্যক্তি বা বস্তুর পারস্পরিক সম্বন্ধ বোঝায় তাকে পারস্পরিক সর্বনাম বলে। যেমন-আপনা-আপনি, নিজে নিজে, পরস্পর।
66. সংযোগবাচক সর্বনাম বলতে কী বোঝ?
উত্তরঃ যে সর্বনাম দুটি বাক্যের সংযোগসাধন করে তাকে সংযোগবাচক বা সংগতিবাচক সর্বনাম বলে। যেমন: আমি বলি কী তুমি আজ এখানে থেকেই যাও।
67. বাক্যে সর্বনাম পদ ব্যবহারের দুটি কারণ লেখো।
উত্তরঃ বিশেষ্য পদ বারবার ব্যবহারের একঘেয়েমি দূর করতে এবং বাক্য বা বাক্যাংশের পরিবর্তে সর্বনাম পদ ব্যবহার করা হয়।
68. অব্যয় কাকে বলে?
উত্তরঃ লিঙ্গ, বচন, পুরুষ এবং বিভক্তিতে যেসব পদের মূল রূপের কোনো পরিবর্তন ঘটে না, তাদের অব্যয় বলে।
69. সংযোজক অব্যয় কাকে বলে?
উত্তরঃ যে সমস্ত অব্যয় পদ দুই বা তার বেশি বাক্য বা পদকে যুক্ত করে বাক্যের অন্বয়ের বৈচিত্র্য আনে, তাকে সংযোজক অব্যয় বলে। যেমন: ও, এবং, কিন্তু, আর, সুতরাং, অথচ প্রভৃতি। যথা: আমি আর তুমি খেলব।
70. একটি সংযোজক অব্যয়ের উদাহরণ দাও।
উত্তরঃ একটি সংযোজক অব্যয়ের উদাহরণ হল: 'ও'-অজয় ও বিজয় হলেন ধীমানবাবুর দুই ছেলে।
71. আবেগসূচক অব্যয় কাকে বলে?
উত্তরঃ যে সমস্ত অব্যয় পদ বিস্ময়, আনন্দ, বেদনা, দুঃখ, উল্লাস, ঘৃণা প্রভৃতি বোঝাতে ব্যবহৃত হয় তাকে আবেগসূচক অব্যয় বলে। যেমন: বাঃ, উঃ, ওগো, সাবাস, ছিঃ ছিঃ, হায় হায় প্রভৃতি। যথা: বাঃ। কী সুন্দর সন্দেশ।
72. একটি আবেগসূচক অব্যয়ের উদাহরণ দাও।
উত্তরঃ একটি আবেগসূচক অব্যয়ের উদাহরণ হল 'হরি-হরি'।-হরি-হরি। কালে কালে কতই না দেখব।
73. আলংকারিক অব্যয় কাকে বলে?
উত্তরঃ যে সকল অব্যয় বাক্যের সাথে যুক্ত হয়ে অর্থের কোনো পরিবর্তন না ঘটিয়ে বাক্যের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে তাদের আলংকারিক অব্যয় বলে। যেমন সে তো হেসেই খুন।
74. একটি আলংকারিক অব্যয়ের উদাহরণ দাও।
উত্তরঃ একটি আলংকারিক অব্যয়ের উদাহরণ হল 'বটে'-লোকটির সাহস বটে।
75. ধ্বন্যাত্মক অব্যয় কাকে বলে?
উত্তরঃ বিভিন্ন ধ্বনির অনুকরণে সৃষ্ট যে সব অব্যয় কোনো অনুভূতি, ভাব বা অবস্থাকে প্রকাশ করে তাদের ধ্বন্যাত্মক বা অনুকার অব্যয় বলে। যেমন ছল ছল্, খাঁ খাঁ, টন্ টন্, খল্ খল্ প্রভৃতি। যথা: গুরু গুরু মেঘ গরজে গরজে।
76. একটি ধ্বন্যাত্মক অব্যয়ের উদাহরণ দাও।
উত্তরঃ একটি ধ্বন্যাত্মক অব্যয়ের উদাহরণ হল 'ঠকঠক' করে কাঁপছে।
77. সম্বোধনসূচক অব্যয় কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
উত্তরঃ যে অব্যয়ের দ্বারা কাউকে সম্বোধন করা হয় তাকে সম্বোধনসূচক অব্যয় বলে। যেমন-ওরে গৃহবাসী খোল দ্বার খোল।
78. সাদৃশ্যসূচক অব্যয় কাকে বলে?
উত্তরঃ দুটি ভিন্ন ধরনের ব্যক্তি, বস্তু বা বিষয়ের মধ্যে সাদৃশ্য বোঝাতে এই ধরনের অব্যয়ের প্রয়োগ ঘটে। যেমন মতো, পারা, ন্যায়, তুল্য, সম, যেন ইত্যাদি। যথা: মায়ের মতো আপন আর কেউ নেই।
79. প্রশ্নসূচক অব্যয় কাকে বলে?
উত্তরঃ জিজ্ঞাসা বা প্রশ্ন বোঝাতে যে সকল অব্যয় পদ ব্যবহার করা হয় তাকে প্রশ্নসূচক অব্যয় বলে। যেমন: এত দেরি করছ কেন?
80. না সূচক অব্যয় বা অসম্মতিসূচক অব্যয় কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
উত্তরঃ যে অব্যয়ের সাহায্যে অসম্মতি, অস্বীকার অর্থাৎ মনের নেতিবাচক ভাব বোঝানো হয় তাকে অসম্মতিসূচক অব্যয় বলে। যেমন: নয়, নহে, না, নেই, উচু প্রভৃতি। যথা: তুমি চোখের সামনে নেই।
81. 'ন্যায়' একটি কী ধরনের অব্যয়?
উত্তরঃ 'ন্যায়' একটি সাদৃশ্যসূচক অব্যয়।
82. নিত্যসম্বন্ধীয় অব্যয় কাকে বলে?
উত্তরঃ দু'টি সমুচ্চয়ী অব্যয় একই সঙ্গে ব্যবহৃত হলে তাকে নিত্যসম্বন্ধীয় অব্যয় বলে।
83. একটি নিত্যসম্বন্ধীয় অব্যয়ের উদাহরণ দাও।
উত্তরঃ একটি নিত্যসম্বন্ধীয় অব্যয়ের উদাহরণ হল-যেমন কর্ম তেমন ফল।
84. ক্রিয়া-বিশেষণবাচক অব্যয় কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
উত্তরঃ বাক্যের ভেতর যে অব্যয় পদ ক্রিয়া-বিশেষণ হিসাবে ব্যবহৃত হয় তাকে ক্রিয়া-বিশেষণবাচক অব্যয় বলে।
85. সংস্কৃত থেকে গৃহীত দু'টি অব্যয়ের উদাহরণ দাও।
উত্তরঃ ক. অত্র এবং খ. যদ্যপি।
86. খাঁটি বাংলা অব্যয়ের দু'টি উদাহরণ দাও।
উত্তরঃ ক. অথচ এবং খ. সাবাস।
87. ক্রিয়াপদ কাকে বলে?
উত্তরঃ বাক্যের অন্তর্গত যে পদ দিয়ে কোনো কাজ করা বোঝায়, তাকে ক্রিয়াপদ বলে।
88. ক্রিয়ার কাল কাকে বলে?
উত্তরঃ ক্রিয়াপদের যে রূপের দ্বারা কোনো কাজ কোন্ সময় হয়, হয়েছিল বা হবে বোঝায় তাকে ক্রিয়ার কাল বলে।
89. ক্রিয়ার কাল কত প্রকার ও কী কী?
উত্তরঃ ক্রিয়ার কাল তিন প্রকার। যথা-অতীত কাল, বর্তমান কাল, ভবিষ্যৎ কাল।
90. বর্তমান কাল কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
উত্তরঃ কোনো কাজ বর্তমান সময়ে চলছে বোঝালে ক্রিয়ার সেই কালকে বর্তমান কাল বলে। যেমন-আমি বিদ্যালয়ে যাই।
91. বর্তমান কাল কত প্রকার ও কী কী?
উত্তরঃ বর্তমান কাল চার প্রকার। যথা-১ সাধারণ বা নিত্য বর্তমান কাল, ২ ঘটমান বর্তমান কাল ৩ পুরাঘটিত বর্তমান কাল, ৪ বর্তমান কালের অনুজ্ঞা।
92. সাধারণ বা নিত্য বর্তমান কাল কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
উত্তরঃ যে ক্রিয়ার কাজ সাধারণত বা বরাবর ঘটে অথবা চিরন্তন সত্য বোঝাতে ক্রিয়ার যে রূপ ব্যবহার হয় তাকে সাধারণ বা সামান্য বা নিত্য বর্তমান কাল বলে। যেমন: আমি ভাত খাই। সূর্য পূর্ব দিকে ওঠে। সে বই পড়ে। 'ওরা চিরকাল টানে দাঁড়' ইত্যাদি।
এই ক্রিয়ার কালকে অতীতে ঘটা কোনো ঘটনার ঐতিহাসিক বর্ণনায় ব্যবহার করলে তাকে ঐতিহাসিক বর্তমান কাল বলে। যেমন: সুলতান মামুদ ভারত আক্রমণ করেন।
93. ঘটমান বর্তমান কাল কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
উত্তরঃ কোনো কাজ বর্তমান কালে চলছে যা এখনও শেষ হয়নি এই রূপ বোঝালে ক্রিয়ার সেই কালকে ঘটমান বর্তমান কাল বলে। যেমন-রাম বই পড়ছে। শিশুটি খেলছে ইত্যাদি।
94. পুরাঘটিত বর্তমান কাল কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
উত্তরঃ বর্তমান কালের যে ক্রিয়ার কাজ এই মাত্র শেষ হয়েছে কিন্তু তার ফল বা রেশ রয়ে গেছে বোঝাতে পুরাঘটিত বর্তমান কাল হয়। যেমন: আমি স্নান করেছি। শুনেছি সে চাকরি পেয়েছে। তনু সিনেমাটি দেখেছে ইত্যাদি।
95. বর্তমান কালের অনুজ্ঞা কাকে বলে?
উত্তরঃ বর্তমান কালে, অনুরোধ, মিনতি, উপদেশ ইত্যাদি বোঝাতে বর্তমান কালের অনুজ্ঞা হয়। 'ওঠো, নিজের কাজ করো' ইত্যাদি।
96. অতীত কাল কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
উত্তরঃ কোনো কাজ অতীত সময়ে হয়ে গেছে এই রূপ বোঝালে ক্রিয়ার সেই কালকে অতীত কাল বলে। যেমন-আমি বইটি পড়েছিলাম।
97. অতীত কাল কত প্রকার ও কী কী?
উত্তরঃ ক্রিয়া সংঘটনের সূক্ষ্ণতার বিচারে অতীত কাল চার প্রকার। যথা-১ সাধারণ বা নিত্য অতীত কাল, (২) ঘটমান অতীত কাল, (৩) পুরাঘটিত অতীত কাল, ৪ নিত্যবৃত্ত অতীত কাল।
98. সাধারণ বা নিত্য অতীত কাল কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
উত্তরঃ যে কাজটি অনির্দিষ্ট অতীতে ঘটে গেছে সেই ক্রিয়ার কালকে সাধারণ বা নিত্য অতীত কাল বলে। যেমন-তুমি ভোজ খেলে। আমি বিদ্যালয়ে গেলাম ইত্যাদি।
99. ঘটমান অতীত কাল কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
উত্তরঃ অতীত কালে কোনো কাজ চলছিল এইরূপ বোঝালে ক্রিয়ার সেই কালকে ঘটমান অতীত কাল বলে। যেমন-রাম তখন ঘুমাইতেছিল। আমি খেলিতেছিলাম। সে মন দিয়ে পড়ছিল ইত্যাদি।
100. পুরাঘটিত অতীত কাল কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
উত্তরঃ অতীত কালে যে কাজটি ঘটে গিয়েছে কিন্তু তার প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া এখন আর বর্তমান নেই এইরূপ বোঝালে ক্রিয়ার সেই কালকে পুরাঘটিত অতীত কাল বলে। যেমন-পুলিশ আসবার আগেই চোরটিকে ধরা গিয়েছিল। বহু আগে আমরা একবার দিল্লি গিয়েছিলাম। কমল ঘরে বসিয়াছিল ইত্যাদি।
101. নিত্যবৃত্ত অতীত কাল কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
উত্তরঃ অতীত কালে কোনো কাজ নিয়মিত হত কিংবা প্রায়ই হত বোঝালে, তাকে নিত্যবৃত্ত অতীত বলে। যথা: মায়ের মুখে মহাভারত পড়া শুনিত। তার মন উদাস হয়ে যেত। শিক্ষক মহাশয় ছাত্রদিগকে পড়াইতেন। আমরা বাগানে বসতাম। তিনি প্রত্যহ আমাদের বাড়ি আসতেন। মায়ের কাছে যাইবার জন্য মন আকুল হইয়া পড়িত। গাছটার দিকে চাহিয়াই তার মন কেমন করিত। এরকম-দেখতাম, চাইত, হাসতেন, বলতেন, খেতেন, পড়াতেন, পড়তেন ইত্যাদি।
102. ভবিষ্যৎ কাল কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
উত্তরঃ কোনো কাজ আগামী ভবিষ্যতে ঘটবে এমনটা বোঝালে তাকে ভবিষ্যৎ কাল বলে। যেমন-আমরা খেলা করিতে থাকিব।
104. ভবিষ্যৎ কাল কত প্রকার ও কী কী?
উত্তরঃ ভবিষ্যৎ কাল চার প্রকার। যথা-১ সাধারণ বা নিত্য ভবিষ্যৎ কাল, ২ ঘটমান ভবিষ্যৎ কাল, পুরাঘটিত ভবিষ্যৎ কাল,ও ভবিষ্যৎ কালের অনুজ্ঞা।
105. সাধারণ বা নিত্য ভবিষ্যৎ কাল কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
উত্তরঃ যে কাজ এখনও সংঘটিত হয়নি কিন্তু ভবিষ্যতে ঘটবে এরূপ বোঝালে তাকে সাধারণ ভবিষ্যৎ কাল বলে। যেমন-রামবাবু যাবেন। রমা রুটি খাইবে। আমি তোমাকে জানাব ইত্যাদি।
106. ঘটমান ভবিষ্যৎ কাল কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
উত্তরঃ ভবিষ্যৎ কালে কোনো কাজ চলতে থাকবে এমন বোঝালে তাকে ঘটমান ভবিষ্যৎ কাল বলে। যেমন-তোমরা ঘুমাইতে থাকিবে। বৃষ্টি হইতে থাকিবে। আন্দোলন চলতে থাকবে ইত্যাদি।
107. পুরাঘটিত ভবিষ্যৎ কাল কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
উত্তরঃ যে ক্রিয়ার কাজ অতীত বা বর্তমানে হয়তো ঘটে থাকতে পারে বা ঘটবে এমন সম্ভাবনা রয়েছে এই রূপ সন্দেহ প্রকাশ পেলে পুরাঘটিত ভবিষ্যৎ কাল হয়। যেমন-আমার চিঠিখানা বোধ হয় তিনি এতদিন পাইয়া থাকিবেন। লোকটিকে হয়তো আমি আগে দেখে থাকব ইত্যাদি।
108. ভবিষ্যৎ কালের অনুজ্ঞা বলতে কী বোঝ?
উত্তরঃ যে ক্রিয়াপদের দ্বারা ভবিষ্যতের কোনো আদেশ, উপদেশ, অনুরোধ, প্রার্থনা প্রভৃতি বোঝায়, তাকে ভবিষ্যৎ কালের অনুজ্ঞা বলে। যথা: ভালো হয়ে চলবে। তুমি কাল স্কুলে যেও। অহংকারী হইও না। দেরি করিস্ না। মন দিয়ে লেখাপড়া করবে। গুরুজনের কথা শুনবে।
109. ক্রিয়ার ভাব কাকে বলে?
উত্তরঃ 'ভাব' কথাটির অর্থ হল 'মর্জি'। যে রূপ বা ভঙ্গির দ্বারা ক্রিয়ার কাজের পদ্ধতি প্রকাশ পায় তাকে ক্রিয়ার ভাব বলে।
110. ক্রিয়ার ভাব কত প্রকার ও কী কী?
উত্তরঃ ক্রিয়ার ভাব চার প্রকার। যথা-নির্দেশক ভাব, অনুজ্ঞা ভাব, সংযোজক ভাব এবং ইচ্ছাদ্যোতক ভাব। তবে নির্দেশক এবং অনুজ্ঞা ভাবের পৃথক ক্রিয়ারূপ থাকলেও, সংযোজক ও ইচ্ছাদ্যোতক ভাবের কোনো আলাদা ক্রিয়ারূপ নেই। এগুলি অব্যয়ের সাহায্যে প্রকাশিত হয়।
111. নির্দেশক ভাবের অপর নাম কী?
উত্তরঃ নির্দেশক ভাবের অপর নাম নির্ধারক বা অবধারক ভাব।
112. নির্দেশক ভাব কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
উত্তরঃ কোনো কাজ যে সমাপিকা ক্রিয়ার দ্বারা নির্দিষ্ট হয়, সেই ক্রিয়ার ভাবকে নির্দেশক ভাব বলে। যেমন-পাখি ওড়ে। এখানে 'ওড়ে' ক্রিয়াপদটি শুধু 'ওড়া' ক্রিয়াটুকুই নির্দেশ করছে।
113. অনুজ্ঞা ভাব কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
উত্তরঃ কর্তার আদেশ, উপদেশ, অনুমোদন, প্রার্থনা, অনুরোধের ভাব যে বাক্যের ক্রিয়াপদের দ্বারা ব্যক্ত হয়ে ওঠে সেই বাক্যের ক্রিয়ার ভাবকে বলে অনুজ্ঞা ভাব। যেমন-ঈশ্বর তোমার মঙ্গল করুন, তোমার আশা পূর্ণ হোক, এসো হে বৈশাখ। এখানে 'করুন', 'হোক', 'এসো' এগুলির ভিতর দিয়ে বক্তার প্রার্থনা, অনুরোধ প্রভৃতি অনুজ্ঞা ভাব প্রকাশ পাচ্ছে।
114. অনুজ্ঞা ভাবের অপর নাম কী?
উত্তরঃ অনুজ্ঞা ভাবের অপর নাম নিয়োজক ভাব।
115. নির্দেশক ভাব ক্রিয়ার কোন্ কোন্ কালে ব্যবহৃত হয়?
উত্তরঃ নির্দেশক ভাব অতীত, বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ তিনটি কালের ক্রিয়ারূপেই ব্যবহৃত হয়।
116. অনুজ্ঞা ভাব ক্রিয়ার কোন্ কোন্ কালে ব্যবহৃত হয়?
উত্তরঃ অনুজ্ঞা ভাব বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ কালে ব্যবহৃত হয়।
117. কোন্ ভাবগুলির বিভক্তি আছে?
উত্তরঃ কেবলমাত্র নির্দেশক ও অনুজ্ঞা ভাবেই বিভক্তি আছে।
118. 'সে করে'-এখানে 'করে' ক্রিয়ার কোন্ ভাবটি নির্দেশ করছে?
উত্তরঃ এখানে 'করে' ক্রিয়াটি নির্দেশক ভাবের প্রকাশক।
119. 'দুপুরে ঘুমিও না'-এখানে 'ঘুমিও' ক্রিয়াপদটিতে ক্রিয়ার কোন্ ভাবটি নির্দেশ করছে?
উত্তরঃ এখানে 'ঘুমিও' হল অনুজ্ঞা ভাবের প্রকাশক।
120. আমন্ত্রণ, আশীর্বাদ, উপদেশ ও উপেক্ষা এগুলি বক্তার কোন্ ভাবের প্রকাশ করে?
উত্তরঃ আমন্ত্রণ, আশীর্বাদ, উপদেশ ও উপেক্ষা অনুজ্ঞা ভাবকে প্রকাশ করে।
121. বাক্যে ক্রিয়ার প্রয়োগ ও ব্যবহার অনুযায়ী ক্রিয়াপদকে কয়টি শ্রেণিতে ভাগ করা যায় ও কী কী?
উত্তরঃ ক্রিয়ার প্রয়োগ ও ব্যবহার অনুযায়ী ক্রিয়াপদ দুই প্রকার। যথা: (ক) সমাপিকা ক্রিয়া (খ) অসমাপিকা ক্রিয়া।
122. সমাপিকা ক্রিয়া কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
উত্তরঃ যে সকল ক্রিয়ার দ্বারা বাক্যের অর্থ সম্পূর্ণ হয় তাকে সমাপিকা ক্রিয়া বলে। যেমন-রহিম বই পড়িতেছে। কৃষকটি মাঠে গেল। এখানে 'পড়িতেছে' এবং 'গেল' এই দুটি ক্রিয়াপদে বাক্যটি সম্পূর্ণ হল।
No comments:
Post a Comment